এআই গবেষক রিচার্ড সাটন ২০০১ সনে নিচের ব্লগটি লিখেছিলেন। তিনি এআইয়ের অন্যতম শাখা রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিংয়ের একজন প্রধান প্রবর্তক। ওনার ব্লগ এর আগে একাধিক সায়েন্টিফিক পেপারে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে (ব্লগ লেখকেরা উৎসাহ পেতে পারেন)। নিচের ব্লগটি ব্যবহৃত হয়েছে জর্জিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির যোগ্যতা-নির্ধারণ পরীক্ষার (PhD qualifying exam) প্রশ্নে। ওনার অনুমতিক্রমে এর বাংলা ভাবানুবাদ করলাম। মূল ব্লগের শিরোনাম – “What’s Wrong with AI”।

এআই গবেষণা উচ্ছন্নে গেছে। তার লক্ষ্য হতে সে আজ বিচ্যুত। একটা এআই সিস্টেমের (যেমন রোবটের) নিজের নিয়ন্ত্রণ ও দেখভালের দায়িত্ব ন্যস্ত থাকবে তার নিজের হাতে এমনটাই ছিলো এআই গবেষণার মূল লক্ষ্য । বর্তমানে এমন সিস্টেম তৈরি করা হয় যার কার্যকারিতা নির্ভর করে মূলত সিস্টেমটার ডিজাইনারের বিশেষ দক্ষতা কিংবা অন্তর্দৃষ্টির উপর। আজকাল এ ধরনের সিস্টেমকেই ‘সফল’ সিস্টেম হিসেবে গণ্য করাটা একটা চল, এমনকি প্রশংসনীয় একটা চর্চা হয়ে গেছে। এই চর্চাটা বুদ্ধিমত্তার নিয়ম বা তত্ত্বগুলো আবিষ্কার করার বিপরীতে অবস্থান করে। এটা বরং অনেকটা প্রকৌশলচর্চা কেন্দ্রিক। একটা সমস্যাকে যেকোনো উপায়ে সমাধান করাটাই এখানে মূলত লক্ষ্য। এই চর্চাটা প্রকৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে যতো অসাধারণই হোক না কেনো, এআইয়ের মূল লক্ষ্যের জন্যে এটা মোটেও সহায়ক নয়। এআই গবেষণার জন্যে একটা কাজের সিস্টেম বানানোটাই কেবল যথেষ্ট নয়। সিস্টেমটা কী উপায়ে তৈরি করার ফলে সেই উন্নয়ন অর্জন করা গেছে সেটাও এখানে বিবেচ্য।

কী উপায়ে সিস্টেমটা তৈির সেই ব্যাপারটাকে এতোটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনার পেছনে ব্যবহারিক একটা বিষয়ের সম্পর্ক জড়িত। যেমন, একটা এআই সিস্টেম কতোটা কার্যকর সেটা নিশ্চিত করার জন্যে যদি মানুষের দ্বারা অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ (ও রক্ষণাবেক্ষণ) করার দরকার পড়ে (যেমন, নানা নব্ ঘোরাতে বা ‘টিউন’ করতে), সেক্ষেত্রে মুষ্টিমেয় কিছু প্রোগ্রামারের ধারণার গণ্ডির মধ্যে যেসব সমস্যা পড়ে কেবল সেসকলের সমাধানেই সিস্টেমটা কাজ করবে। এর বাইরে অন্যান্য অদেখা সমস্যার ক্ষেত্রে সিস্টেমটার সচলতা তেমন একটা আশা করা ঠিক হবে না। বর্তমান এআই গবেষণার ঠিক এই হাল বলেই মনে হয়। আমাদের তৈরি সিস্টেমগুলো খুব সীমিত, কারণ সিস্টেমের দায়দায়িত্ব তার নিজেদের হাতেই ন্যস্ত করার সুযোগ তৈরি করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা নিয়ে আমার এই ব্যাপক ও অনির্দিষ্ট সমালোচনার জন্যে আমাকে ক্ষমা করবেন। সমালোচনা অনির্দিষ্ট হবার সমস্যাটি নিরসন করার একটা উপায় হলো এআই গবেষণার একটা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সমালোচনাটাকে নিয়ে নিবদ্ধ করা। কিন্তু এভাবে পরিসরকে সীমিত করার বদলে চলুন আমরা অন্য উপায়টি বরং নেই। আসুন আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যগুলো নিয়ে সাধারণ আলোচনা করি ও সেগুলোতে একমত হবার চেষ্টা করি।

