লিখতে বসে আজকাল আজব এক সমস্যায় পড়ছি। মাথার মধ্যে কাজ করতে থাকে ভালো কিছু লিখতে হবে। কার্যকর, তথ্য সমৃদ্ধ, শিক্ষামূলক, আর কজের কিছু লিখতে হবে। এমন কিছু লিখতে হবে যেন পাঠকের কিছু পাবার থাকে সেখান থেকে। এতকিছু মাথায় নিলে কিছু দূর লেখার পরে দেখা যায় লেখাটা হয়েছে উচ্ছে ভাজির মত। ভিটামিন মিনারেল সমৃদ্ধ, কিন্তু বিদঘুটে তিতা। অন্যভাবেও চেষ্টা করেছি। মানে, কীবোর্ডে হাত রেখে নিয়ত করেছি সুখ দুঃখের কথা মনে যা আসবে তাই-ই লিখে ফেলব। কোনো বাছ বিচার নাই। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয় না। এক দেড় পাতা পরে মনে হয় কোনো এক অসুখী কিশোরীর আত্মকথা লিখেছি যেন!

কিন্তু তাহলে নিজের উপর কেন এই অনর্থক জোরাজুরি? লেখার যদি কিছু না-ই থাকে, চুপ চাপ পড়লেই হয়। আসলে এ কথাটাও সত্যি না। অনেক কিছু জমে গেছে বলার মত। কিন্তু এক এক করে সবগুলো নিয়ে বলার ক্ষমতাই মনে হয় নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাই ওপথ আর না মাড়িয়ে সবকিছু নিয়ে কয়েক লাইন করে লিখে ফেলবো ভাবছি। বোঝাগুলো তো নামুক।

১) বুদ্ধিমত্তা যখন বোঝা-
শুরু করি ইন্টারেস্টিং একটা ফরাসি বই দিয়ে। নাম ‘হাউ আই বিকেম স্টুপিড’ তর্জমা- ‘যেমনে বোকা হলেম’। লেখক মার্টিন পেজ। আমি পড়েছি ইংরেজী অনুবাদে। একটা স্যাটায়রিক্যাল রম্যগল্প। আমি নিশ্চিত মুক্তমনার সবাই এই গল্পের সাথে দারুণ রিলেট করতে পারবেন। বইটা আকারেও ছোটোখাটো। প্রধান চরিত্র ‘অ্যান্টনি’ ছোটোবেলা থেকেই প্রচণ্ড বুদ্ধিদীপ্ত, এবং চিন্তাশীল। যথারীতি চিন্তাশীলতার মূল্যও তাকে দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কারণ তার চিন্তা তাকে ক্রমাগত অসুখী করে তুলছে। সে তার আশে-পাশে স্টুপিড মানুষদের প্রতিদিন দেখে, কী দারুণ সুখে আর নির্ভাবনায় দিন কাটাতে। কিন্তু তার মাথায় নানান রকম ভাবনার ভার। ধর্মীয় গোড়ামি নিয়ে চিন্তা, তৃতীয় বিশ্ব নিয়ে অপরাধবোধ সহ নানাকিছু। এসব থেকে সে মুক্তি চায়। তাই, নিজের বুদ্ধিমত্তা কমানোর নানান রকম ফন্দি বের করে। যেমন প্রথম ফন্দিটা হচ্ছে ‘পাড় মাতাল হয়ে যাওয়া’। নিজে কখনো মদ্য স্পর্শ করেনি। কিন্তু বেশি করে এটা খেলে মানুষের বোধ লোপ পায় দেখেছে সে। অতয়েব পাড় মাতালই হতে হবে তাকে। এর জন্য প্রথমে লাইব্রেরীতে গিয়ে নানান রকম ওয়াইন আর লিকার, এদের প্রস্তুতপ্রনালী থেকে শুরু করে রাসায়নিক গঠন, মেডিক্যাল ইমপ্লিকেশন, সব কিছুর উপর বই পড়ে ফেলে। তারপর একদিন বিসমিল্লাহ বলে ঢুকে পড়ে বাড়ির সামনের সুড়িখানায়। চমৎকার গল্পটা এখান থেকে চলতে থাকে…

২) ক্যামেরন হাইল্যান্ড-
