মা মেঘমালা মেয়ে চেতনার পায়জামা না পরে বাথরুম থেকে বের হওয়া পছন্দ করে না। আগে আদরের সুরে বলত। এখন আদেশ।
চেনা, প্রত্যেকদিনই কি এক কথা বলতে হবে? বলার সময় মেয়ের দিকে তাকায় না মেঘমালা। মেয়ের দিকে তাকিয়ে কড়া শব্দ ব্যবহার করতে পারেন না। নিজের কৌশোরের কথা মনে পড়ে যায়। নিজে মেয়ের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন। মেয়ের চেয়ে অনেক বেশি বেপরোয়া ছিলেন মেঘমালা। সারা গ্রাম চষে বেড়াতেন। মায়ের শাসন গায়ে কাঁটা বিঁধত। এখন বুঝেন সে শাসনের প্রয়োজন ছিল। আসলে ছিল কি? না থাকলেও চলত। শুধু মা ছাড়া আরও কাছে এর প্রয়োজন অনুভূত হয় না।

মেয়ে বাথরুমের ভেজা মেঝেতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আরেক পা পায়জামায় ঢুকাতে গেলে পায়জামার নিচের মুড়ির অংশটুকু ভিজে যায়। ভেজা ভেজা ভাব নিয়ে ঘুরতে ফিরতে হয়। গরমের সময় বিরক্ত লাগে। স্নান করে বের হলেও মনে হয় ভিজা কাপড় বদলানো হয়নি। শীতকালে শীত শীতও লাগে। এর জের মাঝে মাঝে নাক দিয়েও পড়ে।
কথাটি জানাতেই মা খেঁক করে উঠেন, নিজের পা নিজের শরীরের ভার বইতে না পারলে তো এমন হবেই। তোমার মত এ বয়সে তো এক পায়ে দড়ি খেলেছি ঘন্টা ধরে।
আমাকে তো আর বাইরের খেলা খেলতেই দাও না। আমি কি করে পারব?
হয়েছে হয়েছে। আর কথা না বাড়িয়ে খেতে এসো।
মেঘমালা আবারও ঝামটা দেন । নরম কথা বলে মেয়েকে প্রশ্রয় দিতে চান না। মা মেয়েকে বেশি বকে। বকে পুড়িয়ে সোনা খাঁটি করার মতো। মেঘমালার মাও মেঘমালাকে বেশি বকত। বকার কারণ এখন বুঝতে পারে।বাবার প্রশ্রয়, আশ্রয়,আদর মনে পড়লেও মায়ের বকাটাই ছিল প্রবল। মায়ের বকার প্রাবল্য কি অনেক ঝড়ো হাওয়া থেকে মেঘমালাকে আড়াল করতে পেরেছিল? কিছু কিছু ঘটনাতো ঘটেই ছিল। হয়তো আরও বেশি ঘটতো। ঘটতো কি!
কাজেই একটু চাপে না রাখলে এ যুগের হাওয়ায় মেয়ে উড়ে যাবে বলে মেঘমালার ধারণা।
দাদা তো গামছা পরে বাথরুম থেকে বের হয়। পরে প্যান্ট পরে। এতে কোন সমস্যা নেই। তার তো হাঁটুই ঢাকে না। আমার কামিজ বেশ লম্বা। হাঁটুর নীচ পর্যন্ত যায়, তবুও
মা আর তার কথা শেষ করতে দেয় না। খমখমিয়ে বলে, বহুদিন বলেছি কিন্তু অতল ছেলে আর তুমি মেয়ে।
মেয়ে আর কিছু না বলে মুখ ভার করে খাবারের টেবিলে দাদার পাশেই বসে।
খেয়ে গিয়ে হাতে পায়ে লোশন দিও। খেড়ের মত তো হাত পা খড় খড় করে!
