সেদিন সারাদিনই এক মিটিং থেকে আরেক মিটিঙে ধুম ছুটোছুটি চলছে। এত ব্যস্ততার মধ্যেও, পড়ি কি মরি করে দৌড়ুতে দৌড়ুতেও, মাথায় চরকির মত একটা চিন্তাই ঘুরছে, কই হাসপাতাল থেকে এখনো তো ফোনটা এলো না, ৪৮ ঘণ্টা তো পার হয়ে গেছে সকাল বেলাতেই…।  বিকাল তিনটার দিকে বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই ফোন কলটা এলো। কিন্তু ব্ল্যাকবেরিতে ভেসে ওঠা দেখে নামটা দেখেই চমকে উঠলাম। এ কি হচ্ছে? কালবৈশাখীর আগ-মুহূর্তের নিস্তব্ধতায় তলিয়ে যাচ্ছি কেন আমি, শিরশিরে এক শীতল অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ছে কেন আমার শরীরে?  সাধারণত খুব খারাপ কোন খবর না থাকলে সার্জেনরা ব্যক্তিগতভাবে ল্যাবের ফলাফল নিয়ে কথা বলার জন্য ফোন করে বসেন না। খুব ভালো কোন খবর তো আশা করছিলাম না, পুরো থাইরয়েড গ্ল্যান্ডটা ফেলে দিতে হবে ক’দিন পরে, ভালো আর মন্দের মাঝখানে নিরপেক্ষ কোন খবর দিতে তো আর ইনি ফোন করবেন না, তাহলে আর বাকি থাকলো কি? ইচ্ছার বিরুদ্ধেই যেন মাথার ভিতরে হিসেব কষার কাজটা সম্পূর্ণ হয়ে গেল। ফালতু আরেকটা  মিটিং সেরে অফিসের দিকে রওনা হয়েছিলাম, নিজের অজান্তেই বড় হলওয়ের এক কোনায় দাঁড়িয়ে পড়লাম। ফোনের রিংটা বেজেই চলেছে .. এক….দুই… তিন, চার, নাহ দেরী হয়ে যাচ্ছে, এখন তো ধরতেই হবে! খুব শান্তভাবে নিজের পরিচয় দিতেই ওপাশ থেকে সার্জেন এমি চেনের বহু পরিচিত সেই খড়খড়া গলাটা  ভেসে আসলো। হ্যা, ইনিই এমোরি ক্যান্সার ইন্সটিউটের অত্যন্ত পারদর্শী সেই সার্জেন যিনি আমার গলায় চালাবার জন্য বড় ছুরিটাতে শান দিতে শুরু করে দিয়েছেন। পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথেই ডাক্তার চেন কোন রকম ভণিতা না করেই (আমার দৃঢ় বিশ্বাস ভণিতা করার জন্য যে হরমোনগুলোর দরকার সেগুলো ওনার মধ্যে নেই) বলতে শুরু করলেন,

–   শোন, ল্যাব রেজাল্টের খবরটা দেওয়ার জন্য আমি নিজেই ফোন করলাম, তোমার সাথে এ নিয়ে একটু বিস্তারিত কথা বলা দরকার। ইয়ে, নাহ, মানে তোমার ক্যান্সার নিয়ে আমরা প্রথমে যা ভেবেছিলাম তা একেবারেই ঠিক ছিল না, এটা আসলে তার চেয়েও অনেক বেশী ছড়িয়ে পড়েছে ইতোমধ্যেই। আলট্রাসাউন্ডের এই নতুন রিপোর্ট থেকে দেখতে পাচ্ছি যে গলার বেশ ক’টি লিম্ফ নোডে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে। তার মানে বেশ ভালো রেটের মেটাস্ট্যাসিস (matastatisis, ল্যাটিন থেকে নেওয়া, মেটা এবং স্ট্যাসিস শব্দ দুটোর সমন্বয়ে তৈরি এই শব্দটার অর্থ হচ্ছে ‘beyond stillness’ অনেকটা স্থিতির সীমানা পেরিয়ের মত।  ক্যান্সারের বিস্তার বোঝাতে এই শব্দটা ব্যাবহার করা হয়, আজকাল যেটা অনেক পরিবারের জন্যই ডাল ভাতের মত দৈনন্দিন এক শব্দে পরিণত হয়েছে। মেটাস্টিসিস হয়েছে বলা মানে হচ্ছে ক্যান্সার বা টিউমার কোষগুলো তার স্থানীয় অঙ্গের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে, যেমন ধরুন, এই ক্ষেত্রে থাইরয়েড ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে আমার গলার বিভিন্ন লিম্ফ নোড, শিরা, ধমনী এবং স্নায়ুগুলোতে) দেখা যাচ্ছে তোমার থাইরয়েড গ্ল্যান্ড এবং গলার চার পাশে। ক্যান্সারের কোষগুলো যে এতোটা ছড়িয়ে গেছে সেটা প্রাথমিক রিপোর্টগুলো থেকে কিন্তু একদমই বোঝা যায়নি। কিন্তু কতটা আগ্রাসী-ভাবে এটা ছড়িয়ে পড়েছে তা দেখার জন্য আমি এখন আবার নতুন কোন টেস্ট করতে চাই না, ক’দিন পরে সার্জারির সময়ইতো পুরো গলাটা খুলে দেখতে পাবো, তখনই ক্যান্সারের বিস্তৃতিটা লিম্ফ নোডের বাইরে গলার বিভিন্ন অংশে কতটা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে তা বোঝা যাবে।

