গোলাম আজম নিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে আলাপ আলোচনা তুঙ্গে। গোলাম আজম কে বন্দী করে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো হয়েছে। কি তার অপরাধ? সে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল, গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, ঘরবাড়ী পোড়ান সহ সব রকম অপকর্মে সে জড়িত ছিল। যারা স্বাধীনতার পক্ষের লোক তারা গোলাম আজমের গ্রেপ্তারে দারুন উল্লসিত, আর যারা ইসলাম পন্থি লোক প্রকাশ্যে না হলেও সবাই ভিতরে ভিতরে এ গ্রেপ্তারে দারুনভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত। পারলে এখনই এ সরকারকে পতন সহ সরকারের সাথে জড়িত বিশেষ করে আওয়ামী লীগারদেরকে দেশ ছাড়া করতে চায়।

কিছুকাল আগে গোলাম আজমের একটা সাক্ষাতকার প্রচারিত হয়েছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে। সেখানে দেখা গেল, গোলাম আজম বেশ দৃঢ়তার সাথে বলছে- ১৯৭১ সালে সে কোন অপরাধ করে নি, কোনরকম খুন, খারাবি, নারী ধর্ষন, এসবে জড়িত ছিল না- তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারে সোপর্দ করলেও তার বিরুদ্ধে কথিত অপরাধের কোন প্রমান কেউ হাজির করতে পারবে না। তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ বায়োনাট, হাস্যকর ও পাতানো। এর পরেও যদি তাকে অন্যায়ভাবে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়া হয়, ফাসির আদেশ দেয়া হয় তাহলে সে শহিদের মর্যাদা পাবে। আর এই শেষের বিষয়টিই সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ন মনে হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সবচাইতে বড় শত্রু বোধ হয় এই গোলাম আজম। কারন স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশে জন্মগ্রহনকারী এই গোলাম আজম আর তার দল জামাত ইসলাম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সর্বাত্মক সমর্থন জানিয়েছিল। পাকিস্তানীরা ছিল বাংলাদেশ দখলকারী, যে কোন দখলদারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ফুসে উঠতে পারে, স্বাধীনতার লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়তে পারে। দখলদার বাহিনী বা দেশ অতি সহজে তাদের দখল ফেলে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যাবে তা ভাবার কোন কারন নেই। একটা শক্তিশালি দেশ কেন অন্য দুর্বল দেশ দখল করে ও তা ধরে রাখতে চায়? একটাই কারন- দখলকৃত দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ভোগ দখল। পাকিস্তানীরা বাংলাদেশ দখল করে ঠিক সেটাই করত। বাংলাদেশের সম্পদ দিয়ে ওরা পাকিস্তানকে গড়ে তুলছিল। বাঙালীরা এটা বুঝতে পেরে স্বাধীনতার ডাক দেয়, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। এ যুদ্ধে এই গোলাম আজম ও তার দল জামাত ইসলামী সহ অন্যান্য ইসলামি দলগুলো বিরোধীতা করে ও পাকিস্তানীদের পক্ষ নেয়। আপাত দৃষ্টিতে এটা এক অমার্জনীয় অপরাধ এবং দেশ ও দেশের মানুষের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা। স্বাধীনতার পর ৪০ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, কিন্তু এর পরেও গোলাম আজম ও তার দল জামাত ইসলাম উপলব্ধি করতে ব্যর্থ যে সে ও তার দল তার স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা ও অপরাধ করেছিল। এখন প্রশ্ন হলো – কেন গোলাম আজম, তার দল ও তাদের সমমনা দল ও মানুষগুলো এ উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলো?

১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতীয় উপমহাদেশ দুটি দেশে পরিণত হয়- ভারত ও পাকিস্তান। হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল ভারত ও মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চল পাকিস্তান। সে সময়ে গোলাম আজমের দল জামাত ইসলাম কিন্ত অবিভক্ত ভারতই চেয়েছিল।কেন সেটা চেয়েছিল সেটার ব্যখ্যায় পরে আসা যাবে।পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব ও পশ্চিম। যদিও ভৌগলিক দিক থেকে এক অদ্ভুত রাস্ট্র হয়েছিল কারন পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝখানে বিশাল ভারত, প্রায় ১২০০ মাইলেরও বেশী দুরত্ব, তারপরও মুসলমানরা বিশেষ করে বাংলাদেশের মুসলমানরা শুধুমাত্র ধর্মীয় জোশে এরকম একটা উদ্ভট রাষ্ট্রের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছিল। তার সোজা অর্থ হলো-এ ধরনের ভৌগলিকভাবে উদ্ভট রাষ্ট্র পাকিস্তানের মূল ভিত্তি ছিল ধর্ম তথা ইসলাম। মনে হয় পৃথিবীতে সেটাই ছিল সর্বপ্রথম রাষ্ট্র যা সম্পূর্ন ধর্মীয় ভাবে সৃষ্টি হয়েছিল। তার কারন এ রাষ্ট্রের মানুষগুলো সম্পূর্নত ধর্মীয় জোশেই একত্রিত হয়েছিল।অত:পর ১৯৭১ সালে এসে শুরু হলো স্বাধীনতার যুদ্ধ। সে যুদ্ধের উদ্দেশ্য কি ? পাকিস্তান থেকে ভাগ হয়ে গিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। যা ছিল সম্পূর্নতই ইসলামী ভাবধারার পরিপন্থি। ইসলামে কোন আলাদা রাষ্ট্রের বিধাণ নেই। ইসলামের মূল বিধাণ হলো- গোটা মুসলমানরা একটা জাতি ও রাষ্ট্র হিসাবে বসবাস করবে যার প্রধান হবে একজন খলিফা যাকে বলা হয় ইসলামী খিলাফত।ইসলামের মূল লক্ষ্য হলো- গোটা দুনিয়ার মানুষ ক্রমশ: ইসলামী পতাকাতলে আসবে এবং একটা বিশ্ব খিলাফতি ব্যবস্থা চালূ করবে। মোহাম্মদের কোরান আরবী ভাষায় নাজিল হয়েছিল আর সে কোরানে বলা হয়েছিল- আমি মক্কাবাসী ও আশপাশের মানুষকে সতর্ক করতে চাই- এর দ্বারা যতই বোঝানো হোক না কেন ইসলাম শুধুমাত্র আরবী ভাষী বা আরব দেশের জন্য, কিন্তু পরবর্তীতৈ ইসলামী শাসক ও পন্ডিতরা একে বিস্তৃত করে বিশ্ব ইসলামী উম্মা ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখে ও তা বাস্তবায়নে ব্রতী হয় যার লক্ষ্য ছিল বিশ্ব ইসলামী খিলাফত। এ খেলাফতে মুসলমানদের জন্য আলাদা কোন জাতি রাষ্ট্রের স্থান নেই। ঠিক একারনেই ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের কালে জামাত ইসলাম তার বিরোধিতা করেছিল কারন তাদের স্বপ্ন ছিল কালে ক্রমে ভারতের অমুসলমানরা ইসলাম গ্রহণ করবে ও গোটা ভারতে একটা ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে আর যার অধীনে আসবে আস্তে আস্তে পৃথিবীর সকল মুসলিম দেশগুলো। এটা শুনতে যতই আজগুবি মনে হোক না কেন জামাত ইসলামী এর ধর্মীয় নেতা মওদুদী স্বপ্ন সেটাই ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ১৯১৮ সালে পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠির কাছে তুর্কী অটোমান খিলাফত চরম ভাবে পরাজিত হওয়ার পরও তাদের বদান্যতায় খিলাফত প্রথা নামে মাত্র চালু থাকে।আর এটাকেই শক্তিশালী করার জন্য এই পরাধীন ভারতের মুসলমানরাই কিন্তু প্যান ইসলামিক খিলাফতের আন্দোলন শুরু করে। মৌলানা মোহাম্মদ আলী ভ্রাতৃদ্বয়, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ সে আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন।১৯২৪ সালের দিকে একটা বিপ্লবের মাধ্যমে কামাল আতাতুর্ক কর্তৃক খিলাফত প্রথাকে রদ করে তুরস্ককে আধুনিক পশ্চিমা ধাচের রাষ্ট্র গঠনের পর খিলাফত আন্দোলন প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়ে, কারন যাকে ঘিরে ভারতের মুসলমানরা আন্দোলন করছিল তারই তখন পতন ঘটেছিল। এর পর খিলাফত আন্দোলনের নেতারা মূলত: মুসলিম লীগের দিকে ঝুকে পড়ে, লক্ষ্যনীয়ভাবে আবুল কালাম আজাদ কংগ্রেসের সাথেই থেকে যান, যে কারনে তাঁকে ভারতের একজন বীর রাজনীতিবিদ হিসাবে গন্য করা হয়।এর পরেই মুসলিম লীগ ভারতে তাদের রাজনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করে ও ক্রমশ মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যায়।তখন ছিল মওদুদীর যৌবন কাল। তিনি এসব কিছু পর্যবেক্ষন করছিলেন আর প্রত্যক্ষ করছিলেন কিভাবে তাঁর চোখের সামনে অটোমান খিলাফতের পতন ঘটল, কিভাবে ভারতে খিলাফত আন্দোলনের যবনিকাপাত ঘটল।একজন নিবেদিত প্রান মুসলমান হিসাবে এর সব কিছুই তার চিন্তাজগতে ব্যপক প্রভাব ফেলে।এরপর শুরু করেন কোরান হাদিস নিয়ে গবেষণা, লেখা, সাংবাদিকতা এসব। আর তারই ফল হিসাবে তিনি ১৯৪১ সালে গঠন করেন জামাত ইসলাম।জামাত ইসলাম কোন স্থানীয় ইসলামি রাজনৈতিক দল নয়।এটা হলো দুনিয়ার সকল মুসলমানদের একটা রাজনৈতিক দল।যে কারনে পাকিস্তানে – জামাত ইসলাম পাকিস্তান, বাংলাদেশে- জামাত ইসলাম বাংলাদেশ, ভারতে- জামাত ইসলাম হিন্দ এরকম বলা হয়। অনেকটা কমুনিষ্ট পার্টির মত। ইসলামী মূল্যবোধ ও ইসলামের বিধিবিধাণ চর্চা প্রসারের পাশাপাশি সমগ্র দুনিয়াকে ইসলামী শাসনে আনার সুদুরপ্রসারী স্বপ্নের ফসল ছিল তার এ জামাত ইসলাম। তার এসব চিন্তাভাবনার বহি:প্রকাশ ঘটে তার বহুল প্রচারিত একটা বই – ইসলামে জিহাদ– নামক বইটিতে। উক্ত বইয়ে তিনি লেখেন-

ইসলামের লক্ষ্য হলো- দুনিয়ার মুসলিম আদর্শ ও রীতি বিরোধী সকল রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে পরিবর্তে তাদেরকে ইসলামী আদর্শ ও বিধি বিধানের আওতায় এনে একটা বিশ্ব ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।— ইসলামের প্রয়োজন সমগ্র দুনিয়া, শুধুমাত্র কিছু খন্ডিত অংশ, রাষ্ট্র বা জনগোষ্ঠী নয়, যাতে করে সমগ্র দুনিয়ার মানুষ ইসলামী আদর্শ ও কল্যানের মধ্যে বসবাস করতে পারে। —–এ লক্ষ্য অর্জনে ইসলামের লক্ষ্য হলো সকল শক্তি প্রয়োগ করে একটা ইসলামী বিপ্লব সংঘতিক করা যাকে জিহাদ বলা হয়। পৃষ্ঠা নং-৬, ৭,২২।

সুতরাং উক্ত বর্ণনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে জামাত ইসলামের আদর্শ ও মূল উদ্দেশ্য কি। কথিত গোলাম আজম এই আদর্শ ও লক্ষ্যকেই তার হৃদয়ে পোষণ করে এসেছে সারা জীবন। আর সেকারনেই ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বিরোধীতা করা। এটা ছিল আদর্শিক অবস্থান। কারন তার মনে হয়েছিল- হিন্দু অধ্যূষিত ভারতীয় সাহায্য পুষ্ট তথাকথিত ( তার ভাষায়) স্বাধীনতার যুদ্ধ পূর্ব পাকিস্তানের ইসলামকে বিনষ্ট করতে উদ্যত। তার কাছে তাই ইসলাম রক্ষাটাই প্রথম ও প্রধান দায়ীত্ব হয়ে দাড়ায়।আর সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সাহায্য করতে হয়েছে সার্বিকভাবে। সে ধরণের সাহায্য করাতে কিছু মানুষ নিহত হয়েছে, কিছু নারী ধর্ষিত হয়েছে, কিছু মানুষের ঘরবাড়ী পোড়া গেছে। তা তো যেতেই পারে। আল্লাহর আইনের যারা বিরোধীতা করে তাদেরকে তো ওভাবেই দমন করতে হবে, যা খোদ নবী মোহাম্মদ নিজ জীবনে করে গেছেন। ইসলাম রক্ষা করতে গিয়ে যে কোন ধরনেরই অপরাধমূলক কাজ জায়েজ, সেটাই ইসলামের শিক্ষা। সেটা করার জন্য আল্লাহ হুকুম করেছেন আর যা নবী স্বয়ং নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করেছেন। যারা স্বাধীনতার পক্ষে যুদ্ধ করেছিল বা যুদ্ধকে সমর্থন করেছিল, ইসলামী বিধি অনুযায়ী তারা ইসলামের বিপক্ষে দাড়িয়ে গেছিল, যা মুনাফিকির সামিল, কুফরের সামিল। কোরান ও হাদিসের পাতায় পাতায় কুফর ও মুনাফিকির শাস্তি কি তা ভালমতোই বলা আছে। তারপরেও একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, যেমন-

অতঃপর তোমাদের কি হল যে, মুনাফিকদের সম্পর্কে তোমরা দু’দল হয়ে গেলে? অথচ আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন তাদের মন্দ কাজের কারনে! তোমরা কি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করতে চাও, যাদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেছেন? আল্লাহ যাকে পথভ্রান্ত করেন, তুমি তার জন্য কোন পথ পাবে না।

তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না। সূরা নিসা, আয়াত-৮৮- ৮৯

উপরের ৮৮ নং আয়াত মুনাফিক সম্পর্কে বলছে আর ৮৯ আয়াত বলছে কাফের সম্পর্কে। মুনাফিক তারাই যারা মুসলমান হয়েও অমুসলিমদের সাথে হাত মিলায়, বন্ধুত্ব করে। সেই আরব দেশের মানুষগুলো গোষ্ঠিবদ্ধ হলেও অনেকেই পরস্পরের আত্মীয় স্বজন ছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই চাপে পড়ে বা অন্য কারনে ইসলাম গ্রহণ করলেও তাদের অমুসলিম আত্মীয় স্বজনদের সাথে সম্পর্ক রাখত- যা মুনাফিকির সামিল তথা অমার্জনীয় অপরাধ।এর পর মোহাম্মদ যখন তার দলকে উক্ত মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করতেন তখন তারা অনেকেই তাতে সায় দিত না বা ইতস্তত করত, কারন বিনা কারনে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে কে? আর ঠিক তখনই মুহাম্মদ আল্লাহর ওহী নাজিলের মাধ্যমে তাদেরকে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করতেন আর সে যুদ্ধে কি কি করতে হবে তা পরিস্কার বলা আছে ৮৯ নং আয়াতে। এ ছাড়া অন্যান্য আয়াতে বলা আছে- যুদ্ধের সময় দখলকৃত নারীরা হলো গণীমতের মাল আর তাদের সাথে যৌন সংসর্গ বা ধর্ষণ করা ( কোন বন্দী নারী নিশ্চয়ই স্বেচ্ছায় যৌন সংসর্গ করবে না) হালাল। যেমন-

এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। সূরা- নিসা, আয়াত-২৪

উক্ত আয়াতে বলছে- এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়- অর্থাৎ যে সব নারীকে যুদ্ধে দখল করা হয় তারা নিষিদ্ধ নয়। অনেকে বলতে পারে এটা হলো বিয়ে করার বিষয়। কিন্তু আসলে তা নয়। বলা হচ্ছে কে নিষিদ্ধ আর কে নিষিদ্ধ নয়। কোন বিষয়ে এ বিধি নিষেধ? যৌন উপভোগ করার বিষয়ে, বিয়ে করার বিষয়ে নয়। বিষয়টি যে আসলেই তাই বা প্রতিষ্ঠিত হয় কতকগুলি হাদিস দ্বারা, যেমন-

Abu Said al-Khudri said: “The apostle of Allah sent a military expedition to Awtas on the occasion of the battle of Hunain. They met their enemy and fought with them. They defeated them and took them captives. Some of the Companions of the apostle of Allah were reluctant to have intercourse with the female captives in the presence of their husbands who were unbelievers. So Allah, the Exalted, sent down the Quranic verse, “And all married women (are forbidden) unto you save those (captives) whom your right hands possess”. That is to say, they are lawful for them when they complete their waiting period.” [The Quran verse is 4:24] Abu Dawud 2:2150

Abu Sa’id al-Khudri reported that at the Battle of Hunain Allah’s Messenger sent an army to Autas and encountered the enemy and fought with them. Having overcome them and taken them captives, the Companions of Allah’s Messenger seemed to refrain from having intercourse with captive women because of their husbands being polytheists. Then Allah, Most High, sent down regarding that:” And women already married, except those whom your right hands possess (Quran 4:. 24)” (i. e. they were lawful for them when their ‘Idda period came to an end). Sahih Muslim 8:3432

সুতরাং ইসলাম তখা আল্লাহর বিধাণ অনুযায়ী , গোলাম আজম কোন অন্যায় করে নি।ঠিক একারনেই গোলাম আজম স্বাধীনতার ৪০ বছর পর স্বদম্ভে ঠিক সেই কথাগুলোই উচ্চারণ করছে। বরং গর্বিত ভঙ্গিতে বলছে-তাকে যদি অন্যায়ভাবে শাস্তি দিয়ে হত্যা করা হয় তাহলে তার শহিদী মর্যাদা লাভ হবে যা একজন মুসলমানের আজন্ম লালিত স্বপ্ন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে- ইসলামী আদর্শ ও বিধাণ অনুযায়ী, গোলাম আজমের জীবন সত্যি সত্যি সার্থক।

তাহলে দেশের কিছু মানুষ গোলাম আজমের গ্রেফতারে কেন খুশী ও উল্লসিত? তার কারন তারা ইসলামি আদর্শ ও বিধি বিধান সম্পর্কে সম্যক অবগত নয়। তারা নামে মাত্র মুসলমান, হয়ত কিছু কিছু ইসলামী বিধি বিধান মেনে চলে যেমন- নিয়মিত নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, পারলে হজ্জ করে, যাকাত দেয়, কিন্তু একজন প্রকৃত মুসলমানকে আরও অনেককিছু জানতে হয়। যারা সেসব বিষয়ে সম্যক অবগত নয়, তারাই গোলাম আজমের গ্রেপ্তারে উল্লসিত। সুতরাং হলফ করে বলা যেতে পারে যে- যারা ইসলামের একটু গভীরে গেছে তাদের কেউই তার এ গ্রেপ্তারে খুশী নয়। হয়ত প্রকাশ্যে বলতে পারছে না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে তারা ভীষণ অখুশী। এখানে মুক্তিযুদ্ধ কোন ফ্যাক্টর নয়। ফ্যাক্টর হলো ইসলাম। আর ইসলামে কোন ভিন্ন ধরণের মুক্তিযুদ্ধের স্থান নেই। ইসলামে একটাই বিধাণ- তা হলো দুনিয়ার সব মানুষকে জিহাদের মাধ্যমে ইসলামের পতাকাতলে আনতে হবে, দুনিয়াব্যপী একটা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে তাদেরকে ইসলামী আদর্শ, বিধি বিধান ও কল্যানের মধ্যে রাখতে হবে। পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান এরা একত্রিত হয়ে এ আদর্শেরই সূত্রপাত করেছিল বিংশ শতাব্দীতে তুর্কী খিলাফত পতনের পর, কিন্তু আবেগ প্রবন বাঙালীরা ইসলামকে সম্যক না বুঝে, আত্মস্থ না করে, শেখ মুজিবুর রহমান নামক এক বাঙালী জাতীয়তাবাদী নেতার পাল্লায় পড়ে বাংলাদেশ নামক এক আলাদা রাষ্ট্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করে, সে মুক্তিযুদ্ধে অমুসলিম পৌত্তলিক হিন্দু ভারতকে বন্ধু হিসাবে গ্রহন করত: তাদের সাহায্য নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ করেছে সেই ১৯৭১ সালে, যা অমার্জনীয় মুশরিকির সামিল। যার বিরুদ্ধে প্রবল বিক্রমে জিহাদি লড়াই করে গেছে ইসলামের বীর সেনানী গোলাম আজম শুধুমাত্র আল্লাহর ধর্ম ইসলাম রক্ষার জন্য। আর আল্লার কি অসীম কুদরত- সে যুদ্ধে পরাজয় বরণ করার পরেও ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সুদীর্ঘকাল প্রচন্ড প্রতাপে বসবাস করার পরেও কেউ তার টিকিটি স্পর্শ করতে পারে নি। আর এখন যখন তার বয়স ৯০ বছর এই মরে তো সেই মরে, এমক একটা মৃত্যু পথযাত্রী স্বেত শশ্রু মন্তিত অতি বৃদ্ধকে গ্রেফতার করে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত নাচানাচি করছে। হায় সেলুকাস, কি বিচিত্র এ বাংলাদেশ!