ইসলাম দাবী করে তার আবির্ভাব হলো ইহুদি, খৃষ্টান এদের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সংস্করন। যুক্তির খাতিরে আমরা সেটাকে যদি সত্য বলে গ্রহণ করি তাহলে কি দেখা যায়? পূর্ববর্তী নবীসমূহ যেমন- ইব্রাহিম, মূসা, ইসা তাঁদের সাথে যখন কোন ফিরিস্তা দেখা করত তখনও কি তারা দৈহিক কষ্ট অনুভব করত বা ভয় পেতেন? তোরাহ ও গসপেলে কোথাও তেমন কোন নজীর পাওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, তাদের কিতাব সমূহে লেখা আছে উক্ত তিনজন নবীর সাথেই আল্লাহ সরাসরি দেখা করত এ দুনিয়াতে এসেই , কথা বলত, আদেশ, নির্দেশ উপদেশ দিত। অথচ সর্বশেষ ও সর্ব শ্রেষ্ট নবী, যাকে সৃষ্টি না করলে দুনিয়া সৃষ্টি করত না আল্লাহ তাঁর সাথে কখনই আল্লাহ দুনিয়াতে দেখা করে নি। শুধু তাই নয়, যখন প্রথম জিব্রাইল ফিরিস্তা তাঁর সাথে হেরা গুহায় দেখা করে, তখন মোহাম্মদ ভীষণ ভয়ে ভীত হয়ে পড়েন, তার চাইতে বিস্ময়কর ব্যপার হলো- প্রথম সাক্ষাতে জিব্রাইল পরিচয়ই দেয় নি সে কে , কোথা থেকে এসেছে, কে তাকে পাঠিয়েছে। প্রথম সাক্ষাতের বিবরণ পাওয়া যায় নিম্নের হাদিসটি থেকে-

আয়শা বর্ণিত- হুজুরে পাক এর নিকট প্রথমে যে ওহী আসত তা ছিল নিদ্রার মাঝে তার সত্য স্বপ্ন হিসাবে আসত, অত:পর তা দিবালোকের মত প্রকাশ পেত। এভাবে কিছুদিন চলবার পর তাঁর নিকট নির্জন যায়গা প্রিয় হয়ে উঠল, তাই তিনি হেরা গুহায় নির্জনে বসবাস করতে লাগলেন। তিনি তাঁর সাথে কিছু খাবার নিয়ে যেতেন , তা ফুরিয়ে গেলে আবার খাদিজার নিকট ফিরে আসতেন আবার খাবার নিতে, এবং এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন তাঁর নিকট সত্য প্রকাশিত হলো যখন তিনি হেরা গুহায় ছিলেন। ফিরিস্তা তার নিকট আসল, তাকে পড়তে বলল। নবী উত্তর দিলেন- আমি পড়তে পারি না। নবী আরও বললেন- ফেরেস্তা আমাকে সজোরে আলিঙ্গন করলেন তাতে আমার ভীষণ কষ্ট বোধ হচ্ছিল। সে তখন আমাকে ছেড়ে দিল এবং আবার আমাকে পড়তে বলল, আমি আবার উত্তর দিলাম- আমি তো পড়তে পারি না। আবার সে আমাকে দ্বিতীয়বারের মত চেপে ধরল যা ভীষণ কষ্টদায়ক ছিল, তারপর ছেড়ে দিল এবং বলল- পড়, তোমার প্রভুর নামে যিনি মহিমাময় ( তখন সূরা-৯৬: আলাক, ০১-০৩ নাজিল হলো)। হুজুরে পাক উক্ত আয়াতসমূহ হৃদয়ঙ্গম করত: বাড়ী ফিরে আসলেন ও তাঁর প্রচন্ড হৃদ কম্পন হচ্ছিল। তারপর তিনি খাদিজার নিকট গমন করলেন ও বললেন- আমাকে আবৃত কর, আবৃত কর। তাঁরা তাঁকে ততক্ষন পর্যন্ত আবৃত করে রাখলেন যতক্ষন পর্যন্ত না তাঁর ভয় দুর হলো এবং এর পর তিনি সমস্ত বিষয় বিবৃত করলেন যা ঘটেছিল এবং বললেন- আমার আশংকা আমার উপর কিছু ভর করেছে। খাদিজা উত্তর দিলেন- কখনো নয়, আল্লাহর কসম, আল্লাহ কখনো আপনাকে অমর্যাদা করবেন না। আপনি বরং দুস্থ লোকজন ও গরীব আত্মীয় স্বজনদের সেবা যত্ন করুন। অত:পর খাদিজা মোহাম্মদকে সাথে নিয়ে তার পিতৃব্য পূত্র অরাকা ইবনে নওফেলের নিকট নিয়ে গেলেন। তিনি অন্ধকার যুগের সময় খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইব্রানী ভাষায় ইঞ্জিল লিখতেন। তিনি এত বৃদ্ধ ছিলেন যে তিনি ঠিকমতো দেখতে পেতেন না। খাদিজা তাকে বললেন- হে পিতৃব্যপূত্র ! তোমার ভ্রাতুষ্পূত্রের কথা শোনো। অরাকা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন- হে ভ্রাতুষ্পূত্র কি দেখেছ? হুজুর সমস্ত ঘটনা তার নিকট বর্ণনা করলেন। তিনি সব শুনে তাঁকে বললেন, ইনি সেই রহস্যময় জিব্রাইল ফিরিস্তা যাকে আল্লাহ হযরত মূসার নিকট পাঠিয়েছিলেন।…..কিছুদিন পর অরাকা মারা গেলেন ও ওহী আসাও কিছুদিন বন্দ রইল।
