আমরা সবাই কোন না কোন পরিবার থেকেই এসেছি। বাবা মা আমাদের জন্ম দিয়েছেন। আমাদের ভরণপোষণ করেন একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। আমরা সেই পরিবারে থেকে পড়ালেখার সূচনা করি। আবার আমরা বড় হয়ে বিয়ে করে পরিবার গঠন করি। এই প্রক্রিয়া যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে।
পরিবারের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি না। কারন সেই সুবিধা অসুবিধা আমরা বিভিন্ন সামাজিক বই থেকেই পাই যারা পড়ালেখা করেছি স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে তারা কোন না কোন ক্লাসের বইয়েই পেয়েছি। তাই সেটা আলোচনার বিষয়কে উহ্য রাখা হয়েছে।

আমাদের দেশে সাধারণত যৌথ পরিবারকেই সাপোর্ট করে। এর কারন ছেলে মেয়েরা পরিবারের বাইরে কোন সিন্ধান্ত নিতে পারে না বা চায় না, এবং এক পরিবার বা গোত্রের সম্পদ অন্য গোত্র বা পরিবারের কাছে না যায়। সে জন্য বিয়ের বিষয় গুলো অনেক কঠোর ভাবে মানা হয়। এজন্য পারিবারিক বিয়েটাতে আত্মীয়-স্বজনদের সম্মতি থাকে এতে বর বা কনের অবস্থা বা শিক্ষাগত যোগ্যতা যেমনি হোক। হা আমরা হয়তো বলতে পারি যারা শহরে আছি বা কলেজ ইউনিভার্সিটে পড়ালেখা করে বড় হয়েছি তারা দুই একজন প্রেম করে বিয়ে করতেছি, কিন্তু সেই বিয়েতে আদৌ পারিবারিক সমর্থন থাকে না।

আমরা পড়ালেখা করে পরিবর্তন হয়েছি, এবং করেছি অনেক কিছুই কিন্তু সমাজের এই বিষয়টিকে আমরা আজো পরিবর্তন করতে পারিনি।
আমরা পরিবারের থেকে বের হতে পারি নি। এখনো শিক্ষিত ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা পরিবারের কথা না শুনলে পরিবার কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হন। এর ফলে পরিবারের বাইরে কোন ছেলে মেয়ে সিন্ধান্ত নিতে চান না। কিন্তু মানুষের বৈশিষ্ট্য আদৌ এমন না। সে জন্ম নেয় স্বাধীন ভাবে, কিন্তু জন্মের পর পরই বন্দি হয়ে যায় পরিবারতন্ত্রে।

মানুষ যদি তার নিজের স্বভাবকে প্রতিহত করতে চায়, এবং তা করতে গিয়ে নিজেই বিপদে পড়ে মানসিক নিঃপেষনে।

আমরা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পরিবারের কাছে ভরণ পোষনের দাবি করতে পারি। কারন আমরা কেহই নিজের ইচ্ছায় জন্ম নেই না। আমাদেরকে বাবা মায়েরা তাদের নিজেদের স্বার্থে জন্ম দেয় (বিশেষ করে যৌনস্বার্থে)। এটা তো আমাদের দোষ হতে পারে না। বাবা-মায়েরা যৌন-স্বাদ পেতে গিয়ে যদি আমাদের জন্ম দেন, তো এই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভরণ পোষণের দায়িত্ব তাদেরই। কিন্তু এই ভরণ-পোষণ অজুহাতে তারা ছেলে-মেয়ের উপর একটা কর্তৃত্বারোপ করেন। সেটা উচিত না। কারন এই সন্তান তো নিজে থেকেই আসেনি, এসেছে বাবা-মায়েদের কর্মের ফলে, এটার অন্য কোন নিয়ন্তা থাকতে পারে না। নিয়ন্তা বলতে বুঝিয়েছি ঈশ্বরের হাত। বাবা-মায়ের যৌনকর্ম ব্যতিত আজ পর্যন্ত এমন কোন সন্তান পৃথিবীতে জন্ম নেয় নি, আর নিতেও পারে না এটা আমরা সবাই বুঝি।

