আমরাতো ক্রিকেট বলের স্পিন বা লাটিমের স্পিন এর কথা জানি। আবার পৃথিবীর নিজ অক্ষে ২৪ ঘন্টায় একবার স্পিন বা ঘূর্ণনের কথাও জানি যার জন্য দিন-রাত হয়। কোন একটি কেন্দ্র বরাবর ঘূর্ণনকে কৌণিক ভরবেগ বা এ্যাংগুলার মোমেন্টাম নামক ভৌত রাশি(যা পরিমাপযোগ্য এবং সংখ্যাদ্বারা প্রকাশিত) এর সাহায্যে বর্ণনা বা ব্যাখ্যা করা হয়। অক্ষ বরাবর ঘূর্ণনের সাথে একইভাবে স্পিন এ্যাংগুলার মোমেন্টামকে যুক্ত করা যায়। যদিও ইলেকট্রনের স্পিনকে বুঝবার জন্য এই ক্লাসিকাল বা চিরায়ত বর্ণনা সাহায্যকারী–কিন্ত মনে রাখতে হবে এটিকে এইভাবে ভিজ্যুয়ালাইজ করা অথবা এর এরকম প্রত্যক্ষীকরণ শুধুমাত্র বুঝবার সুবিধার জন্য–কোয়ান্টাম ফেনোমেনন কে আসলে এইভাবে বর্ণনা করা সম্ভব না–কিন্ত এছাড়া আর কোন উপায়ও নেই।

কোন কেন্দ্র বরাবর নির্দিষ্ট কক্ষপথে কোনকিছুর ঘুর্ণন গতি হল সেইটির অর্বিটাল মোশন। যেমনটি পৃথিবী তার কক্ষপথ বা অর্বিটে সূর্যের চারিদিকে ৩৬৫ দিনে একবার ঘুরে আসে। এ্যাম্পিয়ারের আইন অনুসারে একটি বিদ্যুৎবাহী তারের চারিদিকে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরী হয় (গাণিতিকভাবে ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণ অনুসারে লুপের উপর ম্যাগনেটিক ফিল্ডের লাইন ইন্টিগ্রাল– কারেন্ট-ডেনসিটির লুপের ক্ষেত্রফল বরাবর সার্ফেস ইন্টিগ্রালের সমানুপাতিক)। অর্থাৎ একটি বিদ্যুৎবাহী লুপের জন্য একটি চৌম্বক-ভ্রামক সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব। এর কারণ হল লুপটির উপর যদি একটি বাহ্যিক বা এক্সটের্নাল ম্যাগনেটিক ফিল্ড প্রয়োগ করা হয় তাহলে সেইটি ঘুড়বে এবং সেইটি একটি ম্যাগনেটিক ডাইপোল বা চৌম্বক-দ্বিপোলের মতন আচরণ করবে।এখন একটি বৃত্তাকার পথে ঘূর্ণনরত একটি ইলেকট্রন বা চার্জবাহী যেকোন কণিকাকেও আপনি একটি কারেন্ট লুপ হিসেবে চিন্তা করতে পারেন। একইভাবে এটিরও একটি ম্যাগনেটিক মোমেন্ট থাকবে এবং সেইটি হবে কণিকাটির অর্বিটাল ম্যাগনেটিক মোমেন্ট। অর্বিটাল মোশন ছাড়াও কোন বস্তর স্পিন মোশনও থাকতে পারে। আবারও লাটিমের কথায় আসি। এটি একটি অক্ষ বরাবর স্পিন করে। একই সাথে এটি কোন কক্ষপথ বরাবরও ঘুরতে পারে।কাজেই লাটিমের দু’ধরণের ঘূর্ণণ গতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় এই এ্যানালজি থেকেই ইলেকট্রনের স্পিন এ্যাংগুলার মোমেন্টাম এসেছে–যদিও প্রকৃতপক্ষে ইলেকট্টনের অক্ষ বরাবর ঘূর্ণন গতি বলে আসলে কিছু নেই। ইলেকট্রনের টোটাল এ্যাংগুলার মোমেন্টাম কনজার্ভেশন শুধূ অর্বিটাল এ্যাংগুলার মোমেন্টাম দিয়ে হবেনা–এর সাথে স্পিন এ্যাংগুলার মোমেন্টামও যুক্ত করতে হবে। আর স্পিনের জন্যও ইলেকট্রনের একটি ইনট্রিনসিক ম্যাগনেটিক মোমেন্ট সংজ্ঞায়িত করা যায়। সেইটিই এর স্পিন ম্যাগনেটিক মোমেন্ট।