আমি খুব শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে একে ক্যান্সারের ঠিক কোন স্তর বলে মনে করছো?

– তোমার বয়স আর ক’ছর বেশী হলেই এটাকে স্তর ৩ (stage 3) বলে হয়তো গণ্য করতে হত। আমরা যে প্রথমে একে স্টেজ ১ বলে ভেবেছিলাম তা যে ভুল ছিল সে ব্যাপারে আমি একেবারেই নিশ্চিত।

একি গলাটা বসে যাচ্ছে কেন? কেশে গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে এর প্রগ্নোসিস (রোগের সম্ভাব্য গতিধারা সম্পর্কে পূর্বাভাস) কি?

– সার্জারির সময় বা পরে রেডিয়েশন চিকিৎসার পরে স্ক্যানের সময় যদি দেখা যায় যে লিম্ফ নোডগুলোর বাইরেও গলার ভিতরের ছোট ছোট স্নায়ু বা রক্তনালীগুলোতে ক্যান্সার কোষগুলো ছড়িয়ে পড়েছে তাহলে চিকিৎসার ব্যাপারটা বেশ জটিল হয়ে দাঁড়াবে। মেটাস্ট্যাসিস যত বেশী হবে ততই ভবিষ্যতে আবার ক্যান্সার ফিরে আসার সম্ভাবনা বাড়ে এবং দুর্লভ কিছু কেসে প্যাপিলারি ক্যান্সারের হাড়ে বা ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও বাড়তে থাকে।

তাহলে এ ধরণের অগ্রসর স্তর থেকে আরোগ্যের হার কত জিজ্ঞেস করাতে ডাক্তার চেনের গলা খুব স্বভাব-বিরুদ্ধভাবেই কোমল হয়ে আসতে শুরু করলো…

– ও হ্যা তোমাকে বুঝতে হবে যে ক্যান্সার সম্পর্কে আমরা আর আরোগ্য(cure) কথাটা ব্যবহার করি না, উপশম(remission) বলি কারণ ৫-১০-২০ বছর পরেও তা ফিরে আসতে পারে। আগে আমরা মনে করতাম যে ক্যান্সার সারতে পারে, কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই দেখছি যে এর আরোগ্যের বিন্দুমাত্র কোন নিশ্চয়তা নেই। যদিও থাইরয়েড ক্যান্সারে মৃত্যুর হার খুবই কম, এর প্রাথমিক উপশমের হার বলতে গেলে প্রায় ৯৫% তবে দেরী করে অগ্রসর স্তরে গিয়ে ধরা পড়লে বা অনেক বেশী ছড়িয়ে পড়লে তেমন কিছু আর করার থাকে না। কিন্তু শোন, এটা নিয়ে বেশী চিন্তা করে লাভ নেই, সার্জারির সময় খুলে না দেখা পর্যন্ত এটা নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না……