এখন কথা হলো বাবা মায়েরা কেন ছেলে সন্তানের প্রতি ডিপেন্ডেবল হবে? এর কারণ খুজে পাচ্ছি না। তারা যখন ইয়াং ছিল তখন কি তারা বুঝে নি যে তারা কত দিন পর্যন্ত বাঁচবে বা বাঁচার আশা করে সেই অনুযায়ী তারা তাদের কর্ম করবেন, যাতে খাওয়া পরার কষ্ট না হয়। যদি তারা নিজের ভরণ-পোষণ না করতে পারেন, তাহলে কেনই বা সন্তান নেন??? বিয়ে করলেই কি সন্তান নিতেই হবে এমন কোন কি আইন আছে? তবে সন্তান নিলে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তাদেরই। তবে এখানে ধর্ম ভুল ব্যাখা দেন। বিয়ে করলে সন্তান নেওয়া বাধ্যবাধকতার ব্যাপারটা। ধর্ম একটা দর্শন মাত্র। এটা বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে, এটা কখনোই বাস্তব হতে পারে না। কারন সব বিশ্বাসই বাস্তব হতে পারে না। এটা আমরা সবাই জানি।

আসল কথায় আসি, আমাদের দেশে ২১ ও ১৮ বছর বয়সে একজন ছেলে-মেয়েকে সাবালক ভাবা হয়। অবশ্য এই নির্দিষ্ট বয়সে সবাই যে সাবালক হয় তা নয়, অনেকে এই বয়সের আগেই, অনেকে আরো অনেক পরে। যাই হোক কথা হলো সাবালকত্ব নিয়ে। আমরা যখন সাবালক হই, বুঝতে শিখি বাস্তবতাকে, কর্মে নিযুক্ত হই, তখনি আমরা বিয়ে করার সাধারণত সিন্ধান্ত নেই। যারা নিজে দুর্বল, পরিবারের কাছে তারা পরিবারকে চাপ দেয় বিয়ে করার জন্য, আর যারা নিজেরাই ভাবে আমার সিন্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আমার নিজের, কারন জীবনটা তারই এবং ভাল-মন্দ এবং সুখ স্বাচ্ছন্দের ব্যাপার সে নিজে বুঝে সে পরিবারের কথার তোয়াক্কা না করেই বিয়ে নামক কাজটা করে নিজের পছন্দের পাত্র-পাত্রিকে।

কিন্তু কথা বল এই ধরণের সাহসী ছেলে-মেয়ের সংখ্যা কত জন??? খুবই সামান্য। খুব সামান্য এই জন্য যে আমারা যাদের দেখি শুধু তাদের উপর বিচার করে বলতেছি না, টোটাল জনসংখ্যার কথা বলতেছি।

আবার যারা এই ধরণের সিন্ধান্ত নেন, তারা পরিবার কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হন। সেটা হয় ছেলের পরিবার থেকে, নয়তো মেয়ের পরিবার থেকে। এই নির্যাতনে অনেকে টিকতেও পারেন না। যারা টিকে তাদের মধ্যে যারা পরিবারের মধ্যে থাকে তারা জীবনভর নির্যাতনের স্বীকার হন। জীবনভর এই কারনে বলতেছি যে, আমার শোনা এক হিন্দু ভদ্রমহিলার কাছ থেকে গত পরশু যে এক বয়স্ক বুড়ি ছিল শাঁখা সিঁদুর পরা, তাই উনি নমস্কার করতে যান, কিন্তু কিছুক্ষন পরে উনি শুনেন যে এই বয়স্ক মহিলার মা বাবা মুসলিম, তখন যে নমস্কারটা আন্তরিকভাবে দিয়েছিল, তা ফিরার সময় ফিরিয়ে নেন। এটাও তো একধরণের নির্যাতন। ফলে এই কারনে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি আজকের শিক্ষিত সমাজ বেশী পছন্দ করে, বিশেষ করে যারা নিজের প্রতি নির্ভরশীল।

আমাদের মুক্তমনারা যদি তাদের পরিবারে ফেরত যায়, যদি সেই পরিবার মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী না হয়, তাহলে তাকে আর মুক্তচিন্তা করতে হবে না যদি না সে নিজেই তার পরিবারের কর্তা হয়।

মুক্তমনারা অনেকে সাহসী তারা নিজের সিন্ধান্ত নিজেই নিতে পারে, তাদের কারো উপর নির্ভরশীল হতে হয় না। যারা এখন সংশয়ের মধ্যে আছে, তারা কিছুটা হলেও পরিবারের উপর নির্ভরশীল তাদের দ্বারা সাহসীকতার কাজ হতেও পারে, আবার নাও পারে। কারন তারা ঈশ্বরকে স্বীকার করেন পরিবারের চাপে, আবার অস্বীকার করেন মুক্তমনা বন্ধুর যুক্তির চাপে। এই দ্বন্দ্বে থাকার পর সে যদি নিজের প্রতি নির্ভরশীল না হন, তাহলে শেষমেষ ঈশ্বর আছেন, ধর্ম নেই, এই ধরনের মানসিকতা নিয়ে পরিবারে ফেরত যান।

