একটা সুখবর দিতে এলুম। উচ্চ আদালত একটা চমৎকার রায়ে বর্তমান বাঙলাদেশের সবচাইতে বড় বস্তি, কড়াইল বস্তি যেটা কিনা বালের থুক্কু কালের কন্ঠ পত্রিকার বয়ানেঃ বর্তমানে গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকার বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। উচ্ছেদের রায় দিয়েছে(এখানে সম্মিলিত অভিজাত জনতার করতালির শব্দ হবে)। কারন কী? কারন হল এগুলি সরকারি খাস জমি। সরকার বলছেঃ “১৭০ শতাংশের মধ্যে ৮০ শতাংশ বিটিসিএলের মালিকানাধীন ও ৪৩ শতাংশ পিডব্লিইডি’র এবং বাকি জমি আইসিটির।”
সূত্রঃ http://newsmedia24.net/?p=10353

সরকারী কথা আমরা সাধারন আমজামকাঁঠালজনতা সবসময় বিশ্বাস করি এখনও করলাম। কারন সরকারের পিতৃদেবতা এবং মাতৃদেবী সন্তান উৎপাদনের পাশাপাশি ভূমি-জমিও যে বমি করে উগরে দিতে পারে না এমন কোন প্রমান আমাদের হাতে নাই। যুক্তির খাতিরে ধরে নিতে হচ্ছে, কোন এককালে হয়ত এই জমি সরকারের সহোদর ভ্রাতা(কিংবা ভগিনি) হিসেবে প্রসবিত হয়েছিল। কালে কালে অনেক দেখেছি, এটা তেমন কিছু নয়।
যাই হোক, কথা হল বস্তি উচ্ছেদ করে ঢাকার একটি অভিজাত এলাকায় সস্তি ফিরিয়ে আনার যে প্রচেষ্টা চলছে তাকে আমরা সাদরে গ্রহন করছি। উচ্ছেদ করতে গিয়ে তারা ঘুমিয়ে থাকা দুটো শিশু-আবর্জনাকে পৃথিবী থেকে উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছে বলে কোন কোন সংবাদ সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। পাঠক চিন্তা করে দেখুন, ভবিষ্যতে এই দুটো হয়ত মাদক ব্যবসায়ী হত, হতে পারত ছিনতাইকারী, করত রাহাজানি, সন্ত্রাসী। পরবর্তীতে ঝামেলা না করে কিন্তু তারা এখনই নিকেশ করে দিয়েছে। প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর!! মোক্ষম পদক্ষেপ(পড়ুন হস্তক্ষেপ কিংবা বুলড্রোজারক্ষেপ)। আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানাই(এখানে আস্তে আস্তে করতালি হতে পারে, তবে মোটেই জোড়ে নয়)।

কিছুদিন আগে এমনই আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়ে দেশের আপামর টয়োটাপাজেরো ব্যাবহারকারী জনতার আস্থা এবং করতালি কুড়িয়েছিল সরকার। সেসময় গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট অবধি সমস্ত হকারদের(হ্যাকার নয় হকার) উচ্ছেদ করা হয়েছিল। ঢাকা আস্তে আস্তে নির্মল বস্তি-হকারমুক্ত সস্তিযুক্ত নগরীতে পরিনত হতে চলেছে। যদিও এক হকার টিভিতে বলেছিল আমার ইনকামের টাকায় আমার সংসার চলে। এখন কি আমি চুরি করুম? কী মুসিবত? তুই কী করবি সেটার জবাব কি আমরা দেব? আমরা কি তোকে এখানে থাকতে বলেছি?

আমরা আপাতত হকার রেখে বস্তির অস্থিতে ঢুকি। সমস্যাটা হয়েছে ঐ বস্তিবাসী ফকিন্নিগুলোকে নিয়ে। এরা জায়গা ছেড়ে মোটেই যেতে চাচ্ছে না। যেনো ওদের বাপের জায়গা!!!!! ওরা এটাও জানে না, এই জমিগুলোর জন্ম সরকারের বাবার ঔরসে। আর সরকার চাওয়া মাত্রই ঐ জমি ওদেরকে দিয়ে দেবে?? সরকার কি এতই বোকা?? তোরা কি সরকারকে নির্বাচনের সময় গাদাগুচ্ছের টাকা দিস?? এটাকি ইন্ড্রিয়ালিস্টের আবদার পেয়েছ যে বলবে আর পা চেটে দেবে? আফোসোস, এই নিরক্ষর অসভ্য ফকিন্নিগুলোকে নিয়ে। এরা না বোঝে ডিপ্লোম্যাসি না বোঝে কিছু। দেখুন ফকিন্নিগুলোর কান্ড দেখুনঃ

কড়াইল বস্তিবাসীর দাবী
১) কড়াইল বস্তিবাসীর দাবী “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য” পূর্নবাসন ছাড়া বস্তি উচ্ছেদ চলবে না।
২)মহামান্য হাইকোর্টের লেকপার বস্তি উচ্ছেদ রায়কে সন্মানের সহিত শ্রদ্ধার সাথে সন্মান জ্ঞাপন করতেছি।
৩) ১৫-০১-০৯ তারিখে মহামান্য হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী পূর্নবাসন ছাড়া কড়াইল বস্তি উচ্ছেদ চলবে না।
৪) কড়াইল বস্তিবাসী বসবাসরত (তিন লক্ষ মানুষ) সকলের প্রাণের দাবী পূর্নবাসন করে বস্তি উচ্ছেদ করুন।
৫) কড়াইল বস্তিতে আমরা প্রায় তিন লক্ষ লোক ত্রিশ বছর যাবৎ বসবাস করিয়া আসেতিছি।
৬) বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইস্তেহার অনুযায়ী পূর্নবাসন ছাড়া বস্তি উচ্ছেদ চলবে না।