উলফগ্যাং পাউলি সর্বপ্রথম স্পিন ধারণাটির প্রস্তাব করেন এবং এর কিছুকাল পরে দুই তরুণ ডাচ বিজ্ঞানীও এর কথা বলেন যেটি একটু পরে বলব। ১৯২২ সালে স্টার্ন ও গারলাখ কর্তৃক সম্পাদিত পরীক্ষণে এর অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়। তাত্বিকভাবে নন-রিলেটিভিস্টিক কোয়ান্টাম তত্ব দ্বারা এটিকে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল না। কিন্ত ১৯২৮ সালে ডিরাকের সুবিখ্যাত ডিরাক সমীকরণ ও রিলেটিভিস্টিক কোয়ান্টাম তত্বের স্বাভাবিক অংশ ও উপজাত হিসাবে স্পিন বেড়িয়ে আসে।

যা বলছিলাম, স্পিনকে বোঝার সুবিধার জন্য একে কণিকাসমূহের ইনট্রিনসিক বা অন্তর্নিহিত ঘূর্নণগতি বলা যেতে পারে যদিও ক্ল্যাসিকাল বা চিরায়ত ঘুর্ণণের সাথে এর তুলনা করাটা খুবই ভুল হবে। ম্যাক্রোস্কোপিক ক্ষেত্রে বা বৃহৎ বস্তুর জগতে— উদাহরণস্বরূপ পৃথিবীর অর্বিটাল মোশন ও স্পিন মোশনের মধ্যকার পার্থক্য খুব একটা গুঢ় নয়। পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণ মেরু সংযোজক অক্ষ বরাবর ঘুর্ণণ এর মধ্যকার সমস্ত পাথড়, পাহাড়-পর্বত, গাছ-গাছালি ইত্যাদির ঐ অক্ষ বরাবর অর্বিটাল মোশনের সমষ্টি। ইলেকট্রনের ক্ষেত্রেতো তা বলা সম্ভব নয়–কারণ পৃথিবীর মতন ইলেকট্রনের কোন ইন্টারনাল স্ট্রাকচার নাই। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে দুই তরুণ ডাচ বিজ্ঞানী গৌডস্মিট ও উহ্লেনবেক সর্বপ্রথম কণিকার স্পিনের ধারণা নিয়ে আসেন। তারা ইলেকট্রনকে খুবই ক্ষুদ্র স্পিনিং লাটিম হিসেবে চিন্তা করেন। কিন্তু, বিখ্যাত বিজ্ঞানী হেনড্রিক লরেনঞ্জ তড়িৎগতিতে তাদেরকে দেখিয়ে দেন যে ইলেকট্রনকে খুবই ক্ষুদ্র স্পিনিং লাটিম হিসেবে চিন্তা করলে অনেক লজিক্যাল প্যারাডক্স বা যৌক্তিক প্রপঞ্চের উদ্ভব হয় এবং ধারণাটি একেবারেই ধোপে টেকেনা। দুই তরুণ পদার্থবিদের কাছে প্রবীণ লরেনঞ্জ ব্যাখ্যা করেন যে ইলেকট্রনকে এরকম ঘূর্ণায়মান লাটিম হিসেবে চিন্তা করলে এর ধারগুলো আলোর গতির চেয়ে বেশী গতিতে ঘুড়বে। কিন্ত আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি তত্বানুসারে সেইটি অসম্ভব। কারণ কোন কিছুর গতিই আলোর চেয়ে বেশী হতে পারেনা। ডাচ পদার্থবিজ্ঞানের প্রবীণ গুরুর কথায় তরুণদ্বয় এতটাই ভয় পান এবং হতাশ হয়ে পড়েন যে তাঁরা তাঁদের সুপারভাইজার বা তত্ত্বাবধায়ক আরেক বিখ্যাত পদার্থবিদ পল এহরেনফেস্টকে বলেন যে তারা তাদের আর্টিকেলকে উইথড্র করতে চান। কিন্ত এহরেনফেস্ট তাদেরকে বলেন যে সেইটি করা আর সম্ভব নয়–কারণ তিনি ইতোমধ্যে আর্টিকেলটি জার্নালে পাঠিয়ে দিয়েচেন। এর সাথে তিনি তাঁদের স্বান্তনা দিয়ে যোগ করেন: “তোমরা এই ধরণের স্টুপিডিটি এ্যাফোর্ড করবার জন্য যথেষ্ট তরুণ।” পরের ইতিহাস আমরা জানি।

