(আগের পর্বের পর…)

[ মনোযোগ আকর্ষণ : চলমান সিরিজের কেবল এই পর্বটিতে মূল সংস্কত ভাষা থেকে বাংলায় তর্জমাজনিত কিছু অসম্পূর্ণতা রয়েছে, যা সূত্রের অভাব কিংবা লেখকের নিজস্ব সীমাবদ্ধতার কারণে সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে সম্মানিত পাঠকদের সম্ভাব্য সহযোগিতা শুধু এ লেখাটিরই নয়, গোটা সিরিজটির অসম্পূর্ণতা পূরণে সহায়ক হতে পারে। এজন্যে সহযোগী পাঠকের জন্য আগাম কৃতজ্ঞতা রইলো।]

৫.০ : বার্হস্পত্য-সূত্র

ভারতীয় দর্শন বা প্রাচীন সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে বৃহস্পতি-সূত্র নাম দিয়ে যে সূত্রগুলি ব্যবহার করা হয় তার স্পষ্ট উৎস আমাদের কাছে অজ্ঞাত এখনো। অথচ ভারতীয় দার্শনিক প্রথা বা ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতিটা দর্শনেরই একেকটি সূত্রগ্রন্থ থাকলেও যে সূত্রগুলির উপর ভিত্তি করে চার্বাক দর্শন নামে একটা প্রতিপত্তিশালী শক্ত দর্শন দাঁড়িয়ে আছে, ভারতীয় দর্শন-রীতিতে তারও একটা সূত্রগ্রন্থ থাকার কথা ছিলো, যার প্রণেতা হয়তো বৃহস্পতি নামের কেউ। কিন্তু সেরূপ গ্রন্থ আদৌ ছিলো কি ছিলো না, তা নিয়েও দার্শনিক মহলে যথেষ্ট বিতর্ক রয়ে গেছে।
.
তবে অন্যতম পরোক্ষ উৎস হিসেবে চতুর্দশ শতকের বেদান্ত দার্শনিক সায়ণমাধবাচার্যের যে বিখ্যাত গ্রন্থটির বিস্তৃত পূর্বপক্ষ বয়ান থেকে চার্বাক দর্শনের বিশিষ্ট রূপটিকে অনুমান করা সহজসাধ্য হয়ে ওঠে, সেই ‘সর্বদর্শনসংগ্রহ’ গ্রন্থেও মাধবাচার্য প্রধানত চার্বাক-ষষ্ঠিকে অবলম্বন করেই চার্বাক-দর্শন সংকলন করেছেন। প্রায়ক্ষেত্রেই তিনি চার্বাক-ষষ্ঠির বচনকেই প্রমাণরূপে প্রদর্শন করেছেন, কোথাও বার্হস্পত্য-সূত্রের উল্লেখ করেন নি। এতে করে পণ্ডিতদের ধারণা, তিনি অন্যান্য কোন কোন গ্রন্থে বার্হস্পত্য-সূত্র দেখে থাকলেও সম্পূর্ণ বার্হস্পত্য সূত্র দেখেন নি অর্থাৎ বার্হস্পত্য-সূত্র নামের কোন গ্রন্থের খোঁজ তিনি পান নি। এবং গ্রন্থশেষে তিনি ‘তদেতৎ সর্বং বৃহস্পতিনাপ্যুক্তং’ বলে চার্বাকষষ্ঠির শ্লোকাকার বচনগুলির উল্লেখ করেছেন। বৃহস্পতি সূত্রাকারে চার্বাকমত বললেও শ্লোকাকারে বলেন নি। তবে চার্বাক-ষষ্ঠি যে বৃহস্পতির সূত্র অবলম্বনে রচিত, এ ব্যাপারে পণ্ডিতেরা মোটামুটি নিঃসন্দেহই বলা যায়। এবং নানান প্রাচীন গ্রন্থে ভারতীয় দর্শনের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের অনুসরণে সৃষ্ট এরূপ কোন কোন সূত্রের উল্লেখ থেকে অনুমান হয়, বার্হস্পত্য-সূত্র অতি প্রাচীন। (সূত্র: চার্বাক-দর্শনম্ /শ্রীপঞ্চানন শাস্ত্রী)।