আমি খুব সহজে কাঁদি না, কিন্তু অনিয়ন্ত্রিতভাবে অঝোর ধারায় দুচোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়াকে যদি কান্না বলে তাহলে সেদিন খুব কেঁদেছিলাম। ডাক্তার চেন নভেম্বরের আসন্ন সার্জারির প্রস্তুতি নিয়ে কি যেন সব বলে চলেছেন কিন্তু ততক্ষণে তার কথাগুলো বহুদূর থেকে ভেসে আসা আওয়াজের মত হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। আমার মাথায় হাজারও এলেবেলে চিন্তার সুনামি আছাড় খেয়ে পড়তে শুরু করেছে। প্যান্ডোরার এই নচ্ছার বাক্সটা খুলে দিল কে? …কতক্ষণে অভিকে ফোন করবো, তাহলে কি অভির সাথে আর ক’টা বছরও থাকা হবে না, তৃষাকে কি এখনই সবকিছু বলা ঠিক হবে, আমার বাবামা শুনে কতটা মন খারাপ করবে, বা সহকর্মীরা কাজে আমাকে এভাবে কাঁদতে দেখলে কেমন অস্বস্তিকর একটা ব্যাপার হয়ে যাবে থেকে শুরু করে এইরে আবার সেই অসহ্য অর্থহীন প্রব্যাবিলিটি সাহেব এসে হাজির হয়ে গেলেন পর্যন্ত বহু অসংলগ্ন অন্তহীন চিন্তার ডুগডুগি ক্রমাগতভাবে বেজে চলেছে আমার মাথায়। আমার ক্যান্সারটা যদি এতই অগ্রসর স্তরে পৌঁছে থাকে যার চিকিৎসা সম্ভব নয় তাহলে সারা পৃথিবীর মানুষের মধ্যে আরোগ্যের হার ৯০% না ৯৯% তা জেনে আমার কি কচুটা হবে, আমি যদি সেই এক ভাগ অভাগার দলে পড়ি তাহলে এটাই আমার জন্য একমাত্র বাস্তবতা যার সম্ভাবনা সেই মুহূর্তে পুরোপুরি শতভাগ।

এই প্রব্যাবিলিটি নামক ব্যাপারটা কিন্তু কোনদিনও আমার মাথায় ঢুকলও না। এটার কোন মানে নেই বললেই আমার আশে পাশের এক মহান সমাজবিজ্ঞানী বন্ধু এবং আরেকজন বিজ্ঞান লেখক কেমন যেন তেড়ে আসেন। কখনও বা মুখে বলেই ফেলে আর কখনো বা মুখভঙ্গি দিয়ে বুঝিয়ে দেয়, ‘তোমার মত হাবারাই শুধু এ ধরণের কথা বলতে পারে’। কিন্তু একটা জনপুঞ্জে শতকরা কতজন লোকের কি হল তাতে আমার কি এসে গেল, আমার গালে একটা থাপ্পড় মেরে আপনি যদি বলেন ওহ এতো কিছু না, সাত বিলিয়ন লোকের মধ্যে শতকরা এক ভাগ মানুষও এভাবে থাপ্পড় খায় না, তাতে আমার কি লাভটা হবে? আমার জন্য তো তখন সেই মুহূর্তে থাপ্পড় খাওয়ার ব্যাপারটা বিমূর্ত কোন সম্ভাবনা হয়ে বসে নেই, শতকরা একশ ভাগ বাস্তবতায় পরিণত হয়ে গেছে। অদৃষ্ট মানেন কি না মানেন তার জন্য কিন্তু পরিহাস করা  বসে থাকে না। বহু বছর ধরে যে আমি সম্ভাবনায় ভরপুর এই ফালতু বিভাগটার অসাড়তা নিয়ে হাউমাউ করে আসছি সেটাই কিনা শেষ পর্যন্ত সিন্দবাদের ভূতের মত আমার ঘাড়ে এসে জুড়ে বসলো!

ক্যান্সার ধরা পরার পরে গত ৭ সাত মাসে এটাই বোধ হয় ছিল আমার জন্য সর্বোচ্চ ভেঙেপড়া মুহূর্ত। থাইরয়েড ক্যান্সারের ব্যাপারটা জেনেছিলাম এরও প্রায় ৪ মাস আগে, খুব আকস্মিকভাবেই। আমার ঘাড়ে দুটো ডিস্কে ডি-জেনারেশন দেখা দিয়েছিল কয়েক বছর ধরে, এর ফলে আমার বহুকালে সাথী মাইগ্রেনের ব্যথাটা কেমন যেন মাথায় উঠে বসতে শুরু করেছিল,  মাঝে মাঝেই এর আক্রমণে ধুপ করে ধরাশায়ী হয়ে যাচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে মহাবীরের মত সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম নাহ এবার C5-C6 এ ফিউশন সার্জারিটা করিয়ে এস্পার কি ওস্পার করিয়েই ফেলবো।  আমার বহুদিনের পুরনো নিউরলিজস্টের ঘ্যানঘ্যানানিতে সাড়া দিয়ে একদিন এক নিউরোসার্জনের অফিসে গিয়ে হাজির হলাম, কথাবার্তা বলে বেশ বিরক্ত হয়ে বাড়ি ফিরলাম আরেক রাউন্ড এমআরআই করার আদেশপত্র নিয়ে।  এমআরআই করতে করতে গত কয়েক বছরে ভর্তা হয়ে গেছি, সার্জেনকে গালাগালি করতে করতে আবার ঢুকলাম সেই ঢাউস মেশিনটার ভিতরে। পরদিন ফেরত গেলাম তার অফিসে অপারেশনের তারিখ ঠিক করতে। ডঃ ডিশ ঘরে ঢুকেই বললেন আমার সাথে ওই ঘরে চল, কথা আছে। গেলাম, আমাকে বড় বড় দুটো মনিটরের সামনে দাঁড় করিয়ে এমআরআইএর ছবিগুলোর একটা জায়গায় হাত দিয়ে দেখিয়ে বললেন, দেখো তোমার থাইরয়েড গ্ল্যান্ড এ বেশ বড় দুটো সিস্ট দেখা যাচ্ছে, আমার বাপেরও সাদ্ধি নেই এগুলোর অর্থ বোঝা। তুমি এখনি আমার পাশের অফিসের ইএনটি স্পেশালিষ্টের সাথে কথা বল, তার সাথে কথা বলে এগুলো কী না জানা পর্যন্ত আমি তোমার সাথে কোন কথা বলছি না।

