ধিক্কার তাদের প্রতি যারা এই কাজ টা করলো । তারা যদি মনে করে যে তারা আমার একাউন্ট হ্যাক করে , আমার প্রোফাইল এর ক্লোন তৈরি করে কিম্বা ন্যক্কারজনক ভাবে আমার একাউন্টের উপর সুসংগঠিত ভাবে আক্রমণ করে আমাকে থামাবে , তাহলে ভুল করছে তারা । তারা কি জানে না যে , এভাবে আন্তর্জাতিক জগতে কাউকে ঠেকানো সম্ভব নয় ? তারা কি জানে না, পৃথিবীর কোনও দেশ ঠেকাতে পারেনি ? তারা কি জানে না যে, এই কাজ তাদের সবলতা প্রকাশ করে না ?

কি ঘটেছিলো , অনেকে জানতে চাইছে। বলছে , কি হল ? কেউ কেউ এখনও জানে না যে কেন আমার ফেসবুক একাউন্ট বন্ধ হয়ে গেলো ! কেউ কেউ ভাবছে যে আমি আজব মানুষ , নিজেই হঠাৎ নিজের ফেসবুক একাউন্ট বন্ধ করে দিলাম, কাউকে কিছু না জানিয়ে । তাই আমার এই পোস্ট । (কেউ কেউ আবার যারপরনাই আনন্দিত হয়ে পোস্ট দিয়েছে ফেসবুকে । তাই তাদেরও জানানোর জন্য আমার এই পোস্ট ।) আমি জানাতে চাই, ঠিক কি হয়েছিল সেদিন ।

তখন আমি খালার বাড়িতে । অনেকদিন ধরে ফেসবুকে বসা হচ্ছে না ভেবে খারাপ লাগছিল । এই বিষয়ে একটা স্ট্যাটাস ও দিয়েছিলাম সেদিন । আসলে বাস্তবে তো এত জন সমমনা পাওয়া অসম্ভব প্রায় । এখনও আমাদের উপমহাদেশে সেই সামাজিক উন্নতি হয়নি , যেখানে ধর্ম না মানার স্বাধীনতাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয় । তাই ফেসবুকের বন্ধুরা আমার খুব কাছের মনে হয় । তাছাড়া বাংলাদেশ আমার আম্মির দেশ । সেখানে আমার ভাষার মানুষজন । সেই দেশের মানুষদের সাথে কথা বলতে , সেই দেশের মানুষের সাথে ভাব বিনিময় করতেও খুব ভালো লাগে । মনে হয় এরা আমার কত চেনা , কত আপন । অন্যের বাড়িতে বলে সেখানে কম্পিউটার থাকা সত্ত্বেও হাত দিচ্ছিলাম না। একে গ্রাম তারপর সেখানে ইন্টারনেট খুব দুর্বল গতির । শেষমেশ ভাই(খালার বড় ছেলে)-কে বলেই ফেললাম , “ ভাই, একবার তোর কম্পিউটারে ফেসবুক টা খুলবো ?” ভাই তো সঙ্গে সঙ্গে খুব খুশি হয়েই রাজী হয়ে গেলো । গত ১৪ –ই জুলাই সারা রাত আমি কম্পিউটারে বসেছিলাম । ট্রেনে খালার বাড়ি আসতে আসতে যে লেখার ফাইনাল খসড়াটা তৈরি করেছিলাম, সেটা লিখলাম । ১৫ তারিখ সকালে তো দু’ চোখ বুজে আসছে ঘুমে । শেষে এক ফেসবুক বন্ধু , শুভ মাইকেল ডি কস্টা, তাকে অনলাইন পেয়ে বললাম একটু এডিট করে দিতে । সে খুব যত্ন নিয়ে করে দিল কাজ টা । খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন আমার ওই লেখায় বানান ইত্যাদি ভুল নগণ্য । তো আমার লেখা টা “ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ : কিছু নতুন কথা” নামে ১৬ তারিখে মুক্তমনায় বের হওয়ার পর আমি আমার পরিচিত কয়েকটা গ্রুপে লেখা টা শেয়ার করেছিলাম । এবং তারপর অন্য অনেক গুলো ব্লগেও লেখাটা দিলাম । আমার লেখাটা কেমন হয়েছে সেই নিয়ে অনেকে ফিড ব্যাক দিচ্ছিল । কেউ কেউ প্রশ্ন করছিল ফেসবুকে । আমি উত্তর দিচ্ছিলাম । অনেকে দেখলাম লিঙ্ক শেয়ার ও করছে । সারা দিন কম্পিউটারে বসে ফিডব্যাক পেতে ভালই লাগছিল । শেষে, সন্ধ্যা বেলায় শুকতারা গ্রুপে এক ব্যক্তির কমেন্ট পড়ে এত ভালো লেগেছিল যে তাঁকে বন্ধু অনুরোধ পাঠালাম । তিনিও সাদরে গ্রহণ করলেন । কিন্তু সন্ধ্যাবেলায় ভাবছি তাঁর সাথে একটু কথা বলবো, আগে তাঁর কমেন্টের প্রত্যুত্তর দিয়ে নিই। তাই কমেন্ট করা শুরু করলাম । কিছুটা লিখেছি । আচমকা দেখি, লগ আউট হয়ে গেলাম । আমি তো অবাক ! আচমকা কমেন্ট করতে করতে লগ আউট!!?? সে আবার কিভাবে সম্ভব ??