.
চার্বাক বা বার্হস্পত্য দর্শনসংশ্লিষ্ট কোন সূত্রগ্রন্থের অস্তিত্ব এখনো অজ্ঞাত হলেও অতীতে কোন এককালে এরকম সূত্রগ্রন্থ থাকার সম্ভাব্যতাকে অস্বীকারও করা যায় না। কেননা প্রখ্যাত ব্যাকরণকার পাণিনির (আনুমানিক ৬০০-৪০০ খ্রীস্টপূর্ব) কালজয়ী ব্যাকরণসূত্র ‘অষ্টাধ্যায়ী’র ভাষ্যকার পতঞ্জলির (আনুমানিক অন্যুন ১৫০ খ্রীস্টপূর্ব) ‘মহাভাষ্যে’ ‘ভাগুরি’ নামে লোকায়তের এক ‘বর্তিকা’ বা ভাষ্যের উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে- ‘বর্ণিকা ভাগুরী লোকায়তস্য, বর্তিকা ভাগুরী লোকায়তস্য’ (মহাভাষ্য: ৭/৩/১)। অর্থাৎ ভাগুরী লোকায়তের বর্ণিকা বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ। মূলগ্রন্থ ছাড়া কোন ভাষ্যগ্রন্থের অস্তিত্ব অনুমান কঠিন বলেই মহাভাষ্যের সাক্ষ্য অনুযায়ী লোকায়তের কোন গ্রন্থ ও তার ভাষ্য ছিলো বলেই অনুমান করা হয়। এছাড়া বৌদ্ধদের লেখা সংস্কৃত গ্রন্থ (অনুমান সম্রাট অশোকের কিছুটা পরবর্তীকালের) ‘দিব্যাবদানে’ও লোকায়ত শাস্ত্রের মূল গ্রন্থের উপর লেখা ভাষ্য ও প্রবচনের উল্লেখ রয়েছে- ‘লোকায়তং ভাষ্যপ্রবচনম্’ (দিব্যাবদান, পৃষ্ঠা ৬৩০) উদ্ধৃতিতে।
.
জীবনের দীর্ঘকাল ব্যাপী চার্বাক বা লোকায়ত নিয়ে একনিষ্ঠভাবে অনুসন্ধান ও আলোচনায় রত থাকা প্রখ্যাত ভারতীয় সংস্কৃতিবিদ পণ্ডিত দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী তাঁর ‘চার্বাক দর্শন’ গ্রন্থের শেষে ‘বার্হস্পত্যসূত্রম্’ শিরোনামে একটি পরিশিষ্ট সংযোজন করেছেন। বিভিন্ন গ্রন্থে চার্বাকমত বর্ণনায় চার্বাকদের নিজস্ব উক্তি হিসেবে যে-সব উদ্ধৃতি পাওয়া যায় তারই সংকলন এটি। তাঁর তালিকায় মোট ৫৪ টি ‘সূত্র’ বর্তমান। শাস্ত্রী মহাশয়ের ভাষায়- ‘…বৃহস্পতি, চার্বাক, লোকায়ত, পুরন্দর, কম্বলাশ্বতর- এই কয়জন দার্শনিকের অর্ধশতাধিক সূত্র এবং যে গ্রন্থ হইতে যেরূপ অবস্থায় সংগৃহীত হইয়াছে তা প্রদত্ত হইল।’
.
দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী মহাশয় কর্তৃক এভাবে বিভিন্নজনের সূত্রগুলিকে ‘বার্হস্পত্যসূত্রম’ নামে পরিশিষ্টে অন্তর্ভুক্তির কারণ তাঁর ধারণা- বৃহস্পতি ব্যক্তিবিশেষের নাম নয় ; ব্যাস, শঙ্করাচার্য ইত্যাদি উপাধির মত বৃহস্পতিকেও উপাধিবিশেষ বলা চলে। চার্বাক মতের প্রচারে যাঁরা সহায়তা করেছেন এই উপাধি তাঁরাই লাভ করেছেন। এবং তাঁর মতে- ‘সুদূর অতীতে কোনও সময়ে এই বৃহস্পতিগণ মিলিত হইয়া বার্হস্পত্য মত প্রবর্তন… …করেন।’ কিন্তু শাস্ত্রী মহাশয়ের এই ধারণা বা সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে যথোপযুক্ত প্রমাণের অভাব থাকায় তা সমর্থনযোগ্য নয় বলেই গবেষকরা মনে করেন।
