সাতক্ষীরায় আগুন কেন?

আকাশ মালিক।

(দিদির জিজ্ঞাসার প্রতি উত্তরে)

আপনার লেখায় যে মানুষগুলোর উপর অত্যাচারের কাহিনি বিবৃত করেছেন তা নিয়ে বলার কিছু নেই, এগুলো দেখলে এক ধরণের অসহায়ত্ব গ্রাস করেতে থাকে, এটা জাতি হিসেবে আমাদের সবার ব্যর্থতা।

ভিডিওতে ধারন করা অনল, সেই লেলিহান অগ্নিশিখা আর ঐ ব্যানারগুলো দেখে মাথাটা ঠিক ছিলনা দিদি। অসহায়ত্বের গ্রাসে পড়ে মানুষ যেমন ঈশ্বরকে গালি দেয়, এ রকম বাম ঘরানার আর শিক্ষিত সুশীলদেরই যা মুখে এসেছে কিছু বলেছি। তারা যে শিক্ষিত জ্ঞানী গুনী বিদ্বান এতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আর এ জন্যেই তাদের প্রতি আমার এক প্রকার অন্ধ শ্রদ্ধা চিরদিন ছিল। এমন শ্রদ্ধা বিশ্বাস থেকেই বহু বছর আগে একদিন সেতারা হাসেম নামের এক পুরুষের কাছে অন্ধভক্তির মোহে, আবেগে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলাম। বলেছিলাম- ‘এ মণিহার আপনার নাহি সাজে’। তিনি সদালাপীদের মন যোগাতে ইসলামের সমালোচনাকারীদের প্রচুর অবজ্ঞা, তিরষ্কার, তাচ্ছিল্য অপমান করতেন। সদালাপীরা তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিয়েছিল। বস্তুত সেখান থেকেই বামপন্থি বা কম্যুনিষ্টদের সম্মন্ধে আমার জানার শুরু।

পরে তাদের একরোখা রাজনীতি, মন্তব্য, বিবৃতি, বহু ধারায় বিভক্ত তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করে বুঝতে পারলাম, মুখে যত বেশী মাটির কথা বলেন, কাজে কর্মে মাটি ও বাস্তব থেকে তারা লক্ষ যোজন দূরে বাস করেন। এ যেন আকাশে বাস করে মাটির মানুষ নিয়ে কবিতা লেখা। এমন কোন জাতীয় ইস্যু বা সমস্যা নেই যেখানে তারা আমেরিকার ষড়যন্ত্র আর বঙ্গবন্ধুর দোষ খুঁজে পান না। ঘটনার কার্য-কারণ খুঁজে বের করতে দ্বান্দিক বস্তুবাদের পরশ পাথরে ঘষে মেজে তারা সব সময়ই আবিষ্কার করতে পারেন, সকল সমস্যা এই দুই জায়গায়। তাদের বক্তব্য বিবৃতি মাঝে মাঝে শেখ মুজিব হত্যা সমর্থন ও ইসলামী জঙ্গীবাদের প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। এ দিকে সাহিত্যিক, কলামিষ্ট, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি কবিরাও তাদের মগজ, বিবেক বন্ধক দিয়ে দিয়েছেন স্বার্থলোভী রাজনীতিবিদ আর ধর্মান্ধ মূর্খদের কাছে। তাই আজ হুমায়ন আহমেদ, নজরুলকে ছাড়িয়ে মুসলমানদের কাছে পপুলারিটির উচ্চাসনে অধিষ্টিত আছেন। তিনি জাতীয় সাহিত্যিক না হয়ে মুসলিম সাহিত্যিক হতে চলেছেন। আমেরিকার হাসপাতালে বসে ব্ল্যাক ফ্রাইডের মাঝে আমেরিকার মুসলিম বিদ্বেষ আবিষ্কার করে প্রবন্ধ লিখতে পারেন, সাতক্ষীরার আগুন দেখে তার হাতে কলম উঠেনা? আর উঠলেই বা কী? তিনি তো দূর্বল কিছু হাদিস দিয়ে ধর্মেরই সাফাই গাইবেন, তার অর্থহীন নীতিবাক্য জিহাদীদের ঠ্যাংটাও শুনেনা। ঘুঘু বারবারই এসে ধান খেয়ে যায়।

