আমি ভালোবাসি ‘ন’ কে। প্রায় চার বছর হতে চলল ভালোবাসার বয়স। এ যুগের হিসেবে বেশ দীর্ঘ সময় বলা যায়। এই দীর্ঘ সময়ে কোনই ঝগড়া করিনি এইটা তো সম্ভব নয়। কিন্তু আমাকে যদি জিজ্ঞেশ করা হয়, সর্বশেষ ঝগড়া কবে করেছিলাম? এই প্রশ্নের উত্তর আমার পক্ষে দেয়া একেবারেই অসম্ভব। অবশ্য এই লেখা ‘ন’ যখন পড়বে, ও হয়ত মনে মনে ভাববে আমি যে ভুলোমন তাতে ২ দিন আগে ঝগড়া করলেও আমার মনে থাকত না। কাহিনী যে ঠিক তা না, এইটা হয়ত বুঝতে পারছেন। ৪ বছরের সম্পর্কে সবচেয়ে কম ঝগড়ার যদি কোন রেকর্ডের ব্যবস্থা থাকত, আমার ধারণা আমরা সেইটা জিততাম। অবশ্য বই-পুস্তক,নাটক-সিনেমার কথা সত্যি মানলে আমাদের সম্পর্ক টা একদম বোরিং, একটু আধটু ঝগড়া না থাকলে আর কীসের ভালোবাসা? মিষ্টি মিষ্টি ঝগড়া অবশ্যই আমার আওতার বাইরে। কে দেখতে বেশি কিউট এইটা নিয়ে কথা চালাচালি হলে সেইটা কে আর যাই হোক, ঝগড়া বলা যায়না। পরিচিত অনেক যুগলকেই দেখি কোমর বেঁধে ঝগড়া করে, আবার কিভাবে জানি আবার ভালও বাসে ২-১ দিন পর এবং এই সাইকেল চলতেই থাকে।

 

আমার নিজের কাছেই প্রশ্ন জাগে কেন এই পার্থক্য, কেনই বা আমাদের ঝগড়া এত কম হয়। চিন্তা করে আমার যা মনে হয়েছে প্রধান কারণ বন্ধুত্ব। আমাকে যদি জিজ্ঞেশ করা হয়, আমার সবচাইতে কাছের বন্ধুটি কে? কাকে সব ঘটনা না খুলে বললে পেটের ভাত হজম হয়না? আমার উত্তর ‘ন’।এই যে সব ঘটনা না বললে আমার আসলেই হজমে সমস্যা দেখা দেয়, শুধু এই কারণেই আমার বোধ হয় জীবনে পরকীয়া করা হবেনা। যাই হোক, তা না হয় নাই হল, সব চাইতে কাছের বন্ধুটির সাথে থাকার বিনিময়ে এই টুকু ত্যাগ মনে হয় স্বীকার করা যায়।

 

আমরা একেবারেই ‘মেইড ফর ইচ আদার’, তাই মনে হচ্ছে? আমি আসলে এই তত্ত্বেই ঠিক ভরসা পাইনা। এই ধরুন  হুমায়ূন আহমেদ এর কথা। বুড়ো বয়সে মেয়ের বয়সী এক মেয়ে কে বিয়ে করে বসে আছে। এই নিয়ে অনেকেই অনেক সমালোচনা করেছেন, প্রথম চিন্তায় হুমায়ূন আহমেদ তার লুলামি সংবরণ করতে না পেরেই শাওন কে বিয়ে করেছে বলে মনে হতেই পারে। কিন্তু আপনিই বলুন, হুমায়ূন যদি শুধুই লুলামি করতে চাইত, তাহলে বিয়ে করার প্রশ্নই উঠতোনা। লুল পুরুষ দের জন্য বিয়ে হচ্ছে চূড়ান্ত রকমের বোঝা। আমার তো মনে হয়, হুমায়ূন সত্যিই ভালোবেসেছিল বলেই শাওনকে বিয়ে করেছে। আর প্রথম বিয়েও তো অনেক ঝামেলা করে করেছিল বলে শুনেছি। ২০ বছর বয়সে মানুষ একজনের প্রতি যে ভালোবাসা অনুভব করে, ২০ বছর পর সেই অনুভুতির আমুল পরিবর্তন হতেই পারে। তাই ‘মেইড ফর ইচ আদার’ কথাটা তে আমার আপত্তি আছে। এমনকি আমার মনে হয়, এই তত্তে বিশ্বাসী না হলেই বরং ভালো, ভালোবাসা টিকিয়ে রাখার জন্য, আরও সমৃদ্ধ করার জন্য দুজন আরও বেশি সচেষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা মনে হয় তাহলে বেশি থাকে।

