বাংলাদেশ সরকার আদিবাসীদের নিয়ে কেমন রঙ্গতামাশা শুরু করেছে। নিচের দু’টো ছবি দেখলে যেমন হাসি পায়, তেমনি বাঙাল শাসকদের মানসিক দৈন্য দেখে খুবই কষ্ট হয়। যারা জাতিকে নেতৃত্ব দেয় তারা যদি এত নিচু মনের অধিকারী হয়, তাহলে তাদের কাছ থেকে ছোট ছোট আদিবাসী জাতিগুলো কী আশা করতে পারে? নিচের ছবিগুলো দেখুন।
আগের ছবি
এটা হলো আগের ছবি। কোন এক পর্যটন কর্মকর্তা হয়তো ভেবেছিলেন বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে গেলে অনেক বিষয় বিদেশীদের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন, অন্তত জাতিবৈচিত্র্যের কথা তুলে ধরা উচিত বহি:বিশ্বের কাছে। এটা তুলে ধরার অন্যতম উপযুক্ত জায়গা হতে পারে বিমানবন্দর। সে কারণে হয়তো সেই রুচিশীল কর্মকর্তা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নারীদের ঐতিহ্যবাহী রঙিন পোষাকে ছবি তুলে বড় ফ্রেমে বাঁধাই করে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দেয়ালে টানিয়ে রেখেছেন। রাজনীতির মাঁরপ্যাচ না বুঝে হোক কিংবা অত্যন্ত খোলা দিলে হোক, তিনি স্পষ্ট করে ক্যাপশনে লিখে দিয়েছেন, ”Smiling Indigenous Women of Chittagong Hill-Tract”. কিন্তু এখানেই বড় সমস্যা বেঁধে গেলো।
পরের ছবি (এখনকার ছবি)
- আদিবাসী নারীদের হাসিমুখের এই ছবি হয়তো কোন বড় কর্মকর্তা বা রাজনীতিবিদের নজর কেড়েছিলো কোন একদিন। ঐ বড়বাবু হয়তো খুব ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন ”Smiling Indigenous” শব্দ দেখে। এমনও হতে পারে বিমানবন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত বড়বাবু বকুনিও খেয়েছিলেন। ফলে আক্রোশ গিয়ে পড়ে ঐ ”Smiling Indigenous” শব্দ দু’টোর উপর। শুরু হয় ঘষামাজা। নিচের ছবিটা দেখুন।
…Women of Chittagong Hill-Tract
Figure 2 …Women of Chittagong Hill-Tract
এখানে ’Smiling Indigenous’ শব্দ দুটো আর নেই। কেবল আছে “Women of Chittagong Hill-Tract”।
বন্ধুরা এখন আপনারা কল্পনা করে দেখুন, বিমানবন্দরের বড়বাবুকে কীভাবে ঐ ছবির উপর অত্যাচার করতে হয়েছিলো। ’Smiling Indigenous’ উঠাতে গিয়ে তাকে বা তার সাঙ্গপাঙ্গদের ছবির উপর কতই না আঁচড় দিতে হয়েছিলো। হয়তো সেটা করতে গিয়ে ব্যবহৃত হয়েছিলো ধারালো কোন যন্ত্র বা অস্ত্র, আর যন্ত্রের দাগ মুছতে গিয়ে হয়তো ব্যবহৃত হয়েছিলো কোন প্রলেপ, যাতে অন্যরা মানে বিদেশীরা বুঝতে না পারে ঐ ছবির উপর কতই না অত্যাচার জুলুম চলেছিলো!
এখন আরো কল্পনা করে দেখুন, “আদিবাসী”শব্দ মুছতে গিয়ে ছবির উপর যদি এরকম আক্রমণ চলতে পারে, তাহলে বাস্তব জ্যান্ত আদিবাসীদের মুছতে গিয়ে শাসকরা কী করেছিলো? সেনাবাহিনী কী করেছিলো? অস্ত্র, বেয়নেট, গুলি আর তার উপর ছিলো সেটেলার। মনের চোখে দেখলে স্পষ্ট অনুভব করা যায়, আদিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করতে বাঙাল বড়বাবুরা কী করেছিলেন।
আরো দেখুন, এখানে ছবির উপর ঘষামাজা চলেছিলো। অর্থাৎ টেম্পারিং চলেছিলো। এটাও এক ধরনের চরম নীতিহীন কাজ। মানে দুর্নীতি। এতদিন শুনে আসছি টাকা পয়সা নিয়ে দুর্নীতি। বর্তমান সময়ের আলোচিত দুর্নীতি হলো পদ্মাসেতুর দুর্নীতি। অবশ্য পদ্মাসেতু প্রথম দুর্নীতি নয়। বাংলাদেশ এর আগেও পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো দুর্নীতি নিয়ে।
