লিখেছেন – জালিশ মাহমুদ রিয়াদ
বেশ অনেকদিন আগে বিবর্তন-বিরোধী খুব-ই ভালো একটা লেখা শেয়ার করেছিলেন আমার এক বন্ধু (সম্ভবত অনি)।এটাকে ভালো বলছি কারণ, এই লেখাটিতে অন্তত আমি ১ টি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলাম যেটা পড়ে অন্য ১০ টা প্রশ্নের মত হাসি পায়নি। সত্যি বলতে, লেখকের ঐ প্রশ্নটা আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছিলো। যদিও উত্তরের বেশ কিছুটা জানা ছিল, কিন্তু ব্যস্ততা বা আলসেমির কারণে সেটা নিয়ে আলাপ করা হয়ে ওঠেনি।আজকের এই লেখাটি তাই মূলতঃ অনিকে (আশা করি অনি-ই শেয়ার করেছিল) উদ্দেশ্য করে।
যাহোক, এত ভূমিকে দিতে গিয়ে আসল প্রশ্নটিই বলা হয়নি… “প্রকৃতিতে কেন দুটি লিঙ্গই (পুং-স্ত্রী) দেখা যায়?কেন ৩টি বা এরচেয়েও বেশি নয়? এটা কী বিধাতার সৃষ্টি করা প্রতিসাম্যের-ই সাক্ষ্য নয়?”
একটা ব্যাপার সচরাচর আমাদের চিন্তায় কখনো আসেনা। কাকে আমরা পুরুষ বলছি, আর কাকে-ই বা নারী ? এদের গুণগত পার্থক্যটা কী? মানুষের ক্ষেত্রে বা অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে হয়ত ব্যাপারটা খুব সোজা-সাপ্টাঃপুরুষ তারাই, যাদের গঠন শক্ত, যারা পুরুষাঙ্গের অধিকারী; নারী তারাই যারা বাচ্চা ধারণ করে, সন্তানদের দুধ খাওয়ায় ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আপনার চারপাশে তাকিয়ে দেখুন। এমন অনেক প্রজাতি পাবেন যাদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য দেখে তাদের লিং নির্ধারণের ক্কোন উপায় নেই। এই যেমন ব্যাঙ। এদের মধ্যে “পুরুষত্ব”বাহী কোন যৌনাঙ্গ নেই। (হায়েনাদের ক্ষেত্রে মেয়েরাও PENIS বহন করে। যাহোক, কে বাচ্চাদের দুধ খাওয়াচ্ছে তা দেখেই আপনি বলতে পারবেন কে নারী।) ব্যাঙদের Gender খুঁজতে আপনি হয়ত ক্রোমোসম পর্যন্ত যাবেন। সেখানে একটা সুরাহা আপনি পাওয়ার আশা করতেই পারেন। কিন্তু সেই “ডিম আগে না মুরগী আগে” টাইপ প্রশ্ন তো থেকেই যাচ্ছে। (মানুষের মত) ব্যাঙ এর জন্যও যদি আপনাকে বলে দেয়া না হয়, ওমুক ক্রোমোসমধারীরা পুরুষ, আর ওমুকেরা নারী, তাহলে আপনার জন্য কাজটা কঠিন-ই থেকে গেল। কিন্তু আমাদের এই সমস্যার একটা সুরাহা প্রকৃতি করে রেখেছে কয়েকশ মিলিয়ন বছর আগে। সেটা হচ্ছে জীবজগতে দুই ধরণের জনন কোষের (Sex Cells বা Gametes) উপস্থিতি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পুরুষ গ্যামেটটি আয়তনে অনেক ছোট, কিন্তু অনেক বেশি চলনশীল; আর স্ত্রী গ্যামেটটি সাইজে অনেক বড়, আর অনেকটাই অচল। পুং গ্যামেটকে আমরা বলছি Sperm আর স্ত্রীকে Egg.
জীবজগতে Sperm আর Egg এর পার্থক্যটা খুব বেশি চোখে পড়ে। এই যেমন ধরুন সরীসৃপদের বা পাখিদের ক্ষেত্রে Egg সাইজ এতো বড় যে একটা Egg ই বহুদিন ধরে বড় Developing embryo এর খাদ্য সরবরাহ করতে পারে। আমাদের মানুষের ক্ষেত্রে বৈষম্যটা এতো বেশি না হলেও ডিম্বাণূ শুক্রাণুর থেকে কয়েকশ গুণ বড় তো হবেই। কিন্তু কেন এই পার্থক্য? কোত্থেকে এলো এতো বড় তারতম্য?উত্তরটা জানতে আমাদের চোখ দিতে হবে একটু নিচু (!!!) প্রজাতির জীবদের দিকে। ছত্রাকদের ক্ষেত্রে জনন কোষগুলোর মধ্যে তেমন কোন পার্থক্যই নেই। এদের জিনোম, এদের আকৃতি সবই এক। এজন্যই এদের বলা হয় isogamet (iso=same).এদের জননের ক্ষেত্রে একটাকে দেয়া হয় + চিহ্ন আর অন্যটাকে – চিহ্ন । (মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের বইয়ের সেই ভয়ঙ্কর সব জীবনচক্রের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, তাইনা?) লক্ষ্য করুন, ভ্রূণ তৈরিতে, এর রক্ষণাবেক্ষণ বা যত্ন-আত্তিরে দুটি গ্যামেটের ভূমিকাই সমান। কেউ কম দিচ্ছে না, কেউ বেশিও না। যেহেতু এইসব আদি-উৎপত্তির জীবদের মধ্যে সেক্স কোষের কোন পার্থক্য নেই, এদের দেহ কোষেরও বা বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের মাঝেও কোন Gender ভেদাভেদ নেই। তাহলে, আমরা যারা বিবর্তনের সিঁড়িতে আরো পরে এলাম, তাদের মাঝে এ ধরণের সেক্স-ism এর উৎপত্তি হলো কীভাবে?
