প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি বছর আগের পৃথিবী, স্থলের চেয়ে জলের ভাগ অনেক অনেক গুণ বেশী, সমস্ত কার্যক্রমই জলের নিচে, বা উপরিভাগে, তরুণ পৃথিবী ফুঁসে উঠছে ভাঙ্গা-গড়ার বুনো উম্মাদনায়, থেকে থেকে সমস্ত ক্রোধ যেন উগড়ে দিচ্ছে তার ফাটল দিয়ে জ্বলজ্বলে আগ্নেয় শিলার রূপে, সেই লাভা আবার তীব্র বেগে জলের স্তর ভেদ করে উপরে পবন দেবের ছোঁয়া পাওয়া মাত্রই কুঁকড়ে পরিণত হচ্ছে অভিশপ্ত কোন কুৎসিত ঘন কৃষ্ণবর্ণের পাথরে। এর মাঝে একরত্তি ভেলায় চেপে সেই বিক্ষুদ্ধ আদিসমুদ্র পাড়ি দিচ্ছি আমি।

না কোন কল্পনা নয়, আসলেই পাড়ি দিয়েছিলাম সেই প্রাচীন সাগর, কিন্তু সাড়ে তিনশ কোটি বছর আগে নয়, বছর দুই আগেই, দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বখ্যাত স্টের্কফন্টেইন গুহার বিশাল প্রদর্শনী কেন্দ্রের অংশ এক অংশ সেই আদি পৃথিবীর আঁধার জগতে। বলা হয়েছিল এক রাবারের ভেলায় চেপে কৃত্রিম গুহার মধ্যে দিয়ে গেলে দেখা যাবে শত কোটি বছর আগের সেই বিধ্বংসী রূপ, ভূমির জন্ম এবং জীবনের আবির্ভাব। আর কি চাই, টিকেট কেটে চেপে পড়লাম সেই ভেলাতে, মিনিট কয় পরে সেখানের নিরাপত্তা প্রহরী ঝকঝকে সাদা দাঁত বাহির করে অভয়ের হাসি দিয়ে বলল- এখন মনে হচ্ছে আর কেউ আসবে না, তুমি একাই চলে যাও, ভেতরে অবশ্য আঁধার কিন্তু চোখ সইয়ে নেবে।

DSC03765

একাই যাব এই আঁধার গুহাতে? এমনিতে আপত্তি নেই কিন্তু নিকষ কালো জলের প্রবাহ দেখে পেটের ভেতর কেন যেন শূন্যতার তৈরি হয়, মনে হয় এই বুঝি গভীর থেকে কিছু তেড়ে এল মুখব্যাদান করে ! স্বয়ংক্রিয় দরজা বন্ধ হবার সাথে সাথে সেই নৌযান চলা শুরু করল ঘুটঘুটে আঁধার চিরে, একটু আগেই দেখা শান্ত জলধারা যেন টগবগ করা শুরু করেছে, একটু পরেই দেখা গেল জলের নিচে আগুনের ফুলকির মত, সেগুলো অবিরাম বুদবুদের মত ছুটে আসছে উপরের দিকে! বোঝা গেল যে সময়ে আদি পৃথিবীর নব নব ভূখণ্ডের উদ্ভব ঘটেছিল অজস্র আগ্নেয়গিরি অবিরাম অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ঠিক সেই সময়ে নিয়ে গেছে এই কলকব্জা! টাইম মেশিন তো আর নেই, আপাতত কৃত্রিমতাই মূল ভরসা। এর অনেক পরে আসল আদি জীবনের উদ্ভব, জলের অনেক নিচে এক কোষী কিছু প্রাণী, ঝিম মেরে পড়ে থেকে পুষ্টি নিচ্ছে সাগরের খনিজ থেকে, মাঝে মাঝে চমকাচ্ছে বিদ্যুৎ। এদিকে ছোট্ট ভেলা মাঝে মাঝে সেই সুড়ঙ্গে গোত্তা খেয়ে টালমাটাল হয়ে চলছে অনন্তকাল ধরেই, এর মাঝে একাধিক মহাদেশে ভেঙ্গে অনেক গুলো মহাদেশ হলো, ডায়নোসরের দল শুরু করল আনাগোনা, ততক্ষণে বুঝে গেছি নিশ্চয়ই এক জল ফুঁড়ে বাহির হবে কোন বিকট দর্শন যন্ত্রচালিত ডাইনোসর, পিলে চমকে দেবার সাথে সাথে ভিজে কাক বানিয়ে ছাড়বে আমায় এক লহমায়। সেই সাথে আক্ষরিক অর্থেই জলে যাবে সাথে থাকা সাধের ক্যামেরাখানা।

