নিন্দুকেরা বলে এখন নাকি বাংলাদেশে সবচেয়ে বিস্ময়কর নাটকগুলো মঞ্চস্থ হয় খামারবাড়ি রোডের পাশে এক বিশালাকায় ভবনে। যাহোক নিন্দুকেরা তো কত কিছুই বলে, তাই ওসব বাদ দিয়ে চোখ বুলিয়ে আসা যাক কয়েকদিনের পুরনো একটা সংবাদে।
সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের নিয়ে ‘আপত্তিজনক’ বক্তব্যের জন্য আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন রোববার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী আলী আশরাফ।
শনিবার এক আলোচনা সভায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্ণধারের বক্তব্য ধরে কয়েকজন সংসদ সদস্যের আলোচনার পর তাকে আলী আশরাফ এই আহ্বান জানান।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে সংসদে তলব করার হুমকিও দিয়েছেন অধিবেশনের সভাপতি। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই সময় অধিবেশনে ছিলেন।
আলী আশরাফ বলেন, “তাকে (সায়ীদ) আমরা এ সংসদে তলব করতে পারি। একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। সংসদকে অবমাননা করার অধিকার কারো নেই।
“সংসদ অবমাননা করা ব্যাড সিগন্যাল। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, গণতন্ত্রের আকাশে কালো মেঘ দেখা যায়।”
শনিবার টিআইবির আলোচনা সভায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ‘সাংসদ ও মন্ত্রীরা চোর-ডাকাতের মতো আচরণ করেন এবং শপথ ভঙ্গ করেন’- এই বক্তব্য দেন বলে দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত হয়।
ওই বক্তব্য ধরে পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়ে সংসদে আলোচনার সূত্রপাত করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিম। এরপর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু ও আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
ফজলুল আজিম কারো নাম উল্লেখ না করে বলেন, “ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের আলোচনায় একজন বুদ্ধিজীবী দায়িত্বহীন মন্তব্য করেছেন।
“আমরা এখানে জনগণের রায় নিয়ে আসি। অনেকেই আছি, যারা বারবার নির্বাচিত হয়ে আসছি। আমরা কেউ ধোয়া তুলসী পাতা নই। ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। আইন আছে, ভুল করলে জনগণ বিচার করবে।”
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বক্তব্যকে অযাচিত, দুঃখজনক, দায়িত্বহীন আখ্যায়িত করেন সংসদের মাধ্যমে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, তা দেখার পরামর্শ দেন ফজলুল আজিম।
এরপর মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “উনি (ফজলুল আজিম) নামটা বললেন না। এটা ছিল অধ্যাপক আবদুল্লা আবু সায়ীদ।”
“রাজনীতিবদরাই দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বুদ্ধিজীবীরা অনেক উপদেশ দিতে পারেন। তিনি ভোটারদের অপমান করেছেন,” বলেন জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য।
আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ সেলিম বলেন, “এটা গণতন্ত্র, সংসদের ওপর আঘাত। বুদ্ধিজীবীরা জাতির বিবেক হয়েছে। বিপদে তাদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না।”