.
এছাড়া তাঁর প্রদত্ত তালিকায় চার্বাকদের নামে প্রচলিত নানান প্রামাণিক লোকগাথাও অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই কোন কোন গবেষকদের মধ্য থেকে এরকম প্রশ্নও উত্থিত হয়েছে যে- পারিভাষিক অর্থে লোকগাথাকেও ‘সূত্র’ আখ্যা দেয়া সঙ্গত কিনা। তবে চার্বাকালোচনা করতে হলে কোনভাবেই তাঁর পরিশিষ্টটিকে উপেক্ষা করার উপায় নেই বলেই মনে হয়।
.
অন্যদিকে বিখ্যাত ইতিহাস গবেষক এফ. ডব্লু. টমাস (F. W. Thomas) ‘বৃহস্পতি-সূত্র’ নামে একটি পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করেন বলে জানা যায় এবং ১৯২১ সালে অনুবাদসহ তার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়। কিন্তু গ্রন্থটি প্রকৃত চার্বাক মতের পরিচায়ক হতে পারে না বলে পণ্ডিতদের অভিমত। কেননা আরেক প্রখ্যাত গবেষক ‘তুচ্চি (Twcci) গ্রন্থটির ওপর মন্তব্য করেছেন যে, এই বই ব্রাহ্মণ্য-প্রভাবে ভরপুর। গ্রন্থটি থেকে হয়তো বড়জোর চার্বাক-সংক্রান্ত সামান্য খণ্ড ও বিক্ষিপ্ত আভাস পাওয়া যেতে পারে, তার বেশি কিছু নয়। চন্দ্রকীর্তির ‘প্রজ্ঞাশাস্ত্র’ এবং আর্যদেবের ‘শাস্ত্রাশাস্ত্র’ গ্রন্থে প্রকৃত বার্হস্পত্য-সূত্র উদ্ধৃত হয়েছে বলে তুচ্চি উল্লেখ করেন। তাই বিভিন্ন দার্শনিকের চার্বাক-বর্ণনায় উদ্ধৃত বৃহস্পতি-সূত্রগুলি বা চার্বাকদের নিজস্ব উক্তি হিসেবে বাক্যগুলির প্রকৃত উৎস জানবার সুযোগ না থাকলেও উদ্ধৃতিগুলি উড়িয়ে দেবার মতো নয়। অনেকসময় চার্বাকমত পুনর্গঠনে এগুলি বিশেষ মূল্যবান উপাদান হতে পারে।’ (সূত্র: ভারতে বস্তুবাদ প্রসঙ্গে / দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়)।
.
তবে যেভাবেই বিবেচনা করা হোক না কেন, চার্বাকমতের সেসকল সূত্র কালের গহ্বরে হারিয়ে গেলেও ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্যের বিভিন্ন প্রামাণিক গ্রন্থের অনুশীলনে পুনঃসঙ্ঘটিত এসব সূত্র পরবর্তীকালে বার্হস্পত্য-সূত্র নামে সংকলিত হয়েছে। শ্রীমৎ-সায়ণমাধব-কৃত ‘সর্বদর্শনসংগ্রহ’ গ্রন্থ অবলম্বনে শ্রীপঞ্চানন শাস্ত্রী রচিত ‘চার্বাক-দর্শনম্’ গ্রন্থের পরিশিষ্টে সংস্কৃতভাষায় এরকম একশটি বার্হস্পত্য-সূত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। উপস্থাপিত এই সংকলিত বার্হস্পত্য-সূত্রগুলি সম্যক অনুধাবনের লক্ষ্যে সম্ভাব্য তর্জমাসহ নিচে উপস্থাপন করা হলো।

