অধ্যাপক ইরতিশাদ আহমদ মুক্তমনার একজন নিবেদিতপ্রাণ সদস্য। তিনি বহুদিন ধরেই মুক্তমনার সাথে, মুক্তমনাদের মুক্তবুদ্ধির আন্দোলনের সাথে জড়িত আছেন। তিনি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ছিলেন সতের বছরের এক কিশোর। তিনি তখনকার দেখা ঘটনাবলী মুক্তমনায় লিখেছিলেন সিরিজ আকারে। মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর পরে লেখা দশ পর্বের সেই সিরিজটিতে তিনি ব্যক্ত করেছেন তার দেখা একাত্তরকে, বিশ্লেষণ করেছেন তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিকোন থেকে। তাঁর সব বিশ্লেষণের সাথে হয়তো সবাই একমত হবেন না, কিন্তু তাঁর এই রচনাটি নিঃসন্দেহে আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য এক মহামূল্যবান সম্পদ। আমরা আনন্দিত যে, তার এই সিরিজটি আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে মুক্তমনায় ই-বই আকারে প্রকাশ করতে পেরেছি।

মুক্তমনার সকল পাঠক এবং লেখকদের স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।

সম্পাদকমণ্ডলী, মুক্তমনা

:line:

আমার চোখে একাত্তর

ইরতিশাদ আহমদ

চল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে, তবুও মনে হয় মাত্র সেদিনের কথা। যা নিজের চোখে দেখেছি তাকে ইতিহাস ভাবা যায় না, আমি ভাবতে পারি নি। তাই আমি যা লিখেছি তাকে ইতিহাস বলা যাবে না। স্মৃতিচারণ বলা যাবে কি? যেতে পারে, তবে এ শুধুই স্মৃতিচারণ নয়। আমার মনের অনুভূতি, আবেগ, পক্ষপাত, মতাদর্শ – সবকিছুর প্রতিফলন ঘটেছে এতে। প্রতারণাপরায়ন স্মৃতির সাথে লড়াই করতে হয়েছে নিরন্তর – সবসময় জিতেছি বলা যাবে না। তারপরেও কিছু কিছু ঘটনা যে ছায়াছবির দৃশ্যের মতো মনের বর্ণিল পর্দায় এমন স্পষ্ট হয়ে আঁকা আছে দেখে নিজেই অবাক হয়েছি। স্মৃতিচারণ না হলেও লেখাটা স্মৃতিনির্ভর। লিখেছি মনের তাগিদে, স্বতস্ফুর্ততার সাথে। এতে লেখাটা সমৃদ্ধ হয়েছে না তার অঙ্গহানি ঘটেছে – বিচারের ভার পাঠকের ওপরে রইলো।

মুক্তমনা আর অভ্র না থাকলে এই লেখাটা শুরুই হতো না, আর লেখাটা শেষ হতে পেরেছে মুক্তমনার ফরিদ আহমেদ, অভিজিৎ রায় আর কেয়া রোজারিও’র উৎসাহ আর তাগাদার জন্য। তাঁদেরকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ পাওনা মুক্তমনার পাঠকদেরও, অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন আপনারাই। …

প্রথম পর্ব

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয়, তখন আমার বয়স ছিল সতের। আমি তখন চট্টগ্রাম কলেজে এইচ, এস, সি-র ছাত্র। ঊনসত্তরে এস, এস, সি পাশ করে চট্টগ্রাম কলেজে ঢুকেছি। অস্থির সময়ের দাবী আর বেপরোয়া তারুণ্যের আবেগ-উচ্ছাস যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। ওই বয়স যেন ওইরকম সময়ের প্রতীক্ষাতেই থাকে। আমার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া তাই নিতান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। আমি ছিলাম ছাত্র ইউনিয়ন, মেনন গ্রুপের কর্মী। দল আমাকে রিক্রুট করেনি, আমিই তাদের খুঁজে নিয়েছিলাম। এস, এস, সি পরীক্ষার প্রস্তুতিকালীন সময়েই (জানুয়ারী-মার্চ, ১৯৬৯) দেশ অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল। ঊনসত্তরের বিশে জানুয়ারী আসাদ পুলিশের গুলিতে মারা গেলেন। দাবানলের আগুনে যেন সারা দেশ জ্বলে উঠলো। গভীর আগ্রহ আর উত্তেজনা নিয়ে প্রতিদিন পত্রিকা পড়তাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিবরণী প্রকাশিত হচ্ছিল দৈনিক পত্রিকাগুলোতে। অধুনালুপ্ত দৈনিক ‘আজাদ’ সেইসময়ে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছিলো আসাদের ডায়েরী। এই ডায়েরী আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদ ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং শিবপুরের কৃষক সমিতির একজন সংগঠক ছিলেন …(এর পর পড়ুন এখানে :pdf: )