আমাদের গ্রুপের পোলিশ ছেলে জেড। সেদিন বললো, নেক্সট উইকেন্ডে কি করছো? চলো ক্যামেরন হাইল্যান্ড থেকে ঘুরে আসি। ক্যামেরন হাইল্যান্ডে আগে গেছি। অপার্থিব সুন্দর একটা যায়গা। কিন্তু মঙ্গল বারেই ক্রিপ্টোগ্রাফির কিছু প্রবলেম সমাধান করে জমা দিতে হবে। টানা দুদিন না খাটলে গাণিতিক সমস্যা গুলো সমাধান করা সম্ভব না। এসব সাতপাচ ভেবে আমি আর কিছু বলিনি। শুক্রবার রাতে জেড মেইল করে সুধালো, ‘ওহে প্রবলেম সেটটা মেইল করো তো আমাকে’। মেইল করে দিলাম। কিন্তু নিজে খুলেও দেখিনি। তারপর উইকেন্ড কেটে গেল ঘুমিয়ে আর ফেসবুকিয়ে। সোমবারে জেড যখন তার সমাধান সেট নিয়ে এলো আমার সাথে আলাপ করতে, তখনও কিছু করিনি। ওদিকে জেড ঘুরে এসেছে ক্যামেরন হাইল্যান্ড। ভাবুন তো, কটেজের ব্যালকনিতে বসে আছেন। সামনে পাহাড়সারি, ঝাপসা হয়ে আসা লক্ষ বছরের পুরাতন বনভূমি, আকাশে মৃদু কুয়াশা আর মেঘ ছোয়া পূর্ণিমা চাঁদ, সামনে চমৎকার কিছু গাণিতিক সমস্যা, আর হাতে ধুমায়িত এক মগ কফি, কিংবা হুইস্কির গ্লাস। এর চেয়ে স্বর্গীয় আর কি হতে পারে? আর আমি কি না সিঙ্গাপুরের গরমে বসে বসে ফেসবুকে কোনো এক অবুঝকে বিবর্তন শিক্ষা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে সময় কাটালাম। গাণিতিক সমস্যাগুলো নিয়ে বসলেও তো সময়টা ভালো কাটতো একটু! কেন গেলাম না? স্রেফ ঘরকুনো বলেই। বা ল্যাক অফ ইমাজিনেশন। এই ব্যাপারগুলো শিখছি ইউরোপীয়দের থেকে। যাই হোক শেষ খবর এই যে, জেডের সময় একটু আগে যেমন বললাম তার চেয়েও ভালো কেটেছে। কারণ যাওয়ার পথে দুই সুইডিশ বালিকার সাথে তার পরিচয় হয়ে যায়। তারা এক সঙ্গে ছিলো। তাদের একজন ফিরে গেছে দেশে। আরেকজন থেকে জেড পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কোনো সুখই আন-মিক্সড না। হা হা হা…

৩) কয়েকটা কিউবিট-
প্রথম প্রথম যখন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করতাম। কয়টা ভেরিয়েবল কয়টা বাইট ব্যবহার করলাম, তা নিয়ে পুঙ্কখানূপুঙ্খ হিসাব করতাম। চেপে চিপে দুয়েকটা বিট কম ব্যবহার করলেই নিজেকে দারুণ সফল মনে হতো। কারণ প্রোগ্রামিং সত্যিকারে শিখেছি (কা)নুথের মাস্টারপিস ‘দ্য আর্ট অফ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং’ বইটা পড়ে। ওখানে মিক্স নামক এক হাইপোথেটিক্যাল কম্পিউটারে মিক্স অ্যাসেম্বলি বা মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজে প্রোগ্রামিং করতে হয়। এর আগে অন্যান্য হাইলেভেল ল্যাঙ্গুয়েজে টুক টাক ‘হেলো ওয়ার্ল্ড’ লেখা হয়েছে। কিন্তু সত্যিকারের প্রোগ্রামিং করেছি মিক্স এ। যারা বইটা দেখেছেন তারা হয়তো