পাঠ প্রতিক্রিয়া
পার্থিব
অনন্ত বিজয় দাশ ও সৈকত চৌধুরী
প্রথম প্রকাশঃ ২০১১
প্রকাশকঃ শুদ্ধস্বর
শাহবাগ, ঢাকা
প্রচ্ছদঃ শিবু কুমার শীল
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৩৫
মূল্যঃ ২২৫ টাকা
ঘনকালো পটভূমির উপর রক্তের মত টকটকে লাল অক্ষরে লেখা ‘পার্থিব’, উপর থেকে নিচে কোনাকুনি নেমে এসেছে অসমান্তরাল রক্তধারার মত পথের রেখা – যেন এত বছরের অন্ধ-সংস্কারের কালোপর্দা ভেদ করে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে নতুন সত্যের তাজা রক্ত। অনন্ত বিজয় দাশ ও সৈকত চৌধুরীর ‘পার্থিব’ হাতে নিয়ে এরকমই একটা অনুভূতি হলো। শিবু কুমার শীলের আঁকা প্রচ্ছদ এমনই গা শিরশির করা চোখকাড়া। ১৩৫ পৃষ্ঠার নাতিদীর্ঘ বইটা পড়তে পড়তে মনে হলো আমাদের অন্ধবিশ্বাসের কালো পিঠে নির্মোহ যুক্তির তীব্র চাবুক কষেছেন অনন্ত ও সৈকত। পার্থিব জগতে অপার্থিব ধারণার উৎপাদন, বিতরণ ও ধারণ করেন যাঁরা তাঁদের জন্য বড্ড দরকার এ কষাঘাতের।
জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে মানুষ ক্রমশ বুঝতে পারছে অনেক অনেক বছর আগে ঈশ্বর নামক যে অপার্থিব ধারণাকে মানুষ সৃষ্টি করেছিল নিজেদের অজ্ঞানতাকে ঢেকে রাখার জন্য, বর্তমানে তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। কিন্তু ঈশ্বরের ধারণাকে একেবারে ঝেড়ে ফেলতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে প্রধানত তাঁদেরই – যাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঈশ্বরকে পুঁজি করে চলছেন – প্রত্যক্ষ জীবিকার প্রয়োজনে বা পরোক্ষভাবে দুর্বল মননে। সৃষ্টিকর্তার ধারণা টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্নরূপে বিভিন্ন দেশে প্রচলিত লোকগাথাও ধর্মের মোড়কে পরিবেশিত হয়ে মানুষের বিশ্বাসের জগতে ঠাঁই করে নিয়েছে। এমনই একটা মিথ হলো মহাপ্লাবন ও নুহের নৌকা। পার্থিব’র প্রথম অধ্যায়ে হযরত নুহ্ ও মহাপ্লাবন সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও পৌরাণিক লোকগাথায় বর্ণিত তথ্যগুলোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে এই কাহিনির বয়স পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি। রোমান, সুমেরিয়ান, আসামের লুসাই, চীনের দক্ষিণাঞ্চলের ললোবাসীদের মধ্যে এবং পূর্ব আফ্রিকার মাসাইদের আঞ্চলিক লোকগাথায় মহাপ্লাবন ও তার হাত থেকে মানুষ সহ আরো কিছু প্রজাতির রক্ষা পাবার কথা বর্ণিত আছে। ওল্ড টেস্টামেন্ট, বাইবেল ও কোরানে এ লোকগল্পের অন্তর্ভুক্তি তাই হঠাৎ করে হয়ে ওঠেনি। এবং এসাথে এটাও প্রমাণিত হয় যে ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর কোনটাই অলৌকিক নয় – বরং লোক-কাহিনি নির্ভর।
ধর্মগ্রন্থে যেভাবে মহাপ্লাবন ঘটেছিল বলে বর্ণনা করা হয়েছে – (চল্লিশ দিন চল্লিশ রাত ধরে বৃষ্টি পড়েছিল, পৃথিবীর সমস্ত পাহাড়-পর্বত ডুবিয়ে দিয়ে আরো পনের হাত উপরে উঠে গেল বন্যার পানি, দুনিয়া একশ’ পঞ্চাশ দিন ডুবে রইলো বন্যার পানিতে – ইত্যাদি) এবং নুহের নৌকার মাধ্যমে কীভাবে নুহের পরিবার ও অন্যান্য প্রজাতির প্রাণিদের একজোড়া করে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল – তা আদৌ বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে সম্ভব কিনা তা সাধারণ পাটিগণিতের হিসেবে সহজভাবে দেখানো হয়েছে এ অধ্যায়ে। সমস্ত পৃথিবীপৃষ্ঠ পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হলে ১০৮০ মিলিয়ন কিউবিক কিলোমিটার জায়গা পানি দিয়ে ভর্তি করে ফেলতে হবে। অত বেশি পরিমাণ বৃষ্টি হওয়া কি সম্ভব? মেঘ তৈরি না হলে তো বৃষ্টি সম্ভব নয়। বাতাসে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকতে পারে তা দিয়ে সারা পৃথিবীর উপরিতলের মাত্র আড়াই সেন্টিমিটার (এক ইঞ্চিরও কম) পানি ঢালা সম্ভব – যা সহজেই শোষিত হয়ে যায় মাটিতে। পৃথিবীর সবগুলো পাহাড়কে ডুবিয়ে দেয়ার মত বৃষ্টি হতে হলে প্রায় পৌনে নয় কিলোমিটার গভীর পানির দরকার। যা কিছুতেই সম্ভব নয়।
যে নুহের নৌকায় (৩০০ হাত লম্বা, ৫০ হাত চওড়া আর ৩০ হাত উঁচু) সব ধরণের প্রাণির আশ্রয় জুটেছিল বলা হচ্ছে তার মোট ক্ষেত্রফল মাত্র নয় হাজার বর্গমিটার। সেখানে পৃথিবীর প্রায় দশ কোটি প্রজাতির প্রাণি – (যাদের মধ্যে তিমি, হাতি, জিরাফ, জলহস্তির মত বিশাল প্রাণিও আছে) কীভাবে ঠাঁই পেলো? তাছাড়া পৃথিবী ১৫০ দিন পানির নিচে ডুবে ছিল। ১৫০ দিনের খাবার-দাবারও নৌকায় রাখতে হয়েছিল নিশ্চয়। যৌক্তিক অসম্ভাব্যতার প্রশ্ন উঠলেই গোঁজামিল দিতে হবে এখানে। মানুষ যখন নুহের নৌকায় অন্ধভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে ফেলে – তখন অহংবোধের কারণেই গোঁজামিল দিয়ে হলেও নিজেদের অন্ধবিশ্বাস টিকিয়ে রাখতে চায়। বিশ্বাসীরা নিজেরাও জানেন যে অংকের হিসেবে গন্ডগোল হচ্ছে, কিন্তু স্বীকার করতে লজ্জা পান। তাই লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্য মারমুখী হয়ে ওঠেন। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় নিজের চোখে দেখেছি মহাপ্লাবন ও নুহের নৌকার ঘটনার অসম্ভাব্যতা প্রমাণ করে দেয়ায় যুক্তিবাদী অধ্যাপককে জামার আস্তিন গুঁটিয়ে মারতে আসেন অন্ধবিশ্বাসী অধ্যাপক। সেই যুক্তিবাদী অধ্যাপককে পদত্যাগ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হয়েছে – আর অন্ধবিশ্বাসী অধ্যাপকটি ক্রমশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পর্যন্ত হয়েছেন। কিন্তু তাই বলে কি যুক্তিবাদীরা থেমে গেছেন? থেমে যান নি বলেই তো এখন ‘পার্থিব’র মত সাহসী বই প্রকাশিত হচ্ছে বাংলাদেশ থেকেই।
‘মিরাকল-১৯ এর উনিশ-বিশ’ – পার্থিব’র দ্বিতীয় অধ্যায়। ধর্মগ্রন্থগুলো মিরাকলের খবরে ভর্তি। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে বিশ্বাসের হেরফের অনুযায়ী মানুষ বিভিন্ন রকমের মিরাকলের খবরের জন্ম দেয়। প্রতিটি মিরাকলই হলো গুজব বা গুজবের সমষ্টি। খ্রিষ্টান প্রধান দেশে মাতা মেরি বা যীশুর মিরাকল দেখা যায়, হিন্দু-এলাকায় দেবতা গনেশ হঠাৎ দুধ খেতে শুরু করে, বাংলাদেশের আকাশে সাদ্দাম হোসেন দেখা দেন ইরাকের যুদ্ধের সময়। ইউ-এফ-ও’র ধারণা বাংলাদেশে এখনো ততটা জনপ্রিয় নয় এবং ইউ-এফ-ও ধাপ্পা দেয়ার জন্য যে কারিগরী দক্ষতা দরকার তা বাংলাদেশে সহজলভ্য নয় বলেই বাংলাদেশের আকাশে ইউ-এফ-ও দেখা দেয় না যতটা দেখা দেয় আমেরিকার আকাশে। কেউ কেউ জেনেশুনে ধাপ্পা দিলেও অনেকে আবার দুর্বল মনের দৃঢ় বিশ্বাসের কারণে দুর্বল মুহূর্তে মাঝে মাঝে এক ধরণের প্রহেলিকায় আচ্ছন্ন হতে পারেন। আমাদের দেখার প্রক্রিয়া অনেক জটিল। কোন বস্তুর উপর আলো পড়ে তা প্রতিফলিত হয়ে চোখের লেন্স ভেদ করে রেটিনাতে পড়ার পর অপটিক নার্ভ তাদের নিয়ে যায় মস্তিষ্কে। সেখানে পরিস্ফুটন ঘটে ছবির। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অসম্পূর্ণ তথ্যও প্রয়োজন অনুযায়ী জোড়া লাগিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণতা দেয়ার কাজটা করে নেয় মস্তিষ্ক। এসময় মস্তিষ্ক যেরকম কল্পনা করে সেরকম ছবি তৈরি হতে পারে। দেয়াল চুঁইয়ে পানি পড়ার দাগ দেখে মাতা মেরির মুখ ভেবে নেয়া, বা পেঁপে কাঁটার পর সেখান থেকে প্রয়োজনমত বিঁচি সরিয়ে আরবিতে আল্লাহু-আকবর দেখা এরকমই অসম্পূর্ণ তথ্যের মস্তিষ্কজাত ফসল। তাই দেখা যায় অনেক মিরাকল উদ্দেশ্যমূলকভাবে মানুষেরই তৈরি। ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলায় ১১ সংখ্যার ‘মিরাকল’ এরকমই একটা উদাহরণ (পৃঃ ৩৭)।
মিশরীয় আমেরিকান জৈব-রসায়নবিদ রাশেদ খলিফা অনেক ভেবেচিন্তে হিসেব-নিকেশ করে কিছু রেখে কিছু ঢেকে কোরান থেকে ১৯ সংখ্যার মিরাকল আবিষ্কার করেছেন। এই ১৯ দিয়েই তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন কোরান অলৌকিক। বে-আক্কেলের মত প্রশ্ন জাগে আমার – কোরানকে অলৌকিক প্রমাণ করার জন্য এত গলদঘর্ম হচ্ছেন কেন বিশ্বাসীরা? কেউ যদি কোরানকে অবিশ্বাস করেন – তিনি তো নিজ দায়িত্বেই তা করছেন। অবিশ্বাস করলে জাহান্নামের আগুনে কীভাবে তাঁকে পোড়ানো হবে তা তো কোরানেই বলে দেয়া আছে। তাহলে বিশ্বাসীদের এত মাথাব্যথা কেন? আসলে বিশ্বাসীদের বিশ্বাসও এই পোড়া-বিজ্ঞানের যুগে পদে পদে টলে যাচ্ছে। ফলে নিজেদের খাতিরেই তারা খুঁজে পেতে মিরাকল বের করার চেষ্টা করছেন। রাশেদ খলিফার ১৯-তত্ত্ব নিয়ে বাংলাদেশেও অনেক হৈ চৈ হয়েছে। বিজ্ঞানের আলোকে কোরানের ব্যাখ্যা করার হিড়িকও পড়েছে। এই উনিশের দফা-রফা করে ছেড়েছেন অনন্ত ও সৈকত তাঁদের পার্থিব বইতে। ১৯ এর মিরাকল দেখানোর জন্য কোরানের আয়াত সংখ্যার ভুল উল্লেখ, বর্ণ ও শব্দের সংখ্যায় যে গোঁজামিল ইত্যাদি দিয়েছেন রাশেদ খলিফা তা খুঁজে বের করেছেন অনন্ত ও সৈকত। শুধু তাই নয়, আরো অনেক সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম যৌক্তিক বিচারে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে উনিশ নিয়ে কোরানের অলৌকিকত্ব প্রমাণের রাশেদ খলিফার দাবি অন্তঃসারশূন্য।
এ প্রসঙ্গে মার্কিন লেখক আর্নেস্ট ভিনসেন্ট রাইট এর ‘গ্যাড্সবি – চ্যাম্পিয়ন অব ইয়থ’ উপন্যাসের কথা উল্লেখ করেছেন অনন্ত ও সৈকত। ৫০১১০ শব্দের এই উপন্যাসে ঔপন্যাসিকের নাম ছাড়া আর কোথাও একটা বারের জন্যও ‘ই’ অক্ষরটি ব্যবহার করা হয়নি। ‘ই’ বাদ দিয়ে ইংরেজি বর্ণমালার বাকি ২৫টি অক্ষর দিয়ে চমৎকার একটা উপন্যাস লেখা হয়েছে মানুষের হাতে। আর্নেস্ট রাইট ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন বলেই মনে হয়, কিন্তু তিনিও তাঁর উপন্যাসকে অলৌকিক কিছু বলে মনে করেন নি। বাংলায় কমলকুমার মজুমদারের লেখা ‘সুহাসিনীর পমেটম’ উপন্যাস যাঁরা পড়েছেন তাঁরা খেয়াল করলে দেখবেন যে শতাধিক পৃষ্ঠার এই বইটিতে দাঁড়ি ব্যবহার করা হয়নি কোথাও। তার মানে কি ‘সুহাসিনীর পমেটম’ একটা অলৌকিক কিছু?