এখন একটি বিষয় লক্ষ্য করুন। ভ্রাম্যমাণ চার্জ ম্যাগনেটিক ফিল্ড উৎপন্ন করলেই আমরা ম্যাগনেটিক মোমেন্ট পাব–এমন কিন্ত নয়–অন্তত: আমরা যে প্রসঙ্গে কথা বলছি সেখানেতো নয়ই। ম্যাগনেটিক মোমেন্টকে এভাবেও সংজ্ঞায়িত করা যায় –একটি দ্বিমেরু দন্ড-চুম্বকের উপর “বাহ্যিক” কোন চৌম্বক-বল যেই টর্ক সৃষ্টি করে তার প্রভাবে এইটি ঘুরবে আর এই টর্কটি হবে চুম্বকটির ম্যাগনেটিক মোমেন্ট ও বাহির থেকে প্রয়োগ করা (চুম্বকটির নিজস্ব নয়) চৌম্বকক্ষেত্রের ক্রস প্রোডাক্ট। একটি কারেন্ট “লুপ”কে বা “কক্ষপথে ঘুর্ণনরত” ইলেক্ট্রনকে আমরা একটি চৌম্বক-দ্বিপোল হিসেবে চিন্তা করতে পারি–কাজেই একটি হাইড্রোজেন গ্যাসবাহী টিউবের উপর যদি আমরা বাহির থেকে চৌম্বক-ক্ষেত্র প্রয়োগ করি তাহলে আমরা প্রতিটি পরমাণুর জন্য অর্বিটাল ম্যাগনেটিক মোমেন্ট একইভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারব।এই ম্যাগনেটিক মোমেন্টের সাথে এক্সটার্নাল ফিল্ড কাপল করে গ্যাসের শক্তিস্তরে পরিবর্তণ ঘটাবে। এইটি জিম্যান এফেক্ট নামে পরিচিত। সুতরাং জিম্যান এফেক্টের কারণে আমরা বর্ণালী রেখাগুলোকেও বিভাজিত অবস্থাতে পাব। কিন্ত এই বিভাজনটি ঠিক যেমনটি হওয়া উচিৎ অনেক সময়ই তা হয়না–জিম্যান সাব-লেভেলের সংখ্যা অপ্রত্যাশিত হয়। স্পিনের ধারণা পাবার আগে এই এ্যানোমালাস জিম্যান এফেক্ট ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়নি। অশুণ্য স্পিনের কোন সিস্টেমের ক্ষেত্রেই এই এ্যানোমালি হয়ে থাকে। প্রথমত: একটা কথা বলে রাখা ভালো। একটি রোটেটিং চার্জড অবজেক্টের অবশ্যই ম্যাগনেটিক মোমেন্ট থাকবে ক্ল্যাসিকাল সেন্সেই।এখন আপনি বলতে পারেন: স্পিনের কারণে তো ইলেক্ট্রন ডিসপ্লেসড হচ্ছে না বা ভ্রাম্যমান হচ্ছে না, চার্জটাতো একই স্থানে নিজ অক্ষের উপর ঘুরছে (ক্লাসিকাল সেন্সে) তাহলে এটা ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড এবং ম্যাগ্নেটিক মোমেন্ট উৎপাদন করছে কিভাবে? আপনি যদি এভাবে ভেবে থাকেন তাহলে এর একটিই কারণ আর তা হল: আপনি বৃহৎবস্তর চিরায়ত জগতের বাসিন্দা–ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রের জগতের নিয়ম কানুন বড়ই বিচিত্র। আর তাই আপনার ধারণাটি সঠিক নয়। উই আর নট পারমিটেড টু থিংক ক্ল্যাসিকালি হেয়ার।