সম্প্রতি বাংলাদেশে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে একটি লঞ্চ ডুবে গিয়ে ১১২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা গেছে। আরও অনেকে হয়ত মারা গেছে তবে তাদের লাশের কোন হদিস মেলে নি। লাশের খোজে স্বজনেরা পাগলের মত মেঘনার পারে ঘোরা ঘুরি করছে। করুন আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে বিষয়টা সত্যি সত্যি ভীষণ মর্মান্তিক, করুণ ও বিষাদময়। কিন্তু ইসলামি দৃষ্টিতে আমি বিষয়টাকে দারুণ আনন্দ ও খুশীর খবর মনে করছি। এটা শুনে অনেকেই হয়ত দারুন রকম চমকে উঠেছেন, বলতে পারেন আমি ভীষণ রকম নির্মম নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ, দুর্ঘটনায় পড়ে মানুষ মারা গেলে আমি ভীষণ আনন্দ পাই।শুধু তাই নয়, দেশে দুর্ভিক্ষ বা মহামারীতে যদি লক্ষ লক্ষ লোক যদি মারা যায় তাহলে আমি যার পর নাই আনন্দিত হবো। প্রতি বছর দেশে যদি বন্যা বা ঘুর্ণিঝড় সংঘটিত হয়ে লক্ষ লক্ষ লোক মারা যায় সেটা সত্যিকার অর্থেই একটা সর্বোত্তম খবর। যদি ক্রমাগত দুর্ভিক্ষ মহামারী হয়ে দেশের সব লোক মারা যায়, এর চাইতে ভাল খবর আর হতেই পারে না। এবার নির্ঘাত কিছু পাঠক মনে করছেন আমার মাথা বোধ হয় সত্যি সত্যি খারাপ হয়ে গেছে, আমি বোধ হয় আবোল তাবোল বকছি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে। কিন্তু না , আমি মোটেই আবোল তাবোল বকছি না, আমার মাথা ঠিকই আছে, বরং বলা যায়, অন্য দশজন মানুষের মাথার চাইতে অনেক বেশী ঠিক আছে। আর আমার বক্তব্যের পিছনে যে দুনিয়ার সবচাইতে বড় যুক্তি ক্রিয়াশীল তা এখনই প্রমান করে দেখাবো।

একজন মুসলমান সব সময়ই যে মৃত্যুর স্বপ্ন দেখে তা হলো শহিদী মৃত্যূ।কারন যে শহিদ হবে সে সরাসরি বেহেস্তে প্রবেশ করবে, তার জন্য কিয়ামতে কোন বিচার আচার নেই।কোন রকম বিচার আচার ছাড়াই বেহেস্তে প্রবেশ করে হুরদের সাথে ফুর্তি করার সুযোগ লাভ করবে। বেহেস্তে যাওয়ার এর চাইতে সোজা পথ আর দ্বিতীয়টি নেই। তবে সমস্যা হলো অধিকাংশ মানুষ জানে শহিদ হওয়ার রাস্তা হলো- আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে বেঘোরে প্রান হারানো। সুতরাং একজন মানুষকে অপেক্ষা করতে হতে পারে কখন একটা আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ তথা জিহাদ শুরু হবে। কিন্তু আসলে জিহাদে যুদ্ধ করে মারা যাওয়া ছাড়াও একজন মানুষ অনায়াসেই শহিদ হতে পারে। যেমন-

আবু হুরায়রা বর্ণিত, আল্লাহর রসুল বলেছেন- একজন মানুষ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, রাস্তার ওপর কাটাওয়ালা একটা শাখা দেখল ও তা তুলে রাস্তার বাইরে ফেলে দিল। আল্লাহ তা দেখে লোকটির ওপর খুব খুশী হলো ও তার সব গুনাহ মাফ করে দিলেন। এর পর নবী পাঁচ প্রকারের শহিদের কথা উল্লেখ করলেন তারা হলো-
(১) যারা প্লেগ বা মহামারীতে মারা যায়
(২) যারা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়
(৩) যারা পানিতে ডুবে মারা যায়
(৪) যে দুর্ঘটনা (দুর্যোগ)য় জীবন্ত অবস্থায় কবরে (চাপা পড়ে) মারা যায়
(৫) যে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে মারা যায়।
সহী বুখারী, বই নং-১১, হাদিস নং-৬২৪

