এই গল্পের জন্ম হয়েছিল কালো রঙের মানুষদের মাঝে। এখন থেকে অনেক অনেক বছর আগে। এরা ছিল দিনমজুর। গ্যাসোলিন যুগের আগে রেল রোড বসানোর কাজ করতো তারা। সেখানে তারা লোহার পাত বহন করতো, পাহাড় কাটতো আর খচ্চরের পিঠে করে মোট বয়ে নিয়ে যেতো। অতি সাধারণ, অবহেলিত এবং অনুল্লেখ ছিল তাদের জীবন। গর্ব, অহংকার করার মত কিছু ছিল না তাদের। তবে, এ কথাটা ঠিক নয়। একটা জিনিস নিয়ে তারা ঠিকই গল্প করতো। বুক ফুলিয়ে গর্বের সাথে তারা বলতো যে, জন হেনরির মত শক্তিশালী মানুষ এই পৃথিবীতে আর নেই।
জন হেনরি ছিল তাদেরই মত একজন। তাদের মতই রেলরোডের টানেলে স্টিল বইতো। নয় পাউন্ড ওজনের একটা মুগুর দিয়ে হ্যান্ড ড্রিলকে পেটাতো ক্রমাগত। অসম্ভব কঠিন একটা কাজ। কিন্তু, এই কঠিন কাজটাও সে করতো হাসি মুখে, নেচে নেচে, গলা ছেড়ে গান গেয়ে গেয়ে।
একদিন নির্মাণকাজের সাথে সম্পৃক্ত প্রকৌশলী নির্মাণ এলাকায় নিয়ে আসে একটি স্টীম ড্রিল মেশিন। শ্রমিকরা ক্রুদ্ধ হয় প্রকৌশলীর এই কাজে। জন হেনরি বুক চিতিয়ে জানান দেয় যে, কোনও মানুষ বা মেশিনের পক্ষে তাঁকে পরাস্ত করা সম্ভব নয়।
হেনরির এই এক ঘোষণাতেই মেশিন এবং মানুষের বাজির লড়াই শুরু হয়। টানেলের গভীর থেকে গভীরে যাবার লড়াই। ডানপাশে জন হেনরি, বাঁ পাশে মেশিন। সূর্যাস্তের আগেই চৌদ্দ ফুট গভীরে চলে যান জন হেনরি। মেশিন তখনো পড়ে রয়েছ নয় ফুটে। শক্তি পরীক্ষার বাজিতে জেতার পরেই ক্লান্ত অবসন্ন হেনরি লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। আর উঠেন না।
হেনরিকে নিয়ে গাথা হয়েছে অসংখ্য গান। এই সমস্ত গানগুলো ব্যালাড হিসাবে পরিচিত। প্রায় দুশোটি রেকর্ডেড ব্যালাড খুঁজে পাওয়া যায় জন হেনরিকে নিয়ে। আফ্রিকান আমেরিকানদের ব্লুজ হিসাবে খ্যাত গানের মধ্যে এটাই প্রথম। প্রথম রেকর্ডেড কান্ট্রি সং-ও এই জন হেনরি ব্যালাড। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের লোকসাহিত্য গবেষকদের মতে এটা আমেরিকার সবচেয়ে বেশি গবেষণাকৃত লোক গান। শুধু আমেরিকারই নয়, খুব সম্ভবত সারা পৃথিবীতেই এই গানকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি গবেষণা হয়েছে।
আফ্রিকান আমেরিকানদের কাছে জন হেনরি কিংবদন্তী, প্রবাদতুল্য ব্যক্তি। ফিলাডেলফিয়ায় একজন কালো মানুষ অন্য একজন কালো মানুষকে সম্ভাষণ জানায় এই বলে যে, “তোমার হাতুড়িটা ঠিকমত ঝুলছেতো?” কালো মানুষদের মধ্যে হাইপারটেনশন এবং হার্ট এটাকের হার অনেক বেশি। কার্ডিওলোজিস্টরা এর নাম দিয়েছেন জন হেনরি সিন্ড্রোম বলে। ক্লিভল্যন্ডের শ্রমজীবী মানুষদের বসতি এলাকা এবং ভার্জিনিয়ার গ্রামীণ অঞ্চলে শিক্ষকেরা কালো ছেলেমেয়েদের তাদের ইতিহাস নিয়ে গর্বিত হবার জন্য, তাদের অনুপ্রেরণা দেবার জন্য জন হেনরির গল্প শোনাতো।
গত একশ বছর ধরে বেশিরভাগ ঐতিহাসিক এবং লোকসাহিত্য গবেষক ধরে নিয়েছিলেন যে, জন হেনরি কিংবদন্তী মাত্র, কাল্পনিক এক চরিত্র। বাস্তবে এর কোনও অস্তিত্ব নেই। এই গল্প তৈরি করা হয়েছে গর্বিত হবার গণ আকুলতায়, অনুপ্রাণিত হবার প্রবল অভিপ্রায়ে। কিন্তু, নতুন নতুন গবেষণায় বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য। জন হেনরি বলে আসলেই কেউ ছিল। রক্ত মাংসের জীবন্ত একজন মানুষ। কাজ করতো রেললাইন বসানোর কোম্পানিতে, কুচকুচে কালো ইস্পাতের মত শক্ত পেশিবহুল বাহুর স্পর্ধিত অহংকারে হাতুড়ি পিটিয়ে পাহাড় কাটতো, পাথর গুঁড়ো করতো, লোহার পাতে ছিদ্র বানাতো।
কলেজ অব উইলিয়াম এন্ড মেরি-র ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্কট রেনল্ডস নেলসন একটা গবেষণামূলক বই লিখেছিলেন Steel Drivin’ Man: John Henry, the untold story of an American Legend নামে। এই বইয়ে তিনি জন হেনরির লিজেন্ড খোঁজা শুরু করেন কিন্তু অবশেষে সত্যিকারের জন হেনরিকে আবিষ্কার করেছেন বলে দাবী করেন। শুধু তাই নয়, কোথা থেকে জন হেনরি সি এন্ড ও কোম্পানিতে এসেছে, কীভাবে জীবন যাপন করতো, কোথায় তাকে কবর দেওয়া হয়েছে তার সব আবিষ্কার করেছেন বলে মত দেন। কিন্তু কীভাবে জন হেনরি মারা গিয়েছে সেই রহস্য উদঘাটন করতে পারেন নি বলে জানান। জন হেনরিকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন ব্যালাডের ভাষা বিশ্লেষণ করে এবং তার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গবেষণা করে তিনি এই সকল তথ্যসমূহ উদ্ধার করেন।
নেলসনের মতে জন হেনরির গল্প শুধু গল্পই নয় এবং জন হেনরিও কোনও পুরাকথা নয়। ঐতিহাসিকেরা অনেকদিন ধরেই সন্দেহ পোষণ করছিলেন, আঠারো শতকের সত্তর দশক থেকে যে চারণগীতি ছড়াতে শুরু করে তা আসলে একজন সত্যিকারের রেলকর্মীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। তবে, নেলসন তাঁর পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণার শেষে অসংখ্য দলিলপত্রের উপর ভিত্তি করে দাবী করেন যে, এই জন হেনরি আসলে ছিল আমেরিকার গৃহযুদ্ধের ইউনিয়ন পক্ষের একজন যোদ্ধা। মাত্র পাঁচ ফুট এক ইঞ্চি উচ্চতার একজন লিটলম্যান।
ভার্জিনিয়ার প্রিন্স জর্জ কাউন্টির সিটি পয়েন্ট শহরের ওয়াইজম্যান’স গ্রোসারি নামের একটা গ্রোসারিতে চুরির অভিযোগে জন হেনরিকে দশ বছরের সাজা দেওয়া হয়। সামান্য একটা চুরির কারণে এত বড় শাস্তি কেন, সেটাকে হিসাবে নিয়ে এলে সহজেই সেই সময়ে কালোদের সামাজিক অবস্থান টের পাওয়া যায়।
