ড.ইউনুস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। একজন বাঙ্গালী নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। আমার দেশের একজন নোবেল পেয়েছে, এই বলে আমিও চিৎকার করেছি। আমারও তখন জানান দিতে ইচ্ছে করছিল,দেখ বিশ্ববাসী আমরাও পারি। সময়ের সাথে এই আবেগ কিছুটা থিতু হয়েছে। হয়তো পৃথিবীকে আরো জানার সুযোগ হয়েছে, নোবেল,নরওয়ে,আমেরিকা,এনজিও,পুঁজিবাদ এসব বিষয়ে কিছুটা জানার পর।আগের আমি থেকে অনেক দূর সরে এসেছি।
কিছুদিন আগে জাফর ইকবাল স্যারের একটা কলাম পড়ে কথাটা মনে উদয় হলো। অনেক বিতর্ক না করেও আমার এই সম্মানকে কাজে লাগাতে পারতাম। এখনো হয়তো পারি।
ড.ইউনুস নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। কেউ কেউ বলেন শান্তিতে নয় তেলবাজি তিনি নোবেল পেয়েছেন। তিনি অনেক বিশ্ব আলোচিত ব্যক্তি। পৃথিবীর সব রাষ্ট্রনায়কেরা হয়তো তাকে চিনে। নামীদামি বিশ্ববিদ্যাল গুলাতে লেকচার দিয়ে বেড়ান। পৃথিবীর বড় বড় সম্মেলনে তিনি অতিথি হয়ে যান। বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও অনেক বার তার নাম উঠেছেন। আমেরিকার প্রসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন তাকে নিজে প্রস্তাব করেন। তিনি বিনয়ের সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেন। শুনেছি পৃথিবীর যে কোন রাষ্ট্রনায়ককে তিনি ফোন করতে পারেন। অন্তত তিনি ফোন করলে তারা কথা বলেন। তার দু হাত প্রসারিত ছবিটার নিচে লেখা ছিল আমরাও পরেছি। আমরা না পারলেও আপনি পেরেছেন। আমরা না পেলেও আপনি পেয়েছেন।

ড.ইউনুস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আমরাও শান্তি কামী মানুষ। শান্তির জন্য আমরা তার কাছে যেতেই পারি।বাতাসে কথা ছুটে ইউনুস সুদ খুর মহাজন। লোকে বলে তিনি অর্থনীতিবীদ হয়ে শান্তিতে নোবেল পেলেন। আমরা মানি অর্থনীতিবিদদের শান্তিতে নোবেল পাওয়া যাবে না, এমন কোন আইন নেই। আপনি নিশ্চয় শান্তি এনেছেন তাই শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। হতে পারে সেই শান্তি বিষয়টা আমরা আমপাবলিকরা বুঝতে পারছিনা। হতে পারে সবই হতে পারে।

এসবের সমালোচনার পরেও এদেশের মানুষ আপনাকে পছন্দ করে। আপনার মনোবলের উপর এখনো আমাদের আস্থা আছে। আপনার কর্মদক্ষতার উপর আমাদের ভরসা আছে। তাই আপনার উপর আমাদের প্রত্যাশা আরো বেশি। আপনি যেমন আমাদের জন্য নোবেল এনে দিয়েছেন। আপনি যেমন বহিঃ বিশ্বে আমাদের জন্য পরিচিতি এনে দিয়েছেন। তেমনি আমাদের আরো কিছু চাওয়া আপনার প্রতি থাকবে। আমরা এই দেশটাকে ভালবাসি। এই দেশের ভাল করতে পারলে এই আমরাই আবার আপনাকে কাঁধে তুলে নাচব। এই ষোল কোটি মানুষের হৃদয় থেকে ষোল কোটি মানুষের ভালবাসার নোবেল এনে দেব। আমাদের জন্য আর একটু কাজ করে দিন।

না আপনার আমেরিকা থেকে টাকা এনে আমাদের দেশ ধনী করার কথা বলছি না। আমাদের সামান্য কিছু দাবী আছে আপনার প্রতি। আপনি যদি আন্তরিক হোন। দেশকে ভালবাসেন। সব শেষে আপনি সত্যি যদি শান্তি চান তবে আমাদের এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসুন।
আমাদের মাত্র তিনটা দাবী।
১। আমাদের দেশে আটকে পরা বিহারিদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।