ছবিগুলো দেখে নাক কান গলার ডাক্তার বিজ্ঞের মত জানালেন যে এ নিয়ে ভয় পাবার মত কিছু তিনি দেখছেন না, উনি শতকরা ৯৯ ভাগ (এই রে আবারো সেই সম্ভাবনার কচকচানি) নিশ্চিত যে এগুলো আসলে কিছু না। থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে ছ্যাঁচড়ার মত শিষ্টের জন্ম হতে থাকে এর বেশীর ভাগই ক্যান্সারে রূপ নেয় না। তবে এক্কেবারে ১০০ ভাগ (নাহ এ থেকে আমার মুক্তি নেই) নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমার আলট্রাসাউন্ড এবং সেই সাথে ফাইন নিডল বাইঅপ্সিটাও করিয়ে নেওয়া উচিত। সম্ভাবনার বিজ্ঞানের কথা শুনলে বিরক্ত হই তো কি হয়েছে, এরকম উঁচু সম্ভাবনাময় ভালো কথার নিশ্চয়তা শুনলে মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়। মনের মধ্যে ‘৯৯ ভাগ’ গ্যরান্টির সুখ অনুভব করতে করতে গেলাম রেডিওলজিস্টের কাছে। আলট্রাসাউন্ডের টেকনিশিয়ান বললেন,

-নাতো বাম পাশের সিস্টগুলোতে কোন সমস্যা নেই, তবে ডান পাশে দুটো খুব ছোট ছোট দু’টো সিস্ট দেখতে পাচ্ছি, তবে আমি ৯৯ ভাগ নিশ্চিত এগুলো কিছু না, দাঁড়াও রেডিওলজিস্টকে ডেকে আনি।

উনি এসে বললেন

-০.৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে ছোট সিস্টগুলোতে আমি সাধারণত বায়োপ্সি করি না, তবে তোমার একটা সিস্টের মধ্যে কেমন যেন এবড়োখেবড়ো একটা ভাব দেখতে পাচ্ছি, চল দুদিকের সবগুলো সিস্টেই বায়োপ্সিটা করে ফেলি। শুরু হল আমার গলায় দীর্ঘ ৪ ঘন্টাব্যাপি সুইয়ের খোঁচাখুঁচির খেলা, প্রতিটা সিস্টে চারবার করে সুই ঢুকিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কিছুটা করে অংশ কেটে বের করে আনার সেই ভয়াবহ প্রক্রিয়া। দুদিন পরে এতগুলো ডাক্তারের প্রব্যালিটির নান্দনিক সব হিসেবকে মিথ্যে প্রমাণ করে আমাকে জানানো হল যে তারা ৯৫% নিশ্চিত যে আমার থাইরয়েড প্যাপিলারি ক্যান্সার হয়েছে।

