গত কয়েক দশকে সমগ্র বিশ্বের অজস্র দর্শক শ্রোতাদেরকে যে কয়জন সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিতে পেরেছেন, সবচেয়ে বেশি হাসাতে পেরেছেন নিঃসন্দেহে তাদের তালিকার প্রথম দিকে থাকবেন জর্জ কারলিন। কমেডি সার্কেলের বানানো বিশ্বের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানের তালিকায় কারলিনের অবস্থান দ্বিতীয় (প্রথম রিচার্ড প্রায়র)। aআমি নিজে একবার ফেসবুকে একটি জরিপ চালিয়েছিলাম, ‘আপনার প্রিয় কমেডিয়ান কে?’। সেখানেও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে বেশ বড় ব্যবধান রেখেই প্রথম স্থানে থাকেন তিনি। আজকের লেখাটি জর্জ কারলিন ও তার বিভিন্ন কাজের উপর ভিত্তি করেই লিখা হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত জীবনী
জর্জ ডেনিস প্যাট্রিক কারলিন একজন আইরিশ আমেরিকান। ১৯৩৭ সালের ১২ মে তার জন্ম। শৈশবেই তার পিতা পরিবার ছেড়ে চলে গেলে মায়ের একার তত্ত্বাবধানেই তিনি বেড়ে ওঠেন। পেশাদার ক্যারিয়ার শুরুর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীতে রাডার টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া তিনি ডিজে ও আরজে হিসেবেও কাজ করেছিলেন বলে জানা যায়। নিজের বিভিন্ন এ্যালবামের কারণে তিনি পাঁচবার গ্র্যামি জিতেছেন। ২০০১ সালের আমেরিকান কমেডি অ্যাওয়ার্ডসে তাকে ‘আজীবন সম্মাননা’ দেয়া হয়। নব্বইয়ের দশকে এসে তার স্টাইলে বড় ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তার উপস্থাপনা, অভিনয়ের ধরণ ইত্যাদিতে তিনি পরিবর্তন নিয়ে আসেন। এই দুই দশকেই তিনি সর্বাধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তার এই সময়কে ‘দ্য লেইট জর্জ কারলিন’ বলা হয়। ক্রিস রক, বিল মা’রদের মতো জনপ্রিয় কমেডিয়ানদেরও তিনি প্রভাবিত করেছেন।

তরুণ বয়সে কারলিন

হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন কারলিন। তিনবার (১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৯১) তার হার্ট অ্যাটাক হয়। এছাড়া অ্যালকোহল আসক্তিও তার শরীরের অনেক ক্ষতিসাধন করেছিল। যে মানুষটি সবাইকে হাসতে বাধ্য করতেন তিনিই ২০০৮ সালের ২২ জুন পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ভক্ত, দর্শক, শ্রোতাদের কাঁদিয়ে চিরবিদায় নেন। মৃত্যুর ৪ দিন আগে ‘জন এফ কেনেডি সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস’ কারলিনকে ২০০৮ সালের ‘মার্ক টোয়েন প্রাইজ ফর আমেরিকান হিউমার’ এর বিজেতা ঘোষণা করে। মরণোত্তর হিসেবে তিনিই প্রথম এ পুরষ্কার লাভ করেন।

তার উক্তিগুলো
জর্জ কারলিনের বেশিরভাগ উক্তিগুলোতে দেখা যায়, কিভাবে তিনি হাস্যরসের মাধ্যমে কিছু অপ্রিয় সত্য প্রকাশ করেছেন। তিনি আপাদমস্তক প্রথাবিরোধী ছিলেন। সামাজিক, আর্থ-সামাজিক, মনোবৈজ্ঞানিক বিভিন্ন অনিয়ম যা নিয়মতান্ত্রিক বলেই সবার দ্বারা বিবেচিত হয়, স্বভাবসুলভ ব্যাঙ্গাত্মক ভাষায় সেগুলোকে তিনি উন্মোচন করেছেন। অনেক বলে শেষ বয়সে তিনি বৈরাগ্যবাদী হয়ে গিয়েছিলেন, তবে তা অস্বীকার করে বৈরাগ্যবাদের অসারতা ও তা হতে নিজের দূরত্ব স্পষ্টভাবেই তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন।

