আরিফ নামের এক কাটুনিস্ট বিড়াল শব্দের পূর্বে মোহাম্মদ লাগানোর কারণে এদেশীয় মুমিন বান্দাদের দিল’এ জব্বর এক চোট লাগে।যার পরিনতি আরিফের হাজত বাস এবং পরবর্তিতে দেশান্তর।শুধু আরিফই নয়,প্রথম আলো’কেও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়েছিল টিকে থাকার জন্য।

এদেশের সিংহ ভাগ মানুষ ইসলামের অনুসারী হলেও অনেক মানুষ আছেন যারা জ্ঞান-বিজ্ঞানে আলোকিত। তারা নিজে যেমন বিজ্ঞান পছন্দ করেন,তেমনি অপরকেও বিজ্ঞানের আলোয় আসার আহ্বান জানান। যদি কখনও কোন অখ্যাত মুমিন(মিরাজ রহমান) এই সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক মানুষদের দিলে আঘাত দেন,তাহলে তার শাস্তি কি হতে পারে??

মুমিন বান্দা জনাব মিরাজ রহমান আজকের কালের কন্ঠ (১৩.০৪.২০১২) পত্রিকার ধর্মপাতায় পরপর পাঁচজন স্বনামধন্য বিজ্ঞানীকে চোর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁদের একজন জন ডালটন। প্রখ্যাত রসায়নবিদ।তাঁর সম্পর্কে মিরাজ রহমান বলেন,

“জন ডালটন। ১৭৫৫ সালে জন্ম এবং ১৮৪৪ সালে মৃত্যু। প্রখ্যাত ইংরেজ রসায়নবিদ। পৃথিবীব্যাপী জন ডালটনের রসায়নবিষয়ক সমাধান ব্যাপকভাবে সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য। বিজ্ঞানভিত্তিক ইতিহাসের আলোচনা অনুযায়ী জন ডালটনই প্রথম ‘পরমাণুর তত্ত্ব’ প্রস্তাব করেছিলেন। যে প্রস্তাবনা বর্তমান সময় পর্যন্তও ‘ডালটনের পরমাণুবাদ’ হিসেবে পরিচিত। আমরা বলব, এটা ডালটনের নিজস্ব কোনো আবিষ্কার নয়। তিনি কেবল চিন্তা-গবেষণা করেছেন। পরমাণুবাদের এই থিওরি তিনি ধার নিয়েছেন। কোথা থেকে ধার নিয়েছেন? হ্যাঁ, পবিত্র কোরআন থেকে এই চিন্তাকে ধার নিয়েছেন ডালটন। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে এই পরমাণুবাদের আলোচনা স্থান লাভ করেছে।
সুরা জিলজালের ৭ ও ৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অতএব, কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে, তা সে দেখবে। আর কেউ অণু পরিমাণ খারাপ বা মন্দ কাজ করলে, তা সে দেখবে।’
পবিত্র কোরআনের আলোচ্য আয়াতগুলোর মাঝে অণু-পরমাণুবিষয়ক আলোচনা স্থান পেয়েছে এবং শেষে উলি্লখিত আয়াতের আলোচনায় পরমাণুর সম্পর্কে স্পষ্ট বলা হয়েছে ‘একটি পরমাণুর ওজন সমপরিমাণের ভালো কাজ’। জন ডালটনের পরমাণুবাদের মূল থিওরি ছিল এমনটাই।

পাঠক! একটু ভাবুন, ১৪০০ বছর আগে পরমাণুর ভর সম্পর্কে নবী করিম (সা.) কিভাবে নিশ্চিত হয়েছিলেন? নিশ্চিত হয়েছিলেন তিনি পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে। সুতরাং আমরা এখন এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, পরমাণুবাদ জন ডালটনের একক আবিষ্কার নয়; পবিত্র কোরআনের নিদের্শনাকে গ্রহণ করে তিনি কেবল সামনে এগিয়েছেন। শোনা যায়, গোপনে এই রসায়নবিদ বিজ্ঞানী (জন ডালটন) কোরআন পাঠ করতেন এবং শেষ জীবনে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।”

আরেকদল বিজ্ঞানী জেমস্ ওয়াট সন এবং ফ্রান্সিস ক্রিক কে তিনি একই ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন ঐ পত্রিকায়।তিনি বলেন,