প্রথমে ‘ক্যান্সার’ কথাটা শুনে মনটা একটু খারাপ হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই তা কেটে গিয়েছিল, খুব কাছের দু’একজন ছাড়া আর কাউকে এ নিয়ে কিছু বলিওনি। একটু অসহিষ্ণু হয়ে হয়তো ভেবেছিলাম এত তাড়াতাড়ি তো ক্যান্সারের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, আরও দুই এক দশক পরে হলে না হয় তাও বুঝতাম। বরং আমার মা বাবা যখন বারবার দুঃখ করে বলতে শুরু করলেন যে তারা এ-বয়সেও এত সুস্থ আছেন অথচ সেখানে আমার কি এখনই ক্যান্সার ধরা পড়ে তখন উলটো তাদেরকে বিজ্ঞানের সাত পাঁচ ( নাকি প্রব্যাবিলিটির সাত পাঁচ) বুঝিয়ে সান্ত্বনা দিতে শুরু করেছিলাম।  কয়েকদিনের মধ্যেই মহাগুরু গুগুলের কল্যাণে থাইরয়েড ক্যান্সার সম্পর্কে মহাজ্ঞান অর্জন করে ফেললাম, কয়েক দিন ধরে বহু লেখা বহু রিসার্চ পেপার পড়ে রীতিমত একে হেলাফেলা করতে শুরু করে দিলাম। ডাক্তার সাথে সাথে সার্জারি করে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডটা ফেলে দেওয়ার পরামর্শ দিলেও যাই যাচ্ছি করে করে প্রায় ২ মাস ওমুখোই হলাম না। এই অবহেলার পিছনের কারণটাও কিন্তু ছিল সেই পুরনো ভিলেন প্রব্যাবিলিটি! একে তো থাইরয়েড ক্যান্সার যার আরোগ্যের হার অত্যন্ত বেশী, তাও আবার প্যাপিলারি থাইরয়েড ক্যান্সার যার আরোগ্যের হার নাকি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে প্রায় ৯৫-৯৮%, তার উপরে আবার ডাক্তাররা প্রায় হলফ করে বলছেন এটা নাকি এক্কেবারে প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়েছে। তাহলে চিন্তার কি আছে, আস্তে ধীরে চিকিৎসা করালেই তো হয়। প্রব্যাবিলিটির কথা শুনলে যতটাই মেজাজ খারাপ হোক না কেন, সেই সম্ভাবনার পাখায় ভর করেই কিন্তু আমরা দিনরাত স্বপ্ন দেখি, জীবনটাকে নিয়ে কত রকমের  নকশাই না আঁকি। সম্ভাবনা কম বলেই তো হুট করে ৩০-৪০ বছর বয়সে মরে যাওয়ার কথা চিন্তা করি না একুশ শতকে বসে। কিন্তু উল্টোপিঠের অত্যন্ত ক্ষীণ সম্ভাবনাগুলো এসে যখন বিরাশি শিক্কা ওজনের থাবড়া বসায় তখনই আবার মাথায় প্রব্যাবিলিটির অসাড়তা নিয়ে প্রশ্নগুলো কিলবিল করে ওঠে। সে যাই হোক মাস দুয়েক পরে ভাবলাম ঘরের কাছেই তো গবেষণার জন্য বিখ্যাত এমোরি হাসপাতাল আছে, তাদের কাছেই না হয় যাই। ওরাতো আণবিক জীববিজ্ঞান এবং ক্যান্সারের অনেক সাম্প্রতিক গবেষণা করে থাকে, ওরা নিশ্চয় এরকম উড়াধুড়া ৯৫% ভাগ ক্যান্সার হওয়ার ডায়াগনোসিস করবে না, যা বলার ১০০ ভাগ নিশ্চিত হয়েই বলবে। আর সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল ডাক্তার চেনের সাথে যোগাযোগ আর সেই পরীক্ষাগুলোর সূচনা যেগুলোর কথা বলে এই লেখাটা শুরু করেছিলাম।

