[মৌলভীবাজার জেলার সকল( জেলা উপজেলা)সরকারী হাসপাতালে ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলছে। বিপাকে রোগি নামে আমজনতা।গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত কোন ডাক্তার কাজে যোগ দেয়নি। শতশত রোগিরা আসছে,ফিরে যাচ্ছে। একজন শ্রমিকের স্ত্রীর ডেলিবারির জন্য নিয়ে যেতে হয়েছে সিলেটে।ইত্যাদি ইত্যাদি। আর ডাক্তারদের নানারঙ্গে,নানা মুখি নাটক সে তো চলছেই….]
পত্রিকার এই খবর এখন মুখরোচক।

কিন্তু কেন ডাক্তাররা কাজ করছেনা?
একজন ডাক্তার জেলে আটক আছে।
কেন জেলে আটক আছে?
ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে একামাসের কারাদন্ড দিয়েছেন।
কেন কারা দন্ড দিয়েছেন?
তিনি অফিস সময়ে ক্লিনিকে বসে রোগি দেখছিলেন।
আর প্রশ্ন করা যাবেনা । প্রশ্ন করা যাবেনা কেন তিনি অফিস সময়ে ক্লিনিকে ছিলেন। কেন প্রশ্ন করা যাবেনা?

কারন তিনি প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা। কারন তিনি ডাক্তারি পাস করে এসেছেন(তিনি সম্মানিত ডাক্তার)। কারন তিনি ইতমধ্যে অনেক টাকা কামিয়েছেন,এখন বিত্তবান, সমাজে বিত্তবানদের সবসময় প্রশ্ন করতে হয়না।

আমরা জনতা তাই চুপ করে গেলাম।আমরা আর ডাক্তারকে প্রশ্ন করবোনা। তবে কাকে করবো?
একজন ডাক্তার জেলে বন্দি অন্য ডাক্তারদের তো মায়া হবেই। হতেই পারে মায়া বলে যেহেতু একটা ব্যপার আছে। তাই তারা জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। একজন ডাক্তারকে কোন ভাবেই জেলে থাকতে দেয়া যায়না।যে ভাবেই হোক তাকে ছাড়িয়ে আনতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতাল বন্ধ থাকবে অনিদ্রিষ্ট কালের জন্য।এই অনিদ্রিষ্টকালের মাত্র দুইদিন অতিবাহীত হয়েছে।

সরকারী হাসপাতালে কারা আসে? যাদের বেসরকারী হাসপাতালে সু চিকিৎসা পাওয়ার মতো অর্থনৈতিক অবস্থা নেই গরীব, দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক, ভিক্ষুক । স্বাভাবিক জ্বর,সর্দি,কাশিতে তার হাসপাতালে আসেন না। যতক্ষন তাদের পক্ষে সম্ভব ততক্ষন ডাক্তারের নাম মুখে আনেন না। তারা ভাল করেই জানেন অসুখে মৃত্যু এবং কসাইয়ের কাছে মৃত্যু,কোন ক্রমেই কম যন্ত্রনা নয়। তবু যখন তারা একান্ত নিরুপায় হন,যখন অসীম দৈর্য্য আর রক্ষা করতে পারেন না, তখন ছুটে আসে সরকারী হাসপাতালে । জীবনের শেষ স্পন্দন টুকো বাঁচাতে কোন রকমে হাসপাতালে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। আজরাইলকে দেখার আগে ডাক্তারকে একবার দেখতে চায়।

এই হাসপাতাই যদি বন্ধ থাকে তবে তাদের কি হবে? যা হবার তাই হবে। একজনের জেলকষ্ট লাঘব করতে কতজনের প্রাণ যাবে তার কোন হিসাব নেই। গরীবের মৃত্যুর কখনোই হিসাব থাকেনা। মানুষ মারা গেলে,প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের খুব একটা ক্ষতি হয়না। মানুষ মারা গেলে নেতানেত্রীদের খুব একটা ক্ষতি হয়না। হয়তো দু একটা ভোট মিস যায় ,তাতে কি? বিপক্ষতো আর পেলনা, এই যথেষ্ট।
সেই জেল খাটা ডাক্তার কিন্তু আজ সকালেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।তিনি বহাল তবিয়তেই বাড়িতে আরাম আয়েশ করছেন। কিন্তু হাসপাতালের ধর্মঘট অব্যহত আছে।

আবার প্রশ্ন করতে হবে”কারন কি?”
ঘটনা একটা হলেও দাবী অনেক। ডাক্তারের উপর থেকে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, সেই মেজিস্টেটকে বহিস্কার করতে হবে এবং ডিসিকে বদলি করতে হবে।
এবার ভাবছেন মগের মুল্লুক নাকি?
না এটা ডাক্তার দের মল্লুক। ডাক্তাররা কি মগ?

গত কিছু দিন আগে পরিবহন শ্রমীকরা তাদের দাবীর জন্য রাস্তায় পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। দুর্ভুগ পোহাতে হয়েছে সাধারন মানুষের।তখন সবাই গাল ফুলিয়ে গালী দিয়েছে। সব অশিক্ষিত, দ্বায়িত্ব বলতে কিছু নেই। এই যে এত গুলো মানুষকে বিপদে ফেলছে , এই যে এত ঘন্টা অফিস টাইম নষ্ট করছে এর মূল্য কে দেবে?
সময়ের মূল্য দেয়া যায়না। কিন্তু জীবনের মূল্য??

অশিক্ষিত শ্রমিক আর শিক্ষিত ডাক্তারদের সাথে তাহলে তফাতটা থাকলো কোথায়?

ড্রাইভারকে কারা দন্ড দিলে সব ড্রাইভাররা জোট করে পরিবহন বন্ধ রাখে। ডাক্তারদের কারাদন্ড দিলে তারাও কাজ বন্ধ করে দেয়।

এখন ফরমালীন দেয়ার জন্য যদি কোন মাছ ব্যবসায়িকে কারাদন্ড দেয় তারা বাজার বন্ধ করে দেবে। ডিমব্যসায়িরা,আলু ব্যবাসয়িরা ইত্যাদি ইত্যাদি

তাহলে এই দেশে আইনের কি দরকার? আইন কাদের জন্য?

সরকারী প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করতে হলে মন্ত্রনালয়ের অনুমোতি লাগবে। কি হাস্যকর আইন।
আমি সরকারী প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা নই বলে আমাকে পুলিশ ধরে চেংধুলাই দেবে আর তাদের ক্ষেত্রে আইন অন্য রকম।

তাদের সরকারের জন্য আমাদের রাষ্ট্র নাকি রাষ্ট্রের জন্য সরকার।

প্রতিবারই জিম্মি কেন জনগন? প্রতিবারই ভোগান্তি কেন জনগনের?