সত্যজিৎ রায়ের সাথে আমার পরিচয় তার লেখা রহস্যোপন্যাসে। এমনই ছিল সে মুগ্ধতা, সে বিভোরতা, ফেলুদা হয়ে উঠেছিল এক চরিত্র- সে বাস্তব নাকি কল্পনা, ভাবার সময় পাইনি আমি। প্রথম হাতে নিয়েছিলাম বাদশাহি আংটি। এরপর কতদিন কেটেছে ফেলুদার সাথে এখন আর মনে করে উঠতে পারিনা। সেই স্কুল-বেলার গল্প! ফেলুদাতে এমন ভাবে মজে গিয়েছিলাম, যে এর লেখককে আর মনেই পড়ত না আমার। এইদিক থেকে সত্যজিৎ আমার কাছে আসলেই আলাদা। রবীন্দ্রনাথের যে কোন সৃষ্টিতে হাত দিলে সৃষ্টির চেয়ে বেশী মনোযোগ পায় স্রষ্টা। কারণ চারপাশে যাদের দেখি সবাই রবীন্দ্রনাথ পড়ে, সব্বাই। রবীন্দ্রনাথ না পড়া, মূর্খতার শামিল। তাই আমিও পড়ি। বুদ্ধি হবার আগ থেকে বাসায় টেপ রেকর্ডারে রবীন্দ্রসংগীত বেজে বেজে এমন অবস্থা ছিল, গান মানেই বুঝতাম রবীন্দ্রসংগীত। তা নাহয় ধরলাম রবীন্দ্রনাথের কাহিনী আলাদা, সে নোবেলজয়ী, উপমহাদেশের সাহিত্য বলতে সবার আগে তার নাম উচ্চারণ হয়। কিন্তু বাকিদের বেলায়? নজরুলেও তো তাই। বেগম রোকেয়া, শামসুর রাহমান, হালের হুমায়ুন আহমেদ, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল প্রমুখের যত লেখা পড়েছি, সে ঐ নাম দেখেই পড়েছি। ব্যতিক্রম দেখি একমাত্র সত্যজিতে। সত্যজিৎ রায়ের নাম দেখে আজো আমার পড়া হয়নি কিছুই, তবে যা পড়েছি পড়া হয়ে গেছে। সত্যজিতের সৃষ্টি কর্ম হাতে এসে গেছে, পড়া হয়ে গেছে, সত্যজিতের নাম দেখে হাতে নিতে হয়নি আমার। তার প্রত্যেকটা সৃষ্টি যখনই হাতে নিয়েছি, কি মায়া মন্ত্রবলে এক্কেবারে তাতে মিশে গেছি! বইয়ের ফ্ল্যাপ দেখার সময়টা হয়নি আর। একজন লেখক তখনই সত্যিকার অর্থে সার্থক হয়ে উঠে, যখন তার সৃষ্টি দিয়ে ভুলিয়ে দিতে পারে স্রষ্টাকে, তার সৃষ্টিই এতো বেশী জীবন্ত, বাকি সব তার পাশে নগণ্য। ফেলুদা এমন জীবন্ত হয়ে মনে ভাসে, মনেই পড়ে না, ফেলুদার কারিগর যে সত্যজিৎ রায়। এতো গেলো আমার কথা, আমার বোনের রোজ রাতে মাথার কাছে ফেলুদা সমগ্র না থাকলে ঘুম হয় না। ও ফেলুদা পড়তে পড়তে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়বে, তারপর আমি ওর বালিশের পাশ থেকে সরিয়ে নেব বইটা, এই ছিল রোজকার ঘটনা। বহুবার পড়া একেকটা গল্প, তবু যেন আমার বইপোকা বোনটার আশ মিটে না।

ব্যক্তি সত্যজিৎ রায়কে তেমন একটা জানাই হয়নি আমার ইতিপূর্বে। এবার অনেকটা এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ হাতে নিলেম “অপুর পাঁচালি”- সত্যজিৎ রায়ের জীবন চরিত। অপুর পাঁচালি হাতে নিয়ে গোগ্রাসে গিলেছি… সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে এর আগেও একটা বই পড়েছি, সেসব পড়া থেকে সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে যে চিত্রটা মনে মধ্যে গাঁথা ছিল, একজন প্রাণপূর্ণ কর্মোচ্ছল মানুষ। এবারেই প্রথম বুঝলাম আমার ধারনাটা কতখানি সত্য ছিল। সত্যজিৎ রায়- এমন একজন কর্মী মানসের নাম, যার জীবন চরিতের পরতে পরতে কর্মের গল্প। তার কাজ দেখলে মনে হয়, প্যাশন শব্দটা ডিকশনারির