 

আমার খুব অবাক লাগে যখন দেখি যুগল দের একজন আর একজন কে সন্দেহ করছে। অবশ্য এই জিনিস এতটাই প্রকোপ আকার ধারণ করেছে যে অবাক আর হইনা। আমার সোজা কথা- আপনি গর্ভপাত বা সমকামিতা নিয়ে রক্ষণশীল আচরণ পোষণ করতেই পারেন, এতে আপনার জীবনে এর কোন বিরূপ প্রভাব নাই পড়তে পারে, কিন্তু সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনি রক্ষণশীল হলে আপনি কোনভাবেই শান্তি তে থাকতে পারবেন না। এই কে ফোন দিল, কেন দিল, কার সাথে গেল, কার সাথে আসলো, এইটা নিয়ে সারাক্ষণ ক্যাচ-ক্যাচ করতে থাকলে ভালো থাকা আসলেই মুশকিল। খুব সহজ লজিকে চিন্তা করুন-কেউ যদি না থাকতে চায়, কার সাধ্য তাকে আটকায়? আর যে থাকতে চায়না, তার জন্য কেন এত দর কষাকষি? খুব ভালো করে চিন্তা করুন, ঠিক সময়ে বিয়ে করলে আর মোটামুটি প্রত্যাশিত গড় আয়ু পর্যন্ত বাঁচলে(এবং অবশ্যই ভবিষ্যতে আরও নিকাহ করার কোন বাসনা না থাকলে), আপনার প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে আপনার প্রায় ৪০-৫০ বছর একসাথে থাকতে হতে পারে। চিন্তা করুন তো একবার, এত দীর্ঘ সময় যার সাথে থাকবেন বলে ঠিক করেছেন, তাকে বিশ্বাস না করতে পারাটা কত টুকু যুক্তিযুক্ত? আর বিশ্বাস করা একেবারেই অসম্ভব মনে হলে, হিশাব খুব সহজ, ওই বাক্তি আপনার জন্য না।

 

সারা জীবন শুনে আসলাম, নারী জাতি বড়ই রহস্যময়ী। খোদ স্টিফেন হকিং এর ও নাকি তাই বিশ্বাস। আমি অবশ্য এই রহস্যের স্বাদ এখনও পেলামনা। নারী-পুরুষ দুই ক্ষেত্রেই আমার তো মনে হয় শুধু দুই ধরনের মানুষ ই দেখলাম-বোকা আর স্মার্ট। তবে হ্যাঁ, রহস্য যদি কিছু থেকে থাকে, তার সিংহ ভাগ দাবি-ই পুরুষ জাতির। ১৫-২৫ বয়সী ছেলেরা অধিকাংশই তাদের চেয়ে বয়সে বেশ বড় মেয়ে দের প্রতিই আকর্ষণ বেশি থাকে, এই গ্রুপ এর সুবিধার্থে মিলফ, কুগার নানা টার্মেরও জন্ম হয়েছে। এই এরাই দেখা যাবে, বয়স ৪০ পার হলেই কিশোরী সব মেয়ের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাবে। এমন জটিল রহস্যের কাছাকাছি মানের রহস্যও আমি নারী জাতির কাছে পাইনি।

 

অনেক ছেলেকেই দেখি, জিন্স,টিশার্ট পড়া মেয়ের প্রেমে পড়ার পর কিছুদিন প্রেম করার পর তার পোশাক,চালচলন নিয়ে ব্যাপক চিন্তা দেখা দেয় তাদের মনে। পর্দা করাইতে চায়, হিজাব পড়তে বলে, খুব ভালো কথা, আমি মেয়েদের কাছে শুধু একটা অনুরোধ রাখব, আপনি আপনার ছেলে বন্ধু কে দয়া করে দাঁড়ি রাখতে বলুন, শুধু আপনিই সওয়াব পাবেন, আর আপনার প্রেমিক নবীর সুন্নত থেকে বঞ্চিত হবে, এইটা উচিত হবেনা।