গত কয়েক মাস ধরে খুবই আবেগপ্রবণ সময় কাটাচ্ছি। প্রায় তিন বছর হয়ে যাচ্ছে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশ থেকে দূরে আছি। ঢাকা শহরের মুরগীর খামারে বড় হওয়া এই আমি, বেশ অনেকবার এই কয়বছরে কম বেশী আবেগপ্রবণ হয়েছি। কিন্তু, ঠিক এভাবে নয়। দূর দেশ থেকে নিজের মাতৃভূমির দুর্দশা, সোশাল মিডিয়াতে ব্লগের গালিগালাজপূর্ণ মন্তব্য, রাজনৈতিক ভণ্ডামী ইত্যাদি দেখে অনেকবার মনে হয়েছে এসব মেনে নিয়ে নিজ দেশে আর ফেরত যেতে পারব না। কিন্তু “ভাগ্য”গুণে আমার এই দূরদেশে এমন কিছু দেশী মানুষের সাথেও পরিচয় হয়েছে যারা আমাকে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, দেশে অনেক উদার মুক্ত মনের মানুষও আছে; এই বিদেশবিভূঁইয়ে আমার কাজ যখন শেষ হবে তখন আমি এদের সাথে বাস করবো, গড়ে তুলব নতুন পরিবার-সমাজ, যারা আমাকে মাথা উঁচু করে দাড়াতে সাহায্য করবে, আমাকে ধর্ম বা সামাজিক রীতির নিচে চেপে রাখবে না। আমাকে দুষ্টু লোকের সাথে নিত্যদিন উঠতে বসতে হবেই, কিন্তু আশেপাশে সুশীল মানুষেরও অভাব হবে না। আমি মনে-মনে প্রস্তুত, আরো কয়বছর পর বাক্স-প্যাটরা সব কিছু গুছিয়ে নিজ দেশে ফেরত যাবার জন্য। কিন্তু, এর-ই মাঝে হঠাৎ করে যা হলো, আমি একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে উপলব্ধি করলাম, আমি আর “ভাগ্য”-তে বিশ্বাস করি না।

উপলব্ধিটা হঠাৎ করে হলেও, চিন্তাগুলো হঠাৎ করে আসেনি। আমি শিক্ষার জন্য এমন এক দেশে পাড়ি জমিয়েছিলাম যেই দেশে প্রায় ৮০% মতো মানুষ কোন ধর্মের অনুসারী নয়। এমনটা আমি নিজে ইচ্ছা করে বেছে নেয়নি, ৮০% ধর্মান্ধদের দেশে গেলেও হয়তো আমার কোন সমস্যা ছিল না। যাই হোক, বিদেশের মাটিতে একজন দায়িত্ববান, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হিসেবে পা রাখার ঘন্টা তিনেকের মধ্যে দেখলাম এক প্রেমিকযুগল ট্রেনস্টেশানে একে অপরকে চুম্বন দিয়ে বিদায় জানাচ্ছে, দুইজনই মেয়ে। আগেই বলেছি আমি ঢাকা শহরের মুরগীর খাঁচায় বড় হয়েছি, মাঠে সরিষা ক্ষেতের মাঝে দিয়ে এক দৌড়ে পার হয়ে কাঁদা মাখা ডোবায় গ্রীষ্মের শেষ বিকেলে ঝাঁপ দেইনি কখনো। ইস, লিখতে গিয়ে মনে হলো সরিষা এর মৌসুম কখন হয় তাও জানি না, অথচ সরিষা ক্ষেত আমার কত পছন্দের! ইন্টারনেট থেকে জানলাম শীতের শেষ হলো সরিষার মৌসুম। বইয়ের পাতার বাইরে এই ইন্টারনেটই আমাকে  বিদেশের মাটিতে পা রাখার আগেই শিখিয়েছে যে, আমি ২০ বছরের উপর যেই সমাজ ব্যবস্থায় বড় হয়েছি তার বাইরেও আছে অন্য এক সমাজ; যেখানে আযানের ডাক বা চার্চের বেল বা সন্ধার উলু ধ্বণি কোনোটাই বাজে না, যেখানে যুগল শুধু বিবাহিত বা অবিবাহিত