1) বেশিরভাগ মানুষ ঠিক ততটুকু পরিমাণ কাজ করে যাতে তাকে ছাঁটাই করা না হয়, আর ঠিক ততটুকু মাইনে পায় যাতে সে চাকরি ছেড়ে না দেয়।

2) মৃত্যু হল দীর্ঘ দিন ধরে স্বল্প পরিমাণ থুথু গিলতে থাকার ফল।

3) শান্তির জন্য লড়াই করা মানে কুমারিত্ব (virginity) রক্ষার জন্য সেক্স করা।

4) Frisbeetarianism হল এমন একটি বিশ্বাস যে, মৃত্যুর পর আপনার আত্মা শরীর ছেড়ে উপরে চলে যাবে, এবং তা ছাদে আটকে থাকবে।

5) কখনো কি আপনি লক্ষ্য করেছেন, যদি কেউ আপনার চেয়ে ধীরে গাড়ি চালায় তবে সে নির্বোধ; আর কেউ যদি আপনার চেয়ে দ্রুত গাড়ি চালায় তাহলে সে আস্ত একটা পাগল।

6) ইলেক্ট্রিসিটি হল বজ্রপাতের তুলনামূলক সংগঠিত ও নিয়মিত রূপ মাত্র।

7) পোপের সমপরিমাণ ক্ষমতা আমারও আছে। সমস্যা হল সেই পরিমাণ মানুষ বিষয়টা শুধু বিশ্বাস করে না।

8 ) আমি ভাবতাম, অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় মানুষ এই বুড়ো বয়সে গিয়েই কেন ধর্মগ্রন্থগুলো বেশি করে পড়া শুরু করে। পরে বুঝলাম, তারা আসলে তাদের ফাইনাল পরীক্ষার জন্য ফাইনাল প্রস্তুতি নিচ্ছে।

9) একবার একটি বইয়ের দোকানে গিয়ে বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “Self-help অংশটি কোন দিকে?” বিক্রেতা আমাকে জানালেন, তিনি যদি তা আমাকে বলে দেন তবে এর উদ্দেশ্যটি এখানেই মাঠে মারা যাবে।

10) এমন কোন দলের সদস্য আমি কখনোই হতে চাই না, যার প্রতীকে দেখা যায় একটা লোককে দুইটা কাঠের টুকরার মধ্যে পেরেক দিয়ে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে।

11) আমি চার্চ ও রাষ্ট্রকে পৃথক করে রাখার পক্ষে। এই প্রতিষ্ঠান দুটি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে ফ্যাসাদ বাধিয়ে রেখেছে। তাহলে এই দুটো যদি এক হয়, সকলের মৃত্যু সুনিশ্চিত।

12) আমরা একবার যদি জানতে পারতাম যে, সবকিছুর দায়িত্বে আসলে কে আছে, তাহলে আমরা তাকে ওখানেই মেরেই ফেলতাম।

13) যদি তুমি তাদের হারাতে না পারো, তাহলে তারা যাতে হেরে যায় সেই ব্যবস্থা করে রাখো।

14) (শুভকামনা অর্থে) তোমার বাসা খুঁজে পাওয়ার আগেই অশুভ শক্তিরা যেন সব পথ হারিয়ে ফেলে।

15) জনশূণ্য কোনো এলাকা দেখতে বাস্তবে কেমন লাগে তা আসলে কেউই কখনো জানতে পারবে না।

16) কিছু মানুষ এমন কিছু জিনিস দেখে যা আসলেই আছে এবং প্রশ্ন করে ‘কেন?’। কিছু মানুষ এমন কিছু জিনিসের স্বপ্ন দেখে যা কখনোই ছিল না এবং প্রশ্ন করে, ‘কেন নয়?’। আর কিছু মানুষকে কাজ করতে যেতে হয়, এবং এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন সময় তাদের থাকে না।