বাইবেল বা কোরানে বিজ্ঞান খোঁজার উৎসবে পিছিয়ে পড়তে রাজি নন ভগবদ্গীতার ভক্তরা। সেজন্য তাঁরা গল্প বানাতে শুরু করেছেন। মাসিক হরেকৃষ্ণ সমাচারে (এপ্রিল ২০০৬) ইস্কনের ভক্তরা টেনে এনেছেন স্বয়ং আইনস্টাইনকে। তাঁদের মতে আইনস্টাইন নাকি নিজের মুখে বলেছেন – “আমি ইংরেজিতে অনুবাদ করা গীতা পড়তে পড়তে অবাক হয়ে যাই, আত্মস্থ হয়ে পড়ি এবং এই আত্মস্থ অবস্থায় পদার্থবিজ্ঞানের অতি দুর্বোধ্য আপেক্ষিক তত্ত্ব আমার কাছে সূর্যের আলোর মত সহজ সরল হয়ে যায়” (পৃঃ৭১)। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে আইনস্টাইন থিওরি অব রিলেটিভিটি আবিষ্কার করেছেন গীতা পড়ে। ভারতীয় হিন্দুরা গীতা পড়ছেন কত শত বছর ধরে – আর থিওরি অব রিলেটিভিটি কিনা ধরা পড়লো ইহুদি আইনস্টাইনের হাতে? এটা যে কত বড় নির্লজ্জ ভন্ডামি তা গীতায় বিশ্বাসীরাও জানেন। গীতায় বিজ্ঞান খোঁজার প্রতারক প্রচেষ্টার মুখোশ খোলা হয়েছে পার্থিব’র ‘ভগবদ্গীতায় বিজ্ঞান অন্বেষণ এবং অন্যান্য’ প্রবন্ধে।
গীতার উৎপত্তি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে। সমস্ত যুদ্ধায়োজন শেষ হবার পর যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে অর্জুনের হঠাৎ যুদ্ধ বাদ দিয়ে শান্তিবাদী হবার ইচ্ছে জাগে। তখন যুদ্ধ থামিয়ে অর্জুনকে উপদেশ দিতে শুরু করেন কৃষ্ণ। আঠারো অধ্যায়ে শেষ হয় এই উপদেশবাণী- যার নাম হয় ভগবদ্গীতা। মহাভারতে এই গীতাকে যে ঠেলেঠুলে জোর করে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে তা বিভিন্ন উদাহরণ সহকারে প্রমাণ করে দিয়েছেন পার্থিব’র লেখকদ্বয়। রবীন্দ্রনাথের কথা এখানে খুবই উল্লেখযোগ্যঃ “কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ থামিয়ে রেখে সমস্ত গীতাকে আবৃত্তি করা সাহিত্যের আদর্শ অনুসারে নিঃসন্দেহে অপরাধ। … যখন কুরুক্ষেত্রের তুমুল যুদ্ধ আসন্ন তখন সমস্ত ভগবদ্গীতা অবহিত হইয়া শ্রবণ করিতে পারে, ভারতবর্ষ ছাড়া এমন দেশ জগতে আর নাই” (পৃঃ ৮০)। গীতার অর্থহীন উৎপত্তি সহ গীতায় বিজ্ঞান খোঁজার সামাজিক কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে এ অধ্যায়ে। গীতা বা অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে ভগবানের নাম দিয়ে যেসব বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে তা তৎকালীন সমাজের বৈষম্যের প্রতিফলন। “শূদ্র যদি কখনো ব্রাহ্মণের সঙ্গে একাসনে বসে তবে শূদ্রের কটিদেশে গরম লোহার ছ্যাঁকা দিয়ে নির্বাসন দেয়া হবে”। “শূদ্র ব্রাহ্মণপত্নীগমন করলে শাস্তি ছিল মৃত্যু, কিন্তু ব্রাহ্মণ শূদ্রাণীকে বলাৎকার করলেও শাস্তি ছিল অর্থদন্ড মাত্র” (পৃঃ৯১)। এসব শুনলে ধিক্কার দিয়ে উঠবেন যে কোন আধুনিক মানুষ। কিন্তু এগুলো যে মনুসংহিতার বাণী! অনন্ত ও সৈকত প্রমাণ করে দিয়েছেন যে ভগবদ্গীতা ব্রাহ্মণ্য-ক্ষত্রিয়দের নিজস্ব কাঠামো, শাসন-শোষণ টিকিয়ে রাখার জন্য সুদীর্ঘ সময় ধরে মানুষেরই সুকৌশলী রচনা।
এ অধ্যায়ে ৭৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আকাশের রঙ কেন নীল দেখায় তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সামান্য ভুল আছে। বলা হয়েছে নীল রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য লাল রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে বেশি। আসলে লাল রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য নীল রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে বেশি। নীল রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কম হওয়ার কারণে তা বায়ুমন্ডলের ধূলিকণায় ধাক্কা খেয়ে চারিদিকে বিচ্ছুরিত হয়। ফলে বায়ুমন্ডলে নীল রঙ ছড়িয়ে পড়ে। তাই আকাশ নীল। একই পৃষ্ঠার আরেক জায়গায় বলা হয়েছে “আগুন হলো শক্তি, বস্তু নয়”। এটাও অতিসরলীকরণ। আগুনের সৃষ্টি হয় রাসায়নিক বিক্রিয়ায়। রাসায়নিক উপাদানগুলো বস্তু। আগুন থেকে যে তাপ ও আলো বের হয় সেগুলো শক্তি।