নারী–পুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এক-ই লিংগের মধ্যেও বিরাজমান। মার্কিন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ‘অপেরা’ আর ‘এ্যালেন দি জেনেরেস’- এই দুই নারীর টক’শো দেখে দেখে তাই বাংলাদেশের মাটিতেই আমার এই ব্যাপারগুলোতে একটি নিজস্ব মত তৈরী হয়েছিল। আমি নাস্তিকতা, সমকামিতা, অবিবাহিত বুড়ো-বুড়ির অর্ধ-শতক পূর্তি ইত্যাদি বিষয়ে অবগত ছিলাম; তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা ছিল, কিন্তু এতটুকু বুঝতাম না এটা তারা কিভাবে করে, আর তাদের মনে এত আনন্দই বা থাকে কি করে। তাই হয়তো ট্রেনস্টেশানে দুই হাত দূরে দুই প্রেমিকাকে অন্তরঙ্গ দেখে অসম্মানে নয়, বরং অবাক চোখে তাকিয়ে চিন্তা করেছি ওরা কি করে পারে! সেই থেকে শুরু, নতুন কিছু চাক্ষুস দেখে আমার নিজের ছোট্ট গণ্ডির বাইরে চিন্তা করার।

আমার জন্ম একটি মুসলিম শিক্ষিত পরিবারে। এমন একটি পরিবারে যারা নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্জ সব পালন করেন, কিন্তু আমার বাবা অথবা মা এর পরিবারের কোনো মেয়ে বোরকা পরে না। কেউ যদি হিজাব করতে চায় তাহলে সেটা করতে তাকে কেউ অনুৎসাহিত করবে না, বরং খুশী হবে। কিন্তু নেকাব কে ভালো চোখে দেখবে না। রমজানের মাসে পরিবারের সবাই সুমধুর কণ্ঠে কোরান তেলায়াত করবে, কিন্তু বই মেলা থেকে তসলিমা নাসরিনের বই কিনে বাসায় নিয়ে গেলে বকা দিবে না, একটু হয়তো চোখের কোণ দিয়ে অসম্মতির ভাব ফুটিয়ে তাকাবে, এই যা। বিপরীত লিংগের বন্ধু থাকতে পারবে, কিন্তু তাদের সাথে হাত ধরে ঘোরা যাবে না। মাগরিবের আগে বাসায় ফিরতে হবে, কিন্তু তার আগে আমি যেখানেই যাই না কেন জানিয়ে যেতে হবে, কোথাও গেলে আমার বাবা-মা ফোন করে কখনোই জেরা করেনি, কোথায় আমি, কার সাথে। অনুমতি মিললে আমি সব কিছু করতে পারি। তাই আমার সমবয়সী অন্য সবার থেকে তুলনামূলকভাবে বাসায় কম মিথ্যা বলতে হতো। একটা উদার মুসলিম পরিবার, যেখানে নিত্যদিনের নামাজ প্রার্থনা আবশ্যিক, কিন্তু ব্যক্তিস্বাধীনতাও আছে। তাই আমি যখন কোরান আরবিতে খতম করবো না বলে ঘোষণা দিলাম তখন আমার বাবা মা মনে অনেক কষ্ট পেলেও আমাকে জোর জবরদস্তি করেননি। যখন ২০০৭ এ ফেসবুকে প্রথম নাম লিখাই তখন ধর্মীয়দৃষ্টিকোণ ছিল এমন, “মুসলিম হিসেবে জন্মেছি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি,” কয়মাস পর ২০০৮ এর প্রথমে লিখি “মুসলিম,” ২০০৮ এর মাঝে লিখি-কিছুই লিখি না। ততদিনে মন মানসিকতা পাল্টেছে, আমি মর্মে মুসলিম, কর্মে নই। তাও চিন্তা করলাম আমি ধার্মিক হই আর না হই এটা অন্য কারো জানার কিছু নাই, এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যপার। এর এক বছর পর পাড়ি জমাই একটা সত্যিকারের সেক্যুলার দেশে, যা আমাকে- এক মনে মনে স্বঘোষিত উদার মুসলিমকে- আমূল পাল্টে দেয়।