“উনারা কী করেন, এত টাকা কোথা থেকে খরচ করেন? আমি অর্থমন্ত্রীকে বলব, এদের টাকার উৎস কোথায়? প্রতি সপ্তাহে একটা-দুইটা সেমিনার করেন, এত দামি গাড়িতে কী করে চড়ে,” প্রশ্ন করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য বলেন, “নির্বাচিত সরকার থাকলে তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। অনির্বাচিত সরকার থাকলে তারা পদ পায়। এক এগারোর পর তাদের ভূমিকা কী ছিল? জানা নেই? এক-এগারোর পর ব্যবসায়ী, ছাত্র শিক্ষকদের যখন গ্রেপ্তার করা হলো, তখন তো একটা কথাও বললেন না।”
স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে অধিবেশনের সভাপতির দায়িত্বপালনককারী আশরাফ আলী সংসদ সদস্যদের বক্তব্যকে ‘যথার্থ’ উল্লেখ করে বলেন, “এদেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। তারাই আমাদের নির্বাচিত করেছে।
“এ বক্তব্য নিঃসন্দেহে ভালো ইঙ্গিত নয়। এটা বিচ্ছিন্ন কোনো বক্তব্য নয়।”
সূত্রঃ bdnews24.com
এখানে যে লোকটার কথা বলা হচ্ছে অর্থাৎ প্রফেসর আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ তিনি একজন শিক্ষক, তিনি আলোকিত মানুষ চান বলে একটা উদ্ভট কথাও প্রচলিত আছে। দেশের কিছু মানুষ তাকে বেশ পাত্তা টাত্তা দেয়, তবে তাদের সংখ্যাটা বেশিনা- দেশ ও বিদেশ মিলিয়ে হয়ত কয়েক কোটি হবে মাত্র। কিছু মানুষ আবার আছে এই লোক কথা বলার সময় হা করে কথা গিলতে থাকে, যেখানেই সুযোগ পায় এই লোকের কথা শোনার সুযোগ পেলে ছাড়েনা, বলে কিনা তার মত সুন্দর করে কথা নাকি এদেশে খুব কম লোকই বলতে পারে। অনেকে আবার এমনও বলে যে এই লোকের কথা যদি টিকিট কেটেও শুনতে হয় তাও নাকি তারা শুনবে! একটা আজগুবি কথা এই লোক প্রায়ই বলেন, “মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।” ৩৫ টাকা দিয়ে শুরু করা তার এক সংগঠন এখন দেশজুড়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে, ছেলেমেয়েদেরকে মাত্র ১০ টাকা দিয়ে প্রতি বছর বিশ্বের সেরা সেরা “আউট” বইগুলো পড়ার সুযোগ দিয়ে তিনি তাদের মাথা খাচ্ছেন, কিভাবে কিভাবে পুরস্কারও জুটিয়ে ফেলেছেন বেশ কয়েকটা। তার কাজকর্ম বলতে বেশিরভাগ সময় বাংলামটরের একটা ভবনে বসে পোলাপাইনের সাথে আড্ডা মারা আর কথা বলা, রসিকতার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট সত্য কথা বলতে উনার খ্যাতি আছে নাকি। আমাদের মহামান্য সাংসদদের মতে, টিআইবির আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন ঠাকুরঘরে গিয়ে সাংসদরা নাকি সারাক্ষন কলা খায়। তাদের আপত্তির জায়গাগুলো হচ্ছে,
১। তারা কলা খাননা, কলা খাননা এবং কলা খাননা। কলা খান কিনা তার প্রমান নিয়ে দেখা করা হোক
২।ঠাকুরঘরে যাবার অনুমতি তারা ১৬ কোটি মানুষের কাছ থেকে নিয়ে এসেছেন এবং তারা সেখানে পূজা অর্চনাই শুধু করেন, কলাটা পড়েই থাকে (পেটে নাকি প্লেটে তা নিয়ে বজ্জাত নিন্দুকেরা প্রশ্ন তুলতেই পারে… )
৩। তিনি শিক্ষক মানুষ দামী গাড়িতে চড়েন, কোত্থেকে কোত্থেকে টাকা-পয়সা খরচ করেন তা একটিবারও নাকি কানে কানেও বলেননি।
৪। তার বক্তব্যতে সুপ্ত প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের গন্ধ ঠিকই তাদের নাকে এসে ধাক্কা মেরেছে।
৫। গণতন্ত্র নামক বস্তুটি নাকি এতদিন সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, এই বাচাল বুড়ো বক্তব্য দেয়ামাত্রই বস্তুটি চোখ উল্টে দিয়ে চিৎপটাং হব হব করছে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাহলে এবার ক্ষমা তো চাইতেই হবে ১৬ কোটি মানুষের কাছে (এই খবর শোনামাত্রই কতিপয় বাচাল ষড়যন্ত্রকারীরা নিজেদেরকে ঐ ১৬ কোটি থেকে মাইনাস করে নিয়েছে আর বলছে তারা মাইনাস হয়ে যাবার পর নাকি ক্ষমা প্রার্থনার দাবীকারীদের তালিকায় ঐ কয়েকজন গণতন্ত্রদরদী সাংসদ ছাড়া আর কেউ থাকবেনা। )