DSC03764

সত্যি বলতে এমন একটা চমকের জন্য অপেক্ষা করতে করতে হৃৎপিণ্ড আর অ্যাড্রিনালিন প্রবাহ মিলিয়ে বেশ এক অকথ্য অবস্থার সৃষ্টি করল, সেই আঁধারের মাঝে কাঁহাতক আর ভাল লাগে অজানা সরীসৃপের আক্রমণের অপেক্ষা?

এই সময় দেখি এক চিলতে আলো এসে পড়েছে সামনের দেয়ালের ফাটল থেকে, আহা, এই আলোর পিছনের আছে যেন আনন্দ উদ্ভাসিত মহাকাশ, মুক্তি মিলবে এই বিভীষিকা থেকে, অনেক হয়েছে আঁধারযাত্রা। কিন্তু সেই ফাটল প্রসস্থ হয়েই চলল, ধাতস্থ হয়ে দেখি সেটি আসলে আরেক স্বয়ংক্রিয় দরজা, এখানেই শেষ গন্তব্য, ভেলা ধরার জন্য দুই জন আফ্রিকান দাড়িয়েও আছে। কাছে যাবার পর দেখি তাদের চোখ বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে উঠেছে, বোকা বোকা ভাবে বলে বসল- তুমি একা এসেছ? কোন আক্কেলে তোমাকে একা ছাড়ল এই সুড়ঙ্গে? আমি তার কি জানি! আর একা না আসায় হয়ত ভাল, কিন্তু বিদঘুটে সেই অভিজ্ঞতা তো মিলল প্রাচীন পৃথিবীর। বললাম- টিকে আছি, সব ঠিক আছে, তা সোনাচাঁদ- জাদুঘরখানা কোনদিকে সেইটি দেখিয়ে দাও, ধন্যবাদ।

DSC03825

বিশাল প্রান্তরের মাঝে ঢিবি আকৃতির এক স্থাপত্যের ভিতরে বিখ্যাত জাদুঘরটি, তবে সেখানে যেতে মূল রাস্তা ধরেই যেতে হবে, পাশে ঘেসো জমিতে সাইনবোর্ডে লেখা-সর্প হইতে সাবধান!

DSC03934

জাদুঘরের প্রথমেই নমস্য লেখক, দার্শনিক, জীববিদ রিচার্ড ডকিন্সের বহুল ব্যবহৃত একটি বিখ্যাত বাক্য লেখা,

DSC03851

তার পরপরই আদি সৌরজগতের আর পৃথিবীর মডেল, পর্যায় ক্রমে এল এক বিলবোর্ডে প্রচলিত ও জনপ্রিয় ধর্মমতগুলোর সৃষ্টি সম্পর্কিত অসার তত্ত্বকথার সমারোহ, বিভিন্ন ধর্মের প্রতীক দেখে বোঝা গেল কুসংস্কারের ক্ষেত্রে কেউ কারো চেয়ে কম যায় না!

DSC03845

এরপরে চমৎকার মডেলের সাহায্যে বোঝানো হয়েছে পৃথিবীর উদ্ভব, পানির আবির্ভাব, স্থল ভাগের জন্ম, প্যানজিয়া নামক মহাপ্রাচীন মহাদেশের বিভিন্ন ভাবে ভাগ হয়ে গোটা গ্রহে ছড়িয়ে পরে সাত মহাদেশ ও পাঁচ মহাসাগরের সৃষ্টি, চারশ কোটি বছর আগে আদি সাগরে এনজাইমের উদ্ভব, এক পর্যায়ে অ্যামাইনো অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়ায় অথবা উল্কা পিণ্ডের বয়ে আনা কোন অজানা মৌলের সুবাদে জীবনের আগমন আমাদের এই নীল গ্রহে।

