(এই লেখাটি ইউটিউবের একটি ভিডিও এর ভাবানুবাদ। ভিডিও লিংকটি লেখার শেষে দেওয়া হলো। এই ভাবানুবাদের জন্য ভ্লগারের(Phil Hellenes) অনুমতি নেওয়া হয়েছে।)

আমরা আসলে কারা? আমি মনে করি, আমাদের সবার অধিকার আছে নিজেকে জিজ্ঞেস করার, সবার অধিকার আছে ক্রমাগত এই প্রশ্ন করার। যার জন্মগত অদম্য কৌতুহল আছে, সে যেই হোক না কেন তার জানার অধিকার আছে “সে আসলে কি”? আর তাদের প্রতি অভিশাপ যারা এই কৌতুহলিদের বলে, তোমার এসব জানার কোন দরকার নাই। কিন্তু প্রশ্নটা আমরা করবো কাকে? কিছু মানুষ বলে এই প্রশ্নটা ধর্মীয় ভাবে বিবেচনা করা উচিত। অথচ, এই একই দলের মানুষরা যদি রাস্তায় অজানা কিছু একটা খুঁজে পায় আর জানতে চেষ্টা করে সেটা আসলে কি জিনিস হতে পারে, তাদের মধ্যে কেই-বা সেই জিনিসটা নিয়ে একজন বিজ্ঞানীর কাছে না গিয়ে, তাদের ধর্মীয় নেতার কাছে যাবে! তাহলে কেন একজন ধর্মীয় পূজারী, ধর্মীয় যাযক বা ধর্মীয় নেতার কাছে “আমরা আসলে কি” এই বিষয়ে জানতে চাওয়া? আর আমরা যদি তাদের জিজ্ঞেসো করতাম, কিইবা উত্তর পেতাম? আর সেই উত্তর কিভাবেই বা আমাদের অনুপ্রাণিত করতো?

এখনকার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্রষ্টা হল তিনটি প্রধান আব্রাহামিক ধর্মের স্রষ্টা, যিনি কম বেশি বড় বড় ধর্ম গ্রন্থে একি কথা বলেন- আমরা সবাই হলাম পাপসর্বস্ব, গ্লানিসর্বস্ব তুচ্ছ সৃষ্টি; যারা একজন সর্বশক্তিমান, সকল জ্ঞানের আধার, নিখাঁদ স্রষ্টার কেবল মাত্র ইচ্ছার প্রতিফলন; যাতে তিনি আমাদের ক্ষমা করে দিতে পারেন কারন আমরা তার মত নিখাঁদ নই। তিনি আমাদের সকলকে ভালবাসেন, কেবলমাত্র বিনিময়ে চান আমাদের ভালবাসা, প্রার্থনা ও বাধ্যবাধকতা; চিরকালের জন্য।

এটা মেনে নিতে হলে আমাদের মত সকল স্বাধীনচেতা মানুষকে এটা মেনে নিতে হবে যে একজন স্রষ্টার সামনে আমাদের মাথা নিচু করে হাটু গেড়ে প্রতিনিয়ত প্রার্থণা করা যৌক্তিক। আর যদি এতটুকু মেনে নেই তাহলে এটাও মানতে হবে যে আমাদের অস্তিত্বের পিছে কোন এক কারন হিসেবে এটাও যৌক্তিক যে আমরা আসলেই তুচ্ছ এবং গ্লানিময় সৃষ্টি যাদের অবশ্যই স্রষ্টার কাছে প্রতিনিয়ত ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত কারন আমরা খুঁতসম্পন্ন এবং আমরা নিখুঁত হতে চেয়েও হতে পারি না। এই ধর্মগুলো আমাদেরকে সেই কৌতুহলী প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়, আমরা আসলে কি। কিন্তু সাথে সাথে তারা এটাও বলে দেয় আমরা কি কি বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে পারি আর কি বিষয় নিয়ে কখনোই মাথা ঘামাতে পারি না, কাকে আমরা বিশ্বাস করব, কাকে কখন ভালবাসবো, একটা চোরের দেহের ঠিক কোন অংশ কাটতে হবে, একটা শিশুর যৌনাংগের কোন অংশ কেটে নির্ভেজাল করতে হবে, এমনকি কোন হাত দিয়ে আমরা আমাদের শরীর কোন অংশ কিভাবে পরিষ্কার করব। ভাল একটা সংবাদ হল, আমরা এই স্রষ্টার যেই ধর্মের যেই গ্রন্থেই যাই না কেন, আমাদের সৃষ্টির গুপ্ত কারণ ও ব্যাখ্যা যেখানেই যেভাবেই দেওয়া হয়েছে তা সবই ডাহা ভুল। হয়তো তাহলে এই স্রষ্টাই ভুল ছিল যখন সে বলেছে, আমাদের প্রতিনিয়ত নিজেদের অস্তিত্বের জন্য লজ্জিত হওয়া উচিৎ!