উৎপত্তিটা আসলে হয়েছে selfishness থেকে, exploitation থেকে। আমাদের ২ ধরণের সেক্স গ্যামেটের মধ্যে শুধু Egg ই ভ্রূনের খাদ্য যোগায়, sperm নয়। অর্থাৎ বাবার শুক্রাণু তার জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালের ৫০% দিয়েই খালাস। আর কোন কিছুতেই সে সত্যিকার ৫০% শেয়ার করছেনা। তার selfishness হল মায়ের ডিম্বাণুর উপর সব ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বর্তে দিয়ে কেটে পড়া। কারণ কী?খুব সহজ ব্যাপার। COMPETITION of the selfish genes. সবার-ই মুখ্য উদ্দেষ্য হচ্ছে নিজের প্রজন্ম রেখে যাওয়া। তাই সবাই-ই চেষ্টা করছে যাতে অধিক সংখ্যক জননের মাধ্যমে নিজের জিনগুলোকে টিকে থাকার অধিকতর সুযোগ করে দেয়া যায়। অন্য কাউকে embryo এর পালা-পোষার দায়িত্ব দেয়ার মাধ্যমে সে আসলে নিজের রিসোর্স বাঁচাচ্ছে। এর ফলাফল? পুরুষদের লক্ষ কোটি শুক্রাণু উৎপাদনের ক্ষমতা। আমরা পুরুষরা তাই বলতে গেলে অসীম সংখ্যক পুত্র-কন্যার বাবা হতে পারি। আর ওইদিকে, নারীদের ডিম্বাণু এক অর্থে explioted (আসলেই কি তাই?পড়তে থাকুন, উত্তর পরে), কারণ সে শুক্রাণুর চালে পড়ে ভ্রূণের ভরণ-পোষণ নিজেই পুরোটা করছে। ফলে, কোনভাবে রিসোর্স বাঁচিয়ে আরো অনেক সংখ্যক ডিম্বাণু তৈরির স্বাধীনতাটুকু তার নেই। একটা ডিম্বাণুই তাই নারীর ভূষণ (!!!)।
এবার শুরু যুক্তির পালা। সেই প্রাচীন অবস্থার কথা চিন্তা করুন, যখন পর্যন্ত আমাদের সেক্স-কোষগুলোর কোন পার্থক্য নেই। সবাই সমান, সবাই এক-ই। এবার ধাপে ধাপে এগোন।
১। বিবর্তনের ধারায়, কোন মিউটেশনের কারণে কিছু গ্যামেটের সাইজ একটুখানি বেড়ে গেল। মিউটেশনটা লিথাল না হলে এই ধরণের কিঞ্চিৎ বড় গ্যামেটগুলোর পরবর্তী প্রজন্মে বাহিত হবে, অর্থাৎ এর সন্তান-সন্ততিরাও (!!) একটুখানি বড় হবে। একটা বড় সুবিধা হচ্ছে,আপেক্ষিকভাবে অন্য সাধারণ সাইজের গ্যামেটের তুলনায় এদের (কিঞ্চিৎ বড়) প্রাথমিক খাদ্য-সঞ্চয়ের পরিমাণ বেশি। তাই, এরা যখন মিলনের জন্য সবার সাথে competition এ নামে, তখন এদের ফুয়েল বেশি থাকার কারণে এরা টিকে থাকে বেশিক্ষণ এবং এদের সাফল্যের হারটাও একটু বেশি হয়। অর্থাৎ ঐ প্রথম মিউটেশনটি এদের মাঝে একটা Reproductive success এনে দেয়। তাই প্রাকৃতিক নির্বাচনে এদের এই বৈশিষ্ট্যটি প্রাধান্য পায়। এভাবেই এক ধরণের গ্যামেটের (তখন পর্যন্ত শুক্রাণু বা ডিম্বাণু টাইপের বৈষম্য আসেনি) সাইজ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।
২। অন্যদিকে এক শ্রেণীর এই বড়-হওয়া-জনিত সুবিধা অন্য আপেক্ষিকভাবে ছোট আকারের গ্যামেটদেরকে একটা কঠিন সিলেকশনের মাঝে ফেলে দেয়। অর্থাৎ, মিলনে সাফল্য পেতে এদেরও মরিয়া হয়ে খুঁজে নিতে হয় অন্য কোন ছল-চাতুরী। অবশ্য ছোট আকৃতি যে সব সময়ই অসুবিধার, তা কিন্তু নয়। সত্যি বলতে, এই ছোট গ্যামেটদের মধ্যে কিছু এবার চেষ্টা করে আরো ছোট হতে। কেন?কারণ, এতে করে, তারা তাদের অতিরিক্ত ভর ত্যাগ করে বাড়তি গতির অধিকারী হতে পারে এবং সেই সাথে বড় আকারের গ্যামেটের সাথে এদের মিলনের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। কীভাবে? কল্পনা করুন, আপনার সামনে একটা বড় গোল-পোস্ট আছে এবং আপনি একসাথে একশ বলকে ছেড়ে দিলেন এটা দেখার জন্য কে আগে পৌঁছুতে পারে। যে বলটির গতি বেশি থাকবে এবং যে নিজের সাইজের তুলনায় অনেক বড় টার্গেট পাবে, সে-ই তো আগে লক্ষ্যমত পৌঁছুবে, তাইনা?
লক্ষ্য করুন, মিলনের জন্য যদি আপনি দুই শ্রেণী থেকে মাত্র ২টি গ্যামেটকে নির্বাচন করেন, তাহলে কার কার বাছাই হবার সম্ভাবনা সর্বাধিক? উত্তরটা সহজঃ ক) সবচেয়ে ছোট, সবচেয়ে গতিশীল গ্যামেট যে অন্যদের থেকে দ্রুত টার্গেটে পৌঁছায়খ) সবচেয়ে বড়, দীর্ঘস্থায়ী গ্যামেট (যাকে আপনি কল্পনা করতে পারেন সেই গোল-পোস্টটির সাথে) যাতে করে সে অতি দ্রুত অন্যদেরকে মিলনে আমন্ত্রণ করতে পারে।অর্থাৎ এই পর্যায়ে আমরা পেয়ে গেলাম ২টি ভিন্ন বিবর্তনীয় স্ট্র্যাটেজী, যা দুটি ভিন্ন উপায়ে গ্যামেটকে reproductive success এনে দিতে পারে।
৩। উপরে বর্নিত দুই ধরণের সুবিধাবাদী গ্যামেটদের বিবর্তন চলতে থাকেঃ ছোট গ্যামেট আরো ছোট হতে থাকে,অতিরিক্ত গতি ও সংখ্যাধিক্য পাবার জন্য (সংখ্যাধিক্যের বিষয়টি পূর্বে আলোচিত) এবং বড় গ্যামেট আরো বড় হতে থাকে যাতে তাড়াতাড়ি পৌছে যাওয়া ছোট গ্যামেটকে আরো বড় টার্গেট-সাইট দিতে পারে। তারা বড় হতে হতে একপর্যায়ে অচল হয়ে পড়ে তাদের সাইজের কারণে। অবশ্য এতে তাদের ক্ষতি হয়না, কারণ ছোটগুলি এমনিতেই তাদের পিছে মিলনের জন্য ছুঁটছে। এখানে আরো একটা মিউচুয়ালিজম চলে আসে এভাবে যে, বড় গ্যামেটগুলি খাদ্য-ভাণ্ডারের দিক দিয়ে ছোটগুলির অভাব পূরণ যথেষ্ট। এতে করে পরবর্তীতে সৃষ্ট ভ্রূণের কোন খাদ্যাভাব হয়না।
এবার আসা যাক আসল উত্তরে। উপরের আলোচনাটুকুতে এতোটুকু পরিস্কার যে, দুই সীমায় থাকা দুটি ভিন্ন স্ট্র্যাটেজীধারী গ্যামেটগুলোই Reproductive Success পাচ্ছে। এবার চিন্তা করুন, ৩য় সম্ভাবনার কথা। এমন এক শ্রেণীর গ্যামেট, যাদের আকার মাঝারি- খুব বড়ও না, খুব ছোটও না। তাদের গতিও মাঝারি ধরণের। এরা কী টিকে থাকতে পারবে?…না। কারণ, মাঝারি গতি হবার কারণে এরা বড় আকারের গ্যামেটের সাথে মিলনের আগেই অন্যরা পৌঁছে যাবে, এবং মাঝারি সাইজ হবার কারণে এরা বড় গ্যামেটগুলোর মত বর্ধনশীল ভ্রূণের পর্যাপ্ত চর্চা করতে পারবেনা। তাই, এদের বৈশিষ্ট্যগুলো বিবর্তনের ধারায় টিকবে না। এজন্যই ২ প্রজাতির গ্যামেটের উৎপত্তি হয়, অর্থাৎ ২টি সেক্সের বিবর্তন ঘটে।