কিন্ত তার আগে একটি উদাহরণ দিয়ে ক্ল্যাসিকালিও যে এইটি সম্ভব নয় তা দেখাব। একটি চার্জবাহী গোলকের তলের কোন অংশের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ আছে। এখন গোলকটি যদি নিজ অক্ষ বরাবর স্পিন করে তাহলে কিন্ত ঐ নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ একটি কারেন্ট লুপ তৈরী করবে। ভিসুয়ালাইজ করতে পারলেন কি? দ্বিতীয়ত:স্পিনের কথায় আসা যাক। স্পিন একটি বিশুদ্ধ কোয়ান্টাম মেক্যানিকাল কনসেপ্ট। এর কোন ক্লাসিকাল এ্যানালগ নাই। বুঝবার সুবিধার জন্য নিজ অক্ষ বরারবর ঘূর্ণন গতির কথা বলা হলেও–প্রকৃতপক্ষে তা মোটেও সে জিনিস নয়। কোয়ান্টাম মেকানিক্স খুবই কাউন্টার-ইন্টুইটিভ। ক্লসিক্যালি চিন্তা-ভাবনা করতে অভ্যস্ত ম্যাক্রোস্কোপিক জগতের বাসিন্দা আমরা। তাই এর হেয়ালিগুলো কখনই আমাদের কাছে খুব একটা পরিষ্কার নয়। ফাইনম্যান মজা করেই হ্য়ত কোয়ান্টাম বলবিদ্যার উইয়ার্ড জগৎ সম্পর্কে তিক্ত সত্য কথাটি বলেছিলেন: “I think I can safely say that nobody understands quantum mechanics.” একটি পর্দার উপর দু’টি লম্বা ছিদ্র করে একটি ইলেকট্রনকে এর উপর ছুড়ে দিলে কিভাবে এইটি একই সাথে অবিভক্ত অবস্থাতে উভয়ের মধ্য দিয়েও যেতে পারে অথবা কোটি কোটি আলোকবর্ষ দুরে অবস্থিত দুইটি কণিকার একটিকে প্রভাবিত করলে তাৎক্ষনিকভাবে (কোটি আলোকবর্ষ পরে নয়) অপরটি প্রতিক্রিয়া দেখায় তা কি যথেষ্ট পরিমাণে কাউন্টার-ইন্টুইটিভ নয়?

একটি মৌলিক কণিকার স্পিন এর ভর বা আধান(চার্জ) এর মতন এর একটি ইনট্রিনসিক প্রপার্টি বা অন্তর্নিহিত ধর্ম (যেমন, আমি বা আপনি একজন পুরুষ, এটি আমাদের একটি অপরিবর্তণশীল ধর্ম, কিন্ত আমাদের বয়স, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তণশীল) –এর কোন ধরণের ডাইনামিক্সের সাথে এইটি সম্পর্কহীণ। । কোন সিস্টেমের এ্যাংগুলার মোমেন্টাম সর্বদাই সংরক্ষিত হয়। কিন্ত উদাহরণস্বরূপ, হাইড্রোজেন পরমাণুর চারিদিকে ঘূর্ণনশীল কোন ইলেকট্রনের ক্ষেত্রে আপাত:দৃষ্টিতে এটি সংরক্ষিত হয় না, যদিনা এর সাথে স্পিনকে যুক্ত করা হয়। স্পেকট্রাল এ্যানালাইসিসের ফাইন স্ট্রাকচার স্প্লিটিং বা রসায়নের পিরিয়ডিক টেবল অফ এলিমেন্টস বা পর্যায় সারণী, বা প্যারামেগনেটিজম বা পরাচুম্বকত্ব স্পিন ছাড়া ব্যাখ্যা করা যায় না।