কোথায় সেই ইশ্বর যে এতটাই নিখুঁত, যে সে চাইবে না আমরা মাথা নত করে থাকি তার কাছে? কোথায় সেই ইশ্বর যে এতটাই নিখাঁদ, যে সে সহ্য করতে পারে না আমরা প্রতিনিয়ত হাঁটু গেড়ে সকাল সন্ধ্যা প্রার্থণা করে যাচ্ছি? আমি যদি লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রোবট বানাতাম আর তাদের সৃষ্টির প্রথম থেকেই প্রোগ্রাম করে রাখতাম যাতে তারা কেবল আমাকেই পূজো করে, আমার সম্পর্কে দিন রাত স্তুতিমূলক গান গায়, আমার নির্ভুলতা স্বরণ করে প্রতিনিয়ত ইবাদত করে, আপনারা অন্তত আমাকে ক্রুর অসুস্থ মনের মানুষ ভাবতেন! ধর্ম আসলে আমাদের সবাইকে জোর করে এক মহান স্রষ্টার অসামান্যতা চাপিয়ে দেয় না, বরং তারা যে স্রষ্টাকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চায়, সে স্রষ্টাই মহাউন্মাদ। আর এর প্রতিফলন পড়ে বিশ্বাসী অবিশ্বাসী আমাদের সবার উপর।

আমরা যদি আমাদের মনকে ঐ ধরনের স্রষ্টাকে বিশ্বাস করার জন্য উন্মুক্ত করি, যেই স্রষ্টা জানায় এই পার্থিব জীবনই শেষ নয়, অর্থাৎ আসলে আমরা কেউ সত্যিকার অর্থে মৃত্যুর পর চিরকালের জন্য হারিয়ে যাই না, আবার একসময় অনন্তকালের জন্য জেগে উঠি এবং সেই একি স্রষ্টা আমাদেরকে একজন মানুষকে মারার যৌক্তিকতা দেয়, সে যেই মানুষই হোক না কেন, সে যেই অপরাধই করুক না কেন, তাকে যদি সেই স্রষ্টার নামে যৌক্তিকভাবে পার্থিব জগতে হত্যা করতে পারি, তবে আমরা যত বেশি করে বিশ্বাস করব আমরা আসলে কেউই সত্যিকার অর্থে শুন্যে হারিয়ে যাই না তত বেশি করে মানুষকে হত্যা করার অপরাধবোধ হয়ে উঠবে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর। এ যেন এক ভয়াবহ হরর সিনেমার কাহিনী।

আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি একবিংশ শতাব্দীতে, যে সময়ে মানব গোষ্ঠীর বিশাল এক অংশ এখনো সেই আব্রাহামের ইশ্বর বরাবর প্রার্থনা করে, এই সেই আব্রাহাম যে ইহুদী জাতির পিতা এবং মুসলিম জাতিরও পিতা। এই সেই আব্রাহাম যাকে অনেক খ্রিস্টানরা প্রেরণা ও ত্যাগের উদাহরণের মহান উৎস হিসেবে গণ্য করে। এই সেই আব্রাহাম যে মহাবিশ্বের স্রষ্টার করুণার প্রতিদান দিতে গিয়ে এবং স্রষ্টার প্রতি ভালবাসা দেখাতে গিয়ে নিজের ছেলেকে বলি দিতে নিয়েছিল। এই আব্রাহামিক ধর্মগুলো আসলে কি এমন করেছে যে তার অনুসারীদের মাথায় ঢুকে গিয়েছে যে এই কাহিনী শুধু অসাধারণ নয়, এটা স্রষ্টার প্রতি আনুগ্যতের খুবই সুন্দর নিদর্শন! আমাদের মধ্যে আজ কে আছে যে ইব্রাহিমের কাছে আমাদের নিজেদের ছেলেমেয়েকে দেখভালের দায়িত্ব দিব? ভেবে দেখ, ধর্মীয় বানী আর ধর্মীয় চিন্তাভাবনা কিভাবে বিশ্বাসীদের যৌক্তিক মনকে পালটে দিয়ে অযৌক্তিকতায় নিয়ে যাচ্ছে। হয়তো এই সকল বিশ্বাসীদের চোখে এই নিখাঁদ স্রষ্টার আহবানে যেকোন শিশুকেই হত্যা করা হয়ে উঠতে পারে নির্ভূল! এই সবকিছু শুনে মনে হচ্ছে বর্বরতা, কিন্তু তা বললেও কম বলা হবে। এই সর্বশক্তিমান স্রষ্টা যেকোন কিছুই করতে পারে, শুধু মাত্র তার ধর্মীয় গ্রন্থগুলো থেকে অমানবিক একটাও বানী উঠিয়ে নিতে পারে না। কিন্তু কেবল মাত্র একজন সত্যিকার অর্থে মনে প্রাণে বিশ্বাসী জানতে চায় না কেন স্রষ্টা এমনটা করে!

