পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথাও প্রাণ আছে কিনা তা খুঁজে বের করা বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে প্রায় অসম্ভব। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি গবেষণা হচ্ছে শনির উপগ্রহ টাইটান নিয়ে। রহস্যময় এই উপগ্রহে প্রাণের সন্ধান করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে জ্যোতির্জীববিজ্ঞানীদের। কারণ খুব সাধারণ- প্রাণের এমন কোন নির্দেশিকা নেই যা পৃথিবী বা পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা দুরবিনে ধরা পড়বে। অন্যান্য তারার আশেপাশে গ্রহ আছে কিনা তা আমরা এখন বের করতে পারি, কিন্তু আমাদের দৌঁড় কেবল গ্রহের ভর, ব্যাসার্ধ্য, মাতৃতারা থেকে তার দূরত্ব এবং এমন কিছু অতি মৌলিক রাশি পরিমাপ পর্যন্তই। এমনকি গ্রহগুলোর আদৌ বায়ুমণ্ডল আছে কিনা এবং থাকলে তা কি দিয়ে গঠিত সেটা জানাও বর্তমানে অসম্ভব।

সে তুলনায় প্রাযুক্তিক প্রাণীর সন্ধান কিন্তু অনেক সোজা। অন্য কথায় বলা যায়, বহির্জাগতিক কোন সভ্যতা যদি আমাদের মত রেডিও বা মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ তৈরিতে সক্ষম হয় তাহলে তাকে অনেক সহজেই সনাক্ত করা সম্ভব। কারণ আমাদের তেমন তরঙ্গ চিহ্নিত করার উপায় যেমন জানা আছে তেমনি সেটা যে সৌরজগতের বাইরে বসবাসরত কোন বুদ্ধিমান প্রাণীর তৈরি সেটা বোঝার ক্ষমতাও আছে। আমাদের রেডিও তথা বেতার প্রযুক্তি ততোটাই উন্নত। কিন্তু এই অনুসন্ধানকে সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স (সেটি) না বলে সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল টেকনোলজি বলাই বেশি যুক্তিসঙ্গত। কারণ প্রাণী বুদ্ধিমান হলেই যে আমাদের মত প্রযুক্তি তৈরিতে আগ্রহী বা পারঙ্গম হবে তার নিশ্চয়তা কী?

তো এই বহির্জাগতিক প্রযুক্তি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সম্প্রতি আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম করলেন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা। প্রথমত, এই মাইলফলক স্থাপনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে একবিংশ শতকের বহির্গ্রহ সন্ধানীরা। সূর্য ব্যতীত অন্যান্য তারার চারপাশে যেসব গ্রহ আছে তাদেরকে বলা হয় বহির্জাগতিক গ্রহ বা সংক্ষেপে বহির্গ্রহ। ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির (ইসো) বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি পরীক্ষার মাধ্যমে দাবী করেছেন আকাশগঙ্গার প্রতিটি তারার চারপাশে গড়ে ১.৬ টি করে গ্রহ আছে। অর্থাৎ আমাদের ছায়াপথে যদি ১০০০ কোটি তারা থাকে তাহলে গ্রহ আছে ১৬০০ কোটি। যদি ধরে নেই ইসোর বিজ্ঞানীরা ঠিক এবং আসলেই এতোগুলো গ্রহ আছে, তাহলে একইসাথে আশা এবং হতাশা ভর করে বসে। আশার কথা হচ্ছে, বহির্গ্রহ গবেষণার ভবিষ্যৎ অতি উজ্জ্বল এবং বহির্জাগতিক প্রাণের সম্ভাবনাও প্রবল। আর নিরাশার কথা হচ্ছে এতগুলো গ্রহের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৭৭১টি (exoplanet.eu ওয়েবসাইটের আজকের তথ্য অনুসারে) আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে।

তবে মানুষ হিসেবে আমি আশা নিয়েই লিখব। আর আশাবাদ প্রকাশে সংকোচেরও কোন কারণ নেই। কারণ প্রতিটি বহির্গ্রহ আবিষ্কার গ্রহবিজ্ঞানকে অনেক সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি ‘সেটি’ গবেষকদের জন্য এনে দিচ্ছে সুনির্দিষ্ট বস্তু পর্যবেক্ষণের সুবর্ণ সুযোগ। আগে সেটির বেতার দুরবিনগুলো দিয়ে সমগ্র আকাশ অবিরত স্ক্যান করা হতো যাকে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক জরিপ বলা হয়। কিন্তু জরিপের কর্মদক্ষতা অবশ্যই কম। কারণ সংকেত যদি খুব ক্ষীণ হয় তাহলে অনেক সময় ধরে দুরবিন তাক করে না রাখলে তা ধরা পড়ে না, নয়েজের অথৈ সমুদ্রে হারিয়ে যায়। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট বস্তুর দিকে অনেকক্ষণ দুরবিন তাক করে রাখলে ধীরে ধীরে অনেক ক্ষীণ সংকেতও নিরূপকে (ডিটেক্টর) ধরা দিতে থাকে।