17) স্যান্টা ক্লজের সবসময় এতো ফুর্তিতে থাকার কারণ, সে জানে দুষ্টু মেয়েদের সব কে কোথায় আছে।

18) নিজের সাথে আমার কথা বলার কারণ হল, আমিই একমাত্র ব্যক্তি যারা জবাব আমি গ্রহণ করি।

19) বর্তমান বলে কিছু নেই। আছে শুধু নিকট অতীত আর অদূর ভবিষ্যৎ।

20) আজ রাতের আবহাওয়ার পূর্বাভাসঃ অন্ধকার।

21) টমাস আলভা এডিসন যখন বৈদ্যুতিক বাতি তৈরির কাজে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতেন, তখন তাকে নিশ্চয়ই গ্যাসের কুপি বা মোমবাতি জ্বালিয়ে কাজ করতে হতো। আমি নিশ্চিত এই বিষয়টাই তার কাজটিকে খুব বেশি জরুরি করে তুলেছিল।

22) যখন তুমি ব্রেক চেপে ধরো, তোমার জীবন তখন তোমার পায়ের তলার হাতের মুঠোয় থাকে।

23) ডাক্তারেরা নিজেদের কাজকে যখন ‘প্র্যাকটিস’ বলে, তখন সেটা কি আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় না।

24) যখন তুমি কোন বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীকে কোন বিলুপ্তপ্রায় গাছ খেতে দেখো, তখন তুমি করো?

25) কোনো কচ্ছপের যদি খোলস না থাকে তবে তাকে কি ধরা হবে? বাস্তুহারা নাকি উলঙ্গ?

26) একটি বড় গোষ্ঠীতে একত্রিত হয়ে থাকা নির্বোধদের শক্তিকে ভুলেও অগ্রাহ্য করো না।

27) পরিপক্বতার জন্য একটা চড়া মূল্য দিতে হয়, তা হল বয়স।

28) তোমার বয়স যত বাড়বে, আরো ভালভাবে তুমি অনুধাবন করতে পারবে যে, কতটা ভাল তুমি এর আগে ছিলে।

29) একজন লোককে একটা মাছ খেতে দাও, সে সারা দিন ধরে সেটা খাবে। তাকে যদি শেখাও কি করে মাছ ধরতে হয়, তাহলে নৌকায় বসে বসে বিয়ার খেয়ে সারাটা দিন সে পার করে দিবে।

30) সিঙ্ক্রোনাইজড সুইমিংয়ে যদি একজন খেলোয়াড় ডুবে যায়, বাকিদেরও কি তবে ডুবে যেতে হবে?

31) ব্যর্থ হওয়ার চেষ্টা করে যদি তুমি সফল হয়ে যাও, তবে তুমি আসলে কোনটা হয়েছো?

32) যারা নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরে একটা বন্দুক রাখেন তাদের অনেকেই আছেন যারা গাড়িতে উঠে সিটবেল্ট বাঁধতে অনীহা প্রকাশ করেন।

33) প্রায় সময়ই কোন অগ্নি নির্বাপক কর্মীকে বেশ উদ্যমের সাথেই ড্রেনের পাইপে আটকে থাকা কোন রেকুনকে (এক প্রজাতির প্রাণী) উদ্ধার করতে দেখা যায়। সপ্তাহান্তে ওই একই কর্মীকে দেখা যায় স্রেফ মজা লুটার জন্য কয়েকটা রেকুনকে হত্যা করতে।

34) NAFTA নিয়ে তারা অনেক বিতর্ক চালিয়েছে। আমাদের সাইন করা উচিত কি উচিত নয় এই নিয়ে। যেটাই হোক না কেন, সাধারণ মানুষের বারোটা ঠিকই বাজবে। ব্যবসা আসলে ব্যবসায়ীদের জন্যই প্রযোজ্য। কোন ব্যবসায়ীকে যখন দেখবেন ‘কোন নীতি আমেরিকার জন্য উপযুক্ত’ নিয়ে চেঁচামেচি করতে, আপনাদের নাক গলানোর দরকার নাই।