বৃহস্পতি-প্রণীতম্ বার্হস্পত্য-সূত্রম্

লোকায়ত-মতে তত্ত্বানি দর্শয়তি-
.
১) পৃথিব্যপতেজো বায়ুরিতি তত্ত্বানি।
[ পৃথিবী, জল, অগ্নি ও বায়ু- এই চারটিই তত্ত্ব। ]

২) তৎ-সমুদায়ে শরীরেন্দ্রিয়-বিষয়-সংজ্ঞা।
[ এর (পদার্থ বা তত্ত্ব চতুষ্টয়) সমন্বয়ে শরীর, ইন্দ্রিয়, চৈতন্য ইত্যাদি সৃষ্ট। ]

৩) তেভ্যশ্চৈতন্যম্ ।
[ (দেহের আকারে পরিণত ভূত-চতুষ্টয় হতে) চৈতন্যের জন্ম ও অভিব্যক্তি হয়। ]

৪) কিণ্বাদিভ্যো মদশক্তিবৎ।
[ কিণ্ব বা বৃক্ষবিশেষ হতে যেরূপ মদশক্তি জন্মে। ]

৫) শরীরেন্দ্রিয়-সঙ্ঘাত এব চেতনঃ ক্ষেত্রজ্ঞঃ।

.
সুকৃত-দুষ্কৃত-কর্মণাং ফলাভাবং দর্শয়তি-
.
৬) ন ধর্ম্মাংশ্চরেৎ।
[ ধর্ম কর্ম অনুষ্ঠেয় নহে। ]

৭) এষ্যৎ ফলত্বাৎ।

৮) সাংশয়িকত্বাচ্চ।

৯) কো হ্যবালিশো হস্তগতং পরগতং কুর্য্যাৎ।

১০) বরমদ্য কপোতঃ শ্বো ময়ূরাৎ।

১১) বরং সাংশয়িকান্ নিষ্কাদসাংশয়িকঃ কার্যাপণঃ।

১২) ন ভস্মধারণম্ ।
[ শরীরে ভস্মধারণ করা অর্থহীন কাজ। ]

১৩) নাগ্নিহোত্র-বেদপাঠাদীনি চ।
[ যাগ-যজ্ঞ অগ্নিহোত্র অনুষ্ঠেয় নহে, বেদ পঠনীয় নহে। ]

১৪) ন তীর্থযাত্রা।
[ তীর্থযাত্রা করণীয় নহে। ]

১৫) সর্বমর্থার্থং করোত্যগ্নিহোত্র-সন্ধ্যা-জপাদীন্ ।

১৬) স্বদোষং গূহিতুং কামার্ত্তো বেদং পঠতি।

১৭) অগ্নিহোত্রাদীন্ করোতি।

১৮) সুরাপানার্থং মহিলামেহনার্থং করোতি।

১৯) বিষ্ণ্বাদয়ঃ সুরাপায়িনঃ।

২০) শিবাদয়ঃ।

.
শৃঙ্গারবেশাদীনাং কর্ত্তব্যত্বং দর্শয়তি-
.
২১) শৃঙ্গারবেশং কুর্য্যাৎ।
[ শৃঙ্গার বেশ করণীয়। ]

২২) অক্ষৈর্দীব্যাৎ।

২৩) নৈব দীব্যাচ্চ।

২৪) আসবানি সেবয়েৎ।
[ আসব পান করণীয়। ]