নিরূপকের এই প্রত্যানুকূল ব্যবহারের চেষ্টাই একালের সেটি গবেষক বা ইটি শিকারীরা করছেন। সহজ ভাষায় বললে, কোন তারার চারপাশে যে অঞ্চলটুকুতে কোন গ্রহ থাকলে তাতে তরল পানির অস্তিত্ব থাকতে পারে সেই অঞ্চলকে বলা হয় তারাটির প্রাণমণ্ডল। প্রাণমণ্ডলের ভেতর অবস্থিত গ্রহগুলোকেই (যাদের অন্য নাম বাসযোগ্য গ্রহ) তাই আধুনিক সেটি গবেষণার প্রধান লক্ষ্যবস্তু করা যায়। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত বাসযোগ্য গ্রহের সংখ্যা খুব কম, মাত্র ৪৬টি। অন্যদিকে বর্তমানে বহির্গ্রহ গবেষণায় সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী কেপলার নভোমানমন্দির ২৩০০ গ্রহপ্রার্থী সনাক্ত করেছে, অর্থাৎ ২৩০০ টি পর্যবেক্ষণের গ্রহ প্রমাণিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে ২০০৩ সালে টার্নবাল এবং টার্টার ১৭,১২৯টি তারার তালিকা প্রকাশ করেছিলেন যেখানে তাদের মতে জটিল বুদ্ধিমান প্রাণ বিকাশের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এই বিপুল সংখ্যক তারার জগৎকে আলাদা আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করা এখনও সম্ভব নয়। কারণ অধিকাংশ দুরবিনই নীতি নির্ধারকদের মতে অপেক্ষাকৃত ‘গুরুত্বপূর্ণ’ অন্যান্য পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত থাকে। তাই হালের সবচেয়ে আধুনিক বা স্টেট-অফ-দি-আর্ট দুরবিন ও ইন্টারফেরোমিটার দিয়ে বিজ্ঞানীরা আপাতত নিশ্চিত বাসযোগ্য গ্রগুলোতেই তাদের পর্যবেক্ষণ সীমাবদ্ধ রাখছেন।

এবার তাহলে মাইলফলকের কথায় আসা যাক: প্রথমবারের মত নিশ্চিতভাবে বাসযোগ্য হিসেবে প্রমাণিত কোন গ্রহের বেতার পর্যবেক্ষণের ফলাফল প্রকাশ করলেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাপত্রটি ইতিমধ্যেই অনলাইন আর্কাইভে আপলোড করে দিয়েছেন তারা যদিও ‘অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’ জার্নালে আনুষ্ঠানিকভাবে তা এখনও প্রকাশিত হয়নি। পেপারটিতে আছে ‘ভেরি লং বেইজলাইন ইন্টারফেরোমেট্রি’ বা ভিএলবিআই (VLBI) দিয়ে ‘গ্লিজে ৫৮১’ (Gliese 581) নামক তারা জগৎ পর্যবেক্ষণের বর্ণনা। ফলাফল খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়, বুদ্ধিমান প্রাণীর তৈরি কোন বেতার সংকেতের খোঁজ পাওয়া যায়নি। কিন্তু আমার মনে হয় না কেউ এত স্বল্প চেষ্টায় তেমন সংকেতের আশা করছিলেন, পরিসাংখ্যিক দৃষ্টিতে তেমনটি হওয়াও খুব অস্বাভাবিক। তবে ফলাফল যাই হোক, এই পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বেতার দুরবিনগুলোর একটি তথা ভিএলবিআই দিয়ে বহির্গ্রহ পর্যবেক্ষণের নিয়মকানুন ও কলাকৌশল অনেক পরিষ্কার হয়েছে যা ভবিষ্যৎ গবেষকদের অনেক কাজে লাগবে।