35) প্রেসিডেন্ট বুশ একবার শান্তির জন্য প্রার্থনার উদ্দেশ্যে একটি জাতীয় দিবস ঘোষণা করেছিলেন। আর এটা হয়েছিল ঠান্ডা মাথায় যুদ্ধ শুরু করবার পর।

36) সততা হয়তো সর্বোশ্রেষ্ঠ পন্থা। তবে এটাও মনে রাখা দরকার যে অসততাই কিন্তু দ্বিতীয় সর্বোশ্রেষ্ঠ পন্থা।

37) এটা সকল ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের ঊর্ধ্বে যে, এমন একটি স্থানকে পবিত্র ভূমি বলা হয় যেখানে ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম ঘৃণার প্রতিযোগিতা চলে আসছে।

38) আধ্যাত্মিকতাঃ একজন ব্যর্থ মানুষের শেষ আশ্রয়। তুমি আসলে যা, তা হতে তোমাকে সরিয়ে রাখার আরেকটি প্রচলিত উপায়।

39) অন্তঃসত্ত্বা নারীদের এ্যালকোহল পানে নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে এ্যালকোহলিকদের সেক্স না করার নির্দেশ দেয়া উচিত।

40) আমার জানা মতে, মানুষেরা এমন কোন বিশ্বাস আজও খুঁজে পায় নি যা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য হবার যোগ্যতা রাখে।

41) আপনারা কি মনে করেন তা জানি না, তবে চার্চের মানুষগুলোর প্রতি আমার বিতৃষ্ণা এসে গেছে। জানেন তাদের কি করা উচিত? তাদেরকেও ট্যাক্সের আওতায় আনা উচিত। রাজনীতি, সরকার, জননীতি নিয়ে এই পবিত্র মানুষদের যদি এতই উৎকন্ঠা থেকে থাকে তাহলে আর সবার মত তাদেরকেও ট্যাক্সের মূল্য পরিশোধ করতে বলা হোক। জাতীয় ঋণের পুরোটাই ক্যাথলিক চার্চ মিটিয়ে ফেলতে পারত, তাদের রিয়েল এস্টেটের ট্যাক্সটুকু তারা যদি পরিশোধ করত।

42) আমি এটা বুঝতে পারি না, দেহ ব্যবসা অবৈধ হয় কি ভাবে? ব্যবসা করাও বৈধ, সেক্স করাও বৈধ। তাহলে সেক্সের ব্যবসা করা কেন বৈধ হয় না?

43) আমেরিকাঃ যেখানে আইরিশ, ইংরেজ, জার্মান, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান, পোলিশ ও ইতালিয়ানরা এক জোট বাঁধে ইন্ডিয়ানদের (রেড ইন্ডিয়ান আদিবাসীদের) হত্যা করতে, নিগ্রোদের বে-আইনিভাবে শাস্তি দিতে আর ইহুদিদের পিটিয়ে তক্তা বানাতে।

44) ইতিহাস আসলে কখনো সংঘটিত হয় না। ক্ষমতাসীনদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সতর্কতার সাথে পরিকল্পিত ও রচিত হয়।

45) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারে। আর সেটাই হচ্ছে সমস্যা।

46) একবার এক মহিলা আমাকে জানালো যে তার ঈস্টজনিত ইনফেকশন হয়েছে। তাই আমি তাকে বললাম আমাকে কিছু রুটি বানিয়ে দিতে।

47) টিভি প্রোগ্রামগুলো এমন কোন সতর্কবার্তা কেন দেয় না, “সাবধান, আপনাকে এখন কিছু অখাদ্য কুখাদ্য গিলতে হবে”?

