৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২। প্রথমদিন মেলায় আসলাম। ভিড় নেই।আগের দিন পত্রিকায় ধূলিময় মেলার খবর পড়লেও আজ ধূলা নেই। পরিচ্ছন্ন। আজকেও আসা হত না। হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে মেলায় গেছি। আমার এক বন্ধু ফোন দিল তার আত্মীয় পুলিশ অফিসারের কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। আমাকে অফিস থেকে নিয়ে যাবে। আমার মেয়েও পরীক্ষা দিয়ে মেলায়। সহপাঠী কথা সাহিত্যিক ঝর্না রহমান এস এম এস পাঠাল একুশের আয়োজন নিয়ে আগামীকাল ৪টায় সভা। তাকে জানালাম অফিসের জন্য যেতে পারব না, কিন্তু তার এস এম এস আমাকে মেলায় টানল।এদিকে আফরোজা আপাকে কথা দিয়েছিলাম মেলায় গেলে জানাব। কিন্তু তাকে না জানিয়েই মেলায় চলে গেছি। আমার এত কম সময় মেলায় থাকা পোষায় না।তবুও না দেখার চেয়ে এক নজর দেখা।
প্রথমে যাই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে। পুলিশের ভিড়। এক লোক পাশ দিয়ে যেতে যেতে বললেন, যাক, বাংলাদেশের পুলিশও ভাল হয়ে গেছে। কবিতা লিখে।

বিষয়টিকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি। কবি তো যে কোন মানুষই হতে পারেন। সে যে পেশারই হোক না কেন। পুলিশও সমাজ ও সংস্কৃতিরই অংশ।মেলায় এবার প্রথমবারের মত মেলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি স্টল রয়েছে যাতে পুলিশ পরিবারের সদস্যদের লেখা কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস, প্রবন্ধের পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন প্রকাশনা স্থান পেয়েছে।

বইয়ের নাম নিরন্তর নির্বাসন। কবি সুদীপ চক্রবর্তী। পুলিশ অফিসার। প্রকাশক আগামী প্রকাশনী। মূলত পরিবেশক। কবির স্ত্রীর সাথে কথা বলে মনে হল কবির নিজের খরচে প্রকাশ।তিনি নিজেও পুলিশ অফিসার। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ। বিপিএম (বার), বিশেষ অতিথি আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি।

শুদ্ধস্বর তখনও সাজাচ্ছিল। টুটুল সাহেবের স্ত্রী সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন। কুশল বিনিময় হল। জিজ্ঞেস করলাম, এবার স্টলের জিজাইনার কে? সামিয়া কিনা। জানাল, এবার সামিয়া নয়।
পাশেই জাতীয় সাহিত্য প্রকাশে বাবলু ভট্টাচার্‍্য্য বসে আছেন। সুলেখক। অনেক বইয়ের মধ্যে চলচ্চিত্র ও এর লোকজন নিয়ে যার বেশ কয়টি নামকরা বই রয়েছে। এবার শুদ্ধস্বর থেকে তার বই উৎপল দত্তঃ থিয়েটার ও রাজনীতি প্রকাশিত হচ্ছে। কথা হল এবারের বই নিয়ে। নিয়মিত মেলায় আসেন। স্টলে বসেন। জানালেন ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখের আগে মেলায় নতুন বইয়ের আমদানি কমই থাকে। অন্য অনেকের মত আমার ছোটগল্প সংকলন করার কথা বললেন। আগামীতে হবে বলে জানালাম।
একটু এগুতেই এ টি এন নিউজ আমার বন্ধুর সাথে কথা বলতে চাইল। বন্ধুর হাতে নতুন বই। আমার হাত খালি। এজন্য বা আমার বন্ধুটি সুন্দরী বলেই হয়ত তার সাক্ষাৎকার নিতে চাইল। সে আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল, দিদি বলবেন। আমি বই ও মেলা নিয়ে তেমন কিছু বলতে চাই না, পারিও না। জানিও না। এ টি এন নিউজ তাকেই ক্যামেরার সামনে কথা বলাতে চায়।
উত্তর দিল, আপনার হাতে বই। উনি তো বই কিনেননি।

বন্ধুটির উত্তর, উনি প্রথমদিন কিনেন না।

আসলেও আমি প্রথমদিন কম কিনি। ঘুরে ঘুরে ক্যাটালগ সংগ্রহ করি পছন্দের কিছু প্রকাশনী থেকে। প্রতিবারই তা করি।বাসায় এসে বইয়ের তালিকা তৈরি করে পরে আস্তে আস্তে কিনি। বন্ধুটির কথা শুনে আমার সামনে মাউথ স্পীকারটি ধরতেই যা বললাম এর সারমর্ম হলঃ
ঢাকায় বিভিন্ন মেলায় টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। যেমন বাণিজ্য মেলা। কিন্তু বই মেলায় ঢুকতে কোন পয়সা লাগে না। লাগা উচিতও নয়। বাংলা সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে এ মেলার অবদান যেমন স্বীকৃত তেমনি মেলায় লোক সমাগমও মেলাকে সাফল্যমন্ডিত করার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তবে মেলায় আমার আসা যাওয়ার অভিজ্ঞতায় দেখেছি যত লোক আসে তত বই বিক্রি হয় না। মেলায় একট নিয়ম করা যায় যে মেলায় ঢুকলে অন্তত একটা বই কিনে বেরুতে হবে। ঢুকতে টিকেট লাগবে না, তবে বেরুতে গেলে হাতে অন্তত একটি বই থাকতে হবে। তাহলে কিছু লোকের অহেতুক ভিড় বাড়ানোর প্রবণতা কমবে। বইমেলা মানে শুধু পাঠক,লেখক ও প্রকাশক নয়। অপাঠকরাও মেলায় আসে সময় কাটাতে। ভিড় বাড়াতে।

যাহোক, এ প্রস্তাবটিতে কেউ উন্নসিকতা, বাড়াবাড়ির বা পুঁজিবাদের গন্ধ পেলে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে ভাবনার জন্য অনুরোধ রইল।