বুড়ো অবশ্য এত সহজে দমবার পাত্র নয়, সে বলে কিনা
এর প্রতিক্রিয়ায় রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, “সংসদে আমার যেসব উদ্ধৃতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। টিআইবির অনুষ্ঠানে আমি ওই ধরণের কথা বলিনি।”
শনিবার এক আলোচনা সভায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্ণধারের বক্তব্য ধরে কয়েকজন সংসদ সদস্যের আলোচনার পর আবু সায়ীদকে সংসদে এসে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান আলী আশরাফ।
সংসদে এ নিয়ে আলোচনায় কয়েকজন সংসদ সদস্য অভিযোগ করেন, শনিবার টিআইবির আলোচনা সভায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ‘সাংসদ ও মন্ত্রীরা চোর-ডাকাতের মতো আচরণ করেন এবং শপথ ভঙ্গ করেন’ বলে মন্তব্য করেছেন বলে দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত হয়েছে।
ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, “সংসদ ক্ষমা চাইতে বললেই আমি ক্ষমা চাইবো নাকি। যে কথা আমি বলিনি, তার জন্য ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”
সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে ‘মর্যাদাপূর্ণ’ আচরণ আশা করে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, “বিষয়টি নিয়ে কথা বলার আগে সংশিষ্ট তথ্য যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন ছিল। সংসদ সদস্যরা জাতির রক্ষক, তাই তাদের কাছ থেকে ন্যুনতম মর্যাদা আশা করতে পারি আমরা।”
রোববার টিআইবির অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, “ওই অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম, একটা চোর চুরি করলে বা ডাকাত ডাকাতি করলে দুর্নীতি হবে না। কারণ দুর্নীতির সঙ্গে নীতি সম্পর্কিত। আর চোর বা ডাকাতের নীতিই নেই। তাই তাদের ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়টি আসেই না।”
আবু সায়ীদ বলেন, “ওই সময় আমি বলি, যদি কোনো মন্ত্রী এই বলে শপথ নেয় যে, তিনি শত্রু-মিত্র ভেদাভেদ না করে সবার প্রতি সুবিচার করবেন এবং সেটা যদি ভঙ্গ করেন তাহলে তা দুর্নীতি হবে।”
আবু সায়ীদ বলেন, “আমার এ বক্তব্যটি একটি পত্রিকায় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং এটাই সংসদ সদস্যরা পড়েছেন।”
সূত্রঃ bdnews24.com
অর্থাৎ তার মতে তিনি বলেনইনি যে সাংসদরা ঠাকুরঘরে বসে সারাদিন কলা খান। বলেছেন, যদি কেউ ঠাকুরঘরে গিয়ে পূজার্চনা না করে শুধু কলা খায় তাহলে তা অন্যায় হবে।
জাতীয় সংসদে আজ রোববার কয়েকজন সাংসদ তাঁর সমালোচনা করায় তাতে দারুণ মর্মাহত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
সাংসদরা দাবি করেছেন, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ টিআইবির অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তাদের অপমান করেছেন। তবে অলোকিত মানুষ গড়ার এই কারিগর আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেছেন, টিআইবির ওই অনুষ্ঠানের কোথাও তিনি মন্ত্রী-সাংসদদের কাউকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেননি। এমনকি সাংসদ শব্দটিই তিনি উচ্চারণ করেননি। প্রথম আলোর কাছে ওই বক্তব্যের রেকর্ড আছে।