গ্লিজে ৫৮১ (এখন থেকে জি৫৮১ ডাকা হবে) আমাদের থেকে ২০ আলোকবর্ষ দূরে তুলা (Libra) তারামণ্ডলে অবস্থিত। এর ভর ও ব্যাসার্ধ্য যথাক্রমে সূর্যের ভর ও ব্যাসার্ধ্যের তিন ভাগের এক ভাগ এবং যথারীতি উজ্জ্বলতাও অনেক কম। এত ছোট ও ক্ষীণ হওয়ার কারণে একে লোহিত বামন বলা হয়। ২০০৭ সালে এর প্রাণমণ্ডলের একপ্রান্তে একটি গ্রহ আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। গ্রহটির নাম জি৫৮১ডি। পরে এর চারদিকে আরও গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান হিসাব মতে, জি৫৮১-র জগতে গ্রহ আছে অন্তত ৬টি যার মধ্যে জি৫৮১ডি তারা থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে চতুর্থ। ২০১০ সালে অবশ্য জি৫৮১জি নামক একটি সম্পূর্ণ বাসযোগ্য গ্রহ আবিষ্কারের দাবী করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে এটি তৃতীয় অর্থাৎ জি৫৮১ডি-এর তুলনায় একটু ভেতরের দিকে অবস্থিত। পৃথিবীর তুলনায় ৩ গুণ ভারী এই গ্রহটি যদি আসলেই থেকে থাকে তাহলে তাতে প্রাণ বিকাশের সম্ভাবনা অনেক। আর প্রাণ থাকলে বুদ্ধিমান প্রাণীর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। এসব বিবেচনা করেই অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত কার্টিন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এই গ্রহটি বেছে নিয়েছিলেন।

কোন কম্পাঙ্কে বুদ্ধিমান প্রাণীর নিশানা সন্ধান করা হবে তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মতৈক্য রয়েছে। ১ থেকে ১০ গিগাহার্জ কম্পাঙ্কের বেতার তরঙ্গগুলোকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়। তবে বুদ্ধিমান প্রাণীর কাছ থেকে দুই ধরণের সংকেত আশা করা যেতে পারে- উদ্দেশ্যমূলক এবং উদ্দেশ্যবিহীন। উদ্দেশ্যমূলক হবে যদি কোন বহির্জাগতিক প্রাণী নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের তৈরি তরঙ্গ মহাশূন্যে সম্প্রচার করে। আর উদ্দেশ্যবিহীন হবে যদি তাদের গ্রহে স্থানীয় সম্প্রচারের কাজে ব্যবহৃত বেতার ও মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ ফাঁকতালে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে। উদ্দেশ্যমূলক সংকেত তুলনামূলক সরু বেতার ব্যান্ডে সীমাবদ্ধ থাকবে, কারণ যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সরু ব্যান্ডের সংকেত ব্যবহারই শ্রেয়। বিজ্ঞানীদের অনুমান, উদ্দেশ্যমূলক সংকেতের ব্যান্ডের পুরুত্ব ১ হার্জ থেকে ১ কিলোহার্জের মধ্যে থাকার কথা। আর সংকেতটির প্রকৃত কম্পাঙ্ক উদ্দেশ্যমূলকের ক্ষেত্রে উচ্চ এবং উদ্দেশ্যবিহীনের ক্ষেত্রে নিম্ন হওয়ার কথা। সে হিসেবে উদ্দেশ্যবিহীন সংকেত পাওয়া যেতে পারে ১ গিগাহার্জের কাছাকাছি কম্পাঙ্কে। তবে ১ থেকে ১০ গিগাহার্জ বিশাল একটি ব্যান্ড, পুরোটা নিয়ে কাজ করা কষ্টসাধ্য। তাই এর মধ্যে কোন কম্পাঙ্কে সংকেত আদান-প্রদান সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ সেটাও ভেবে দেখা হয়েছে। ফলাফল হচ্ছে, ১৪২০ মেগাহার্জ এবং এর গুণাঙ্কগুলো। নিরপেক্ষ হাইড্রোজেন এই কম্পাঙ্কের তরঙ্গ নিঃসরণ করে এবং মহাবিশ্বের এমন কোন স্থান নেই যেখানে এটা পাওয়া যায় না। সবচেয়ে পরিচিত সংকেত বিধায় প্রথম কন্টাক্ট স্থাপনের ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার বেশ বুদ্ধিমানের কাজ।