১৮৬৩ এবং ৬৪ সালে প্রিন্স জর্জ কাউন্টি যুদ্ধের একটা গুরুত্বপূর্ণ রণাঙ্গনে পরিণত হয়। সিটি পয়েন্টে ইউনিয়ন বাহিনী জড়ো হয়। এই বাহিনীর বেশিরভাগ যোদ্ধাই ছিল কালো। এখান থেকে মাত্র চল্লিশ মাইল দূরে পিটারসবার্গকে ঘিরে জলপূর্ণ অঞ্চলে ট্রেঞ্চ খুঁড়ে অবস্থান নিয়েছিল কনফেডারেট বাহিনী। উদ্দেশ্য ছিল ইউনিয়ন বাহিনীর হাত থেকে পিটাসবার্গকে রক্ষা করা। এখানেই দুই বছর ধরে ইউনিয়ন বাহিনী বিপুল শক্তি নিয়ে বারবার হামলা চালায় এই রক্ষাব্যুহ ভাঙার জন্য। শেষ বছরে এসে সফল হয় ইউনিয়ন বাহিনী। কিন্তু এই যুদ্ধে দুইপক্ষের বিশ হাজার লোক মারা যায় এখানে। সেই সমস্ত লাশ পড়ে থাকে প্রিন্স জর্জ কাউন্টির জলাভূমিতে।
এই বিপুল পরিমাণ লাশ নিয়ে বাণিজ্য শুরু হয়ে যায়। সার কারখানাগুলো সার তৈরির জন্য মৃত মানুষে হাড়গোড় কেনা শুরু করে। সামরিক বাহিনীও এই বাণিজ্যে লিপ্ত হয়ে যায়। অসংখ্য সৈন্য এবং সাধারণ মানুষকে কাজে লাগানো হয় লাশ উত্তোলনের কাজে। জন হেনরি ছিল তাদেরই একজন।
গৃহযুদ্ধের কারণে যে বিপ্লব তৈরি হয়েছে তাকে প্রতিহত করার জন্য ভার্জিনিয়া কালোদের বিরুদ্ধে কঠিন কঠিন আইন তৈরি করতে থাকে। এগুলোকে সমালোচকেরা ব্লাক কোড হিসাবে অভিহিত করেছিলেন। এই আইনে কেউ যদি বিনা কারণে শহরের মধ্যে ঘোরাঘুরি করতো, সেক্ষেত্রেও ভবঘুরেমির জন্য তার সাজা হয়ে যেতো। আপাত দৃষ্টিতে এই আইন ছিল বর্ণ নিরপেক্ষ। কিন্তু খুব দ্রুত দেখা গেলো যে যাদেরকে গ্রেফতার করে কোর্টে চালান করা হচ্ছে তারা সবাই-ই কালো।
জন হেনরি এরেস্ট হয় ফ্রিডম্যান ব্যুরো নামের একটা ফেডারেল এজেন্সির হাতে। এই এজেন্সি গড়ে উঠেছিল ইউনিয়ন আর্মির হাতে। যুদ্ধের পরে এদের হাতে বিপুল পরিমাণ ক্ষমতা চলে যায় (অনেকটা এখনকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মত)। এদের হাতে এরেস্ট হবার পরে একজন কালো ব্যক্তি ন্যায় বিচার পাবে কী পাবে না, তার পুরোটাই নির্ভর করতো দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের উপর।
জন হেনরির দুর্ভাগ্য যে, তাকে এরেস্ট করা অফিসার চার্লস বার্ড ছিলেন কালোদের প্রতি প্রচণ্ড রকমের অসহনশীল একজন ব্যক্তি। “অবাধ্য” এবং “বিশৃঙ্খল” কালোদের সুশৃঙ্খল করাই ছিল তার মূল কাজ। ঠিক কী অপরাধে বার্ড জন হেনরিকে এরেস্ট করেছিল সে বিষয়ে কোনও রেকর্ড পাওয়া যায় না।
কাউন্টি কোর্টে হস্তান্তরের পরে যায় যায় যে, ওয়াইজম্যান’স গ্রোসারিতে চুরির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ওয়াইজম্যান’স স্টোর নামেই গ্রোসারি। আসলে ছোট্ট একটা মুদি দোকান ছিল যেখানে মদ টদও বিক্রি করা হতো। কিন্তু দোকানে চুরির অভিযোগ গুরুতর কোনও অপরাধ নয়। রাতের বেলা দোকান ভেঙে চুরি করলে অন্তত বিশ ডলারের জিনিস চুরি না গেলে সেটাকে বার্গলারির আওতায় ফেলা যায় না। কিন্তু এই দোকানের পুরো সম্পত্তির মূল্যই ছিল মাত্র পঞ্চাশ ডলারের। আবার অন্যদিকে দিনে দুপুরে লুকিয়ে হাতছাফাই করলে সেটা শপলিফটিং এর আওতায় পড়ে। সামান্য অপরাধ, এর বিচার কাউন্টি কোর্টে হতে পারে না।
এই সমস্যা এড়াতে জন হেনরির বিপক্ষ উকিল ওয়াইজম্যান’স গ্রোসারিকে বসতবাটি বানিয়ে দেয় এবং তালা ভেঙে ঢুকে চুরির অভিযোগ আনে। আর এই গুরুতর অপরাধেই দশ বছরের সাজা হয়ে যায় তার।
ভার্জিনিয়ার কারাগারে থাকার সময় অন্য আরও অপরাধীদের সাথে সি এন্ড ও কোম্পানির হয়ে এলেগেনি মাউন্টেইনে টানেল খোঁড়ার কাজে স্টিল ড্রাইভার হিসাবে কাজে নিযুক্ত হয় সে।
নেলসন দেখতে পান যে, আঠারো শো সত্তরের প্রথম দিকে ভার্জিনিয়া স্টেট পেনিটেনশিয়ারি থেকে অসংখ্য অপরাধী সি এন্ড ও রেলওয়েতে কাজ করেছিল এবং অকাতরে মারা গিয়েছিল। জন হেনরির এক ব্যালাডের একটা লাইন উল্লেখ করেন নেলসন। যেখানে বলা হয়েছে যে, “তারা জন হেনরির লাশকে হোয়াইট হাউজের পাশে নিয়ে যায় এবং বালুময় মাটিতে তাকে সমাহিত করে।“ নেলসনের ভাষ্য অনুযায়ী এই কারাগারটি তখন সাদা রং এর ছিল সে কারণে একে হোয়াইট হাউজ হিসাবে ডাকা হতো। এই পেনিটেনশিয়ারির যখন ১৯৯২ সালে ভেঙে ফেলা হয়, তখন কর্মীরা এর পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে প্রায় তিনশত কঙ্কাল খুঁড়ে বের করে। নেলসন রাষ্ট্রীয় দলিলপত্র তন্ন তন্ন করে খুঁজে আবিষ্কার করেন যে, এই ব্যক্তি, যাকে নিয়ে ব্যালাডসমূহ রচিত হয়েছে, তার আসল নাম জন উইলিয়াম হেনরি।
যদিও ঐতিহাসিক দলিলসমূহ ততটা জোরালো নয়, তারপরেও যেটুকু তথ্য পাওয়া যায় তাতে করে জন উইলিয়াম হেনরিকে একজন রেলকর্মী হিসাবে সনাক্ত করতে কোনও অসুবিধা হয় না। হেনরি একটা টিমের সাথে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার লুইস টানেল খোঁড়ার কাজে নিযুক্ত ছিল। এখানেই স্টীম ড্রিলের সাথে কর্মীদের হাতুড়ির লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সালের মধ্যেই জেলের রেকর্ড থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় জন হেনরি। অপরাধের মার্জনা পেয়েছিল নাকি খালাস পেয়েছিল, কিংবা প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিল তার কোনও রেকর্ডই সেখানে নেই। জেলখানার ভিতরেও সে মারা যায় নি। তাহলেও তারা রেকর্ড থাকতো। কাজেই, একটাই মাত্র পথ খোলা থাকে যে, কাজ করার সময়ে সে মারা গিয়েছিল।
কে ছিল এই জন হেনরি? নেলসন খুব বেশি কিছু তথ্য বের করতে পারেন নি অবশ্য তার বিষয়ে। তার বসবাস ছিল নিউ জার্সিতে। ১৮৬৬ সালে আঠারো বছর বয়সে পিটারসবার্গের কাছাকাছি সিটি পয়েন্টে ইউনিয়ন আর্মির হয়ে কাজ করে। একই বছরের এপ্রিল মাসে একটা গ্রোসারি স্টোরে চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হয় এবং দশ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। ভার্জিনিয়ার স্টেট পেনিটেনশিয়ারিতে পাঠানো হয় তাকে। এখানকার জেল রক্ষক জেলখানার আয় বাড়ানোর জন্য রেল কোম্পানিতে প্রতিদিন পঁচিশ সেন্টের বিনিময়ে পাঠানো শুরু করেন।