বাংলাদেশে তেরোটা ভিন্ন-ভিন্ন অঞ্চলের ৬৬টা ক্যাম্পে এখনও আড়াই লাখ থেকে তিন লাখের মতো আটকে পড়া বিহারি আছে। আটকে পড়া পাকিস্তানিই বলা হয় এদেরকে।

উইকির তথ্যটা সম্ভবত অনেক আগের। এ বছর সমকালের রিপোর্ট অনুযায়ী “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ১৩টি জেলায় ৬৬টি ক্যাম্পে ৫ লাখের মতো আটকেপড়া পাকিস্তানি (বিহারি) রয়েছেন” বাংলাদেশে বিহারির সংখ্যা ৫ লক্ষ
আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের অবস্থান ছিল বিপরীতে। সেই সূত্র ধরে আমরা সহজেই তাদেরকে শত্রু বাহিনী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। আমরা করছিও তাই। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করতে পারিনা যে তারাও মানুষ। মানুষ হিসেবে তাদের দুঃখ দুর্দশা আমাদের বিচলিত করে।

আপনি তো জানেন। আমাদের দেশের মতো এত নাজুক অর্থনৈতিক দেশে এই অতিরিক্ত ৫ লক্ষ লোকের দায়িত্ব নেয়া কঠিন। আমরা চাইছি যত দ্রুত সম্ভব তাদের যে এ দেশ থেকে বিতারিত করা হোক।তারাও হয়তো মনেপ্রাণে চাতো তাদের দেশ পাকিস্তানে ফিরে যেতে। তাদের তৃতীয় প্রজন্ম এখন বেড়ে উঠছে আমাদের দেশে তাদের পক্ষে কি আগের মতো পাকিস্তানে যাওয়ার স্বপ্ন আছে ? তারা ভাল করেই জানি এটা তাদের দেশ নয়।

পাকিস্তানের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক ভাল। আগেও ছিল অন্তত একাত্তুরে ভাল ছিল।ভাল হোক আর মন্দ হোক আমেরিকার কথার বাইরে কোন কথা বলার সাহস পাকিস্তানের নেই। আর আমেরিকা তো সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইরাকে শান্তি আনার পরে আফগানিস্তান। এখন এই দুই দেশে শান্তির বাতাস বইছে। আমরাও সেই বাতাস কম করে পাচ্ছি।

(লেবাননের পর সিরিয়া সেই দিকে যাচ্ছে। শান্তির প্রতীক আমেরিকা আমাদের দেশের গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে নানা সময় নানা কথা বলছে। আমাদের নির্বাচন নিয়ে তাদের তো মাথা ব্যথার শেষ নেই। তাদের বক্তব্যের ধরনটা দেখলেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমেরিকার রাষ্ট্রদূত কথা বলে” আমরা এই দেশে সুষ্ঠ নির্বাচন দেখতে চাই”। তাদের কথা শুনলে মনে হয় তারা আমেরিকার কোন অঙ্গরাজ্য সম্পর্কে বক্তব্য দিচ্ছেন। আমাদের দেশের যে সকল সমস্যা আছে তার মাঝে বিহারিরা একটা বড় সমস্যা। পাঁচ লক্ষ বিহারিদের মানবেতর জীবন যাপন, এবং আমাদের রাষ্ট্রের বিশাল ক্ষতি আমরা মেনে নিতে পারছিনা।)

বিহারিদের দুর্দশা বর্ননা সংবাদ।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এসব বিহারিরা পশ্চিম পাকিস্তানকে সমর্থন করে, বিশেষত ভাষা এবং ধর্মের কারণে। বিপুল সংখ্যক বিহারি রাজাকার, আলবদর ইত্যাদি বাংলাদেশী পাকিস্তান সমর্থক-গোষ্ঠি সঙ্গে অথবা সরাসরি পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা নিধনসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। অন্যান্যরা সাধারণ বাঙালির মতোই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে।

ক্যাম্পগুলোতে বিভিন্ন সমস্যা যেমন ঘিঞ্জি আবাসন, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, যৌথ জীবন ইত্যাদি রয়েছে। অনেক ছেলেই নিজেদের মধ্যে বিবাহে আগ্রহী নয়, তারা সম্ভব হলে বাংলাদেশি কোনো মেয়ের সঙ্গে ঘর বাঁধছে। ফলে বাড়ছে বিহারি অবিবাহিত মেয়ের সংখ্যা- পরিসংখ্যানমতে, এই সংখ্যা ২০,০০০-এরও বেশি।

বিহারি দের নিয়ে

১৯৭১ থেকে ২০১২ পর্যন্ত তাদের প্রতি কত টাকা ব্যায় হয়েছে? সে টাকাও পাকিস্তানের কাছ থেকে আদায় করা সম্ভব?