মেয়ের এবার আর বিরক্ত প্রকাশ করারও সুযোগ নেই। মা মেয়ে টেবিলে মুখোমুখি। অতল পাশে বসে পরিবেশ হালকা করতে ফোঁড়ন কাটে, বুঝলি ? মা তোকে লোশন দিতে বলল। আর আমাকে বলল সরিষার তেল মেখে স্নান করতে। তোরটা দামী বেশি।
মেয়ে মাকে কিছু বলতে না পারলেও দাদাকে টেবিলে নিচে পা দিয়ে ধাক্কা দেয়। দাদা মুখ স্বাভাবিক রাখে। বোনকে আর মায়ের বকা খাওয়াতে চায় না।

মেঘমালা ছেলের থালায় ভাত তুলে দিতে দিতে বলে, চেনার জন্য তো একজন টিচার যোগাড় করতে পারলে না। সিলেবাস তো শেষ করতে হবে, না কি?
মা, তুমি তো আবার টিচারনি খুঁজতে বলেছ, পেতে হবে তো?
কি বিশ্রি শব্দ বললে টিচারনি । টিচারনি আবার কি?
তুমিই না বললে বুয়েটের কোন মেয়ে পড়াবে কি না। তারা তো আর টিচার না। তারা টিচারনি। স্ত্রীলিঙ্গ।
ফাজলামো রাখ।
অতল কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেছে। সব মেয়েদের মা ই তো তার মায়ের মত। কড়াকড়ি। ছাত্রীহল থেকে শুধু বুয়েট ক্যাম্পাস। বাকিরা বাসা আর বুয়েট ক্যাম্পাস। বুয়েটের বাসে আসে আর যায়। যে দুয়েকজন আছে তার নিজের মায়ের মত মায়েদের বদৌলতে তাদের ছাত্রীর অভাব নেই। ভালই কামাই করছে।
এরই মধ্যে জমিতা আসতে রাজি হয়েছে। তবে পরীক্ষার পর। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। ফিজিক্সে। এ তথ্যটি মাকে এখন বলে না। তাহলে আরেক জেরার মুখে পরবে। নিজে বুয়েটে পড়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটির মেয়েদের কীভাবে চেনে?
মায়ের চাহিদা তুঙ্গে উঠলে বলবে এক বন্ধুর বন্ধু হিসেবে জমিতা নামে এক মেয়েকে পাওয়া গেছে।
মেঘমালা ঢাকায় আসার আগেই জীবনের ঝাঁঝ বুঝে এসেছে। এখন পেঁয়াজের মত নিজেকে একটা পাতলা আবরণে ঢেকে রেখেছে। পরত খুললেই ঝাঁঝের আঁচ পাওয়া যাবে যে আঁচে চোখ জ্বলবে। এসব অভিজ্ঞতাই চেতনাকে চাপে রাখার কারণ।
গাঙ দেখলে মুত আইয়ে আর লাং দেখলে আইস আইয়ে। তুই যহন তহন যার তার সামনে আসস ক্যান?