একবার ভাবলাম কম্পিউটারের সমস্যা। একবার মনে হল হয়তো ব্রাউজার বা ফেসবুকের সমস্যা হবে । আমি আবার লগ ইন করতে গিয়ে ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড দিয়ে দেখি কিছুতেই লগ ইন করা যাচ্ছে না । শেষে অন্য একটা ব্রাউজারে লগইন এর চেষ্টা করতে দেখি লগ ইন হল । তখন দেখি আমার দেওয়ালে নোটিফিকেশনের জায়গায় প্রায় ১৩১ দেখাচ্ছে । আমি আবার অবাক । কিছুক্ষণের মধ্যে এত !!
অবাক হওয়ার পালা তখনও শেষ হয় নি । নোটিফিকেশন এর ডিটেল দেখতে গিয়ে দেখি সব গুলোই প্রায় আমার প্রোফাইল এর বিরুদ্ধে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগের-ই নোটিফিকেশন। নোটিফিকেশনের ডিটেল দেখতে দেখতে ই আরও কয়েকটা অভিযোগ পড়লো । তখন সব কিছু জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো আমার কাছে । বুঝলাম সুসংগঠিত ভাবে আমার বিরুদ্ধে খালি রিপোর্ট করা হচ্ছে । হয়তো আমার লেখার বিরুদ্ধে ওদের দেওয়ার মতো কোনও যুক্তি নেই , হয়তো আমার শেষ লেখা তে যে ধরণের মানুষ গুলোর মুখোশ খোলা হয়েছে , সেই ধরণের মানুষগুলোর অভিপ্রায় কি তা প্রকাশ হয়েছে যেভাবে আগে কেউ করে নি এবং তাদের যে শ্রেণীতে ফেলা হয়েছে সেটা তাদের পছন্দ হয়নি । তারা যুক্তিতে না পেরে হেরে গিয়ে শেষে এই কাপুরুষের মতো পন্থার আশ্রয় নিয়েছে । হয়তো কোনও গ্রুপের সদস্যরা অনেকে মিলে রিপোর্ট করেছে ।
এই সব সাত-পাঁচ ভাবছি , হঠাৎ মিনিট দশ এর মধ্যেই আবার আমি লগ আউট হয়ে গেলাম । এবার স্থায়ীভাবে । আর কোনও ভাবেই লগ ইন হল না । কিছুক্ষণের জন্য বিপর্যস্ত লাগছিল নিজেকে । মনে হচ্ছিলো এরকম করলে তো কিছুই করার নেই । অসহায় ভাবে চুপচাপ হতে দেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না । তবে কি আমার লেখার স্বাধীনতার সীমা শেষমেশ ওরা ঠিক করে দেবে ?

যাই হোক, আমি আর আমার ফেসবুক প্রোফাইল এ প্রবেশ করতে পারছিলাম না । কিন্তু তখনও আমার ইমেইল আই ডি তে মেসেজ হিসাবে বন্ধুদের অনেক কথা জানতে পারছিলাম । আমার প্রোফাইল নিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও জানতে পারছিলাম । কিন্তু উত্তর দিতে পারছিলাম না । খুব অসহায় লাগছিল । খানিক টা টিভি তে ভূতের সিনেমায় দেখানো আত্মার মতো । (যদিও ,আত্মা আর ভুত একই না আলাদা সে তো আধিবিদ্যক প্রশ্ন ! সে বিতর্কে না ঢোকাই ভালো !)