নভেম্বরের ৮ তারিখে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড কেটে ফেলে দেওয়া হল, ২ ঘণ্টার সার্জারি গিয়ে দাঁড়ালো প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টায়, ডাক্তার চেন ক্যান্সারের বিস্তৃতির অবস্থা দেখে বেশ আতঙ্কিত হয়ে গলার ডান দিকের সবগুলো লিম্ফ নোড খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে উঠিয়ে নিয়ে আসলেন। প্রথমে শুনে একটু বিরক্তই হয়েছিলাম, তারপর যখন আণবিক পরীক্ষার রিপোর্ট আসলো তখন বুঝলাম তার আতঙ্কের কারণ।  ২৯ টা লিম্ফ নোডের মধ্যে ১৭ টাই ছিল ম্যালিগন্যান্ট অর্থাৎ ক্যান্সার আক্রান্ত। ম্যাটাস্টেসিসের পরিমাণ আসলেই বেশ ভয়াবহ, কয়েক মাস আগের সেই ‘স্টেজ ওয়ান ও নয়’ টাইপের ডায়াগনোসিসের সাথে তার কী বিশাল পার্থক্য! সেই সাথে যে মিউটেশনটা ধরা পরেছে সেটাও খুব ভদ্র গোছের মিউটেশন নয়, এর নাম হচ্ছে BRAF মিউটেশন।  এই মিউটেশনটা হওয়ার অর্থ দাঁড়াচ্ছে যে আমার এই ক্যান্সারের ধরণটা বেশ ভালোরকমের আগ্রাসী এবং ভবিষ্যতে এর ফিরে আসার সম্ভাবনাটাও(recurrence) অনেক বেশী, প্রায় ৫০% এর মত। সার্জারির দুই মাস পরে পুরো জানুয়ারি মাস ধরে চললো রেডিয়েশনের চিকিৎসা। থাইরয়েড ক্যান্সারই একমাত্র ক্যান্সার যাতে প্রাথমিকভাবে কিমোথেরাপীর দরকার পড়ে না,  তেজস্ক্রিয় আয়োডিন I131 দিয়ে কোষগুলোকে ‘পুড়িয়ে মারা’র একটা রাস্তা খোলা থাকে! থাইরয়েড গ্ল্যান্ডটা আমাদের শরীরের একমাত্র অঙ্গ যে আয়োডিন শুষে নিতে সক্ষম, তাই এর ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলোতে খুব বেশী পরিমাণে রেডিয়েশন প্রয়োগ করলে সেগুলো আয়োডিন শুষে নিয়ে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। নিউক্লিয়ার মেডিসিন ডিপার্টমেন্টেই পড়ে রইলাম পরের প্রায় দুই মাস। আমার শরীরে ক্যান্সারের বিস্তৃতি এবং মিউটেশনের চেহারা দেখে ভয় পেয়ে তারা আমাকে সব চেয়ে বড় ডোজের কাছাকাছি একটা তেজস্ক্রিয়তার ডোজই দিয়েছিল, চূড়ান্ত স্ক্যানের পরে ডাক্তাররা জানালেন যে আপাততভাবে তারা শরীরের আর কোথাও থাইরয়েড ক্যান্সারের কোষগুলো দেখতে পাচ্ছেন না। কিন্তু ছয়মাসের আগে আরোগ্য তো নয়ই, উপশমের ব্যাপারটাও ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাবে না। যারা বাঘে ছুলে ছত্রিশ ঘা কথাটা চালু করেছিলেন তারা সেই সময়ে ক্যান্সারের কথা জানলে কত ঘায়ের কথা ভাবতেন কে জানে! ক্যান্সার একবার হলে তার ঘা আর স্থায়ীভাবে শুকোয় না, যে কোন সময় যে কোন মুহূর্তে সে আবার ফিরে আসতে পারে শরীরের যে কোন অংশে। আমার এই থাইরয়েড ক্যান্সারের ভবিষ্যতে আমার হাড়ে বা ফুসফুসে ফিরে আসার সম্ভাবনা ৫০%।

মহাজগতটা র‍্যান্ডম, আমার জীবনকে ঘেরা এবং না-ঘেরা বেশীর ভাগ ঘটনাই র‍্যান্ডম, মিউটেশনগুলো র‍্যন্ডম, ঘটনাগুলো নিষ্ঠুর এবং উদেশ্যবিহীন, পরম উদ্দেশ্য বলে কিছু নেই, নেই কোন অলৌকিকতা; যা আছে, যতটুকু আছে তার সবই এই পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ – এই কথাগুলো তো বেশ ছোটবেলা থেকেই ইঁচড়ে পাকার মত কম বেশী বুঝতে শিখেছিলাম। বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে রিচার্ড ডকিন্সের সেই কথাগুলো বহুবার বহু জায়গায় লিখেছি, “আমাদের চারপাশের বিশ্ব জগতে বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যগুলো দেখলেই বোঝা যায় এর মধ্যে কোন পরিকল্পনা নেই, উদ্দেশ্য নেই, নেই কোন শুভাশুভের অস্তিত্ব; আসলে অন্ধ, করুণা-বিহীন উদাসীনতা ছাড়া এখানে আর কিছুই নেই”। স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কথাগুলো আত্মস্থ করতে আরও অনেক সময় লেগেছে, তার চেয়েও অনেক বেশী সময় লেগেছে জীবনের সংকটময় সময়গুলোতে এর প্রয়োগ করতে। কিন্তু এই সোজাসাপ্টা জীবন দর্শনটা যে  কী গভীর এক আন্তঃ-শক্তি ধারণ করে  তা বোধহয় গত নয় মাসে প্রথমবারের মত বুঝতে পারলাম। এই জীবন দর্শনটাই যে শেষ পর্যন্ত জীবনের এরকম একটা ক্রান্তি লগ্নে এত বড় অবলম্বন হিসেবে কাজ করবে তাই বা কে জানতো! কোনরকম ভাববাদের আশ্রয় না নিয়ে, বৈজ্ঞানিকভাবে বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চিন্তা করতে পারার মধ্যে যে কতখানি শক্তি লুকিয়ে থাকতে পারে তার হাতেনাতে প্রমাণ পেলাম আবারো।