ভাবছেন এই বই দিয়ে শেখার কুবুদ্ধিটা আমার মাথায় এলো কিভাবে! কারণ নুথএর এই বই দুনিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত আর দুর্বোধ্য বইগুলোর একটা। বইটা যতটানা প্রোগ্রামিং এর তার চেয়ে বেশি গণিতের। আমি তো আর অত কিছু জানতাম না। গণিতপাগলা মানুষ। দোকানে গিয়ে নানান রকম প্রোগ্রামিং এর বই উলটে পালটে এই বইটাতে অনেক সুস্বাদু ইকুয়েশন দেখতে পেলাম। অমনি কিনে ফেললাম আরকি! পরে যখন বাস্তব জগত এ প্রগ্রামিং এ সবাইকে দেদারসে ১০২৪ বাইটের ক্যারেকটা অ্যারে ডিক্লিয়ার করতে দেখতাম তখন মনে হতো, ওরা পানি অপচয় করছে! রীতিমত মানসিক কষ্ট পেতাম!! নুথের এই বইটা লেখা, অনেক আগে। আধুনিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলো সৃষ্টি হওয়ারও বেশ আগে ইন ফ্যাক্ট। তবে তখনকার এই বাড়তি সাশ্রয় শিক্ষার ফল পাচ্ছি এখন। কাজ করছি কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এ। মানুষ এখনও বড়জোর সাত-আট টা কিউবিট (কোয়ান্টাম কম্পিউটারের বিট) বানাতে পারে এক সঙ্গে। তাই কিভাবে সাতটার যায়গায় পাঁচটা কিউবিট ব্যবহার করে কোণো ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটকল বা অলগরিদম ইমপ্লিমেন্ট করবে তাই নিয়ে এখানে ফিজিসিস্টদের গলদঘর্ম হতে দেখি। আমি নিশ্চিত কয়েক বছর পরে এমন সময় আসবে, যখন গিগা গিগা কিউবিট ওয়ালা কোয়ান্টাম কম্পিউটার হাতে তখনকার ছেলে মেয়েরা আমাদের এইসব গল্প শুনে হাসবে, অথবা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারবে না!! সেই ভ্যাকুয়াম টিউবের যুগের কথা ভাবুন। তখনকার কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের মত অবস্থা আরকি। তবে এই যে একটা নতুন বিষয়ের একেবারে শুরুর সময়ে আছি। আমাদের হাত ধরেই শৈশব-কৈশোর উত্তীর্ণ করছে ‘দ্য নেক্সট প্যারাডাইম শিফট’। এই ব্যাপারটা তে নিজেকে দারুণ ভাগ্যবান মনে হয়। যেমন ‘প্যারালাল ইউনিভার্স’ আছে কি না, সেটা পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ কয়া সম্ভব কোয়ান্টাম কম্পিউটারে ছোট্টো একটা প্রোগ্রাম লিখেই। যদি এই তত্ব সঠিক হয় তাহলে ঐ প্রোগ্রামে এক রকম আউটপুট আসবে, না হলে আরেকরকম! ভৌত জগত নিয়ে এমন আরও সব গভীর সমস্যার সমাধান সম্ভব এটাতে। তবে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে নাকি ‘ড্রাগ ডিজাইন’ করতে। মানে ওষুধ পাতি বানানো। এখনকার ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারে মলিক্যুলার সিমুলেশন করা ভার্চুয়ালি অসম্ভব। কারণ ঐ স্তরে প্রকৃতি কোয়ান্টাম মেকানিক্স মেনে চলে। ফলে বর্তমান সিমুলেশনে ক্রুড অ্যাপ্রক্সিমেশন পাই আমরা। কোয়াণ্টাম কম্পিউটার এসে গেলে, কোনো একটা রোগ এর জন্য কী ধরনের ড্রাগ কাজে লাগতে পারে, সেটা একটা প্রোগ্রাম চালিয়েই বের করে ফেলা সম্ভব হবে। সম্ভব হবে আরও অনেক অনেক কিছু। পৃথিবীটা আমূল বদলে যাবে।