খুব সাধারণ অর্থে, আমি মনে করি এআই সিস্টেম বলতে আমরা এমন একটা সিস্টেম আশা করি যা একসময় গিয়ে দুনিয়া সম্পর্কে অঢেল পরিমাণ জ্ঞান ধারণে সক্ষম হবে। এর অর্থ হতে পারে, কীভাবে নড়াচড়া করতে হবে সেটা জানা, ভাপা পিঠা দেখতে কেমন হয় বলতে পারা, মানুষের যে পা আছে সেই জ্ঞান ধারণ করা, ইত্যাদি। আর এগুলো জানার অর্থ হলো নানাভাবে এই জ্ঞানগুলোকে এমনভাবে একত্র করতে পারা যাতে সিস্টেমটির মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হয়। যেমন, সিস্টেমটি যদি ক্ষুধার্ত থাকে, তাহলে সিস্টেমটি যাতে তার ভাপা পিঠা নির্ণয়কারী অংশের সাথে তার নিজের নড়াচড়ার অংশটিকে এমনভাবে একত্রিত করতে পারে যে সে ভাপা পিঠাটির দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং সেটাকে পরিশেষে ভোগ করতে পারে। নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন আর সেই জ্ঞানগুলোর মাঝে বিভিন্নরকম সম্পর্ক স্থাপন, এটাকে এআইয়ের একটি অতি সরলীকৃত চিত্র কল্পনা যেতে পারে, তবে আলোচনা শুরুর জন্যে এটাই যথেষ্ট। লক্ষ করুন, এই চিত্রটি ইতোমধ্যেই আমাদের এআই সংক্রান্ত লক্ষ্যটিকে প্রকৌশলচর্চা-কেন্দ্রিক লক্ষ্যের বাইরে নিয়ে গেছে। আমরা এখানে সিস্টেমের কাছে এমন উপায়ে জ্ঞানার্জন ও ধারণ আশা করছি যাতে করে সে তার জ্ঞানকে নানাভাবে সংযুক্ত করে ব্যবহার করতে পারে। এবং জ্ঞানটার সেই নতুন ব্যবহারগুলোর সাথে জ্ঞানটা কীভাবে অর্জিত তার সম্পর্ক থাকাটা অনেকটা অগুরুত্বপূর্ণ হয়।

এআইয়ের এই কল্পিত চিত্রের সাপেক্ষে চিন্তা করলে আমার মূল উদ্বেগ হলো সিস্টেমটার অর্জিত জ্ঞানের সঠিকতা বা যাচাই নিয়ে। এখানে আমরা অঢেল জ্ঞানার্জনের কথা বলছি এবং নিশ্চিতভাবেই সেই জ্ঞানে ভুল-ত্রুটি থাকবে। সেক্ষেত্রে সঠিকতা যাচাই করা ও বজায় রাখার দায়ভারটা কার উপর বর্তাবে? মানুষ না যন্ত্রের উপর? আমার মনে হয়, আমরা সবাই-ই যতোটা সম্ভব চাবো যে এআই সিস্টেমটা যাতে কোনো একটা উপায়ে তার নিজের জ্ঞানটা নিজেই যাচাই ও রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং আমাদেরকে সেই গুরুভার থেকে রক্ষা করে। কীভাবে সেটা সম্ভব তা অনুধাবন করা কঠিন; একটা সিস্টেমের জ্ঞানের ভুল-ত্রুটিগুলোকে আমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে নানা নব্ নাড়াচাড়া করে শুধরে নেয়াটাই বরং সহজতর কাজ। আর ঠিক এ কাজটাই আমরা বর্তমানে করে যাচ্ছি।