আমার অবস্থা কোনভাবেই ক্রিস্টোফার হিচেন্স বা অন্যান্য টার্মিনাল ক্যান্সারের রোগীদের মত অবস্থায় গিয়ে দাঁড়ায়নি, কিন্তু গত কয়েক মাসে অনুভূত অসহায়ত্বটুকুই বা কম কি? গত অক্টোবর মাস থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত জানার কোন উপায় ছিল না আমার শরীরের ভিতরের ক্যান্সারটা আসলেই কতখানি ছড়িয়ে পড়েছে, কতবার কত হাই-ডোজের তেজস্ক্রিয়তার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, আমার হাতে কি কয়েক মাস নাকি কয়েক বছর সময় আছে! এখনো হাতে ছয় মাসের টিকেট কেটে দাঁড়িয়ে আছি, কে জানে কি শুনবো জুন মাসে।  কিন্তু যতবারই ‘হোয়াই মি’ বা ‘আমারই এমনটা হতে হল কেন’ র মত চির-মানবীয় অসহায়ত্বের থাবাটা গ্রাস করতে শুরু করেছে ততবারই ভেবেছি এই মহাবিশ্বের র‍্যন্ডমনেস কি তাহলে আমাতেই এসে থেমে যাবে? এখানে তো অলৌকিক কোন হাত নেই, নেই কাল্পনিক কারও শরণাপন্ন হওয়ার স্কোপ, যা ঘটছে তাইই রূঢ় বাস্তবতা। এই মহাবিশ্বের অস্তিত্ব যদি র‍্যান্ডম হতে পারে, প্রাণের উদ্ভব যদি ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ঘটতে পারে, আমার এই পুরো অস্তিত্বটাই যদি র‍্যান্ডম হতে পারে তাহলে আমিই বা নই কেন? সারা পৃথিবীতে দশমিক এক ভাগ সম্ভাবনাও যদি কারও থেকে থাকে তাহলেও তো সেটা আমারই হতে পারে! আবার উলটো করে ভাবি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে ক্যান্সারের ব্যাপারটা ধরা পড়াটাও তো এই বিক্ষিপ্ততারই আরেক অংশ। নিউরোসার্জেন থেকে শুরু করে, ইএনটি স্পেশালিষ্ট, আল্ট্রাসাউন্ডের সেই টেকি মহিলা বা রেডিওলজিস্ট পর্যন্ত যে কোন একজনের হাতেই কিন্তু পুরো ব্যাপারটা বাতিল হয়ে যেত পারতো। তাদের যে কেউ একজন কিন্তু ‘প্রায় শূণ্য থেকে অতীব ক্ষীণ’ সম্ভাবনার কথা ভেবে ডায়াগ্নোসিসের প্রক্রিয়াটা থামিয়ে দিতে পারতেন। আর তার চেয়েও বড় কথা জন্মসূত্রে পাওয়া মাইগ্রেনের বিশ্রী এই মিউটেশনটা আমার শরীরে না থাকলেই তো এই পুরো প্রক্রিয়াটার সূত্রপাতই হয়তো ঘটতো না। থাইরয়েড ক্যান্সার না হয়ে এমন কোন ক্যান্সারও তো হতে পারতো যার সাময়িক উপশম ঘটানোর মত কোন চিকিৎসাও এখনো বের হয়নি! অনেকের মতে এই ‘র‍্যান্ডমনেস’টা নাকি খুব মন-খারাপ করা একটা ব্যাপার, এতে করে নাকি বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যটাই অর্থহীন হয়ে যায়, অথচ আমার গত কয়েক মাসের অভিজ্ঞতাটা কিন্তু ছিল ঠিক তার উলটো।  এই ইতস্তততাই হয়তো ক্ষণকালের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগায়, পরম কোন উদ্দেশ্য নেই বলেই এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার, জীবনটাকে উদ্দেশ্যময় করে তোলার আকাঙ্ক্ষাটা আরও প্রবলতর হয়।

