জীবিকার আশায় আশায়
মহাসাগরের ফেনার মত ভেসে ভেসে
শেকড় উপড়ে চ’লে এসেছি
আমি কোন দূরের দেশে
কোন সুদূরের অজানায়!

আমি জানিনা,
এই জীবনে আর ফেরা হবে কিনা
আমার শেকড়ের কাছে।
যেখানে আমার হৃদয়টুকু আজো বাঁধা আছে।
হে বন্ধু আমার,তোমাদের ব’লে যাই;
আমার প্রাণ ফুরিয়ে যাবার পর
আমার দেহখানির তরে
অন্তিম-শয্যা পেতে দিও
কোনো নিবিড়-বনে; তরুচ্ছায়া-তলে
যেখানে গাছের পাতারা মর্মর-সুরে কথা বলে,
যেখানে কোকিলের কুহুতান শোনা যায়,
যেখানে দোয়েলের শিস শোনা যায়।

আমার শয্যা পেতে দিও
জলভারাক্রান্ত ঘনমেঘের ছায়ায়;
যেথায় মেঘের আর্দ্রতার স্পর্শ পাওয়া যায়,
যেথায় শ্রাবণ-বরিষণে স্নান করা যায়।

আমার শয্যা পেতে দিও
বুনোফুলের ঝোপের ধারে
যেথায় ফুলের গন্ধে মন যায় ভ’রে।
কোনো সমুদ্র-উপকূলে, কোনো কাশবনের ধারে
যেথায় কাশফুলের শুভ্ররেণু ঝরে অঝোরে,
যেখান থেকে সমুদ্রের সুর শোনা যায়,
যেখান থেকে সাগরজলের লোনাগন্ধ পাওয়া যায়।

আমার শয্যা পেতে দিও
কোনো ফসলের মাঠের কাছে।
যেখানে দিগন্তজোড়া সোনার ফসল ছড়ানো আছে।
যেখান থেকে দেখা যায় অনুক্ষণ
আকাশ আর দিগন্তের প্রগাঢ় আলিঙ্গন।

আমার শয্যা পেতে দিও
শ্যামল কোমল ঘাসের উপর।
যেথায় সবুজের স্পর্শ পাওয়া যায়,
যেথায় সবুজ-ঘ্রাণ পাওয়া যায়।

আমার শয্যা পেতে দিও
কোনো মেঠোপথের ধারে,
যেখান থেকে রাখালের বাঁশি শোনা যায়।
যেখানে মাটির ছোঁয়া পাওয়া যায়,
ধূলির ছোঁয়া পাওয়া যায়;
যে মাটিতে, যে ধূলিতে আমার প্রাণ গড়া।

আমার শয্যা পেতে দিও
কোনো কুটিরের আঙিনার পরে।
যেথায় নিশি-ভোরে, পরম-আদরে
গায়ের উপর শিউলির পাপড়ি ঝরে।
যেখান থেকে মাটির মানুষের
মাটির জীবন দেখা যায়।

হে বন্ধু আমার, তোমাদের ব’লে যাই;
আমার অন্তিম-শয্যা পেতে দিও
আমার বাংলায়।
যেথায় আমার অন্তর বাঁধা আছে,
যেথায় আমার প্রাণের ভাষা শোনা যায়,
যেথায় আমার নিঃসীম ভালোবাসার
বর্ণমালা অতি মধুর সুরে কথা কয়,
যেথায় আমার প্রাণের সংগীতের সুর বেড়ায় ভাসি;
“আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।“