পাতায় বর্ণিত কোন বিমূর্ত শব্দ নয়, প্যাশন ছুঁয়ে দেখা যায়, আঙ্গুল দিয়ে সত্যিকার অর্থে স্পর্শ করা যায়। সত্যজিৎ রায় তার জীবন-জুড়ে যত কর্মের মাঝে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, তার মাধ্যমেই মূর্ত হয়ে উঠেছে কাজের প্রতি তার গভীর ভালোবাসাটা। জীবনটাকে কতটা উচ্ছলতা, কতটা কর্ম, কতটা উত্তেজনায় ভরিয়ে দেয়া যেতে পারে, তার একটা ধারনা পাওয়া যেতে পারে অপুর পাঁচালি বইটা থেকে। তার জীবনের শেষ সময়ে লেখা “অপুর পাঁচালি” প্রমাণ করে, সত্যজিৎ একটি চির-তরুণ মানসের নাম।

বইটির শুরুতেই সত্যজিৎ রায়ের স্ত্রীর লেখা মুখবন্ধ, সত্যজিতের নয়। আগ্রহ নিয়ে পড়লাম, সত্যজিতের আত্মচরিতে কেন বিজয়া রায়ের লেখা মুখবন্ধ! পড়ে যা বুঝলাম, তার সার কথা হল, সত্যজিৎ রায় তার প্রত্যেকটা লেখা শেষ করে যাকে সবার আগে পড়তে দিতেন, তিনি বিজয়া রায়। সত্যজিৎ এবং বিজয়ার আগ্রহ, মানসিকতা বাঁধা ছিল একই সুতোয়। বিজয়া খুব ভালোভাবে পরিচিত ছিলেন সত্যজিতের কাজের সাথে, কাজের ছন্দটা সাথে মিশিয়ে দিতে পারতেন নিজেকে অনায়াসে। সত্যজিৎ যখন “অপু” -এর প্রথম ড্রাফটটা শেষ করলেন, তখন অন্য সববারের মত এইবারে দিলেন না স্ত্রীর হাতে তুলে ভুল চুক দেখিয়ে দেবার জন্য, বরং ডুবে গেলেন আরেক কাজে। বিজয়া যখন জানতে চেয়েছিলেন, তখন বিজয়াকে বলেছিলেন, এখন নয়, “অপু”-তে কিছু ঘষামাজার কাজ বাকি আছে, শেষ হলেই তিনি বিজয়াকে পড়তে দেবেন। এই-ঘটনার তিনমাসের মাথায় সত্যজিৎ প্রথমে হাসপাতালে, অতঃপর ইহলোক ছেড়ে গেলেন। এরই মাঝে “অপু”র ঘষামাজা শেষ করে ফাইনাল ড্রাফট তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সত্যজিতের মৃত্যুর পর তার ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাওয়া যায়নি “অপু”র ফাইনাল ড্রাফটটি। চুরি গেছে ফাইনাল ড্রাফটটি, রয়ে গেছে প্রথমটি। সত্যজিতের ছেলে সন্দীপ তাই এনে দিলেন মায়ের হাতে, আর বললেন, মা, তুমি ছাড়া আর কেউ নেই এইখান থেকে কিছু উদ্ধার করে। বিজয়া খাতা খুলে দেখেন, অজস্র কাটাকুটিতে ভরা সে খাতা, কিচ্ছু বোঝা যায় না। আসলেই কারোর সাধ্য নেই ঐ কাটাকুটি ভরা খাতার মর্ম উদ্ধার করার। বিজয়া প্রথম বার দেখে বন্ধ করে দিলেন, এরপর আবার দেখলেন, তারপর আবার, তৃতীয়বারে যেন মনে হল, কিছু বুঝতে পারছেন। এইভাবেই “অপুর পাঁচালি” উদ্ধার করা গেল সত্যজিতের মৃত্যুর পরে। বিজয়ার বড় আফসোস ছিল, ফাইনাল ড্রাফটে নিশ্চয় সত্যজিৎ আরও অনেক পরিমার্জন করেছিলেন, সেগুলো আর জানা হল না। পড়তে বসে বুঝেছি, বিজয়া তার জীবন সঙ্গী সত্যজিতের সাথে কতটা একাত্ম হলে এমন নিপুণ ভাবে উদ্ধার করে আনতে পারেন “অপুর পাঁচালি”, যা বিজয়ার মাঝে মৃত্যু শোক ভুলিয়ে এনেছিল সত্যজিতের বয়ানে সত্যজিৎকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা।