অবশ্য একটা বিষয় এখনো আলোচনা হয়নি। এতোক্ষণ যাবৎ আমরা এদের গঠনগত পরিবর্তনের কথাই বলেছি। একথা ভুলে যাবার নয়, selective beneficial mutation এর ফলাফল হিসেবেই এই গাঠনিক পার্থক্যের আগমন। তাই যতদিনে এদের বিবর্তন সম্পূর্ণ হয়েছে, তদ্দিনে এদের জিনগত অনেক পরিবর্তনও হয়েছে, যার অনেকটা তাদের সেক্স-ক্রোমোসমগুলোতে বিদ্যমান। কারো কারো মতে অপেক্ষাকৃত ছোট Y (পুরুষদের মাঝে থাকবেই) ক্রোমোসমের আগমনই ঘটেছে যাতে করে ছোট আকারের শুক্রাণু এদের সহজে বহন করতে পারে। আবার Y ক্রোমোসমে জিনের সংখ্যা অনেক কম হবার কারণ হিসেবে দেখানো হয় যে এটি সর্বদা শুক্রাণু দ্বারা বাহিত হয়। আবার Y ক্রোমোসমের মিঊটেসশনের হার X এর দ্বিগুণ। তাই, Y এ জিন সংখ্যা কম থাকে যাতে করে ক্ষতিকর মিউটেশনের প্রভাব কমে যায়। এভাবে Evolutionary Arms Race এর মাধ্যমে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর উৎপত্তি, এবং এর মধ্যবর্তী কোন অবস্থা কোনভাবেই favorable নয়।
২টি মাত্র সেক্সের আরো একটি কারণ পাওয়া যায় মাইটোকন্ড্রিয়ার (কোষের শক্তিঘর) গঠন ও এর বংশগতি দেখলে। আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা যে, মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব DNA রয়েছে এবং মাইটোকন্ড্রিয়া পুরোপুরি আমরা আমাদের মায়েদের কাছ থেকে পাই।আমাদের শরীরের ১০০% মাইটকন্ড্রিয়া এবং তাদের মধ্যকার DNA এর উৎপত্তি আমাদের মা দের শরীরে। শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনের সময় শুক্রাণু শুধু ক্রোমোসোম ছাড়া আর কিছুই দেয় না। তাই মায়ের শরীর অর্থাৎ ডিম্বাণু থেকেই আমরা সব পাবো- এটাই স্বাভাবিক। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এদের এই ইনহেরিটেন্স দেখে আমরা খুব সহজে খুঁজে পেতে পারি আমাদের মা কে?কে আমাদের নানী?এভাবে হয়তো মানব-সভ্যতার আদি-মাতাকেও খুঁজতে পারি।যাহোক, খুব বড় একটা অসুবিধা হচ্ছে, এর DNA তে মিউটেশনের হার অনেক বেশি এবং এখানে DNA কপি-কালীন ভুল হলে তা সংশোধনের উপায় নেই। তাই, যত বেশি মিউটেশনের পরিমাণ, আপনার কোষের এই অপরিহার্য অঙ্গাণুটির ক্ষতিও তত বেশি। Host cell এর নিয়ন্ত্রিত মৃত্যু ঘটানোর প্রক্রিয়ায় মাইটকন্ড্রিয়ার ভূমিকে অসীম। তাই, এখানে যত বেশি মিউটেশন ও ঝামেলা, আপনার কোষেরও তত বেশি ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে।এবার চিন্তা করুন, সেক্সের জন্য অন্তত ২টি ভিন্ন সোর্স দরকার (শুক্রাণু ও ডিম্বাণু)। আমাদের কোষ (এবং একই সাথে প্রকৃতি) চেষ্টা করে এই মাইটোকন্ড্রিয়ার মিউটেশনের পরিমাণ যথাসম্ভব কম রাখতে। তাই শুক্রাণু থেকে আসা মাইটকন্ড্রিয়াকে selectively excluded করে দেয়া হয় মিলনের সময়-ই। কল্পনা করুন, যদি ২ এর ও অধিক সেক্স থাকতো, তাহলে ক্রোমোসমের এবং মাইটকন্ড্রিয়ার উৎসও হত তৎসংখ্যক। অর্থাৎ প্রকৃতিকে তখন এই ৩ বা ততোধিক সেক্স-কোষের থেকে আগত মাইটোকন্ড্রিয়াকে Exclude করতে হত!!তাই মিতব্যয়ী প্রকৃতিতে বিবর্তন এমনভাবে হয়েছে, যেন দুটি মাত্র সেক্স থাকে, অর্থাৎ selective exclusion সবচে কম শক্তি ব্যয়ে ঘটে।
উপরের নাতিদীর্ঘ (!!!) আলোচনার সারসংক্ষেপ একটাইঃ দুটি সেক্সের আগমন (এবং কোনভাবেই এর বেশি নয়) কোন অত্যাশ্চর্য ঘটনা নয়। এটা বিবর্তন প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
জালিশ মাহমুদ রিয়াদ
১৭/১০/২০১১, ভোর ৫.১৫ মিনিট
ঢাকা।
তথ্যসূত্রঃ 1. Dr. Richard Dawkins – The Selfish Gene
Professor,Department of Zoology,
University of Oxford
2. Dr. C. William Birky, Jr.
(From his immense work on mitochondrial inheritance)
Professor, Department of Ecology and Evolutionary Biology,
The University Of Arizona
ফেসবুকের সুবাদে আগেই পড়েছি জালিশের এই লিখা।
ওইখানে ওই পোস্ট মোল্লাদের মাঝে যে কি ভয়ানক হাঙ্গামার সূত্রপাত করেছিল- ভাবলেও হাসি পায়। এক হুজুর তো কান্নাকাটি করে রীতিমতো প্রলাপ বকা শুরু করেছিল, মনে আছে জালিশ? ওদিকে অনি হারুন ইয়াহিয়ার সাইট ঢুঁড়ে খুজেপেতে এনেছিল বৈপ্লবিক এক আবিষ্কার – বিবর্তনের কথা নাকি কোরানের মধ্যেই আছে ! দুনিয়াকা চিজ!
একটা প্রশ্ন। তুমি যেভাবে দুটি ভিন্ন সেক্সের উদ্ভব ব্যাখ্যা করলে, তাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক, দুটি ভিন্ন আকৃতি ও প্রকৃতির জননকোষ একই জীবদেহের ভেতর থাকাটাই কি সবচেয়ে সুবিধাজনক হতো না? কেননা প্রজননের জন্য সঙ্গিনী খোঁজা যতখানি এক্সপেনসিভ, অনেক ক্ষেত্রেই ফেইলিউরের এবং প্রজাতি বিলুপ্তির সম্ভাবনা থাকে; (এই মূহুর্তে খান জাহান আলির দীঘির কুমির কালাপাহাড়ের কথা মনে পড়ছে) সেলফ ফার্টিলাইজেশন সেদিক থেকে তো শতগুণে নিরাপদ। অর্থাৎ যৌন প্রজননের সম্ভাব্য সবগুলো সুবিধা (জিন ভ্যারিয়েশন, ব্যাড মিউটেশন রোধ) বজায় রেখেই যদি স্বপ্রজনন ঘটতো, প্রজাতি বিস্তারে এর চেয়ে ভালো বুদ্ধি কি আর হতে পারতো?
