ব্লু মুন। বাংলা করলে দাঁড়ায় নীল চাঁদ। এর আরেকটা সংজ্ঞা আছে। কোনো মাসে যদি দুটো পূর্ণিমা হয় তবে দ্বিতীয় পূর্ণিমার চাঁদকে বলে ব্লু মুন। এ সময় চাঁদ কখনো খানিকটা নীলচেও দেখায়। চাঁদের এই অভূতপূর্ব সৌন্দর্য একই মাসে দু’বার দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় পৌনে ৩ বছর। আর মাত্র দুই দিন পর ৩১ আগস্ট আকাশে নীল চাঁদ দেখা যাবে …। আসুন নীল জোছনায় মেলে ধরি আমাদের স্বপ্নের ডানা

‘নীল জোছনা’ উপভোগে নদীর পাড়ে যেতে আমরা এত উদগ্রীব কেনÑ এই প্রশ্নের উত্তরে আমার প্রায়শ মনে হয়, ‘মানব সভ্যতার বীজও কি নদীর তীরে নয়? ইজিয়ান সাগরের উপকূলে গড়ে ওঠা আয়োনীয় আবেগকেই তো আমরা বয়ে নিয়ে চলছি। নদী-সমুদ্রতীরে দাঁড়িয়েই পিথাগোরাস বুঝতে পেরেছিলেন, পৃথিবীটা সমতল কোনো প্লেট নয়; আসলে এক গোলক। নীল চাঁদ দেখতে সেই প্রাচীন আবেগকেই অনুভব করতে চায় মানব মন।
আমরা জেনে গেছি আজ ৩১ আগস্ট শুক্রবার ব্লু মুন। সন্ধ্যা থেকে তা দেখা যাবে। অনলাইনের একটি ব্লগে একদল লিখেছে, ব্লু মুন উদযাপনের লক্ষ্যে তারা শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ থেকে যাত্রা শুরু করবে। জাদুকাটা নদী হয়ে মেঘালয় পাহাড়ের নিচে বারিকের টিলা বলে একটা জায়গা; সেখান থেকে আদিবাসী গ্রামে যেখানে খাসিয়া, গারো, হাজংরা বাস করেন। ওই গ্রামের খাসিয়া রাজা তাদের বন্ধু। মেঘালয় পাহাড়ের ঢালে ওই গ্রামেই তারা বসবে অপরূপ পূর্ণিমা বা ব্লু মুন দর্শনে। সত্যিই এক স্বপ্নের ভ্রমণ।

নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়
নীল চাঁদের জোছনা উপভোগে বিজ্ঞান সংগঠন ডিসকাশন প্রজেক্ট এবং সাংস্কৃতিক জোট বিশেষ এক আয়োজন করছে। ওই রাতে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় ৫ নম্বর ঘাটেও বসবে আসর এ চাঁদকে ঘিরে। সন্ধ্যা ৭ টা থেকেই শুরু হবে। রাতভর চলবে পর্যবেক্ষণ, তথ্যচিত্র প্রদর্শন, প্রাচীন চাঁদকে নিয়ে গান ও কবিতার আসর। চাঁদ নিয়ে নানান প্রশ্ন আলোচিত হবে ওই আসরে। যেমন চাঁদের যে দিকটা মুখ ফিরে আছে পৃথিবীর দিকে, সেখানে কেন লোহার পরিমাণ কম? জল আর বাষ্প কেন নেই এই দিকটাতে? আর উল্টো দিকটাই-বা কেমন? মা তার শিশুকে যতই বলুন না কেনÑ ‘আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা’; আসলে প্রতি বছরই পৃথিবী থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে! এছাড়াও নদীদূষণ থেকে মানুষকে সরে আসার আহ্বান জানানো হবে। চাঁদে প্রথম পদাপর্নকারী সদ্য প্রয়াত নীল আমস্ট্রং এর প্রতিও থাকবে শ্রদ্ধাঞ্জলী। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার তীরে নীল জোছনায় øান করার আহ্বান রইল। যোগাযোগ :০১৭১৬৩২২১২৮, ০১৯১২৯১৭৫৫৪, ০১৯২০৮৯৭৩৩০।