এখন যেহেতু উক্ত ১১২ জন মানুষ যারা লঞ্চ ডুবি হওয়াতে পানিতে ডুবে মারা গেছে তাদের জন্য শোক প্রকাশ না করে বরং উল্লাস প্রকাশ করা উচিত কারন তারা এতক্ষনে বেহেস্তে গিয়ে হুরদের সাথে ফুর্তিতে ব্যস্ত। দু:খ প্রকাশ করা উচিত বরং একারনে যে আমরাও কেন ঠিক ওভাবে পানিতে ডুবে মৃত্যু বরন করতে পারলাম না ও শহিদ হয়ে বেহেস্তে যেতে পারলাম না। অনেকে বলতে পারে , কিছু মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে আমি মস্করা করছি। কিন্তু সত্যি সত্যি আমি ধর্মীয় দৃষ্টি কোন থেকে কোনই মস্করা করছি না। বরং আমি ঈর্ষা করছি ঐ ১১২ জনকে যারা অত সহজে বেহেস্তে চলে গেল। আমরা যারা বেঁচে রইলাম তাদেরকে বেহেস্তে যেতে হলে যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন পর্যন্ত দৈনিক ৫ বার নামায পড়তে হবে, রমজান মাসে রোজা রাখতে হবে, যাকাত দিতে হবে, জীবনে একবার হলেও হজ্জে যেতে হবে। এছাড়াও প্রতি পদে পদে সতর্ক থাকতে হবে যেন বিপথগ্রস্থ না হয়ে পড়ি। মদ পান করা যাবে না, নাচ গান দেখা ও শোনা যাবে না, জুয়া খেলা চলবে না, বিবাহ বহির্ভুত যৌন কাজ করা যাবে না( দাসীদের সাথে তা করা যাবে যদি কোন দাসী থাকে, না থাকলে অন্য জনপদ দখল করে তাদের নারীদেরকে দাসী বানান যাবে) এবং আরও কত বিধি নিষেধ। এত সব করার পরেও যে বেহেস্তে যাওয়ার টিকেট পাওয়া যাবে তার নিশ্চয়তা নেই। মরে গিয়ে অপেক্ষা করতে হবে কিয়ামতের সময় পর্যন্ত। কবরে যে শান্তিতে দিন কাটাব সেটাও হবে না, কিয়ামতের আগ পর্যন্ত কবরেও নানাভাবে আমাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে। এত কিছুর পরে অত:পর কিয়মতের মাঠে আল্লাহ চুল চেরা কঠিন বিচার শেষে আমাদেরকে বেহেস্তে যাওয়ার টিকেট দেবে যদি বিচারে আমরা উৎরে যাই। তার মানে কঠিন ও দুর্লঙ্ঘ পথ পাড়ি দিয়েই তবে বেহেস্ত। অথচ ঐ ১১২ জন কত সহজে বেহেস্তে চলে গেল। তাদেরকে কবরে আজাব ভোগ করতে হলো না, কিয়ামতের মাঠে কোন বিচারের সম্মুখীনও হতে হলো না। পানিতে ডুবে মরে যাওয়ার সাথে সাথেই সুড়ুৎ করে সোজা বেহেস্তে, ঈর্ষা তো হওয়ারই কথা, তাই নয় নি ? বিষয়টা অন্যান্য হাদিস দ্বারাও সমর্থিত, যেমন-

