পতন

আদনান আদনান

উৎসর্গ
ফ্রান্ঝ কাফকা

হলুদ-ও-লাল রঙের ফ্রক পরা একটি ছোট মেয়ে, ভর দুপুরে, যশোরের দড়াটানায়, আকাশ থেকে পড়ে, উঁপুড় হয়ে। তার মুখ দেখা যায়না। তখন আকাশে বাতাসে প্রচন্ড গরম। তাকে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দেখা যায়না। আবার তার শরীরে রক্তও দেখা যায়না। কে যেন একজন তাকে ধরে চিৎ করে শুইয়ে দেয়। তার শরীরের কোথাও কোন আঁচড় নেই, নেই কোন ক্ষত। মনে হয় সে ঘুমিয়ে আছে। তার চুল প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের মতো লম্বা। ঠোট বন্ধ। চোখ বন্ধ। গালের বাঁ পাশে এক রেখায় তিনটি তিল। যখন সবাই তিল তিনটি দেখে, তারা সবাই একটা মন্ত্র-মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। একজন বলে, “এত সুন্দর! বাচ্চাটাতো পরীর মতোন!” কেউ তাকে চিনতে পারেণা। তারা এমন শিশু আগে আর দেখেনি। তাদের এলাকায় এমন মেয়ে আর একটাও নেই। তারা বুঝতে পারে মেয়েটি ভিনদেশের, ভিনজগতের। আগন্তুক। তারা আরো বুঝতে পারে মেয়েটি তাদের কল্পনা যতোদূর যেতে পারে তার চেয়েও বেশি সুন্দর।

“আমি সবসময় এমন সুন্দর একটি মেয়ে আশা করেছিলাম।”
“ও তো একদম ছোট! খুব ছোট বাচ্চা রে! কি সুন্দর!”
“কি নির্মম মৃত্যু! কেন এমন হয়?”
“ও একদিন কারো খুব সুন্দর একটা বউ হতো।”
“শেষ, সব শেষ…”
“ও কি মানুষ?”
“হতে পারে।”
“মৃত্যু। মৃত্যু। মৃত্যু।”
“ধ্বংস। ধ্বংস। ধ্বংস।”
“কেউ আর তাকে বাঁচাতে পারবেনা। স্বয়ং আল্লাহও না।”
“কে জানে কতো বছর সে বাচঁতে পারতো।”
“খুবই দুঃখজনক। ও প্রেম বুঝলোনা। পেলোনা প্রথম চুম্বনের স্বাদ।”
“আরে! আকাশ যে ঝিমিয়ে আসছে। নরম ক্লান্ত আলোয় ওকে তো আরো সুন্দর দেখাচ্ছে!”
“কে ও? ও কি আমাদের মতো? আমরা কি ওর মতো?”
“কে জানে বেঁচে থাকলে বড়ো হয়ে ও কি হতো।”
“আমরা সবাই জানি ও মৃত। তারপরও, আমরা মানুষেরা কি একবার চেষ্টা করতে পারিণা?”

সকলের মাঝে একটা নীরবতা নেমে আসে। তারা সবাই একে অন্যের দিকে তাকাতাকি করতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ পরে একঝাক কাক মেয়েটির উপর এসে পড়ে। তারপর যা ঘটে, মেয়েটিকে ঘিরে একটি ছোট বৃত্তে দাঁড়িয়ে, সবাই তা দেখতে থাকে, আর পেরিয়ে যেতে থাকে অনন্তকাল।

আমার “নষ্ট রাত্রি” পড়ে অনেকেই আমাকে ই-মেইল পাঠিয়েছেন। ধন্যবাদ। বেশ কিছু ই-মেইলে আমাকে মা-বাপ তুলে অনেক ফালতু কথা বলা হয়েছে। তবে সুখের বিষয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনারা গল্পটির রসিকতা ধরতে পেরেছেন, এবং আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। আর লক্ষ্য করেছি যে অধিকাংশ নবীনেরা গল্পটির সঠিক রসিকতাটা ধরতে পেরেছেন, কিন্তু অধিকাংশ প্রবীণেরা তা পারেননি। আশা করছি “নষ্ট রাত্রি” এর মতো “পতন” ও আপনাদেরকে আনন্দ দেবে। ই-মেইলঃ [email protected]