মায়ের এ জাতীয় সংলাপ মেঘমালার কানে বাজে। মনে দাগ কাটা কথা।

হাসে মনের আনন্দে। মানুষ তো জীবনের বেশিরভাগ সময়ই হাসে। জীবনে তো কান্নার চেয়ে হাসিই অনেক বেশি সময় দখল করে থাকে। হাসলে গালে টোল পড়ে। আর সে টোলে তোমাকে চুমাতে হবে কেন? এ কথা কেউ বলে না। তার হাসার দোষ। গালে টোল পড়ার দোষ। ঘর থেকে বের হলে দোষ! দোষের আর সীমা পরিসীমা নেই। তের নদী দোষ। এত নদী পাড়ি দিয়ে দোষ কি কাটানো সম্ভব! মেঘমালাকে তের নদী দোষ পাড়ি দিতে হয়েছে। এখন তার মেয়েকে যাতে এক নদীও পাড়ি দিতে না হয় সারাক্ষণ সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে।

জমিতা ঘুরছে।ঘুরে। বিজয়ের মাসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আশে পাশে সপ্তাহে তিনদিন ঘন্টা খানেক ধরে ঘুরে। চাকরি পেয়েই হলের সীট ছেড়ে দিয়েছে। কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে থাকে। অফিসের পর সপ্তাহে তিনদিন অতলের বোনকে পড়ায় আর তিনদিন বিকেলে এদিক সেদিক ঘুরে। শুক্রবার পরিপূর্ণভাবে তার। রুমেই থাকে।
আজ দেখা হয়ে গেল সামসুন্নাহার হলের হলের পাশের রুমে থাকা এক মেয়ের সাথে।
দি।
দি।
জমিদি। জমিতাদি। এবার খেয়াল করে দেখে তাকেই ডাকছে। দি ডাক কানে গেলেও মনে লাগেনি। দি শব্দটি যেন কি শব্দে রুপান্তরিত হয়ে কানে লেগেছিল। দি শব্দটি তার মনে বাজেনি। অন্যকে কেউ বুঝি কোন প্রশ্ন করছে। জমিদি ডাকতেই কানে গিয়েছিল এবং মনেও। অনেকদিন পর দি ডাক শুনল।
শুধু দি , জমিদি না,জমিতা দি না। না জমি দিদি বা জমিতাদিদি, জমিপা জমিতাপা। অথবা নয় জমি আপা বা জমিতা আপা কিংবা জমিফা বা জমি আফা। জমিতা বিভিন্নজনের কাছ থেকে এত ধরণের সম্বোধন শুনে অভ্যস্ত। একেকটা সম্বোধন একাধিক জনে ডাকে। দি শুধু একজনই ডাকতো। সামসুন্নাহার হলে।
দি। ঐ দি শুনছেন? চিনতে পেরেছেন?
মেয়েটির নামটা দি ডাক শুনেই মনে পড়ার কথা। কিন্তু পড়ল না। সামসন্নাহার হলের ঐ একজনই দি ডাকত। নাম মনে করতে না পারলেও একটু ভণিতার আশ্রয় নিল। হাসি দিল। মেয়েটি এগিয়ে এসে কুলাকুলি করতেই নামটি মনে পড়ল। ঝাঁপি।
এ কুলাকুলিই নামটি মনে পড়ার কারণ। এ কুলাকুলি নিয়ে হলে ইতিহাস আছে। ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটিয়ে মেয়েটি পরে হলে আর টিকতে পারেনি। কুলাকুলি করেই মেয়ে চিহ্নিত করত। আর রুমে নিত্য নতুন মেয়েদের নিয়ে থাকতে পছন্দ করত।
প্রথম বিল্ডিংয়ের দুতালায় দুইশ’ নয় নম্বর রুমে থাকত। রুমের দরজায় রুম থেকে বৈদ্যুতিক তারে একটা সবুজ রঙের জিরো পাওয়ারের বাল্ব ঝুলিয়ে রেখেছিল। দরজাটাও থাকত সারাক্ষণ খোলা। জমিতা একদিন তাকে প্রশ্ন করতে তার দরজার কাছে গিয়ে দেখে ঝাঁপি হিটারে চা করছে। দরজায় দাঁড়িয়েই পরিচয়ের ভূমিকা হিসেবে জিজ্ঞেস করতে করতে রুমে ঢুকে, বাড়ি কোথায়? কোন কলেজে পড়েছে? এখন কোন সাবজেক্টে পড়ে?