বিশাল সংগ্রহশালার পরবর্তী গ্যালারিগুলোতে আদি জীবনের নানা স্মারক, তিনশ কোটি বছর আগের জীবাশ্ম হয়ে যাওয়া অণুজীব, আরো অনেক পরে ভূ-ভাগে আবির্ভূত হওয়া গাছের প্রস্তরীভূত পাতা, প্রাচীন মাছ, নানা ধরনের উভচর প্রাণী, কোনটার মাথা কোনটার না পিছনের সামান্য অংশ উদ্ধার করা গেছে, কিন্তু আজকের দুনিয়ায় প্যালিওণ্টজিষ্টরা ক্ষুদে একটুকরো দাঁত বা হাড়ের ফসিল পেলেই অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে একের পর এক নিরলস গবেষণার মাধ্যমে ভূগর্ভে লুকিয়ে থাকা সত্যটি খুড়ে নিয়ে আসতে পারেন জ্ঞানের আলোয়।

DSC03746

জাদুঘরের পরের অংশে কোটি কোটি বছর দৌদন্ড প্রতাপে টিকে থাকা ডাইনোসরদের রাজত্ব, ১৬০ মিলিয়ন বছর যারা এই গ্রহের জলে- স্থলে- অন্তরীক্ষে আধিপত্য বিস্তার করে ছিল একচ্ছত্র ভাবে, তাদের শিলীভূত দেহাবশেষের স্থান আজ সারা বিশ্বের প্রদর্শনী হলগুলোতে, পরিবেশগত কারণে ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসরদের বিলুপ্তির পরপরই আবির্ভাব ঘটে তাদেরই বংশধর পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের। এক ধরনের বৃক্ষচারী ক্ষুদে স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে মিলিয়ন বছরের বিবর্তনে আপন আপন পরিবেশে বিকাশ ঘটে হাজারো প্রাণীর, এর এক অংশ থেকে আবার উদ্ভব ঘটে উন্নত বুদ্ধিমত্তার প্রাণীর, যে দলে ছিল লিমার, নানা প্রজাতির বানর এবং এদের শেষ দলটিতে আসে এপ-রা।

DSC03827

এপ হচ্ছে লেজবিহীন, উন্নত মস্তিষ্ক বিশিষ্ট প্রাইমেট, যাদের সবাই প্রয়োজনবিধায় অল্পক্ষণের জন্য হলেও দুপায়ে মেরুদণ্ড সোজা করে দাড়াতে পারে, বর্তমান জীবজগতে ৬ ধরনের এপ টিকে আছে- উল্লুক, ওরাং ওটাং, গরিলা, শিম্পাঞ্জী, বোনোবো এবং মানুষ।
পরের কক্ষটি ছিল এপদের আদিপুরুষদের নিয়ে আর এর মধ্যমণি হয়ে ছিল স্টের্কফনটেইন গুহায় পাওয়া ৩১ লক্ষ বছরের পুরনো সেই হোমিনিড জীবাশ্ম!

DSC03862

DSC03813

DSC03790

সমগ্র কঙ্কালটির বেশ অনেকখানিই উদ্ধার করা গেছে, করোটির কিছু অংশ আর নিচের চোয়ালসহ। তা থেকেই কম্পিউটারে নানা মডেলের সাহায্যে তাদের যে চেহারাখানি আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি তাতে সামান্য কল্পনার মিশেল থাকলেও বলা চলে বাস্তব জীবনের প্রায় নিরানব্বই শতাংশ কাছাকাছি। ২০ থেকে ৪০ লক্ষ বছর আগে অষ্ট্রেলিয়োপিথোকাসরা আফ্রিকার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পরতে থাকে। তারা আমাদের অতি দূর সম্পর্কের আত্নার আত্মীয়। তাদের থেকেই সময়ের সাথে, পরিবেশের তাগিদে ও খাদ্যাভাসের পরিবর্তনে উদ্ভব হয় হোমো হাবিলিস, হোমো ইরেকটাস ও সবার শেষে আমাদের হোমো স্যাপিয়েন্সদের।