সংশয়বাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ঈশ্বর ও ধর্ম প্রসঙ্গে যুক্তিনিষ্ঠ আলোচনা সন্নিবেশিত হয়েছে পার্থিব’র শেষ অধ্যায়ে। বিশ্বাস ও যুক্তির বিরোধ, স্রষ্টায় বিশ্বাসের উৎপত্তি ও ধর্মে সে বিশ্বাস রোপন করতে গিয়ে যে কত রকমের স্ববিরোধিতার সৃষ্টি হয়েছে -তার প্রাঞ্জল বর্ণনা আছে এ অধ্যায়ে। বাইবেল যে স্ববিরোধিতায় পূর্ণ তার কয়েকটি মোক্ষম উদাহরণ দেয়া হয়েছে ১০১ পৃষ্ঠায়। যেমন জেনেসিসের এক জায়গায় বলা হয়েছে মানুষ সৃষ্টির আগে গাছ সৃষ্টি করা হয়েছে। আবার একই জেনেসিসের অন্য জায়গায় বলা হয়েছে গাছের সৃষ্টি হয়েছে মানুষ সৃষ্টির পরে। মানুষ ঈশ্বরের দেখা পাবে না বলা হয়েছে। অথচ আরেক জায়গায় বলা হয়েছে অনেক মানুষ ঈশ্বরের দেখা পেয়েছে। যে ঈশ্বরকে সব ধর্মই খুব দয়ালু বলে প্রচার করে – ধর্মগ্রন্থগুলিতে বর্ণিত নারকীয় শাস্তির বর্ণনা শুনলে ঈশ্বরকে কিছুতেই দয়ালু বলে মনে হয় না। ঈশ্বর মানুষের ভক্তি আর পূজা লাভ করার জন্য এত লালায়িত যে মানুষেরই লজ্জা হয় ঈশ্বরের লোভ দেখে। ধর্মগ্রন্থগুলোতে বিজ্ঞান খুঁজে পাবার জন্য শত চেষ্টার পাশাপাশি গ্রন্থগুলোকে অলৌকিকত্ব দান করার চেষ্টাগুলোকেও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কেউ কোন কিছু দাবি করলে তা প্রমাণের দায়িত্বও সাধারণত তার ঊপরেই পড়ে। কিন্তু ধর্মের অলৌকিকত্বের ব্যাপারে দেখা যায় উলটো। অলৌকিক বলে দাবি করেন ধর্মবাদীরা – কিন্তু প্রমাণ করতে বললে দায়িত্ব ঠেলে দেন যুক্তিবাদীদের দিকে। বলেন – বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। কোরানের অলৌকিকত্বের পক্ষে যেসব যুক্তি ধর্মবাদীরা দেখান তার সবগুলোকেই খন্ডন করেছেন অনন্ত ও সৈকত। এই যুক্তিখন্ডন ও পার্থিব প্রমাণে কোন ধরনের আবেগ বা পূর্ব-বিশ্বাস স্থান পায়নি। মুক্তমন নিয়ে কেউ যদি ‘পার্থিব’ পড়েন – ভাবতে বাধ্য হবেন যে অলৌকিকতার দাবিগুলোতে কত বড় বড় ফাঁকি।
পার্থিব’র লেখকদের সাথে যুক্তিবাদী মাত্রেই একমত হবেন যে – ”
ধর্মগ্রন্থগুলো পড়তে হবে যার যার নিজের ভাষায়। যুক্তি প্রয়োগ করে বুঝতে হবে ধর্মগ্রন্থের বাণীর মর্মার্থ। শুধু পুণ্যলাভের আশায় না বুঝে পবিত্র ভাষায় পাঠ করা থেকে বিরত থাকা ভালো। না বুঝে পাঠ করলে শুধু অজ্ঞতাই বৃদ্ধি পায়, জ্ঞান বৃদ্ধি পায় না। আর এই অজ্ঞতা নামক দুর্বলতার সুযোগ নেয় আমাদের চারপাশের কিছু মোল্লা-মৌলভি, পীর-ফকির, ঠাকুর প্রমুখেরা। তাই সমাজকে বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী, প্রগতিশীল করে তুলতে হলে যুক্তিবোধের বিকাশ ঘটানোর কোন বিকল্প নেই”
(পৃঃ ১৩৪)।
