বইমেলা নিয়ে বেশ ক’টি লেখা মুক্ত-মনায় প্রকাশিত হয়েছে। অনেকেই লিখছেন। বইমেলায় না আসতে পারা বিশেষ করে প্রবাসী পাঠকরা লেখাগুলো পড়ে উচ্ছ্বসিত,উদ্বেলিত ও দুধের স্বাদ ঘুলে মিটিয়ে নিচ্ছেন। আমরা যারা মেলায় যাবার সুযোগ পাচ্ছি তারা নিত্যদিন যেতে পারছি না সংসার, শরীর, চাকরি, সামাজিক, পারিবারিক দায় এবং সর্বোপরি ঢাকার রাস্তার যানজট বিবেচনায় এনে।প্রবাসীরা আসছেন প্রতিদিন। মেলা উপলক্ষেই তো দেশে আসা। এটা ভেবে লজ্জা পেলেও নিরুপায়।
২০ ফেব্রুয়ারি। মেলায় আমার আজ তৃতীয়দিনের মত আসা।। মেলায় ঢুকেই আজ বই খুঁজেছি বাংলা একাডেমীর স্টলে। অবাক কান্ড, লীলানাগের জীবনীসহ লোক সাহিত্যের আরও দুটো বইয়ের দাম মাত্র একশত টাকা। ৫০% কমিশনে। তাদের ক্যাটালগ দাগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। খুঁজতে বড্ড সময় লাগে বলে আজ আর খুঁজিনি। আরেকদিন অভিযান চালাব।
আরও কিছু বই কেনার ফাঁকে দুই/তিনবার শুদ্ধস্বরের সামনে চক্কর দিয়ে খোঁজ নিয়েছি অভিজিৎ রায় এসেছে কি না। সকালে একাডেমীতেই ছিলেন। বাংলা একাডেমীর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। অজয় স্যার এদিনে ছেলেকে কাছে পেয়ে নিশ্চয়ই অনেক ভাল বোধ করেছেন।
আমি আমার বইয়ের ভান্ডার জমা রাখি মোজাফফরের লিটল ম্যাগাজি্নের ষ্টল শাশ্বতিকীতে। বই হাতে নিয়ে ঘুরা যায় না। এরই মধ্যে আফরোজা আপা যোগ দিলেন তার মেয়েকে নিয়ে। তবে এবার তিনি একটু ক্লান্ত। বেশি হাঁটতে পারছেন না। উনাকে নিয়ে আবার কয়েকটা ষ্টলে ঘুরে বই কিনে আসতেই অভিজিৎ রায়ের ফোন। দেখা হল লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে।

অনেকের সাথেই এবার দেখা হচ্ছে না। আমি আজ গেছি তো লীনা কাল আসবে।এমন অংকেও দেখা মিলছে না। আবার মুক্ত-মনার অনেক লেখক পাঠক মেলায় আসছে যাচ্ছে, অথচ আমরা কেউ কাউকে চিনছি না। যেমন, মণিকা রশিদকে অভিজিৎ রায় আমার সাথে পরিচয় করিয়ে না দিলে বুঝতামই না যে মণিকা আমার সামনে। তার চেহারাটি দেখে মনে হচ্ছিল “ দেখে যেন মনে হয় চিনি তাহারে”।তার লেখায় তো ছবি দেখি।

পরিচয় পর্বের পরপরই ছবি তোলা

পরিচয়ের পরপরই জানতে পারলাম তিনি জলমগ্ন এর কবি। মুক্ত-মনার সবার বইই তো এককপি করে কিনব। তবে অটোগ্রাফ নেওয়ার সুযোগ আর হাত ছাড়া করি কেন! কাজেই কপিটি কিনে মণিকাকে ধরে ফেলা।
বাসায় এসে বইটি উল্টেপালতে পড়লাম। বরগুনার মেয়ে বলেই কি না কবিতাগুলোতে নদী, ধানিগন্ধ, অথৈ জঙ্গল, বনেদি পুকুর, গন্ধবতী শেওলা,পথচারী পাখি, উড়োজল বিরাজমান বলে মনে হচ্ছে। প্রত্যেকটা কবিতা নিভৃতে পড়ার দাবি রাখে। কথা দিচ্ছি মণিকা, পড়ব।
বইটির খবর কিন্তু মুক্ত-মনার বইয়ের তালিকায় সংযোজন করা যায়। কে জানে মুওক্ত-মনার লেখকদের আরও এমন কত বই ২০১২ সালের একুশে বইমেলায় মুক্তমনা লেখকদের বই য়ের প্রকাশিত তালিকার বাইরে রয়ে গেছে!!!
মণিকা রশীদের কাব্যগ্রন্থ ‘জলমগ্ন”যোগ করা যায়।
প্রকাশনা সংস্থা: শস্যপর্ব
মুদ্রিত মূল্য: ১০০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৬৪ পৃষ্ঠা
প্রচ্ছদ: পীযূষ কান্তি সরকার
আর প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা
চৈতন্যে সাড়া ফেলে দেয়ার মত কবিতা রয়েছে তার বইয়ে। যেমনঃ
“ফিরে আসবে যখন ঠিক করেছ
আর সাবান মেখে লাভ কী-
ভুল-ভ্রান্তি সঙ্গে নিয়েই ফিরো!”
আগেই ফোনে কথা হয়েছিল যে অনন্ত সিলেট থেকে আজ মেলায় আসবে। ‘যুক্তি”র অনন্ত দাসের বই এখনও মেলায় আসেনি। আজকেই আসবে বলে প্রতিক্ষায় আছে। আগামী সময়ে সংগ্রহ করতে হবে।

সিলেট থেকে আগত অনন্ত আর রাজশাহী থেকে আগত মোজাফফরের সাথে অভিজিৎ রায়

এত কিছু করেও অভিজিৎ রায়ের ‘ভালবাসা কারে কয়’ কেনা হয়নি আজ। কিনব। তবে লেখকের অটোগ্রাফ থাকবে না। কেন? কারণ মেলা থেকে কিনব না। শুদ্ধস্বর থেকে গতবছর প্রচুর বই কিনেছি। এবার একটিও কিনিনি।পরিকল্পনা করেছি মেলার পরে কিনব। কাছেই তো আজিজ মার্কেট।