দেশের চিন্তা করেই হোক অথবা মানবতার কথা চিন্তা করেই হোক। শান্তি পুরস্কার প্রাপ্ত শান্তিবাদীর কাছে আমাদের এই দাবী থাকলো। আপনি আপনার পরিচিতি,সুনাম এবং ক্ষমতা দিয়ে আমাদের জন্য এই কাজ টুকু করে দিন।
দয়া করে ড.ইউনুস আপনি শান্তির পতাকাবাহী হিসেবে তাদের নিজেদের দেশের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

২। রোহিঙ্গা শরনার্থী তাদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।

বর্তমানে বাংলাদেশে রোহিংগার সংখ্যা২,২২,০০০ এর মতো। দুই লাখ বাইশ হাজারের মতো

আমাদের দেশ এমনিতেই জনসংখ্যা বিস্ফোরণ চলছে। তার উপর যদি আরে আড়াই লাখ লোক এসে জোটে এটা আমাদের দেশের জন্য কতটা বিপজ্জনক? রাজনৈতিক চাপে উদ্ভাস্ত হয়ে আসা এই মানুষ গুলোর জন্য আমাদেরও মায়া হয় ।কিন্তু আমরাও যে সম্বলহীন। তাদের একটা দেশ আছে। তাদের নিজ দেশে পাঠানোর জন্য আপনি চাইলে ব্যবস্থা করতে পারেন।
তাদের মানবেতর জীবন যাপন নিয়ে আগে একটা ব্লগ পড়েছিলাম রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে। তাদের মানবেতর জীবন যাপন নিয়ে। এবং পৃথিবীর বিখ্যাত পত্রিকা গুলোর রিপোর্ট নিয়ে।

প্রথমত আমরা ইচ্ছে করলেও তাদের এই দেশে সুযোগ সুবিধা দিতে পারব না। আমরা নিজেরাও তো প্রায় ভিখারির মতো জীবন যাপন করি(গ্রামীণ ব্যাংকের সূত্র থেকে দারিদ্র্য বিদায় নেয়ার কথা)।
এখানেও দাবী জানাই, দেশের চিন্তা থেকে না হোক অন্তত মানবিক বোধ থেকে তাদের জন্য একটা কিছু করূন। আমরা জানি আপনার আঘাত ক্ষমতা। আপনি চাইলে ওবামা সরকার,পাকিস্তানের সরকার,মায়ানমারের সরকারের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। সমস্যা সমাধানের জন্য এক সাথে বসতে পারেন। এমন কি সমাধানের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারেন। প্রয়োজনে হয়তো আমেরিকার সেনাবাহিনীও পাঠাতে পারেন।

৩। বাংলাদেশ ভারতের ছিটমহল সমস্যা সমাধান

এর মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল আছে বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতে। এসব ছিটমহলে বসবাসকারী জনসংখ্যা সংখ্যা ৫১ হাজার। সাম্প্রতিক (২০১১) জনগণনা অনুযায়ী ভারতের ছিটমহলে বসবাসরত লোকসংখ্যা ৩৭ হাজার এবং বাংলাদেশের ছিটমহলের লোকসংখ্যা ১৪ হাজার।২৪২৬৮ একর ভূমি নিয়ে দুই দেশের ছিটমহল। তার মধ্যে ভারতের ১৭ হাজার ১৫৮ একর। বাংলাদেশের ছিটমহলের জমির পরিমাণ ৭ হাজার ১১০ একর।

এখানেও অর্ধ লক্ষের বেশি মানুষের অসহায় জীবন যাপন। প্রথম শ্রেণীর নাগরিক হয়েও অবস্থান গত কারনে তাদের করুন জীবন যাপন। এবং এসব নিয়ে দুই দেশের গড়িমসি আমাদের হতাশ করেছেন।

আমাদের আশা, আপনি আন্তরিক ভাবে এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলে সুফল মিলবে।আপনি অনেক কিছু পারে কেবল আমাদের দেশের জন্য এই কাজ টুকু করুন। আপনি যদি এই কাজে উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসেন, আমরা আমজনতা আপনার পেছনে থাকব।

আমাদের দাবী জানানোর জন্য আর আমরা কোথায় যেতে পারি?আর কত বছর ধরে দুর্ভোগ করার পরে এর সমাধান মিলবে?