বইয়ের বিষয়বস্তু ছাড়াও ঝকঝকে ছাপা ও চমৎকার বাঁধাইয়ের কারণে শুদ্ধস্বর ইতোমধ্যেই প্রকাশনার জগতে মর্যাদার আসন তৈরি করে নিয়েছে। পার্থিব’র ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। প্রচ্ছদের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। সামান্য কিছু বানান ভুল চোখে পড়েছে। যেমন – ‘লোকগাথা’ অনেক জায়গায় ‘লোকগাঁথা’ হয়েছে। তাছাড়া পৃঃ ৯ – তুলে (তোলে), পৃঃ ২৫- আবহবিদ্যার (আবহাওয়াবিদ্যার), পৃঃ ৩৩- খুঁজার (খোঁজার), পৃঃ ৩৬- ঝাকে ঝাকে (ঝাঁকে ঝাঁকে), পৃঃ ৬৪- খোঁজলে (খুঁজলে), পৃঃ ৬৯- যুগান্তরকারী (যুগান্তকারী), পৃঃ ৭৬- গুদের (গোঁদের), পৃঃ ৭৭- বিট্রিশরা (ব্রিটিশরা), নন-মুসলিমরা (নন-মুসলিম), পৃঃ ৭৮- সাবস্যস্ত (সাব্যস্ত), পৃঃ ৮৭- গেলেন (পেলেন), মৎসদের (মৎস্যদের), পৃঃ ৮৮- না-কী (নাকি), পৃঃ ৯০- আমি (আমরা), করলন (করলেন), পৃঃ ৯৮- জিন (জ্বিন), পৃঃ ১০৭- ধর্মবিশ্বাসীরা (ধর্মবিশ্বাসী), পৃঃ ১৩৪- ঘটনানোর (ঘটানোর)।
পার্থিব’র সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর নির্মেদ ঝরঝরে ভাষা, আর ক্ষুরধার যুক্তি। সারা বইতে একটাও অপ্রয়োজনীয় বাক্য নেই। এমন নিরাবেগ নির্মোহ পার্থিব যুক্তির ধারাবাহিক সমাবেশ ঘটেছে যে বইতে – সে বই সবদিক থেকেই সার্থক।
@প্রদীপ দেব,
আপনার এই পাঠ প্রতিক্রিয়া এক কথায় অসাধারণ। প্রতিক্রিয়া পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল যেন আমি ওরিজিনাল বইটা-ই পড়ছি। যদিও বা বইটা পড়া হয়নি,তবে সন্দেহহীন ভাবেই বলছি “পার্থিব” পড়তেই হবে এবং এই প্রতিক্রিয়া অনেক কে অনুপ্রাণিত করবে এই বইটা সংগ্রহের জন্য,পড়ার জন্য। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। কিভাবে বইটা বিদেশে পাওয়া সম্ভব,জানালে কৃতজ্ঞ হব। (Y)
@আমি আমার, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। মূল বইটা কীভাবে পাবেন তা অনন্ত বা সৈকত বলতে পারবেন। তবে বইয়ের প্রবন্ধগুলো আলাদা আলাদা ভাবে মুক্তমনায় প্রকাশিত হয়েছিল। মুক্তমনা আর্কাইভ থেকে সেগুলো পড়ে নিতে পারেন।
@প্রদীপ দেব,
প্রচ্ছদের ব্যাখ্যাসহ যেভাবে পর্যালোচনা করলেন তা অনেককেই বইটি কিনতে উদ্ধুদ্ধ করবে। রিভিউ লেখার সার্থকতা তো এখানেই!আর এতে যে আপনার জুরি নেই তা তো আমরা জানি ই।
মুক্তমনার লেখকদের বইগুলো রিভিউ করার অনুরোধ রাখছি আপনার কাছে।
@গীতা দাস, বই টি কিনতে সত্যিই আগ্রহ হচ্ছে । এখানে যে কবে পাব জানি না । কিন্তু পেলেই কিনব ।
@প্রদীপ দেব,
অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি ও দেশ থেকে বইটি আনার ব্যবস্থা করছি। এর মাঝে মুক্তমনার আর্কাইভ খুঁজে প্রবন্ধ গুলো পড়ার ইচ্ছা পোষণ করছি। অনন্ত ও সৈকত কে অসংখ্য ধন্যবাদ জ্ঞ্যাপন করছি আমাদেরকে এই ধরনের দুর্দান্ত একটা বই উপহার দেওয়ার জন্য।
@আমি আমার,
আপানাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। উপরে কাশেম ভাইকে শুদ্ধস্বরের ঠিকানা উল্লেখ করেছি। শুদ্ধস্বরের সাথে যোগাযোগ করলে ওরা মনে হয় তাদের বই সংগ্রহের সবচেয়ে সহজপথ বলে দিতে পারবে।
অথবা শুদ্ধস্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশীদ টুটুল ভাইয়ের ফেসবুক প্রোফাইল : facebook.com/ahmedur। ফেসবুক থেকেও আপনি কনটাক্ট করতে পারবেন।
@অনন্ত বিজয় দাশ,
আপনাকে ধন্যবাদ জানালে ও কম হবে। তবু ও ধন্যবাদ জানবেন আপনার সহযোগিতার জন্য। আমি শুদ্ধস্বরের ঠিকানা লিখে রেখেছি এবং টুটুল ভাইয়ের সাথে ও যোগাযোগ করছি ফেসবুক থেকে। আশা করি অচিরেই “পার্থিব” আমার সংগ্রহে থাকবে। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
বইটি পড়িনি; তবে এই বইতে অন্তর্গত অনেক রচনা অনেক আগেই পরেছিলাম মুক্তমনায়।
আপনার রিভিউ ভালো হয়েছে।
বইটা পড়ার তালিকায় রাখলাম। বিদেশে এই বই কেমন করে কেনা সম্ভব?