ঝাঁপিও একে একে উত্তর দিচ্ছে আর প্রত্যেকটা উত্তরের মাঝে জমিতাকে ঘরে ঢুকে বসতে বলছে।
ঘরে এসে বসেন। বাড়ি নরসিংদী।
এখানে চেয়ারটায় বা বিছানায় যেখানে খুশি বসেন। আর ওখানের কলেজেই পড়েছি।
রুমে দুটো টেবিল, দুটো চেয়ার। দুটো চৌকি। ঝাঁপির চেয়ারের হেলানে ব্যবহার করা কাপড়-চোপড়। অন্যটা খালি। ঝাঁপির রুমমেট বিছানার তোষক উলটে বালিশ ঢেকে রেখে গেছে। জমিতা কোথায় বসবে চিন্তা করা শুরু না করতেই ঝাঁপি দুই হাতে সব কাপড় চোপড় পাঁজা করে বিছানার একপাশে রেখে বলে, এ চেয়ারে বসেন।
ঝাঁপি তখন হিটারে করে বড় মগে চা ঢালছিল। চেয়ার থেকে কাপড় সরিয়ে জমিতাকে বসতে বলেই ছোট দুটি কাপে চাটুকু ভাগ করে ঢেলে একটা কাপ এগিয়ে দিয়ে বলে, চা খান। ইতিহাসে পড়ি।
জমিতা চায়ের আপ্যায়ণে একটু অপ্রস্তুত। সাধারণত হলে প্রথম পরিচয়েই অন্তত কেউ নিজের চা ভাগ করে খায় না।
ঝাঁপি চায়ে চুমুক দেয় আর বলে, আপনি কি আমার কাছে জানতে এসেছেন, দরজা সব সময় খোলা রাখি কেন? দরজায় সবুজ বাতি কেন সারাক্ষণ জ্বলজ্বল করে। আমার কাছে , আমার ঘরে আসতে সব সময়ই গ্রীণ সিগন্যাল। সবুজ বাতি। যে কেউ যে কোন প্রয়োজনে আমার কাছে আসতে পারে।
জমিতা বলেছিল, জিরো পাওয়ারের বাতি তো জ্বলজ্বল করছে না, টিমটিম করছে। ঝাঁপি ঠোঁটের বাম কোণায় দাঁত দিয়ে একটু চাপ দিয়ে বলে, দিনের বেলা টিমটিমই করে। যত অন্ধকার তত আলো ছড়ায়।
আজ জমিতা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ঝাঁপি জিজ্ঞেস করল, কেমন আছেন? কোথায় যাচ্ছেন?
দুটো প্রশ্ন একবারে।
জমি পাঁচ সেকেন্ড চিন্তা করে বলল, ভাল আছি? কি জানি! নারীরা তো কৃষি যুগ থেকেই ভাল নেই। আর কোথায় যাচ্ছি? না, কোথাও যাচ্ছি না। এখানেই ঘুরছি। বিজয় মাস জুড়ে প্রায় দিনই এখানে আসার কথা বলে না। বলে, একটু বৈকালিক ভ্রমণে বের হয়েছি আর কি।
কোথায় থাকেন?
কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে।
আমার সাথে থাকতে পারেন। আমি বাসা নিয়েছি। কোন ভণিতা বা ভূমিকা না দিয়ে সরাসরি প্রস্তাব।
জমিতা সরাসরি উত্তরে যায় না। বলে,ভেবে দেখি।
কি ভাববেন? আর কি দেখবেন। মনের সাথে প্রতারণা করবেন না।বাক্স পেটরা নিয়ে চলে আসেন। এখন আমার কাঠের দরজায় রাতে খিল দিলেও অন্য স খোলা। বাতিও সবুজ।
ঝাঁপি নিজেই কাঁধের ব্যাগ খুলে একটা পেন্সিল ও এক টুকরা কাগজ বের করে খটাখট নিজের ঠিকানা লিখে দিয়ে বলে, আজ আসি।

অতলের বাবা সাধারণত প্লেট ছাড়া কাপে চা দিলে রাগ করেন। বিরক্ত হন। চেতনার রুমে পড়াতে বসলেও ডাইনিং টেবিলে কি কথা হয় তা জমিতা শুনতে পায়। অতলের মা বাবার টুকটাক কথাবার্তা প্রায়শঃই জমিতার অস্বস্তির কারণ হয়।