এ অনাচার অত্যচার চোখে দেখেও সুশীলদের বিবেক জাগ্রত হয় না? ধর্মবাদীরা চোখের সামনে মানবতা বি্রোধী, দেশদ্রোহী শ্লোগান দিয়ে গর্জন করে সেই মাটির উপর দাঁড়িয়ে, যে মাটির নীচে ঘুমিয়ে আছেন লক্ষ মানিক সোনা? সিংহরূপী কেশর ফুলিয়ে হুংকার দিয়ে সারা দেশ কাঁপিয়ে তুলে, নারকীয় তান্ডব ঘটায়, সুশীলরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। মুসলমানরা সাতক্ষীরায় তিন ঘন্টা অবরোধ করে (ঠিক যেমনটি করেছিলেন মুহাম্মদ মদীনার বনু নাদির গোত্রের সাথে) দশটা পরিবারের মানুষের ঘর পুড়ায়, লুটপাট করে সহায় সম্পদ, চুরি করে সোনা দানা অলঙ্কারপত্র, কেউ ওদেরকে থামাতে সাহস করেনা। ঘরগুলো জ্বলে পুড়ে সম্পূর্ণ ভষ্ম না হওয়া পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপক দলের মানূষকে তারা আগুন নেভাতেই দেয় নি। এরা এতো শক্তি, এতো সাহস পায় কোথায়? আমাদের মাথায় তারা উঠলো কী ভাবে? বুদ্ধিজীবীদের মস্তিষ্কে সেই প্রশ্নটা একবারও জাগেনা? কিছুই করার নেই, বলার নেই? কলেজ ইউনিভার্সিটির টগবগে তরুণ ছাত্ররাও মাথা নত করে বসে রইলো? অন্তত নির্যাতিতদের প্রতি একটু সহানুভুতি প্রদর্শণের লক্ষ্যেও তো পত্রিকায় তারা দু-কলম লিখতে পারেন। তা পড়ে সংখ্যালঘুরা শান্তনা পেতে পারতো, কিছু মানুষ তো তাদের পাশে আছে। একমাত্র জনকণ্ঠ ছাড়া কোন দৈনিক পত্রিকা খবরটাকে তেমন গুরুত্ত্বই দেই নি। উইকিপিডিয়ায় ঘটনার বর্ণনা থেকে সামান্য উল্লেখ করছি-

A week after the attacks, the majority of the Hindu victims still remained terrorized. Members of many of the families haven’t returned to their houses

পত্রিকার ভূমিকা কী ছিল?

Main stream Bangladeshi Media completely maintained a silence over this incident. Then as the Hindu Students of Jagannath Hall of Dhaka University protested against the persecution. Bangladeshi Media highlighted this event.

কেন সবাই সবাই মুখ ফিরিয়ে নিল? হিন্দুরা আমার দেশের মানুষ না? এ দেশে জন্ম নেয়াই কি তাদের আজন্ম পাপ?

এখানে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের শতকরা পরিমানটা দেখা যাক-
১৯৪১—২৮, ০%
১৯৫১—২২, ০%
১৯৬১—১৮, ৫%
১৯৭৪—১৩, ৫%
১৯৮১—১২, ১৩%
১৯৯১—১১, ৬২%
২০০১—৯, ২%
আর বর্তমানে ৯%

এরই পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তমনায় ফরিদ আহমেদের একটি লেখা থেকে কিছুটা উদৃতি তুলে দিলাম-