“জেমস ওয়াটসন (১৯২৮-মৃত্যু জানা যায়নি) এবং ফ্রান্সিস ক্রিক (১৯১৬-২০০৪)। উভয়ই মার্কিন বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদদের প্রদান করা তথ্য অনুযায়ী তারা ডিএনএ কাঠামোর প্রথম নির্ভুল মডেল নির্মাণ করেছিলেন। আমরাও স্বীকার করি, তারা তা করেছিলেন; কিন্তু আমরা ঠিক এভাবে বলছি না। আমরা বলতে চাই, এই ডিএনএ কাঠামো জেমস ওয়াটসন বা ফ্রান্সিসের নিজস্ব বা একক কোনো আবিষ্কার নয়; পবিত্র কোরআনের থিওরি ধার নিয়ে তাঁরা এ কাজ করেছেন। কারণ এই ডিএনএ কাঠামো সম্পর্কে তাঁদের সময়ের অনেক আগে নাজিল হওয়া পবিত্র কোরআনে আলোচনায় পাওয়া গেছে। পবিত্র কোরআনে সুরা আর-রাদের ৪ নম্বর আয়াতে ডিএনএ তত্ত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘আর জমিনে আছে পরস্পর পাশাপাশি ভুখণ্ড, আঙুর বাগান, শস্যক্ষেত, খেজুরগাছ, যেগুলোর মধ্যে কিছু একই মূল থেকে উদগত, যেগুলো একই পানি দ্বারা সেচ করা হয়। আর আমি খাওয়ার ক্ষেত্রে একটিকে অপরটির তুলনায় উৎকৃষ্ট করে দিই। এর মাঝে নিদর্শন রয়েছে ওই জাতির জন্য যারা বোঝে।’ এই আয়াতের মূল মর্মকথা হলো, আল্লাহ গাছপালা এবং শাকসবজিতে তার তথ্যযুক্ত চিহ্ন রেখে দিয়েছেন।
এ ছাড়া সুরা আন-নাহলের ৬৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেছেন, ‘আর নিশ্চয়ই চতুষ্পদ জন্তুতে রয়েছে তোমাদের জন্য শিক্ষা। তার পেটের ভেতরের গোবর ও রক্তের মধ্যখান দিয়ে তোমাদের আমি দুধপান করাই, যা খাঁটি এবং পানকারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর।’

সুরা মুমিনুন-এর ২১ নম্বর আয়াতেও একইভাবে আল্লাহ মহান বলেছেন, ‘আর নিশ্চয়ই গবাদিপশুর মাঝে তোমাদের জন্য রয়েছে শিক্ষণীয় বিষয়।

‘গবাদিপশুতে এবং গাছপালার মাঝে তথ্যযুক্ত চিহ্ন রয়েছে- এ কথা বলে ডিএনএ তত্ত্ব আবিষ্কারের পথ উন্মোচিত করে দিয়েছেন আল্লাহ মহান। জেমস ওয়াটসন এবং ফ্রান্সিস ক্রিক সে উন্মোচনাকে কাজে লাগিয়ে এই তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন মাত্র।”

এর পরে তিনি আক্রমন করেছেন স্যামুয়েল মোর্স নামক আরেক আমেরিকান বিজ্ঞানীকে । তার আবিস্কৃত “মোর্স কোড”নাকি কোরানে বহাল তবিয়তেই রয়েছে।তিনি বলেন,

“ বিজ্ঞানের ছাত্র মাত্র সবারই জানা, স্যামুয়েল মোর্স নামক আমেরিকান বিজ্ঞানী মোর্স কোড আবিষ্কার করেছেন। আমরাও মানি তিনি আবিষ্কার করেছেন এই কোড তত্ত্ব; কিন্তু তিনি কখনোই যেটা স্বীকার করেননি সেটা হচ্ছে; এই আবিষ্কার তিনি কিভাবে করেছেন। তবে হ্যাঁ, আমরা এটা স্বীকার করছি এবং বলছি, মোর্স সাহেব কোরআন পাঠ করে মোর্স কোড তথা টেলিগ্রাফ আবিষ্কার করেছেন। কারণ তার সময়ের অনেক আগেই পবিত্র কোরআনে এই টেলিগ্রাফ বা বার্তাবিষয়ক আলোচনা স্থান লাভ করেছে। পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারার ৩৭ নয় আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘Then Adam received from his Lord [some] words, and He accepted his repentance. Indeed, it is He who is the Accepting of repentance, the Merciful’