২৫) মাংসানি চ।
[ মাংস ভোজন কর। ]

২৬) মত্তকাশিন্যঃ সেব্যাঃ।

২৭) দিব্য-প্রমদা-দর্শনঞ্চ।
[ দিব্য প্রমদার দর্শন উচিৎ। ]

২৮) নেত্রাজনঞ্চ।
[ নেত্রাঞ্জন গ্রহন কর। ]

২৯) আদর্শ-দর্শনঞ্চ।

৩০) তম্বুল-চর্বণঞ্চ।
[ তাম্বুল চর্বণ কর। ]

৩১) কর্পূর-চন্দনাগুরুধূপঞ্চ।
[ কর্পূর চন্দন ও অগুরু অনুলেপন করণীয়। ]

.
বেদাপ্রামাণ্যং দর্শয়তি-
.
৩২) যাগশ্রূতিরপ্রমাণং প্রত্যক্ষবিরুদ্ধত্বাৎ গ্রাবোন্মজ্জন-শ্রূতিবৎ।
[পাথর ভাসতে থাকার মতোই যজ্ঞের ফল বিষয়ে বেদের সত্যতা প্রত্যক্ষবিরুদ্ধ অসম্ভব।]

৩৩) অনিত্য-দর্শনাচ্চ।

৩৪) শাস্ত্রদৃষ্ট-বিরোধাচ্চ।

৩৫) তথা ফলাভাবাৎ।
[এসব নিষ্ফল।]

৩৬) অন্যানর্থক্যাৎ।

৩৭) অভাগি-প্রতিষেধাচ্চ।

৩৮) অনিত্য-সংযোগাৎ।

৩৯) স্ত্র্যপরাধাৎ কর্ত্তুশ্চ পুত্রদর্শনাৎ।

৪০) বিধিশ্চানর্থকঃ ক্বচিৎ তস্মাৎ স্তুতিঃ প্রতীয়েত
তৎসামান্যাদিতরেষু তথাত্বম্ ।

৪১) তদর্থ-শাস্ত্রাৎ।

৪২) বাক্য-নিয়মাৎ।

৪৩) বুদ্ধশাস্ত্রাৎ।

৪৪) অবিদ্যমান-বচনাৎ।

৪৫) অচেতনেহর্থবন্ধনাৎ।

৪৬) অর্থ-বিপ্রতিষেধাৎ।

৪৭) স্বাধ্যায়বদবচনাৎ।

৪৮) অবিজ্ঞেয়াৎ।

৪৯) অনিত্যসংযোগাদ্ মন্ত্রানর্থক্যম্ ।

৫০) হেতুদর্শনাচ্চ।

৫১) অস্থানাৎ।

৫২) করোতি-শব্দাৎ।

৫৩) সত্ত্বান্তরে চ যৌগপদ্যাৎ।

৫৪) বৃদ্ধিশ্চ কর্ত্তৃভূম্নাস্য।

৫৫) প্রকৃতি-বিকৃত্যোশ্চ।

৫৬) ন নিত্যত্বং বেদানাং কার্য্যত্ব-শ্রূতেঃ।

৫৭) ন শব্দ-নিত্যত্বং কার্য্যতা-প্রতীতেঃ।

৫৮) তদপ্রামাণ্যমনৃত-ব্যাঘাত-পুনরুক্ত-দোষেভ্যঃ।
[ এতে (বেদে) অনৃত দোষ বা মিথ্যে কথা, ব্যাঘাত দোষ বা পরস্পর বিরুদ্ধ কথা এবং পুনরুক্ত দোষ পূর্ণ। ]

৫৯) ধূর্ত্ত-প্রলাপস্ত্রয়ী।
[ (বেদের কর্তা) ভণ্ড, ধূর্ত, নিশাচর ত্রয়ী। ]