পাকিস্তানের জন্মের সময়ে পূর্ববাংলায় হিন্দুর সংখ্যা ছিল প্রায় তিরিশ শতাংশ। এই তিরিশ শতাংশের হাতেই ছিল অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র হিন্দুদের প্রতি বৈরী হবার কারণে এই শক্তিকে তাঁরা কাজে লাগাতে পারেন নি। বরং তাঁদের শক্তিকে খর্ব করার জন্য রাষ্ট্র একে একে নানান ধরনের আইন-কানুন পাশ করতে থাকে। আর এতে করেই বিপন্নবোধ করতে থাকে হিন্দুরা। রাষ্ট্রের এই একপেশে আচরণের কোনো পালটা জবাব তাঁদের হাতে ছিল না। এই বিপন্নতার কারণেই শুরু হয় হিন্দুদের ভারতগামী সমুদ্রসম মিছিল। ১৯৪১ সালের আদমশুমারীতে বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলে যেখানে হিন্দুর সংখা ছিল ঊনত্রিশ শতাংশ, সেখানে ১৯৯১ সালে সেটা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশে। ২০০১ সালের আদমশুমারীতে এই সংখ্যা মাত্র ৯ শতাংশ। এই হারে চলতে থাকলে বাংলাদেশ যে একদিন হিন্দুশূন্য মোসলমানের দেশ হয়ে যাবে সে কথা বলাই বাহুল্য।

দেশ হিন্দু শুন্য এখনও হয়ে যায়নি সত্য কিন্তু মুসলমান হতে কি আর বাকী আছে? নিত্যদিন বাঘের মতো গর্জন করে, খোলা ময়দানে শিশু কিশোরদের সামনে নিয়ে, হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে হিন্দুদের দেব-দেবীর নাম ধরে হুজুরেরা তাচ্ছিল্য, তিরষ্কার, কটুক্তি অপমান করে চলেছে, আর সেই ওয়াজ ইউ টিউবে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। পারবে হিন্দুরা দলবদ্ধ হয়ে তাদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানার অভিযোগ এনে মুসলমানদের পাঁচ-সাতটা ঘর পুড়িয়ে দেবার সাহস করতে? ২৪ ঘণ্টার ভেতরে মুসলমানরা বাংলাদেশে বনি-খুরাইজার ঘটনা ঘটিয়ে ছাড়বে। কাদীয়ানীরা তা টের পেয়ে গেছেন অনেক আগেই।

অসাম্প্রদায়ীক একটি দেশের সপ্ন বাস্তবায়নে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ রক্ত দিল, জীবন দিল। যে দেশ স্বাধীন হলো অসাম্প্রদায়ীক চেতনায়, স্বাধীনতার পরে সে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা কেমন ছিলেন তা জানার জন্যে এই পর্যায়ে এসে আমি শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক অজয় রায়ের একটি লেখা স্ম্বরণ করিয়ে দিতে চাই। অজয় রায় ২০০৮ সালে তাঁর ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’ প্রতিবেদনে তিক্ত-বিরক্ত বেদনা ভরা মনে লিখেন-

’I thought that I would not write any more stories under the heading, “Bicharer Vani Nirabe Nivrite Kande … ..” Honestly speaking I am fed up with what is happening in Bangladesh as regards persecution on minorities in general on Hindus in particular.

কেন, হিন্দুরা কি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন নি? এ দেশের স্বাধীনতার জন্যে তারা কি জীবন দেন নি? মুসলমানদের মধ্যে জাতিবৈষম্য, শ্রেণী বিদ্বেষ নতুন করে কি সৃষ্টি হলো, নাকি আগে থেকেই এর বীজ অঙ্কুরিত ছিল তাদের মন ও মানসে? কোথায় এর উৎস? মুসলমানরা ভাবতে পারলো কী ভাবে যে, এ দেশ শুধু মুসলমানের? অজয় রায় তাঁর লেখায় বর্ণনা করেন-