মেশিনের সাথে অসম লড়াইয়ের যে রোমহর্ষক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ব্যালাডগুলোতে তার বিপরীতে গিয়ে নেলসন বলেছেন যে, এই লড়াই একপেশে ছিল, তবে তা মেশিনের পক্ষে নয়, বরং মানুষদের পক্ষেই ছিল। কারণ একক কোনও ব্যক্তি মেশিনের সাথে লড়তো না, বরং একটা দল মেশিনের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতো। এই মেশিনগুলো উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন ছিল ঠিকই, তবে প্রায়ই সেগুলো অকেজো হয়ে যেতো। এ ছাড়া এই মেশিন থেকে সিলিকনের কালো ধোঁয়া বের হতো প্রচুর পরিমাণে। ব্যালাডে যে রকম বলা হয়েছে যে, মেশিনের সাথে বিপুল বিক্রমে লড়াই করে নিদারুণ ক্লান্তিতে কিংবা হৃৎপিণ্ড বন্ধ হয়ে জন হেনরি মারা গিয়েছে, সেরকম নয়। বরং সিলিকনের কালো ধোঁয়া ক্রমাগত ফুসফুসে যাবার মধ্য দিয়ে আরও অনেক রেলকর্মীর মত জন হেনরিও মারা গিয়েছিল। সেখান থেকে তার লাশ এনে সাদা পেনিটেনশিয়ারির পাশেই গণ কবরে সমাহিত করা হয়।
নেলসনের এই বক্তব্যের সাথে একমত হন নি রসায়নের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর এবং লোকসাহিত্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর জন গার্স্ট। তার কথা হচ্ছে যে, লুইস টানেলে কাজ করা দুইশো জন অপরাধীর মধ্য থেকে জন হেনরি নামের একজনকে খুঁজে পাওয়া কোনও কিছুই প্রমাণ করে না। সবচেয়ে অবাকের বিষয় হচ্ছে যে, নেলসন মাত্র একজন জন হেনরিকেই খুঁজে পেয়েছেন, দুইজন বা তার বেশি নয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে জন হেনরি খুবই প্রচলিত একটা নাম ছিল।
জন হেনরি যে স্টিল ড্রাইভার ছিল তারও কোনও প্রমাণ নেই। সে শেকার হতে পারে, মাকার হতে পারে, ওয়াটার বয় হতে পারে, হতে পারে শার্পেনার কিংবা এমনকি হতে পারে পাচকও। এ ছাড়া জন হেনরির যে উচ্চতা তাতে করে তাকে সেরা স্টিল ড্রাইভার হিসাবেও মেনে নেওয়া যায় না। বরং রেকর্ড থেকে দেখা যায় যে, বব জোনস নামের এক ব্যক্তি লুইস টানেলের সেরা স্টিল ড্রাইভার ছিল।
লুইস টানেলে মানুষের সাথে মেশিনের প্রতিযোগিতারও কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। নেলসন সমষ্টিগত প্রতিযোগিতার যে বর্ণনা দিয়েছেন তাও খুবই দুর্বল। কারণ হাতুড়ি ব্যবহার করা হতো আনুভূমিক গর্ত তৈরি করার জন্য এবং স্টীম ড্রিল ব্যবহার করা হতো উল্লম্ব গর্ত খোঁড়ার কাজে। কাজেই দুটো ভিন্ন ধরণের কাজের মধ্যে প্রতিযোগিতার কোনও প্রশ্নই আসে না।
জন হেনরি লুইস টানেলে মারা গিয়েছে এই ধারণাটাও চূড়ান্ত নয়। সে পালিয়ে যেতে পারে, যেরকম গিয়েছিল আরও অনেক অপরাধীই। জন হেনরির শবদেহ ভার্জিনিয়া পেনিটেনশিয়ারিতে নিয়ে গিয়ে দাফন করার যুক্তিটাও দুর্বল। এক্ষেত্রে নেলসনের যুক্তি ছিল যে, প্রতিজন পলাতক আসামীর ক্ষেত্রে রেল কোম্পানিকে একশ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হতো। কিন্তু চুক্তিতে আসলে কথা ছিল প্রতিটা আসামীকে নিরাপদে ফেরত দিতে হবে। এই নিরাপদে ফেরত দেওয়াকে ভুল বুঝেছেন নেলসন, এবং ভেবেছেন যে জন হেনরির লাশকে পেনিটেনশিয়ারিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর থেকে বরং এই ধারণা করাই সহজ যে, লুইস টানেলের ভিতরের কবরস্থানেই জন হেনরিকে কবরস্থ করা হয়েছিল। কারাগারে লাশ পাঠানোর চেয়ে এটাই অর্থনৈতিক দিক থেকে সুবিধাজনক ছিল।
নেলসন অবশ্য জন গার্স্টের এই সমস্ত সমালোচনাকে খণ্ডন করেছেন এভাবেঃ
“আঠারো শ সত্তর সালে কালোদের মধ্যে জন হেনরি প্রকৃতপক্ষেই অপ্রচলিত নাম ছিল। ১৮৭০ সালের আদমশুমারিতে মাত্র সামান্য কিছু কালো লোকের নাম জন হেনরি ছিল। তাদের মধ্যে আবার বেশিরভাগই হয় কম বয়েসী ছিল নতুবা বেশি বয়েসী ছিল। আমি যে জন হেনরির কথা বলেছি, তার নাম আদমশুমারি এবং কারাগারের খাতায় একইভাবে লেখা ছিল। প্রফেসর গার্স্টের ধারণা অনুযায়ী এই জন হেনরি হাজারো জন হেনরির একজন হতে পারে, এই ধারণার কোনও যথাযথ ভিত্তি নেই। আঠারো আশি সালের পরে যখন জন হেনরির কিংবদন্তী লোকমুখে প্রচার হওয়া শুরু হয়েছে তখন ব্যাপকভাবে এই নামের ব্যবহার শুরু হয়।“
জন হেনরির উচ্চতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রফেসর গার্স্ট। ঊনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে টানেল কর্মীরা বিশেষ করে যারা টানেল বিস্ফোরণের জন্য ছিদ্র তৈরি করতো তারা সকলেই খর্বাকৃতির ব্যক্তি ছিল। এটা প্রয়োজনের কারণেই হতো। নাইট্রোগ্লিসারিন রক ব্লাস্টের মাধ্যমে যে, গর্ত তৈরি করা হতো সেগুলো হতো খুবই ছোট। পরে এগুলো মানবদেহের সমানের গর্তে পরিণত করা হতো ড্রিলের মাধ্যমে। কাজেই, টানেল ড্রিলার হলে জন হেনরির শরীর যে খর্বকায় এবং ক্ষুদ্রাকৃতির হবে, এটাই প্রত্যাশিত।