মজার ব্যাপার হলো, প্রকৃতিতে অনেক প্রাণীই কিন্তু হার্মাফ্রোডাইট, মানে পুরুষ ও স্ত্রী- দুই লিঙ্গই বহন করে; যেমন – জোঁক। অথচ এরা স্বপ্রজননক্ষম নয়, যৌন মিলনের সময় এদের যেকোন একটা পুরুষ এবং আরেকটা স্ত্রী হিসেবে আচরণ করে। কিন্তু কেন? এটা তো শুধু হাত ঘুরিয়ে ভাত খাওয়ার চেষ্টা নয়, রীতিমতো কাটাচামচ দিয়ে স্যুপ খাওয়ার চেষ্টা !
@সাত্যকি, আপনাকে কী আমি চিনি, বলুন তো? খুব-ই দুঃখিত এতোদিন পর জবাব দেবার জন্য। বহুদিন পর আসলাম এখানে।
আপনার প্রশ্নের উত্তরে যাই। আপনি-ই বলুন, আপনার নিজের জিন কনটেন্ট নিজের সাথেই কীভাবে রিকম্বিনেশন করে বিরাট মাপের ভ্যারিয়েশন আনবে? রিকম্বিসেশন যে টুকটাক হয়না তা বলছিনা। তবে যদি কখনো মিয়োসিস পড়ে থাকেন, তাহলে একবার ক্রসিং-ওভার এর ছবিটা মনে করুন। নিজের জিন কন্টেন্টের মাঝেই যদি রিকম্বিনেশন হয়, (ধরুণ, আপনার-ই দু কপি ১৪ নং ক্রোমোসমের মধ্যে হলো), তাহলে ফলাফল তো সেই এক-ই রইলো, তাইনা?
জোঁকের কথা বলছেন, ওরা উভলিঙ্গ হলেও নিজের সাথেই নিষেক করেনা, কারণ তাহলে নতুন কোন ভ্যারিয়েশন আসেনা। আপনার প্রশ্ন,তাহলে এটা থাকার মানে কী? উত্তরটা এভাবে দেয়া যায়…ধরুণ, একটা দ্বীপে নতুন করে জোঁক বসতি গাড়লো। উভলিঙ্গ হবার কারণে একটি পুরুষ আর আরেকটি নারীর ভূমিকা পালন করে বংশবৃদ্ধি করতে পারে এবং ভ্যারিয়েশনও আনতে পারে। উভলিঙ্গ না হয়ে যদি দুটি-ই পুরুষ হত, তাহলে সম্ভব হতো এটা?
অনেক লিজার্ড, সাপ, এমনকি হাঙ্গর, কমোডো ড্রাগন আছে যাদের স্ত্রী-লিঙ্গেরা নিজের হুবহু কপির জন্ম দিতে পারে, মানে তাদের জননের জন্য কোন পুরুষ সঙ্গী লাগেনা। সন্তানেরা এক্ষেত্রে মায়ের সাথে ১০০% মিলধারী হয়। এরা এই কাজটি করে (পার্থেনোজেনেসিস) একপ্রকার বাধ্য হয়ে, এবং বিভিন্ন নতুন রোগের প্রতি খুব-ই অসহায় হয়, কারণ ভ্যারিয়েশনের অভাব।)
জালিশ মাহমুদ রিয়াদ,
আপনার একাউন্টে লগ ইন তথ্য পাঠানো হয়েছে। লগ ইন করে মন্তব্য করতে পারেন, এবং লেখাও সাবমিট করতে পারেন।
@মুক্তমনা এডমিন, অনেক ধন্যবাদ।
লিঙ্ক পোস্ট হচ্ছে না, উইকি করুন Mullers_ratchet
http://en.wikipedia.org/wiki/Muller's_ratchet
প্রশ্ন যদি এইটাই হয় যে লিঙ্গের সংখ্যা দুই এর অধিক নয় কেনো, তাহলে উত্তর সম্ভবত হবে- কেননা দুইয়ের বেশী লিঙ্গের কোন প্রয়োজন নেই এবং যেটার প্রয়োজন নেই সেটার উদ্ভবই হয়না কখনও। এসেক্সুয়ালি রিপ্রোডিউসিং জিনোম ইররিভার্সিব্লি ডিলিট্রিয়াস মিউটেশন জমায়।এখানে একটি জীব মিউটেন্ট হলেই তার প্রজন্মের সবগুলো হবে মিউটেন্ট কেননা তাদের বাবা/মা এর রয়েছে একটি জিনের একটি মাত্র কপিই এবং ঠিক এই কপিটিই তাদের সন্তান ঔরসজাত হতে যাচ্ছে। অপরপক্ষে সেক্সুয়ালি রিপ্রোডিউসিং জিনোমে ডিলিট্রিয়াস মিউটেশন কখনও ইররিভার্সিব্লি জমে না কেননা এদের রয়েছে একটি জিনের বাবা এবং মায়ের কাছ থেকে যথাক্রমে প্রাপ্ত দুটি কপি যেই দুটি কপি কিনা আবার দাদা-দাদী ও নানা-নানী হতে প্রাপ্ত চারটি কপির একটি সাবসেট। ফলে প্রজন্মান্তরে ডিলিট্রিয়াস মিউটেশন হয় স্যাম্পল আউট হয়ে যায় নয়তো হেটেরোযাইগোট লোসাইতে অবস্থান করে। সেক্সের উদ্ভবই হয়েছে জিনোমে ডিলিট্রিয়াস মিউটেশন জমতে না দেওয়ার লক্ষ্যে। সেক্স দুটি না হয়ে তিনটি হলেও এই সুবিধা পাওয়া যাবে দুটি হলেও পাওয়া যাবে, তাহলে তিনটি সেক্স উদ্ভব কেনো হবে? এটাতো বেশী জটিল একটি প্রক্রিয়া তাই না?
http://en.wikipedia.org/wiki/Muller's_ratchet
@আল্লাচালাইনা, ভালো বলেছেন। তবে কিছু যৌক্তিক কার্যকারণ তো দেখাতে হয়-ই।
“প্রকৃতিতে কেন দুটি লিঙ্গই (পুং-স্ত্রী) দেখা যায়?কেন ৩টি বা এরচেয়েও বেশি নয়? এটা কী বিধাতার সৃষ্টি করা প্রতিসাম্যের-ই সাক্ষ্য নয়?”
প্রতিসাম্যের ইঙ্গিত, হ্যাঁ, কিন্তু তার মধ্যে “বিধাতার সৃষ্টি করা” ঢুকিয়ে দিয়েই তো ব্যাটারা ক্যাচাল করে!
