(তসলিমা নাসরিনের জন্যে।)

হে নির্বাসিত মেয়ে!
তুমি আসতে চাও ফিরে
বাংলার আনাচে কানাচে,
ফিরে আসতে চাও
বাংলার সুদিনে-দুর্দিনে,
আসতে চাও বাংলার যেকোন খানে; যেকোন ক্ষণে।
তুমি তোমার স্বপ্নগুলোর মালা গাঁথতে চাও
বাংলার গানে গানে।
তুমি সুরভী হয়ে বইতে চাও বাংলার পবনে।

তোমার অশ্রুবিন্দু বৃষ্টি হয়ে ঝরতে চায়
বাংলার ঘরের চালে,
তোমার মন,পাখি হয়ে গাইতে চায়
বাংলার গাছের ডালে।

তুমি পাখির পালক হয়ে ঝরতে চাও
বাংলার নদীতে, সাগরে;
তুমি ফিরতে চাও বাংলার মাঠে-ঘাটে,
আকাশে, বাতাসে, পুকুরে, নদীর বাটে।

তুমি ফিরে আসতে চাও
ফেব্রুয়ারির বই মেলায়,
যেখানে তোমার বই পোড়ানো হয়েছিল,
যেখানে কিছু মানবতার শত্রু
অমানবিক আসমানি বিধানে
তোমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
তুমি আসতে চাও ফিরে
তোমারই মাটিতে, তোমারই নীড়ে
হট্টগোলে, ভীড়ে।
কিন্তু কীকরে?
তামাম বাংলা যে নিষিদ্ধ তোমার তরে!

তুমি বাংলাকে ভালবেসেছিলে ব’লে
তুমি আঁকড়ে থাকতে চেয়েছিলে ব’লে
সুখে-দুখে বাংলামায়ের কোলে;
ওরা তোমার জন্মগত অধিকার নিয়েছে কেড়ে
তোমার মাটি নিয়েছে কেড়ে।

তুমি সত্য বলেছিলে ব’লে
তুমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে
কলম হাতে তুলে নিয়েছিলে ব’লে
ওরা তরবারি হাতে তোমার দিকে এসেছিল তেড়ে।
সত্য এবং কলমে
ওদের বড্ড বেশি ভয়।
কারণ ওদের কাছে তোমার প্রশ্নের কোন জবাব নাই।

তবুও তুমি আসতে চাও ফিরে
হাসতে চাও, নাচতে চাও, গাইতে চাও বাংলার পরে।
কারণ তুমি থাকনা কেন
পৃথিবীর যেকোন প্রান্তরে
এই বাংলা মাটির তরে
প্রাণ যে তোমার কেঁদে মরে!

তুমি ভয়াবহ ধর্ম থেকে হয়েছ বিচ্যুত।
তাই তুমি হয়েছ অচ্ছুত,
হয়েছ রাষ্ট্রচ্যুত।

চিরায়ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ করেছিল তোমার কলম
বিদ্রোহ করেছিলে তুমি।
তাই তোমাকে ছাড়তে হয়েছে প্রিয় জন্মভূমি।

অন্যয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ক’রে
তুমি করেছ মহা-অন্যায়।
হে দুঃসাহসী মেয়ে!
তোমার কোন ক্ষমা নাই
তোমার কোন ক্ষমা নাই।

হে ভ্রষ্ট মেয়ে,
হে বিদ্রোহী মেয়ে,
হে নিষিদ্ধ মেয়ে,
তোমাকে স্বদেশ হতে
চিরিতরে করা হয়েছে বহিষ্কার।
তোমার নেই কোন অধিকার
নিজের মাটিতে ফেরার।

তবুও তুমি আসতে চাও ফিরে
কারণ বাংলামায়ের তরে
প্রাণ যে তোমার কেঁদে মরে