আবু হুরায়রা বর্ণিত, আল্লাহর রসুল বললেন, তোমরা কি জান তোমাদের মধ্যে কারা শহিদের মর্যাদা পাবে ? সঙ্গীরা বলল- হে রসুল, যে লোক আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা যাবে। নবী বললেন- এরকম হলে আমার উম্মতদের মধ্যে শহিদদের সংখ্যা খুব কম হয়ে যাবে। তখন সঙ্গীরা জিজ্ঞেস করল, তাহলে আর কারা শহিদের মর্যাদা পাবে? নবী বললেন- যে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে মারা যাবে, যে প্লেগে মারা যাবে, যে উদরাময় ( অথবা কলেরা) রোগে মারা যাবে সে শহিদের মর্যাদা পাবে। সহি মুসলিম, বই-২০, হাদিস নং-৪৭০৬

উক্ত সহি মুসলিম, বই-২০ এর ৪৭০৫,৪৭০৭, ৪৭০৮ ও ৪৭০৯ নং হাদিস গুলিতে এ একই কথা বলা হয়েছে, শুধু ৪৭০৫ নং এ অতিরিক্ত হিসাবে পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার কথা যোগ করা হয়েছে।

তার মানে জানা গেল যে শুধুমাত্র ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য যুদ্ধে মারা গেলেই যে একমাত্র শহিদ হওয়া যায় এটা ঠিক না, শহিদ হওয়ার আরও অনেক তরিকা আছে। এর মধ্যে মহামারি বা দুর্ভিক্ষ, দুর্ঘটনা বা দুর্যোগে মৃত্যুও অন্যতম। তাহলে বলতেই হবে, দেশে যদি কখনও দুর্ভিক্ষ বা মহামারি লাগে অথবা যদি কখনও কোন দুর্যোগ যেমন বন্যা বা ঘুর্ণিঝড় ঘটে ও লক্ষ লক্ষ মানুষ বেঘোরে প্রান হারায় তাহলে তাদের জন্য দু:খ করার তো প্রশ্ন ওঠেই না, বরং এ ভেবে যারা জীবিত থাকবে তাদের আফশোষ করা উচিৎ কেন তারাও বেঘোরে প্রান হারাল না। এছাড়াও কখনও যদি দেশে দুর্ভিক্ষ বা মহামারি লাগে তা বন্দ করার কোন চেষ্টাও করা উচিৎ নয় কারন তাতে বহু লোকের বিনা আয়াশে বেহেস্তে যাওয়াকে রুদ্ধ করা হবে, এভাবে আমরা মানুষকে অতি সহজে বেহেস্তে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে পারি না। বরং এমন চেষ্টা করা উচিত যাতে দেশে সব সময় দুর্ভিক্ষ বা মহামারী লেগেই থাকে ও মানুষ রোগে শোকে ও অনাহারে লাখে লাখে মারা যেতে পারে। কারন ইহকালের জীবন তো সামান্য কয় দিনের জন্য, পরকালের জীবনই তো আসল। ইহকালের সেই সামান্য কয়দিনের জীবনে যত বেশীদিন বাঁচব ততই নানারকম গুনাহের কাজ করার ঝুকি থাকবে তাতে বেহেস্তে প্রবেশ করার পথ কঠিন হয়ে পড়বে , তার চেয়ে মহামারি বা দুর্ভিক্ষ বা দুর্যোগে পড়ে মরে যাওয়া শাপে বরের মত। এমতাবস্থায়, কোন মুসলিম দেশে যেমন বাংলাদেশ , ইন্দোনেশিয়া এসব দেশে যখন প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড় বা সুনামী আঘাত হানে ও লাখ লাখ লোক মারা যায়, তখন আমরা দুর্গত মানুষদেরকে বাঁচানোর জন্য ইহুদি, নাসারা ও কাফেরদের দেশ থেকে ত্রাণ সাহায্য পাওয়ার আশায় মরিয়া হয়ে যাই, যা প্রকারান্তরে আল্লাহর বিধাণ লঙ্ঘনের শামিল ও তা আমাদেরকে বেহেস্তে গমনের পথে বিরাট বাধা হয়ে দাড়ায়। বিশ্বাসী মুমিন বান্দাদের একাজটি করা মোটেও উচিত নয়। ১৯৭৪ সালের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে একবার নাকি বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল যার জন্য এখনও আওয়ামী বিরোধী লোকজনরা আওয়ামী লিগকে দোষরোপ করে, কিন্তু বাস্তবে সেটা ছিল আমাদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে রহমত স্বরূপ কারন যারা তখন মারা গেছে তারা সবাই বেহেস্তে গেছে। এজন্য তো আওয়ামী লিগের ধন্যবাদ পাওনা হয়ে গেছে, কিন্তু সেটা না করে আমরা তাদের গীবত করি এটা কি ঠিক ? এটা আমাদের নেমক হারামী চরিত্রের একটা বহি:প্রকাশ। ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে উপকূলীয় এলাকায় নাকি প্রায় ৫ লক্ষ লোক মারা গেছিল। তখনকার পশ্চিম পাকিস্তানী সরকার নাকি এ ঝড়ের পর উপকূলীয় দুর্গত মানুষের সাহায্যে সাথে সাথে এগিয়ে আসে নি।একারনেই নাকি এত বেশী লোক মারা গেছিল। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তাদের এ সীমাহীন উদাসীনতাকেও নাকি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটা অন্যতম কারন হিসেবে দেখা হয়।কিন্তু ইসলামী বিধি তথা আল্লাহ ও মোহাম্মদের বিধান মোতাবেক পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকরা কোন অন্যায় কাজ তো দুরের কথা, তারা তো বরং ভাল কাজই করেছিল। কারন তারা প্রকারান্তরে লক্ষ লক্ষ মানুষকে বেহেস্তে যাওয়ার রাস্তাটাকে অতীব সোজা করে দিয়েছিল। আমরা অকৃতজ্ঞ বাঙ্গালীরা তার মর্ম না বুঝে তাদেরকে দোষারোপ করেছি। এটাও আমাদের নেমক হারামির একটা উদাহরন।