‘In the village of Sahebabd the poor helpless Hindu families once again witnessed the terrible and shocking atrocities let loose by the local armed miscreants. On September 1, 2008 a group of armed antisocial and miscreants raided ransacking the village, forcibly evicted Hindus from their homes, and injured many in the process. The hooligans supported by the political touts not only looted the valuables of the household properties, but told the families that being Hindus they have no right to live in Moslem Bangladesh’

মুসলিম বাংলাদেশ? কে শিখায়েছে তাদের এই জাতিবিদ্বেষ, কোথা থেকে আসে সেই প্রেরণা? কেন এই অবিচার কেন এই বৈষম্য? এমন তো হওয়ার কথা ছিলনা। অধ্যাপক অজয় রায় তাঁর লেখাটি শেষ করেন একটি ছোট্ট স্বকরুণ প্রশ্ন রেখে-

In the mean while the sufferers suffer, lament and wait for the justice that never to be found and remains as illusive as ever before the very eyes of the culprits. We too lament remembering Tagore’s immortal sayings, “ Bichrer Vani Nirabe Nivrite Kande .. ’ .
This time the ‘nivrita people’ are the unfortunate Hindu minorities of an unknown village called Sahebabad. The big question mark is will the fleeing people ever come back to their ancestral homes. Who knows? Who cares for them?

প্রশ্নটা তো আমারও। Who cares for them? উৎসাহী পাঠক বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা জানতে রাহুল গুপ্তের এই লেখাটিও পড়ে নিতে পারেন। অজয় রায় প্রশ্ন রেখেছেন দেশ ত্যাগী মানুষেরা কি ফিরে আসবে? স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মুক্ত-নতুন স্বাধীন দেশে যারা ফিরে এসেছিল বা আসতে চেয়েছিল তাদের সহায় সম্পত্তির কী হলো? কীভাবে আমারই দেশের মানুষের বাড়িঘর জায়গা-জমি, কখনও শত্রু সম্পত্তি আর কখনও অর্পিত সম্পত্তি হলো এ নিয়ে সাম্প্রতিক আমাদের আদিল মাহমুদ ভাই একটি চমৎকার লেখা লিখেছেন। এ কি সেই ১৪শো বছরের পুরোনো দারুল হারব আর দারুল ইসলাম?

সরকার আর রাজনীতিবিদ? এদের কথা কী বলবো? এরাও তো তাদেরই মানুষ যারা ব্যানার হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গর্জন করছে। এই তো গত মাসে (১২ মার্চ) দিনাজপুরের নারায়ণ ঠাকুর দূর্গা মন্দির মূর্তি সহ ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়া হলো। চট্টগ্রামে কী ঘটেছিল, পত্রিকার রিপোর্টটা দেখা যাক-
February 11, 2012 : Authorities in the city of Chittagong, south Bangladesh, banned public gatherings on Friday after several Hindu temples were ransacked and vandalized by Islamic extremists. Footage of the temples shows broken windows, overturned and smashed furniture, and even statues and paintings of Hindu deities thrown to the ground or broken.

হিন্দুদের দেব-দেবীর মূর্তি ভাঙ্গলে তাদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লাগেনা? সাতক্ষীরার ঘটনায় সরকার ইতোমধ্যে আবিষ্কার করে ফেলেছে, এটা কোন সাম্প্রদায়ীক হামলা নয়। অজুহাতটা লক্ষ্য করুন- কোন এক নাদান (সম্ভবত ভুল বশতঃ) মুসলমানের একটা ঘরেও আগুন লাগিয়ে দেয় আর সেই ঘরে এক খানি কোরান শরিফ ছিল সেটাও আগুনে পুড়ে যায়। কি সর্বনাশা কথা! এখন মামলা মোকদ্দমা হবে কোরান পুড়ানোর কারণে হিন্দুদের সর্বনাশের জন্যে নয়। ঠিক যেমন নিজামীকে বন্দী করার নির্দেশ হয়, সে নিজেকে নবীর সাথে তুলনা করার জন্যে, যুদ্ধাপরাধের জন্যে নয়। নাটকের লেখক মুসলমান, স্কুলের শিক্ষক মুসলমান, নাটকে অংশ গ্রহনকারী ছাত্ররা মুসলমান আর ঘর পুড়লো হিন্দুদের। আমি বলি, হিন্দুদের আর কতোখানি ঘর পুড়লে ঘটনাকে সাম্প্রদায়ীক হামলা হিসেবে আখ্যায়ীত করা যাবে? সরকার কথা বলবে ভোটের পাল্লায় ওজন করে, তার নিজের স্বার্থ রক্ষা করে। আমার জিজ্ঞাসা, আমরা কার স্বার্থ রক্ষা করি?