ইবনে শেহাব যহরী বলেন, আবু সালমাহ ইবনে আবদুর রহমান বলেছেন যে , জাবের ইবনে আবদুল্লাহ ওহী বন্দ থাককালীন অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, হুযুরে পাক এশাদ করেছেন, একদা আমি পথ চলবার কালে উর্ধ্ব দিকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন আমি উর্ধ্ব দিকে তাকিয়ে দেখলাম , হেরা গুহায় যিনি আমার নিকট এসছিলেন , সেই ফিরিস্তা আসমান ও যমিনের মাঝখানে এক কুরসীতে বসে আছেন। এতে আমি ভীত হয়ে বাড়ী ফিরে গেলাম এবং বললাম আমাকে চাদর দিয়ে ঢাক, আমাকে চাদর দিয়ে ঢাক। তখন আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলেন- হে চাদরাবৃত ব্যাক্তি! ওঠ আর তুমি সতর্ক কর, আর তোমা প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর, তোমার কাপড় পবিত্র কর, অপবিত্রতা পরিহার কর। (৭৪:০১-০৫ আয়াত নাজিল হয়)। বুখারী, বই-১, হাদিস-৩

উপরোক্ত ঘটনা যদি মোহাম্মদ সম্পর্কিত না হয়ে সাধারণ কোন মানুষ সম্পর্কে হতো, তাহলে নির্ঘাত ডাক্তাররা বর্তমান যুগে তাকে মানসিক রোগী হিসাবে আখ্যায়িত করত। যাহোক, উপরের হাদিস থেকে কতকগুলি জিনিস খুব পরিস্কার। মাঝে মাঝেই মোহাম্মদ হ্যালুসিনেশনে আক্রান্ত হতেন ও নানারকম ছবি তার কাছে উদ্ভাসিত হয়ে উঠত যাকে বলা হচ্ছে সত্য স্বপ্ন।জিব্রাইল ফিরিস্তাকে তিনি চিনতে পারেন নি। ফিরিস্তাও তাকে বলেনি সে কে, কেন এসেছে। ফিরিস্তার আলিঙ্গনে তাঁর প্রচন্ড কষ্ট হয়। তিনি ভীষণ ভয় পেয়েছিলেন, মনে হয়েছিল কোন অশুভ আত্মা তার ওপর ভর করেছে। এতটাই ভয় পেয়েছিলেন যে শরীরে প্রচন্ড জ্বর এসে গেছিল, হার্ট বিট বেড়ে গেছিল, শরীর থর থর করে কাপছিল যার জন্য তার গায় কম্বল জড়াতে হয়েছিল। এটা হিস্টিরিয়া রোগের প্রকট লক্ষন। জিব্রাইল কিন্তু বলে নি যে তাকে আল্লাহ পাঠিয়েছে। তবুও খাদিজা কিন্তু বলছে- আল্লাহর কসম , আল্লাহ আপনাকে কখনো অমর্যাদা করবেন না। প্রশ্ন হলো- তাহলে কোন্ আল্লাহর কসম দিচ্ছিল খাদিজা? কারন তখনও মোহাম্মদ জানেন না যে জিব্রাইলের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর নিকট ওহী পাঠিয়েছে এবং তিনি তখনও ইসলাম প্রচার শুরু করেন নি। সে যে একজন ফেরেস্তা, তাও সে বলেনি মোহাম্মদের কাছে,এমন কি মোহাম্মদও তা বুঝতে পারে নি। কখন মোহাম্মদ বুঝতে পারলেন? যখন অরাকার কাছে তাকে নিয়ে যাওয়া হলো। অরাকাই তাকে জানাল হেরা গুহায় দেখা দেয়া সেই অদ্ভুত প্রানী ছিল জিব্রাইল। ইতোপূর্বেকার কোন নবী কোন ফিরিস্তার সাথে সাক্ষাত হওয়ার সময়ে কোন রকম ভীতিকর অনুভূতির সম্মুখীন হয়েছেন বা তাঁরা আশুভ আত্মার দ্বারা আক্রান্ত বলে কখনো মনে করেছেন এমন কোন বর্ণনা বাইবেলে পাওয়া যায় না। অথচ সর্বশ্রেষ্ট নবী, নবীদের নবী, আল্লাহর দোস্ত সামান্য এক জিব্রাইল ফিরিস্তার সাথে দেখা হওয়ার সময়ে ভীষণ ভীত হয়ে পড়লেন ও মনে করলেন যে তিনি কোন অশুভ আত্মার দ্বারা আক্রান্ত। বিষয়টি নবীদের নবী মোহাম্মদের জন্য ভীষণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

এখন নিচের হাদিস টি পড়া যাক-
আয়শা থেকে বর্ণিত, আল হারিথ বিন হিসাম আল্লাহর নবীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে নবী ! কিভাবে আল্লাহর ওহী আপনার নিকট আসত? তিনি উত্তর দিলেন- মাঝে মাঝে ঘণ্টা ধ্বনির মত শব্দ শুনতে পেতাম, এরপর ওহী নাজিল হতো এবং এটা ছিল সবচেয়ে কঠিন কষ্টদায়ক, এরকম অবস্থা পার হলে যা আমার কাছে নাজিল হতো আমি তা আত্মস্থ করে নিতাম। মাঝে মাঝে ফিরিস্তা আমার কাছে মানুষ রূপে আসত , আমার সাথে কথা বলত, এবং আমি আত্মস্ত করে নিতাম যা আমার নিকট বলা হতো।
আয়শা বলেন, আমি নবীকে দারুণ শীতের দিনেও দেখতাম ওহী আসার পর তাঁর কপাল দিয়ে ঘাম নির্গত হতো। বুখারী, বই-১, হাদিস-২

উপরের হাদিসে দুটি ঘটনা দেখা যাচ্ছে- এক. ঘন্টাধ্বনির মত আওয়াজ শোনা ও ফিরিস্তাকে মানুষ রূপে দেখতে পাওয়া এবং দুই. দারুন শীতের মধ্যেও কপালে ঘাম ঝরা ও কষ্ট অনুভব করা। যদি উপরোক্ত হাদিস থেকে ওহী নাজিলের বিষয়টি বাদ দেয়া যায় তাহলে বিষয়টা দাড়াচ্ছে- মোহাম্মদ বাস্তব নয় এমন শব্দ শুনতে ও ব্যাক্তিকে দেখতে পেতেন এবং এর জন্যে শারিরীক কষ্ট অনুভব করতেন। দুটি বিষয়ই বর্তমানে আধুনিক মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টি দিয়ে ব্যখ্যা করা যায়। তাঁর মাঝে মাঝে হ্যলুসিনেশন বা দৃষ্টি বিভ্রম হতো ও তার ফলে তাঁর শারিরিক কষ্ট হতো, যা এক রকম হিস্টিরিয়া রোগের লক্ষন। এ ধরণের কোন লক্ষন বর্তমান কালে কারো ঘটলে আমরা তাকে সরাসরি মনোবিজ্ঞানীদের কাছে নিয়ে যাই। এসব লক্ষনে আক্রান্ত অনেক ব্যক্তিকেই আমরা অনেক সময় আমাদের আশে পাশেই দেখতে পাই আর দেখতে পাই তারা নানা রকম প্রলাপ বকছে, শারিরীক কষ্ট পাচ্ছে, তার চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে, কপাল থেকে ঘাম নির্গত হচ্ছে। এসময় তারা এমন ভাবেও কথা বলে যেন ভিন্ন কোন এক ব্যক্তি তার মধ্য থেকে কথা বলছে। এটাকে তাদের অলৌকিক দর্শন হিসাবেও আখ্যা দেয়া যায়। তারা কিন্তু তাদের দর্শন সম্পর্কে একশত ভাগ নিশ্চিত থাকে কিন্তু পাশের কাউকে তা দেখাতে পারে না । এমন অবস্থায় অনেকেই হয়ত বেশ আজে বাজে কথা বলে এসময় কিন্তু অনেকেই আবার বেশ দার্শনিক ভঙ্গিতে জ্ঞানীর মত কথাও বলে। মোহাম্মদ যে কাজটি করেছেন তা হলো- তাঁর এ হ্যালুসিনেশন এর মাধ্যমে যে দর্শন পেয়েছিলেন তার সাথে ধর্মকে জুড়ে দিয়েছেন। যে কারনে তিনি কখনই তাঁর কাছে বহুবার আসা যাওয়া জিব্রাইল ফেরেস্তাকে দ্বিতীয় কাউকে দেখাতে পারেন নি। একবার আয়শা তাঁকে অনেকটা চ্যলেঞ্জের সাথেই দাবী জানায় ও বলে যে – সে তো কোন ফেরেস্তাকে দেখতে পায় না। জিব্রাইলকে দেখা তো দুরের কথা, সে যখন বানী নিয়ে এসে মোহাম্মদের কাছে বলত- তখনও কেউ তার কোন আওয়াজ শুনতে পেত না। এমনও ঘটেছে, মোহাম্মদ তাঁর সঙ্গী সাথী নিয়ে কোথাও চলেছেন, পথে হঠাৎ করে তাঁর ওহী নাজিল শুরু হলো, তার চোখ মুখ লাল হয়ে গেল, তাড়াতাড়ি সাহাবীরা তাঁর পাশে কাপড় দিয়ে ঘেরা দিয়ে দিল, জিব্রাইল এসে কথা বলে যাচ্ছে অথচ না দেখতে পাচ্ছে কেউ জিব্রাইলকে না তার আওয়াজ। এ বিষয়ে কোরাণ বা হাদিস লেখকরা বেশ বোকামীর পরিচয় দিয়েছে। কারণ, বাস্তবে মোহাম্মদ কোন রকম অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে না পারলেও দেখা যায় হাদিসে নানা রকম অলৌকিক ঘটনার সমাহার কিন্ত তারা কখনই জিব্রাইলকে কেউ দেখেছে বা তার কথা শুনেছে এমন কথা লিখে রেখে যায় নি। বাইবেল লেখকরা এদের চাইতে অনেক বেশী চালাক ছিল বলে মনে হয়। কারন তারা তাদের কিতাবে মূসা বা ঈসার বহুবিধ অলৌকিক ঘটনার বর্ণনা ছাড়াও ফিরিস্তারা যে অহরহ সেসব নবীর কাছে আসত সেসব বর্ণনাও লিখে রেখেছে। এ ঘটনা দৃষ্টে মনে করা যেতে পারে যে, আরবের লোকজনরা সেসময় প্যলেষ্টাইনের লোকদের চেয়ে অনেক বেশী সহজ সরল ছিল। তারা যে বাস্তবে আসলেই সহজ সরল ছিল তা কোরাণ ও হাদিস পাঠ করলে সহজেই বোঝা যায়। অনাড়ম্বর ও সরল ভাষায় লেখা ওসব কিতাব। অনাবশ্যক জটিলতা নেই তাতে কোন। কোরাণ সম্পর্কে যে সব অতিরঞ্জিত কথা শুনা যায়, যেমন- কোরান সুন্দর ছন্দ, প্রাঞ্জল ভাষা, চমৎকার ধারাবাহিকতা এসব আছে কোরাণে। কিন্তু আসলে কি তাই?এখানে ভাষা একটা বড় সমস্যা। অনারবীদের কাছে কোরাণের সৌন্দর্য আসলে কিছুই ধরা পড়ে না, তাই পূর্ব বিশ্বাস থেকে তাদের কাছে কোরাণ কে অতুলনীয় মনে হয় ।কিন্তু আরবী ভাষাটা জানলে তেমন মনে হবে না কিছুতেই। এছাড়া সুর করে কোরান তেলাওয়াত অনেকের কাছে শ্রুতি মধুর মনে হয়, কিন্তু সেটা কোরাণের জন্য নয়, এটার কারন আরবী ভাষায় সুরেলা একটা ভাব আছে। কোরাণের বানী ছাড়াও আরবী ভাষার কোন গালাগালিও যদি সুর করে তেলাওয়াত করা হয় তা অনারবীদের কাছে হুবহু কোরাণ তেলাওয়াতের মতই সুমধুর মনে হবে ও মনে হবে সেগুলো কোরাণের বানী। কোরাণ যে আসলেই খুব সহজ সরল ভাষায় রচণা করা হয়েছে তার ঘোষণা খোদ কোরাণেই আছে বহুবার, যেমন-

আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?সূরা-কামার-৫৪: ১৭
আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? সূরা-কামার-৫৪:২২
আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? সূরা-কামার-৫৪:৩২
আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? সূরা-কামার-৫৪:৪০

তবে এক আরবী জানা মৌলভীকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল মূল আয়াতে যিকির শব্দটা থাকাতে এর অর্থ হবে- আমি কোরাণকে মনে রাখার জন্য সহজ করে দিয়েছি। তখন তাকে দেখানো হলো নীচের আয়াত-

আল্লাহ তোমাদের জন্যে কাজের কথা স্পষ্ট করে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।কুরাণ, ২৪: ১৮

এবার আর কোন সঠিক উত্তর পাওয়া গেল না। তখন মৌলভী বলল যে উক্ত আয়াতের অর্থ সব সূরা বা আয়াতের জন্য প্রজোয্য নয়। তাকে প্রশ্ন করা হলো-সব সূরা বা আয়াতের জন্য প্রজোয্য না হলে আল্লাহ একথা বলতে গেল কেন? এরকম হলে তো আল্লাহ বলতে পারত- আল্লাহ তোমাদের জন্য কিছু রহস্যময় বিষয় ছাড়া বাকি সব কাজের কথা স্পষ্ট করে বর্ণনা করেন। তা ছাড়া তাকে প্রশ্ন করা হলো- কোন কোন সূরা বা আয়াতের জন্য প্রজোয্য হবে? সে কিছু আর বলতে পারল না তবে বলল- সেটা একমাত্র আল্লাহ জানেন। পরিশেষে বলল- আগে ইমান না আনলে কোরাণ পড়ে কিছুই বোঝা যাবে না। তার মানে আগে অন্ধবিশ্বাসী হলেই কোরাণের অর্থ সব দিবালোকের মত ফকফকা।

কিন্তু বাস্তবতা হলো- কোরাণ খুব সহজ সরল ভাষায় লেখা যে কোন মানুষই একটু মনযোগ দিয়ে পড়লেই পরিষ্কার বুঝতে পারবে এতে কি বলা হয়েছে। ইসলামী পন্ডিত হওয়ার কোনই দরকার নেই। তবে তা পড়তে হবে অবশ্যই নিজ মাতৃভাষায়। আর এখানেই অনেকে বলে থাকে- কোরাণকে বুঝতে হলে আরবী ভাষাতে পড়তে হবে, না হলে কিছু বোঝা যাবে না।তার অর্থ আরবীবিশারদ লোকজন যারা কোরাণ অনুবাদ করেছে তারা ঠিকমতো সেটা করতে পারে নি। দুনিয়ার অন্য কোন ধর্মের কিতাব অনুবাদ করে পড়লে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না, একমাত্র কোরাণের ক্ষেত্রে এ অদ্ভুত নিয়ম কেন? আর সেটা যদি সত্য হয়, আল্লাহ কেন প্রতিটি ভাষার একটা করে কোরাণ পাঠায় নি? আর এর কোন প্রশ্নই সঠিক না হলে বলতেই হবে – একমাত্র আরবী ভাষী আরবদের জন্যই কোরাণ তথা ইসলাম, ভিন্নভাষী মানুষদের জন্য এটা নয়।

এ ছাড়াও কোরাণের কিছু আয়াত পড়লে বোঝা যায় যে- কোরাণ আসলে আরবদেশের কতিপয় জনগোষ্ঠী ছাড়া মানবজাতির জন্য নাযিল হয় নি। যে কারনে আল্লাহ বার বার বলছে-

এ কোরআন এমন গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ন করেছি; বরকতময়, পূর্ববর্তী গ্রন্থের সত্যতা প্রমাণকারী এবং যাতে আপনি মক্কাবাসী ও পাশ্ববর্তীদেরকে ভয় প্রদর্শন করেন। কোরাণ, ০৬:৯২
আমি একে আরবী ভাষায় কোরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। কোরাণ, ১২:০২
আমি একে করেছি কোরআন, আরবী ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝ। কোরাণ, ৪৩:০৩-০৪
আমি আপনার ভাষায় কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তারা স্মরণ রাখে। কোরাণ,
৪৪:৫৮

উক্ত আয়াত সমূহ পরিস্কারভাবে প্রকাশ করে যে, আল্লাহর তথা মোহাম্মদের মূল লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র আরব তথা মক্কাবাসীদেরকে হেদায়েত করা ও তাদেরকে একটা ঐক্যবদ্ধ জাতিরূপে সংগঠিত করা। বলা হচ্ছে- আরবী ভাষায় কোরাণকে সহজ করে দিয়েছি যাতে তোমরা বুঝতে পার। তো আরবী ভাষার কোরাণ তো একমাত্র আরবী ভাষী আরবরাই বুঝতে পারবে। তাই না ? আমরা যারা পাতি বাঙালী তাদের পক্ষে আরবী কোরাণ বোঝা তো দুরের কথা, বহু কসরত করে আরবী শেখার পরও শুধুমাত্র পড়াটাই একটা বিশাল কষ্টসাধ্য ব্যপার। তার অর্থ আমরা প্রকৃতপক্ষে কখনোই আরবী কোরাণ সম্যক বুঝতে পারব না আর তাই তা আমাদের জন্য নয়। শুধু এ পর্যন্ত হলেও হতো। কোরাণ মূলত মোহাম্মদের কাছে কুরাইশ উচ্চারণে নজিল হয়েছে, কারণ মোহাম্মদ কোরাইশ বংশজাত ছিলেন। তিনি কুরাইশ আঞ্চলিক আরবী ভাষা ছাড়া কিছু জানতেনও না। তাই কুরাইশ আঞ্চলিক ভাষায় কোরাণ নাজিল না হয়ে কোন উপায়ও ছিল না। বলা হয় – কোরাণ নাকি লাওহে মাহফুজে লেখা আছে। সে কোরাণ কি তাহলে কুরাইশদের আঞ্চলিক আরবী ভাষায় লেখা ?সর্বজ্ঞানী আল্লাহর কোন কিতাব যে লিখে রাখার দরকার পড়ে না, এটা বোঝার মত প্রজ্ঞা মোহাম্মদের ছিল বলে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

