( শুরুতে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, লেখাটা দেবার তাড়না অনেক আগে থেকেই অনূভব করেছিলাম। তবে বড্ড দেরী হয়ে গেলো পোষ্ট করতে আশা করি সুপ্রিয় পাঠককুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
এখন ও তখন সামাজিক রুপান্তরের রেখাচিত্র। লেখক গীতা দাস এই বইয়ের সবটুকু অধ্যায় জুড়েই সার্থক। কিছু কিছু স্থান ছাড়া।
তাঁর লেখনী শক্তি প্রশংশনীয় বটে। বইটা পড়ে মনে হয়নি যে এই বই তাঁর প্রথম বই। ভাষার দক্ষতা, পারিপার্শিকতার বর্ণনা সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন।
এবার আসি তাঁর লেখায়। একজাগায় তিনি লিখেছেন,

“ধর্মীয় অনুষ্ঠান ধর্ম নির্বিশেষে আয়ের নিয়ামক ছিল। উদাহরণ স্বরুপ আমাদের গ্রামের ইয়দ আলী ছিল আমাদের গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত গৃহস্থ। হিন্দুদের বারো মাসে তেরো পার্বণে খুব খুশি,
কারণ পূজা-পার্বণের দুধের চাহিদা বাড়ে। দুধ বেচে দামও বেশি পায়।“

সহজ ভাবে লিখে গেছেন এবং প্রকাশ করেছেন তখনকার সামাজিক প্রেক্ষাপট।
এখন দেখি এখনকার পটভূমিকায় কী লিখেছেন,
“ রাষ্ট্রীয় সংখ্যাগুরু গোষ্ঠির প্রতিনিধিত্বকারী একটি একক পরিবারও রাষ্ট্রীয় সংখ্যা লঘু লোকালয়ে শুধু বসতি স্থাপন করে ক্ষান্ত হচ্ছেন না, আধিপত্য বিস্তার, বেদখলদারির অপততপরতায় মেতে উঠেছে।“

বিবেকে যেন গজাল ঠোঁকার মত লিখে গিয়েছেন, সত্য কথা বেশ নির্ভিক ভাবেই। প্রতিদিন পত্র পত্রিকায় চোখ বুলালে এমন ঘটনা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গিয়েছে।

সবাই জানি যে মুসলিম পরিবার মানেই নামের শেষ অংশটুকু যেন মুসলমানের পরিচয় বহন করে।
ঠিক তদ্রুপ হিন্দু পরিবারেও তাই। এখানে তিনি পাঠক’কে সজাগ করে লিখেছেন নামেই পরিচয় নয় কর্মে বটে।
তাই তো তিনি লিখেছেন,

“স্বনামে উজ্জ্বল সব। যদিও নারীরা কারো বেগম, নেছা, কারো রানী বা সুলতানা।“
একটু বলিষ্ঠ কন্ঠেই পাঠক’কে বলেছেন,
“ আমার পাঠক’কে কি নিজেদের প্রজন্মের নামের বেলায় নিদেনপক্ষে ধর্ম নিরপেক্ষ নাম অনুরোধ করতে পারি?”

এখনকার প্রজন্মে সন্তানরা বইপড়া থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ দিয়েছেন,
‘ আমি যে কালে আরজ আলি মাতুব্বর পড়েছি এর চেয়ে দশ বছর আগে আমার সন্তান এই বই পড়ে ফেলেছে। এমন কি কিছু কিছু মূল্যবান বই তাদের সুপারিশে পড়া।“

যদিও তিনি এই কথা বলেছেন তথাপি একটা বিষয়ে উল্লেখ করতে পারতেন যে এই প্রজন্ম
অনেক ভাগ জুড়ে বই পড়া থেকে নিজকে অনেক দূরে রেখেছে। এমন কি সাধারণভাবে যা যা জানা দরকার যেমন কবি নজরুল বা রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তারা জানেনা এমন উদাহরণ অনেক আছে। লেখক
আর একটু সচেতন হলে দেখতে পারতেন সত্যটা কী। এখনকার প্রজন্মের অনেক অংশ জুড়ে দেখা যায় ইংরাজী মাধ্যমে পড়ার কারনে তাদের মা, বাবার অসচেতনতার কারনে বই পড়ার মত অভ্যাস গড়ে উঠতে পারেনি। কে কত ভালো ইংরাজী জানে তাতেই যেন স্বার্থকতা খুঁজে পান অনেক সচেতন পিতা, মাতাই। এ অনেক অংশে সামাজিক বৈষম্যের মতও কাজ করছে।

নারীদের অবস্থান সম্পর্কে তাঁর লেখনীতে পাই,
“ কোনো নাদুসনুদুস শিশু অসুস্থ হলে বা গায়ে গরমে ফোস্কা পড়লেও ভাবা হতো মুখ লেগেছে কোনো পোড়ামুখীর। পোড়ামুখ নয়, নিশ্চিত পোড়ামুখীর। কোনো নারীর। পুরুষের নয়। ইউরোপের ও ভারতের ডাইনি ধারনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় কি?
তবে পোড়ামুখীর মতো সব অমঙ্গলের সাথে নারীকে দায়ী করার রেওয়াজ আজকের অত্যাধুনিক যুগেও রয়েছে। যে জন্য ‘সিডর” নামের সাথে সাইক্লোনের আকৃতি নারীর চোখের মত।
অন্যটির নাম “নার্গিস” এবং অত্যাধুনিক দেশের সাইক্লোনের নামও “ক্যাটরিনা”। সবই নারীর নামে নাম। নারীরাই যত সর্বনাশের মূল- এ গতানুগতিক ধারনাই কি এর জন্য দায়ী? “

এই রকম অসংখ্য উদাহরণ পাওয়া যায় তাঁর ব্যাক্তিগত, সামাজিক নানান অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে।
সাবলীল বর্ণনার ছত্রে ছত্রে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তখন নারীর অবস্থান কেমন ছিল, এখনই বা কেমন আছে।
সব মিলিয়ে গীতা দাসের ‘তখন ও এখন” বইটা সময়ের পটভূমিকায় সফল এক সামাজিক রুপান্তরের রেখাচিত্র।