আমি জানি নিরপেক্ষ বিশ্লেষণকামী বন্ধুরা আমার এই লেখাটাকে একপেশে বলে অপবাদ দিতে পারেন। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ট এলাকায় প্রভাবশালী হিন্দু কর্তৃক মুসলমানদের হেয় প্রতিপন্ন করা, নিম্ন শ্রেণীর জ্ঞান করা, সে ইতিহাসও কিছুটা জানি। হিন্দুদের বাড়ির উপর দিয়ে মুসলমানরা ছাতা মাথার উপর রেখে যেতে পারতোনা, জুতা খুলে যেতে হতো, এ সবই সত্য। আর এটা মানুষের সৃষ্টি প্রথা না ধর্মগ্রন্থ থেকে উৎসারিত তা নিয়েও তর্ক করা যায়। কিন্তু সেটা এখানে সম্পূর্ণই অপ্রাসঙ্গীক।

আপনার লেখাটা যদি মাইনরটির প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে লিখে থাকেন তাহলে তা এখানে কোনভাবেই ফুটে ওঠেনি।

না তা হয়নি। চেষ্টাও করিনি। সেটা কোন বিশ্লেষণমূলক বা গবেষণাধর্মী লেখা মোটেই নয়। প্রথমে চেয়েছিলাম শুধু ছবিগুলো দিয়ে শিরোনাম দিবো ‘ছবি কথা কয়’। নীচে এক লাইনের একটা গানের কলি লিখে দিবো- ‘জগতবাসী একবার আসিয়া/ সোনার বাংলা যাও দেখিয়ারে’। শেষে দেখলাম এ যেন ঠিক এই ঘটনার সাথে খাপ খায়না। তারপর ভাবলাম শুধু ছবি আর ভিডিও ক্লিপ্, এবং সাথে দুটো প্রশ্ন- ‘জাতির বিবেক কোথায়’? ‘সাতক্ষীরায় আগুন কেন’? ব্যস। নাহ, দুই লাইনের এতো ছোট্ট লেখা, এটা মুক্তমনায় মানায় না। প্রশ্ন দুটোর পেছনের ভাবনা (ক্ষোভও বলতে পারেন)নিয়ে কিছু একটা লিখতে হবে। তো, লেখার আগে ফটো আপলোড করতে করতে জান শেষ। একটা ফটো আপলোড করি তো পরের বার আরেকটা করতে ভুলে যাই প্রথমে কীভাবে করেছিলাম। সন্ধ্যা সাতটা থেকে ভোর পাঁচটা। হ্যাঁ, কিছুটা গার্বেজই হয়তো লিখেছি তবু-
যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয় —
তবে পরান খুলে– ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা একলা বলো রে॥

এই আর কী? জানি আমার এ অরণ্য রোদন তাদের তালাবদ্ধ কর্ণকুহরে কোন তরঙ্গ-ধ্বনি তুলতে পারবেনা, যারা লোভ আর ক্ষমতার মোহে অন্ধ ও বধীর হয়ে গেছে।

