ঠিক এরকমই বেয়াড়া রকমের পণ করেছে কলকাতার রাগী যুবক অনমিত্র রায়। বলিউডের কলজে কাঁপানো বিশাল বাজেটের বাণিজ্যিকভাবে দারুণ সফল সব সিনেমার গালে একটি মারাত্নক চপেটাঘাত কষতে চায় ছেলেটি। তাই ‘এক টাকার ছবি’ নামের একটি স্বাধীন সিনেমা বানানোর স্বপ্নকল্প নিয়ে সদলবলে মাঠে নেমেছে সে।

অনমিত্রদের স্বপ্ন একদম শূন্য বাজেটে ৯০ মিনিটের একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা। ছবির খরচ তোলা হবে জনে জনে, চাঁদা তুলে। কেউ যদি মাত্র এক টাকাও চাঁদা দিতে চান, তবে তাইই সই। এরচেয়ে মোটা অংকের টাকা, সেটি যদি চার অংকের ঘর ছাড়িয়ে যায়, তাতেও আপত্তি নেই।

স্বপ্নের এই ছবিটির নির্মাণ-নেপথ্য কথন অনমিত্র বয়ানে অনেকটা এরকম:

ঠিক যেভাবে নাটক বা লিটল ম্যাগাজিন তৈরি হয়, একদল তরুণ সেভাবেই ছবি তৈরির সাথে জড়িয়ে পড়ে; তাদের আনন্দ শুধুই সৃষ্টির। ছবিটি এমন একটি সময়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, যখন তারা এক ধরণের সঙ্কটের মধ্যে ঘুরপাক খায়, সঙ্কটটি প্রধানত আত্নপরিচয়ের, আমি কে? তুমি কে? আমরা কারা? ইত্যাদি।

কারণ, ছবি তৈরি করতে নেমে তারা দেখে যে, সিনেমার জন্য যে সব দানবীয় যন্ত্রপাতির প্রয়োজন পড়ে, তারা সে সব চোখেও দেখেনি। এছাড়া অর্থনৈতিক সঙ্কটও তাদেরকে চেপে ধরে। ছবি তৈরির একটা নূন্যতম খরচ আছেই।

এই দুই দ্বন্দ্ব-সঙ্কট, সংক্ষেপে সঙ্কট, আবার পরস্পরের পরিপূরক। অর্থাৎ একটি সঙ্কটের সমাধাণ হলে স্বাভাবিক নিয়মেই অপরটিরও সমাধান হবে।

এ অবস্থায় তাদের মধ্যে একজন ঠিক করে, এ ভাবে দেওয়ালে মাথা ঠুকে লাভ নেই। আমাদের পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি করতেই হবে! তা যে করেই হোক!

এইখান থেকে এক নব অভিযান শুরু হয়– ওয়ান রুপি ফিল্ম প্রজেক্ট।। সম্ভাব্য প্রযোজক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ক্ষমতাকে নিয়ে চলচ্চিত্র-শিল্পের বাইরে ছবি তৈরির এক নতুন চ্যালেঞ্জ।

এই নতুন নতুন সংশ্লেষণগুলো জন্ম দেয় স্বপ্নলোক; একেকটি দৃশ্যকল্প। রাগী ছেলেটির মায়ার জগতের চোখ খুলে যায়, অর্থাৎ সে তার নিজের ছবিতে এই ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখাতো, তা ভাবার চেষ্টা করে। কিন্তু তার নিজের ছবিটি হচ্ছে না, নিতান্ত পয়সার অভাবেই। অথচ সে যেনো চোখের সামনেই দেখতে পায়, মুম্বাইয়ে তৈরি হওয়া তিন কোটি থেকে ১০ কোটি কিংবা তারও বেশী খরচের ছবি কীভাবে ‘স্বতন্ত্র ধারার চলচ্চিত্র’র তকমা পায়। দেখে দেখে, যখন ‘অরাজনৈতিক’ ছবির বিজয় অভিযান চলেছে, যখন দেশের ভেতরে প্রায় গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি।

ছেলেটি ভেতরে ভেতরে উত্তেজিত হয়ে পড়ে…অস্থির, অশান্ত এবং অধৈর্য্য। এভাবে একদিন সে ঠিক করে, ছবি সে করবেই; দরকার হলে এক টাকা, এক টাকা করে জমিয়ে হলেও সে বিন্দু থেকেই তৈরি করবে বৃত্ত।

অনমিত্রের ভাষায়, স্বপ্নযাত্রার বাকী কথাগুলো এরকম। পুঞ্জিভূত পুঁজি নিয়ে ছবি এর আগেও হয়েছে, শুধু ভারতবর্ষেই নয়, খোদ বাংলাতেও। এবার পার্থক্যটা এই যে, বাজার অর্থনীতির চোখ দিয়ে তরুণের দল ছবি-নির্মাণকে দেখছেন না। তাদের কাছে এটি অনেকটা পাড়ার ক্লাবে নাট্যোৎসব হলে যেভাবে মানুষ চাঁদা– সেরকমই ব্যাপার। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি ২০ হাজার টাকা বা তার চেয়েও বেশি অর্থ অনুদান দেন, ছবিটি বিদেশে বিক্রি হলে তিনি অবশ্যই এর একটি ভাগ পাবেন।

এ প্রসঙ্গে অনমিত্র মনে করেন, প্রথমত, তার ধারণা, এক সঙ্গে এতো টাকা কেউই দেবেন না এবং দ্বিতীয়ত ছবিটি বিদেশে যে বিক্রি হবেই– এমন কোনো কথা নেই; তবে আবার বিক্রি হলেও তা অবাক হওয়ার কিছু নেই।

অন্যদিকে ভারতে ছবিটি বাণিজ্যিকভিত্তিতেও বিক্রি করা হবে না, তার একটি নির্দিষ্ট কারণও আছে। অনামিত্ররা ছবির অনুদাতাদের তালিকা তৈরি করে রাখছেন ভবিষ্যতের জন্য। যারা সত্যিকার অর্থে মুক্তধারার চলচ্চিত্র বা স্বাধীন চলচ্চিত্র তৈরি করতে চান, হয়তো আগামীতে এই তালিকাটি তাদের কাজে আসবে। বাংলার বাইরে ওয়ান রুপি ফ্লিম প্রজেক্ট নিয়ে তারা অন্যান্য রাজ্যের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে কথা বলছেন, তারা চান, ছোট মাছের বড় মাছকে গিলে খাওয়ার এমন সর্বনাশা স্বপ্ন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক। ভূ-ভারতে তো বটেই, ধীরে ধীরে দেশে দেশে এই স্বপ্নের মহামারি গ্রাস করুক। এ জন্য তারা অনুদানকারীদের তালিকা ধরে ছবিটি দেখার ব্যবস্থার করার কথা ভাবছেন (সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হবে ডাউনলোড লিঙ্ক বা ডিভিডি; এটি অবশ্য নির্ভর করছে, কে কতো দান করছেন, তার ওপর)। এর বাইরে অনমিত্ররা নিজেরাই হয়তো কিছু ডিভিডি বিক্রির ব্যবস্থাও করবেন। তবে তা করা হবে একেবারেই সাদামাটাভাবে।

watch?v=wvvkrsIeQaY&feature=player_embedded


সংযুক্ত:
০১। OneRupee Film এর ব্লগ,
০২। Little Fish Eat Big Fish ব্লগ।

যদি এই স্বপ্ন যাত্রায় অর্থসাহায্য করতে চান, তাহলে দেখুন:
http://onerupeefilm.blogspot.in/p/how-to-donate.html