আপনার লেখাটা ভালো হয়েছে। একটু গুছিয়ে, সাবহেডিং-এ ভাগ করে লিখলে আরো সুখপাঠ্য হত।
খানিকটা সরলীকরণ হয়ত এড়ানো যেত।
আর উভলিঙ্গ, অযৌনজননকারী জীব, এদের কথাগুলো উল্লেখ করে দিলে ভালো হত, যে দুটি লিঙ্গই কেবলমাত্র ধ্রুব নয়।
@কৌস্তুভ, ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আমি আসলে কখনোই লেখিনা। এতোটুকু যে পেরেছি, সেজন্যই নিজের কাছে হাজার শুকরিয়া :p ।
যাহোক, চেষ্টা অব্যাহত থাকবে আশা করি।
অসম্ভব প্রাঞ্জল লেখা! আর বিষয়টিও বেশ আকর্ষনীয়। যে প্রশ্নের সূত্র ধরে এই লেখা, তা অনেকের মনেই ছিল। তাই সবার জন্যই বেশ উপকারী এই লেখাটা।
কথাটা ঈশ্বরের মত শোনাল। 🙂
বিজ্ঞানের জটিল আলোচনায় যদি হিউমার যোগ হয়, পাঠক তখন মাথাকে কিছুটা অবসর দিতে পারে চিন্তাগুলো ঝালিয়ে নেয়ার জন্য।
অসাধারণ উপমা। জটিল বিজ্ঞানকে সহজ করে বোঝানোর জন্য ‘মুক্তমনা’র জুড়ি নেই। আপনি মুক্তমনার অনেক বড় সম্পদ হবেন বলেই মনে হচ্ছে। আপনাকে (F)
নিয়মিত লেখা চাই। (Y)
@কাজি মামুন, গদগদ হইয়ে গেলাম রে ভাই। অনেক ধন্যবাদ।
তাহলে হিজড়া কি? আবার এমন প্রাণীও আছে যারা এক লিঙ্গ বিশিষ্ট্য, এক কোষী এ্যমিবাই বা কি?
@নোথেইষ্ট, হিজড়াদের কথা আগের একটি মন্তব্যে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আর এককোষী (বিশেষত; প্রোটিস্টদের) অনেক প্রাণীদের সেক্স এর ব্যাপারেও আমার মূল লেখায় অল্প আলোচনা আছে। তাদের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই লিঙ্গ-পার্থক্য নেই। তাই তাদের গ্যামেটগুলোর মধ্যেও কোন গুণগত তফাত নেই। কিন্তু তবু তারা সেক্সুয়াল রিপ্রোডাকশন করে (অর্থাৎ দুটি ভিন্ন উৎস থেকে আগত জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালের সংমিশ্রণ ঘটায়)। তাদেরকে আমি এজন্যই আমার আলোচনার একদম শুরুতে রেখেছি, কারণ তাদের মধ্যে কেবল সেক্স এর আরম্ভ হয়েছে, কিন্তু দুটি লিঙ্গের পার্থক্য আসা শুরু করেনি, অর্থাৎ সেক্সের বিবর্তনে তাদের অবস্থান একদম আদীম।
@জালিশ, মুক্তমনায় স্বাগতম। আপনার লেখার স্টাইলটা খুব ভালো লাগলো, যদিও লেখার বিষয়বস্তুতে অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও একটু সরলীকরণ হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। লেখাটা পড়ে সাধারণ পাঠকের কাছে সেক্সের উদ্ভব এবং বিবর্তনের বিষয়গুলো নিশ্চিত বলে মনে হতে পারে, যদিও এর অনেক কিছু সম্পর্কেই আমাদের ধারণা এখনও হয়তো হাইপোথিসিসের পর্যায়েই রয়ে গেছে। সে যাক, ধন্যবাদ লেখাটার জন্য, এবং আপনার কাছ থেকে ভবিষ্যতে আরও লেখা আশা করছি।
@বন্যা আহমেদ,
অনেক দিন পরে আপনার মন্তব্য দেখলাম। (F)
@আসরাফ, হ্যা অনেকদিন পরেই বটে, খুব অদ্ভুত একটা সময় গেছে গত কয়েকটা মাস, এখন মনে হয় আবার নিয়মিত হতে পারবো। এখানে একটা আপডেট দিয়েছিলাম কয়েক দিন আগে। ভহালো থাকবেন।
@বন্যা আহমেদ, আপনার লেখা পড়েই আমার লেখাটা পাঠানোর ইচ্ছা জাগলো। বিবর্তন নিয়ে আমাদের সমাজ খুব-ই কম জানে, আর যা জানে তার সব-ই জাকির নায়েকের বিবর্তন তত্ত্ব, বৈজ্ঞানিক কিছু না। তাই আমি চেয়েছি স্বাভাবিকের থেকেও বেশি সহজবোধ্য করতে, কারণ মানুষ এই বিষয়টি দেখলেই এড়িয়ে যেতে চায়। তাই লেখায় কোন রকম কমপ্লিকেসি আনতে চাইনি। আর আমার জ্ঞানও যে এই বিষয়ে খুব বেশি, তা বলতেও নারাজ।
আপনার কথা এবং আপনার বইটির কথা প্রথম বলেন ঢাবি’র ই আমার এক বড় ভাই, ফায়েজদা।তারপর -ই মুক্তমনায় এসে লেখাগুলো পড়লাম।বইটি এবার কিনবোই। আপনার লেখাগুলো অসাধারণ। এতো ধৈর্য নিয়ে সুন্দর করে লিখেছেন, সেজন্য সাধুবাদ।
@জালিশ,
বইমেলা থেকে অভিজিৎদা ও বন্যা আপার বই একসাথে কিনি পত্রিকায় আলোচনা দেখে। প্রথমে পড়ি অভিদার বইটি। পড়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকি। পরে বন্যা আপার বইটি হাতে নেই; কিন্তু কেবলই মনে হচ্ছিল, বইটা পড়ে কোন মজা পাব না; কারন তখনও অভিদার বইতেই পুরো আচ্ছন্ন ছিলাম। তবু মনটাকে শান্ত রেখে বন্যা আপার বই হাতে নেই; অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ্য্ করি, অভিদার বইয়ের কথা ভুলেই গেছি; এতই সুখপাঠ্য ছিল ‘বিবর্তনের পথ ধরে’।
@কাজি মামুন, ইয়ে মানে, আপনি একটু চেক করে দেখেন তো মুক্তমনায় লগিন করতে পারেন নাকি :-s। অভিজিতের লেখার সাথে আমার বাংলা বা লেখার স্টাইলের তুলনা করলে হয় সে লজ্জায় আত্মহত্যা করবে নয়তো রাগে দুঃখে আপনাকে মুক্তমনা থেকে ব্লক করে দিবে। অভিজিৎ আর আমার বন্ধু স্নিগ্ধা দুই স্বঘোষিত ভাষাবিদ আমার লেখা এবং বাংলা নিয়ে যে পরিমাণ হাসাহাসি করে (এমনকি আমার বেংলিশ মেয়েকেও শেখানো হয়েছে যে আমার বাংলার অবস্থা নাকি খুবই করুণ) সেটা নিয়ে বেশী কিছু আর নাইবা বললাম এখানে…
@বন্যা আহমেদ,
আপু, মুক্তমনায় লগিন করতে কোন সমস্যাই হয়নি। সুতরাং, অভিজিৎদাও, আমার ধারনা, আমাদের মতই আপনার লেখার ভক্ত। 🙂
কিছু কিছু বই থাকে, যেগুলোর মুগ্ধতার আবেশ অনেক দিন থাকে। মনে আছে, আপনার বই থেকে জীবাশ্মের বয়স নিরূপন করার পদ্ধতি শিখতে পেরে কি যে অসম্ভব ভাল লেগেছিল! মিউটেশন বিষয়টিও অসম্ভব প্রাঞ্জল ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। আর প্রথম চাপ্টারেই এইডস প্রভৃতি রোগের সাথে বিবর্তনের যোগসূত্র দেখিয়ে দিয়েছিলেন। এ পর্যন্ত আমি যে কটা বই নাওয়া-খাওয়া ভুলে পড়েছি, তার ভিতর আপনার ও অভিদার বই দুটিও রয়েছে। একজন বানিজ্য বিভাগের ছাত্রের কাছে বিজ্ঞানপুরীর অসম্ভব আলোকিত দুটো দরজা খুলে গিয়েছিল তখন! সেই মায়াবী হাতছানি এখনো ভোলা সম্ভব হয়নি।
অভিদা বা আপনার লেখার প্রতি এই অসম্ভব ভাললাগা অবশ্যই মুক্তমনায় প্রবেশের অনেক আগেই জন্ম নেয়া এবং মুক্তমনার সাথে এ চলকের কোন সম্পর্ক নেই। বরং মুক্তমনার সাথে সম্পর্ক রয়েছে জীবনের মানে খুঁজে পাওয়ার; এই প্রথম মনে হচ্ছে, জীবনটা সত্যি অনেক বিশাল। মুক্ত আকাশ ও বাতাসের বিশালত্বে হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে যে কি আনন্দ, তা এখানে এসেই উপলব্ধি করেছি!