দিদি, আমরা যারা বিদেশে থাকি, বড়জোর ব্লগে লেখালেখি করে মনকে শান্তনা দিতে পারবো, স্বদেশের তরে কিছু একটা করেছি, কিন্তু আমাদের লেখা প্রাকটিক্যাল ফিল্ডে খুব একটা প্রভাব ফেলতে বা কিছু একটা ঘটাতে পারবে বলে মনে হয়না। হ্যাঁ, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা বা সমস্যা সমাধানের পথে এগিয়ে আসা সকল নাগরিকের কর্তব্য, কিন্তু শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীরা দিকনির্দেশক হয়ে সর্বাগ্রে থাকবেন এটা কামনা করা কি অবান্তর? ফারহাদ মাজহার, বদরুদ্দিন ওমরেরা কোথায়? কোথায় নব্য মুসলমান মতিউর রহমান, শফিক রেহমান, হুমায়ুন আহমেদেরা?

না, দিদি, এই নিশ্চুপ নীরবতা মেনে নেয়া যায়না। কোন একটা দূর্বোধ্য কারণে কেউ ধর্মগ্রন্থের প্রতি অঙ্গুলী নির্দেশ করতে চান না। দিদি, এই কোরান আমার একমাত্র বোনের বিয়েতে আলোকসজ্বা তো দূরের কথা, পুকুর পারে একটা তোরণ বাঁধতেও দেয় নি। বিয়ের দিনের আনন্দ জীবনে একবারই তো আসে। ঠিক না? এই কোরান আমার নিকটাত্বীয় এক মহিলার উপর সতীন চড়ায়েছে। স্বামী তাকে তালাকের হুমকি দিয়ে রেখেছিল, যেমনটি হজরত উমর দিয়েছিলেন নবীর বউদেরকে। কোথায় যাবে মহিলা? বাপের পায়ের তলায় মাটি নাই, তার উপর মহিলার নিজের কোলে দুই অবুঝ শিশু। এই ধর্মগ্রন্থ আমার বন্ধু প্রফেসার আবুলকে সাত গ্রামের মানুষের সামনে বিবস্ত্র করে মসজিদের পুকুরে গোসল করায়ে তওবাহ করায়েছে। কেড়ে নিয়েছে তার হাতের কলম। সে আজ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এ সব কিছুর উপাদান ধর্মগ্রন্থে আছে, আমি কোরান বুঝেই পড়েছি। আমার ক্ষোভটা সেখানেই দিদি। এখনো আমার চারপাশে ধর্ম তার নোংরা শক্ত হাতে অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে আছে। আমি চাই সবল শিক্ষিতজনেরা, দূর্বল অসহায়, অত্যাচারিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান, সমস্যার মূলে অঙ্গুলীনির্দেশ করুন। আমি চাই জগতের মানুষ, আমাদের নতুন প্রজন্ম এ অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি পাক। আর যেন কোন হিন্দুর ঘর পুড়েনা। আর যেন দেখতে না হয় এমন উৎপীড়ন। এ আমার, এক নিরুপায়ের শেষ মিনতি ছাড়া আর কিছু নয়। এ দেশের বিদ্বান গুণীদের কাছে, দেশবাসীর কাছে আমার প্রশ্ন রইলো, সাতক্ষীরায় আগুন কেন?

সহায়ক লেখা ও তথ্যসুত্র-
Ethnic Cleansing In Bangladesh
Rahul Gupta

Islamic Fundamentalists Strikes Udichi again at Netrokona
Ajoy Roy

সেখানকার নদী কি এমনই মধুমতি
ফরিদ আহমেদ।

শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইন – দেশের এক কালো অধ্যায়।
আদিল মাহমুদ

Why Muslims destroy Hindu Temples?
Anwar Shaikh (সকলের প্রতি এই বইটি পড়ার বিশেষ অনু্রোধ রইলো)

Bicharer Vani Nirabe Nivrite Kande … ..
Minority Persecution Continues unabated
-Ajoy Roy

দৈনিক জনকণ্ঠ

ইনটারনেট উইকিপিডিয়া http://en.wikipedia.org/wiki/2012_Fatehpur_Violence