প্রথমেই যেই জিনিসটি উপলব্ধি হলো এটা কোনো মুসলিম প্রধান দেশ না, এখানে কোনো মাগরিবের আজান নেই। ঘরে কখন ফিরবো বা না ফিরবো এটা আমার নিজের উপর নির্ভরশীল। আমি এর পূর্ণ সদ্‌ব্যবহার করে আশে পাশে যা পারলাম সব ঘুরে ফেললাম। আমি বন্ধুসুলভ মানুষ আর নতুন দেশে, দেশ বিদেশের অনেক বন্ধুসুলভ মানুষ আছে। খুব তাড়াতাড়ি ক’জন নানান দেশের আড্ডাবাজরা বন্ধুত্ব করলাম। আমাদের আড্ডাতে ধর্ম, আন্তর্জাতিক যুদ্ধ, রীতি, মিথ্‌ আরো কতকিছু যে আসতো! একটা ব্যপার যেটা সবার মধ্যে কমন্‌ ছিল সেটা হলো একে অন্যকে দ্বিধায়-নির্দ্বিধায় প্রশ্ন করা, অন্যের ধর্মীয় চিন্তা ভাবনা নিয়ে খোলামেলা আলাপ। আমাদের আড্ডায় ছিল মধ্যপ্রাচ্যের উদার কিন্তু রগচটা মুসলিম, মধ্যপ্রাচ্যের কট্টর অমুসলিম, ইরানের মুসলিম আইনের উপর বিরক্ত ইরানী মেয়ে, ধর্মীয় আলাপ আলোচনায় কেবলি শ্রোতা প্রোটেস্টাইন খ্রিস্টান, ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষিত সবার প্রিয় মৃদুভাষিনী, নাস্তিক পরিবারে জন্ম নেওয়া অসম্ভব বুদ্ধিমতি স্বল্পভাষী, হিন্দু ধর্মের পুজারী এক গাতক, দুই অসম্ভব রসিক এবং তার্কিক নাস্তিক যারা ১৫ বছর বয়সের দিকে নিজ নিজ ধর্ম থেকে সরে এসেছে, আর আমি আর আমার আরেক স্বদেশী বন্ধু।  আমাদের সাথে আরও অনেকে ছিল, কিন্তু সবার সামনে আমরা গলা ফাটিয়ে তর্ক করতাম না। আমাদের ধর্মীয় তর্কগুলো মূলত হতো দুই রসিক নাস্তিক আর আমি আর আমার স্বদেশী বন্ধুর মাঝে। বাকিরা চুপচাপ দেখতো। বাংলাদেশ থেকে যাবার সময় আমার ইংরেজিতে অনুবাদ করা কোরান নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তার আর দরকার হয়নি। আমি আমার লুকায়িত ব্যক্তিগত মুসলিম পরিচয় থেকে অনেক আগেই বের হয়ে এসেছি। প্রাণপণে নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসকে আগলে রাখতে চাচ্ছি। কিন্তু তর্কগুলো শেষমেশ দাড়ালো নাস্তিকতা আর সকল আব্রাহামিক ধর্মগুলোর মাঝে। আমি, চর্চা না করা বিশ্বাসী মুসলিম, পরিণত হলাম সকল সেমেটিক ধর্মের প্রতিনিধিতে। আমার জ্ঞান কম, কিন্তু আমার মজার নাস্তিক বন্ধুরা ছিল খুবই সুচিন্তিত। ধর্মীয় তর্ক করতে করতে আমরা সবাই মুখে ফেণা তুলে ফেলতাম, কিন্তু কোনদিন আমাদের মনে বন্ধুরা কষ্ট দেয়নি। কখনো আমাদের মুখ কালো হয়ে গেলে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়ে তাড়াতাড়ি কথার মোড় ঘুড়িয়ে নেবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমার কট্টর রূঢ় নাস্তিকের সাথেও দেখা হয়েছে, যে তখন আমার সম্মানিত মানুষ, ‘মোহাম্মদ’র সম্পর্কে কটূ কথা বলা শুরু করে, যা শুনে আমার চোখ দিয়ে কষ্টে ঝরতে থাকে পানি। যদিও অনেক পরে সে তার ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চায়। কিন্তু ক্ষতি যা হবার হয়ে গেছে। তাদের সকল তথ্য যাচাইয়ের জন্য, জবাবের জন্য একটু একটু পড়া শুরু করি।

