আমার বেডরুমে একটি মার্বেল পাথরের বুদ্ধমূর্তি আছে । এটা মনে হয় আমার সবচেয়ে কাছের জিনিস । সবচেয়ে নিজের । বাড়ির দোতলায় আমার বেডরুম । রুমের পশ্চিম দিকে একটা টেবিলের উপর পূর্ব দিকে মুখ করে রাখা থাকে বুদ্ধমূর্তি টা । রোজ সকালে পূর্ব জানালা দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়ে বুদ্ধের গায়ে । রোজ সকালে বুদ্ধ দিবাকরের এই অপূর্ব রূপ দেখে আমার ঘুম ভাঙ্গে । মন টা যেন শান্তি তে ভরে যায় । মনে পড়ে যায় বুদ্ধের সম্পূর্ণ জীবনদর্শন । মনে পড়ে যায় সর্বং অনিত্যম ! মনে হয় ভগবান বুদ্ধ যেন আমার দিকে তাকিয়ে বলছেন ,“কোনও কিছুই চিরকালের জন্য নয় রে! কোনও কিছুতেই আসক্তি রাখিস না । তাহলেই একদিন এই দুঃখের সংসারের বন্ধন ছিন্ন হবে , মুক্তি পাবি সকল দুঃখ থেকে। এগিয়ে চল, নির্বাণ ই হোক তোর লক্ষ্য ।”
বি এ ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি, তখন থেকেই বৌদ্ধ দর্শনের প্রতি কেন জানি না অদ্ভুত একটা টান অনুভব করি । তখনি টিফিনের টাকা জমিয়ে বুদ্ধের জীবনী “তথাগত” কিনে পরেছিলাম, যা এখনও আমার কাছে আছে । সেই বার ই ডিপার্টমেন্ট থেকে দীঘায় দিন দিনের পিকনিকে নিয়ে যাওয়া হয় , আর সেটাই ছিল আমার প্রথম বার দীঘা যাওয়া । তখন ২০০১ সাল। অনেক কষ্ট করে আম্মি কে মানিয়ে, আব্বু কে রাজি করিয়ে যেতে পেয়েছিলাম বন্ধুদের সাথে দীঘা । খুব মজা করেছিলাম । এখন কার দীঘা তো অন্যরকম । তেমন ভালো লাগে না । কিন্তু সেবারের জন্য দীঘার কাছে আমি সারা জীবন ঋণী হয়ে থাকব ।
যাইহোক, প্রথম দিন তো খুব সকালে উঠে সূর্যোদয় দেখলাম । ছবি তুললাম । ঝাউ-বনে ছবি তুললাম । ঘুরে এসে সবাই মিলে সমুদ্রের বুকে দাপাদাপি শুরু হল । আধশো মেয়ে তিন চার ঘণ্টা ধরে সমুদ্র ও তাতে স্নান করতে আসা আশেপাশের লোকেদের আনন্দের বারোটা বাজালাম । সবাই আমি আর আদৃতা একটু বেশিক্ষণ ধরেই স্নান করছিলাম দেখে সুনিতা ম্যাদাম ডাকতে এসেছিল । যখন একটু বকাঝকা খেয়ে ফিরে আসছি ভিজে গায়ে হঠাৎ দেখি ডানদিকে এক মহিলা বসে একটা ছোট হাতুড়ি আর ছেনি নিয়ে মার্বেল পাথরের নারীমূর্তি তৈরি করছে । পাসে একটা ছোট বুদ্ধমূর্তি সদ্য তৈরি করে রাখা । আমি বুদ্ধমূর্তির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললাম , কত দাম ? মহিলা কাজ করতে করতে না তাকিয়েই উত্তর দিল , “১৭০ টাকা ।”
–“ বড় একটা তৈরি করে দেবেন ?