সত্যজিতের আত্মচরিতের শুরুতেই উঠে এসেছে এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ পরিবারের কথা। সত্যজিৎ রায়ের দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর বহুমুখী প্রতিভার চিত্রকল্প। উপেন্দ্রকিশোর একাধারে সংগীতজ্ঞ, আঁকিয়ে, ছাপা-শিল্পের প্রবর্তক, শিশুসাহিত্যের পথিকৃৎ। এই মানুষটি তার অজস্র সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবার পাশাপাশি পরিবর্তন আনেন উপমহাদেশের প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে। সেই সময়ের, ১৮৮৫ সালের ভারতে যে ছাপা-শিল্পের প্রচলন ছিল ভারতে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট না হয়ে নিজ খরচার বিলাত থেকে আমদানি করেন চাপার আধুনিক যন্ত্রপাতি, এবং হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং নিয়ে নিজে লিপ্ত হন গবেষণায়। সেইসাথে পত্তন করেন নিজেদের ছাপাখানা ইউ রায় এন্ড সন্স। সেখান থেকেই পরবর্তীকালে প্রকাশ হত শিশুতোষ পত্রিকা “সন্দেশ” যার জন্য লেখালেখির কাজ তো তিনি করেনই, সাথে সন্দেশের অলংকরণের কাজও তিনি নিজের কাঁধেই তুলে নেন। ছাপা-শিল্পের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই বোধ হয় উপেন্দ্রকিশোর তার মেঝো-ছেলে এবং পরবর্তীকালের প্রখ্যাত ছন্দের যাদুকর ছড়াকার সুকুমার রায়কে পাঠান বিলেতে ছাপা-শিল্পে শিক্ষা গ্রহণ করতে। তার বিলাত থাকাকালীন সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিলাতে বেড়াতে যান এবং সুকুমার রায়ের লেখা একটি ইংরেজি প্রবন্ধের মাধ্যমের ইংরেজ সমাজ পরিচিত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তার সৃষ্টি কর্মের সাথে (তথ্যসূত্র: সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় সুকুমার রায়কে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র )। যাই হোক, তিনি বিলাত থেকে ফিরে এসে নিজেদের ছাপাখানা দেখাশোনা, নতুন পদ্ধতিতে হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং-এর প্রচলনের পাশাপাশি নানাবিধ ছড়া সৃষ্টিতে নিয়োজিত হন। আবোল তাবোল, হ-য-ব-র-ল, পাগলা দাশু ইত্যাদি তার সেই সময়ের কাজ। এইসব সৃষ্টিকর্ম তাকেও জনপ্রিয় করে তোলে শিশুসাহিত্যিক হিসেবে। মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে মারা যান এই এই প্রতিভাবান ছড়াকার, রেখে যান তিন বছর বয়সী একমাত্র সন্তান সত্যজিতকে। সত্যজিৎ বড় হন তার মামার আশ্রয়ে। সে জীবনে তাদের অর্থকষ্ট ছিল ভালোই। সত্যজিতের মা সংসারের কিছু বাড়তি আয়ের জন্য কলকাতার একটি লেডিস ক্লাবে সূচীকর্ম শিখাতেন। কিন্তু এমন বিরূপ অবস্থাতেও আমি বলব সত্যজিতের মা ওঠা সুকুমার রায়ের স্ত্রী সুপ্রভা দেবী ছিলেন উদার মনের মানবী। সত্যজিৎ যখন পরিবারের অর্থকষ্টের কথা মাথায় রেখে বিএ পাশের পরেই চাকরীতে ঢোকার কথা চিন্তা করছিলেন, তখন সুপ্রভা দেবীই ওসব চিন্তা ছাড়িয়ে তাকে শান্তিনিকেতন ছবি আঁকা শিখতে পাঠান।