প্রফেসর গার্স্ট দাবি করেছেন যে, স্টীম ড্রিলের সাথে কোনও প্রতিযোগিতা লুইস টানেলে হয় নি এবং জন হেনরি কোনও স্টিল ড্রিলার ছিল না। আমি যথেষ্ট পরিমাণে তথ্য আমার বইয়ে দিয়েছি এই বলে যে, আঠারো শো সত্তরের দশকে এখানে দুই ধরণের স্টীম ড্রিলার ব্যবহার করা হতো। আমি খুব ভালো করেই দেখিয়েছি যে, কন্ট্রাক্টরদের একশ ডলারের জরিমানা এড়ানোর জন্য সব আসামীকেই কারাগারে ফেরত দিতে হবে, তা সে জীবিতই হোক কিংবা মৃত। আমি দেখিয়েছি কীভাবে কারাগারের ডাক্তার অনেক আসামীর লুইস টানেলে কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুর কথা লিখে রেখেছেন। আমি দুটো সমকালীন সূত্রের উল্লেখ করে দেখিয়েছি যে, কর্মীরা এবং স্টীম ড্রিল পাশাপাশি কাজ করতো। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, জন হেনরির মেশিনের সাথে লড়াইয়ের কোনও আলোকচিত্র আমার কাছে নেই। তবে, থাকলেও কোনও লাভ হতো না। কারণ প্রফেসর গার্স্ট সেটা নিয়েও বিতর্ক শুরু করতেন।
হ্যাঁ, এটা ঠিক যে লুইস টানেলের নিজস্ব সমাধিস্থান ছিল। কিন্তু সেখানকার ঊনবিংশ শতাব্দীর সমাধি ফলকসমূহে শুধুমাত্র সাদা চামড়ার পুরুষ এবং রমণীদের নাম পাওয়া যায়। কাজেই, এখানে কোনও কালো মানুষকে সমাহিত করা হবে সেই সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। বরং জরিমানা এড়ানোর জন্য জেলখানায় তার লাশ ফেরত পাঠানোটাই স্বাভাবিক। এই লাশ ফেরত পেয়েছেন এই মর্মে জেলখানার ডাক্তারকে সার্টিফিকেটও দিতে হতো।
এটাই খুব সম্ভবত আসল জন হেনরির ছবি।
জন হেনরিকে নিয়ে নেলসন এবং গার্স্টের তর্ক বিতর্কে আমরা যাবো না। আসল জন হেনরি কে এটা নিয়ে বিশাল বিতর্ক রয়েছে। আমেরিকার আদি স্টেটগুলোর প্রায় সবাই-ই কোনও না কোনও সময় জন হেনরি যে তাদের লোক এই দাবি নিয়ে হাজির হয়েছে।
নেলসনের বইটা মোটামুটি মাঝারি সাইজের। দুইশো চৌদ্দ পৃষ্ঠার। এই বইয়ে অসংখ্য তথ্য দেওয়া যেগুলো দিয়ে নেলসন প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, জন হেনরি নিউ জার্সির লোক, গৃহযুদ্ধে ইউনিয়ন আর্মির হয়ে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল এবং ভার্জিনিয়ার লুইস টানেলে কাজ করেছে সেখানকার জেলখানায় থাকার সময়ে।
অন্যদিকে এই মতের বিপক্ষে মত দিয়েছেন জন গার্স্ট। তিনি সন্দেহাতীতভাবে (বিয়োন্ড এনি রিজনেবল ডাউট, ঠিক এই শব্দটা ব্যাবহার করেছেন) দাবি করেছেন যে, জন হেনরি মিসিসিপির একজন প্রাক্তন দাস ছিল। মেশিন এবং মানব পেশীর এই লড়াই হয়েছিল আলাবামার ওক মাউনন্টেইন টানেলে। এই ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী হিসাবে দাবি করা সি সি স্পেন্সার নামের এক লোকের সাথে পত্র আদান প্রদানের মাধ্যমে তিনি এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এখন কথা হচ্ছে যে, আমরা কোনটাকে বিশ্বাস করবো? পণ্ডিতদের এই প্রচণ্ড লড়াইয়ে আমরাতো প্রাণভয়ে ভীত পক্ষী তুল্য। পাঁচ ফুট এক ইঞ্চির ক্ষুদ্র মানব জন হেনরির চেয়ে বিশালকায় হাতুড়ি হাতের দানবীয় শক্তির কিংবদন্তি জন হেনরিই না হয় আমাদের পাশে থাকুক। হোক না তা কাল্পনিক। ক্ষতি কী? সাহসটাতো বাড়ে।
জন হেনরি বলে কেউ ছিল কী ছিল না, সেই বিষয়টা এখন আসলে অপ্রয়োজনীয় হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে, শ্রমিক আন্দোলনে, নাগরিক অধিকার আন্দোলনে জন হেনরি একক প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শক্তি, সাহস, সহিষ্ণুতা, মানবতার মর্যাদা, বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সামর্থ্য এর সবকিছুর পিছনে জন হেনরি নামের কিংবদন্তীটি আকাশছোঁয়া উচ্চতা নিয়ে যুগে যুগে, দেশে, দেশে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদেহী, সুঠাম, পাথরের খোদাই করা জন হেনরি হাতের উত্তোলিত মুগুর যেন শোষিত, বঞ্চিত মানুষের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সবচেয়ে বড় ভরসা।
এই দারুণ ভূমিকাটা যে চরিত্র পালন করে চলেছে দীর্ঘদিন ধরে, তার ঐতিহাসিক হওয়া না হওয়াতে কিছুই যায় আসে না আমাদের। হেনরির বীর গাথা বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে দিয়ে সিটি দিয়ে যেমন চলে যায় ইঞ্জিন, আমরাও তেমনি এই বীরত্ব গাথাকে ছড়িয়ে দিতে চাই সবদিকে। পূর্ব থেকে পশ্চিমে, উত্তর থেকে দক্ষিণে, পৃথিবীর প্রতিটা প্রান্ত, প্রতিটা শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মনের গভীরে।
মানুষের মুক্তি আসুক, শৃঙ্খল মুক্ত হোক পৃথিবীর প্রতিটি মানব সন্তান।
httpv://www.youtube.com/watch?v=g6vcvYJCkic&feature=related
ফকির আলমগীরের গান  mp3 ডাউনলোড(Right-click+Save as)
এই ভদ্রলোকই সম্ভবত আমাদের জন হেনরি। যদিও সরাসরি এর কোনো প্রমাণ নেই। তবে, এনার নামও জন হেনরি, এবং প্রিন্স জর্জ কাউন্টিতে যে জন হেনরি গ্রেফতার হয়েছিলেন তাঁর সাথে বয়স এবং উচ্চতায় মিলে যায়।
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2012/05/john-henry1.jpg[/img]
ফরিদ ভাই, বড় ভালো লাগলো। নিজের ওপর রাগ হচ্ছে এত দেরি করে পড়লাম বলে। জন হেনরি সম্পর্কে প্রথম শুনেছিলাম ফকির আলমগীরের গানে। মূল গানটা শুনলাম আজ – আপনার দেয়া লিংক থেকে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
@প্রদীপ দেব,
দেরিতে হলেও পড়েছেনতো। ভালো থাকুন।
আসলেই বেহুঁশ ছিলাম।
ওই লাইন দুটি এ লিখার জন্যই, আর-
ওই লাইন দুটি ওই লিখার জন্য।
আসলে ইয়ে মানে…দেখুন… আমার এ রোগ ছোটবেলা হতেই। মানে, বেশি তথ্য মস্তিষ্কে কিলবিল করে বিধায় “ডিধ আর দুম লাগবে…” (ডিম আর দুধ লাগবে) “হাসে ঘাটলে” (ঘাসে হাঁটলে) বাক্যে অক্ষর এমনতর ওলট পালট করতে করতে লিখা আর মন্তব্যেও ওলট পালট করে ফেলেছি। আমি অতি সামান্য একজন অনেকদিন ভোগা (অ)শিক্ষিত রোগী, ইহা মনে করিয়া আমায় নিজ গুনে ক্ষমা করিয়া দেবেন হে বিশিষ্ট লেখক। আপনার প্রস্তাবে ভাবিয়া দেখিলাম আঙ্গুল বাঁকা না করাটাই শ্রেয়, বিবর্তনের পথ বড়ই কন্টকময়, সেদিকে পা বাড়াইলাম না। 🙂