এই একুশ শতাব্দীতে বৈজ্ঞানিক অগ্রসরতার স্রোতে অভিসিঞ্চিত হতে হতেও আমরা কিন্তু এখনও বেশীরভাগ ক্যান্সারের সামনে একান্তই নিরুপায়, আর স্থানীয় কোন অঙ্গ থেকে বিস্তৃত হয়ে তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তো আর কথাই নেই। এর সাথে পাল্লা দিয়ে জিততে হলে আমাদের আরও জোড়ে দৌড়ুতে হবে, সামান্য একটু দেরি হয়ে গেলেই বাজিমাৎ, তার কাছে হেরে যাওটাই অনিবার্য পরিণতি।  কিন্তু যে অনাকংখিত অতিথি প্রবেশ করার আগে দরজায় কড়া নাড়ে না, চোরের মত নিঃশব্দে ঢুকে পড়ে দৃঢ় সংকল্পে এগিয়ে যেতে থাকে তার সাথে আমি বা আপনি পাল্লাই বা দেবো কি করে? আর তার টিকে থাকার পেছনের মূল চালিকাশক্তিটা যদি আমাদের নিজেদের টিকে থাকার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকে তাহলে তাকে আপনি হারাবেন বা কি করে? আর সেই কথাগুলোই যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে মনে করিয়ে দিলেন নিউক্লিয়ার মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের ডাক্তার লী। রেডিয়েশন থেরাপির শেষ স্ক্যানটার ফলাফল নেতিবাচক এসেছে, তা নিয়ে ৩০ সেকেন্ড আমাকে স্বস্তি বোধ করার সুযোগ দিয়েই তিনি উসখুস করে উঠলেন,

‘…তবে এটা প্রাথমিকভাবে একটা নিশ্চয়তা দিলেও আসল ফলাফলের জন্য তোমাকে মাস ছয়েক দেরী করতে হবে।  ছয়মাস পরে রক্তপরীক্ষা করে যদি দেখা যায় যে তোমার থাইরোগ্লবিউলিন সিরাম লেভেল বেশী আসছে তাহলে বুঝতে হবে হয় সব ক্যান্সার কোষ মরে যায়নি বা আবার নতুন করে প্রত্যাবর্তন করেছে।‘

শেষ হইয়াও হইলো না শেষ, নাহ, ক্যান্সার শেষ হয় না , আমরা এখনও একে পুরোপুরি আরোগ্য বা নির্মূল করার নিশ্চয়তা দিতে পারি না, সাময়িক (তা কয়েক মাসও হতে পারে, কয়েক দশকও হতে পারে) উপশমের নিশ্চয়তা নিয়েই খুশি থাকতে হয় আমাদের।

 

২০১০ সালে ৭০ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেছে সারা পৃথিবীতে, শতকরা ১৫ ভাগ মৃত্যুর পিছনে দায়ী ছিল এই ভয়াবহ ক্যান্সার। ২০১০ সালে  আমেরিকায় মৃত্যুবরণ করেছে ছয় লাখ মানুষ, এখানে প্রতি দুইজন পুরুষের মধ্যে একজন এবং প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন জীবনের কোন না কোন সময় ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এদেশে ক্যান্সার এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম ( এখনও এক নম্বর কারণ হচ্ছে হৃদরোগ) মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যা শতকরা ২৫ ভাগ মৃত্যুর জন্য দায়ী। এর বিরুদ্ধে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো মহাযুদ্ধ ঘোষণা করে আসছে গত কয়েক দশক ধরেই, কিন্তু ৪০-৫০ বছর ধরে ২০০+ বিলিয়ন ডলারের গবেষণার ফলাফল কিন্তু  একেবারেই নিতান্তই নিরাশাব্যাঞ্জক। ১৯৫০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত হিসেব করলে আংশিক বা অস্থায়ী কিছু চিকিৎসা বের করতে পারলেও ক্যান্সার ঠেকানোর মত বড় কোন চিকিৎসা আমরা এখনো বের করতে পারিনি (১)। কিন্তু কী এমন দুরারোগ্য ব্যাধি এই ক্যান্সার? কেন এর চিকিৎসা আজো অধরা হয়েই বসে আছে? মানুষ তো এর চেয়ে অনেক কম সময়েই মহাকাশ জয় করেছে, চাঁদের হাতছানি পেরিয়ে এমনকি মঙ্গলগ্রহেও পাড়ি জমিয়েছে। এর উত্তর পেতে হলে আমাদের আবারও বংশগতিয় বিদ্যা এবং বিবর্তনের দরজায় ধর্না দিতে হবে।

এর পরের পর্বে ক্যান্সারের কোষগুলো কীভাবে কাজ করে, বিবর্তনের সাথে এর সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার ইচ্ছে রইলো।