এ্যাংগুলার মোমেন্টামের আধুনিক সংজ্ঞা হল: এইটি রোটেশনের জেনারেটর। একটি ইলেকট্রনের স্পিন ও অর্বিটাল এ্যাংগুলার মোমেন্টাম অপারেটরের সমষ্টি এর হ্যামিল্টনিয়ানের সাথে কমিউট করবে–আলাদাভাবে কোনটিই নয়। অর্বিটাল এ্যাংগুলার মোমেন্টামের সাথে সংযুক্ত অর্বিটাল ম্যাগনেটিক মোমেন্টের সাথে ওয়ান টু ওয়ান করেস্পন্ডেন্সের মাধ্যমে আমরা স্পিন এ্যাংগুলার মোমেন্টামের সাথেও একটি স্পিন ম্যাগনেটিক মোমেন্টকে সংযুক্ত করতে পারি। এখানে বলে রাখা উচিৎ–এ্যানোমালাস জিম্যান এফেক্ট হয়ে থাকে স্পিনের সাথে এক্সটার্নাল ম্যাগনেটিক ফিল্ডের কাপ্লিং এর কারণে। এখন “কক্ষপথে ঘুর্ণনরত” হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস বা প্রোটোনকে আমরা একটি কারেন্ট-লুপ হিসেবে চিন্তা করতে পারি যাকিনা এক্সটার্নাল ম্যাগনেটিক ফিল্ডের সোর্স হিসেবে কাজ করবে –কাজেই একটি হাইড্রোজেন গ্যাসবাহী টিউবের প্রতিটি পরমাণুর জন্য এর ইলেক্ট্রনটির স্পিন ম্যাগনেটিক মোমেন্ট অর্বিটাল ম্যাগনেটিক মোমেন্টের মতনই সংজ্ঞায়িত করতে পারব।এই স্পিন ম্যাগনেটিক মোমেন্টের সাথে এক্সটার্নাল ফিল্ড কাপল করে গ্যাসের শক্তিস্তরে পরিবর্তণ ঘটে ফাইন স্ট্রাকচার স্প্লিটিং হবে।

মৌলিক কণিকসমূহের স্পিন নামক এই ধর্মের উপর ভিত্তি করে সমস্ত কণিকাকে দুইভাগে বিভক্ত করা সম্ভব। যেইসকল কণিকার স্পিন পূর্ণ সংখ্যা(০,১,২…) তাদের বলা হয় “বোসোন”। একাধিক বোসোন একই স্টেট বা অবস্থায় থাকতে পারে। কাজেই পাউলির এক্সক্লুশন বা বর্জন নীতি এদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ গাণিতিকভাবে এদের ওয়েভ ফাংশন সিমেট্রিক।যেইসকল কণিকার স্পিন অর্ধ পূর্ণ সংখ্যা (১/২,৩/২,৫/২…) তাদের বলা হয় “ফার্মিয়ন”। একাধিক ফার্মিয়ন একই কোয়ান্টাম স্টেট এ থাকতে পারেনা। ইলেক্ট্রন হল একটি ১/২ স্পিন ফার্মিয়ন।পরমাণুতে একটি ইলেকট্রনের কোয়ান্টাম স্টেট নির্ধারিত হয় ৪ টি কোয়ান্টাম নাম্বার দ্বারা। এই ৪ টি কোয়ান্টাম নাম্বার যথাক্রমে ইলেকট্রনের শক্তি, কৌণিক ভরবেগ, কৌণিক ভরবেগের দিক ও স্পিনকে কোয়ান্টায়িত করে। এখন পরমাণুতে যেকোন দুইটি ইলেকট্রনের জন্য এই চারটি সংখ্যার সেট এক হতে পারে না।এটি পাউলির এক্সক্লুশন নীতি নামে পরিচিত। এই কারণে একটি পরমাণুতে একাধিক ইলেকট্রন একই অথবা বিভিন্ন শক্তিস্তরে পরস্পরের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করে থাকে। বৃহৎ জগতেও আমরা কখনও দুইটি বস্তুকে “ঠিক” একই জায়গাতে অবস্থান করতে দেখি না– কারণ বৃহৎ জগতের আচরণ ক্ষুদ্র জগতের আচরণের গ্রস এভারেজ। ইলেকট্রনগুলো যেকোন মানের শক্তি গ্রহণ করলে বা শক্তির বিচ্ছিন্নমান গ্রহণ না করলে এইটিকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হত না। পরমাণুর কেন্দ্র নিউট্রন আর প্রোটনের দ্বারা গঠিত আর এই নিউট্রন আর প্রোটোন গঠিত আপ আর ডাউন টাইপ কোয়ার্ক দ্বারা।আপ আর ডাউন টাইপ কোয়ার্কও ১/২ স্পিন ফার্মিয়ন। এরা পাউলির এক্সক্লুশন নীতি মেনে চলে।কারণ এদের ওয়েভ ফাংশন এ্যান্টিসিমেট্রিক বা অপ্রতিসাম্যিক। অর্ডিনারি ম্যাটার বা বস্তু ইলেকট্রন, প্রোটোন, নিউট্রন ইত্যাদি ফার্মিয়ন দ্বারাই গঠিত–তাই দুইটি পাথরের আয়তন আছে আর এরা একই সাথে একই জায়গা দখল করতে পারে না–একটা পাথরের ভিতর আরেকটা ঢুকে থাকেনা।