@ছিন্ন পাতা,
আপনি যে তালকানা রোগে ভোগেন সেটা আগে বলবেন না। :))
বিশিষ্ট বলে গালি দেওয়াতে গোস্বা হয়েছি। ক্ষমা করার মত গুণ খুঁজে পাচ্ছি না। :-X
ধন্যবাদ ছিন্নপাতা। এই তুচ্ছ লোকটার প্রতি আপনাদের এই কোমল ভালোবাসা ছুঁয়ে যায় আমাকে, সিক্ত করে, নতুন কিছু করার সঞ্জীবনী শক্তি জোগায়। গোলাপ শুভেচ্ছা রইলো। (F)
ছোটবেলায় যথেষ্ট কমার্শিয়াল বাংলা চলচিত্র দেখা হয়েছে আপনার এ প্রশ্নের জবাব দেবার জন্য।
“সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকা করতে হয়…হুহাহহাহাহা…”
অর্থাৎ প্রথমে আমি অনুরোধকারীদের দলে, তাতে কাজ না হলে হুমকি ধামকিদের… 🙂
@ছিন্ন পাতা,
বেশি বাঁকা কইরেন না, শেষে উল্টোদিকে বিবর্তন ঘটে যাবে। 🙂
লোকজন আজকাল সব আমার মত মাথা গরম আর মারদাঙ্গাবাজ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কথা হচ্ছে যে, মাথা গরম করতে গিয়ে আপনি যে ভুল লেখায় কমেন্ট করে বসে আছেন, সে হুশ কি আছে? :))
ইতিহাসের ঘটনাগুলোকে এভাবে সহজ ভাষায় গল্প আকারে উপস্থাপন করাটা বড় একটি গুণ। এতে করে আমার মতন পাঠকদের আগ্রহ বাড়ে।
আমার আগে অনেকেই আপনাকে হুমকি, ধামকি, অনুরোধ সবই দিয়েছেন লিখাটা না থামানোর জন্য। আমি নুতন কিছু না বলে জানিয়ে গেলাম আমিও তাদেরই দলে।
@ছিন্ন পাতা,
আপনি ভুল নাম্বরে ডায়াল করেছেন। অনুগ্রহপূর্বক সঠিক নাম্বারে ডায়াল করুন। 🙂
কোন দলে আপনি? হুমকি, ধামকি নাকি অনুরোধ? :-s
সত্য বলে তাহলে এতদিন কী জানতাম?
দুর্দান্ত হয়েছে। (Y)
@আসরাফ,
মন্তব্যটাও দুর্দান্ত হয়েছে। :))
হেনরি’কে নিয়ে প্রচুর আবেগঠাসা কিছু লেখা দেখেছি। কিন্তু এমন তথ্যবহুল ও বিশ্লেষণধর্মী লেখা দেখি নাই।
(Y) (Y)
@আরিফুর রহমান,
ধন্যবাদ আরিফ। 🙂
জন হেনরি পড়ে আমাদের দেশের অনেক পেশার কথা মনে হল। না, এর মানে আমি তখনকার কালোদের সংগ্রামকে ছোট করে দেখছি না। প্রেক্ষাপটও ভিন্ন তবুও পাশের বাড়ির যে মহিলা মুড়ি ভেজে জীবিকা নির্বাহ করত সে এখন মুড়ির মেশিনের কাছে পরাজিত। যে মাঝিরা নৌকায় মাল বইত এক মেশিনের নৌকার কাছে দশ ঘর মাঝি বেকার।
এ ধরণের লেখা ভাবতে শেখায়। চিন্তা শক্তিকে উসকে দেয়। নিজ দেশের লোক ইতিহাস পড়তে উদ্ধুদ্ধ করে। নিজ সমাজের হেনরিদের খুঁজে উপস্থাপিত করতে প্ররণা দেয়।
ফরিদ আহমেদর লেখা মানেই মনযোগ দিয়ে পড়ার দাবি রাখে। অনেক বই ঘেঁটে লিখে বলে আমি তার একটা লেখা পড়ে অনেক বইয়ের সারমর্ম পাই। সে লেখা ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সংগ্রামী চরিত্র বা বিদেশী ভাষার কবি যা ই হোক। এ লেখাটিও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে ফরিদ ইদানিং বড় বেশি কৃপণ হয়ে গেছে। খুবই কম লিখে। এর কারণ কি এ অনুসন্ধানে না গিয়ে বা এ জন্য ফরিদের কাছ থেকে কোন অজুহাত না শুনে তার আরও লেখা পাওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
@গীতা দাস,
এর কারণ সোজা দিদি। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় আমার কাছে কোনো বইপত্র নেই। বাংলাদেশ থেকে আপনারা মুক্ত হস্তে চাঁদা তুলে আমাকে বই কিনে পাঠান, আমিও অকৃপণভাবে মুক্তমনায় লিখে যাবো। 🙂
@গীতা দাস,-
দিদি, আমি দীর্ঘতর দিন হতে দেশের বাইরে। আমার কাছেও কোন বইপত্র নেই। আপনারা চাঁদা তুলে যে বই ফরিদ দা কে পাঠাবেন, সেসব আগে আমার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলে আমি (পড়ে শেষে) ফরিদ দাকে পাঠিয়ে দেব। কি সুন্দর টিম ওয়ার্ক! 🙂
@ছিন্ন পাতা,
টিম ওয়ার্ক না ছাই। চুরির মতলব। বই চোরে দুনিয়া ভরা (আমার কথা নয় সৈয়দ সাহেবের কথা)। 😉
@ফরিদ আহমেদ,
ফুল চুরি, বই চুরি আর আম চুরি এসব চুরি একেকটা আর্ট। আর এই শৈল্পিক গুন যার মাঝে আছে সেই ষোলাআনা বাঙ্গালী। (এটা আমারই কথা, যার সাথে গীতাদি এবং সৈয়দ সাহেব দুজনই সহমত হবেন বলেই আমার বিশ্বাস।) :rotfl:
@ছিন্ন পাতা,
আমি যে ষোলো আনা বাঙালি তাতে এখন আর কোনো সংশয় নেই আমার। মায়ামিতে আমি আর আমার এক ডানপিটে বন্ধু মিলে রাতে আম চুরি করতে বের হয়েছিলাম একদিন। গাড়ির ছাদে উঠে আম গাছ থেকে আম চুরি। বড়সড় একটা গার্বেজ ব্যাগ ছিল, ওটা ভর্তি করে ফেলেছিলাম কয়েক ঘন্টার মধ্যেই। 🙂
এতেই থামি নি আমরা। প্রায়শই হোমস্টিড থেকে আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, বরই এগুলো চুরিও বাদ যায় নি আমাদের। :))
অনেক আগে এই জন হেনরিকে নিয়ে একটা কার্টুন দেখসিলাম। এরা যে বাস্তবের মানুষ, তাদের যে অন্য মানুষরা এমন নথিপত্রের মধ্যে খুজেছে, পড়ে খুব ভালো লাগলো। তবে ঐ কার্টুনটা হয়তো বাচ্চাদের, এই জন্য জেল খাটার কথা ছিল না, বরং জন হেনরি দ্যা ফ্রি স্লেইভ হিসেবে দেখিয়েছিল। আফ্রিকান আমেরিকান একজন হিরোকে নিয়ে, তাকে নথিপত্রের মাঝে খোজাখুজি, সব মিলিয়ে অসাধারন এক লেখা ফরিদ ভাই।
@নির্মিতব্য,
ধন্যবাদ নির্মি। ফারাবি টাইপের ফাতরাদের পিছনে আপনার মূল্যবান সময় এবং শক্তি অযথা ক্ষয় না করে এখানে একটু বেশি সময় দিন প্লিজ।
@ফরিদ ভাই,
আপনি আবার ঐটা দেখসেনো!!! আসলে ফেবু তে অনেক শিশুতোষ নাস্তিক আছেন, যারা কিছু গুটিকয়েক গোড়া আস্তিকদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন। আমি গত ২-৩ দিন ফেবু তে চেষ্টা করেছিলাম এগুলো একটু অনুৎসাহিত করতে। মাঝে দিয়ে কিছু বাদর গলায় ঝুলে পরতে নিসিলো!! এখন লস্ট কজ ধরে নিসি। যার যাকে খুশি গালি দিক! আমার কি!!