ওই বক্তব্যের শুরুতে দুর্নীতি কি তা বোঝাতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘চোর যে চুরি করে, ডাকাত যে ডাকাতি করে সেটি কি দুর্নীতি? আমার ধারণা এটা দুর্নীতি নয়। কারণ দুর্নীতি শব্দের মধ্যে আরেকটি শব্দ লুকিয়ে আছে। শব্দটি হলো ‘নীতি’। চোর বা ডাকাতের কাজ ঠিক দুর্নীতি নয় কারণ তাদের কোন নীতিই নেই। সুতরাং দুর্নীতি সেই মানুষটি করে যার নীতি আছে। একটা উদাহরণ দেই। যেমন, যদি একজন মন্ত্রী এই বলে শপথ নেন যে তিনি শত্রু মিত্র ভেদাভেদ না করে সবার প্রতি সমান বিচার করবেন কিন্তু পরে তিনি সেটি না করেন সেটা হবে দুর্নীতি।’
সূত্রঃ প্রথম আলো
এ ব্যাপারে ডেপুটি স্পীকার শওকত আলী প্রথম ন্যায্য কথা বলেছেন। তার মত হচ্ছে,
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী বলেছেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে রোববার সংসদে এমন আলোচনা করা ঠিক হয়নি। আজ সোমবার দুপুরে সংসদ ভবনের মন্ত্রী হোস্টেলের আইপিডি সম্মেলন কেন্দ্রে এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘একটি পত্রিকা দেখে, বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে তাঁর মতো সম্মানিত ব্যক্তিকে নিয়ে বিরূপ সমালোচনা করা ঠিক হয়নি। একজন সংসদ সদস্য ভুল করতে পারেন। তাই বলে তিনজন ভুল করবেন, এটা তো ঠিক না।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার আগে ভালো করে যাচাই-বাছাই করা উচিত ছিল বলে শওকত আলী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি, একটি মাত্র পত্রিকায় তাঁর বক্তব্য ছাপা হয়েছে। উনি নিজেও বলেছেন, সংসদ সদস্যদের অবমাননা করে তিনি কোনো কথা বলেননি। সংসদ তো এত হালকা জায়গা নয় যে সবকিছুর প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে। তাও আবার সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে।’
শওকত আলীর মতে, এ ধরনের আলোচনা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি সংসদে থাকলে এ আলোচনা হতে দিতাম না। কারণ আবু সায়ীদ সম্মানিত ব্যক্তি। অন্তত আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি। তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার সময় জেনে কথা বলা উচিত।’
এ বিষয়ে সংসদে কিছু বলবেন কি না, জানতে চাইলে ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘যদি কেউ আবার কথা তোলে, তবে বলব। নিজে থেকে কথা তুলব না। স্পিকার চাইলে এ বিষয়ে কথা বলতে পারেন।’
রোববার সংসদ অধিবেশনে স্বতন্ত্র সদস্য ফজলুল আজিম পয়েন্ট অব অর্ডারে এ বিষয়ে কথা বলেন। পরে শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু অধ্যাপক সায়ীদের কঠোর সমালোচনা করেন। ওই সময় স্পিকারের আসনে থাকা সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আলী আশরাফ তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেন। আবু সায়ীদকে সংসদে তলব করতে সাংসদদের কাছ থেকে নোটিশ আহ্বান করেন।
সূত্রঃ প্রথম আলো
এছাড়াও টিয়াইবির পক্ষ থেকে এবং আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ সম্পর্কে দেওয়া আপত্তিকর সব বক্তব্য প্রত্যাহারের আহবান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)।
মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এ আহবান জানান।