ভাল থাকবেন আপু! আর মানুষের বিবর্তনের বইটিও বছরখানেকের মধ্যে হাতে পাওয়ার আশা করছি!
@জালিশ,
হাহাহহা ভালোই বললেন, ‘জাকির নায়েকের বিবর্তন তত্ত্ব’ …
ভুক্তভোগী মাত্রেই আপনার এই ডিলেমাটা মনেপ্রাণে অনুধাব্ন করতে পারবেঃ)। বিবর্তন নিয়ে লিখতে বসলেই সারাক্ষণ আমার এ নিয়ে যুদ্ধ করতে হয়। তবে আমার মতে যে তত্ত্বগুলো এখনো সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত নয় সেগুলো সম্পর্কে একটু বলে দিলে ভাল হয়, না হলে তা একদিকে যেমন অনেক কুতর্কের জন্ম দিতে পারে আবার অন্যদিকে যারা অনেক বেশী গভীরে গিয়ে নিত্য নতুন গবেষণাগুলোর খবর রাখেন না তারা ভুল বুঝতে পারেন। ধন্যবাদ আমার লেখাগুলো পড়ার জন্য, বেশীরভাগই আসলে অনেক পুরানো লেখা। দেখি মানব বিবর্তন নিয়ে অচিরেই আরও কিছু লেখালিখি করার ইচ্ছে আছে।
@বন্যা আহমেদ, আপনার নতুন বইয়ের আশায় রইলাম। মানব-বিবর্তন বিষয়টি আমাকে ভয়াবহ টানে। আর বইমেলায় আপনার “বিবর্তনের পথ ধরে” বইটি কোন প্রকাশনীর স্টলে পাবো?
আমার দুটি প্রশ্ন ছিল যদি মুক্তমনার কোন সুহ্রিদ উত্তরগুলি জানাতেন ,
১/বিবর্তনবাদ পৃথিবীতে কিভাবে নারি পুরুষের ভারসাম্য রক্ষা করছে কেনই বা কোন একটি সম্প্রদায়ের পরিমান কম বা বেশী হয়ে যাচ্ছে না ।
২/অন্য প্রানির মধ্যে সাধারনত যা দেখা যায় না কেন মানুষের মধ্যে লজ্জার উপস্থিতি ?
@আস্তরিন,
১. মানুষের উদাহরণটাই দেখেন। মহিলাদের কোষে আছে দুজোড়া সেক্স ক্রোমোজোম, দুটোই XX। তাই তারা গ্যামেটে কেবলমাত্র X-ই দিতে পারে। আর পুরুষদের দুটো সেক্স ক্রোমোজোম আলাদা, XY। তাই তারা গ্যামেটে হয় X নয়তো Y দেয়। কোষবিভাজনে এই দুটো গ্যামেট আসার প্রোবাবিলিটি প্রায় সমান, দুটোই ১/২। এবার মায়ের দিক থেকে আসা গ্যামেটের X এর সাথে মিলিয়ে, সন্তান হয় XX হবে নয়তো XY হবে, অর্থাৎ মহিলা কিংবা পুরুষ। অতএব সে দুটোরও প্রোবাবিলিটি প্রায় সমান। (সামান্য একটু হেরফের হয় অবশ্য।)
অতএব কিভাবে ভারসাম্য রক্ষিত হচ্ছে, কিভাবে ছেলে-মেয়ে মোটামুটি সমান অনুপাতে জন্মাচ্ছে, তা দেখা গেল আশা করি।
২. মানুষের মধ্যে লজ্জার উৎপত্তি অনেক আধুনিক ব্যাপার। হোমো স্যাপিয়েন্সের মধ্যে দীর্ঘদিন পোষাক ব্যবহারেরই চল ছিল না। শীত ইত্যাদি নিবারণে সেটা ব্যবহার করতে শেখার মত কারিগরি ও সাংস্কৃতিক দক্ষতা পাওয়ার মত বুদ্ধিমত্তা আমাদের বিবর্তনের ক্রোনোলজির পরিপ্রেক্ষিতে খুবই সম্প্রতি এসেছে। তারপর সামাজিক পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে পোষাক না পরার লজ্জা ব্যাপারটা এসেছে। যেমন প্রকাশে যৌনমিলনে লজ্জা। (ওই লজ্জাটা কিন্তু অন্য কিছু প্রাণীরও আছে।)
তুলনায় দেখেন, ভারতে ও দুনিয়ার বহু স্থানে অনেক আদিবাসী রয়েছে যাদের মহিলারা বক্ষবন্ধনী ব্যবহার করে না। আর উষ্ণপ্রধান স্থানে থাকে বলে তাদের বেশি পোষাক-আশাকের দরকারও পড়ে না। অতএব বুঝতেই পারছেন, ওই লজ্জাটা সামাজিক ব্যাপার।
আর যদি সাধারণভাবে লজ্জার কথা বলেন, মানে ধরেন ভুল করে একটা গ্লাস ভেঙে ফেলে লজ্জা, সে ধরনের লজ্জা ape দেরও আছে।
http://www.bbc.co.uk/programmes/b00j0hnm এই ডকুমেন্টারিটা দেখতে পারেন।
অনেক হার্মাফ্রোডাইট বংশবিস্তার করতে পারে। ওদেরকে তৃতীয় লিঙ্গ বলতে যৌক্তিক বাধা কোথায়? হোমো সেপিয়েন্সে নাই,প্রকৃতিতে কিন্তু আছে। এগুলোকে তৃতীয় লিঙ্গ বলা যায় কি?