48) গড়পড়তা আমেরিকানদের আইকিউ এবং জীবনের প্রতি প্রত্যাশা সম্প্রতি একটি আরেকটিকে বিপরীতমুখী দিকে ছাড়িয়ে গেছে।

49) এই ‘রয়েল ফ্যামিলি’র বুলশিট নিয়ে আপনিও নিশ্চয়ই ক্লান্ত হয়ে গেছেন। ইংরেজদের নিয়ে কে আসলে মাথা ঘামায় বলেন? অসভ্য, খুনে, পশ্চাদ্বর্তী ইংরেজ জাতিরা তেমন কিছু সৃষ্টিও করতে পারে না, আবার শেক্সপিয়ারের আড়ালে থেকে খুব সংস্কৃতির বড়াই করে। এদের ব্যবহারে বিভ্রান্ত হওয়ার কোন কারণ নাই। এদের ফুটবল ফ্যানদের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন ব্রিটিশদের চরিত্র আসলে কি রকম। আমি একজন আইরিশ, এবং একজন আমেরিকান। দুই দেশ থেকেই এই বজ্জাতগুলোকে আমাদের তাড়াতে হবে।

50) সমুদ্রতীরবর্তী স্থানে বাস করার সবচেয়ে ভাল দিক হল, মূর্খদের আপনি শুধু আপনার তিনদিকে দেখতে পাবেন।

51) নকল টাকা থেকে যদি আপনি মুক্তি পেতে চান, তাহলে কোন উপাসনালয়ের দানবাক্সে তা রেখে আসুন।

52) এই খ্রিস্টান খেলোয়াড়রা, জেতার পর যারা যীশুকে ধন্যবাদ জানায় আর হারার পর ভুলেও তার নাম মুখে আনে না। এদের মুখ কি আমরা বন্ধ করাতে পারি না? আপনি কখনোই তাদের বলতে দেখবেন না, ‘যীশুআমার হাত থেকে বল ফেলে দিয়েছে’ বা ‘দৌড়ানোর সময় ঈশ্বর আমার পা পিছনে থেকে টেনে ধরেছিল’।

53) পরের বাক্যটি সত্য। … পূর্বের বাক্যটি মিথ্যা।

54) একজন গড়পড়তা মানুষ কতটা স্টুপিড হয় একবার ভেবে দেখুন। তারপর অনুধাবন করুন অর্ধেক মানুষ তাদের চাইতেও বেশি স্টুপিড।

55) সাঁতার আসলে কোনো খেলা নয়। সাঁতার হল নিজেকে ডুবতে না দেয়ার প্রচেষ্টা।

56) বাড়ি হল তোমার জিনিসপত্র রাখার জায়গা। আর তুমি বাইরে যাও আরো জিনিস নিয়ে আসার জন্য।

57) আমি একসময় একজন আইরিশ ক্যাথলিক ছিলাম। আর এখন আমি একজন আমেরিকান। যখন তুমি জানতে পারবে, তুমিও বড় হয়ে উঠবে (you know, you grow)।

58) সিনসিনাটি রেডস যদি সত্যিই প্রথম মেজর লীগ বাস্কেটবল দল হয়ে থাকে, তবে তারা খেলেছিল কার সাথে?

59) আমি একবার চেঞ্জ মেশিনে এক ডলার রেখেছিলাম। কিছুই চেঞ্জ হয় নি।

60) আমি মনে করি প্রতিটি কমেডিয়ানেরই এটা দায়িত্ব যে সীমারেখাটা কোথায় টানা হয়েছে তা খুঁজে বের করা। এবং ভেবেচিন্তে ইচ্ছাকৃতভাবে তা ছাড়িয়ে যাওয়া।

61) ক্যাথলিকঃ জ্ঞান হওয়ার মত বয়স হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি যা ছিলাম।

62) যাদের সাথে আমার দেখা হয় তাদের প্রত্যেককেই আমি ভালবাসি এবং সম্মান করি। তবে যে দল বা গোষ্ঠী থেকে সে এসেছে সেটাকে আমি চরমভাবে ঘৃণা করি।

63) বৃদ্ধ হওয়ার অনেক ভাল একটি দিক হলো, ‘আমি খুব ক্লান্ত’ এই কারণ দেখিয়ে যেকোনো সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আপনি রেহাই পেতে পারেন।

64) যীশুর মতে তার জন্মসালটি কত সাল ছিল?