DSC03863

কিন্তু এর মাঝে প্রকৃতিতে ঘটেছে আরেক ঘটনা, আমরা যেমন চিড়িয়াখানায় একসাথে নানা প্রজতির বানর, কুমির বা হরিণ দেখতে পায়, তেমনি বিশ্ব জুড়ে একই সময়ে ছিল নানা প্রজাতির মানুষের আস্তানা। আজ পর্যন্ত মাটি খুড়ে, সাগর সেঁচে আমরা কেবল ৩ প্রজাতির মানুষের কথা জানতে পেরেছি, যার একটি বাস করত বিচ্ছিন্ন ভাবে ইন্দোনেশিয়ার এক দ্বীপে, বামন মানব গোত্র- হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস, ইউরোপে বসবাসরত হোমো নিয়ান্ডারথাল বা নিয়ান্ডারথাল মানব এবং আমরা হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্সরা। এর মাঝে প্রায় পয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার বছর আগে নিয়ান্ডারথালদের সাথে আমাদের পূর্বপুরুষরা মুখোমুখি হয় ইউরোপে, যার ফলাফল তাদের জন্য নিয়ে আসে বিলুপ্তি! জেনেটিকভাবে শতকরা নিরানব্বই ভাগেরও বেশী মিল থাকা এই জাতের মানুষদের সাথে নানা লড়াইয়ে লিপ্ত হয় ইউরোপে পদার্পণ করা প্রথম হোমোস্যাপিয়েন্সরা, অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ বলে আমাদের পূর্বপুরুষদের পেশীশক্তির প্রয়োগ ও হত্যাকাণ্ডের ফলেই বিলুপ্তির সম্মুখীন হয় তারা। এমনকি তাদের হয়ত খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করেছে আমাদের পূর্বপুরুষরা!

তবে খেয়াল রাখতে হবে, বর্তমান পৃথিবীতে আমরা যত ধরনের মানুসেরা বসবাস করি- কালো, সাদা, হলুদ, আমাজন বা পাপুয়ার আদিবাসী- সবাই কিন্তু এক জাতি- হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স! এবং আমাদের কোন প্রজাতি নেই।

DSC03854

এটা আজ প্রমানিত, আমাদের পূর্বপুরুষদের যাত্রা শুরু হয়েছিল আফ্রিকার ঊষর প্রান্তর থেকে। তাই, দুই যুগ আগেও মানুষের উৎপত্তি এশিয়া না আফ্রিকা তাই নিয়ে তর্কের অবকাশ থাকলেও আজ সবাইই প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে মতৈক্যে পৌঁছেছেন আফ্রিকা আমাদের সবার আদি মাতৃভূমি। এর আগে এশিয়ার চীনে ও জাভায় যে প্রাচীন মানবজীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে তা আফ্রিকা থেকেই কোন এক পর্যায়ে রওনা দেয়া হোমো ইরেকটাসদের বন্ধুর পরিবেশে বিলুপ্ত হয়ে যাবার করুন ইতিহাস। আর হোমো স্যাপিয়েন্সদের বসবাস মূলত ছিল পূর্ব আফ্রিকা, বর্তমান তাঞ্জানিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়ায়।
পরবর্তী ঘরগুলোর অন্যতম আকর্ষণ এই এলাকার বিভিন্ন গুহায় পাওয়া প্রস্তরযুগের অস্ত্র, আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও কতই না শৈল্পিক দক্ষতায় আর পরম মমতায় গড়া হয়েছিল এইসব জীবন রক্ষাকারী অস্ত্র, প্রায় সবগুলোই পশুশিকারের কাজে এবং শিকার পরবর্তী চামড়া খোলা ও মাংস কাটার কাজে ব্যবহারের জন্য।

DSC03859

এর পরপরই আলোকপাত করা হয়েছে সেই ঘটনার উপরে যা সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রেখেছে মানুষের মানুষ হয়ে উঠতে- আগুনের ব্যবহার আবিস্কার! আমাদের পূর্বপুরুষেরা আগুনের ব্যবহার করত প্রথম দিকে হয়তবা কেবল নিরাপত্তা অথবা উষ্ণতার জন্য বা অস্ত্র গড়ার কাজে। তবে খাবার আগুনে রান্নার প্রক্রিয়া শুরু হয় আরো বেশ পরে, আর সেখানে থেকে মোড় ঘুরে যায় মানব সভ্যতার, ঘটা শুরু করে একের পর এক যুগান্তকারী পরিবর্তন-