@আবুল কাশেম, অস্ট্রেলিয়ায় কীভাবে বইটা পাবেন? আমার কপিটা আপনাকে ধার দিতে পারি যদি আপনার পোস্টাল এড্রেস দেন আমাকে। ইমেইল করতে পারেন আমার [email protected] ঠিকানায়।
@প্রদীপ দেব,
প্রচুর ধন্যবাদ। আমি বাঙলাদেশ থেকে বইটি আনিয়ে নেবার ব্যবস্থা করছি।
@আবুল কাশেম,
কাশেম ভাই,
আমি অত্যন্ত খুশি আপনি আমাদের “পার্থিব” বইটি সংগ্রহ করতে চাচ্ছেন বলে। আমি নিশ্চিৎ নই শুদ্ধস্বরের বই দেশের বাইরে পাওয়া যায় কিনা? খুব সম্ভবত না। দেশ থেকে অর্ডার করে আনাতে হবে।
ঢাকায় শুদ্ধস্বরের নতুন শোরুমের ঠিকানা ৬ কনকর্ড এম্পোরিয়াম, কাঁটাবন, ঢাকা।
অফিস : হাউস ৮/১৩, চতুর্থ তলা, ব্লক সি, লালমাটিয়া, ঢাকা।
ইমেইল ঠিকানা : [email protected]
তবে আপনার ঠিকানা পেলে আমি নিজেই এক কপি পাঠিয়ে দিতে পারি।
@অনন্ত বিজয় দাশ,
প্রচুর ধন্যবাদ।
আমি শুদ্ধস্বরের ঠিকানা নোট করে রাখলাম।
আমি আমার আত্মীয়কে লিখব বইটি কিনে আমাকে পাঠাবার জন্য।
আমাদের ‘পার্থিব’ বইটির অসাধারণ রিভিউ করেছেন প্রিয় প্রদীপ দা। আমি সত্যিই মুগ্ধ।
ভুলগুলো খুঁজে দেয়ায় কৃতজ্ঞ, পরবর্তী সংস্করণে বইটি সংশোধনের ক্ষেত্রে তা খুবই সাহায্য করবে।
@সৈকত চৌধুরী, বইটা অসাধারণ। তাই আমাকে বিশেষ কিছুই করতে হয়নি। সকল প্রশংসা ‘পার্থিব’র প্রাপ্য।
যথারীতি প্রদীপ দেবীয় পাঠ প্রতিক্রিয়া (Y)
প্রদীপ দা,
অতি ব্যস্ত সময়ের ফাঁক দিয়ে আপনি স্বতাগিদে পার্থিব বইয়ের পরিশ্রমলব্ধ যে অসামান্য পুস্তক-পর্যালোচনা করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার নেই।
শুধু বলবো আপনার স্বতঃস্ফূর্ত বলিষ্ঠ লেখনী বরাবরের মতোই এবারো হৃদয় নাড়িয়ে দিয়েছে।
আপনার প্রাণবন্ত প্রতিক্রিয়ায় সত্যি গর্ব অনুভব করছি!
শতসহস্র ধন্যবাদ রইলো। (F)
@অনন্ত বিজয় দাশ, পার্থিব পড়ার সময় আমি যে আনন্দ পেয়েছি তার সব কৃতিত্ব আপনার ও সৈকতের। অভিনন্দন আপনাদের।
@প্রদীপ দেব,
ধন্যবাদ প্রদীপদা।
রিভিউ পড়ে ভাল লগলো,বইটাও পড়বো ।
বইটা পড়িনি, কিন্তু রিভিউ পড়ে পড়ার ব্যাপক আগ্রহ হচ্ছে!