আমি জন হেনরি এর ঐ বাচ্চাদের কার্টুনটা ইউটিউবে খুজে পাইসি। 🙂 httpv://youtu.be/HGglKPqG16s।
@নির্মিতব্য,
দেখেছি দেখেই বলছি। আপনার মানের একজন ফারাবির মত ফ্রি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাশ করা একটা ফালতু ফাজিল মোল্লার পিছনে শক্তি ক্ষয় করছেন দেখে খারাপ লেগেছে। এগুলো জীবনেও কোনোদিন মানুষ হবে না, পুরোটা পচে গিয়েছে এদের।
জম্পেশ ধরণের একটা লেখা লিখে ফেলুন মুক্তমনায় আপনার সুললিত ভাষা দিয়ে। 🙂
আমি দেখেছি অনেক কালো মানুষদের খুব সহজে রেগে উঠতে। এক বার রেগে গেলে তাকে থামানো দায়। সত্যি সত্যিই রেগে গেলে গোঁয়ারের মত অনুসরণ করতে থাকে সেই রাগকে। রেগে গিয়েই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে অনেক সময়। অসম্ভব আবেগী এরা। এদের ভয়ঙ্কর আবেগের কারনেই লক্ষ্যে পৌঁছুতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করে ফেলে এরা। যৌক্তিক বৌদ্ধিক শক্তির চেয়ে শারীরিক কিংবা মানসিক শক্তিই হয়ত এদেরকে অনেক বেশী চালিত করে। এক প্রজন্মে লক্ষ্যে পৌঁছুতে না পারলে এরা পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত করে যায় তাদের লক্ষ্য ভাবনা। এমি, গোল্ডেনগ্লোব খ্যাত বিটিভি বা বিশ্বব্যাপী দেখানো এলেক্স হ্যালির উপন্যাস রুটস যারা দেখেছেন তারা নিশ্চয় মনে করতে পারবেন কি অদ্ভূত চরিত্র সেই সব কুন্তাকিন্তেরা। প্রায় একই রকম এই সব জন হেনরিরাও। ভালো একটা দৃষ্টান্ত তৈরিতে একগুঁয়েমি খুব শক্তিশালী অস্ত্র বটে।
যথারীতি অনিয়মিত অথচ চমৎকার লেখা উপহার দেবার জন্য ফরিদ আহমেদকে ধন্যবাদ (D)
@কাজী রহমান,
অনিয়মিতটা নিশ্চয়ই টাইপো। তাই না? 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
অথচ লিখলাম অথচ :-s
ফরিদ,
এত গোছানো, তথ্যসমৃদ্ধ, হৃদয়গ্রাহী এবং সর্বোপরি সময়োপযোগী এই লেখাটার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ ইরতিশাদ ভাই। এই লেখার জন্মই হয়েছে মে দিবস উপলক্ষে আপনার অসাধারণ প্রবন্ধটির কারণে।
ইরতিশাদ ভাইয়ের লেখাটা পড়ার পর থেকেই জন হেনরিকে জানার কৌতূহল হচ্ছিল! আপনার আলোচনা সেই কৌতূহল অনেকটাই মেটালো!
মানে কি, ফরিদ ভাই?
এই বইটির লেখক কি নেলসন?
প্রথম বাক্যে ৩য় পুরুষ এবং দ্বিতীয় বাক্যে প্রথম পুরুষের ব্যবহার পাঠকে সামান্য বিঘ্নিত করেছে।
@কাজি মামুন,
এটা ঊনবিংশ শতাব্দীতে কালো আমেরিকানদের তৈরি করা একটা মিউজিক ঘরানা, অনেকটা জাজ মিউজিকের মত।
হ্যাঁ, প্রফেসর স্কট রেনল্ডস নেলসন। প্রকাশিত হয়েছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে।
বুঝতে পারলাম না। আমি আবারও পড়লাম, কোনো বিঘ্ন চোখে পড়লো না আমার। পুরো বক্তব্যটাই প্রফেসর নেলসনের, আমার নয়।
আপনার লিখা বরাবরই মনকে ছুঁয়ে যায় , এবারো ছুঁয়ে গেলো । অভিনন্দন রইল ফরিদ ভাই । (Y)
@ধ্রুবনীল,
মনটাকে আর্দ্র করে দিলেন দাদা। এমন পাঠক পাওয়া সাত জনমের ভাগ্য। 🙂
চমৎকার কিছু তথ্য জানা গেল ফরিদ ভাই। অসংখ্য ধন্যবাদ।
শেষ লাইনটাতে প্রফেসর গার্স্ট এর বদলে প্রফেসর নেলসন হবে না?