কার্টিনের গবেষণায় প্রমাণিত হল, ভিএলবিআই এ ধরণের কম্পাঙ্ক এবং ব্যান্ডে বহির্জাগতিক সংকেত পর্যবেক্ষণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। ভিএলবিআই আসলে কোন নির্দিষ্ট দুরবিন নয় বরং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত বেতার দুরবিন দিয়ে একসাথে একটিমাত্র বস্তু পর্যবেক্ষণের উপায়। ধরা যাক দুটি বেতার এন্টেনা দিয়ে একটিমাত্র বস্তু পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে- এন্টেনা দুটির দূরত্বকে বলা হয় বেইজলাইন, এন্টেনাদ্বয় যত দূরে হবে বেইজলাইন তত বেশি হবে। নাম, ভেরি লং বেইজলাইন (ভিএলবি), থেকেই বোঝা যাচ্ছে এন্টেনাগুলো অনেক দূরে দূরে অবস্থিত, ক্ষেত্রবিশেষে হাজার হাজার কিলোমিটার বেইজলাইন অর্জন সম্ভব। আর বেইজলাইন যত বেশি দুরবিনের রিজল্যুশন তত বেশি। রিজল্যুশন হচ্ছে দুরবিন কত কাছাকাছি অবস্থিত বস্তুর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে তার পরিমাপ। ভিএলবিআই-এর রিজল্যুশন বিশ্বের সকল বেতার দুরবিনের মধ্যে সবচেয়ে ভাল।

জি৫৮১ এবং ভিএলবাই নির্বাচনের গুরুত্ব নিশ্চিত করে অবশেষে ২০০৭ সালে কাজ শুরু দেন বিজ্ঞানীরা। সে বছরের ১৯শে জুন ৮ ঘণ্টা ধরে তারকা জগৎটি পর্যবেক্ষণ করা হয়। তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্বাচন করা হয় ২০ সেন্টিমিটারের আশেপাশে। এখানে বলে রাখা ভাল ১৪২০ মেগাহার্জ কম্পাঙ্কের তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ২১ সেমি। ২০ এর আশেপাশের সকল তরঙ্গ পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করাই তাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। রিজল্যুশন অনেক বেশি হওয়ার কারণে ভিএলবিআই দিয়ে খুব সহজেই পৃথিবীর সংকেত এবং বহির্জাগতিক সংকেতের পার্থক্য করা যায়। গবেষকদের একজন মজা করে বিবিসিকে বলছিলেন, সংকেত ET নাকি AT&T থেকে আসছে তা বোঝার জন্য ভিএলবিআই-এর বিকল্প নেই। কারণ সেই রিজল্যুশন। রিজল্যুশন যত ভাল সে তত ছোট বস্তু সনাক্ত করতে পারে এবং তত ভালভাবে কাছাকাছি অবস্থিত দুটি বস্তুর পার্থক্য বুঝতে পারে। আকাশের এত ছোট লক্ষ্যবস্তু থেকে আসা সংকেত সে সনাক্ত করতে পারে যে তার সাথে খুব সহজেই পার্থিব সংকেতের পার্থক্য করা যায়।

যাহোক, পর্যবেক্ষণের ফলাফল হিসেবে পাওয়া গেছে অন্তিম শূন্যতা। আলোক দুরবিনের মাধ্যমে বস্তু দেখা হয় আর বেতার দুরবিনের মাধ্যমে বস্তুর শব্দ শোনা হয়। তেমন কোন শব্দ শুনতে পাননি হেইডেন রামপাদারাথ ও তার সহকর্মীরা। তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন ১২৩০ ও ১৫৪৪ মেগাহার্জের মধ্যে এবং তাদের সেনসিটিভিটি ছিল ১.৫৫ মিলিজানস্কি। অর্থাৎ ১.৫৫ মিলিজানস্কির চেয়ে বেশি তীব্রতাবিশিষ্ট সংকেত তাদের সনাক্ত করতে পারার কথা। উল্লেখ্য জানস্কি বেতার তরঙ্গের তীব্রতা পরিমাপের একটি একক। এর মান খুবই ক্ষুদ্র। ১-এর পর ২৬টি শূন্য বসালে যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় তা দিয়ে ১ জানস্কিকে গুণ করলে পাওয়া যাবে ১ ওয়াট/বর্গমিটার/হার্জ। এই ব্যাপ্তীর মধ্যে জি৫৮১ সম্পূর্ণ নিরব।

তবে এই নিরবতা দেখে মনোক্ষুণ্ণ হওয়ার কিছু নেই। এই পর্যবেক্ষণের মত আরও হাজার বা লক্ষখানেক পর্যবেক্ষণের পর হয়তো বহির্জাগতিক প্রযুক্তির সাক্ষাৎ মিলবে, হয়তো মিলবে না। হয়তো আমাদের একাকিত্ব ঘুচবে হয়তো ঘুচবে না। ফলাফল যাই হোক যুগে যুগে আমরা গেয়ে যাব নিরবতার জয়গান। কারণ সেই নিরবতার আরেক নাম রহস্য, আর মানুষের যদি উপাস্য বলে কিছু থেকে থাকে তবে তা সেই রহস্য।

তথ্যসূত্র
The First Very Long Baseline Interferometric SETI Experiment, arXiv
‘No signal’ from targeted ET hunt, BBC