দুর্দান্ত পাঠ-প্রতিক্রিয়া।
এই ঘটনার উপর একটি পোস্ট লিখুন, প্লিজ।
@তামান্না ঝুমু, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কিছু কিছু ঘটনার স্মৃতিচারণ করার ইচ্ছে আছে। তবে ঠিক কখন সময় করে উঠতে পারি জানি না। অনেক ধন্যবাদ আপনার আগ্রহের জন্য।
আপনাকেই এখন আমার অপার্থিব লাগে। পুস্তকপাঠ প্রতিক্রিয়ায় দিন দিন নিজেকে পাহাড়চূড়োয় নিয়ে যাচ্ছেন আপনি।
প্রাণঢালা শুভেচ্ছে রইলো।
@ফরিদ আহমেদ,
সত্যি কথা! (Y)
@ফরিদ ভাই, উৎসাহ দেবার ক্ষমতা আপনার অসাধারণ। টুপিখোলা শুভেচ্ছা আপনাকে।
আরেকটি দুর্দান্ত বুক রিভিউ প্রদীপ দেবের। পার্থিব নামের এই ছোট্ট বইটা আসলেই ক্ষুরধার একটা বই। আমার খুব প্রিয় বইগুলার একটা…
@অভিজিৎ,
আমার যৎসামান্য লেখালেখি আপনার হাত দিয়েই শুরু। আমার এখনো পরিষ্কার মনে আছে ২০০৪ সালের দিকে আপনিই প্রথমে বর্ণসফট দিয়ে লেখতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন আমাকে! যুক্তিবাদী দিবস উপলক্ষে লেখা দিতে বলেছিলেন। ওটাই আমার মুক্তমনাতে প্রথম লেখা কিনা আজ ভুলে গেছি! এরপর ভবানীপ্রসাদ সাহু, প্রবীর ঘোষ, আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদের লেখাগুলো অনুলিখন করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন! মনে পড়ছে হুমায়ুন আজাদের নারী বই থেকে রবীন্দ্রনাথের চোখে নারী অংশটুকু অনুলিখন করার কথা। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের উপর ছোটখাটো দুই কিস্তি নিয়ে মুক্তমনাতে কী ঢেউ না উঠেছিল তখন! আমার আইডেন্টিটি খোঁজ করেছিল কেউ কেউ… এগুলো মনে পড়লে যথেষ্ট হাসি পায়!
অ্যানিওয়ে, অভিজিৎদা আপনার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আপনি যে নিরলস, নিরবিচ্ছিন্নভাবে আমাকে উৎসাহ, তাগাদা দিয়ে গেছেন, বই পাঠিয়ে, রেফারেন্স দিয়ে, লেখা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে গাইড করে গেছেন এতোটা বছর ধরে… এ অপরিমাপ্য ঋণ তো কখনো শোধ করা সম্ভব হবে না!
@অনন্ত বিজয় দাশ,
শুনলে অবাক হবে মিথ্যালাপী-নোংরালাপী পাক্কা মডারেইট ইসলামিষ্ট শিক্ষিত ইমানদাররা অভিজিৎদার এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি ছদ্মনাম আবিষ্কার করেছে, এর মধ্যে একটি নারীনামও আছে। অভিজিৎদার উৎসাহ প্রেরণায়ই মুক্তমনা আজ শাখা প্রশাখা বিস্তৃত এক শক্তিশালী বিরাট বটবৃক্ষের রূপ ধারণ করেছে। মুক্তমনা আজ এক অপ্রতিরোদ্ধ শক্তির নাম। অসত্য অশুভর জন্যে আতংক, এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। এ জন্যে তাকেও সীমাহীন অশ্রাব্য, অশ্লীল গালাগালি শুনতে হয়েছে, অপবাদ হুমকি ধামকি দেয়া হয়েছে এখনও হচ্ছে। অভিজিৎদার ঋণ কোনদিন শোধ হবার নয়।
পার্থিব বইয়ের কিছু কিছু লেখা আগেই পড়েছিলাম, তবু যোগাড় করতে হবে। সিলেটের কোন লাইব্রেরিতে পাওয়া যাবে? তোমার পাঠানো নারায়ন সেনের ডারউইন থেকে ডি এন এ এবং ৪০০কোটি বছর এবং আখতারুজ্জামানের বিবর্তন বিদ্যা বই দুটো এক বন্ধুকে পড়ার জন্যে দিলাম। বই দুটো পড়ার আগে সে সন্দেহবাদী ছিল, নামাজ রোজা করতোনা, পড়ার পর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি হয়ে গেল, গত বছর তিরিশটা রোজাও রেখেছে। বিষয়টা বুঝলাম না।
@আকাশ মালিক,
(Y)
বইপত্র, রাজাম্যানশন, (দ্বিতীয় তলা), জিন্দাবাজার, সিলেট।
বায়োলজিক্যাল ইভোলুশনের তুলনায় কালচারাল ইভোলুশন দ্রুত হয় জানতাম, তয় এতো দ্রুতগতিতে হয়ে যায় সেটা তো আগে জানে ছিল না মালিক ভাই। :-s
তা, বই দুটো কি আপনি ফেরত পেয়েছেন নাকি ছোয়াব কামানোর আশায় বইদুটোকে দোজখের আগুনে নিক্ষেপ করা হয়ে গেছে?! :guli:
সুন্দর ও বিবৃতি্মুলক এবং তথ্যবহুল লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
@আরাফাত, অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও।