[ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবালের জন্মদিন আজ। আমার কাছে তিনিই বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কল্পবিজ্ঞান লেখক। এই শ্রদ্ধেয় মানুষটির জন্মদিনে আমার তুচ্ছ লেখাটি নিবেদন করলাম। আশা করি, তাঁর কলম আরো চলবে মৌলবাদী, যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে এবং মানবতা, বিজ্ঞান ও শিক্ষাবিস্তারের স্বপক্ষে।]

আন্তর্জাতিক মান (ISO কত যেন?) ও মানসিকতাসম্পন্ন যেসব ক্ষণজন্মা যুগন্ধরদের নিয়ে বাঙালি বাস্তবিকই শ্লাঘা অনুভব করতে পারে, তাঁদের মধ্যে সত্যজিৎ রায় শীর্ষস্থানীয়। বঙ্গসংস্কৃতিতে অতুল অবদান যেসব পরিবার রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম রায়চৌধুরী পরিবারের এই উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্কটি বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময় তো বটেই, পাশাপাশি আরেক অন্যতম মহর্ষভ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বাঙালির আত্মবিশ্বাসী পা-পিছলানোতেও তিনি সমূহ অবদান রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথ যেমন বাঙালির কাছে কবিতা লেখা খুব সরল করে তুলেছেন (বুদ্ধদেব বসু বৃথাই সতর্ক করেছেন যে, “এই সরলতা ভয়াবহভাবে প্রতারক”), তেমনি সত্যজিৎও বাঙালি তরুণের কাছে চলচ্চিত্রনির্মাণ নিতান্তই আশাবাদী অনুভবযোগ্য স্বপ্নে অনুবাদ করেছেন। বাঙালি তরুণ (তরুণীরা নয় কেন?) যে সাহস করে হুটহাট কবিতা লিখে ফেলে বা টাকা হাতে পেলে ছবি বানানোর স্বপ্নে বিভোর থাকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক ও আবেগি আবর্জনা প্রসব করে, তার দায়ভার এদের ওপরও কিছুটা বর্তায় বৈকি! তাঁরা দুজনেই ‘রেনেসাঁ মানব’ হওয়ায় সেই গুণটিও রীতিমত সুলভ হয়ে পড়েছে যেন। আজকাল কেউ কলামাধ্যমের একটিতে কিঞ্চিৎ সিদ্ধি পেলেই তিনি অন্য আরেকটিতে হাত গলিয়ে দেন নিজস্ব ক্ষমতার তোয়াক্কা না করেই, শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হুমায়ূন আহমেদ। মূল সূত্র: সত্যজিৎ যদি ছবি করে খ্যাতনামা হয়ে সাহিত্যেও সফল হন, তাহলে আমি সাহিত্যে সফল হলে ছবি বানানোতেই বা হতে পারবো না কেন? ফলাফল দশ নম্বর বিপদ সংকেত। যাক, আসলে এসব নিয়ে আজকের কথা নয়, তাই প্রসঙ্গান্তর বিপজ্জনক।

সত্যজিৎ, অনেকেই জানেন, কলম ধরেছিলেন মূলত ছোটদের জন্যে এবং তাঁর সাহিত্যকৃতি হিসেব করলে ওদিকেই পাল্লা নির্লজ্জভাবে ঝুঁকে পড়বে প্রায় মাটি ছুঁয়ে। অবশ্য তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে বড়দের নিয়ে লেখার কথা ভাবতে গেলে তাঁর মাথায় চিত্রনাট্যই উঠে আসে। ১৯৬১ সালের মে মাসে সত্যজিতের চল্লিশতম জন্মবার্ষিকীতে তাঁদের পারিবারিক ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা ‘সন্দেশ’ প্রকাশিত হয় তৃতীয়বারের মতো। সত্যজিতের সাথে সঙ্গত করেছিলেন তাঁর বন্ধু প্রথিতযশা কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। প্রথম সংখ্যায় অবশ্য তিনি লিয়ারের একটা কবিতার অনুবাদ ছাড়া আর কিছুই করেন নি, কিন্তু পরে তিনি হাত খুলে সেখানে লিখতে এবং অলংকরণ করতে (তাঁর নিজের এবং অন্যদের লেখার) থাকেন। সত্যজিৎ অবশ্য সচেতন ছিলেন যে তাঁর কাজগুলো তাঁর পূর্বসূরীদের তুলনায় নিতান্তই তুচ্ছ, যদিও তাঁর বিশাল ভক্তকুল হয়তো একমত হবেন না এতে, কিন্তু ধারে না কাটলেও ভারে তিনি প্রচুর কেটেছেন। ছড়া অনুবাদ, মোল্লা নাসিরুদ্দিনের কৌতুক, ভিনদেশি রোমাঞ্চ গল্প অনুবাদ, গোয়েন্দা গল্প, কল্পবিজ্ঞান গল্প, রোমাঞ্চ গল্প, হাসির গল্প, অপরাধের গল্প, ভৌতিক গল্প-কী লেখেন নি তিনি? অলংকরণের সেই সোনালি মিডাসস্পর্শের কথা তো বাদই দিলাম।

এরমধ্যে আজ সামান্য কিছুটা আলোচনা হবে তাঁর অমর চরিত্র ‘প্রফেসর ডঃ ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু’-কে নিয়ে। শঙ্কুকে নিয়ে তাঁর প্রথম লেখা ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়েরি’ প্রকাশিত হয় সেই তৃতীয় প্রজন্মের সন্দেশেই ১৩৬৮ বঙ্গাব্দে। ৩টি ধারাবাহিক অংশে লেখাটা পুরোপুরি উঠে আসে আশ্বিন, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ সংখ্যায়। তার সাথে রসালো, মন-কাড়া সত্যজিতীয় অলংকরণ তো আছেই। সেই যে শুরু, তার শেষ হয় শারদীয় আনন্দমেলার ১৩৯৭ বঙ্গাব্দে ‘স্বর্ণপর্ণী’ দিয়ে। অর্থাৎ প্রায় ত্রিশ বৎসর ধরে তিনি শঙ্কুর ৩৮টি বড়-ছোট গল্প ও ২টি অসমাপ্ত গল্প রচনা করে গেছেন। গল্পগুলো সবই ডায়েরি আকারে লেখা। তাঁর অন্য আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র অপরাধসন্ধানী প্রদোষচন্দ্র মিত্রের আগেই এই চরিত্রটি জন্মলাভ করেছিলো। সত্যজিতের বিবিধ বিষয়ে আগ্রহের এবং পঠনজাত জ্ঞানের কিছুটা তিনি পুরে দিয়েছিলেন শঙ্কুর কাহিনিগুলোয় এবং নানা ভৌগোলিক পরিবেশে তিনি শঙ্কুকে নিয়ে ফেলেছেন বারবার। আপাদমস্তক আন্তর্জাতিক বাঙালি এই বিনয়ী এবং মৃদুভাষী বিজ্ঞানবিশারদ ভদ্রলোকটির বর্ণনা দিতে গিয়ে সত্যজিৎ তাঁর প্রথম অনূদিত গল্পগ্রন্থ ‘স্টোরিজ’ (১৯৮৭)-এর ভূমিকায় তাঁকে পাশ্চাত্যের আরেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের সৃষ্ট চরিত্র প্রফেসর চ্যালেঞ্জারের (‘লস্ট ওয়ার্ল্ড’খ্যাত) ভদ্রমোলায়েম রূপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন (‘mild-mannered Professer Challenger’)।[১] ওই গ্রন্থে শঙ্কুর চারটি অনুবাদ গল্প ছিলো। পুরো বইটাই সত্যজিৎ নিজে অনুবাদ করেছিলেন। এছাড়া, অন্যের হাতে-করা তাঁর লেখার অনুবাদের মধ্যে শঙ্কুর দুটি বইয়ের নাম পাওয়া যায়। একটি Bravo! Professor Shonku (১৯৮৩), অন্যটি The Incredible Adventures of Professor Shonku (১৯৯৪)। রূপা থেকে বেরুনো প্রথমটির অনুবাদক হিসেবে নাম আছে ক্যাথলিন এম. ও’কনেলের এবং দ্বিতীয় বইটির প্রকাশক পেঙ্গুইন ও অনুবাদক সুরভি ব্যানার্জি।

৩০ জুন, ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি লেখায় জন গ্রস অবশ্য প্রফেসর চ্যালেঞ্জারের সাথে সত্যজিতের শঙ্কু-তুলনা বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেন নি। তাঁর ভাষ্যে: প্রফেসর শঙ্কু “তার ভারভাত্তিক এডওয়ার্ডীয় পূর্বসূরীর চাইতে শুধু কম আত্মবিশ্বাসীই নয় বরং কম মজাদার ও স্বল্প বিকশিত চরিত্র। তারপরও অবশ্য তিনি গল্পগুলোর ভেতর পুরনো ধাঁচের ছদ্মবৈজ্ঞানিক কাহিনির পছন্দসই স্বাদ পুরে দেন।” [২]

আসলে, প্রফেসর শঙ্কুর চরিত্রবিশ্লেষণ বা উৎসসন্ধান করতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে সত্যজিতের স্বল্পায়ু প্রতিভাবান পিতা সুকুমারের দুটি কাজের দিকে। তার মধ্যে প্রথমটির নাম ‘হেঁসোরাম হুঁশিয়ারের ডায়েরী’, যেটিতে প্রফেসরের চ্যালেঞ্জারের ‘দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড’-এর কিছুটা রসিকতাময় আদল পাওয়া যায়, কিন্তু ভেতরটা পুরোই সুকুমারীয়। প্রফেসর শঙ্কুর ডাইরি লেখার ধাঁচটি যে এই লেখা থেকেই সংগৃহীত, তাতে সন্দেহের অবকাশ থাকে না। বলতে কি, সত্যজিৎ নিজেই এই কথা তাঁর এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করে গেছেন। পাশাপাশি সুকুমারের সৃষ্ট ‘সত্যি’ গল্পের একমাত্র চরিত্র নিধিরাম পাটকেল-এরও সমূহ প্রভাব পড়েছে প্রফেসর শঙ্কুর ওপর। নিধিরামের একটি বেড়ালও ছিলো, যেমন শঙ্কুরও ছিলো নিউটন। নিধিরামের আবিষ্কারের মধ্যে ছিলো গন্ধবিকট তেল, যা “খেলে পরে পিলের ওষুধ, মাখলে পরে ঘায়ের মলম, আর গোঁফে লাগালে দেড় দিনে আধহাত লম্বা গোঁফ বেরোয়।” [৩] সুকুমারের বিশুদ্ধ হাস্যরসের এই উপকরণ অবশ্য সত্যজিৎ শঙ্কুতে তেমন ব্যবহার করেন নি। এছাড়া তাঁর বিশ্বজয় করার জন্যে তৈরি-করা গোলার উপকরণ শুনলে আর সন্দেহ থাকে না যে তিনি আসলেই শঙ্কুর পূর্বসুরী। গোলার ভেতর কী আছে? “বিছুটির আরক আছে, লঙ্কার ধোঁয়া আছে, ছারপোকার আতর আছে, গাঁদালের রস আছে, পচা মুলোর একস্ট্রাকট আছে, আরও যে কত কি আছে, তার নামও আমি জানি না। যত রকম উৎকট বিশ্রী গন্ধ আছে, যত রকম ঝাঁঝালো তেজাল বিটকেল জিনিস আছে, আশ্চর্য বৈজ্ঞানিক কৌশলে সব তিনি মিশিয়েছেন ঐ গোলার মধ্যে।”[৪]

শঙ্কুর প্রথম গল্প ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ (১৩৬৮ বাং)-তে তিনি ভিনগ্রহে যাত্রার জন্যে আকাশযান তৈরিতে ব্যবহার কি কি ব্যবহার করছেন দেখা যাক। “জিনিসটা যে কোনও সাধারণ ধাতু দিয়ে তৈরি হতে পারে না, সেটা প্রথমেই বুঝেছিলাম। অনেক এক্সপেরিমেন্ট করার পর, ব্যাঙের ছাতা, সাপের খোলস আর কচ্ছপের ডিমের খোলা মিশিয়ে একটা কম্পাউন্ড তৈরি করেছি, এবং বেশ বুঝতে পারছি যে এবার হয় ট্যানট্রাম বোরোপ্যাক্সিনেট, না-হয় একুইয়স্ ভেলোসিলিকা মেশালেই ঠিক জিনিসটা পেয়ে যাব।” [৫] কিংবা, ‘প্রোফেসর শঙ্কু ও ঈজিপ্সীয় আতঙ্ক’ (১৩৭০ বাং)-তে তাঁর সর্বৌষধি ‘মিরাকিউরল’ ঠিক কেমন তার যৎসামান্য বিবরণ: “কী সব অদ্ভুত জিনিসের সংমিশ্রণে ওই ওষুধ তৈরি হয়েছে সেটা আর সামারটনকে বললামই না। বিশেষত গলদা চিংড়ির গোঁফের কথাটা বললে হয়তো তিনি আমাকে পাগলই ঠাউরে বসতেন।” [৬] ‘প্রোফেসর শঙ্কু ও ম্যাকাও’ (১৩৭১ বাং) গল্পে তিনি আবিষ্কার করেন অদৃশ্য হওয়ার ঔষধ। এর উপাদানগুলো কী ছিলো? “এক্সট্রাক্ট অফ গরগনাসস, প্যারানইয়াম পোটেনটেট, সোডিয়াম বাইকার্বনেট, বাবুইয়ের ডিম, গাঁদালের রস আর টিনচার আয়োডিন।” [৭] সন্ধানীদের জন্যে সত্যজিৎ ইশারা বা নিশানা রেখে গেছেন বৈকি। ‘স্বপ্নদ্বীপ’ (১৩৭৮ বাং) গল্পে তিনি অ্যান্টি-গ্রাভিটি যে-ধাতুটি তৈরি করেন তার উপাদান নিয়েও শঙ্কু দু’চার কথা বলেছেন, “পারা জোগাড় হয়েছে। তা ছাড়া তামার গুঁড়ো, ষাঁড়ের খুর, চক্‌মকি পাথর ইত্যাদি অন্যান্য যাবতীয় উপাদানও যথেষ্ট পরিমাণে সংগ্রহ রয়েছে।” [৮]

এমনকি, অলংকরণের ক্ষেত্রেও প্রভাবটা বেশ ভালোই বিদ্যমান। সুকুমারের আঁকা ছবিগুলো এবং সত্যজিতের প্রথম দিককার শঙ্কুর ছবিগুলো মিলিয়ে দেখলেই সেটা সুস্পষ্ট হবে। খ্যাপাটে বৈজ্ঞানিকমার্কা ধারার গল্পগুলোর সাথেই শঙ্কুর মিল ছিলো বেশি, যেগুলো কিশোর মনে বিজ্ঞানগন্ধী রোম্যান্টিকতা জাগায়। সেই গোপন ল্যাবরেটরি, সেই হঠাৎ করে আবিষ্কার-করা দুর্দান্ত ফর্মুলা, সেই একাকী নিষ্পরিবার নির্বান্ধব জীবনযাপন, সেই দেশেবিদেশে ঘুরে এ্যাডভেঞ্চারের মুখোমুখি-হওয়া, পাশাপাশি সর্বশাস্ত্রে বিশারদ, বহুভাষাপারঙ্গম (৬৯টি ভাষা) ও মূলত আবিষ্কারক-সব মিলিয়ে বাংলা সাহিত্যে চরিত্রটি যে বেশ অভিনব ও আকর্ষণীয়, সেটা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি সংক্ষেপে ও নিরাপদে বলা যেতে পারে যে, কিছুটা সত্যজিতের এবং তাঁর পূর্বপুরুষের আত্ম-প্রক্ষেপণও চরিত্রটিতে আছে। সত্যজিতের মতো শঙ্কুও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন; সত্যজিতের প্রিয় ইংরেজ বন্ধু নরম্যান ক্লেয়ার ও ডেভিড ম্যাককাচিয়নের মতো তাঁরও প্রিয় দুজন বন্ধুও দু’জন ইংরেজ, জেরেমি সন্ডার্স ও জন সামারভিল; সত্যজিতের মতো তিনিও আপাদমস্তক বাঙালি এবং টাকার গরম অগ্রাহ্য করেন এবং টাকার কাছে নিজের কাজ বিসর্জন দিতে তিনি নারাজ; সত্যজিতের মতো নিজের জায়গাতেই কম খরচে এবং যথাসম্ভব সরলভাবে ও দারুণ ফলদায়ী ভঙ্গিতে কাজ করতে তিনি অভ্যস্ত; সত্যজিতের মতোই তিনি নানান বিষয়ের নানান বই পড়াশুনো করেন, এবং সত্যজিতের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়ের মতো তিনি স্রেফ বই পড়েই নতুন বিষয় নিয়ে কাজ করতে লেগে যান।

গল্পগুলো আসলে কেমন?

হুমায়ূন আহমেদ তাঁর এক সাক্ষাৎকারে এগুলো কল্পবিজ্ঞান বা সায়েন্স ফিকশন গল্প বলতে রাজি হন নি। তাঁর মতে এগুলো সায়েন্স ফ্যান্টাসিগোছের। লীলা মজুমদারের এক সাক্ষাৎকারে তিনি অবশ্য কল্পবিজ্ঞান শব্দটা নিয়েই আপত্তি করেছেন। তাঁর মতে, “কল্পবিজ্ঞান সায়েন্স ফিক্সন নয়, ফ্যান্‌টাসটিক ফিক্‌সন বা ফ্যানটাজিয়া। বিজ্ঞান শব্দটা যুক্ত হলে ওই গল্পের ভেতরকার মশলা বদলে দিতে হবে।” [৯] পাশাপাশি তিনি আরো একটা কথা বলেছিলেন যা প্রণিধানযোগ্য। “বৈজ্ঞানিক হলে তার লেখায় সাহিত্যের গুণগুলো ফোটাতে হবে, আর সাহিত্যিক হলে তাকে বিজ্ঞানটা রপ্ত করতে হবে। ভাসা ভাসা জানলে চলবে না। তবেই লেখা উতরোবে। মনে রেখো লেখাটা সৃষ্টিশীল কাজ। তবে সায়েন্‌স ফিক্‌সন বিজ্ঞানীদেরই বেশি লেখা উচিত। তাহলে ফ্যানটাজিয়া হবে না।” [১০] তিনি অবশ্য নিজে ইংরেজি সাহিত্যের প্রথম শ্রেণীতে এম. এ. হয়েও কল্পবিজ্ঞান গল্প লিখেছিলেন এবং সেগুলো ‘কল্পবিজ্ঞান’-এর গল্পই বলতেন। তবে, তিনি আজিমভ, ক্লার্ক-এঁদেরকেই সত্যিকার অর্থে ‘সায়েন্‌স ফিক্‌সন’-এর লেখক হিসেবে ধরতেন। সত্যজিৎ নিয়ে কিছু না বললেও তাঁর ব্যাখ্যায় স্পষ্টই বোঝা যায় সত্যজিতের গল্পগুলো তাঁর হিসেবে ‘কল্পবিজ্ঞান’ বা ‘ফ্যানটাজিয়া’-এর স্তরেই সীমাবদ্ধ, ঠিক ‘সায়েন্‌স ফিক্‌সন’ সেগুলো হয়ে ওঠে নি।

এখানে মনে করিয়ে দিতে হয়, এই না-হয়ে ওঠার পেছনে সত্যজিতের জীবনের কিছু হাত আছে। উপেন্দ্রকিশোর বা সুকুমারের সাথে সত্যজিতের একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। তাঁরা যে-আর্থিক আনুকূল্য পেয়েছিলেন, সত্যজিৎ তা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত ছিলেন। সত্যজিতের পিতামহ বা পিতাকে গ্রাজুয়েশন করার পর চাকরি নিয়ে বা আর্থিক ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় নি, সত্যজিৎকে হয়েছিলো। উপেন্দ্রকিশোর বা সুকুমারের বিজ্ঞান নিয়ে তাত্ত্বিক পড়াশুনো ও হাতে-কলমে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিলো, যেটা সত্যজিতের ছিলো না কখনো। উপেন্দ্রকিশোর জমিদারির একটি অংশ বিক্রি করে ১৮৯৫ সালে ইউ. রায়ের ছাপাখানা কেনেন এবং বই পড়েই ছাপা নিয়ে গবেষণায় লেগে যান। এবিষয়ে সেসময়ের সেরা বিলিতি জার্নাল পেনরোজ এ্যানুয়ালে ১৮৯৭ থেকে ১৯২০-২১ অবধি তাঁর সাতটি প্রকাশনার খবর পাওয়া যায়। [১১] তাঁর ছাপাখানার কাজ রীতিমত আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়। তিনি হাফ-টোন রীতিতে নিজস্ব কিছু ধারণাও আবিষ্কার করেন কিন্তু কলকাতায় সেগুলো যন্ত্রপাতির অভাবে তিনি প্রমাণ করতে পারেন নি। তিনি ব্রিটেনে তাঁর সমপেশাদারদের কাছে সেগুলো প্রমাণ ও পেটেন্ট করার ব্যাপারে সাহায্য চান এবং তাঁদেরই একজন তাঁর ধারণাগুলো আত্মসাৎ করেন। [১২]

সুকুমার ১৯০৬ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্রেফ ঊনিশ বছর বয়েসে পদার্থ ও রসায়নে ডবল অনার্স করেন। [১৩] শঙ্কুর ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পেও দেখা যায় শঙ্কু ‘ষোলয় ফিজিক্স কেমিস্ট্রিতে ভালো অনার্স নিয়ে বিএসসি’ [১৪] পাস করেন। সুকুমার অতি অল্প বয়েসে, ১৯২২ সালে যখন তাঁর বয়েস মাত্র ৩৫, দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে রয়েল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির ফেলো হন। এবং দুঃখজনকভাবে পরের বৎসরেই তাঁর প্রয়াণ ঘটে। ১৯১১ সালের অক্টোবরে সুকুমার প্রিন্টিং ও ফটোগ্রাফিক টেকনিক নিয়ে পড়াশুনোর জন্যে বৃত্তি নিয়ে লন্ডন স্কুল অব ফোটো-এনগ্রেভিং এন্ড লিথোগ্রাফিতে এবং পরে ম্যানচেস্টারে স্কুল অব টেকনলজিতে ভর্তি হন। পেনরোজ এনুয়ালেও তাঁর নিজস্ব ধারণা ও পর্যবেক্ষণবাহী প্রবন্ধ ছাপা হয়। [১৫]

মোটকথা, বিজ্ঞান নিয়ে সত্যজিতের একাডেমিক ও ফলিত অভিজ্ঞতার অভাব তাঁর গল্পেও বেশ কিছুটা পরিস্ফুট। যদিও এককথায় সেগুলো ফ্যান্টাসি এবং লিটারেরি লাইসেন্স হিসেবে হজম করে নেওয়া যায়, তারপরও কিছু কিছু দুর্বল দিক নিয়ে এই লেখায় আলো-ফেলার চেষ্টা করা হবে।

সত্যজিৎ, স্পষ্টতই, এই চরিত্রটি সিরিজাকারে বিশাল করার চিন্তা বা চেষ্টা প্রথম থেকে করেন নি। একারণে তাঁর প্রথম দিককার শঙ্কুর সাথে পরবর্তী দিকের শঙ্কুর বেশ চারিত্রিক ও তথ্যের গরমিল চোখে পড়বেই। অবশ্য এতো ব্যস্ত থাকতেন তিনি তাঁর নিজস্ব চলচ্চিত্রনির্মাণ নিয়ে যে লেখালেখি মোটেও তাঁর সাময়িক আগ্রহের বাইরে কিছু ছিলো না, বরং অনেকটা নবপর্যায়ের সন্দেশের পাতা ভরানোর জন্যেই তিনি এসব করতেন। কিন্তু, কালক্রমে লেখালেখিই তাঁর জীবিকা অর্জনের একটা মুখ্য উৎস হয়ে ওঠে। এমনকি তিনি লেখক হিসেবে বেশ ভালোই পরিচিতি অর্জন করেন যা খুশবন্ত সিংয়ের এই সাক্ষ্যে জানা যায় যে, তিনি রবীন্দ্রনাথের চাইতে সত্যজিতের গল্পগুলো বেশি মানসম্মত বলে মনে করতেন।

তথ্যের গরমিল অবশ্য সত্যজিৎ যে শুধু এই চরিত্রের বেলায় ঘটিয়েছেন, তাই নয়। তাঁর সৃষ্ট সবচাইতে জনপ্রিয় চরিত্র ফেলুদার প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’-তে (ডিসেম্বর, ১৯৬৫) তিনি ফেলুদাকে দেখান তোপসের মাসতুতো ভাই হিসেবে [১৬] আবার তার পাঁচ বছর পর লেখা ‘গ্যাংটকে গণ্ডগোল’-এ ফেলুদা হয়ে যায় তোপসের খুড়তুতো ভাই। [১৭] এর একটা দায়সারা গোছের ব্যাখ্যা অবশ্য তিনি ‘অম্বর সেন অন্তর্ধান রহস্য’ গল্পে দিয়েছেন। ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’-তে দেখা যায় ফেলুদার বাবা বেঁচে আছেন, রাজেনবাবু নামে এক ভদ্রলোক ফেলুদাকে প্রশ্ন করছেন, “বাবা এসেছেন?” [১৮] আবার পরে অন্য গল্পে দেখা যায়, ছোটবেলায় মা-বাবা মারা যাওয়ায় ফেলুদা তাদের সাথেই থাকতো বলে তোপসে জানাচ্ছে।

শঙ্কুতেও এমনি খুচরো ভুলের অভাব নেই।

বৈশাখ, ১৩৭০-এ, অর্থাৎ, ১৯৬৩ সালের দিকে শঙ্কুর প্রথম বিদেশের এ্যাডভেঞ্চার কাহিনি ‘শঙ্কু ও ঈজিপ্সীয় আতঙ্ক’-তে দেখতে পাই শঙ্কুর অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার মিরাকিউরল ‘কী সব অদ্ভুত জিনিসের সংমিশ্রণে’ বানানো হয়েছে, তা তিনি নিজেও খুলে বলেন নি কেবল একটা ছাড়া এবং সেটি হচ্ছে ‘গলদা চিংড়ির গোঁফ’! [১৯] আবার সত্যজিতের লেখা শঙ্কুর শেষ পূর্ণাঙ্গ অভিযান ‘স্বর্ণপর্ণী’ (১৩৯৭ বাং)-তে দেখা যাচ্ছে এই ওষুধ তৈরি হয়েছে কাশীর এক সন্ন্যাসীর বাতলে দেওয়া দুর্গম প্রায় সাড়ে ছ’হাজার ফুট উঁচুতে পাওয়া ‘স্বর্ণপর্ণী’ বা ‘সোনেপাত্তি’ নামের এক গাছ থেকে। প্রায় সাতাশ বছরের দূরত্ব অবশ্যি।
‘নকুড়বাবু ও এল ডোরাডো’ (১৩৮৭ বাং) গল্পে তিনি জানাচ্ছেন শঙ্কুর হয়ে, “আমার তৈরি জিনিসগুলোর মধ্যে যেগুলো সবচেয়ে শক্তিশালী বা হিতসাধক-যেমন অ্যানাইহিলিন পিস্তল বা মিরাকিউরল ওষুধ বা অমনিস্কোপ বা মাইক্রোসোনোগ্রাফ, বা স্মৃতি উদ্ঘাটক যন্ত্র রিমেমব্রেন-এর কোনওটাই কারখানায় তৈরি করা যায় না। এগুলো সবই মানুষের হাতের কাজ, এবং সে মানুষও একটি বই আর দ্বিতীয় নেই। তিনি হলেন ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু।” [২০] নিশ্চয় তিনি ভুলে গেছেন যে, এর আগেই তিনি ‘শঙ্কুর শনির দশা’ (১৩৮৩ বাং) গল্পে তাঁর প্রিয় বন্ধু সামারভিলের জবানীতে জানিয়েছিলেন যে, “তোমার তৈরি অমনিস্কোপ, তোমার ধ্বন্বন্তরি ওষুধ মিরাকিউরল, তোমার লিঙ্গুয়াগ্রাফ, তোমার এয়ার কন্ডিশনিং পিল-প্রত্যেকটি জিনিসই গ্রোপিয়াসের মাথা থেকে বেরিয়েছিল। দুঃখের বিষয় প্রতি বারই সে জেনেছে যে তার ঠিক আগেই তুমি এগুলোর পেটেন্ট নিয়ে বসে আছ।” [২১] তার মানে শঙ্কু ঠিক একমেবাদ্বিতীয়ম নন। ‘প্রোফেসর শঙ্কু ও গোলক রহস্য’ (১৩৭২ বাং) গল্পে তিনি জানাচ্ছেন, “দুশো সাতাত্তর রকমের ব্যারাম সারে আমার তৈরি এই ‘অ্যানাইহিলিন’ ট্যাবলেটের গুণে।” [অ্যানাইহিলিন তো তাঁর অদৃশ্যাস্ত্রের নাম বলেই জানতাম, কী কেলো!] [২২] অথচ, ”মানরো দ্বীপের রহস্য’ (১৩৮৪ বাং)-তে শঙ্কুর গর্বিত উচ্চারণ, “আমার তৈরি এই ওষুধে এক সর্দি ছাড়া সব অসুখই এক দিনের মধ্যে সেরে যায়।” [২৩] আবার, ‘শঙ্কুর কঙ্গো অভিযান’ (১৩৮৮ বাং)-এ দেখছি এর বিশেষণ হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন ‘সর্বরোগনাশক’। ‘স্বর্ণপর্ণী’-তেও দেখছি তিনি সন্দেহ পোষণ করছেন এভাবে: “ক্যানসারে কি তা হলে মিরাকিউরল কাজ করে না? তা হলে তো ওষুধের নাম পালটাতে হবে!” [২৪] অবশ্য, কাজ করেছিলো ক্যান্সারে ওষুধটি এবং পাল্টাতে হয় নি নাম। হায় রে, এমন একটা ওষুধ যদি সত্যিই থাকতো পৃথিবীতে। বড় আফসোস হয়!

শঙ্কুর বিখ্যাত এবং দীর্ঘায়িত অভিযানগুলোর ভেতর একনামে পরিচিত ‘একশৃঙ্গ অভিযান’ (অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন, ১৩৮০)-এর শুরুতেই দেখা যাচ্ছে তিনি তাঁর লন্ডনবাসী ‘ভূতত্ত্ববিদ’ বন্ধু জেরেমি সন্ডার্সের কাছ থেকে চিঠি পাচ্ছেন। [২৫] ‘শঙ্কুর সুবর্ণ সুযোগ’ (বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, ১৩৮৪) গল্পেও তিনি ভূতত্ত্ববিদ। আবার ‘স্বর্ণপর্ণী’-তে দেখা যাচ্ছে সেই সন্ডার্সের সাথে তাঁর প্রথম পরিচয়ের বিবরণ আসছে এমনিভাবে: “সন্ডার্স দুবছর হল কেমব্রিজ থেকে বায়োলজি পাশ করে বেরিয়েছে।” [২৬] শঙ্কুর আরেক লন্ডনবাসী বন্ধু সামারভিলেরও উল্লেখ পাওয়া যায় অন্তত চারটি গল্পে, কিন্তু সন্ডার্স আর সামারভিলের একই শহরে থাকার পরেও তাঁদের মধ্যে কোন সম্পর্ক থাকার কথা জানা যায় না। যাহোক, বিজ্ঞানীরা সবাই যে অত্যন্ত সামাজিক হবেন এমন কোন কথা নেই, কিন্তু কথা হচ্ছে সামারভিল প্রথম যে-গল্পে দেখা দেন, সেই ‘আশ্চর্য প্রাণী’ (১৩৭৮ বাং)-তে তিনি বায়োকেমিস্ট [২৭] আর ‘হিপনোজেন’ (বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, ১৩৮৩ বাং)-এ তিনি হয়ে গেছেন “ইংলন্ডের পদার্থবিজ্ঞানী জন সামারভিল”। [২৮] ‘শঙ্কুর সুবর্ণ সুযোগ’-এ সন্ডার্সের পার্সিয়ান বেড়ালের কথা জানা যায়, যার নাম মুস্তাফা। সেখানে এ-ও জানা যায়, “সন্ডার্স বেড়াল-পাগল-কতকটা আমারই মতো।” [২৯] কিন্তু, সেই বেড়ালপ্রেমী সন্ডার্সের বাড়িতে যখন তিনি প্রথম বেড়াতে যান ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে, তখন সেই প্রেমের কোন চিহ্নই নেই। সেই গল্পে সন্ডার্সের মা-বাবা, এমনকি স্ত্রীর পরিচয়ও আছে। অথচ, ‘শঙ্কুর সুবর্ণ সুযোগ’-এ সেই পরিবারের একটি সদস্যেরও দেখা মেলে না। সন্ডার্সের বেড়ালপ্রীতি বোঝাতে গিয়ে শঙ্কু এমনও জানাচ্ছেন যে, “…মুস্তাফাকে ছেড়ে বেশি দিন থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়”, [৩০] অথচ সেই মুস্তাফাই আর একটি গল্পেও আসে নি। মারা-টারা গিয়েছিলো হবে, সবাই তো আর নিউটনের মতো অমর নয়! ওই দুটো গল্পেই সন্ডার্সের বাসা দেখানো হয় লন্ডনের হ্যাম্পস্টিডে, আবার ‘শঙ্কুর কঙ্গো অভিযান’ গল্পে দেখা যায় তিনি অতিথি হয়ে বিশ্রাম করছেন সন্ডার্সের সাসেক্সের বাড়িতে। [৩১]

এমনি ঠিকে ভুল হয়তো ঘাঁটলে আরো পাওয়া যাবে। কিন্তু, সেসব নিয়ে কথা না বলে বরং আসল কিছু আপত্তির দিকে যাওয়া যেতে পারে।

বিবর্তন নিয়ে তিনি যে মোটামুটি নিঃসন্দেহ ছিলেন, তার প্রমাণ তাঁর একাধিক গল্প। ‘আশ্চর্য প্রাণী’ (১৩৭৮ বাং) নামের গল্পে তিনি তাঁর এক পরিচিত বিজ্ঞানী কর্নেলিয়াস হামবোল্টের সাথে সুইজারল্যান্ডের সেন্ট গালেন শহরে একত্রে কাজ করেন পৃথিবীতে প্রাণসৃষ্টির এবং তার বিবর্তনের ধারা লক্ষ্য করার জন্যে। এই লক্ষ্যে তাঁরা প্রফেসর হামবোল্টের গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে পৃথিবীর আদিম পরিবেশ সৃষ্টি করেন ফ্লাস্কের ভেতর। পরে সেই পরিবেশ থেকে জন্ম নেয় জীবন্ত প্রাণী। তাঁদের এই পরীক্ষণ মনে করিয়ে দেয় শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৫২ সালে সম্পাদিত বিখ্যাত মিলার-উরে পরীক্ষণের কথা যা সেসময় বেশ আলোড়ন তুলেছিলো। অজৈব যৌগ থেকে এমিনো এসিড তথা জৈব যৌগসৃষ্টি যে সম্ভব, সেটা তাঁরা করে দেখিয়েছিলেন। কিন্তু, ওই অবধিই। সেসব জৈব যৌগে মোটেও ডিএনএনজাতীয় কিছু ছিলো না এবং জটিল অণুর সৃজনও সেখানে হয় নি। কিন্তু, শঙ্কুর গল্পে সেখানে প্রাণসৃজন ঘটে এবং সেই প্রাণ জলে জন্ম নিয়ে বিবর্তিত হতে হতে শেষাবধি মানুষে এবং তারও ভবিষ্যৎ প্রজন্মে পৌঁছে যায়। তা গল্পের গরু মঙ্গলে পৌঁছে যাক, কিন্তু এতে বিবর্তনের প্রতি তাঁর বিশ্বাস অন্ধ হলেও শেষ বিচারে পাঠকের কাছে যে ভুলভাল তথ্য পৌঁছে, সেটাও নেহাৎ মিছে নয়।

গল্পে দেখা যায়, জলজ প্রাণী থেকে তাঁদের ফ্লাস্কের ভেতরকার প্রাণী উভচর হয় এবং সে-থেকে সেটি রূপ নেয় ডাইনোসরে এবং সেটি তৃণভোজী ব্রন্টোসরাস। এরপর ফ্লাস্কের ভেতর কোন এক অলৌকিক প্রক্রিয়ায় শুরু হয়ে যায় তুষারযুগ এবং আবির্ভূত হয় স্তন্যপায়ী প্রাণী গণ্ডারের আদিম সংস্করণ Wolly Rhinoceros। এরপর আপনা থেকেই সেখানে তৈরি হয় সবুজ বন, সেখানে ঘোরাফেরা করে “আর একটি নতুন প্রাণী, যার নাম বানর। যাকে বলা হয় প্রাইমেট। যিনি হলেন মানুষের পূর্বপুরুষ।” [৩২] এরপর অনিবার্যভাবেই গল্পের দাবিতে সেখানে আসে মানুষ। সত্যজিতের ভাষায়, দেখা যাচ্ছে সেখানে আবির্ভূত “মানুষটি বয়সে বৃদ্ধ। পরনে কোট-প্যান্ট, মাথায় চুল নেই বললেই চলে, তবে দাড়ি-গোঁফ আছে, আর চোখে এক জোড়া সোনার চশমা। প্রশস্ত ললাট, চোখে তীক্ষ্ণ বুদ্ধির সঙ্গে মেশানো একটা শান্ত সংযত ভাব।” [৩৩] মানেটা সরল। “আমার তৈরি মানুষ দেখতে ঠিক আমারই মতন।” [৩৪]

এতেই শেষ নয়।

আবার নতুন প্রাণীর উদ্ভব ঘটলো এরপর। কেমন তার চেহারা?

“লম্বায় দু’ইঞ্চির বেশি নয়, তার মধ্যে মাথাটাই এক ইঞ্চি। শরীরে রামধনু রঙের পোশাকটা পা থেকে গলা অবধি গায়ের সঙ্গে সাঁটা। নাক কান ঠোঁট বলতে কিছুই নেই। চোখ দুটো জ্বলন্ত অথচ স্নিগ্ধ আগুনের ভাঁটা। মাথা জোড়া মসৃণ সোনালি টাক। হাত দুটো কনুইয়ের কাছে এসে শেষ হয়ে গেছে। তাতে আঙুল আছে কি না বোঝা যাচ্ছে না।” [৩৫] শুধু কি তাই? শঙ্কুকে হত্যার জন্যে ঘরে প্রফেসর হামবোল্টের গ্যাস সে উধাও করে দেয়। এমনকি ফ্লাস্কের ভেতর থেকে একটা তীব্র রশ্মি ছুঁড়ে সে প্রফেসর হামবোল্ট এবং তার কুকুর নেপোলিয়নকে ঘায়েল করে।

শেষমেষ প্রাণীটার রূপবদল এমত।

“স্বচ্ছ প্লাস্টিকের বদলে এখন দেখতে পেলাম বালি, আর সেই বালির উপর একটা চ্যাপটা আঙুরের মতো জিনিস নির্জীবভাবে পড়ে রয়েছে। কাছে গিয়ে দেখলাম, তার মধ্যে একটা মৃদু স্পন্দনের আভাস লক্ষ করা যাচ্ছে।” [৩৬]

শঙ্কুর প্রশ্ন: “এটাও কি মানুষের আরও পরের একটা অবস্থা? যে অবস্থায় মানুষের উত্তরপুরুষ একটা মাংসপিণ্ডের মতো মাটিতে পড়ে থাকবে, তার হাত থাকবে না পা থাকবে না, চলবার, কাজ করবার, চিন্তা করবার শক্তি থাকবে না, কেবল দুটি প্রকাণ্ড চোখ দিয়ে সে পৃথিবীর শেষ অবস্থাটা ক্লান্তভাবে চেয়ে চেয়ে দেখবে?” [৩৭]

এবং, এরপরেই সে বিলীন হয়ে যায়।

প্রশ্ন: বিবর্তন কি এমনিভাবে-
১) একটি প্রজাতির একটি মাত্র প্রাণীতে,
২) বদ্ধ সিস্টেমে,
৩) একই প্রজাতির প্রাণীর জীবদ্দশায় অন্য প্রজাতিতে রূপান্তরে,
৪) প্রজনন ছাড়া,
৫) এবং সবচাইতে বড় ব্যাপার, বিনা প্রাকৃতিক নির্বাচনে কাজ করে?

যদ্দূর জানা ছিলো বিবর্তন যৌন প্রজননের মাধ্যমে জিন রিকম্বনেশনের কারণে জিনসম্ভারে পরিবর্তনের বা জিন বা ক্রোমোজমের পরিব্যক্তির বা জিনের সঞ্চরণের বা অন্তরণের সাহায্যে জিনসম্ভারে প্রসারণের ফলে সংঘটিত পরিবর্তন। “তবে একটি জনপুঞ্জের মধ্যে শুধুমাত্র একটি বা দুটি জীবের জিনগত পরিবর্তনকেই বিবর্তন বলে ধরে নেওয়া যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না সমগ্র জনপুঞ্জের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়েছে এবং তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বলা যাবে না যে বিবর্তন ঘটছে।” [৩৮] আরো স্পষ্ট করে, “জেনেটিক্সের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বংশগত প্রকারণগুলোর প্রভেদমূলক প্রজননকে (differential reproduction) বলে প্রাকৃতিক নির্বাচন; আর প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো প্রজাতির জনসংখ্যায় জিন ফ্রিকোয়েন্সির পরিবর্তনকে বলে বিবর্তন।” [৩৯]

ওসব অবশ্য গল্পে আশা না করাই ভালো এবং সেখানে সবই সম্ভব। কী যাদু তাঁরা করে রেখেছিলেন জানি না ফ্লাস্কের ভেতর, পরিবেশও বিবর্তিত হয়ে যেতো দারুণ মিল রেখে। বিবর্তনের রূপকীয় উপস্থাপন হিসেবেই ধরে নেওয়া যায় গল্পটা। কিন্তু, হয়তো একটু বুঝে শুনে লিখলে এমনকি ল্যামার্কীয় বিবর্তনও ক্রমবিবর্তনের নামে চলে যেতো না। আমার এখনও মনে আছে, কৈশোরে যখন এই গল্প পড়ি, বন্ধুদের সাথে উত্তেজিতভাবে আলোচনা করেছিলাম যে, ওই অতিমানবীয় প্রজাতিটি তো আসলেই হওয়া সম্ভব! কারণ, একটা পর্যায়ে মানুষের মস্তিষ্কের কাজ বেড়ে যাবে, তাই মাথা যাবে বেড়ে আর হাতের বা অন্য ইন্দ্রিয়ের কাজ কমে যাবে বিধায় সেগুলো যাবে বিলুপ্ত হয়ে বা কমে। তখনও জানতাম না, সত্যজিৎ বিবর্তন নিয়ে সরলরৈখিক ভাবনা ভাবেন বিধায় আমাকেও পরিচালিত করছেন ল্যামার্কীয় ভ্রান্তধারায়। প্রাকৃতিক নির্বাচন নিয়ে কতো কমই যে জানতাম বা বুঝতাম।

বিবর্তন তো কোন পার্থেনোজেনেসিসনির্ভর মির‍্যাকল নয়, এটা নিতান্তই প্রাকৃতিক নির্বাচনের একটা প্রাকৃতিক পদ্ধতি যা পার্থিব এবং প্রয়োজনীয়। এটা সরলরেখায় চলে না, এটা একই প্রজাতির ভেতর আন্তঃপ্রজাতির সংগ্রামের মাধ্যমেই নতুন প্রজাতির জন্মের কথা বলে, এবং সরাসরি ব্রন্টোসরাস থেকে প্রাইমেট জন্ম নিয়েছে, এরকম মনে করাটা বিবর্তনের দিক থেকে ঠিক নাও হতে পারে, আর বিবর্তনের ফলে কোট-প্যান্ট বা চশমা বা রামধনু রঙের পোশাক বদ্ধ কোন ফ্লাস্কের ভেতর পাওয়া না যাওয়ার সমূহ কারণ আছে। অবশ্য কিশোরগল্পে হয়তো তিনি প্রজননের প্রয়োজনীয়তা বা নগ্নগাত্র কাউকে আনতে চান নি বোধগম্য কারণেই, কিন্তু অতিসরলীকরণ যে বোঝার ভুলও তৈরি করতে পারে সেটা তাঁর বিবেচনায়, দেখা যাচ্ছে, আসেই নি।

বিবর্তনের প্রসঙ্গ এসেছে আরো দুটি গল্পে।

‘আশ্চর্জন্তু’ (১৩৯০ বাং) এবং ‘শঙ্কু ও আদিম মানুষ’ (১৩৯৩ বাং) গল্পের প্রথমটিতে এক বানরবৎ প্রজাতির কথা বলা আছে যেটা মুহূর্তে বৃহৎ বিবর্তন (ম্যাক্রোইভোলিউশন) ঘটায় এবং দ্বিতীয়টিতে এমন এক অষুধের কথা বলা আছে যেটি “ইনজেক্ট করলে মানুষ বিবর্তনের পথে পিছিয়ে যেতো”। [৪০]

প্রথম গল্পে প্রাণীটি পরিবেশের সাথে মিলিয়ে আত্মরক্ষার জন্যে কখনো শ্ব-দন্ত গজিয়ে নেয় আর তার নখও যায় দরকারমতো বেড়ে, আবার সেটা মিলিয়েও যায়; [৪১] শীতের দেশে তাকে নিয়ে যাওয়া হলে সে ঘণ্টাখানেকের ভেতরেই গজিয়ে নেয় লোম; [৪২] বরফের ভেতরে সে পুরোপুরি সাদা হয়ে যায় রং বদলে, এমনকি পাল্টে যায় তার চোখের মণিও; [৪৩] এমনকি ‘ক্রমবিবর্তনের অমোঘ নিয়ম লঙ্ঘন করে’ স্থলচর চতুষ্পদটি ডানা গজিয়ে পালায়। [৪৪]

বিবর্তনের স্বাভাবিক ধীরগতির ব্যাপারটা বাদ দিলেও কিছু ব্যাপারে নজর দেওয়া যেতে পারে। বৃহৎ বিবর্তনের ছড়াছড়ি নিয়েও কিছু আপাতত বলছি না। কিন্তু, এই লাইনগুলো দেখি: “তার বুড়োআঙুল কাজ করে মানুষ বা বাঁদরের মতোই। ডাল আঁকড়ে ধরে গাছে চড়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে হবে বলে বানরশ্রেণীর জানোয়ারের এই কেজো বুড়ো আঙুলের উদ্ভব হয়েছিল।” [৪৫]

ডাল আঁকড়ে ধরার সুবিধের জন্যে বুড়ো আঙুলের উদ্ভব হয়েছিলো? সিম্পলি জিরাফের ল্যামার্কীয় উদাহরণ যে! তার চোখের মণি সাদা হয়ে যাওয়াটাও প্রমাণ করে সত্যজিতের বিজ্ঞানসম্বন্ধীয় দুর্বলতা। চোখের মণি সাদা হয়ে গেলে এই এপজাতীয় প্রাণীটার অন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন গতি থাকে না, কারণ মণি বা চোখের লেন্স অনচ্ছ হয় চোখে ছানি পড়লে আর একদম সাদা হয়ে গেলে কী যে হবে! অবশ্য সেটা হতে পারে কর্নিয়া সাদা হয়ে গেলেও, যেটার বেলায়ও রেটিনায় ছবি পৌঁছানোর কথা নয়। মোদ্দাকথা, যে-প্রাণীর “চোখের মণি…ধবধবে সাদা”, তার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আক্ষরিক অর্থেই অন্ধকার।

ল্যামার্কীয় উদাহরণ অবশ্য আরো নানা জায়গাতেই বিদ্যমান।

কিছু আগেই দেওয়া হয়েছে। আবারো দেখাই, এবার ‘শঙ্কু ও আদিম মানব’ গল্প থেকে: “আসলে আমি একটা ড্রাগ প্রস্তুতের ব্যাপারে একটা পরীক্ষা চালাচ্ছিলাম। এই ড্রাগ তৈরি হলে চতুর্দিকে সাড়া পড়ে যেত। এর সাহায্যে একজন মানুষের ক্রমবিবর্তনের মাত্রা লক্ষগুণ বাড়িয়ে দেওয়া যায়। অর্থাৎ একজন মানুষকে এই ড্রাগ ইনজেক্ট করলে পাঁচ মিনিটের ভেতর তার মধ্যে দশ হাজার বছর বিবর্তনের চেহারা দেখা যেত।” [৪৬] এবং “সে শয়তানের দাওয়াই তৈরি করছিলো। ওটা ইনজেক্ট করলে মানুষ বিবর্তনের পথে পিছিয়ে যেত।” [৪৭] অর্থাৎ, বিবর্তন সরলরেখায় চলে। এটা ল্যামার্কেরই মতবাদ।

ল্যামার্কীয় বিবর্তনের মতবাদের সাথে ডারউইনের পার্থক্য কোথায় আসলে?

“ল্যামার্কীয় দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী পরিবেশের দাবি মেটানোর উদ্দেশ্যে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বা প্রয়োজন থেকে জীবের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন বা বিবর্তন ঘটে। এই দাকি মেটানোর জন্য কোনো জীব যখন কোনো এক বিশেষ অঙ্গের অধিকতর ব্যবহার শুরু করে তার ফলেই একসময় নতুন বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণের উদ্ভব ঘটে। এভাবে ক্রমাগত ব্যবহার বা অব্যবহার থেকে অঙ্গের উৎপত্তি বা বিলুপ্তি ঘটে যেতে পারে।…ধীর প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন হতে হতে একসময় নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। অর্থাৎ বিবর্তন ঘটে সরলরেখায়।” [৪৮]
পক্ষান্তরে, “মেন্ডেলীয় আধুনিক বংশগতিবিদ্যা এবং ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী ইচ্ছা, প্রয়োজন, চাহিদা বা জীবিতকালে অর্জিত বৈশিষ্ট্যের কোন মূল্য নেই। জেনেটিকভাবে বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান না থাকলে তা বিবর্তনে কোনো ভূমিকা রাখবে না। বিবর্তন সরলরেখায় ঘটে না, ঝোপঝাড়ের মতো আঁকাবাঁকা পথে ঘটে।” [৪৯]

পাঠক নিজেই এবার বিচার করতে পারেন সত্যজিৎ ঠিক কোন ধরনের বিবর্তনের কথা বলছিলেন।

‘শঙ্কু ও আদিম মানব’ গল্পে একটি তথ্যভ্রান্তিও আছে। আদিমতম মানবকে তিনি বলছেন ‘হোমো অ্যাফারেনসিস’, অবশ্য ভুল করে দু’জায়গায় সেটা অ্যাপারেনসিস হয়ে গেছে বোধহয় ছাপাখানার ভূতের বদান্যতায়। যাহোক, বাস্তবতা হচ্ছে অ্যাফারেনসিস প্রজাতির গণ ‘হোমো’ নয়, ‘অস্ট্রেলোপিথেকাস’। অবশ্য এটার আগে ‘আর্ডিপিথেকাস রামিডাস’ ও ‘অস্ট্রেলোপিথেকাস এনামেনসিস’-এর আবির্ভাব হয় বলেই বিজ্ঞানীরা মনে করে থাকেন।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

কৃতজ্ঞতা:

[১]. স্টোরিজ, সেকার এন্ড ওয়ারবার্গ, লন্ডন, ইউ কে, ১৯৮৭, পৃ: X।
[২]. সত্যজিৎ রায়-দ্য ইনার আই, এন্ড্রু রবিনসন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, নিউ দিল্লি, ভারত (প্রথম ভারতীয় সংস্করণ), ২০০৪, পৃ. ৩০০।
[৩]. সুকুমার রচনাসমগ্র (অখণ্ড সংস্করণ), সুকুমার রায়, ক্যাবকো, বাংলাদেশ, ১৯৯৮, পৃ. ১৪৬।
[৪]. ঐ, পৃ. ১৪৭
[৫]. শঙ্কুসমগ্র, সত্যজিৎ রায়, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ভারত, ২০০৯, পৃ. ৭
[৬]. ঐ, পৃ. ২২
[৭]. ঐ, পৃ. ৪৫
[৮]. ঐ, পৃ. ১৮৯
[৯]. ‘লীলাদি: বিজ্ঞানভিত্তিক গল্পের কথা প্রসঙ্গে-জীবন সর্দার’, অন্তর্ভুক্ত হয়েছে: লীলা মজুমদার, সম্পাদনা: তাপস ভৌমিক, কোরক, কলকাতা, ভারত, ২০০৭, পৃ. ১১৬
[১০]. ঐ, পৃ. ১১৯
[১১]. সত্যজিৎ রায়-দ্য ইনার আই, এন্ড্রু রবিনসন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, নিউ দিল্লি, ভারত (প্রথম ভারতীয় সংস্করণ), ২০০৪, পৃ. ১৮
[১২]. ঐ, পৃ. ১৯
[১৩]. ঐ, পৃ. ২১
[১৪]. শঙ্কুসমগ্র, সত্যজিৎ রায়, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ভারত, ২০০৯, পৃ. ৬০৭
[১৫]. সত্যজিৎ রায়-দ্য ইনার আই, এন্ড্রু রবিনসন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, নিউ দিল্লি, ভারত (প্রথম ভারতীয় সংস্করণ), ২০০৪, পৃ. ২২
[১৬]. পাহাড়ে ফেলুদা, সত্যজিৎ রায়, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ভারত, ২০০১, পৃ. ২৪
[১৭]. ঐ, পৃ. ৪৮
[১৮]. ঐ, পৃ. ১৬
[১৯]. শঙ্কুসমগ্র, সত্যজিৎ রায়, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ভারত, ২০০৯, পৃ. ২২
[২০]. ঐ, পৃ. ৪১৫
[২১]. ঐ, পৃ. ৩৩১
[২২]. ঐ, পৃ. ৬৮
[২৩]. ঐ, পৃ. ৩৬৮
[২৪]. ঐ, পৃ. ৬১৪
[২৫]. ঐ, পৃ. ২৫১
[২৬]. ঐ, পৃ. ৬১৩
[২৭]. ঐ, পৃ. ২১০
[২৮]. ঐ, পৃ. ৩০৩
[২৯]. ঐ, পৃ. ৩৪৬
[৩০]. ঐ, পৃ. ৩৪৮
[৩১]. ঐ, পৃ. ৪৪২
[৩২]. ঐ, পৃ. ২১৪
[৩৩]. ঐ, পৃ. ২১৭
[৩৪]. ঐ, পৃ. ২১৭
[৩৫]. ঐ, পৃ. ২১৮
[৩৬]. ঐ, পৃ. ২২০
[৩৭]. ঐ, পৃ. ২২০
[৩৮]. বিবর্তনের পথ ধরে, বন্যা আহমেদ, অবসর, ঢাকা, বাংলাদেশ, ২০০৮ (দ্বিতীয় সং.), পৃ. ৪২
[৩৯]. ঐ, পৃ. ৪২
[৪০]. শঙ্কুসমগ্র, সত্যজিৎ রায়, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ভারত, ২০০৯, পৃ. ৫৪২
[৪১]. ঐ, পৃ. ৫০১
[৪২]. ঐ, পৃ. ৫০২
[৪৩]. ঐ, পৃ. ৫০৮
[৪৪]. ঐ, পৃ. ৫১২-৫১৩
[৪৫]. ঐ, পৃ. ৪৯৮
[৪৬]. ঐ, পৃ. ৫৩২
[৪৭]. ঐ, পৃ. ৫৪২
[৪৮]. ঐ, পৃ. ৩৯
[৪৯]. ঐ, পৃ. ৩৯