আলোচ্য আয়াতের Then Adam received from his Lord [some] words, এই অংশের বঙ্গানুবাদ করলে এভাবে বলতে হবে, ‘আদম লাভ করল তার প্রভুর থেকে সাংকেতিক বার্তা।’
আসমান বা আকাশ থেকে যে বার্তা পৃথিবীতে আগমন করে, একজন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ মাত্রই বুঝতে সমর্থ হবেন যে সেই বার্তা সাধারণ কোনো বার্তা নয়, তা ছিল সাংকেতিক বা কোডেড বার্তা। তাই এখানে ‘প্রভুর বাণী’কে প্রভুর সাংকেতিক বা কোডেড বার্তা হিসেবে ধরাটাই যেকোনো বিবেকবান এবং বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের উচিত।

সুতরাং আমরা বলতে চাই, মোর্স কোড তথা টেলিগ্রাফের মূল আবিষ্কারক স্যামুয়েল মোর্স নন; তিনি কেবল গবেষণা করেছেন এবং পবিত্র কোরআনের থিওরিকে কাজে লাগিয়েছেন।”

এর পরে জনাব মিরাজ হাত তুলেছেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেব যিনি স্বীকৃত,সেই আলবার্ট আইনস্টাইনের গায়ে।একজন মানুষের কিরকম সাহস থাকলে এরকম বিশ্ববরেণ্য একজন বিজ্ঞানীর গায়ে হাত তুলতে পারেন?? কালের কন্ঠে জনাব মিরাজ বলেন,

“আলবার্ট আইনস্টাইন। পৃথিবীখ্যাত বিজ্ঞানী। আইনস্টাইনের ব্যাপারে বলা হয়, নবীজি (সা.)-এর পর পৃথিবীর মানুষের মধ্যে মস্তিষ্কের সবোঁচ্চ ব্যবহারকারী ব্যক্তিত্ব হলেন তিনি। ১৮৭৯ তাঁর জন্ম এবং মৃত্যু ১৯৫৫ সালে। জার্মান বংশোদ্ভূত মার্কিন এই পদার্থবিজ্ঞানী আপেক্ষিকতাবাদসহ বেশ কিছু তত্ত্বের আবিষ্কারক। আইনস্টাইন এই আপেক্ষিকতাবাদকেও আমরা মূলত এককভাবে তাঁর আবিষ্কার বলে মানতে রাজি নই। কারণ এই আপেক্ষিকতাবাদ সমপর্কে আইনস্টানের জন্মেরও অনেক আগে নাজিল হওয়া পবিত্র কোরআনে আলোচনা স্থান লাভ করেছে। অন্য বিভিন্ন বিজ্ঞানীর মতো আইনস্টাইনও পবিত্র কোরআন রির্সাচ করেছেন এবং এ কোরআন থেকে থিওরি গ্রহণ করে আপেক্ষিকতাবাদ সৃষ্টি করেছেন। চলুন তাহলে দেখি পবিত্র কোরআন এই আপেক্ষিকতাবাদ সম্পর্কে কী বলেছে।

পবিত্র কোরআনের সুরা মাআরিজের ৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘ফেরেশতা ও রুহ এমন একদিনে আল্লাহর পানে ঊর্ধ্বগামী হয়, যার পরিমাণ ৫০ হাজার বছর।’ আলোচ্য আয়াতের মধ্যে আল্লাহ মহানের একদিন=মানুষের ৫০ বছর।
এ ছাড়া সুরা আস-সাজদার ৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেছেন, ‘তিনি আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত সব কাজ পরিচালনা করেন। তারপর তা একদিন তাঁর কাছে উঠবে। আর সেদিনের পরিমাণ হবে তোমাদের গণনায় হাজার বছর।’ এই আয়াতের বর্ণনা অনুযায়ী বলতে হবে, আল্লাহ মহানের একদিন=মানুষের এক হাজার বছর।