আমাকে পাগল বলবেন হয়তো , কিন্তু যতবার-ই দুরবস্থায় পড়ি প্রতিবার-ই আমার বুদ্ধ আমার মনে শক্তি যোগায় । কিভাবে জানি না । কুসংস্কার বলুন ,অন্ধবিশ্বাস বলুন কিম্বা মেয়ে সুলভ আবেগ — যাই বলুন না কেন , বুদ্ধের বাণী কোনোদিন আমাকে হেরে যেতে দেয় নি । আমি কোনও অলৌকিকের কথা বলছি না । অলৌকিকে বিশ্বাস তেমন নেই । কিন্তু ওই মুহূর্তেই কেন জানি না মনে পড়লো বুদ্ধের সেই বাণী— “সব শুরুরই একটা শেষ আছে , সব শেষেরই একটা শুরু আছে ।” মনে অনেক জোর চলে এলো নিজে থেকেই । প্রতিজ্ঞা করলাম , এবার শুরু টা আরও সবল হবে । আবার একটা একাউন্ট খুললাম । ‘কাফির মহসিনা’ নামে । রাতে ঘুম হল না । ১৭ তারিখ সকালেই বাড়ি ফিরে এলাম । একাই । আম্মি এখনও আছে খালার বাড়িতে । এসে কয়েকজনকে নিজের পরিচয়ের প্রমাণ দিলাম আমার নতুন একাউন্ট থেকে । তারা আমার কথা অনেকের কাছে ছড়িয়ে দিল । আবার আমি যেন পায়ের নিচের জমি ফিরে পেলাম । খুব আনন্দ হল । মনে হল , তাহলে আমরাও সংগঠিত । আমরাও লড়তে পারি । তবে আমাদের লড়াই ধ্বংসমূলক নয় , গঠনমূলক লড়াই । বন্ধুদের পাসে আমরা সর্বদাই থাকলে কেউ আমাদের বাকরোধ করতে পারবে না । এত শক্তি কারো নেই যে এই বৌদ্ধিক ও সামাজিক আন্দোলনকে থামিয়ে দেবে ।

এর আগেও তারা আমার একাউন্ট-এর ক্লোন বানিয়ে বিপরীত প্রচার করে আমাকে অসুবিধায় ফেলতে চেয়েছে । তখনও আমার বন্ধুরা আমাকে সাহায্য করেছিল । সেই প্রচেষ্টা অচিরেই ব্যর্থ করে দিয়েছিল তারা । এবার ও তারা প্রচুর সাহায্য করলো । তাদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ । বন্ধুদের কাছে আমার একটাই দাবী , শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়, সবার ক্ষেত্রেই আমাদের একে অপরের পাসে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হবে । তবেই পুব আকাশ রাঙ্গা করে একদিন সুদিন আসবে । হবে নতুন সকাল । তবেই পরবর্তী প্রজন্মের মন ও মস্তিষ্কের কালো কালো কুঠুরি গুলোয় আলো পড়বে । সেই আলো ছড়িয়ে পড়বে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে । সেদিন আমরা থাকি না থাকি , শেষের হাসি আমরাই হাসবো। সেই হাসি শিশু কে শৈশব ফিরিয়ে দেওয়ার হাসি, পৃথিবী কে শান্তি ফিরিয়ে দেওয়ার হাসি । সে হাসি ব্যঙ্গের নয় ,পরিতৃপ্তির ।

সবশেষে, যারা আমাদের আটকাতে উদ্যত, যারা সর্বদাই আমাদের প্রোফাইলে নজরদারী করে , তাদের বলি , যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে যুক্তির বদলে যুক্তি দিন, ব্যঙ্গের বদলে ব্যঙ্গ করুন । সামনে থেকে লড়ে দেখান। এরকম নোংরা কাজ আপনাদের হীনতা, হেরে যাওয়া মানসিকতা আর ফ্রাসট্রেশনকেই প্রকাশ করে। আর ফ্রাসট্রেশন দেখানোর জন্যও যদি আপনাদের সংগঠিত হওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে তা আরও হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায় ।