গত বি এন পি সরকারের আমলে একবার লঞ্চ ডুবিতে বহু মানুষ মারা যাওয়ার পর তৎকালীন পরহেজগার মন্ত্রী আলতাফ হোসেন বলেছিলেন- আল্লাহর মাল আল্লায় নিয়ে গেছে । তিনি যে কতটা সত্যি কথা বলেছিলেন পাতি বাঙ্গালীরা সেটা বুঝতে পারে নি। বুঝতে না পেরে উল্টে তার বিরুদ্ধে কত সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছিল। ভাবলে আশ্চর্য হতে হয় বাঙ্গালীল ইসলামি জ্ঞান এত কম দেখে অথচ এরাই আবার রাস্তায় মিছিল বের করে বলে- আমরা হবো তালেবান, বাংলা হবে আফগান।

বর্তমানে বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয় বলে একটা মন্ত্রনালয় আছে যার কাজ হলো দুর্যোগ প্রবন বাংলাদেশের মানুষকে দুর্যোগের ( বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি) হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করা। এটা তো মনে হয় আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার সামিল। আল্লাহ অতীব দয়াপরবশ হয়ে আমাদের দেশে দুর্যোগের মাত্রা সব সময় বৃদ্ধি করে রেখেছে যাতে এদেশের গরীব দু:খী ধর্ম পরায়ন মানুষগুলো ওসব দুর্যোগে কাতারে কাতারে পঙ্গপালের মত মারা গিয়ে সোজা আল্লাহর সাজিয়ে রাখা বেহেস্তে প্রবেশ করে অপার আনন্দ উপভোগ করতে পারে, অথচ সরকার তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে সাধারন মানুষকে বেহেস্তে যাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে চায়। ইসলামী দলগুলো সরকারের যার পর নাই বেদ্বীন ক্রিয়া কর্মের জন্য দোষারোপ ও সমালোচনা করে থাকে, কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চালু করে এভাবে সাধারণ মানুষকে বেহেস্ত থেকে বঞ্চিত করার জন্য কোন ইসলামী দল সরকারের সমালোচনা করেছে এরকম কখনও শোনা যায় নি। এ থেকে বোঝা যায় ইসলামী দলগুলো সব ধান্ধাবাজ তারাও চায় না, সাধারণ মানুষ বেহেস্তে যাক। বরং প্রকারান্তরে তারা সাধারণ মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়ে রাজনীতি করে ব্যবসা করে খাচ্ছে, এতে এ দুনিয়াতে যেমন তারা মজার জীবন উপভোগ করছে তেমনি শুধুমাত্র তারাই বেহেস্তে যাওয়ার পায়াতারায় আছে যেন সেখানে শুধুমাত্র তারাই প্রবেশ করে মজা ফুর্তি করতে পারে। সাধারন মানুষদের এ ব্যপারে সতর্ক ও সোচ্চার হওয়া জরুরী বলে মনে হয়।