সত্যজিতের ঝোঁক ছিল প্রফেশনাল আর্টে। তিনি যখন শান্তিনিকেতনে গেলেন, সেইখানে তার ছবি আঁকার কারণে মাঝে মাঝে শান্তিনিকেতনের বাইরের গ্রামে গিয়ে ছবি আঁকতে হত। শহুরে পরিবেশে বড় হওয়া সত্যজিতের কাছে গ্রাম তার অপার সৌন্দর্য নিয়ে ধরা দেয় এই প্রথম। কিন্তু এইখানে এসেই তিনি অনুধাবন করেন, তার জীবনের মূল আগ্রহ, চলচিত্র থেকে যেন তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। কলেজে পড়বার সময়েই তার ঝোঁক চলে যায় চলচ্চিত্র নির্মাণের কৌশলের দিকে। তখনও ভাবেননি তিনি কোনদিন চলচ্চিত্রকার হবেন, কিন্তু ঝোঁকটা তিনি বুঝতে পারতেন। আরেকটা ব্যাপারে তিনি অস্বস্তিতে ভুগতেন, বাহিরে যখন বিশ্বযুদ্ধ, তখন শান্তিনিকেতনের ভিতরে যেন শুনশান নিরিবিলি পরিবেশ। জগতের উত্তাল সময়, যুদ্ধের উত্তাপ, মানবের স্বাভাবিক জীবন-চিত্র কিছুই যেন শান্তিনিকেতনের পরিবেশে ছাপ ফেলে না। সেই একই ভাবে তারা নিরিবিলি ছবি আঁকছেন, একইভাবে সন্ধ্যায় নাটকের আয়োজন হচ্ছে, একইভাবে শিল্প চর্চা হচ্ছে, এ যেন শিল্পের জগতে গিয়ে বাস্তব পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। যেদিন কলকাতায় জাপানীরা বোমা বর্ষণ করে, সেদিন সত্যজিৎ আড়াই-বছরের মাথায় ছবি আঁকার পাঠ অসমাপ্ত রেখে শান্তিনিকেতন ছাড়েন। সেইদিন তিনি কলকাতার কোন এক প্রেক্ষাগৃহে বসে মনে তৃষ্ণা মিটিয়ে চলচ্চিত্র দেখেছিলেন। কেমন এক অসাধারণ তৃপ্তির পরশ যেন তার মনের মধ্যে বয়ে যায় সেই সময়ে।

শান্তিনিকেতন ছাড়ার সময় তিনি তার শিক্ষকে বলে এসেছিলেন, তিনি প্রফেশনাল আর্টে আগ্রহী, তাই ছেড়ে যাচ্ছেন শান্তি নিকেতন। তাই যথারীতি তার মাথায় ঘুরতে থাকে নতুন কিছুর চিন্তা। এইসময় আমরা দেখি, মানে আসলে তার আত্মচরিতের বর্ণনায় আমার মনে যে চিত্রকল্পটি ভেসে ওঠে, সেটি হল, সত্যজিৎ যেন কোন কিছুতে কোন তাড়া নেই এমন ভঙ্গিমায় প্রতিদিন খবরের কাগজ খুলে দেখতে থাকেন কাগজের বিজ্ঞাপন গুলো। আর কি যেন ভাবতে থাকেন, কি যেন খোঁজেন তাতে। তার লেখা বর্ণনায় আমরা পেয়েও যাই সেই উত্তর। তার মনে হতে থাকে, কিছু কিছু বিজ্ঞাপন আলাদা হলেও তাতে কেমন একটা যোগসূত্র পেয়ে যান। খোঁজ নিয়ে দেখেন, সেই বিজ্ঞাপন গুলো একই কোম্পানির তৈরি করা। একই শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় কেমন একটা প্যাটার্ন খুঁজে পান। এরপরই, শান্তিনিকেতন থেকে আসার চার মাসের মাথায় বিজ্ঞাপনী সংস্থা কিমারে যোগদান করেন তিনি। সত্যজিতের চলচ্চিত্রকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করার আগে তিনি এই কিমারেই চালিয়ে গেছেন তার কর্মযজ্ঞ। একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার আর্ট ডিরেক্টর থেকে চলচ্চিত্রকার হিসেবে আত্মপ্রকাশের পিছনে তার এইখানে কাজের সময়ে পরিচয় পাওয়া মানুষদের সাহচর্য তাকে যথেষ্টই সাহায্য করেছিল। পথের পাঁচালির পুরো শুটিং তিনি বিভিন্ন সময়ে কিমারের কাজ থেকে ছুটি নিয়ে নিয়ে করেছিলেন। পথের পাঁচালির সাফল্যই তাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় তার স্বপ্নের জীবনে, তার এই যাত্রাটা আমার দৃষ্টিতে স্বপ্ন যাত্রা। কিভাবে একজন মানুষ স্বপ্নের পথে হাঁটতে পারে, তার উদাহরণ সত্যজিতের স্বপ্ন-যাত্রা!