৬০) বৃথা ধর্মং বদত্যর্থসাধনং লোকায়তিকঃ পিণ্ডাদয়শ্চোর ইতি চ।

৬১) সোহপ্যশনার্থং ধর্মং বদতি।
[ আস্তিকগণ অশন বা জীবিকার জন্য ধর্ম বলেন। ]

৬২) পরাপবাদার্থং বেদশাস্ত্রং ধর্মাদীন্ পঠতি।

৬৩) সর্বান্ নিন্দতি।

৬৪) মহেশ্বর-বিষ্ণ্বাদীনপি।

.
পুরুষার্থং দর্শয়তি-
.
৬৫) কাম এবৈকঃ পুরুষার্থঃ।
[ একমাত্র কামই পুরুষার্থ। ]

৬৬) উভয়ী প্রকৃতিঃ কামে সজ্জেৎ।

৬৭) কাম এব প্রণিনাং কারণম্ ।

৬৮) শরীরস্থিতি-হেতুত্বাদাহার-সধর্ম্মাণো হি কামাঃ।
[ শরীরের স্থিতিহেতু বলে কামগুলি আহারের সধর্মা- আহারের সমানগুণযুক্ত। ]

৬৯) ন হি ভিক্ষুকাঃ সন্তীতি স্থাল্যো নাধিশ্রীয়ন্তে।
ন হি ভিক্ষুকাঃ সন্তীতি যবা নোপ্যন্তে।

.
প্রমাণং দর্শয়তি-
.
৭০) প্রত্যক্ষমেব প্রমাণম্ ।
[ কেবল প্রত্যক্ষই প্রমাণ। ]

৭১) নানুমানং প্রমাণম্ ।
[ অনুমান প্রমাণ নহে। ]

৭২) অত্যন্ত-প্রায়ৈকদেশ-সাধর্ম্ম্যাদুপমানাসিদ্ধিঃ।

৭৩) শব্দোহনুমানমর্থস্যানুপলব্ধেরনুমেয়ত্বাৎ।

৭৪) অপ্রমানং শব্দঃ।
[ শব্দ প্রমাণ নয়। ]

.
ঈশ্বরাভাবং দর্শয়তি-
.
৭৫) ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ।
[ ঈশ্বর অসিদ্ধ বা তার কোন অস্তিত্ব নেই। ]

৭৬) প্রমাণাভাবান্ন তৎসিদ্ধিঃ।
[ তার (ঈশ্বর) অস্তিত্বের সপক্ষে কোন প্রমাণ নেই। ]

৭৭) ঈনেশ্বরাধিষ্ঠিতে ফলসম্পত্তিঃ কর্মণা তৎ-সিদ্ধেঃ।

৭৮) শোণিত-শুক্রসম্ভবঃ পুরুষো মাতাপিতৃ-নিমিত্তকঃ।
[শুক্র-শোণিত সম্ভূত এই মানুষের সৃষ্টি পিতা-মাতার মিলনহেতুই সম্ভব।]

৭৯) নাস্তি সর্বজ্ঞঃ প্রত্যক্ষাদি-গোচরাতিক্রান্তত্বাৎ।
[প্রত্যক্ষের অগোচরে সর্বজ্ঞ ঈশ্বর, পাপ, পুণ্য, পরলোক প্রভৃতি অতীন্দ্রিয় কোন পদার্থের অস্তিত্ব নাই।]

৮০) শশশৃঙ্গবৎ।
[শশক বা খরগোশের শিং-এর মতোই (অতীন্দ্রিয় বস্তু অবাস্তব)।

৮১) মুক্তবদ্ধয়োরন্যতরাভাবান্ন তৎ-সিদ্ধিঃ।

৮২) স্বোপকারাদধিষ্ঠানং লোকবৎ।

৮৩) লৌকিকেশ্বরবদিতরথা।

৮৪) আত্মবান্ রাজা।

৮৫) লোকসিদ্ধো রাজা পরমেশ্বরঃ।
[ লোকপ্রসিদ্ধ রাজাই পরমেশ্বর। ]