কিছুকাল আগে ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা দিবস পালন হয়ে গেল মহা সমারোহে। ১৯৫২ সালের এই দিনে কতিপয় মানুষ ভাষার দাবীতে পাকিস্তানী সেনাদের গুলিতে খুন হয়। বাঙ্গালীরা অত:পর অতি আবেগে তাদেরকে শহিদ হিসাবে আখ্যা দেয় ও বলে তারা নাকি ভাষা শহিদ। এছাড়াও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বহু সাধারণ মানুষ সহ মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানী সেনা ও দেশীয় রাজাকারদের হাতে খুন হয়। স্বাধীনতার পর তাদেরকে সম্মান জানানোর জন্য বলা হয় তারা শহিদ মুক্তিযোদ্ধা। এমন কি বাংলাদেশের একজন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান, তাকে তারই সেনাবাহিনীর লোকজন নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, অত:পর ঘোষণা করা হলো শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান। কিন্তু কেউ একজন বা বহুজন খুন হলেই তাকে শহিদ বলার বিধান ইসলাম দেয় নি কারন শহিদ শব্দটির উদ্ভবই যেখানে ইসলাম থেকে উদ্ভুত। উক্ত হাদিস থেকে অত্যন্ত পরিষ্কার কারা আসলে শহিদ। কোরানেও পরিষ্কার বলা আছে কারা শহিদ, যেমন-

কাজেই আল্লাহর কাছে যারা পার্থিব জীবনকে আখেরাতের পরিবর্তে বিক্রি করে দেয় তাদের জেহাদ করাই কর্তব্য। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর রাহে লড়াই করে এবং অতঃপর মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয় অর্জন করে, আমি তাদেরকে মহাপুণ্য দান করব।কোরান, ৪:৭৪

আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর মারে ও মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য।কোরান, ৯:১১১