কোরাণ কিভাবে সংকলিত হয়েছিল সেটা দেখা যায় নীচের হাদিসে-
আনাস বিন মালিক বর্ণিত- হুদায়ফিয়া বিন আল ইয়ামান ওসমানের কাছে আসল যখন কিছু শাম ও ইরাকি দেশীয় লোক তাঁর কাছে উপস্থিত ছিল। হুদায়ফিয়া শাম ও ইরাক দেশীয় লোকদের ভিন্ন উচ্চারণে কোরাণ পাঠ নিয়ে ভীত ছিলেন, তাই তিনি বললেন- হে বিশ্বাসীদের প্রধাণ, ইহুদী ও খৃষ্টানরা যেমন তাদের কিতাব বিকৃত করেছিল তেমনটি থেকে কোরাণকে রক্ষা করার জন্য আপনি কিছু করুন। সুতরাং ওসমান হাফসা ( নবীর স্ত্রী ও ওমরের কন্যা) এর নিকট এক বার্তা পাঠালেন- দয়া করে আপনার নিকট রক্ষিত কোরাণের কপিটা আমাদের কাছে পাঠান যাতে করে আমরা তার একটা বিশুদ্ধ কপি করতে পারি ও তারপর সেটা আপনার নিকট ফিরিয়ে দেয়া হবে। হাফসা সেটা ওসমানের নিকট পাঠালেন। ওসমান তখন যায়েদ বিন তাবিত, আব্দুল্লাহ বিন আয যোবায়ের, সাদ বিন আল আস ও আব্দুর রহমান বিন হারিথ বিন হিসাম এদেরকে কোরাণের পান্ডুলিপি পূন: লিখতে আদেশ করলেন। ওসমান তিনজন কুরাইশ ব্যাক্তিকে বললেন- যদি তোমরা কোন বিষয়ে যায়েদ বিন তাবিত এর সাথে কোরাণের কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ কর, তাহলে তা কুরাইশ উচ্চারণে লিখবে, কারণ কোরাণ সে উচ্চারণেই নাজিল হয়েছিল। তারা সেরকমই করলেন আর যখন অনেকগুলো কপি লেখা হলো তখন ওসমান আসল কপিটা হাফসার নিকট ফেরত দিলেন। অত:পর ওসমান একটি করে কপি প্রতিটি প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন এবং একই সাথে বাকী সব পান্ডুলিপি যা সম্পূর্ণ বা আংশিক ছিল সেসব পুড়িয়ে ফেলার হুকুম করলেন। যায়েদ বিন তাবিথ আরও বলেন- আল আহযাব সূরার একটি আয়াত আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম যখন আমরা কোরাণ সংকলন করছিলাম ও আমি তা আল্লাহর নবীকে তেলাওয়াত করতে শুনেছি। তাই এটা আমরা খুজতে শুরু করলাম ও খুজাইমা বিন তাবিথ আল আনসারি এর নিকট তা পেলাম। আয়াতটা ছিল ৩৩: ২৩ । সহী বুখারী, বই-৬১, হাদিস-৫১০

উপরের হাদিসে পরিষ্কার যে -কোরাণ কোন বিশুদ্ধ ও আদর্শ লেখ্য আরবী ভাষাতে নাযিল হয় নি। কেন ? কারণ লেখাপড়া না জানা মোহাম্মদ সেটা জানতেন না। যে কারণেই তাঁকে আঞ্চলিক কথ্য ভাষাকেই বেছে নিতে হয়েছে কোরাণ নাযিল করতে। যেমন বাংলা ভাষী একজন মানুষ নিরক্ষর বা অশিক্ষিত হলেও চমৎকার ভাবে সে আঞ্চলিক ভাষায় নানা রকম গল্প করতে পারঙ্গম হতে পারে, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। গ্রাম বাংলায় এখনও এরকম বহু মানুষ দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু তাকে একটা দাপ্তরিক দলিল লেখার ভাষা বলতে গেলে সে তা পারবে না। শুধু এটা হলেও মেনে নেয়া যেত। বিষয়টি আরও গভীর। কারণ উক্ত হাদিস থেকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন কথ্য রীতিতে কোরাণ তেলাওয়াত করত। এর ফলে একই আয়াতের নানা রকম অর্থ হয়ে যাচ্ছিল। কখনও সম্পূর্ন ভিন্ন অর্থ হয়ে যাওয়াটাও বিচিত্র ছিল না। আর তা থেকেই কোরাণকে রক্ষা করার জন্য ওসমান এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে, এতে আপাত: দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে বিষয়টিতে মোটেও দোষের কিছু ছিল না। আসলেই কি দোষের কিছু নেই ? দেখা যাক নীচের হাদিসটি-
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস বর্ণিত- আল্লাহর নবী বলেছিলেন, জিব্রাইল আমার কাছে কোরাণকে এক রীতিতে উচ্চারণ করত। অত:পর আমি তাকে বলতাম তা অন্য রীতিতে উচ্চারণ করতে এবং সে বিভিন্ন রীতিতে তা উচ্চারণ করত এবং এভাবে সে সাতটি রীতিতে উচ্চারণ করে আমাকে শিখাত। সহী বুখারী, বই-৬১, হাদিস-৫১৩
বোঝাই যাচ্ছে জিব্রাইল সাতটি আঞ্চলিক ভাষায় কোরাণকে বর্ণনা করেছে। কেন ? কারণ বাংলাদেশেই যেমন বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা প্রচলিত, সেই আরবেও বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা ছিল। সেহেতু জিব্রাইল বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষাতে কোরাণ উচ্চারণ করে দিয়ে মোহাম্মদের পরিশ্রম লাঘব করে দিয়েছে। কিন্তু বিষয়টা কি অত সোজা ? মোটেই না। ইসলামের দাবী মোতাবেক কোরাণ একটা সুস্পষ্ট দলিল। সুস্পষ্ট দলিল সব সময় দাপ্তরিক, বিশুদ্ধ, লেখ্য একক ভাষাতেই লেখা হয়। কোন আঞ্চলিক কথ্য ভাষাতে তা কখনো লেখা হয় না। যেমন- আমরা যখন কোন দাপ্তরিক চিঠি পত্র বা দলিল লিখি তা কথ্য বা কোন আঞ্চলিক ভাষায় লিখি না। বাংলাভাষী সকল অঞ্চলের মানুষ বুঝতে পারে এমন একটা আদর্শ দাপ্তরিক ভাষাতেই তা লিখে থাকি। যেমন বর্তমান এ নিবন্ধটা আমি লিখছি তা একটা দাপ্তরিক চলতি ভাষা, কোন আঞ্চলিক ভাষা নয়। কিন্তু এ দাপ্তরিক ভাষায় লিখিত কোন পত্র কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষকে বোঝাতে গেলে আমি হয়ত তার আঞ্চলিক কথ্য ভাষার সাহায্য নিয়ে তাকে বুঝাতে পারি যদি সে দাপ্তরিক ভাষা না বোঝে।কোরাণ নাজিল বা লেখার ক্ষেত্রে এ রীতি অনুসরণ করা হয় নি তা বোঝা যাচ্ছে উপরোক্ত দুটি হাদিসে। দেখা যাচ্ছে কোরাণের বাণী বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন আঞ্চলিক কথ্য ভাষাতেই নাযিল হয়েছিল আর তা সেভাবেই লেখা হয়েছিল। কারণ মোহাম্মদ মক্কা ও মদীনা দু যায়গাতেই দীর্ঘ দিন থেকেছেন আর তাদের ভাষা আরবী হলেও আঞ্চলিক ভাষায় বহু পার্থক্য বিদ্যমান ছিল। আল্লাহই যদি কোরাণ নাযিল করে থাকবেন তাহলে তার সেটা করার কথা আদর্শ দাপ্তরিক আরবী ভাষাতেই। তারপর মোহাম্মদ সেটা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষকে তাদের আঞ্চলিক ভাষায় বুঝিয়ে দিতেন তাতে কোন দোষ দেখা যায় না। কিন্তু ওসমান কর্তৃক একটা পূর্ণ কোরাণ সংকলনের আগে দেখা যাচ্ছে- কোরাণের বহুরকম কথ্য রীতি প্রচলিত ছিল আর বলাবাহুল্য মোহাম্মদ সেটা সেভাবেই বলেছিলেন। সম্ভবত বিষয়টি কিছু লেখাপড়া জানা মানুষকে সন্দিহান করে তোলে যে আল্লাহ যদি লাওহে মাহফুজে একটা কোরাণ সৃষ্টির পর পরই লিখে রেখে থাকে তাহলে তা কোন্ আদর্শ বা দাপ্তরিক ভাষায় লেখা আছে অথবা আল্লাহ কেনই বা আরবীর একটা সুনির্দিষ্ট লেখ্য