ব্লু মুন বা নীল চাঁদ কী?
পূর্ণিমা একটি নিয়মিত মহাজাগতিক ঘটনা। আজ ৩১ আগস্ট, ২০১২ তারিখে যে পূর্ণিমাটি ঘটবে তা সাধারণ দৃষ্টিতে গতানুগতিক পূর্ণিমা মনে হলেও এর রয়েছে খানিকটা বিশেষত্ব। এদিনের পূর্ণিমাটি হবে নীল চাঁদের পূর্ণিমা বা ব্লু মুন। গড়ে প্রতি ২ দশমিক ৭ বছরে একবার ব্লু মুন সংঘটিত হয়ে থাকে। পরবর্তী ব্লু মুনের দেখা মিলবে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই। উল্লেখ্য, ২০০৯ সাল শেষ হয়েছিল ব্লু মুন পূর্ণিমার সঙ্গে। ২ ডিসেম্বর ছিল পূর্ণিমা। আবার ৩১ ডিসেম্বরও পূর্ণিমা। এর আগে ২০০৭ সালের জুনে দেখা গিয়েছিল ব্লু মুন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর যে পূর্ণিমা, তা ছিল বিরল।
প্রচলিতভাবে আমরা প্রতি মাসে একটি মাত্র পূর্ণিমা দেখতে পাই। কিন্তু কখনও কখনও একই মাসে দুইটি পূর্ণিমা ঘটে থাকে। কোনো মাসের এই দ্বিতীয় পূর্ণিমাটিই হচ্ছে ব্লু মুন। এ ক্ষেত্রে প্রথম পূর্ণিমাটি মাসের একদম শুরুতে বা শুরুর কাছাকাছি সময়ে হয়ে থাকে। কারণ চান্দ্র মাস ২৯ দশমিক ৫ দিনে সম্পন্ন হয়। ফলে ফেব্র“য়ারি মাস ছাড়া অন্য যে কোনো মাসেই দুইটি পূর্ণিমা ঘটতে পারে। কারণ ফেব্র“য়ারি মাসের দৈর্ঘ্য চান্দ্র মাসের চেয়ে কম।

ব্লু মুন কেন ঘটে?
আমরা জানি, সৌর বর্ষপঞ্জিতে বারোটি পূর্ণ চন্দ্র মাস সম্পন্ন হয়ে থাকে। অর্থাৎ বারোটি পূর্ণিমা ঘটে। তবে সৌর মাসের তুলনায় চান্দ্র মাসের দৈর্ঘ্য কম। চান্দ্র মাস ২৯ দশমিক ৫ দিনে সম্পন্ন হয়। সাধারণ হিসেবে বলা যায়, চান্দ্র বছর সৌর বছরের তুলনায় গড়ে ১১ দিন কম হয়ে থাকে। এই অতিরিক্ত দিনগুলোর কারণে গড়ে প্রতি ২ দশমিক ৭ বছরে এমন একটি মাস পাওয়া যায়, যখন একই মাসে দুইটি পূর্ণিমা ঘটে। একইভাবে প্রতি ১৯ বছরে ৭ বার এমন পূর্ণিমা পাওয়া যায়।