চলচ্চিত্রকার সত্যজিতের জন্ম বোধ করি চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শক হিসেবে। সংগীত আর চলচ্চিত্রে তার অনুরাগ ছিল, চারপাশের সাধারণ মানুষের মতই। আগ্রহ ছিল অভিনেতা অভিনেত্রীর অভিনয়ে। কিন্তু কলেজে ওঠার পরই তার মনোযোগ ঘুরে যায় চলচ্চিত্রের তাত্ত্বিক দিকে, তাঁর ভাষার তার চোখের সামনে খুলে যেতে থাকে নতুন এক আশ্চর্য জগত, এই রূপকথার সোনার কথাটি যেন বুলিয়ে গেলো সেই সময়ে পড়া পুডভকিনের দুখানা বই, বই দুটির নাম উল্লেখ করেন নি তিনি অপুর পাঁচালিতে। তবে তিনি উল্লেখ করেন সাইট এন্ড সাউন্ড নামে একখানে পত্রিকার, যার গ্রাহক হয়েছিলেন তিনি। ক্রমেই পরিচিত হতে শুরু করেন ফিল্ম মেকিং-এর কৌশলের সাথে। তিনি চলচ্চিত্র দেখতে শুরু করেন নতুন এক দৃষ্টি ভঙ্গী থেকে, কোথায় পরিচালক অ্যাকশন বলেছে, কোথায় কাট করেছে, এইসব যেন তার চোখে ভেসে উঠতে থাকে। এবার তার নায়ক হয়ে ওঠে পর্দার পিছনের মানুষটি যার পরিচালনা ধারণ করা হয়ে দৃশ্যগুলি। এভাবেই জন্ম নিয়েছিল পরিচালক সত্যজিৎ। তার এর রূপান্তরের কথা যখন পড়ি, উচ্ছ্বাস জাগে, কিন্তু আমি নিজে খুব সাধারণ একজন দর্শক, যে চলচ্চিত্র দেখে সময় কাটাতে, গল্পের লোভে, আবেগের লোভে, সেই আমি তো ঠিক বুঝতে পারিনা, কেমন ছিল সত্যজিতের উচ্ছ্বাসটা।

সত্যজিৎ তরুণ বয়সে প্রথম যে চিত্রনাট্য লিখেছিলেন, সেটি রবিঠাকুরের ঘরে বাইরে উপন্যাসকে উপজীব্য করে, কিন্তু প্রযোজকের সাথে চিত্রনাট্য পরিবর্তন সম্পর্কে মনোমালিন্য হওয়াতে সেই ছবি তখন আর নির্মাণ করা হয়নি। কিন্তু উনিশশো তিরাশি সালের দিকে ঠিকই তিনি নির্মাণ করেন “ঘরে বাইরে”। তখন একবার দীর্ঘদিন আগে লেখা চিত্রনাট্যটাতে চোখও বুলান, আর অনুভব করেন, সেদিন ঘরে বাইরে যদি নির্মাণ হত, তবে সত্যজিতের কোনদিন পরিচালক হয়ে ওঠা হত না, সবকটা পাপড়ি মেলে বিকশিত হবার আগেই তিনি ঝরে যেতেন অসম্ভব রকমের কাঁচা কাজের জন্য।

পরিচালক সত্যজিৎ যখন আত্মপ্রকাশ করেন তখন তিনি তার প্রথম ছবি, “পথের পাঁচালি”তেই সমগ্র বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছিলেন তার মেধার কথা। শুরুটা কেমন যেন নিরস ধরণের। কিমারে কাজ করতে গিয়ে তার পরিচয় হয় ডি. কে. গুপ্তা নামে এক ভদ্রলোকের সাথে, যিনি কিমারে কাজের পাশাপাশি চালু করেছিলেন সিগনেট প্রেস নামে একটি বইপ্রকাশের প্রতিষ্ঠানও। এই প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব বই বের হত, সেসবের অনেকগুলোর প্রচ্ছদ অংকন করতেন সত্যজিৎ রায়। একবার ডি.কে গুপ্তা ঠিক করলেন পথের পাঁচালীর সংক্ষেপণ করে কিশোর সংস্করণ বের করবেন আর তার প্রচ্ছদ আঁকাবেন সত্যজিৎ রায়কে দিয়ে। এদিকে সত্যজিৎ তখনও পড়েননি মূল বইটিই। ডি.কে. গুপ্তার নির্দেশে তিনি হাতে নিলেন পথের পাঁচালী, পড়ে তো তিনি মুগ্ধ। সাথে সাথে মাথায় খেলে গেল, এই বই থেকে হতে পারে একটা চমৎকার ছবি। কোনদিন যদি ছবি নির্মাণ করেন তবে পথের পাঁচালি তিনি নির্মাণ করবেনই। তার পরিচালক জীবন সত্যিই তিনি শুরু করেছিলেন “পথের পাঁচালি” দিয়ে।