–“৩৫০ টাকা পড়বে ।”
ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বললাম , “ম্যাম ১৫০ টাকা ধার দেবেন ? আমার কাছে ২০০ টাকা আছে ।”
ম্যাদাম দেবেন না , এমন হতেই পারে না। তাছাড়া উনি আমাকে খুব ভালোবাসতেন । ভারতীয় দর্শন পড়াতেন । বৌদ্ধদর্শন-এর উপর পি এইচ ডি করেছেন । ভগবান বুদ্ধের জন্য এতটা আবেগ আমি কারও মধ্যে দেখিনি । উনার কাছে অফ টাইমে চলে যেতাম বৌদ্ধ দর্শন বুঝতে । এই আবেগটা উনি আমাদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ।
মাদাম হেসে বললেন , “দেবো । এখন চল । সর্দি লেগে যাবে ।”
শিল্পী ভদ্রমহিলা কে বললাম, “ কাল সকালের মধ্যে দিতে হবে কিন্তু !”
উনি আবার না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলেন, “কোন লজ?”
আমি বললাম, “অতিথি” !
যথা সময়ে পৌঁছে গিয়েছিল একটা একফুট দুই ইঞ্চি সাইজের একটা সাদা মার্বেল পাথরের ধ্যানরত বুদ্ধের মূর্তি । সেবার সবাই কত কিছু কিনেছিল, আমি একটা দশ টাকা দামের হেয়ার ব্যান্ড ও কিনতে পারি নি । তবু মন টা খুব খুশি খুশি লাগছিল ফেরার সময় । নিজেকে সবচেয়ে ধনী মনে হচ্ছিল । খুব সাবধানে বাড়ি পর্যন্ত অক্ষত নিয়ে এসেছিলাম মূর্তি টা ।
বাড়ি পর্যন্ত তো এলো । এর পরই শুরু হল যাবতীয় বিপত্তি । আব্বু কিছুতেই মূর্তি টা ঘরে ঢোকাতে দেবে না । আমি তার গোঁড়ামির উদাহরণ আগে তেমন পাই নি । আমি তো অবাক হয়ে গেলাম । তখন ধর্ম বিষয়ে তেমন জ্ঞান ছিল না। সবে দর্শন পড়তে শুরু করেছি । তবে ইসলাম সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারনা ছিল যেহেতু কোরআন পড়তাম । আব্বু আম্মির দিকে তাকিয়ে বলল ওকে বারণ করে দাও । ওইটা যেন ফেলে দিয়ে তারপর ঘর ঢোকে ।

আব্বু এবার আমায় বলতে শুরু করলো—
‘এই ঘরে কিছুতেই কোনও মূর্তি ঢুকতে দেবো না । তোমাকে না বারবার বলেছি, মূর্তি হারাম । তবু তুমি শোন নি । এতবার বলেছি সরস্বতী পুজোয় যাবে না । তবু প্রতি বছর যাও । এত বারণ করি প্রসাদ খাবে না তবু খাও । বারবার বলেছি এইসব হিন্দুয়ানী নোংরা কালচার মুসলিমদের শোভা পায় না । তবু তুমি শুনছো না ।’
আমি বললাম , “ সরস্বতী পুজো তো স্কুলের পরব । সব বন্ধুরা আছে , গেলাম তো কি হবে ?”
“–কবে থেকে কোরআন পরছো ? জানো না, কোনও মাটির পুতুলের কোনও ক্ষমতা থাকতে পারে না। তুমি কি ভাবো ওই পুতুল তোমাকে পাস করিয়ে দেবে ? পুতুল পুজো কবিরা গোনাহ । সেযদা দেবে একমাত্র আল্লাহ কে । কতবার বলেছি , তবু কি করো , বাগান থেকে ফুল তুলে নিয়ে গিয়ে অঞ্জলি দাও !”
“—আমিও তো মাঝে মাঝে নামাজ পড়ি । আল্লাহ কে না মানলে কি পড়তাম ?”
“–আমার কথা বোধ হয় তুমি বুঝতে পারলে না । খালি আল্লাহ কে মানলেই হবে না । মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে যে আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা । আল্লাহ-র কোনও শরিক নেই । তুমি হিন্দু দের পুতুল কে আল্লাহ র সমকক্ষ মনে করছ । এটা আরও খারাপ ।”
“—কে কার সমকক্ষ না নয় , আমি কেন বিচার করবো ? (আম্মির দিকে তাকিয়ে বললাম) মারামারি লাগাতে যাবো নাকি ?”