একজন স্রষ্টাকে এই “মহাবিশ্ব কি” জিজ্ঞেস না করে বরং মহাবিশ্বকেই সরাসরি আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি সে কি, কিভাবে তৈরী, কোথা থেকে আসল। জিজ্ঞেস করতে পারি বিজ্ঞানের আলোকে। স্রষ্টা এই প্রশ্নের কোন মান সম্মত উত্তর না দিলেও মহাবিশ্ব কিন্তু ঠিকই উত্তর দিবে। উত্তর দিবে সংখ্যার মাধ্যমে, বিভিন্ন মানের মাধ্যমে, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্যের মাধ্যমে। গাণিতিক মান, সংখ্যাগুলো ভুল হতে পারে, কিন্তু অপার্থিব শব্দগুলোর মত ডাহা মিথ্যা হতে পারে না। আমাদের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ভুল হতেই পারে, কিন্তু নতুন বৈজ্ঞানিক মানগুলোই আবার সব ভুলগুলো ধরিয়ে দিবে একে একে। এই সংখ্যাগুলোই আমাদের এত নির্ভুল উত্তর দিয়েছে যা কোনদিনও কোন স্রষ্টা দিতে পারে নি। এরকম কোটি কোটি উত্তরের মাধ্যমেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সেই প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে। আমরা কৌতুহলি মনে দুটো কাঠি ঘসে ঘসে আগুন জ্বালিয়েছি এবং নিজেকে প্রশ্ন করেছি এই আগুন কোথা থেকে এলো? হাজার হাজার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমরা আজ দুইটা প্রোটন নিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষ করে দেখেছি যে তা প্রায় আলোর গতির কাছাকাছি ছুটে যায়। ঐ সংখ্যাগুলোই আমাদের আজ নিয়ে গেছে এক ভার্চুয়াল জগতে যেখানে আমরা চিন্তাই করতে পারি নি কখনো যেতে পারব, দেখিয়েছে এমন সব জগত যা আগে কখনো কোন মানব চোখ দেখে নাই। সংখ্যা দিয়েই আমরা তৈরি করেছু ভার্চুয়াল সিমুলেশন আর চলে গেছি একটা নক্ষত্রের মধ্যেখানে, অথবা কোন পরমানুর কেন্দ্র বিন্দুতে।

একটা ব্যাপার যেটা আমরা সচরাচর বুঝতে পারি না তা হলো, আমরা যেদিন পৃথিবীর কোন গবেষণাগারে একটা একক পরমাণুর আনবিক গঠন নির্ভুলভাবে বর্ণনা করব সেদিন আমরা মহাবিশ্বের প্রতিটা তারা নক্ষত্রকে যেকোন সময়ের থেকে আরো নিখুঁতভাবে দেখতে পাবো। এ যদি সত্যি হয় তবে এর থেকে কাব্যিক আর কি হতে পারে! কিন্তু যদি এটা আমরা কেবল বিজ্ঞানের সংখ্যা থেকেই জানতে পারি, তবে কি তার কাব্যিক সৌন্দর্য্য কমে যাবে কোনভাবে? তুমি হয়তো আমাকে বলবে আমার সব বিশ্বাস এই সংখ্যার উপরে। এর উত্তরে আমি তোমাকে বলবো, আমি একটা প্যারাসুট নেব তুমি তোমার পবিত্র গ্রন্থগুলো নাও, আমাদের দেখা হবে এই পাহাড়ের পাদদেশে।