সত্যজিতের সাথে তার সেই তরুণ দুরন্ত সময়ে পরিচয় হয়েছিল এক-ঝাঁক ফিল্ম পাগল মানুষের, তাদের নিয়েই সত্যজিৎ গড়েছিলেন কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি, যাদের কাজ ছিল প্রত্যেক শনিবারে একসাথে বসে ফিল্ম দেখা আর ফিল্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা। পথের পাঁচালির শুটিং যখন তিনি শুরু করেন, পাশে পেয়েছিলেন এই ফিল্ম সোসাইটিটাকেই, এই দলটা কিভাবে যেন রূপান্তরিত হয়ে গেল শুটিং ইউনিটে, কেউ ভাবছে না শুটিং করে ক’টাকার রোজগার হবে, কিন্তু কি উৎসাহের জোয়ারে ভেসে তারা শুরু করতে যাচ্ছে একটি চলচ্চিত্রের শুটিং। তারা প্রযোজক খুঁজে চলেছে হন্নে হয়ে, কিন্তু কেউ রাজি নয় অর্থ লগ্নি করতে। আর হবেই বা কেন? এই দলটির না আছে কোন অভিজ্ঞতা, না আছে প্রচলিত ধারার চিত্রনাট্য। পুরো মুভিতে নেই নায়ক-নায়িকা, নেই সাজ সজ্জা, নেই নৃত্য-গীত… লোকে কেন আসবে এই চলচ্চিত্র দেখতে! তখনকার ভারতে চলচ্চিত্র বলতে মানুষ যা বুঝত, তারা মোটেও সেই ধারার কিছু নির্মাণ করতে চাইছে না। তারা চলচ্চিত্র বানাতে চায় একটা আর্ট-ফর্ম হিসেবে, অর্থ উপার্জনের পন্থা হিসেবে নয়। তারুণ্যের জোয়ারে কত অদ্ভুত স্বপ্নই না আসে মনে। তাই প্রযোজকরাও রাজি হল না তার ছবিতে টাকা ঢালতে। অবশেষে একজন রাজি হল, তার সম্প্রতি একটি ছবিতে বেশ ব্যবসা হয়েছে, তাই আরেকটি ছবিতে লগ্নি করেও বেশ কিছু টাকা হাতে আছে। তিনি তখন ৭০ হাজার টাকার মোট বাজেটের মধ্যে ৪০ হাজার টাকা দিলেন সত্যজিতের দলের হাতে, তবে শর্ত হল, অর্ধেক শুটিং-এর পরে যদি দেখেন কাজ হয়েছে ভালো, তবেই তিনি বাকি টাকা দেবেন। তারা তাতেই রাজি- বিশ্বাস ছিল, প্রমাণ করতে পারবেন তারা নিজেদের। ততদিনে ঐ ভদ্রলোক আরেক ছবিতে মার খাওয়ায় অর্ধেক ছবি শেষ করবার পরে ঐ ভদ্রলোকের কাছ থেকে বাকি টাকা আর তারা পাননি ছবিটা শেষ করার জন্য। আটমাস বিরতির পর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের অনুদানে শেষ হয় পথের পাঁচালি ছবিটি। পথের পাঁচালির খন্ড খন্ড মেকিং-এর কথা পড়লে মনে হয়, এটা ছিল একটা অ্যাডভেঞ্চার, কি এক দারুণ নেশায় পেয়ে বসা একদল তরুণ এগিয়ে চলেছে অজস্র বাধা পেরিয়ে। এর পরিচালক, ক্যামেরাম্যান, আর্ট ডিরেক্টর, আর্টিস্ট সবই নতুন, কারোর নেই কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা, একমাত্র হরিহর চরিত্রে অভিনয় করা কানু বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া… অথচ এই ছবিটিই কিনা একই সাথে দেশে- বিদেশে সাড়া জাগানো ছবি। দর্শকদেরও কি ভীমরতি হয়েছিল, সুন্দরী নায়িকার উপস্থিতি-বিহীন চলচ্চিত্র হওয়া স্বত্বেও তারা হলে এসেছে, এসে এই অবিমিশ্র দারিদ্রের ছবি দেখেছে, গ্রাম বাংলার সত্যিকারের রূপ দেখেছে, পানাপুকুর, জলফড়িঙ্গের ছোটাছুটি দেখেছে, অপু-দূর্গার চরিত্রে অভিনয় করা দুটি শিশুর আন্তরিকতায় মিশে গেছে। সত্যজিৎ ও তার দল হেঁটেছিল স্বপ্নের পথে, আর দর্শকেরা এরা সেই পথের ভিতরের দরজা খুলে দিয়েছিল সত্যজিতের জন্য। এই চলচ্চিত্র নির্মাণের পরেই সত্যজিৎ সিদ্ধান্ত নেয়, চলচ্চিত্র তৈরিই হবে তার পেশা, যার সাথে জড়িয়ে আছে তার উদ্দীপনা আর ভালবাসা!