জ্যোতির্বিজ্ঞানে মুন’ মানে নীল চাঁদ নয়
এই বিশেষ পূর্ণিমাকে ব্লু চাঁদ নাম দেওয়া হলেও দৃশ্যত এই পূণিমা মোটেও নীল রঙের দেখায় না, বরং অন্য পূর্ণিমার মতোই। তাহলে নীল চাঁদ কেন? ইংরেজিতে ইষঁব গড়ড়হ পদটি দ্বারা কোনো অসাধারণ বা দু®প্রাপ্য ঘটনাকে প্রকাশ করা হয়। এই নামটি প্রায় চারশ’ বছর ধরে প্রচলিত ছিল। গত পঁচিশ বছর ধরে বর্ষপঞ্জিতে এই নামটি বি¯তৃতি লাভ করেছে। ‘আমাবস্যার চাঁদ’ বাক্যটি যেমন ‘সহজে দেখা মেলে না’Ñ এ জাতীয় অর্থ বোঝাতে বাংলায় বাগধারা হিসেবে ব্যবহƒত হয়; ঠিক তেমনি ইংরেজিতে ‘ড়হপব রহ ধ নষঁব সড়ড়হ’ বাক্যটিও ঢ়যৎধংব হিসেবে ব্যবহƒত হয়। ধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে মানুষের মনের বিভিন্ন কুসংস্কার বা বিশ্বাস থেকে এই ব্লু মুন নামটি এসে থাকতে পারে। তবে কিছু ঘটনাও এ জন্য দায়ী, যা কিছুটা ঐতিহাসিকও বটে। যেমন ১৮৮৩ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ক্রাকাতোয়া অগ্নুৎপাতের কারণে পরবর্তী দুই বছর সূর্যাস্তের সময় সবুজ এবং চাঁদকে নীলাভ লেগেছে। এ ছাড়া ১৯২৭ সালে ভারতীয় মৌসুমি বায়ু দেরিতে আসায় গ্রীষ্মকাল অতি দীর্ঘ হয়ে পড়ে, যা বায়ুমণ্ডলে ধুলার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। তখন রাতের আকাশে চাঁদকে নীলাভ দেখাত। ১৯৫১ সালে উত্তর আমেরিকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চাঁদকেও নীল দেখা গিয়েছিল, যখন পশ্চিম কানাডার বনাঞ্চলে দাবানল লেগেছিল এবং এর ধোঁয়া আকাশকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। উনিশ শতকের মাঝামাঝি এটা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, ব্লু মুন প্রকৃতপক্ষে দেখতে মোটেও নীল নয়। তবে আকাশে ধুলোবালি বা ধোঁয়ায় চাঁদকে সাময়িকভাবে নীলাভ মনে হতে পারে। এটি নিয়মিত সংঘটিত হওয়া মহাজাগতিক ঘটনা ছাড়া কিছু নয়। মানুষের জীবন ও কাজের ওপর সাধারণ পূর্ণিমা বা ব্লু মুন কোনোটিরই প্রভাব নেই।

নীল চাঁদের জোছনায় øান
উনিশ শতকের মাঝামাঝি এটা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, ব্লু মুন প্রকৃতপক্ষে দেখতে মোটেও নীল নয়। তবে আকাশে ধুলোবালি বা ধোঁয়ায় চাঁদকে সাময়িকভাবে নীলাভ মনে হতে পারে। এটি নিয়মিত সংঘটিত হওয়া মহাজাগতিক ঘটনা ছাড়া কিছু নয়। জোয়ার ভাটায় চাদের স্বাভাবিক প্রভাব ছাড়া মানুষের জীবন ও কাজের ওপর সাধারণ পূর্ণিমা বা ব্লু মুন কোনোটিরই প্রভাব নেই। আমরা মনে করি সংস্কৃতির মধ্যেদিয়ে বিজ্ঞানকে প্রবাহিত করতে না পারলে, তা মানুষের কাছে পৌছবে না। আর মানুষের বিজ্ঞানের বার্তা না পৌছলে কুসংষ্কার দূর হবে না। সেই লক্ষ্যে বিজ্ঞান সংস্থা ডিসকাশন প্রজেক্ট এবং নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের এই যৌথ প্রয়াস। সবাইকে আহবান থাকলো আসুন মহাজাগতিক প্রেক্ষাপটে দাড়াই। নীল জোছনায় স্বপ্নের ডানা মেলে ধরি।

ব্লু মুন উতসব নীল জোছনায় অবগাহনের পক্ষ থেকে
সমকালেও উঠেছে গত মং্গলবার ২৮ তারিখে নীলাভ চাদের পথে শিরোনামে