স্পিনের একটি ক্লাসিকাল এ্যানালজি হতে পারে একই বর্ণের, বিভিন্নমাত্রাতে রঙ করা কোন টেনিস বা পিংপং বলের বিভিন্নমাত্রিক ঘূর্ণন। বিভিন্ন স্পিনের কণিকার ওয়েভ ফাংশনের গাণিতিক বিশ্লেষণকে ভিজ্যুয়ালাইজ করার জন্য এই বলের এ্যানালজি ব্যবহার করা হয়েছে। স্পিন-সংখ্যা নির্দেশ করে কতটুকু ঘুরলে বলটিকে প্রাথমিক অবস্থার মতো আবার দেখা যাবে, যেমন একটা বল, তার এক দিক সাদা, আরেক দিক কালো, এর স্পিন-সংখ্যা হবে ১, কারন এটি পুরো একবার ঘুরলেই কেবল আগের মতো দেখতে পাওয়া যাবে। বল টিকে যদি এবার চার ভাগে সাদা কালো রঙ করে ঘুরানো হয়, তবে এটি অর্ধেক বার ঘুরলেই আমরা প্রাথমিক অবস্থার মতো দেখতে পাবো।এর স্পিন-সংখ্যা ২। এটি ডেস্ক্রিপটিভ কিন্ত এক্সপ্লেনেটরি নয়। স্পিন ১/২ মানে একটি ইলেকট্রন ২ টি স্পিন-স্টেটে থাকতে পারে এবং এর ওয়েভ ফাংশন একটি ২ কম্পোনেন্ট স্পাইনরের মতন ট্রান্সফরম করে।একটি স্পাইনরকে ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরালে এটি একই স্টেটে ফিরে আসে না–বরং বিপরীত কোয়ান্টাম ফেস এর একটি স্টেটে ফিরে আসে। স্পাইনরের গাণিতিক বিশ্লেষণ ছাড়া এইটি পরিষ্কারভাবে বুঝা সম্ভব নয়।স্পিন ১ মানে–একটি ফোটোনের(আলোর কণিকা) স্পিন ডিগ্রিস অফ ফ্রিডম ৩ টি এবং এটির ওয়েভ ফাংশন একটি ভেক্টর বা সদিক রাশির মতন পরিবর্তিত হয়।এর অর্থ এইটিকে ৩৮০ ডিগ্রী রোটেট করলে এইটি অপরিবর্তিত থাকবে(ঠিক একটি সদিক রাশির মতন)। উত্তর-পূর্বদিকে মুখ করে থাকা একটি লাঠির কথা চিন্তা করুন। এটির মাথাতে পৌঁছতে আপনাকে ৩ ধাপ যেতে হবে–মাটি বরবর দুই ধাপ আর মাথা বরাবর এক। চোখ বন্ধ করে আবার চোখ খুলুন এবং লাঠিটিকে দেখুন–এইটিকে ৩৮০ ডিগ্রী ঘোড়ানো হয়েছে কি হয়নি এইটি আপনি বলতে পারবেন না। স্পিন ০ মানে–একটি কণিকার স্পিন ডিগ্রি অফ ফ্রিডম মাত্র ১ টি এবং এটির ওয়েভ ফাংশন একটি স্কেলার বা অদিক রাশি। এইটির ওয়েভ ফাংশনকে যত ডিগ্রীই ঘোরান না কেন–এইটির কোন পরিবর্তন হবেনা। একটা লাল রঙ এর বলের কথা চিন্তা করুন। চোখ বন্ধ করে আবার চোখ খুলুন এবং এইটির দিকে তাকান। এইটিকে অক্ষ বরাবর ঘুরানো হয়েছে কি হয়নি এইটি আপনি বলতে পারবেন না। স্পিন ২ বা ৪ এর গাণিতিক বিবরণ আরও জটিল কারণ এদের ওয়েভ ফাংশন টেনসরের মতন ট্রান্সফরম করে।