জমি চেতনাকে পড়াতে এসেছে। তাদের সংসারের সহযোগী মেয়েটি বাড়ি গেছে। অতলের মা বাইরে একটা চাকরি করে এসে ঘরে একা একা আরেকটা চাকরি করতে হিমশিম খাচ্ছে। কাজেই একটা প্লেট ধোয়া কম লাগলেও কম কি। প্লেট ছাড়া কাপে চা দিতেই অতলের বাবার যথারীতি গলা উঁচু। সাথে তার মায়েরও।
চা তো বানিয়েছি জমিতার জন্য। তুমি সাথে পেয়েছ। প্লেট নিজে নিয়ে চা খাও। আর পরে দুটোই ধুয়ে রাখবে। আর অন্যান্য কাজও করতে হবে।
অতলের মা তার বাবাকে বুঝাতে চাচ্ছেন, বেটা বুঝুক একটা প্লেটের মত একটু একটু করে কত কাজ জমে। আর একটা প্লেটের মতো সংসারে সারাক্ষণ তিনি কত বাড়তি ঝামেলার সৃষ্টি করেন।
অথচ জমিতার জন্য নিজের হাতে দু রকমের নাস্তাও বানিয়েছেন। মনে হয় স্বামীকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য গৃহকর্মীর অনুপস্থিতির সময়টুকু বেছে নিয়েছেন।
অতলের বাবা বিড়বিড় করছিলেন আর তার মা গজগজ করছিলেন। জমিতা ঔ সময়ে তাদের বাসায় না থাকলে হয়তো অতলের বাবার বিড়বিড় গর্জনে পরিণত হত। আর তার মায়ের গজগজ হুংকারে রুপান্তরিত হত। ঘরে টিচার রেখে তো আর উচ্চবাচ্য চলে না!
কেউই যেন মনপ্রাণ ঢেলে ভাব, অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছিলেন না। ঐ সময়ে জমিতার কান ও মন তাকে অস্বস্তিতে ফেলে। তা ভেবে তার গলায় চা ঠেকে গেছে। গরম চা মুখে নিয়ে গলার ভেতর থেকে উখহে উখহে শব্দ উঠে একটু চা জিহ্বার উপর দিয়ে, দুই সারি দাঁতের ও দুঠোঁটের মাঝখান দিয়ে নিজের ওড়নায় পড়ে। সাদা ওড়নাটায় দাগ পরে যাবে বলে পাশের বাথরুমে ঢুকে। এদিকে চেতনা নিজের একটা ওড়না নিয়ে বাথরুমের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকে। জমিতা ওড়নাটা ভিজিয়ে নিয়ে বের হতেই চেতনা বলে, জমিতাদি, এটা নিন, ভিজা ওড়না গায়ে দিয়ে কাজ নেই। ঠান্ডা লাগবে।
জমিতাও কোন অজুহাত না দিয়ে ওড়নাটা নিয়ে নেয় ও বলে, ঠিক আছে দাও, কালকে নিয়ে আসব নে।
ওড়নাটা নিতেও আবার মনে মনে অস্বস্তি লাগছিল। ওড়নাটা গায়ে দিতেই কেমন কেমন যেন একটা গন্ধ।
সামসুন্নাহার হলে ঝাঁপিও তার অস্বস্তির কারণ হয়েছিল। ওড়নাটা আর ঝাঁপির শরীরের যেন একই গন্ধ। পরে জমিতা আর ওড়নাটি আনেনি। পড়ানোর সময়টুকু ওড়নাটি গায়ে দিয়ে নিজের ওড়নাটি ফ্যানের নিচে দিয়ে শুকিয়ে নেয়। পুরোপুরি শুকাইয়নি। ঠান্ডা স্যাঁতস্যাঁতে ওড়নাটাই গায়ে দিয়ে এসেছিল।
পর থেকেই জমিতা সাবধান হয়ে যায়। অতলের বোন। এ গন্ধকে আমলে নেয়া যাবে না।
অতলকে ফোনে বলবে নিজের অসুবিধার জন্য পড়াতে পারছে না। এখানে আসা মানেই এ গন্ধকে আশ্রয় করা, প্রশ্রয় দেওয়া। চেতনা নয়, ঝাঁপির সাথেই থাকবে। সেই হবে জমির সাশ্রয়ী লক্ষ্যস্থল।