পথের পাঁচালির অভিনয়েও কোত্থেকে কোত্থেকে ধরে আনতে লাগলেন আনকোরা সব অভিনেতা, যারা আগে করেনি অভিনয়। স্ক্রিপ্টের সাথেকে মিলিয়ে মিলিয়ে মানানসই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের খুঁজে আনলেন, কেউ বন্ধুর বউ, কেউ স্কুলের ছাত্র ছাত্রী, ইন্দির ঠাকুরণের চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছিলেন, তিনি যেন এই ছবিতে অভিনয় করার জন্যই বেঁচে ছিলেন। ৮০ বছরের থুত্থুড়ে বুড়ি এক থিয়েটার কর্মী চুনিবালা, যে বিগত ৩০ বছর কোন অভিনয় করেনি। একমাত্র হরিহরের চরিত্রে নিলেন একজন প্রফেশনাল অভিনেতাকে। তারও ভাব-সাব এমন, এ কি অভিনয়, মুখে এরা একফোঁটা রঙ দেবে না… এইভাবে অভিনয় কেউ করেছে নাকি! অথচ সত্যজিৎ এসব করে গেলেন কেবল মাত্র একটি দিককে গুরুত্ব দিয়ে, তার নির্মিত ছবি হবে জীবন্ত, বাস্তবের প্রতিচ্ছবি, কোন মেকি ভাবের ছিটেফোঁটা থাকবে না তাতে।

সত্যজিতের লেখা থেকে জানতে পারি, এইসব আনকোরা শিল্পীরাই তার নির্দেশনায় হোক আর সহজাত ভাবেই হোক, সাবলীল অভিনয় করেছিলেন, পথের পাঁচালি যখন আমি বসে বসে দেখছিলাম, তখন সত্যজিতের কথার সত্যতার প্রমাণটাই পেয়েছি আমি। সত্যজিতের ভাষায় একমাত্র অপুর চরিত্রে অভিনয়কারী ছয় বছরের বাচ্চা সুবীরকে দিয়ে অভিনয় করাতেই কষ্ট হয়েছে, নানান কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। কাশবনের দৃশ্যটাতে প্রাণ আনতে সুবীরের পথে কাঠ ফেলে রাখতে হয়েছে যাতে সুবীরকে সেটা লাফিয়ে পেরুতে হয়, এদিক থেকে ওদিক থেকে বিভিন্ন জনকে দিকে সুবীর সুবীর বলে ডাকতে হয়েছে, যাতে সুবীর সেদিকে ঘুরে তাকায় যেটা দেখলে সত্যিই মনে হয় সে এদিক ওদিক ঘুরছে দূর্গাকে খুঁজতে। হয়ত অদ্ভুত শোনাবে, তবে আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে সুবীরের অভিনয়। যদিও ঐটুকু শিশুর কাছ থেকে অভিনয় আশা করা যায় না, কিন্তু সুবীরের বড় বড় চোখের চাহনি যেন সব পুষিয়ে দিয়েছে, অপুর চরিত্রটাকে সার্থক করে তুলেছে ঐ বাচ্চা ছেলেটা।

অপু ত্রয়ীর শেষ ছবি অপুর সংসার আমার আগেই দেখা ছিল, সেখানেও সবচেয়ে বেশী মন কেড়েছে আমার অপুর ছেলে কাজলের ভূমিকায় অভিনয় করা শিশুটি। সেটা সত্যজিতের কৃতিত্ব বলব আমি, সত্যজিৎ রায় যেভাবে ঝোপ জঙ্গলের মাঝে কাজলের পা টিপে টিপে হাঁটার দৃশ্য ধারণ করেছে, বাবার অপেক্ষায় থাকা কাজলকে দিয়ে বলিয়েছে, বাব এলে বলে দেব, মন ছুঁয়ে যায়। খুব অল্প সময়ের জন্য কাজলের উপস্থিতি দেখালেও কাজলকেই পুরো ছবির মধ্যে আমার সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্র মনে হয়েছে। আর যা কিছু আকর্ষণীয় মনে হয়েছে, সে হল অপুর ভূমিকায় অভিনয় করা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় আর সত্যজিতের ছবির আর্ট ডিরেক্টরের সাজানো অপুর ছাদের ঘরটিকে। ঐ ঘরটাই যেন বলে দিয়েছে অপুর সংসারের অর্ধেক কথা। এমন একটা জীবন আর তার সংগ্রামের কথা ফুটে ওঠে ঐ ঘরের সজ্জায়, ছন্নছাড়া, বাঁধনহারা অপু, যার কোন বন্ধন, জীবনে ভবিষ্যতের চিন্তা কিচ্ছুটি নেই। তবে প্রাণ বলতে যা বোঝায়, একবিন্দু ম্লান করেনি ঐ ঘরটি।