এর মধ্যেই, সেকুলার দেশে পড়া প্রায় শেষ করে পাড়ি জমাই আটলান্টিকের ওপারে প্যাসিফিকের দেশে। আবারো সেই ধর্মান্ধদের দেশে, কিন্তু এরা আবার এক-ই টাইপের ধর্মান্ধ না। বেশীরভাগ খ্রিস্টান, কোথাও কোথাও গোড়া খ্রিস্টান, কিন্তু মহাসাগর পাড়ি দিয়ে অন্য ধর্মান্ধরাও চলে এসেছে। বিচিত্র এ দেশ। আস্তিকের স্বর্গখানা, আবার বাক স্বাধীনতার জন্য নাস্তিকেরও স্বাধীনতা! বিশাল এক দেশ, অপরূপ তার সৌন্দর্য, কিন্তু একই সাথে আছে যুদ্ধের কদর্যও। আমার কি! আমি এখনো মাগরিবের আযান শুনতে পারি না, আর আমার আছে বাকস্বাধীনতা। আরেকটা ব্যাপার আছে আমার, আমার জীবনে এমন এক মানুষের আগমণ হয়েছে যে আমাকে নিভৃতে বলেছে সে স্রষ্টার ব্যাপারে ‘অ্যাগনস্টিক’, এই শব্দটা আমার কাছে এক্কেবারে নতুন নয়, কিন্তু এরকম মানসিকতার ব্যক্তিগত মানুষ আমার কাছে নতুন। আমি তখনো নিজের অবশিষ্ট ধর্মীয় বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করছি। বহু বছরের জমে থাকা ক্ষোভ আরো পুঞ্জীভূত হচ্ছে; বইয়ে লেখা দয়াময় স্রস্টার স্যাডিস্টিক দোজখ, নারীকে সমঅধিকারের নামে শেকল পরানো আয়াত, শান্তির নামে যুদ্ধে মাতোয়ারা ধর্ম আমাকে তিলে তিলে খুবলে খাচ্ছে। আগে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতাম যারা আল কায়েদা, বা জে.এম.বি এর নামে নিরীহ মানুষ মারে বা মারার ঘোষণা দেয়, তারা অশিক্ষিত এবং সর্বোপরি মুসলিমই নয়। আমার শান্তিপ্রিয় বাবা-মা এর একনিষ্ঠভাবে পালন করা ইসলামই সঠিক ইসলাম। কিন্তু স্রষ্টার বাণী একি বলে! এতো ঐ খুনীদেরও সমর্থন করে, আর তথাকথিত উদারদেরও সমর্থন করে! স্রষ্টা কি অদ্ভুত নাকি! এরকম ভাবলে আবার বহুবছরের লালিত বিশ্বাসী আত্মা কেঁপে উঠে।

এই দো-টানায় ডুবে আছি গত কয়েক মাস। নাস্তিকদের কথা ইন্টারনেটে দেখি। আস্তিকদেরও দেখি। আমি কে? আমি কাদের দলে? আমি সারাজীবন বিজ্ঞানের ভক্ত। কই বিবর্তন তো আমার মনে স্রষ্টা নিয়ে প্রশ্ন জাগায়নি, আমি মুসলিমদের বিবর্তন আর বিগ ব্যাং নিয়ে তথ্য খণ্ডনের হাস্যকর চেষ্টা দেখে হেসেছি কেবল। কিন্তু তখনো মনে হয়েছে স্রষ্টা আছে, কারণ তাকে আমি অনুভব করেছি, যখন পাশে কেউ ছিল না তখন কেবল সেই ছিল। আমাকে সাহস যুগিয়েছে সে। মুসলিমদের তথাকথিত “দয়াময়, অহংকারী” স্রষ্টা সে নয়, আমার কাছে সে বন্ধুসুলভ, সে আমাকে চেনে, আমাকে কখনো নরকে নিয়ে ফেলবে না। কিন্তু, আমার বন্ধুদের? যারা