@সাইফুল ইসলাম, হার্মাফ্রোডাইট দের বৈশিষ্ট্যের কথা ভাবুন একবার। তাদের মাঝে পুরুষ এবং নারীদের বৈশিষ্ট্যের কিছু মিশ্রণ ঘটে, নতুন কোন অভিনব জনন বৈশিষ্ট্য থাকেনা। প্রকৃতিতে হার্মাফ্রোডাইটদের বংশবিস্তারের ঘটনা খুব কম হলেও আছে। তার ব্যাখ্যা হল, ঐ ২-১ টা বিরল ক্ষেত্রে তাদের পুরুষ ও নারী সেক্স সিস্টেম (অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং শরীরের দরকারী হরমোন লেভেল) সব-ই ঠিক থাকে।
কিন্তু, একটা কথা ভাবুন, অনেক ক্ষেত্রেই হার্মাফ্রোডাইটদের সেক্স ক্রোমোসমে সংখ্যার গড়মিল থাকে (যেমন ২টার বদলে ৩টা)।বংশবিস্তারের জন্য সাধারণভাবে ২ টা ক্রোমোসমকে মিয়োসিসের মাধ্যমে ভাগ হয়ে আলাদা হতে হয়, এবং এরপর সেক্সের মাধ্যমে মা ও বাবার ১ টি করে ক্রোমোসম আবার মিলিত হয়ে স্বাভাবিক সংখ্যা ২ এ ফিরে আসে। কিন্তু ক্রোমোসম সংখ্যায় গড়মিল, এমন হার্মাফ্রোডাইট এর জনন কোষের মিয়োসিসে আপনি হিসাবটা ঠিক কীভাবে মিলাবেন, বলুন তো? অর্থাৎ তাদের সন্তানের (যদি হয়ও) ক্রোমোসম সংখ্যাও এদিক-ওদিক হবে। এজন্যই এই ক্ষতিকর exception দেরকে (রেসিস্ট ভাববেন না, বায়লজিকাল দিক দিয়ে বলছি) প্রকৃতি সাধারণত বংশবিস্তারের ক্ষমতা দেয়না। আর যেহেতু তারা নতুন কোন সেক্সুয়ালিটি নিয়ে আসেনি, বরং পুরনো ২টি সেক্সের-ই একটা সংকর হিসেবে এসেছে, তাই তাদের ৩য় লিঙ্গ বলতে সকল বিজ্ঞানীদের আপত্তি। তাদের বংশবিস্তার হলেও সেটা হয় স্বাভাবিক পুং-স্ত্রী অঙ্গের যৌন মিলনের ফলেই।
লেখাটি নিয়ে দুটো প্রশ্ন মাথায় এলো।
আপনি বলেছেন –
আমার একটু দ্বিমত আছে। গ্যামেটের সাইজ এর সাথে শরীরের আকারের সম্ভবতঃ কোন সম্পর্ক নেই, কাজেই গ্যামেট বড় হলে সন্তান-সন্ততিরাও ‘একটুখানি বড়’ হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। পুরুষদের গ্যামেটের আকার নারীদের গ্যামেটের চেয়ে ছোট, কিন্তু গড়পরতা পুরুষের দেহের আকার মেয়েদের চেয়ে বড় কিন্তু!
আপনি দুই প্রান্তসীমায় থাকা (অর্থাৎ ছোট এবং বড়) গ্যামেটরা বিবর্তনীয় দিক থেকে বাড়তি উপযোগিতা পাচ্ছে বলে বলেছেন, কিন্তু এরকম গ্যামেট তৈরি হোল কেন, যেখানে স্পার্ম (অর্থাৎ ছোট গ্যামেট) ডিম্বানু (বড় গ্যামেট)কে নিষেক করবে। প্রকৃতিতে তো নিষেক ছাড়াই বহু প্রজাতি টিকে আছে। যেমন, পার্থেনোজেনেসিসে সঙ্গি খোঁজার জন্য শক্তি ব্যয় করতে হওয় না। রিচার্ড ডকিন্সের ‘ বিবর্তনীয় স্বার্থপর জিন’ (selfish gene) তত্ত্ব সঠিক হয়ে থাকলে বলতেই হবে যৌনতার উদ্ভব নিঃসন্দেহে প্রকৃতির একটি মন্দ অভিলাষ । কারণ দেখা গেছে অযৌন জনন (asexual) প্রক্রিয়ায় জিন সঞ্চালনের মাধ্যমে যদি বংশ বিস্তার করা হয় (প্রকৃতিতে এখনো অনেক এককোষী জীব, কিছু পতংগ, কিছু সরিসৃপ এবং কিছু উদ্ভিদ- যেমন ব্ল্যাক বেরি অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করে থাকে) তবে বাহকের পুরো জিনটুকু অবিকৃত অবস্থায় ভবিষ্যত প্রজন্মে সঞ্চালিত করা যায়। কিন্তু সে বাহক যদি যৌন জননের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে থাকে, তবে তার জিনের অর্ধেকটুকুমাত্র ভবিষ্যত প্রজন্মে সঞ্চালিত হয়। কাজেই দেখা যাচ্ছে যৌনক্রিয়ার মাধ্যমে বংশবিস্তার করলে এটি বাহকের জিনকে ভবিষ্যত প্রজন্মে স্থানান্তরিত করবার সম্ভাবনাকে সরাসরি অর্ধেকে নামিয়ে আনে। কাজেই এ ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে হবে বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোন থেকে। আমি এ নিয়ে আমার সমকামিতা (শুদ্ধ্বস্বর, ২০১০) বইয়ে কিছুটা লিখেছিলাম।
@অভিজিৎ,
এই প্রশ্নটা আমারও আছে।
চমৎকার লেগেছে। মোটেও জটিল মনে হয়নি। (Y) (Y) (Y)
@আসরাফ, আমার ভাষাগত দূর্বলতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। এখানে আমি অবশ্যই বুঝাতে চেয়েছি যে বড় গ্যামেট যদি কোন সুবিধা দিয়ে থাকে তাহলে তাদের সন্তান-সন্তদীদের গ্যামেটগুলোও বড়ই হবে। সোজা কথায়, কোন selective advantage দিয়ে থাকলে তা পরবর্তী প্রজন্মে বাহিত হবে।শরীরের আকারের সাথে গ্যামেটের সাইজের কোন মিল থাকা অসম্ভব (কিছু কনিফার আছে যাদের গ্যামেট ০.৪ মিমি এবং খালি চোখে দেখা যায়!!!ক্ষুদ্র ফ্রুট-ফ্লাইয়ের স্পার্মকে টেনে লম্বা করলে নাকি ২ ইঞ্চির বেশি লম্বা হবে, দাবী বিজ্ঞানীদের http://www.livescience.com/812-longest-sperm-create-paradox-nature.html )।
@অভিজিৎ, আমার ভাষাগত দূর্বলতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। এখানে আমি অবশ্যই বুঝাতে চেয়েছি যে বড় গ্যামেট যদি কোন সুবিধা দিয়ে থাকে তাহলে তাদের সন্তান-সন্তদীদের গ্যামেটগুলোও বড়ই হবে। সোজা কথায়, কোন selective advantage দিয়ে থাকলে তা পরবর্তী প্রজন্মে বাহিত হবে।শরীরের আকারের সাথে গ্যামেটের সাইজের কোন মিল থাকা অসম্ভব (কিছু কনিফার আছে যাদের গ্যামেট ০.৪ মিমি এবং খালি চোখে দেখা যায়!!!ক্ষুদ্র ফ্রুট-ফ্লাইয়ের স্পার্মকে টেনে লম্বা করলে নাকি ২ ইঞ্চির বেশি লম্বা হবে, দাবী বিজ্ঞানীদের http://www.livescience.com/812-longest-sperm-create-paradox-nature.html )।
আর Selfish Gene তত্ত্বের সাথে সেক্সুয়ালিটির অসঙ্গতির ব্যাপারটার ব্যাখ্যা কিন্তু বেঙ্গলেনসিস এর লেখার প্রথম অংশ থেকে চলে এসেছে বলে মনে করি (যেখানে উনি পাঁচটি পয়েন্ট দাঁড় করিয়ে দেখিয়েছেন সেক্সুয়াল রিপ্রোডাকশনের সুবিধাদি — ১. উন্নত বৈশিষ্ট্যের বিস্তার ২. নতুন প্রকরণ (variation) সৃষ্টি ৩. প্রতিযোগীতা ৪. ক্ষতিকর মিউটেশন রহিতকরন এবং ৫. ক্ষতিকর জীন রহিতকরন)। প্রাথমিকভাবে যদিও ৫০% জিন লস চোখে খটকা লাগাতে পারে, কিন্তু একথা ভোলা যাবেনা যে, সেক্সের পর ডিপ্লয়েড অবস্থায় মাতা-পিতা দু’জনের জিনের-ই একটি করে কপি কিন্তু ঠিক-ই উপস্থিত। ভিন্ন উৎস থেকে এক-ই জিনের দুটি কপি আনার ফলে অবশ্যই survival এর ক্ষেত্রে selective advantage পাওয়া যাবে। আপনি parthenogenesis এর কথা বলেছেন (প্রাণীদের মাঝে বিরল হলেও এটি ঘটে, উদাহরণঃ হ্যামারহেড হাঙ্গর, কমোডো ড্রাগন ইত্যাদি )। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার সবচে বড় অসুবিধা হচ্ছে, নতুন কোন রোগ-শোকের আবির্ভাবে পার্থেনোজেনেটিকরা একেবারেই দূর্বল, কারণ অনেক ক্ষেত্রেই তাদের generation time এত বড় যে বিবর্তনের মন্থর ধারায় নতুন বৈশিষ্ট্য এর আগমনের আগেই তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, এবং একজন যখন এইসব রোগে আক্রান্ত হয়, তখন তার আশে-পাশের সবাই-ই হয়, কারণ তাদের জেনেটিক মেকাপ হুবহু এক এবং তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেদ করার দক্ষতা ওই রোগের জীবাণুর আছে। এজন্যই কপি সংখ্যা একটি কমিয়ে দিয়ে variation অনেকখানি বাড়িয়ে প্রকৃতিতে টিকে থাকাটাই selfish gene গুলোর জন্য সুবিধাজনক বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এজন্যই বিভিন্ন এককোষী জীব, ছত্রাক, এমনকি উদ্ভিদের মধ্যেও জনুক্রম (ডিপ্লয়েড-হ্যাপ্লয়েড দুটি দশাই চক্রাকারে চলে) দেখা যায়, এবং তারা সেক্স এর দিকে ঝুঁকে তখন-ই যখন পরিবেশ বিরূপ থাকে। সম্পূর্ণ বিলুপ্তির আশঙ্কার চেয়ে বরং কপিসংখ্যা এক কমানো এবং একারণে আরো বাড়তি অভিযোজনীয় সুবিধা ভোগ করা, এবং এর ফলশ্রুতিতে আরো বেশি বংশধর রেখে গিয়ে তাদের মধ্যে নিজের selfish gene কে বাহিত করার নিশ্চয়তা লাভ করা অনেকটাই বিবর্তনীয়ভাবে যুক্তিসঙ্গত এবং Selfish Gene তত্ত্ব-সঙ্গত বলে মনে করি।
আশা করি আপনার প্রশ্নের সাথে সঙ্গতি রেখে উত্তর দিতে পেরেছি।
আপনার ফেসবুক নোটগুলো পড়েছি আগেই। বিবর্তন বিষয়ে বেশ জানাশোনা আপনার। আর আপনার লেখাও বেশ চমৎকার। মুক্তমনায় আপনাদেরই লেখা বেশি বেশি আসা প্রয়োজন। তাই বেশি বেশি লিখুন।
শুভকামনা রইল। (F)
@নিটোল, অনেক ধন্যবাদ। লেখায় ভীষণ আলসেমি। তবে সামনে আরো লেখার ইচ্ছা আছে।
স্বাগতম (F) (F)
@তামান্না ঝুমু, 🙂
এক কথায় চমৎকার লিখেছেন। (Y)
নিয়মিত লিখতে থাকুন। দু’ একটা টাইপো ভুল আছে। শুধরে দিলে পড়তে আরো মজা আসবে।
@রাজেশ তালুকদার, ধন্যবাদ। নিজের চিন্তাভাবনা খুব-ই কম এখানে। যা জানি সবার সাথে তা শেয়ারের ইচ্ছামাত্র।
অত্যন্ত আগ্রহোদ্দীপক লেখা। এধরণের কৌতুহলোদ্দীপক বিষয় নিয়ে মুক্তমনায় আগে কিছু লেখা এসেছে, যেমন দেখতে পারেন, বেঙ্গলেনসিসের এই চমৎকার লেখাটি –
বিবর্তনের ধারায় লিঙ্গের আবির্ভাব
আমাদের বিবর্তন আর্কাইভে এ নিয়ে প্রশ্নোত্তর-ও আছে –
বিবর্তন যৌনতা বা সেক্সের উদ্ভবকে ব্যাখ্যা করতে পারে না -এই দাবীর উত্তর।
দেখেছেন নিশ্চয়। তবে আপনার লেখাটি আমাদেরকে অনেক অতিরিক্ত তথ্যের যোগান দিয়েছে বিশেষ করে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কিভাবে দুটি ভিন্ন স্ট্র্যাটেজীধারী গ্যামেটগুলো Reproductive Success পাচ্ছে বা বিবর্তনীয় উপযোগিতা অর্জন করেছে, সেটি আপনার এই প্রবন্ধের মাধ্যমে অনেক পরিস্কার হল। লেখাটি আমাদের বিবর্তন আর্কাইভকে সমৃদ্ধ করবে নিঃসন্দেহে।
মুক্তমনায় স্বাগতম। সাইটে আপনার নিয়মিত অংশগ্রহণ এবং লেখা আশা করছি।
@অভিজিৎ, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। মূলতঃ ২ দিন আগে মুক্তমনায় বন্যা আপুর লেখা পড়েই আমার নিজের লেখাটা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। অনেকদিন-ই কিছু লিখিনা।তবে সামনে ভালো কিছু লেখার চেষ্টা থাকবে।
@অভিজিৎ,
ছোট বেলাই আমি খুবই ছটফটে ছিলাম। প্রায়ই পকেটের টাকা হারিয়ে ফেলতাম। তখন আমি করতাম কি, টাকাগুলো ভাগ করে নিয়ে প্রত্যেকটা পকেটে কিছু কিছু করে রাখতাম যেন এক পকেটের টাকা হারিয়ে গেলেও অন্যপকেটের গুলো থেকে যায়। যদিও এতে করে টাকাঅলা পকেটের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় টাকা হারানোর সম্ভবনাও বাড়ে। বড় হয়ে বিবর্তন নিয়ে পড়ার সময় আমি জীবের বংশধারা রক্ষার কৌশলের সাথে আমার টাকা রক্ষার কৌশলের মিল খুঁজে পেয়েছি। এবং এটাই হচ্ছে ভ্যারিয়েশন। যৌণ জনন আসলে এই কৌশলেরই ফসল। এতে যদিও বংশধরের পরিমান কমে যায়, তথাপি কিছু বংশধরের টিকে যাওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। আর বিবর্তনের জন্য এই কিছু বংশধরের টিকে যাওয়াটাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ। (আমার টাকা রক্ষার পদ্ধতির সাথে যৌণ জনন পদ্ধতির পার্থক্য হল, আমি যদি কয়েকটি পকেটের টাকা হারিয়ে ফেলি তাহলে সেগুলো আবার ভর্তি হবে না, কিন্তু যৌণ প্রক্রিয়ায় পরিবেশের ফাঁকা স্থানগুলো সহজেই পূরন হয়ে যায়।)