অপরাজিত চলচ্চিত্রটি দেখেছি আমি সবার শেষে, যে চলচ্চিত্রটা দেখলে মনে হয়, সত্যজিৎ রায় একজন যাদুকর! অপু ত্রয়ীর তিনটি ছবিকেই এমন জীবন্ত রূপ দিয়েছেন, অসাধারণ! সত্যি কথা বলতে কি, প্রচণ্ড আগ্রহ থেকে কাল রাতেই দেখেছি যাদুকর সত্যজিতের সৃষ্টি অপরাজিত। অপুর সংসার আমার মনে দাগ কাটতে পারেনি তেমন, ঐটাকে আমার কাছে একটি ভালো ছবি মনে হয়েছে, তবে এমন ছবি নয় যা মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। পথের পাঁচালি আমি ছেলেবেলায় দেখেছিলাম একবার, এবারে যখন দেখেছি, তখন আসলে দেখেছি সত্যজিতের বর্ণনার সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে, প্রায় বিশ বছর বাদে আমার এই আবার দেখা পথের পাঁচালি অন্যরকম ভালো লেগেছে, আমি একটা নতুন ধারার সূচনাকারী ছবি যে দেখছি, তার স্বাক্ষর পেয়েছি পথের পাঁচালির বাঁকে বাঁকে। পথের পাঁচালি একটি মাস্টারপিস, একথা ২০১২ তে বসে আধুনিক ফিল্ম মেকিং টেকনোলজির দুনিয়ায় বসে অনেকের মন স্বীকার যদি নাও করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে কেবল একটি প্রশ্ন, বর্তমানের গতিশীল চলচ্চিত্রের জগতে পথের পাঁচালির মত ডিটেইল বিশিষ্ট একটি ছবি আমি দেখতে চাই। আর অপরাজিত? গতরাতেই প্রথমবারের মত দেখে মনটা আমার বর্ষার আকাশের মত মেঘে মেঘে ভারী হয়ে গেছে। অপু ত্রয়ীর সেরা চলচ্চিত্র অপরাজিত! খুব সম্ভবত সত্যজিতের সেরা সৃষ্টিও অপরাজিত!

পুরো চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু অপুর বড় হবার সংগ্রাম আর মা সর্বজয়ার সাথে অপুর হার্দিক টানাপড়েন। গায়ের স্কুল থেকে পাশ করে অপু শহরে পড়তে যাবে, শূন্য হয়ে যায় সর্বজয়ার ভুবন… কি অপরিসীম শুণ্যতা, অপু যত বড় হয়, বাড়তে থাকে দূরত্ব, কিন্তু থামে না অপু আর সর্বজয়ার জীবনসংগ্রাম। মা ছেলেকে যতই কাছে চায়, ততই অনুভব করতে থাকে সে দূরে সরে যাচ্ছে। কষ্ট করে বড় হওয়া কলেজ পড়ুয়া অ্যাম্বিশাস অপুর মন পড়ে থাকে বইয়ের পাতায়, সর্বজয়ার মনে হতে থাকে অসুস্থ মায়ের মুখটা বুঝি অপুর মনে পড়েনা ঠিক সেভাবে। মনে আসলে পড়ে, কিন্তু ঐটুকু ছেলে, সব দিক সামাল দিতে পারে না, একদিকে কলেজ, রাত জেগে প্রেসের কাজ, আর বাড়িতে একলা মা! সর্বজয়ার দিন কাটে প্রতীক্ষায় প্রতীক্ষায়, সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটে সর্বজয়ার মৃত্যুতে। অপরাজিতের শেষ দৃশ্যে জগত সংসারে একলা অপু গায়ের মেটে পথ ধরে হেঁটে চলে কলকাতার দিকে, যেখানে তার একক জীবন। হৃদয়ের ভালোবাসা আর দূরত্ব নিয়ে এমন ভাঙ্গা গড়ার খেলা বুঝি বাংলা সাহিত্যে কেবল বিভূতিভূষণের কলমে আর চলচ্চিত্রে সত্যজিতের হাতেই হয়েছে। অপরাজিত অপরাজেয়!