.
পরলোকাভাবং দর্শয়তি-
.
৮৬) নাস্তি পরলোকঃ।
[ পরলোক বলে কিছু নেই। ]

৮৭) কো হি তদ্ বেদ যদমুস্মিন্ লোকে অস্তি বা নাস্তি বা।

৮৮) দৃষ্ট-বিরোধাচ্চ।
[ অদৃষ্ট নাই। ]

৮৯) পরলোকিনোহভাবাৎ পরলোকাভাবঃ।
[ যেহেতু পরলোক নাই, তাই পরলোকীও নাই। ]

৯০) জাতিস্মরণমসিদ্ধম্, এক-গ্রাম-গতানং সর্বেষাং স্মরণাৎ।

.
আত্মস্বরূপং দর্শয়তি-
.
৯১) শরীরমাত্মা।
[ শরীরই আত্মা। ]

৯২) চৈতন্য-বিশিষ্টঃ কায়ঃ পুরুষঃ।
[ চৈতন্যবিশিষ্ট কায়া বা দেহই পুরুষ বা আত্মা। ]

৯৩) মম শরীরমিতি ব্যবহারো রাহোঃ শির ইত্যাদিবদৌপচারিকঃ।
[ ’আমার দেহ’ বললেও তা ’রাহুর মস্তক’ এর মতো অভেদ উপাচার বিশেষ। ]

৯৪) এতাবানেব পুরুষো যাবানিন্দ্রিয়গোচরঃ।
[ যে পুরুষ ইন্দ্রিয়ের গোচর, সেই পুরুষই আছে, অন্য পুরুষ নাই। ]

৯৫) ইহলোক-পরলোক-শরীরয়োর্ভিন্নত্বাৎ
তদগতয়োরপি চিত্তয়োর্নৈকঃ সন্তানঃ।

.
মোক্ষং দর্শয়তি-
.
৯৬) দেহোচ্ছেদো মোক্ষঃ।
[ দেহের উচ্ছেদই মোক্ষ। ]

৯৭) সেবকা ন মুক্তাঃ পরতন্ত্রত্বাদ্ বদ্ধজীববৎ।

৯৮) তর্কাপ্রতিষ্ঠানাৎ।

৯৯) সর্বথা লোকায়তিকমেব শাস্ত্রম্ ।
[ সর্বদা লোকায়তিকই একমাত্র শাস্ত্র। ]

১০০) ইত্যাহাচার্য্যো বৃহস্পতিঃ।

.
[সবগুলো বার্হস্পত্য-সূত্রের তর্জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে সংগৃহীত হলে যথাস্থানে তা সংযুক্ত করে দেয়া হবে।]
.
এখানে উল্লেখ্য, জয়রাশি ভট্টের ‘তত্ত্বোপপ্লবসিংহ’ ও জয়ন্ত ভট্টের ‘ন্যায়মঞ্জরী’ গ্রন্থে উল্লেখকৃত বার্হস্পত্য সূত্রের প্রথম বা আদি সূত্র ছিলো- ‘অথাতো তত্ত্বং ব্যাখ্যা স্যামঃ।’ কিন্তু দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী ও পাটনা প্রকাশিত বার্হস্পত্য-সূত্রের সংকলনে এই সূত্রটি অনুপস্থিত বলে জানা যায়। সঙ্গত কারণেই উপরে শ্রীপঞ্চানন শাস্ত্রীর উপস্থাপিত বার্হস্পত্য-সূত্রেও এটি নেই। এজন্যেই ‘মনে হয়, প্রতিজ্ঞাভঙ্গ বিবেচনায় পরবর্ত্তীকালে ইহা পরিত্যক্ত হইয়াছে’ বলে শাস্ত্রী মহাশয় মন্তব্য-টীকায় তা উল্লেখ করেছেন।

(চলবে…)

[আগের পর্ব: বার্হস্পত্য, চার্বাক-মতের আদিরূপ] [*] [পরের পর্ব: চার্বাক ও লোকায়ত]