৫) কিউব স্যাট-
এখানে একটা গ্রুপ একটা কিউব স্যাট বানিয়েছে। মহাকাশে কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল কিছু পরীক্ষা করার জন্য। সেদিন সেমিনার রূমে গিয়ে দেখি টেবিলের উপর রাখা। নেড়ে চেড়ে দেখলাম। আর কদিন পরেই এটা চলে যাবে মহাকাশে। ছোট্টো ঘনাকার বস্তুটা হাতে নিয়ে এই ব্যপারটা কিছুতেই কনসিভ করতে পারছিলাম না! কয়েকবছর আগের নিজেকে যদি কল্পনা করি। তখনও কি এমন কিছু ভাবতে পেরেছি? আর এখন ভালো কোনো আইডিয়া থাকলে, নিজেই একটা কিউব স্যাট পাঠিয়ে দিতে পারবো মহাকাশে। এই স্বাধীনতাটা এখনও হজম হয়নি।

৬) অনন্ত নক্ষত্রবীথি –
ফেসবুকের অভিশাপ থেকে মুক্তি মিলছে না কিছুতেই। ফেসবুকের এই নেশাগ্রস্থ করে ফেলার ক্ষমতাটা মনে হয় কোনো একটা বিবর্তনীয় সাইড ইফেক্ট। আমরা কৌতূহলী প্রাণী। বিবর্তন আমাদেরকে ‘ইনফরমেশন’ নামক বস্তুটাকে দাম দিতে শিখিয়েছে। ঠিক যেমন চিনি আমাদের মিষ্টি লাগে। এর কারণ তো আর ‘চিনি মিষ্টি’ তা না, বরং চিনি শরীরে কাজে লাগে যে কারণে বিবর্তন আমাদের রিওয়ার্ড সিস্টেমকে এভাবেই প্রোগ্রাম করে ফেলেছে। এ ধরনের প্রোগ্রামিং এর সাইড ইফেক্টও আছে অনেক। যেমন স্যাকারিনও আমাদের মিষ্টি লাগে। যদিও ওটা বেশ ক্ষতিকরই! একই ভাবে কোথায় কী হলো, কে কী বললো, কই গেল, সেই যায়গা দেখতে কেমন, এসব তথ্য গ্রহন করতেও আমাদের ভালো লাগে। ফসবুক তাই হয়ে বসেছে আমাদের স্যাকারিন। এতে যে ক-মিনিট সময় দেই, সেটা গোনায় না ধরলেও, এর ফলে ব্রেইনে যে ডিকোহেরেন্স সৃষ্টি হয়, সেটা বাকি পুরো দিনটাতেই (কখনও কয়েকদিন) সৃষ্টিশীল বা মনন শীল চিন্তাকে অসম্ভব করে তোলে। এর মধ্যে আছে দেশের খবর। সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ। সরকারী গুম খুন। হরতাল। মানুষ পুড়িয়ে মারা। রোড অ্যাক্সিডেন্ট।… এত এত দুঃসংবাদ পাই প্রতিদিন এই ফেসবুক থেকে। দেশে পরিবারের জন্য দুঃশ্চিন্তায় থাকি। দুঃশ্চিন্তায় থাকি পুরো দেশটাকে নিয়েই। কিন্তু এখান থেকে আমার কী করার আছে এ নিয়ে? কেন নিজেকে এভাবে নির্যাতিত হতে দিচ্ছি বার বার। খুব ইচ্ছে হয় স্বার্থপর হয়ে যাই। গোল্লায় যাক সব। আমি মেতে থাকি বিশুদ্ধতম গণিত নিয়ে। বিজ্ঞান তো শেষমেশ, জাতি, বর্ণ, গোত্র, সময়, রাষ্ট্র সব কিছুর উর্ধে। কেপলার বা আইনস্টাইন ওরাও তো ভয়াবহ এক রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে জীবন কাটিয়েছে, গবেষণা করেছে। কিভাবে সামলালো নিজেকে? কিভাবে মনের গহীনে অনন্তনক্ষত্রবীথি নিয়ে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হলো তারা? আমি কেন পারি না? কেন এত এত বিচলিত হই সব কিছুতে? এখানে ইউরোপীয় গবেষকদের এই একটা ব্যাপারে ঈর্ষা হয়। সুপারভাইজর যখন অবাক হয়, ‘এই ছোট্টো একটা কাজ করতে তোমার এত সময় লাগলো’, ওদের কীভাবে বলি যে সাতক্ষীরার ঘটনায় আমি দুইদিন কী ভয়ানক মানসিক যন্ত্রনায় কাটিয়েছি। ওদের সৌভাগ্য ওদের দেশগুলো অমন নয়। তারপর আবার সত্যেন বোসের কথা ভাবি। এই মানুষটাই বা পারলো কী করে? ভালো বই নেই, শিক্ষক নেই। দেশে বঙ্গভঙ্গ, ইংরেজ পরাধীনতা, রায়োট, মিলিয়ে ভয়াবহ দুঃসময়। এর মধ্যে, কী যুগান্তকারী সব চিন্তা চলছে তার মাথায়। সেসব নিয়ে ক্লাসের ছাত্র বা সহ শিক্ষক, কারো সাথে আলাপ করারও উপায় নেই। প্রকৃতির গভীর সত্যগুলো একে একে ধরা দিচ্ছে তার সামনে। রচনা করে চলেছেন মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিজয়ের কাহিনিগুলোর একটা। এই এখনও, আমাদের দেশের কয়টা বিজ্ঞানের ছাত্র তার তত্ত্বগুলো জানে? কার্জন হলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বিহ্ববল হয়ে পড়তাম এসব ভেবে। এই এখানেই কোনো এক ঘরে এক তরুন শিক্ষক নীবিড় চিন্তায় মগ্ন। মানস চক্ষে দেখতে পেতাম যেন। দুর্ভাগ্য তাকে নিয়ে কয়েক স্কয়ারফুটের একটা মিউজিয়ামও নেই। আমরা আমাদের সচেয়ে গর্বের ব্যাপারগুলোকে কীভাবে হেলাফেলা করি! এভাবেই নিজেদেরকে লক্ষ্যহীন, দূরদৃষ্টিহীন করে তুলেছি আমরা। দেশের সার্বিক অরাজকতা, এসবেরই একটা ফলাফল মাত্র।

৭) তুমি না থাকলে-
“তুমি না থাকলে পৃথিবীটা এত সুন্দর হতো না।” বলুন তো, কার কথা বলছি? হ্য, ঠিক ধরেছেন। ফুরিয়ার ট্রান্সফর্ম। এই যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে বাস করছি আমরা। এই ফুরিয়ার ট্রান্সফর্ম আবিষ্কার না হলে তার কিছুই সম্ভব হতো না। (অবশ্য এভাবে ভাবার বিপদ আছে। অনেক কিছু আছে যা না থাকলেই আসলে পৃথিবী এমন হতো না।) শুধু তথ্য যোগাযোগই না, সম্ভব হতো না এযুগের কোনো কিছুই। এই ব্যাপারটা নিয়েই অপার মুগ্ধতা ভর করলো আগের দিন। কী সহজ, সুন্দর আর কার্যকর একটা বিশ্লেষণী পদ্ধতি। এমনকি আমাদের অন্তকর্ণও এমন ভাবে বিবর্তিত হয়েছে, যেটা কানে ঢোকা শব্দকে ফুরিয়ার ট্রান্সফর্ম করে ফেলে! তারপর একেক ফ্রিকুয়েন্সির অ্যামপ্লিচিউডকে একেক নিউরনের চ্যানেল দিয়ে পাঠিয়ে দেয় ব্রেইনে। যাকগে এসব নিয়ে কথা বাড়িয়ে নিজেকে আরও আঁতেল প্রমাণিত না করি। আজকের মত এটুকুই থাক।