পবিত্র কুরআনে আপেক্ষিক তত্ত্বের কথা বলা হয়েছে, খালি একটু খুঁজে বের করার মানসিকতাটা প্রয়োজন। আর এ কাজটিই করেছেন আইনস্টাইন। পবিত্র কোরআনের থিওরি গ্রহণ করে পৃথিবীর মানুষকে শুনিয়েছেন আপেক্ষিক তত্ত্বেও কথা। এ ছাড়া হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)-এর মিরাজে গমন করার অলৌকিক এই ঘটনার মাঝে আপেক্ষিক তত্ত্বেও বিরাট খোরাক রয়েছে। পবিত্র কোরআনের ভাষায় বললে এভাবেই বলতে হয়, চিন্তাশীল মানুষের জন্য এর মাঝে রয়েছে যথেষ্ট চিন্তার খোরাক ও জোগান।”

সর্বশেষ তিনি হাত তোলেন চার্লস ডারউইনের উপর।যার বিবর্তন বাদে ধর্মকুল যায় যায় অবস্থা।ডারউইনের বিবর্তন বাদ সম্পর্কে জনাব মিরাজ বলেন,

“চার্লস ডারউইন। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী। বিবর্তনবাদের তত্ত্ব আবিষ্কার করার জন্য দুনিয়াব্যাপী বিখ্যাত তিনি। ঠিক আছে, আমরাও মানছি তাঁর এই আবিষ্কার। তিনিই প্রথম পৃথিবীর মানুষকে শুনিয়েছেন বিবর্তনবাদের কথা। কিন্তু এই বিবর্তনবাদের চিন্তা তার মাথায় কিভাবে এসেছিল? কোথা থেকে পেলেন তিনি এই থিওরি? তা কিন্তু আমরা কখনো ভাবিনি। হ্যাঁ, এবার শুনুন তাহলে, পবিত্র কোরআন পড়েই তিনি প্রথম বিবর্তনবাদের প্রাথমিক সূত্র বুঝতে সক্ষম হন এবং পবিত্র কোরআনের থিওরির ওপর ভর করে বিবর্তনবাদের সূত্র আবিষ্কার করেন।

যদিও এখনো মুসলিম বিজ্ঞানীদের কাছে তার এই বিবর্তনবাদ সূত্র গ্রহণযোগ্য কোনো মতামত নয়, তবুও আমরা দেখাতে চাই যে তিনি যা বলেছেন পবিত্র কোরআন থেকেই বলেছেন। এবং এই বলার সাহস গ্রহণ করেছেন কোরআন থেকে।”

আল্লার মুমিন বান্দারা সেই গ্যালিলীও,ব্রুনোর আমল থেকেই বিজ্ঞানীদের পিছনে লেগে আছে।যখনই তাঁরা কিছু আবিস্কার করেছে তখনই মুমিন বান্দারা তাঁদের মাথার উপর খড়গ উঁচিয়ে ধরেছেন।এর পরেও যখন ক্ষমতা হয়নি যুক্তির সাথে পাল্লা দিতে,তখন বস্তাপচা কুরান তত্ত্ব আবিস্কার করে মানুষকে ধোকা দেওয়া শুরু করে।এভাবেই চলছে আজ অবধি,আজ আরও জোরে-শোরে।

কিন্তু আমার প্রশ্ন সেখানে নয়,এই সর্বজন শ্রদ্ধেয় পাঁচ মহাবিজ্ঞানীকে চোর হিসেবে আখ্যায়িত করা হল,এতে আমার মত বিজ্ঞানপ্রিয় কোটি কোটি মানুষের দিলে বজ্রসম আঘাত আনা হল তার কি হবে??এক বিড়ালের পূর্বে মুহাম্মদ বসানোতেই যদি আরিফের জেল জুলুম ও দেশান্তর হতে হয়,তাইলে এই পাঁচ বিজ্ঞানী তথা বিজ্ঞানমনস্ক কোটি কোটি মানুষকে অপমান করার জন্য কেন কঠোর সাজা পেতে হবেনা জনাব মিরাজকে??কেন ক্ষমা চাইতে হবে না কালের কন্ঠের সম্পাদক কে??