উল্লেখ্য, কোরানে আল্লাহর জন্য যুদ্ধ তথা জিহাদে যুদ্ধ করে মৃত্যুবরন ছাড়া শহিদ হওয়ার আর কোন নিদান নেই। সে আলোকে স্বাধীনতা যুদ্ধে যেসব মুক্তি যোদ্ধা মারা গেছেন বা ২১শে ফেব্রুয়ারী ভাষা দিবসে যারা মারা গেছেন তাদের মৃত্যূকে একটু বিশ্লেষণ করা যাক। প্রথমে ভাষার জন্য জীবনদানকারীদের কথা বলা যেতে পারে। ইসলামের ভাষা আরবী কারন কোরান আরবীতে অবতীর্ণ। আল্লাহ লাওহে মাহফুজে যে কোরান লিখে রেখেছে তার ভাষাও আরবী এমনকি বেহেস্তের ভাষাও আরবী। যে কারনে নামাজ পড়ার সময় আরবী আয়াত উচ্চারন করতে হয়, রমজান মাসে আরবী কোরান খতম করতে হয়। অন্যান্য ভাষায় কোরান পড়া যায় কিন্তু তাতে আরবী কোরান পড়ার মত ছোয়াব হয় না। যে কারনে প্রতিটি মুসলমানকেই আবশ্যকীয়ভাবে আরবী ভাষা শিখতে হয়। এমতাবস্থায় আল্লাহর ভাষা আরবী এর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য কেউ জীবন দিলে তাকে পরোক্ষভাবে হলেও আল্লাহর রাস্তায় জীবন দিয়েছে বলে বিবেচনা করা যেতে পারত ও তাকে শহিদ বলা যেতে পারত। কিন্তু নিতান্তই অচ্যুৎ এক অনার্য জাতি বাঙ্গালীর মাতৃভাষা বাংলার জন্য যারা জীবন দিয়েছে তাদেরকে কোনভাবেই শহিদ বলা যেতে পারে না। অন্তত কোরান ও হাদিসে উল্লেখিত বিধান দ্বারা তো নয়ই। সুতরাং যারা বাংলা ভাষার জন্য যারা নিহত হয়েছে তাদেরকে শহিদ বলতে চায় তারা আদৌ ইসলাম জানে বলে মনে হয় না। ইসলামের চেয়ে তাদের ভিতর আবেগের মাত্রা বেশী।এবার আসা যাক ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে। এদের কেউই ইসলামের জন্য যুদ্ধ করে জীবন দেয় নি, দিয়েছে পরাধীন জাতিকে স্বাধীন করার যুদ্ধে যা ইসলামি বিধি মোতাবেক কোন গুরুত্বই বহন করে না। ইসলামে একটাই জাতি আর তা হলো মুসলমান জাতি।অন্য ভাষায় ইসলামি উম্মা। এখানে এ উম্মার মানুষদের বিভিন্ন ভাষা থাকতে পারে, থাকতে পারে তাদের আলাদা নৃতাত্ত্বিক অস্তিত্ব তবে তাদের পরিচয় হবে একটাই আর তা হলো- মুসলমান।দুনিয়ার সব মুসলমান মিলে সৃষ্টি হবে একটা উম্মা যার নেতৃত্বে থাকবে একজন খলিফা। এ খলিফার কাজ হবে দুনিয়ার সকল মানুষকে ছলে বলে কলে কৌশলে ইসলামের পতাকা তলে আনা ও তাদেরকে এক উম্মায় একত্রিত করা। এ উম্মায় ভিন্ন কোন জাতি সত্ত্বা বা রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই। ভিন্ন কোন জাতি সত্ত্বা থাকলে খলিফার কাজ হবে তাদের সে জাতি সত্ত্বা বা সংস্কৃতিকে বিলোপ করে দেয়া ও আরবী সংস্কৃতি তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া। আরবের মুসলমানরা যখন একের পর এক দেশ জয় করছিল তখন তারা ঠিক সে কাজটাই করে চলছিল ইসলামী বিধি মোতাবেক আর যে কারনে দেখা যায়, সিরিয়া , মিশর, ইয়েমেন, ইরাক এসব দেশে একসময় আরবের চাইতে ভিন্ন ও উন্নততর সংস্কৃতি থাকলেও আজকে তারা সব আরবী হয়ে গেছে। তাদের ভিন্ন কোন সংস্কৃতি নেই। তাদের এ সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যে সব জায়গাতে ফলপ্রসু হয়েছে তা নয় , যেমন ভারত।তবে গোটা ভারতবাসীকে তারা ইসলামের পতাকাতলে আনতে পারলে তা হলে হতেও পারত। যাহোক, ইসলামের প্রথম দিকে ইসলামী উম্মার খিলাফত বেশ ভালই প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিল যা ছিল ইসলামের মূল বিধানও। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারনে তাতে ছেদ ঘটে ও খিলাফত বাধা গ্রস্থ হয় ও এক সময় তার পতন ঘটে। উক্ত ইতিহাস এখনকার আলোচ্য বিষয়ও নয়। খিলাফতের পতন ঘটে ঠিকই কিন্তু ইসলামের পতন ঘটে না। ফলে পতন ঘটে না ইসলামের বিধানেরও। আর বিধান বলছে আবারও সেই ইসলামী উম্মার পূনর্জাগরন ঘটাতে, ও ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে। এ ধরনের আদর্শের একটা দলের নাম হলো- জামাত ইসলামী।