এ সময় অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের যে কথা নিয়ে তোলপাড় তার ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়।
এরপর অধ্যাপক সায়ীদ বলেন, “সেদিন কি হয়েছে, তা তো আপনারা দেখেছেন। আমি সেদিন “সংসদ সদস্য“ শব্দটি উচ্চারণই করিনি। সেদিন কি বলেছি না বলেছি, তা আপনারা দেখেছেন।“
“এতো বড় কথা আমি বলতে পারি না“ দাবি করে অধ্যাপক সায়ীদ বলেন, “আমার যেটি সবচেয়ে খারাপ লেগেছে তা হলো- কেউ সত্যতা যাচাই করেননি। অনুসন্ধান করে দেখেননি, আমি কি বলেছি।“
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, “সাতটি পত্রিকায় কিভাবে একই রকম বিকৃত তথ্য এলো তা ভেবে অবাক হলাম। এটা আমার বোধগম্য নয়। দেখে মনে হয়, একজনই সব লিখেছেন।“
অধ্যাপক সায়ীদ বলেন, “সংসদ সদস্য ফজলুল হক আজিম বলেছেন, আমি দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলেছি। কিন্তু কি বললাম, তা বুঝতে পারছি না। সংসদ সদস্যের কাছ থেকে আরো দায়িত্বশীল কথা আশা করি।“
তিনি বলেন, “আমার ছাত্র শেখ সেলিম আমার সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন। আসলে ঢাকায় আমার গাড়িও নেই, বাড়িও নেই। দু’রুমের একটি বাসা আছে। আমি যদি ম্যাগসেসে পুরস্কার না পেতাম, তাহলে হয়তো রক্ত পরীক্ষারও টাকা থাকতো না।“
তিনি আরো বলেন, “ডেপুটি স্পিকারের মাধ্যমে তো ওই ঘটনার অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেছে। তিনি অনেক কিছুই সমাধান করে দিয়েছেন। এখন আর আমার কোনো রাগ বা ক্ষোভ নেই।“
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “মাননীয় স্পিকার ও গণমাধ্যম সূত্রে যে ক’জন সংসদ সদস্য ওই বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন তাদের অবগতির জন্য সোমবারই একটি সিডি ও ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠানো হয়েছে। সংসদনেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও কপি দেওয়া হয়েছে।“
তিনি বলেন, “অসম্পূর্ণ বা ভিত্তিহীন তথ্যের ওপর নির্ভর করে সংসদ সদস্যসহ যে কোনো পর্যায়ের কাউকে যেমন অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক না, তেমনি অন্য সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মতো গণমাধ্যমের কাজে অপরিপূর্ণতা থাকা স্বাভাবিক। আমাদের উচিৎ সে ব্যাপারে সজাগ থাকা।“
“ডেপুটি স্পিকারের উদ্যোগে যথার্থ সমাধানের পথ উন্মোচিত হয়েছে“ মন্তব্য করে তাকে ধন্যবাদ জানান ইফতেখারুজ্জামান।
সুলতানা কামাল বলেন, “এমন কথা তো বলাই হয়নি। কোনো কোনো গণমাধ্যমে বিকৃতভাবে কিছু কথা এসেছে।“
“সংবিধানের কোথায় আছে যে জনপ্রতিনিধিদের সমালোচনা করা যাবে না?“ প্রশ্ন তুলে সুলতানা কামাল আরো বলেন, “সংসদের যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন, তারা নিজেদের আচরণের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন।“
সূত্রঃ bdnews24.com