এখন সেই টাকা মেরে খাওয়ার দুর্নীতির সীমা ছাড়িয়ে বাঙাল নেতারা, বড়বাবুরা ‘আদিবাসী’ শব্দ নিয়েও দুর্নীতি শুরু করেছেন। অর্থাৎ ছবির উপর টেম্পারিং করে আদিবাসী শব্দ মুছে দিতে চাচ্ছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে টানানো এই ছবিই তা প্রমাণ দিচ্ছে।
হা! হা! হা! বাংলাদেশ সরকারের এত আদিবাসী ভয়! ভয়ে এখন বাংলাদেশ দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে। আদিবাসী শব্দ মুছে দিলেই কী আদিবাসীরা মুছে যাবে? এটা কোন বাঙাল বাবুর বুদ্ধি?বাঙালদের দুর্নীতি চলতে থাকুক। আর আমরা আদিবাসী হা হা হা করে হাসতে থাকি।
———————-
অডঙ চাকমা, ১ মার্চ ২০১২
আজকে একটা ভিডিও দেখে আপনার এই লেখাটার কথা মনে পড়ল, তাই পোস্ট করে যাচ্ছি,
httpv://www.youtube.com/watch?v=3r_23Abopqc
আমার মনে হয় বাঙাল বলে গালি না দিলে আপনার উদারতাই প্রকাশ পেতো। বাঙাল বা অবাঙাল না হয়ে সকলেই বাংলাদেশি হয়ে উঠলে সকল দ্বন্দ্বের অবসান হবে বলে আমি মনে করি।
@অরণ্য,
তর্কের খাতিরে তর্কের মত বলে মনে হতে পারে। বাঙাল শব্দটাকে গালি হিসেবে ব্যবহার করিনি। চাকমারা বাঙালিদেরকে বাঙাল বলে। তাই চলতি চাকমা ভাষার শব্দ ব্যবহার করেছি মাত্র। বলা যায়, একেবারে ভুগানাঙ্গা মানুষের শব্দ। গালি হিসেবে মনে করবেন না।
আর বাংলাদেশী উঠার ব্যাপারে বলতে গেলে প্রথম কৃতিত্বটা আদিবাসীদের উপর দেওয়া উচিত। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংসদে বাংলাদেশী শব্দটা প্রথম উচ্চারণ করেছিলেন এম এন লারমা। জাতীয়তার পরিচিতি হিসেবে তিনিই প্রথম দাবী করেছিলেন, আমরা সবাই বাংলাদেশী। কিন্তু তাকে বাংলাদেশী পরিচিতি দেওয়া হয়নি, চাপিয়ে দেওয়া হয় ‘বাঙালি’। এবারেও বাংলাদেশের মানুষ সাংবিধানিকভাবে ‘বাঙালি’। অর্থাৎ বাংলাদেশী হয়ে উঠতে পারিনি। তাহলে দ্বন্দ্ব কীভাবে নিরসন হবে? বৃহত জাতির লোক হিসেবে আপনাদেরকেই দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায়গুলো বের করতে হবে প্রথমে।
ধন্যবাদ।
বলতে ভুলে গেছি… আমার লিখার ওই স্বভাবটুকু যদি একটু বিরক্তিকর মনে হয় তবে আমি চেষ্টা করতে পারি ঐ স্বভাবটুকু বর্জনের…
সুক্ষ অথচ নিপুন কাজ… শাসকদের, সেনাবাহিনীদের, সরকারের, সংকীর্ণ মনাদের…
***এই রঙ্গের ইতি কবে কিভাবে ঘটবে সে ভয়ে আছি।***
আপনার মতন লেখকদেরও সুক্ষ অথচ নিপুন কাজ… আমাদের কাছে এমন সুক্ষ তথ্য নিপুন ভাবে নিয়ে আসা।
****ছবিটি আরেকটু ভালো ভাবে দেখতে পেলে ভালো লাগতো। অথবা ক্যাপশনটি। তাও সন্তুষ্ট।****
@ছিন্ন পাতা,
সহমত।
আরেকটা জিনিস, আপনি মন্তব্য লেখার সময় কোন বাক্যে জোর দিতে চাইলে সেই বাক্য সিলেক্ট করে টেক্সটবক্সের উপরের “বোল্ড” বাটনে ক্লিক করলেও পারেন। আপনি এই তথ্য জেনেও বাক্যের দুই দিকে *** দেয়াটাকে আপনার স্টাইল হিসাবে লিখে থাকলে অনাকাঙ্ক্ষিত তথ্যের কারণে কিছু মনে করবেন না।
@প্রতিফলন,
(হাসি) যদিও বাস্তবে আমার অনেক ধরনের জ্ঞান দরকার কম্পিউটার সংক্রান্ত অনেক কিছুতেই তবুও ওই তথ্যটি আমার জানা ছিল।
আমার কথার অনেক ডালপালা গজিয়ে যায়, তাই হঠাৎ এক বিষয় হতে অন্য বিষয়ে লম্ফ ঝম্ফ দিচ্ছিনা এটা বোঝাতে ওই “ষ্টাইল”। আবার এও বলা যায় যেসব বাক্যে *** ব্যবহ্রত হয় তা কখনো বেশি এবং কখনো কম গুরুত্ব বোঝানোর জন্য। তাহলে কিভাবে বোঝা যাবে *** দ্বারা যা বলা হলো তা কি কম জরুরী নাকি বেশি জরুরী? এটা নির্ণয় করার ভার একমাত্র পাঠকের।
***মজা পেয়েছি। কিছু মনে করিনি। ধন্যবাদ 🙂 ***