@অভিজিৎ,
না, গার্স্টই হবে। পুরো বক্তব্যটাই প্রফেসর নেলসনের। তিনি জন হেনরিকে নিয়ে প্রবন্ধ এবং পরে বই লেখার পর থেকেই প্রফেসর গার্স্ট তাঁর পিছনে আঠার মত লেগে গিয়েছিলেন (শুধু মুক্তমনাতেই এটা করি না আমরা। 🙂 ) এটা প্রমাণ করতে যে, এই ঘটনা ভার্জিনিয়ার লুইস টানেলে ঘটে নি, বরং ঘটেছে আলাবামার ওক মাউইন্টেইন টানেলে। এ ছাড়া প্রফেসর নেলসনের ক্ষুদ্রকায় জন হেনরিকেও তিনি আসল জন হেনরি বলে মানতে পারেন নি, বরং বিশালদেহী আরেকজনকে আসল জন হেনরি বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। প্রফেসর গার্স্টের এই আঠার মত লেগে থাকা আচরণে বেশ খানিকটা বিরক্ত ছিলেন প্রফেসর নেলসন। সে কারণেই তাঁর এই কোনো কিছু বিশ্বাস না করা মনোভাবকে বিদ্রুপ করেছেন এই বলে যে, আমি যদি মেশিন এবং মানুষের লড়াইয়ের আলোকচিত্রও খুঁজে বের করে প্রমাণ হিসাবে দিতাম, তাতে করেও প্রফেসর গার্স্ট বিশ্বাস করতেন না। বরং ছবিটা আসল ছবি কি না, সেটা নিয়েই বিতর্ক শুরু করে দিতেন।
ফরিদ ভাই, লেখাটা পড়ে মনটা ভালো হয়ে গেল। তবে তার চেয়েও বেশী ভালো লাগলো যখন দেখলাম এত কষ্ট করে তর্ক বিতর্কের রামায়ণটা শেষ করার পর আপ্নে কইলেন ‘হে হাবা পাঠক গোষ্ঠী, তোমরা আবারও পড়িয়া প্রমাণ করিলে যে তোমরা হাবা। এতক্ষণ অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে যাহা পড়িলে তাহা না পড়িলেও চলিত, জন হেনরিকে নিয়ে নেলসন এবং গার্স্টের তর্ক বিতর্কে আমরা যাবো না।…” :-Y ।
@বন্যা আহমেদ,
তোমার মন্তব্য পড়েতো এখন নিজেরেই হাবা লাগতেছে। কী লিখছি কে জানে? :-Y
আসল জন হেনরি কে এটা নিয়ে বিশাল বিতর্ক রয়েছে। আমেরিকার আদি স্টেটগুলোর প্রায় সবাই-ই কোনো না কোনো সময় জন হেনরি যে তাদের লোক এই দাবি নিয়ে হাজির হয়েছে।
নেলসনের বইটা মোটামুটি মাঝারি সাইজের। দুইশো চৌদ্দ পৃষ্ঠার। এই বইয়ে অসংখ্য তথ্য দেওয়া যেগুলো দিয়ে নেলসন প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, জন হেনরি নিউ জার্সির লোক, গৃহযুদ্ধে ইউনিয়ন আর্মির হয়ে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল এবং ভার্জিনিয়ার লুইস টানেলে কাজ করেছে সেখানকার জেলখানায় থাকার সময়ে। এর সব তথ্য মুক্তমনার এই প্রবন্ধে আনা সম্ভব ছিল না আমার পক্ষে। এই বইটা লেখার আগে তিনি একটা প্রবন্ধ লিখেছিলেন হু ওয়াজ জন হেনরি নামে। বইটাকে বাদ দিয়ে এই লেখাটার উপর নির্ভর করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অনলাইনে কোথাও পাওয়া গেলো না। লেবার পত্রিকায় আছে, কিন্তু ডাউনলোড করতে গেলে পয়সা চায়। 🙁 অগত্যা বই-ই ভরসা।
অন্যদিকে এই মতের বিপক্ষে মত দিয়েছেন জন গার্স্ট। তিনি সন্দেহাতীতভাবে (বিয়োন্ড এনি রিজনেবল ডাউট, ঠিক এই শব্দটা ব্যাবহার করেছেন) দাবি করেছেন যে, জন হেনরি মিসিসিপির একজন প্রাক্তন দাস ছিল। মেশিন এবং মানব পেশীর এই লড়াই হয়েছিল আলাবামার ওক মাউইন্টেইন টানেলে। এই ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী হিসাবে দাবি করা সি সি স্পেন্সার নামের এক লোকের সাথে পত্র আদান প্রদানের মাধ্যমে তিনি এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এখন কথা হচ্ছে যে, আমরা কোনটাকে বিশ্বাস করবো? পণ্ডিতদের এই প্রচণ্ড লড়াইয়ে আমরাতো প্রাণভয়ে ভীত পক্ষীতুল্য। সে কারণেই এই সিদ্ধান্তটা চাপিয়ে দিতে হয়েছে যে এই বিতর্কে আমরা যাবো না। পাঁচ ফুট এক ইঞ্চির ক্ষুদ্রমানব জন হেনরির চেয়ে বিশালকায় হাতুড়ি হাতের দানবীয় শক্তির কিংবদন্তি জন হেনরিই না হয় আমাদের পাশে থাকুক। হোক না তা কাল্পনিক। ক্ষতি কী? সাহসটাতো বাড়ে। 🙂
@বন্যা আহমেদ, ইশ এত জোড়ে মাথায় বাড়ি দিচ্ছেন কেন? আপনার এই অবস্থা দেখে ওই গানটার কথা মনে পড়ে গেল, কান্দিস নারে বিন্দিয়া কি আর হবে কান্দিয়া, যা পড়িবার তাতো আর দেয়া যাবে না ফেরতাইয়া 🙂
জন হেনরীর হেমার এর সাথে কোথায় যেন মিল পাওয়া যাচ্ছে, বুঝতে পারছি না…. :-s
কাজের কাজ একটা হয়েছে যে আপনার এই দশা দেখে আমার মাইগ্রেন পেইন ভালো হয়ে গেছে :))
(D)
@নিলীম আহসান,
আমি দেয়ালের হবো প্রতিদ্বন্দ্বী
আমি দেয়ালের হবো প্রতিদ্বন্দ্বী
বন্যা আহমেদ বলে মাথা ঠুকে
দেয়ালের সাথে চলে মাথা ঠোকার পাল্লা
কে আর বলো তারে রোখে
হো হো হো হো- কে আর বলো তারে রোখে।।
@নিলীম আহসান,
আমার এই তুচ্ছ লেখাটার জন্য একগাদা দুর্ধর্ষ ধরণের ব্যানার করে দিয়েছেন নিলীম।
কৃতজ্ঞতা রইলো নিলীমের প্রতি। (Y)
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2012/05/johnhenry_banner_004.png[/img]
ঐ সময়ে কালো আর সাদাদের বৈষম্যের একটা চিত্র মনে হয় এই লাইন থেকে বোঝা যাবেঃ
গ্রোসারী স্টোরে কী রাখত আল্লা মালুম!
@সাইফুল ইসলাম,
ভার্জিনিয়ার প্রিন্স জর্জ কাউন্টির সিটি পয়েন্ট শহরের ওয়াইজম্যান’স গ্রোসারি নামের একটা গ্রোসারিতে চুরির অভিযোগে জন হেনরিকে দশ বছরের সাজা দেওয়া হয়। সাম্ন্য একটা চুরির কারণে এত বড় শাস্তি কেন, সেটাকে হিসাবে নিয়ে এলে সহজেই সেই সময়ে কালোদের সামাজিক অবস্থান টের পাওয়া যায়।
১৮৬৩ এবং ৬৪ সালে প্রিন্স জর্জ কাউন্টি যুদ্ধের একটা গুরুত্বপূর্ণ রণাঙ্গনে পরিণত হয়। সিটি পয়েন্টে ইউনিয়ন বাহি্নী জড়ো হয়। এই বাহিনির বেশিরভাগ যোদ্ধাই ছিল কালো। এখান থেকে মাত্র চল্লিশ মাইল দূরে পিটারসবার্গকে ঘিরে জলাপূর্ণ অঞ্চলে ট্রেঞ্চ খুঁড়ে অবস্থান নিয়েছিল কনফেডারেট বাহিনী। উদ্দেশ্য ছিল ইউনিয়ন বাহিনীর হাত থেকে পিটাসবার্গকে রক্ষা করা। এখানেই দুই বছর ধরে ইউনিয়ন বাহিনী বিপুল শক্তি নিয়ে বারবার হামলা চালায় এই রক্ষাব্যুহ ভাঙার জন্য। শেষ বছরে এসে সফল হয় ইউনিয়ন বাহিনী। কিন্তু এই যুদ্ধে দুইপক্ষের বিশ হাজার লোক মারা যায় এখানে। সেই সমস্ত লাশ পড়ে থাকে প্রিন্স জর্জ কাউন্টির জলাভূমিতে।