জবাব দিয়েছেন তিনি, উপযুক্ত কিনা তা বিবেচনা আপনারা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন। একটা কথা আছে, “যেদেশে গুণীর কদর হয়না সেদেশে গুণী জন্মায় না”। অবমাননা, গণতন্ত্রের উপর আঘাত, ক্ষমা প্রার্থনার দাবি ইত্যাদি বিষয়গুলো ইদানীং দেশে খুব বড় হয়ে উঠছে, একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসে, কয়েকটা কথায় মড়মড় করে ভেঙে পড়ছে গণতন্ত্র। সবখান থেকে ভেসে আসছে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের গন্ধ। অযৌক্তিক অভিযোগের আঙুল উঠছে সর্বজনস্বীকৃত গুণী ও শ্রদ্ধেয় কিছু মানুষের উপর যারা রাজনৈতিকভাবে কোন পদ দখন করে নেই বা ছিলেননা। দল-মত নির্বিশেষে কাজের গুণে প্রশংসা কুড়িয়েছেন ও শ্রদ্ধা-ভালবাসা পেয়েছেন অগণিত মানুষের। এখনো কোন প্রকার ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়নি সাংসদদের পক্ষ থেকে, যদিও তারা কথা ঠিকমত না বুঝেই “ঠাকুরঘর” শুনেই নড়েচড়ে বসে কুৎসিতভাবে এই গুণী মানুষটাকে নিয়ে কথা বলেছেন যাকে সুস্থ সমালোচনা বলা যায়না। স্যারকে কিছুটা কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। খবরটা শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম স্যার এসব গায়ে মাখবেননা, ভীতও হবেননা। স্পষ্টভাবে নিজেকে ব্যাখ্যা করবেন, ভুলটা ধরিয়ে দেবেন ওদের। লজ্জা পেলাম এতেই যে গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী কিছু মানুষকে কত সামান্যতে নাচিয়ে তোলা যায়। তারা যাচাই বাছাই না করেই একজন গুনী মানুষকে এভাবে কথা শুনিয়ে নিজেদের বুদ্ধিমত্তা ও যৌক্তিকতার চরম অপমান করে বসলেন। এদের মধ্যে স্যারের ছাত্রও ছিলেন। যিনি সামান্য সুযোগেই নিজের একসময়ের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের অপমান করে বসতে পারেন তার প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা রাখা বেশ কষ্টের ব্যাপার আশা করি এ ব্যাপারটা বুঝবেন যারা ভুলটা করেছেন।
কিছু সাংসদ একতা ভুলের উপর দাঁড়িয়ে অনেক কথা বলেছেন, আমি চাইনা প্রকাশ্য ভুলস্বীকার না করে ব্যাপারটা ধামাচাপা পড়ে থাক আর একটা কলঙ্ক হয়ে থাক। অনেকেই হতাশ হয়েছেন এ দুঃখজনক ঘটনায়, স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বিভিন্নভাবে, নিজের অক্ষমতা ব্যক্ত করেছেন, বলতে চেয়েছেন দেশের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়েছেন। আপনাদেরকে বলছি একবার স্যারের দিকে দেখুন, ঘটনাটা তার সাথে হয়েছে, তিনি কিন্তু এমন অভিমান করে দেশের উপর বা মানুষের উপর গাল ফুলিয়ে বসে থাকেননি। স্পষ্টভাবে নিজের অবস্থান বলেছেন। তাহলে স্যারের ছাত্র-ছাত্রী হয়ে আমরা বিশ্বাস হারাই কি করে। ব্যক্তিগতভাবে এই ঘটনায় আমি শুধুমাত্র হতাশ নই, হতাশার সাথে সাথে আছে দায়িত্ববোধ- এমন আর হতে দেয়া যাবেনা। অনেক সময় লাগবে হয়ত পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে আনতে যখন এদেশে আসলেই গুণীর কদর হবে, গুরুত্বপূর্ণ পদের অধিকারীরা কথাবার্তা বলার ব্যাপারে হবেন সচেতন অথবা সচেতন মানুষগুলোই যাবেন ঐ পদগুলোতে- কিন্তু সেইদিন তখনই আসবে যখন আমরা সবাই সেই দিন আনার চেষ্টায় অন্তপ্রাণ হব। অনেক বড় বড় কথা বললাম এই কারণে কারণ স্যার হতাশদেরকে যেভাবে পচান তার যন্ত্রনা আমাকেও সইতে হয়েছে একসময় 😉
স্যারের একটা কথা দিয়ে শেষ করছি,
“এই পৃথিবীর একটি কণাও তো নৈরাশ্য দিয়ে তৈরি নয়, তবে কেন নিরাশা? কেন নয় আশা?”
তাই যারা এই ঘটনার পর বা নানা কারণে সবসময় ভাবছেন এই দেশের কোন আশা ভরসা নাই তারা গালফোলানোটা কমিয়ে কিভাবে এটাকে আশা-ভরসার দেশ করা যায় সেই চেষ্টায় লাগেন :)) (সুযোগ পাইলে সবাই মুফতে উপদেশ দেয়, আমার কি দোষ? )
সায়ীদ স্যারের প্রতি অন্যায় আচরনের প্রতিবাদে ৭ জুন, সকাল ১১ টায়, প্রেস ক্লাবের সামনে আমরা দাঁড়াবো.
যারা যারা যেতে চান চলে যাবেন।
তরুণদের জাগ্রত করার ব্রত নিয়ে কাজ করতে গিয়ে হেমলক পান করতে হয়েছিলো সক্রেটিসকে। আর আধুনিকতার যুগে আবু সায়ীদ স্যারের মত প্রগতিশীল মানুষদের হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে সংসদের মত গুরুত্বপূর্ন একটি স্থানে। তার অপরাধ ও সম্ভবত একই, তরুণদের জ্ঞানের আলোতে বিকশিত করা।আমার দুর্ভাগ্য আমি তার সরাসরি ছাত্র নই কিন্তু তাকে শ্রদ্ধা করি হৃদয়ের গভীর তম স্থান থেকে।আমি ঢাকা থেকে অনেক দূরে থাকি তাই হয়ত যেতে পারবনা কিন্তু আকুন্ঠ সমর্থন থাকবে আপনাদের প্রতি যারা এই মহৎ উদ্দোগটুকু সাহসিকতার সাথে নিচ্ছেন। (Y)
অভিনন্দন।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে কোন্দল শুরু হবার পরই ভাবছিলাম এ নিয়ে লীনা নিশ্চয় লিখবে। এই লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ!
@অভিজিৎ, 🙂
আমি ঐ রাতেই লিখতে চাইছিলাম, কিন্তু আখেরি পরীক্ষার যন্ত্রনায় দেরি হয়ে গেল। তাই কালকে সুযোগ পেয়েই ছেড়ে দিলাম লেখাটা।
একের পর এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটে চলছে কিছুদিন পরপরই। যতবার চিন্তা করি পরিস্থিতি এর থেকে খারাপ হওয়া সম্ভবনা তখনই আরো খারাপ কোনো ঘটনা ঘটে। সায়ীদ স্যারের মতো মানুষকে যেই দেশে রাজনীতিবিদরা অপমান করে সেই দেশে কিভাবে আলোকিত মানুষ জন্ম নিবে?! এভাবে চলতে থাকলে কয়দিন পর পাকিস্তানের থেকে কোনো অংশে ভালো বলা যাবেনা আমাদের।
@রামগড়ুড়ের ছানা, আমিও হতবাক হয়ে গেছিলাম যে একটু সুযোগ পাওয়া মাত্রই কিভাবে স্যারকে ব্যাশিং শুরু করল কিছু মানুষ! ক্ষমা চাওয়াবার নয়, ভুল হলে ক্ষমা চাওয়ার রীতি চালু হলেই অবস্থার উন্নতি হবে।
সাংসদের এই কলঙ্কজনক ঘটনায় একটা গানের কলি মনে পড়ছে,
“মূর্খ মানব মন্ত্রী হইছে দেশ বানাইছে গোরস্থান”
এখন দেখি কথাটা সত্য। আমাদের দেশের এই মন্ত্রী-এমপিদের দিয়ে আমরা কি আশা করতে পারি? যারা দেশের একজন প্রথম শ্রেণীর বুদ্ধিজীবিকে সম্মান দেখিয়ে কথা বলতে জানেনা, তারা সাধারণ জনগণকে কি চোখে দেখে? আরেকটা বিষয়ে বিস্মিত হলাম, এখনও আমাদের মাননীয় সাংসদেরা এ বিষয়ে কোন রকম দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা চায়নি! “তারা ভুল শিকার করার মত সৎ সাহস বা বোধটুকু পর্যন্ত রাখেনা।
@জিল্লুর রোমান, স্যার দুঃখ করছিলেন যে কেউ একবার সরিও বললনা কারণ আমাদের দেশে ব্যাপারটা এখনো সেভাবে প্রচলিত হয়নি। এই দুঃখ ব্যক্তিগত নয় জাতিগত। কারণ ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়াটা খুব বেশি জরুরি এবং এটা প্রচলিত হলে বিশেষ করে ক্ষমতাধর মানুষদের ক্ষেত্রে, পরিস্থিতি অনেকটাই পালটে যাবে। ধন্যবাদ পড়ার জন্য
ডেপুটি স্পীকার শওকত আলী কিন্তু অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের বিষয় নিয়ে বেশ ইতিবাচক কথা বলেছেন যা স্যার তার কথায় উল্লেখ করেছেন এবং আপনি এ উদ্ধৃতি ব্যবহারও করেছেন। তবে ডেপুটি স্পীকার শওকত আলীর বক্তব্য আরও একটু আপনার লেখায় দিলে ভাল হত।
@গীতা দাস, খুব তাড়াহুড়ায় লেখা বলে এমন খাপছাড়া হয়েছে। 🙁