আমাদের সময়ের একদল নায়ক (৭-৯)
কবিতা
আদনান আদনান


আমি কবিতা লিখিনা। কবিতা লেখা মেয়েলি পুরুষদের কাজ। আমি কবিতার সংজ্ঞা সৃষ্টি করি। কবির থেকেও আমার কাজ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমিই নির্ধারণ করি কোনটি কবিতা, আর কোনটি কবিতা নয়। শ্লীল-অশ্লীল সম্পর্কেও আমার অনেক ধারণা রয়েছে। এ-সব নিয়ে তর্ক করে লাভ নেই। আমি যদি বলি অশ্লীল, তবে তা অশ্লীল। আমি যদি বলি ছাপানো যাবেনা, তবে তা ছাপানো যাবেনা। আমি কবিতার ধর্ষকও। যেমন, সবার সামনেই ষষ্ঠ নায়কের বাক্-স্বাধীনতা কেড়ে নিলাম, কিন্তু কেউ কিছুই বললোনা। ষষ্ঠ নায়কের বক্তব্যকে উলঙ্গ করে ছেড়ে দিলাম। আমার মতো অন্য অনেকেই সুখ পেলো। অনেকেই উৎসাহো দিলো আমাকে। আমি গর্বীত। আমার জন্ম সার্থক। আমি একজন মুক্তমনা।


আমি এক চরম বিবেকবান মানুষ, চরম বুদ্ধিমানও। আমার বাপের আয় ১০ টাকা, কিন্তু তার খরচ ১০০। বাকি টাকা সে পায় কোথার থেকে? তার বাপতো তার জন্য কিছুই রেখে যায়নি। তাহলে বাকি টাকা মাসের পর মাস আসে কোথার থেকে? তাকে তো খুব হাসি-খুশিই দেখা যায়। বাড়ির কাজের মেয়েটার দিকে যেভাবে তাকায়, তাতে তো মনে হয় খুব শীঘ্রই সে মেয়েটাকে ছিড়ে-ফেড়ে ফেলবে। মাত্র কিছুদিন আগেও তো তার কাছে কোনো মালই ছিলোনা! দু’টাকার জন্য দু’সপ্তাহো হাত পেতে থেকেছি। তারপরে পেয়েছি অর্ধেক।
তবে কি সে ঘুষ খায়? না, তা খাবে কেনো? আমার বাপও তো একজন বিবেকবান ও বুদ্ধিমান মানুষ।


আমি অলৌকিক বাঙলাদেশের স্রষ্টা। আমার দেশে সাংবাদিক খুন হয়, কিন্তু খুনি খুঁজে পাওয়া যায়না। সরকারই জন্ম দেয় সংবাদপত্রের খবর। প্রধানমন্ত্রী ফালতু কথা বলে, কিন্তু তাকে থামানো যায়না। মন্ত্রী সকালে পদত্যাগ করে রাতে আবার মন্ত্রী হন। মন্ত্রীদের গাড়িতে বস্তা-বস্তা টাকা পাওয়া যায়। মন্ত্রীদের বাড়িতে পাওয়া যায় নারীদের ধর্ষিত লাশ। আমার বেশ্যা দেশের যোনিতে নড়েচড়ে ভারতের দশ আঙ্গুল, আর স্তনে খুঁজে পাওয়া যায় দাঁত দিয়ে খুবলে নেওয়া রক্তাক্ত গর্ত। আমার দেশে মানুষ মরে শিয়াল-কুকুরের মতো। আমার দেশ প্রতিদিন নতুন করে সাজে, প্রতিদিন তার সবকিছুর দাম বাড়ে আরো একবার। সবাই এ-সবের কারন খোঁজে। আমি বলি, এ-সবই অলৌকিক। তাই আমার দেশে মানুষ গুমও হয়।

চলবে – – –