১৯৪৭ সালে যখন ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান ও ভারত হয় তা হয় ধর্মের ভিত্তিতে। পাকিস্তান সৃষ্টি হয় ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে। পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের মাঝে ভারত নামের বৃহৎ দেশ অবস্থান করলেও ইসলাম তথা ইসলামী উম্মার আদর্শ তাদের এক রাষ্ট্র হিসাবে আত্ম প্রকাশের অনুপ্রেরণা যোগায়। সুতরাং বলা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কামাল আতাতুর্ক এর নেতৃত্ত্বে সর্বশেষ তুরস্ক কেন্দ্রিক ইসলামী উম্মা তথা খেলাফতের বিলোপ সাধিত হলেও ১৯৪৭ সালে ভারতের মুসলমানরা এক হয়ে নুতন এক ইসলামী উম্মার পত্তন ঘটায়। অথচ ১৯৭১ সালে এসে হঠাৎ করে শেখ মুজিবুর রহমান নামের এক নেতার ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙ্গালীরা শুরু করে স্বাধীনতার যুদ্ধ যা ইসলামী উম্মার আদর্শের পরিপন্থি তথা ইসলাম বিরোধী। যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল তারা প্রকাশ্যে সেটাই সব সময় বলত এবং আজও তারা সেটাই বলে থাকে। যেমন- জামাত ইসলামি, মুসলিম লীগ এরা বলত-তারা ইসলাম রক্ষার জন্য যুদ্ধ করছে কারন ইসলাম তখন ভারতীয় নামের কাফির মুশরিকদের আগ্রাসনের শিকার। বস্তুত: ইসলামী বিধান অনুযায়ী তারা ছিল সঠিক। ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে ইসলামী উম্মা গঠন করার পর তা থেকে বেরিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করার চেষ্টা বা তার জন্য যুদ্ধ করা ছিল প্রকারান্তরে ইসলামের আদর্শের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সামিল।সুতরাং মুক্তিযোদ্ধারা ছিল ইসলামের বিরোধীতাকারী বাহিনী ও জামাত ইসলাম, রাজাকার, আল বদর, পাকিস্তানী সেনা এরা ছিল ইসলামের পক্ষের শক্তি। সুতরাং সহজেই বোঝা যায় নিহত মুক্তিযোদ্ধারা ইসলামের পথে জীবন দেন নি, তাই তাদেরকে শহিদ বলে আখ্যায়িত করা ইসলামী রীতি বিরুদ্ধ।বরং যেসব রাজাকার আল বদর মারা গেছে প্রকৃত ইসলামী অর্থে তারাই শহিদ। যুক্তির খাতিরে যদি বলা হয়, পাকিস্তানী সেনারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করছিল তাই তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারন করে জালিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল যা ইসলাম সম্মত। কিন্তু তা ধোপে টিকবে না কারন, পাকিস্তানীরা টের পেয়ে গেছিল ও বাস্তবতাই ছিল এরকম যে তখন বাংলাদেশের মানুষ আলাদা রাষ্ট্রই কায়েমের স্বপ্ন দেখছিল যা ছিল ইসলাম পরিপন্থি আর এরকম অবস্থায় তারা প্রকারান্তরে মোনাফেক হয়ে গেছিল, যদিও ইসলামী বিধান সম্যক না জানার কারনে তারা তা বুঝতে পারছিল না। কিন্তু তাতে কি, অপরাধি অজ্ঞতা বশত: অপরাধের শাস্তি কি তা না জেনে অপরাধ করলে বিচারে তার শাস্তি তো রদ হয়ে যায় না। মোনাফেকির জন্য কি শাস্তি তাও বলা আছে কোরানে, যেমন-

তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না। কোরান, ০৪:৮৯

বলা বাহুল্য, এখানে উক্ত আয়াতে অনুবাদের সময় কাফের শব্দটি ব্যবহার করলেও উক্ত আয়াতটি নাজিল হয় মূলত: মুনাফেক ও ইসলাম ত্যাগ কারীদের বিষয়ে। যাহোক, মুনাফেক হলো তারাই যারা মুসলমানদের কাছে বলে তারা মুসলমান অথচ নিজেদের মধ্যে গিয়ে বলে তারা মুসলমান নয়।মুনাফেকদেরকে বাইরে থেকে পরিপূর্ন মুসলমান হিসেবেই দেখা যায় যদিও ভিতরে তাদের মুনাফেকি। সুতরাং কোরানের উক্ত বিধান অনুযায়ী, পাকিস্তানী বাহিনী বাঙ্গালীদের নিধন কার্য শুরু করেছিল ও তাদের মা বোন দেরকে গনিমতের মাল হিসাবে ধর্ষন করত, যা মোহাম্মদ ও তার সাঙ্গ পাঙ্গরাও মহা উৎসাহে করত। তাই পাকিস্তানী বা রাজাকাররা ইসলামি বিধি অনুযায়ী কোন অন্যায় করে নি।সুতরাং দেখা গেল ইসলামী বিধান অনুযায়ী মৃত মুক্তিযোদ্ধারা কোন মতেই শহিদ নয়। একই সাথে একথাও নিশ্চিত বলা যায় যে, যদি কোন দিন বাংলাদেশ পরিপূর্ণ ইসলামি শরিয়া শাসনের আওতায় আসে নিহত রাজাকারদেরকেই প্রকৃত বীর শহিদ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হবে আর মৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বলা হবে কাফির মুনাফেক, তাদের নেতাদেরকে আখ্যা দেয়া হবে বাংলাদেশের আবু জেহেল , আবু লাহাব ইত্যাদি। অত:পর বাদ থাকে যেসব মুক্তিযোদ্ধা তখন পানিতে ডুবে বা মহামারিতে বা দুর্ভিক্ষে বা দুর্ঘটনায় মারা গেছিলেন তারা শহিদ কি না। না তারা সেভাবে মারা গেলেও শহিদ না, কারন ওভাবে মারা গিয়ে শহিদ হতে গেলে পরিপূর্ণ মুসলমান হতে হবে। যেমন- মেঘনার লঞ্চ ডুবির মধ্যে যেসব হিন্দু বা বৌদ্ধ বা খৃষ্টান আছে তারা মোটেই শহিদ হয়ে বেহেস্তে গিয়ে হুরদের সাথে ফুর্তি করতে পারছে না বরং এতক্ষনে তারা দোজখের আগুনেই পুড়ছে এটা নিশ্চিত। এর কারন হলো- কোরান ও হাদিস বার বার দ্ব্যর্থ হীন ভাবেই ঘোষনা করেছে- বেহেস্তে যাওয়ার প্রথম শর্তই হলো শাহাদা অর্থাৎ- আল্লাহ এক ও তার কোন শরিক নেই এবং মোহাম্মদ তার রসুল এ সাক্ষ্য দেয়া। মুনাফেকরা এ সাক্ষ্য মুসলমানদের সামনে দিলেও মনে সেটা বিশ্বাস করে না বা অন্যত্র তারা প্রয়োজনে ভিন্ন কথা বলে, যদি এটা বিশ্বাস করেও তাহলেও তারা অমুসলিমদের সাথে মিত্রতা স্থাপনের কারনে মোনাফেক এবং ইতিহাস সাক্ষী মুক্তি যোদ্ধারা ভারতীয় তথা হিন্দু নামক শিরককারীদের সাথে মিত্রতা করে ইসলামের ধ্বজাধারী পাকিস্তানী বাহিনী, রাজাকার, আল বদর তথা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল।