ভাই আপনি নাকি বেশি হাসেন?

জ্বী ভাই হাসি, আমরা হাসি দেশের মানুষ তো তাই হাসি। আমাদের দেশে কেউ কাঁদে না সবাই হাসে। কিন্তু আমাদের তবু একটা দুঃখ আছে। কেউ যে কাঁদে না এইটা আমরা মেনে নিতে পারি না। কাঁদাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার। সকল দেশের মানুষ কাঁদে আর আমরা কাঁদতে পারি না। আমাদের চোখে কান্না নাই। এইটাই আমাদের একমাত্র দুঃখ।

সেজন্য আপনারা কি করেছেন?

তেমন কিছু করতে পারি নাই। কেবল আমাদের প্রধান মন্ত্রীকে হাসি না বলে ডাকি। তাতেই আমাদের দুঃখ কিছুটা লাঘব হয়।

এবার রাজা আর বীরবলের গল্প কথা শুনে নেই।

ঐ যে রাজার বেগুন খাওয়ার গল্পটা? তাহলে আবার বলি। রাজা বীরবলকে সঙ্গে নিয়ে বাজার গেলেন। রাজা হাঁটছে, বীরবল হাঁটছে, হঠাৎ রাজা দেখতে পেল এককৃষক বেগুন বিক্রি করছে। কি চমৎকার দেখতে,এত সুন্দর জিনিস আমি আগে কখনো দেখিনি। এটা কি আমার রাজ্যে জন্মে? এই ফলটির নাম কি বীরবল? রাজা জানতে চাইল ।

বীরবল জানাল এর নাম রাজামশায় বেগুন। আপনি ঠিকই বলেছেন, এত সুন্দর ফল আগে আমিও দেখিনি।এটা আমাদের রাজ্যেই হয় রাজামাশায়।সত্যিই তো, এটা দেখতে চমৎকার।এটা রান্না করে খেতে হয়।

রাজা বলল, এটা খেতে কেমন বীরবল?

দারুন খেতে, অতি সুস্বাদু খাবার,একবার খেলে সারাজীবন মনে থাকবে। মানুষতো এই বেগুন আছে বলেই আপনার রাজ্যে বাস করছে।

প্রাসাদে ফিরে রাজা বেগুন দিয়ে খেতে বসেছে। কিন্তু কোনো ভাবেই খেতে পারছেনা। ডেকে পাঠাল বীরবলকে। এসব কি? এসব কি এনেছ?আমি তো খেতে পারছিনা।

রাজা মাশায়, বেগুন আবার মানুষ খায় নাকি। এর নামই হলো বে গুন, যার কোন গুন নেই। এটা আপনার কোনো ক্রমেই খাওয়া সম্ভব নয়। এসব রাজপ্রাসাদের খাবার তো নয়ই। খুবই জঘন্য।বাজারে এটা কেউ কিনে না। এসব ঘোড়ার খাবার রাজামশায়।

রাজা তো অবাক। প্রশ্ন করলো, কিন্তু তুমিই তো বাজারে বলেছ, এটা সুন্দর, খেতে চমৎকার।

জ্বি রাজা মশায় আমিতো আপনার চাকরি করি, বেগুনের নয়।

আমরাও তো রাজার দেশে বাস করি। রাজার ভালই আমাদের ভাল, রাজার মন্দই আমাদের মন্দ।আমরা সবসময় রাজার কথা বিশ্বাস করি। অতীতে সকল রাজারাই বলেছে তাদের সময়ে উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট যা দেখা যাচ্ছে সবই উন্নয়ন। অর্থনীতি সমাজ নীতি সবই হচ্ছে তার সরকারের আমলে। তার পরে রাজা পরিবর্তন হয়ে এল। এবারও শুনতে পেলাম দেশের সব উন্নয়ন তারাই করছে। এই রাজন্য সৃষ্টির পর থেকে এমন একজনও রাজা পাওয়া যায়নি যারা একটু কম উন্নয়ন করেছেন। এমন একজনও রাজা আসেনি যারা দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি ত্যাগ করেনি। অন্তত এমন কথাও আমরা শুনতে পাই নাই।

জনসাধারণ কিছু কিছু অন্য ধরনের কথা বলে বটে। কিন্তু আমরা রাজার মতো এত প্রভাবশালীর কথা কে অগ্রাহ্য করে কি করে অন্যের কথা বিশ্বাস করবো? করাটা কি আমাদের উচিত? না আমরা করবো না। আমরা বরাবরই রাজার দলের লোক। আমরাই তো পায়ে লুটিয়ে পরে তাদের ক্ষমতা দেই তবে তাদের কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে কেন?

আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের দেশ প্রতিবছর অনেক উন্নতি করছে। শিক্ষা,স্বাস্থ,বাসস্থান,চিকিৎসা সব দিক দিয়ে আমরা মহা উন্নতি করেছি। কেউ যদি উন্নতি দেখতে ব্যর্থ হয় সেটা তার চোখের সমস্যা উন্নয়নের সমস্যা নয়।

আমি নিজের কানে শুনেছি রাজা কত উন্নয়ন করছে। আমি কি আমার কানকে অবিশ্বাস করবো? আপনি কি বলতে চান আমার কানকে অবিশ্বাস করা উচিত?

আমি বিশ্বাস করি আমাদের রাজা আমাদের জন্য কাজ করছে। আমাদের ভালর জন্য তাদের রাতের ঘুম হয়না(দিনের বেলায় বেশি ঘুমায় কিনা)। তাই রাতের বেলায় দেখার জন্য হিন্দি সিনেমা আমাদানী করতে হচ্ছে।

আমাদের অনন্দ অনেক গুন বাড়িয়ে দিতে এই মহতি উদ্যোগকে অনেকেই বিরোধীতা করতে শুনেছি। কিন্তু তাতে কি আমাদের রাজা মশায় কখনোই জনগনের এই সব কথায় কর্নপাত করেনি। ভবিষ্যতেও করবেনা। আমাদেরওতো একটা ইজ্জত আছে। তিনি আমাদের রাজা। রাজা হয়ে তিনি কোন ক্রমেই সাধারনের ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে কাজ করতে পারে না।

আমাদের মহান রাজামাশায় সিংহাসন দখল করেই একবার হজ্জ্ব করতে সৌদিতে যান।তার পর প্রতিবছরই। যাবেনই তো শুরোতে যদি ডলার খরচের হাত ভাল না থাকে তবে পাঁচটি বছর এত ডলার কি করে খরচ করবে? মন্ত্রীরা এই দেশের কাজে এতই মনোযোগি হয় যে সবার কথা শোনার সময় পান না। বিদেশ সফর, আর টিভির ক্যামেরার সামনে হাজির থাকতে থাকতেই তো তাদের সময় যায়।

দিন দিন টিভি চ্যানেল যেভাবে বাড়ছে তাতে করে মন্ত্রীদের কাজ আরো বেড়ে গেল। কত সাক্ষাতকার কতো,প্রেস কফারেন্স কত মাইকে বক্তৃতা দিতে হয়। তার হিসাব কি কেউ রাখে? কেবল টাকা নিয়ে কিছু করলেই সবাই তেরে আসে। এত কষ্ট করে যদি কিছু টাকা জমানো না যায় তবে মন্ত্রী হয়ে কি লাভ? পরের পাঁচটি বছর কি জনগন খাওয়াবে? আর রাজার প্রাসাধ ছাড়ার পরে কি জনগনের বাসায় থাকা যাবে? তাই একটি প্রাসাধ তুল্য বাড়িও করতে হয়। প্রাসাধের গাড়ি ফিরিয়ে দেবার পরে কি হেঁটে চলাচল করবেন? তাই দুই চারটা গাড়িও আনতে হয়। এসব তো জনগনের জন্যই তাই না? জনগনের জন্য আনা গাড়িতে খরচ যাতে কম হয় তাই আমাদের রাজার মন্ত্রীরা আমদানী করা গাড়িতে টেক্স ফ্রি করে দেন।

আমাদের জন্য তারা এত যে করেন তার প্রতিদান স্বরুপ কি নেন? কিছুই না । আমাদের এত শুভাকঙ্খি রাজা মাঝে মাঝে প্রতিবেশিদের সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখতে বুকের উপর দিয়ে তাদের রাস্তা করে দেন। রাজা বলে কি তার প্রতিবেশিদের সাথে একটু খাতির করতে ইচ্ছে করেনা। মাঝে মাঝে আমাদের গ্যাস ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা নিয়ে তাদের কাজ পাইয়ে দেন। দিতেই পারেন। দেশের জন্য যে রাজা চিন্তা ভাবনা করেন তিনিই ভাল জানেন কোনটা তার জন্য ভাল। কোনটা দেশের জন্য ভাল।

সাধারণ কিছু কিছু মানুষ নিজের খেয়ে বুনের মোষ তাড়ান। তারা এই সব দেয়া নেয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। কি দরকার তাদের অন্দোলন করে? কাজ করবি খাবি। তোদের রাজার ব্যপারে নাক গলানোর কি দরকার? এর পরিনাম কত খারাপ হতে পারে তারা কি খেয়াল করেছে? তারা কি ক্রস ফায়ারের নাম শুনে নাই!!

একটি (মতান্তরে একাধিক) স্বার্থান্বেষী মহল প্রতিবেশিদের সাথে সব সময় আমাদের বিবাদ লাগতে চায়। আমাদের মহামান্য রাজার মন্ত্রীরা এই ব্যপারে খুবই সচেতন। তারা ঘোষনা দিয়েছে এসব কাঁটা তারের মৃত্যু নিয়ে রাজা চিন্তিত নন। খারাপ কি বলল রাষ্ট্রের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। এত লোককে কি রাজামশায় সবসময় দেখে দেখে রাখতে পারবেন? রাজার কাজ রাজ্য চালানো ,লোকজন পাহাড়া দেয়া তো রাজার কাজ নয়। প্রতিবছর হানাহানিতেই তো অনেক লোক মরে। তবে সীমান্তের গুলিতে মরলে এত হৈচৈ কেন?

ভারতীয় পণ্য বর্জন সুর তুলেছে কিছু ছোকরা। তারা এসব করে আমাদের রাজার ভাবমূর্তি খারাপ করার চেষ্টা করছে। রাজা ধৈর্যযশীল তাই এই ব্যপারে এখনো কিছু বলছেন না। তবে তাদের মন্ত্রীদের মুখের তো আর এত ধৈর্য্ নাই। এই সব ছোকরারা যদি সাবধান না হয় তবে হয়তো আমাদের মাননীয় মন্ত্রীরা কিছু একটা করে বসতে পারেন। আর না হোক ক্যামেরার সামনে কিছু একটা বলে বসতে পারেন।জানেনইতো আমাদের মন্ত্রীরা ক্যামেরা দেখতে আর মাথা ঠিক থাকেনা।

সব রাজারই দু একটা সাকা আর বাবর থাকে। রাজার মানইজ্জতের কথা চিন্তা করে তাই এসব হাবিজাবি আন্দোলন বাতিল করা দরকার।

পরিশেষে আমাদের মহামান্য রাজার দীর্ঘায়ু কামনা করে ( অল্পায়ু কামনা করার পরিণাম নিশ্চয় জানে? ছয় মাসের জেল) আজকের মতো এখানেই শেষ করলাম।