আমরা বলি যে নিজের উপর আস্থা না হলে মুক্তমনা বা নাস্তিক হতে পারে না। কিন্তু আমাদের পরিবার যদি মুক্তমনা না হয়, তাহলে কি সে নিধার্মিক হিসাবে বিয়ে করতে পারবে?? কখনোই না। আর্থিক দিকটা কম-বেশী আমরা সবাই ভাবি, এই ভাবনার উপর চলে আমাদের স্বাধীন বা পরাধীন হওয়া। আজো যারা পড়ালেখার সাথে আছেন, এবং কর্ম সংস্থানেই নেই, তারা যদি সত্যিকার অর্থেই সাহসী না তাহলে অন্তত তারা মুক্তমনা হতে পারেন না। কারন এই মুক্তিচিন্তা প্রতিফলিত করতে হবে পরিবারের বাইরে এসে। তাই এদেরকে সাহসী বলি।

যৌথপরিবার বা পরিবার থেকে অনেকটা দুর্নীতির সূচনা হয়। হয়তো দূর্নীতির একটা কারন হতে পারে। এই যৌথ/পরিবার থেকে আমরা একটা জিনিস পাই সেটা সম্বিলিত ব্যক্তিস্বার্থ থেকে যৌথ-পারিবারিকস্বার্থ। এই যৌথ-পারিবারিকস্বার্থ সার্বিকভাবে একটা রাষ্ট্রের মানবতার উন্নয়ন সাধিত হয় না। অনেকটা গ্লোবালাইজেশন এর মত। একদল না খেয়ে মরবে আরেক দল খেয়ে মরবে। যাই হোক, কোন পরিবারে একজন যদি সরকারী বড় কোন অফিসার, তাহলে দেখা যায় ঐ পরিবারের বা গোষ্ঠির মধ্যে অন্যরা তেমন কিছু করার যোগ্যতা থাক বা না থাক ঐ একজনের জোড়ে সবাই অযোগ্যরা যোগ্যতম আসনে বসে পরে। এতে পরিবারের প্রতি নির্ভরশীলতা বাড়ে তাদের। এভাবে অযোগ্যরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত আছেন, এরা আছেন বলে নিজেরা যেমন পারিবারিক সুত্রে চাকরী পাওয়া (মামা-চাচা) তেমনি এদের পরবর্তী সন্তানদেরও একইভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। তবে সব যোগ্যরাই যে চাকরী পাচ্ছেন না, তা নয়, তারা সংখ্যা নগণ্য। ফলে, তারা কোন অফিসে বা দপ্তরে কোন ভাল সিন্ধান্ত নিতে পারে না সার্বিকভাবে। ফলে রাষ্ট্রের তথা সার্বিক জনগণের ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে মুক্তচিন্তার।

এভাবে যারা গোত্রের বা পরিবারে আবদ্ধ থাকে তাদের পক্ষে পরিবার থেকে বের হয়ে এসে মুক্তমনা হওয়াতে তাদের অনেকটা নির্যাতন এর স্বীকার হতে হয়।

যদি কর্মসংস্থানের এই সিস্টেমটা না থাকতো আজ মুক্তমনা এবং মুক্তচিন্তকদের জয়জয়কার অবস্থা থাকতো। দেশের তথা সমাজের পরিবর্তন হতে সময় লাগতো না। ফলে কুসংস্কারও দুর হতো ।

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথম আলো পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে যে নিউজটা পেলাম তা পড়তে পারেন এই লিংক-এ। এখানে যেটা প্রকাশ পেয়েছে তার হেডলাইনটা “পারিবারিক নির্যাতনে শিকার এক ছেলে”

আমরা এতদিন নারী ও শিশু নির্যাতন এর কথাই জেনেছি। ছেলে নির্যাতন যে আগে থেকে হয় না, তা নয়। তবে সে খবর গুলো প্রকাশ হয় না। তবে আমি নিজেও কম শিকার হচ্ছি না। যারা মুক্তমনা তারা কম বেশী সব ছেলেরা পারিবারিক নির্যাতনে শিকার হচ্ছি। যেমন কিছুদিন আগে ব্রাত্য সাজ হয়েছিল, তবে তার বিপদ এখনো কাটেনি। সে পরিবারের সাথে সমঝোতা করে চলতেছে।