তাকে চিনে না, জানে না তারা? তাদের ছাড়া আমি স্বর্গে চলে যাব! কিন্তু স্বর্গে আছে আমার প্রাণপ্রিয় নানাজান। ইস, কি মজা হবে তাদের সাথে। কিন্তু পিছনে আগুনে পড়ে থাকবে আমার কতো পরিচিত! ওদের কষ্ট হবে আর আমি মজা করবো! তাই সাথে করে পৃথিবীর সবাইকে, সব ধর্মের সবাইকে আমি স্বর্গে নিয়ে যাব! কিন্তু হিটলার!!! তাকে নিয়ে আমি কি করে স্বর্গে যাব। আমি নরক চাই আবার চাইও না! উফ্‌, আমি এগুলোর পিছনে কোন লজিক খুজে পাচ্ছি না! আর আমি এই অস্থির দোটানায় কয়দিন থাকব! এখন দরকার কিছু প্রশ্নের উত্তর! প্রথমত বন্ধু স্রষ্টা, তুমি ধর্মের নামে যে অন্যায় হয় তা থামাও না কেন? দুই হাজার বছর আগে তো খুব জাদু বিদ্যা দেখাচ্ছিলে। এখন কি হলো। তোমার নামে যে বোমাবাজী হয় তা থামাও না কেন? তোমাকে প্রশ্ন করলে আবার একদল লোক আমাকে মারতে আসে!! এই তোমার আমার বন্ধুত্ব! তোমার ডার্ক হিউমার এত বেশী কেন? তুমি মানুষ হলে তোমার সাথে আমি মিশতাম না! তুমি এক বিশাল এনার্জি সোর্স হলেও খুব অর্থহীণ তোমার আচরণ। আমার “ভাগ্যই” খারাপ তোমার সাথে আমার পরিচয়।

বুঝাই যায় গত কয়েক মাসের এই অহেতুক নিজের সাথে তর্ক, আমাকে অনেকবার বোধ করিয়েছে যে আমি বোধহয় পাগল হয়ে যাচ্ছি। এগুলো লজিকবিহীণ। আমি লজিকের পূজারী, পূজারী বিজ্ঞানের, শিল্পের; এর মাঝে এই অপদার্থ গড্‌ (এখানে অপদার্থ আকারহীণ, এনার্জি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে) এর কোনো জায়গা নেই। আমার ভাগ্যই খারাপ। কিন্তু হঠাৎ করেই শক্তভাবে নিজেকে বললাম, “ভাগ্য” বলে কিছু নাই। আছে পরিসংখ্যান। প্রবাবিলিটির সূত্র। আমার আসে-পাশের এত বছরের সঞ্চয় করা যতসামান্য জ্ঞানটুকু আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছে, সামনেও নিয়ে যাবে। আমি ভালো মানুষ ছিলাম, সামনেও থাকবো। আমার মনের শান্তি এখনো পুরো আসেনি। এখনো কষ্ট লাগে চিন্তা করে যে নানাজান-এর সাথে দেখা হবে না। হিটলার অল্পেই পার পেয়ে গেলো, স্বর্গ-নরক না থাকলে তার আর শাস্তি হবে না। জীবনের কত সময় ধর্মের পিছনে নষ্ট হলো। বাবা-মা কে জীবনে তেমন মিথ্যা বলতে হয়নি, কিন্তু এখন থেকে আমার জীবনের বড় একটা মুল্যবোধ তাদের কাছে বলতে পারবো না। আমার পরবর্তী প্রজন্মকে কি করে ধর্মীয় আগ্রাসন থেকে শিশুকাল থেকেই রক্ষা করবো! কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, পারবো কি দেশে ফিরে যেতে একজন ‘নয়-আস্তিক’ হিসেবে? আমার স্যুটকেস যে গোছানো!

(একটা কথা না বললেই নয়, বিদেশী মাটিতে পা দেবার তিন ঘন্টার মধ্যই যেভাবে দুই প্রেমিকাকে চুম্বনরত দেখেছিলাম, তারপর তিন তিনটি বছর গেলো, তেমনটি আর একবারের জন্যও দেখিনি! ভাগ্যের কি খেলা!)