65) জর্জ ওয়াশিংটনের ভাই লরেন্স ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাচা।

66) কখনো ভেবেছেন রিপাবলিকানরা তাদের কমিউনিটিতে সবাইকে স্বেচ্ছাসেবক হতে এত উদ্বুদ্ধ কেন করে? কারণ স্বেচ্ছাসেবকরা টাকার বিনিময়ে কাজ করে না। রিপাবলিকানরা বিনামূল্যে লোকেদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়ার চেষ্টা অনেক দিন ধরেই করে আসছে।

67) জরায়ু থেকে বেড়িয়ে আসার পর সামরিক বয়স না হওয়া পর্যন্ত রক্ষণশীলেরা তোমার ধার ধারবে না। তারপর দেখবে, ওরা আসলে তোমাকেই খুঁজছে। রক্ষণশীলেরা জীবন্ত শিশু চায় যাতে তারা তাকে একজন মৃত সৈনিকে রূপান্তরিত করতে পারে।

68) অচিরেই ভবিষ্যৎ অতীতের অংশে পরিণত হবে।

69) আদালত ভবনে আমরা ‘টেন কমান্ডমেন্ট’ মেনে চলতে পারি না। এর আসল কারণ হল, যে ভবনে আইনজীবি, বিচারপতি এবং রাজনীতিবিদরা গিজ গিজ করে সেখানে আপনি গিয়ে বলতে পারেন না, ‘তোমরা চুরি করবে না’, ‘তোমরা ব্যাভিচার করবে না’, ‘তোমরা মিথ্যাচার করবে না’। এতে করে তাদের কাজের জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হবে।

70) ধর্ম থেকে যে একটি মাত্র ভাল জিনিস এসেছে তা হল সংগীত।

71) কখনো কি লক্ষ্য করেছেন যে, মক্কেলদের থেকে উকিলেরা সবসময় বেশি হাসেন।

72) ভেবে দেখুন, ঠিক যে মূহুর্তে আপনি এই লেখাটি পড়ছেন, একই সময় বিশ্বের কোন জায়গায় কেউ না কেউ নিজেকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

73) তারা এটাকে আমেরিকান ড্রিম বলে কারণ, এটা বিশ্বাস করতে হলে আপনাকে ঘুমিয়ে থাকতে হবে।

74) পুঁজিবাদ একটা নাজুক ভারসাম্য আনার চেষ্টা চালায়। উদ্দেশ্যটা এই যে, মানুষের কাছে যেন ন্যূনতম সেই পরিমান জিনিস থাকে যাতে সে সহিংস হয়ে অন্যের জিনিস নেয়ার চেষ্টা না চালায়।

75) উচ্চতা দেখে আমি ভয় পাই না। তবে উঁচু কোথাও থেকে পড়ে যাওয়ার ভয় অবশ্য আমার আছে।

76) যত পরিশ্রম সব শুঁয়োপোকারাই করে, আর সব কৃতিত্ব যায় প্রজাপতিদের কাছে। এটা ঠিক না।

77) নিজে বাঁচো এবং অন্যকেও বাঁচতে দাও; আমি এই কথাই বলি। আর যে এই কথা বুঝতে পারে না, তাকে গুলি করে মেরে ফেলা উচিত।

জর্জ কারলিনের এমন অনেক উক্তি আছে যেগুলোর মজা শুধু ইংরেজি ভাষাতেই উপলব্ধি করা যায়। এমন কয়েকটি উক্তিও এবার আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

1) Atheism is a non-prophet organization.
2) Have you ever noticed that their stuff is shit and your shit is stuff?
3) You can prick your finger — just don’t finger your prick.
4) Don’t sweat for petty things, don’t pet the sweaty things.

কারলিনের মধ্যে কখনো কোন রকম জাতীয়তাবাদ দেখা যায় নি। আমেরিকার আদিবাসীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
তাদের “Native Americans” বলা নিয়ে যখন কথা উঠছে সেক্ষেত্রে আমার কি এটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে আসলে এটা কত অবমাননাকর। আমরা তাদের ভূমি ছিনিয়ে নিয়েছি, তাদের প্রায় ২০ মিলিয়ন বা তারও বেশি* মানুষকে হত্যা করেছি, পাঁচশোর মত আলাদা আলাদা সংস্কৃতিকে ধ্বংস করেছি, যারা যারা বেঁচে ছিল তাদের পাঠিয়ে দিয়েছি বসবাসের জন্য জঘন্যতম স্থানগুলোতে। আর এখন তাদেরকে আমাদের নামে নামকরণ করতে যাচ্ছি। বিষয়টা ভয়াবহ। (* ১৪৯২ সালের পূর্বে মধ্য আমেরিকায় ২৫ মিলিয়ন আদিবাসী মানুষের বসবাস ছিল। ১৫৭৯ সালে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ২ মিলিয়নে)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশনে সংলাপের ওপর বসানো সেন্সরশিপের ধরনেরও বিদ্রুপ করেছেন তিনি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে।
“ইংরেজি ভাষায় প্রায় ৪ লক্ষ শব্দ রয়েছে। আর এদের মধ্যে ৭টি এমন শব্দ আছে যা আপনি টিভিতে বলতে পারবেন না। অনুপাতটা দেখুন একবার, ৩৯৯৯৯৩ : ৭। আর শব্দগুলো নিশ্চয়ই খু-উ-উ-উ-ব খারাপ। খুবই অবমাননাকর যাতে এত বড় একটা অংশ থেকেও আলাদা করে রাখতে হয়েছে। …. আচ্ছা, আপনি তো এই ৭টা শব্দ জানেন, জানেন না? টিভিতে যে সাতটা শব্দ আপনি বলতে পারেন না সেগুলো হলো Shit, Piss, Fuck, Cunt, Cocksucker, Motherfucker and Tits.”

কারলিনের এতগুলো উক্তি আপনাদের সাথে শেয়ার করার পর একটি গুরুত্বপূর্ণ আপনাদের না জানিয়ে রাখাটা অন্যায় হয়ে যায়। জর্জ কারলিন নিজেই বলেছিলেন যে ইন্টারনেটে তাকে উদ্ধৃত করে যত কথা লেখা হয়েছে তার একটা বড় অংশই তিনি আসলে কখনো বলেন নি।

জর্জ কারলিনের জনপ্রিয় কতগুলো ভিডিও রখন আপনাদেরকে দেখাচ্ছি।
“Religion is Bullshit” জর্জ কারলিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও। বেশিরভাগ পাঠকই এই ভিডিওটির দেখে থাকার কথা। না দেখলে অবশ্যই দেখবেন।
http://www.youtube.com/watch?v=MeSSwKffj9o
ঈশ্বরের ‘টেন কমান্ডমেন্টস’কে ব্যঙ্গ করেছেন এই ভিডিওটিতে। পবিত্র দশ নিষেধাজ্ঞার অযৌক্তিকতা ও অসারতা এখানে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করেছেন।
http://www.youtube.com/watch?v=p-RGN21TSGk
জনপ্রিয় টিভি শো ‘ম্যাড টিভি’র এক পর্বেও বিশেষ অতিথি হিসেবে এসে দর্শকদের হাসিয়েছিলেন তিনি। ‘Touched by an Angel’ কে প্যারোডি করে এই পর্বের নাম রাখা হয়েছিল ‘Touched by an Atheist’।

মার্কিন সাধারণ মানুষের ফেরেশতা বা দেবদূতে বিশ্বাস করাকে ব্যঙ্গ করেছেন এই ভিডিওতে।

সূত্রঃ
www.georgecarlin.com/

http://en.wikipedia.org/wiki/George_Carlin

www.imdb.com/name/nm0137506

www.brainyquote.com/quotes/authors/g/george_carlin.html

http://blogzarro.com/2007/05/100-greatest-george-carlin-quotes/

http://en.wikiquote.org/wiki/George_Carlin

www.goodreads.com/author/quotes/22782.George_Carlin