এই সংখ্যাই আমাদের বলে আমরা আসলে কেবল মাত্র এক প্রাণী, আমরা কিছু অণু-পরমাণুর সমষ্টি, আমরা কেবলি একটা এনার্জির ধারক। আমরা জানি না এই এনার্জি কোথা থেকে এসেছে। ১৪ বিলিয়ন বছরের পুরনো এই মহাবিশ্বকে দেখলে কোনভাবেই এটা একক কোনো সুপার ন্যাচারাল শক্তির ফসল তা অনুভূত হয় না। আবার যদি আমরা নিজেদের কেবলি মাত্র এনার্জির ধারক, শুধুই মাত্র অণু-পরমাণুর সমষ্টি, বা কেবলি এক তুচ্ছ প্রাণী হিসেবে বিবেচ্য করি তাও যেন সঠিক ভাবে চিত্রায়িত হয় না। আমরা জানি অলৌকিক এক আলোর ঝলকানিতে একটা আস্ত হাসপাতাল তৈরি হওয়া অসম্ভব। কিন্তু আমরাও কেবল মাত্র অণু-পরমাণুর লীলাখেলা হতে পারি না, সংগীত যেমন কেবলি মাত্র সাউন্ড ওয়েভ এর লীলাখেলা না। ঠিক যেন এভাবেই একটা প্রাণী কে আমরা কেবল মাত্র জীবিত পশু হিসেবে দেখতে পারি না। আমরা যখন সামগ্রিকভাবে এই মহাবিশ্বের কথা চিন্তা করি তখন দেখি এই প্রাণই কতটা বিরল, তার থেকেও বেশি বিরল বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রাণী। আর যখন আমরা কয়েক বিলিয়ন বছর সময়ের কথা চিন্তা করি তখন একটি সামান্য আনবিক প্রাণীও আর সামান্য হয়ে থাকে না, তার প্রতিবেশিই হয়তো পূর্ব পুরুষ আজকের সব বুদ্ধিমান প্রাণীর। মানুষ যখন অন্য প্রজাতির কোন বুদ্ধিমান প্রাণীর, যেমন ডলফিন বা এইপদের মুখোমুখি হয় তখন অনেক উদাহরণ আছে একে অপরকে সহায়তা করার। কখনো ডলফিন মানুষকে হিংস্র হাঙ্গরের আক্রমণ থেকে বাঁচায়, কখনো মানুষ আটকা পরা ডলফিন ছুটিয়ে দিতে এগিয়ে আসে। চিড়িয়াখানায় এক আহত মানব শিশুকে এক মা গরিলা সযতনে দেখভাল করছে এমন ছবি ইন্টারনেটে দেখাই যায়। আমাদের এক প্রজাতির আরেক প্রজাতিকে সাহায্য করার এই উদাহরণ কি কেবলি সহজাত প্রবৃত্তি? মাছের প্রজাতিরা তা করে না, সরিসৃপরা করে না, পাখিরা করে না। কিন্তু এরকম সহানুভূতিমূলক সহায়তা বুদ্ধিমান ও সামাজিক বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে প্রায়শই দেখা যায়। কিন্তু আমরা যদি মানবিকবোধ ও মায়া থেকে অন্য প্রাণীকে সাহায্য করতে যাই, তাহলে আমরা কি করে বলতে পারি অন্য প্রজাতির বুদ্ধিমান প্রাণীরাও এমন কিছু অনুভব করছে না, এমন কি হতে পারে না তারাও আমাদের মতই ভালবাসাও অনুভব করে!