এই বিপুল পরিমাণ লাশ নিয়ে বাণিজ্য শুরু হয়ে যায়। সার কারখানাগুলো সার তৈরির জন্য মৃত মানুষে হাড়গোড় কেনা শুরু করে। সামরিক বাহিনীও এই বাণিজ্যে লিপ্ত হয়ে যায়। অসংখ্য সৈন্য এবং সাধারণ মানুষকে কাজে লাগানো হয় লাশ উত্তোলনের কাজে। জন হেনরি ছিল তাদেরই একজন।
গৃহযুদ্ধের কারণে যে বিপ্লব তৈরি হয়েছে তাকে প্রতিহত করার জন্য ভার্জিনিয়া কালোদের বিরুদ্ধে কঠিন কঠিন আইন তৈরি করতে থাকে। এগুলোকে সমালোচকেরা ব্লাক কোড হিসাবে অভিহিত করেছিলেন। এই আইনে কেউ যদি বিনা কারণে শহরের মধ্যে ঘোরাঘুরি করতো, সেক্ষেত্রেও ভবঘুরেমির জন্য তার সাজা হয়ে যেতো। আপাত দৃষ্টিতে এই আইন ছিল বর্ণ নিরপেক্ষ। কিন্তু খুব দ্রুত দেখা গেলো যে যাদেরকে গ্রেফতার করে কোর্টে চালান করা হচ্ছে তারা সবাই-ই কালো।
জন হেনরি এরেস্ট হয় ফ্রিডম্যান ব্যুরো নামের একটা ফেডারেল এজেন্সির হাতে। এই এজেন্সি গড়ে উঠেছিল ইউনিয়ন আর্মির হাতে। যুদ্ধের পরে এদের হাতে বিপুল পরিমাণ ক্ষমতা চলে যায় (অনেকটা এখনকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মত)। এদের হাতে এরেস্ট হবার পরে একজন কালো ব্যক্তি ন্যায় বিচার পাবে কী পাবে না, তার পুরোটাই নির্ভর করতো দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের উপর।
জন হেনরির দুর্ভাগ্য যে, তাকে এরেস্ট করা অফিসার চার্লস বার্ড ছিলেন কালোদের প্রতি প্রচণ্ড রকমের অসহনশীল একজন ব্যক্তি। “অবাধ্য” এবং “বিশৃঙ্খল” কালোদের সুশৃঙ্খল করাই ছিল তার মূল কাজ। ঠিক কী অপরাধে বার্ড জন হেনরিকে এরেস্ট করেছিল সে বিষয়ে কোনো রেকর্ড পাওয়া যায় না।
কাউন্টি কোর্টে হস্তান্তরের পরে যায় যায় যে, ওয়াইজম্যান’স গ্রোসারিতে চুরির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ওয়াইজম্যান’স স্টোর নামেই গ্রোসারি। আসলে ছোট্ট একটা মুদি দোকান ছিল যেখানে মদ টদও বিক্রি করা হতো। কিন্তু দোকানে চুরির অভিযোগ গুরুতর কোনো অপরাধ নয়। রাতের বেলা দোকান ভেঙে চুরি করলে অন্তত বিশ ডলারের জিনিস চুরি না গেলে সেটাকে বার্গলারির আওতায় ফেলা যায় না। কিন্তু এই দোকানের পুরো সম্পত্তির মূল্যই ছিল মাত্র পঞ্চাশ ডলারের। আবার অন্যদিকে দিনে দুপুরে লুকিয়ে হাতছাফাই করলে সেটা শপলিফটিং এর আওতায় পড়ে। সামান্য অপরাধ, এর বিচার কাউন্টি কোর্টে হতে পারে না।
এই সমস্যা এড়াতে জন হেনরির বিপক্ষ উকিল ওয়াইজম্যান’স গ্রোসারিকে বসতবাটি বানিয়ে দেয় এবং তালাভেঙে ঢুকে চুরির অভিযোগ আনে। আর এই গুরুতর অপরাধেই দশ বছরের সাজা হয়ে যায় তার।
এইবার সাইফুল মিয়া নিশ্চয় বুঝতে পারতেছো যে তোমার আর আমার মত গাত্রবর্ণের মানুষ কত ভাগ্যবান। আল্লাহর কাছে শোকর আদায় করা উচিত এইজন্য যে, এই যুগে বাংলাদেশে জন্ম হইছে আমাদের। ওই সময় আমেরিকায় জন্মাইলে খবরই ছিল। 🙂
@ফরিদ ভাই,
কোন সন্দেহ নাই। 😀 😀
ফরিদ সাহেব, আমাদের তো আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করার উপায় আছে, কিন্তু কৃষ্ণাংগদের সেটা আছে বা ছিল কি? যে সময়ে কৃষ্ণাঙ্গরা এভাবে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে আমেরিকায়, ঠিক সেই সময়েই আল্লাহর সুপ্রিয় বান্দারা কৃষ্ণাংগদের নিজ বাসভূমি থেকেই তাদেরকে লাখে লাখে শিকার করে এর চেয়েও ব্যাপক অত্যাচার ও দুঃখ-দুর্দশার শিকার করেছে।
যাহোক, জন হেনরীর উপর আলোকপাত করার জন্য শুকরিয়া। ফকির আলমগীরের গান শুনার পর হেনরী সম্পর্কে অনেক ভেবেছি — কে সে ব্যক্তি? আজ কিছুটা ধারনা পাওয়া গেল।
@আলমগীর হুসেন,
আর বাংলাদেশের হিন্দুদের বা চাকমাদের এই সময়েও জন্ম নিয়ে খবর হচ্ছে। আল্লাহর কাছে শোকর আদায় করা উচিত যে আমরা হিন্দু বা চাকমা হয়ে এই যুগে বাংলাদেশে জন্মাই নি।
@আলমগীর হুসেন,
আমি আর সাইফুল এই দুজন হচ্ছি ঘোর কৃষ্ণবর্ণ মানুষ। ঘরের মধ্যে হাজার ওয়াটের আলো জ্বললেও ক্যামেরায় আমাদের ছবি আসে না। থিকথিকে আন্ধার আসে। ঊনবিংশ শতাব্দীর আমেরিকাতে জন্মালে দাস হিসাবে হয় কোনো, প্লান্টেশনে, না হয় কোনো খনিতে, কিংবা কোনো রেললাইন বানানোর জায়গায় কাজ করে করে জীবন অবসান হতো আমাদের। কিন্তু তার বদলে আমরা জন্মেছি বাংলাদেশে। নিকষ কালো বলে কেউ ফিরে টিরে তাকায় না, সে দুঃখ মনে একটু আছে, তবে দাস হতে হয় নি বলে প্রভূত আনন্দও আছে প্রাণে। সেই খুশিতেই আল্লাহর কাছে একটু শোকর করলাম। আর সেই সামান্য লেজটাকে ধরে পুরো ডাইনোসরটাকেই টেনে বের করে ফেললেন আপনি। কামেল লোক বটে। মাশাল্লা। 🙂
হেমাঙ্গ বিশ্বাসের কন্ঠে ‘জন হেনরি’ শুনে কখনো কোন প্রশ্ন মনে উদয় হয়নি। কে এই? মনে হতো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠার মন্ত্রণা।
অনেক পরিশ্রম করে যে তথ্যগুলো আমাদের সামনে নিয়ে এলেন; আমিও সন্দেহের দোলাচলে এগিয়ে যেতে যেতে, ভাবছিলাম, হোক মিথ্যে, তবুও এ এক সত্য। জেগে উঠার মন্ত্রণা।
তারপর,আপনি খুব চমৎকারভাবে অন্য এক বাস্তবতাকে আমাদের চোখের সামনে নিয়ে এলেন, আর তাতে আমরা আমাদের মনের দুয়ার খুলে দেখতে পেলামঃ
সৃজনশীলতা, মনে হয় একেই বলে। এটা সবাই পারে না, কেউ কেউ পারে।
আরো একধাপ এগিয়ে গিয়ে, মাথা উঁচিয়ে জানান দে’য়াঃ
এধরণের লেখায় শুধু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ নয়, মানবিক বোধ খুব জরুরী। আপনি তথ্য-উপাত্ত উপস্থিত করে, বোধের জায়গাটা খুব বেশি করে ছুঁয়ে গেছেন,আপনাকে অভিনন্দন।
এই বোধটুকু যেন আমরা সবাই অর্জন করতে পারি।
@স্বপন মাঝি, আপনার সাথে একমত (Y)
@নিলীম আহসান,
মে দিবস উপলক্ষে আপনি যে ব্যানারগুলো করেছেন, এক একটা লেখাকে ঘিরে; আপনাকে অভিনন্দন, অভিনন্দন!
একেই মনে হয়, বলা হয় সৃজনশীলতা।
@স্বপন মাঝি, ব্লাসড (*)
অনুপ্রেরণার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ 🙂 (D)
@স্বপন মাঝি,
আপনার মন্তব্যটা পড়ে মুগ্ধ হলাম। (F)
সেটাই। জন হেনরি মানেই প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দুরন্ত দুঃসাহস।