আমাদের পূর্বপুরুষদের চোয়াল ছিল অনেক মোটা ও বড় হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত, কাঁচা মাংস ছিড়ে খাওয়ার উপযুক্ত, কিন্তু আগুনে ঝলসানো নরম মাংস খাওয়ার ফলে অসুখ-বিসুখতো কমলই, আবার চোয়াল কয়েক প্রজন্ম পরে হয়ে এল অনেক ছোট হয়ে,সেই কারণে ভারসাম্য রক্ষার্থে মানুষের আগের চাপা কপাল হয়ে গেল সামনে দিকে অনেক বড় অর্থাৎ অনেক বড় মাথার খুলির অধিকারী হল মানুষ ফলে মস্তিষ্কের আকার গেল অনেকখানি বেড়ে, বাড়ল বুদ্ধিমত্তা, যন্ত্র তৈরির ক্ষমতা, অজানাকে জানার ইচ্ছে। অবশেষে এই আফ্রিকা থেকে আমাদের পূর্বপুরুষদের ২০০ জনের এক ক্ষুদে দল রওনা দিল বাইরের বিশ্বে সত্তর হাজার বছর আগে, তাদেরই বংশধররা, আধুনিক মানুষেরা আজ সারা গ্রহের শাসনকর্তা রূপে প্রতিটি জায়গায় বিরাজমান।

DSC03866

DSC03941

অসাধারণ জাদুঘরটি দেখার পর দিনের শেষ গন্তব্য হিসেবে যাওয়া হল ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বা বিশ্ব সম্পদের মর্যাদা পাওয়া ক্রেডল অফ হিউম্যান কাইন্ডের মূল ফটকে সোজা বাঙলায় যাকে বলা হয় মানব জাতির আঁতুড়ঘর।

DSC03942

এখানে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছড়ানো বেশ কটি গভীর গুহা, পরিখা, সমতল ভূমি- যার বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া গেছে অমূল্য জীবাশ্ম সম্ভার, খোড়া-খুড়ি চলছে আজো প্রতিনিয়ত। এই এলাকার চুনাপাথরের খনিগুলোতে নানা প্রাণীর জীবাশ্মে পরিণত হওয়া দেহাবশেষের সন্ধান মিলতে থাকে ১৮৯০ থেকে, কিন্তু বিশ্বের সত্যানুসন্ধানীদের মনে চিরতরে স্থান করে নেয় স্টের্কফনটেইন গুহা ১৯৪৭ সালে, যখন এখানে প্রথম হোমিনিড ( মানুষ ও অন্যান্য এপের মধ্যবর্তী পর্যায়, নরবানর বলা যেতে পারে) জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়, যার বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়, অষ্ট্রেলিয়োপিথোকাস আফ্রিকানোস।

DSC03784

DSC03747

কয়েক মিলিয়ন বছরের পুরনো হলেও খুলি দেখে বোঝা যায় আধুনিক মানুষের কত কাছাকাছি ছিল তারা, বুদ্ধিমান মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় বড় করোটি, দুই পায়ে দাঁড়াবার ক্ষমতা ইত্যাদি ছিল প্রায় আমাদের ধাচেরই, আর এর পরেই মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের পুরনো চুনাপাথরের নিচের স্তরগুলোতে ঘটতে থাকে একের পর এক চমক জাগানো আবিষ্কার।

DSC03926

ওহ, মানে দিনের শেষ ভ্রমণের কথা বললেও বলা হয়নি, দিন শুরুই হয়েছিল স্টের্কফনটেইন গুহার একেবারে গভীরে যাত্রার মাধ্যমেই, ঠিক সেই জায়গাতে গিয়েছিলাম আমরা যেখানে ১৯৯৭ সালে পাওয়া গিয়েছিল অষ্ট্রেলিয়োপিথোকাস আফ্রিকানোসের এক পরিপূর্ণ কঙ্কাল, তেত্রিশ লক্ষ বছরের পুরনো এক শিশুর, যে কারণে এর নাম দেওয়া হয়েছিল লিটল ফুট। আদিপুরুষের সেই আবাসের কথা আরেক দিনের জন্য তোলা থাকল—–

DSC03870

( লেখার কিছু তথ্য বেশ আগে রুটস জার্নালের একটি আর্টিকেলে ছাপা হয়েছিল, অধিকাংশ ছবিই সেখানে কাঁপা কাঁপা এসেছিল বলে দুঃখিত)