এখন আমরা যদি স্বর্গে যেতে পারি, তাহলে এই বুদ্ধিমান প্রাণীরা কেন যেতে পারবে না? শেষমেশ কি দাঁড়ালো, আসলে কি বা কারা আমরা? আমি জানি না! কিন্তু এই না জানাই কি এক ধরনের স্বাধীনতা নয়? চিন্তা করে দেখ, কেউ তোমাকে কিছু বলতে পারবে না, কি করতে হবে বা না করতে হবে, যদি কেউ জানতেই না পারে আসলে আমরা কি? আমরা আমাদের চিন্তারও অধিক স্বাধীন।

হে আব্রাহামের প্রিয় সন্তানেরা, তোমরা যারা আব্রাহামের বিশ্বাসের উপর ভিক্তি করে নিজের ধর্মীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলেছ, আমি বলছি না কখনোই কোন স্রষ্টা নাই। আমি খালি এটা বলছি, এই মহাবিশ্বের মত এত সুন্দর একটা সৃষ্টির যে স্রষ্টা, সে কি করে মানুষেরই মত হিনমন্যতায় ভুগে, সেই মানুষেরই মত একি দাবী- শ্রদ্ধা ও সম্মানের দাবী, স্বীকারোক্তি পাবার দাবী, আনুগত্য ভালবাসা বিশ্বাসের দাবী। আবার একই সাথে মানুষের মতই ক্ষুদ্রতা, মানব সম্প্রদায়ের সবচেয়ে ঘৃণ্য সেই সব মানুষের মতই অমানবিক প্রতিহিংসা, গণহত্যা করার মত ক্রোধ। এ সবই যেন যে কোন সাধারণ মানুষের বৈশিষ্ট্য অথবা বড়জোর কোন শিম্পাঞ্জি গোত্রের পুরুষ নেতার বৈশিষ্ট্য। হে আব্রাহামের সন্তানেরা, তোমরা আসলে কাকে পূজা করছ?

আমাকে ক্ষমা করো, একজন অবিশ্বাসী হয়ে তোমাদের মনের চিন্তাগুলো বুঝতে যাওয়া আসলেও বেশ কঠিন। আমি ভাবছি, তোমরা সেটা আদৌ কখনো বুঝতে পারবে কিনা এটা এত কঠিন কেন আমার জন্য! আসলে অনেক উঁচু একটা জায়গা থেকে রাতের তারার আলোয় অনেক দূর পর্‍্যন্ত দেখা যায়, সঠিক করে বলতে গেলে ১৩.৭ বিলিয়ন আলোক বর্ষ পর্যন্ত দেখা যায়। আর তোমরা সেখানে গভীর অন্ধকারে ঠিক করে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল তাই দেখতে পাও না।

ভীষণ ঝড়ের এক রাতে আমি আর আমার এক বন্ধু যখন আমাদের ছোট্ট দোদুল্যমান জেট প্লেইনটা নিয়ে জীবন বাজি রেখে প্রায় ল্যান্ড করতে যাব, তখন পাশে ফিরে তাকালাম বন্ধুর মুখের দিকে, দেখার জন্য মৃত্যু ভয়ে সেও আমার মত সাদা হয়ে গিয়েছে কিনা। দেখি আমার বন্ধু জানালার পাশে দিয়ে দুইশ মাইল বেগে ছুটে যাওয়া খড়কুটো দেখে অট্টহাসি দিচ্ছে! আমি জিজ্ঞেস করলাম তুমি হাসছো কেন? সে আমাকে বললো, কেন নয়? পরে ভাবলাম অনেকে বলে, আর আমারো মনে হয়, তুমি তোমার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রাণবন্ত জীবন্ত অনুভব কর তখন, যখন তুমি এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখিন হও যা তোমাকে বোধ করায় তুমি আসলে অমর নও। তাহলে যদি আমরা নিজেদেরকে কোনোভাবে বিশ্বাস করাতে পারি, যে আসলে আমরা কোন না কোন ভাবে অনন্তকাল বেচে থাকব, তাহলে কি আমরা কখনোই সত্যিকার অর্থে বেচে থাকার মানেটা বুঝতে পারব?

হে আব্রাহামের সন্তানেরা, আমি জানি তোমরা বেশিরভাগই দয়ালু, অনেক ভাল মনের মানুষ এবং আমি তোমাদের এই মানবিক গুনগুলোর অনেক প্রসংশা করি। কিন্তু এই ধর্মের অনুসারী হয়ে তোমরা আমাকে এই বোধ করাও যে, এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা একদিন মনের বশে এক মানব শিশুর দিকে আঙ্গুল তুলে বলে, একে আমার উদ্দেশ্য হত্যা করো! আমার এখন কি করা উচিৎ? আমাকে কি বলতে হবে, তোমাদের চিন্তা ভাবনায় হয়তো কোন যৌক্তিকতা আছে!

মূল ভিডিও