নিবেদক,
কড়াইল বস্তিবাসী সর্বস্তরের জনগণ

কেন বাবারা, বস্তির জায়গাতো তোদের নয়! তাহলে কেন ছাড়তে চাস না? ওরা কী মনে করে কে জানে। আল্লাহ মালুম! চায় পুনর্বাসন। শ্বশুর বাড়ির আবদার পেয়েছে আর কী।

আরো দেখুনঃ

একটা বানান পর্যন্ত ঠিকভাবে লিখতে পারে না তারা আবার আসছে দাবী নিয়ে। সরকারের কাছে একটা দাবী নিয়ে গেলে অন্তত বানানটা ঠিকভাবে লেখ! আসুন এই অশিক্ষিত, নিরক্ষর, বর্বর, সন্ত্রাসী, চোরাকারবারী, পতিতার দালাল, মাদক ব্যাবসায়ী এবং সবচেয়ে যে অপরাধে ওরা বেশী অপরাধী সেই দরিদ্রতার জন্য, সেই হ্যাডমলেসনেসের জন্য ওদেরকে সরকার যাতে গুলি করে হত্যা করে এই জন্য মানব বন্ধন করি। দরকার হলে বিএসএফকে ভাড়া করে নিয়ে আসি। আমাদের নগরীর আভিজাত্য রক্ষার জন্য আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। নো কম্প্রোমাইস।

একটা কথা একটু ভেবে দেখুন। যেখানে সরকার দেশের জনগনকে তাদের মাসতুতো, পিসতুতো, পাত্তিতুতো, এলাকাতো, ভাই কিংবা বাবাদের জন্য উচ্ছেদ করে নগরী রক্ষা প্রকল্পে অথচ যাদের বাসস্থানের ব্যাবস্থা করার কথা সরকারের, যাদের খাবার দেয়ার কথা সরকারের, যাদের পড়ালেখার খরচ করার কথা সরকারের। সেই দেশের সংবিধানের উপরে যদি আমি ছ্যাড়ছ্যাড় করে মুতে দিতে চাই তাহলেই টয়োটামার্সিডিজপাজেরো চড়ে হাওয়া খাওয়া, ঘরে বসে নেটে ব্লগিং করা আমজামকাঁঠালজনতার পোদ জ্বলে ওঠে।

কাল রাতে বৈশাখী টিভিতে একটা টকশোতে দেখছিলাম একটি আনখশির কুকুর কীভাবে বস্তিবাসী এত তাড়াতাড়ি সংগঠিত হতে পারল সেটা নিয়ে ঘেউ ঘেউ করে সন্দেহ প্রকাশ করে যাচ্ছে। সাথে সরজমিনে ঘাস খেয়ে আসা দুটো গাধাও বলতে পারছিল না কীভাবে এত তাড়াতাড়ি রাজপথে নেমে অবরোধ করতে পারল! কুই কুই করে উপস্থাপকটি কোন বিশেষ মহলের প্ররোচনায় এটি হতে পারে বলে মতামত দিচ্ছে। আমি বলতে পারব না এটা কি বাঙালির দোষ নাকি দুনিয়ার আর সমস্ত মানুষের মাঝেও এমন শুয়োর কুকুর থাকে। তবে এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে আনুপাতিক হারে সংখ্যাটা বাঙলাদেশেই বেশী হবে।

সাগর রুনির হত্যা মামলা নিয়ে এই প্রতিবেদনকারীরা যে সাহসী ভুমিকা রেখেছে এবং রাখছে সেই আওয়াজের কোন চিহ্ন এখন বস্তিবাসীদের পক্ষ নিয়ে এই সংবাদব্যবসায়ীদের কণ্ঠে কলমে দেখলাম না। বিষয়টা হয়ত এমন হতে পারে সাগর-রুনি ফ্লাটে বসবাস করত আর এই নিরীহ মানুষগুলো, হত্যাকৃত শিশুদুটো বাস করে বস্তিতে। সাগর-রুনি অক্ষর জ্ঞ্যান সম্পন্ন ছিল আর এরা সম্পন্ন মানুষ নয়। আবার এমনও হতে পারে স্বীয় ব্যবসার পরিনতি দেখে একটু কম্পন ধরেছিল অস্থি মজ্জায় যেটা বস্তিবাসীর উচ্ছেদে ধরছে না। ঘটনা যাই হোক, সত্য হল এরা মানুষ আর ওরা দরিদ্র মানুষ। যার জন্য হ্যাডম নাই এবং যার জন্য এদেশে ওদের বেঁচে থাকার অধিকার নাই।

আসেন গলা মিলিয়ে বলি “বস্তিবাসী নিপাত যাক, দখলদার মুক্তি পাক”। গড়ে উঠুক বস্তিমুক্ত সস্তিযুক্ত অভিজাত বনানী গুলশান ধানমন্ডিও ঢাকা।

ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা ব্লগার দিনজুরের কাছে। এই ব্লগ থেকে ছবিদুটো নেওয়া হয়েছে।