আব্বু বিজ্ঞের মতো মৃদু ঘাড় নেড়ে নেড়ে বলতে শুরু করলো—
“অনেক বড় বড় কথা বলতে শিখেছ ! সে তুমি যাই করো । বিচারের দিন নসদিগ ! সেদিন সবাই কে নিজের কাজের জবাব দিতে হবে । আমি তো তোমার কাজের জবাব দেবো না । তাই তুমি যা ভালো বোঝো করো ।” বলতে বলতে গলা চড়ছে । আরও দু একটা কি যেন সব বলল, মনে নেই তার পর গলার স্বর সপ্তমে তুলে বলল– “কিন্তু এই বলে রাখলাম! আমার ঘরে আমি এই মূর্তি ঢুকতে দেবো না ।অনেক কষ্টে তৈরি করা আমার এই ঘর । এই ঘর কে আমি জাহান্নামের দরজা বানাব না । কিছুতেই না ।”
“–আম্মির দিকে ঘুরে বলতে শুরু করলো আব্বু ! আমি তোমাকে এখনও বলছি, ওটাকে নিয়ে যেন ও ঘরে না ঢোকে । আমি কোনও ধর্মের অসম্মান করতে চাই না । কিন্তু ও যদি ওটাকে অন্য কাউ কে না দিয়ে আসে তাহলে ওটাকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে নরদমায় ফেলে দেবো ।”
আমি বললাম, “অসম্মানের কি বাকি রাখলে ? একজন মহান ব্যক্তির মূর্তি কে টুকরো করে নরদমায় ফেলে দেবো বলছ । অবশ্য বুদ্ধের মূর্তি ভাঙ্গা তো তোমার কাছে গর্বের বিষয় ! এই তো সেদিন মুল্লা ওমর তো সেই কথাই বলল !”
আম্মি বলল । ‘ মুখের উপর কথা বল না। আব্বু যা বলছে মন দিয়ে শোনো ।”
আব্বুর মেজাজ গরম তো হয়েই ছিল। আমার কথা শুনে তেলে-বেগুনে হয়ে বললেন—
“ কি বলতে চাইছ কি ? আমি সন্ত্রাসবাদী ?”
আম্মির দিকে ফিরে–
“দেখো! আরও লেখাপড়া শেখাও! শেখাও এই নাপাক দেশের যত কুফরি কালাম । সেদিন বলেছিলাম এই তো মাধ্যমিক হল । এবার বিয়ে দিয়ে দাও । কি বললে ? ‘পড়তে চাইছে পরুক না । আমাদের কি আর অভাবের সংসার ? বে থা তো করবেই । সব মেয়েই করে । ও এত ভালো রেজাল্ট করেছে , পড়ুক না !’ দেখো! দেখো! পড়াশুনার নতীজা! এত পড়াশুনা শিখেছে যে বাপের মুখের উপর কথা বলে ! ওকে মূর্তি ফেলে ঘরে ঢুকতে বল। নয় তো আজ ভালো হবে না বলে দিচ্ছি !”
আব্বুর মেজাজ দেখে ভয় যত না করছিল , তার চেয়ে বেশি বিরক্তি লাগছিল । কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না । আম্মির দিকে তাকিয়ে বললাম, “ আম্মি, এটা থাকবে তো আমার রুমে ! আর আমার কাজের জবাব যখন আব্বু দেবে না, তখন আপত্তি কিসের ? আল্লাহ যখন মূর্তি বলে একটা জিনিস তৈরি করে রেখেছে , তখন তার যদি দোষ না হয় , তাহলে আমার দোষ কেন হবে ?”
তখন এত যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পারতাম না । তবু আম্মি হয়তো বুঝলো আমি কি বলতে চাইছি । আম্মি আব্বু কে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, তার আগেই আব্বু চিৎকার করে বলল,“তুই বাইরেই থাকবি , যতক্ষণ না ওটাকে ফেলে দিয়ে আসবি !”, বলে মুখের উপর দরজা টা বন্ধ করে দিল ।
আমি ভাবছি আমার প্রিয় বুদ্ধমূর্তিটা নিয়ে আমি কি করবো । মনে পরছে কত কষ্ট করে নিয়ে এলাম কত সাবধানে । ভাবছি ম্যাদাম কে দিয়ে দেবো নাকি , কেননা , আব্বু তো আমার অনুপস্থিতি তে ওটা ভেঙ্গেও ফেলতে পারে । একবার ভাবছি , না । এটা আমি হাতছাড়া করবো না । এটা আমার সাথেই থাকবে … এইসব সাত-পাঁচ ভাবছি, এমন সময় দরজা আবার খুলল। আমার চোখে ততক্ষণে জল এসে গিয়েছে খেয়াল করিনি । দেখি আম্মি খুলেছে । আব্বু সোফা তে বসে গম্ভীর স্বরে বলল, “এখনও ফেলেনি ? ঠিক আছে বাইরে লোক না হাসিয়ে ভিতরে আসতে বল।” বোধ হয় আম্মি ম্যানেজ করেছে ভেবে ঘরে ঢুকলাম ।
আমি কোনও উত্তর না দিয়ে সোজা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আমার রুমে এসে ব্যাগ আর মূর্তি টা রেখে বাথরুমে ঢুকলাম । সবে স্নান সেরে বেরিয়েছি , শুনতে পেলাম, আব্বু নিচে চ্যাঁচামেচি করছে । কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধড়মড় করে উপরে উঠে চিৎকার করতে করতে সোজা আমার রুমের দিকে –“আজ তুই এটা ফেলবি ,নয়তো আমি ই ভেঙ্গে দেবো । তুই কি ভেবেছিস , তুই যা বলবি তাই হবে ? এই ঘরে পাক –নাপাক বলে কি কিছু নেই ?”
বলতে বলতে আব্বু সোজা মূর্তির দিকে । আমি বুঝতে পারলাম , আমি যদি এখন না আটকাতে পারি, আব্বু মূর্তি টা হয়তো ভেঙ্গেই দেবে। আব্বু প্রায় ঘরের দরজার কাছে চলে এসেছে। মনে হচ্ছে, যেমন করে হোক আব্বু কে আটকাতেই হবে ! কিন্তু কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না ।
হঠাৎ মনে কোথা থেকে একটা ভীষণ জোর চলে এলো জানি না। আমি এক ঝটকায় টেবিলের কাছে গিয়ে মূর্তিটা বুকে জরিয়ে ধরে আব্বু কে শান্ত গলায় বললাম,“ আব্বু , তুমি আমার রুমে ঢুকবে না। আমার জিনিসে হাত দেবে না।”
“–এই ঘর টা আমার ! কি মনে করেছিস কি তুই ! যা খুশি তাই করবি ? দেখছি-—”, বলে রুমের ভিতরে একটা পা দিতেই আমি মূর্তি টা আরও চেপে ধরে বলে উঠলাম ।
“–আব্বু ! তুমি কাড়তে আসবে না, বলে দিলাম । আমি কিন্তু খালি তোয়ালে জড়িয়ে আছি ! আগে শোনো ! তুমি যদি আমার রুমে পা দাও, তোমাকে আমি সারা জীবন আব্বু ডাকবো না । খবরদার ! আমি কিন্তু শেষ বারের মতো বলছি ।’’ , বলে এতটুকু না সরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম ।
আব্বু আমার দিকে কটমট করে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে কোন কথা না বলে সোজা নিচে চলে গেলো । আমি তখনো পাথরের মতো দাঁড়িয়ে !
কিছুক্ষণ পর আমার পড়ার টেবিল টা পশ্চিমদিকে টেনে এনে তাতে মূর্তিটা রাখলাম। ওখানেই কেন রেখেছিলাম, জানি না। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি সকালের রোদ সোজা বুদ্ধর গায়ে এসে পড়ছে । কি সুন্দর লাগছে ধ্যানরত বুদ্ধের এই অপূর্ব রূপ! চোখ দিয়ে জল এসে গেলো আনন্দে । হয়তো আনন্দ টা জয়ের আনন্দ । আমার প্রতিজ্ঞা পূরণের আনন্দ । চোখের সামনে দৃশ্য টা ভেসে উঠলো —
কিছুদিন আগেকার কথা । এস বি (সুনিতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ম্যাদাম লাইব্রেরির স্টাডি রুমে বসেছিলেন একটা বই হাতে । আমি একটা নোট লেখার জন্য গিয়েছিলাম । ম্যাদাম কে একা পেয়ে অষ্টাঙ্গিক মার্গ এর শেষ অঙ্গ , মানে ‘সম্যক সমাধি’ বিষয় টা জানতে চাইলাম । বললাম, বইতে খুব কম লেখা আছে ওটা সম্পর্কে । ম্যাদাম বোঝাতে বোঝাতে অহিংসা নীতির কথা বললেন । বলতে বলতে বলে ফেললেন , “–যে সারা জীবন বিন্দুমাত্র অহিংসার বিরোধিতা করেছেন ,তার মূর্তিই আজ মানুষের হিংসার শিকার হচ্ছে । মানুষের আজ যে আদর্শ হওয়া উচিত, মানুষ তারই মূর্তি ভাঙ্গছে। মানবতা মনে হয় শেষ হয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে!” , বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ।
তখন আমি পেপার পড়তাম না তেমন । জানতাম না । তাই এলোমেলো ভাবে প্রশ্ন গুলো করে ফেললাম , “ ভগবান বুদ্ধের মূর্তি ভেঙ্গে কি লাভ ? কারা করেছে? কেন করেছে ম্যাদাম ?”
উত্তরে সেদিন ম্যাদাম ‘মু-’ বলে থেমে গিয়েছিলেন প্রথমে । তারপর চশমা টা খুলে বাঁ হাত দিয়ে চোখের কোন টা মুছে নিয়ে , বলেছিলেন, “সন্ত্রাসবাদীরা । বামিয়ানে পাহাড়ের পাথর কেটে গড়া বৌদ্ধমূর্তি সারা পৃথিবীতে এক অসাধারণ শিল্পকর্ম বলে বিবেচিত হতো । একদল লোক শুধু মূর্তি অপছন্দ বলে ভেঙ্গে দিয়েছে , ডিনামাইট ফাটিয়ে । আচ্ছা বলতো , কি লাভ হল এতে !”
এরপরও ‘মু’ শব্দের অর্থ বুঝব না, এতটা বোকা আমি ছিলাম না । সব টা না জেনেও সব পরিষ্কার হয়ে গেলো । তিনি কি বলতে চেয়েছিলেন আর কেনই বা থেমে গেলেন । বুকের ভিতর টা হু হু করে উঠলো । সেদিন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম , জীবনে একটা বুদ্ধমূর্তি আমি প্রতিষ্ঠা করবই । সেই প্রতিজ্ঞা পূরণের আনন্দই চোখে জল এনে দিয়েছিল মনে হয় ।
যাইহোক। পরেরদিন ম্যাডামকে বলেছিলাম বাড়ির ঘটনাটা। ম্যাদাম মৃদু হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন । মনে হল , সারা জীবনের জন্য তিনি আমায় আশীর্বাদ করলেন ।
এরপর থেকে কোনোদিন আব্বুও আমার রুমে ঢোকে নি । কেন জানি না ! তখন বলেছিলাম হয়তো । কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে , অন্য কারণে ঘরে ঢুকলেও আমি আব্বু বলা বন্ধ করে দেবো ! কিম্বা হয়তো আব্বু ভাবে, এই মূর্তি রাখা ঘরে ঢুকলে তার গোনাহ হবে বা তার সারা জীবনের কামানো নেকী বরবাদ হয়ে যাবে । প্রথম কয়েকদিন অবশ্য রুমে তালা দিয়ে কলেজ যেতাম । তারপর আর আব্বু রুমে ঢোকে না দেখে কিছু আর তালা দিই না । একদিক থেকে অবশ্য ভালই হয়েছে । নাস্তিক্যবাদ , বিজ্ঞান আর ধর্ম বিরোধী বই তে রুম টা ভরে উঠলেও ভয় লাগে না ।