দালিলিক রূপ ব্যবহার না করে ভিন্ন ভিন্ন কথ্য রূপ ব্যবহার করবে তার দলিল নাযিলের জন্য। কারণ তারা দলিল লেখার জন্য যে একটা আদর্শ লেখ্য ভাষার দরকার সেটা ভালমতোই জানত। তাই তারা মোহাম্মদকে প্রশ্ন করে- এত বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় কোরাণ নাযিল হলো কেন? তখন তিনি উক্ত হাদিস বর্ণনা করেন আর সব দায়িত্ব জিব্রাইলের ওপর বর্তান। অত:পর ওসমান এসে হুকুম জারি করে – কোরাণকে কুরাইশ উচ্চারণে লিখতে। বর্তমানে আমরা যে কোরাণ পাই তা সেই ওসমান নির্দেশিত কুরাইশ ভাষার কোরাণ। দাবী করা হয়- কোরাণ বিশুদ্ধ আরবী ভাষাতে লিখিত।কিন্তু উপরোক্ত হাদিস মোতাবেক দেখা যায়- কোরাণ হলো কুরাইশদের আঞ্চলিক ভাষায় রচিত। পরবর্তীতে খলিফাদের নির্দেশে দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে কোরাণে বর্ণিত ভাষা ও ব্যকরণ অনুসরণ করার নির্দেশ জারী করা হয়। এভাবেই চলে গেছে শত শত বছর। এভাবেই কোরণের আঞ্চলিক ভাষা হয়ে উঠেছে আদর্শ আরবী। ঘটনা দৃষ্টে মনে হয়, মোহাম্মদ আমাদের বাংলাদেশের নোয়াখালী অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করলে কোরাণ রচিত হতো নোয়াখালী ভাষায় আর পরবর্তীতে এ নোয়াখাইল্যা ভাষাটাই হতো বাংলাদেশের সরকারী বা বিশুদ্ধ দাপ্তরিক বাংলা ভাষা। ৫১০ নং হাদিস থেকে দেখা যাচ্ছে- ওসমান তার মনমতো রচিত কোরাণ তৈরী করে বাকী সব লিখিত দলিল পুড়িয়ে ফেলে। কি ভয়ংকর কথা ! কোরাণ পোড়ান? তাও আবার কে সেটা করছে? খোলাফায়ে রাশেদিনের মহান খলিফা হযরত ওসমান। এখন যে কেউ কোরাণ পোড়ালে বা মোহাম্মদের একটা কার্টুন আঁকলে মুমিন বান্দারা নাঙা তলোয়ার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে কল্লা কাটতে , খুন করে ফেলে শত শত মানুষ, তাদের তো প্রথমেই সোচ্চার হওয়া উচিত ওসমানের বিরুদ্ধে। সে বহু আগে মরে গিয়ে বেঁচে গেছে যদিও, তবে মুসলিম বিশ্ব থেকে তার বিরুদ্ধে একটা ফতোয়া জারি থাকা উচিত তার এ মহা গুনাহ-এর কাজের জন্য।উক্ত হাদিসে দেখা যায়- হাফসার কাছে একটা সম্পূর্ন কোরাণের কপি ছিল। আমরা যুক্তির খাতিরে যদি ধরে নেই বিভিন্ন সাহাবীদের কাছে থাকা ভ্রান্তিপূর্ণ কোরাণের বানী সংগ্রহ করে তা ধ্বংস করে একটা বিশুদ্ধ কোরাণ সংকলন ছিল ওসমানের উদ্দেশ্য। দেখা যায় হাফসা ছাড়াও আয়শার কাছেও একটা সম্পূর্ণ কোরাণ ছিল , যেমন-
ইউসূফ বিন মাহক বর্ণিত- যখন আমি আয়শা, সমস্ত বিশ্বাসীদের জননী এর নিকট বসে ছিলাম , ইরাক থেকে এক লোক এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “ কোন ধরনের আচ্ছাদন সর্বোত্তম?” আয়শা বললেন- তোমার ওপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন। কিন্তু বিষয় কি? সে বলল- হে জননী, আমাকে আপনার কোরান থেকে দেখান। তিনি জিজ্ঞেস করলেন- কেন ? সে বলল-কোরাণকে সেটার অনুযায়ী অনুলিপি করতে চাই কারণ লোকজন এর সূরা সমূহ সঠিকভাবে উচ্চারণ করছে না।……অত:পর আয়শা তার কোরাণটা বের করলেন আর লোকটাকে কোরাণের সূরা কিভাবে সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে হবে তা শিখিয়ে দিলেন। সহী বুখারী, বই-৬১, হাদিস-৫১৫
তার মানে শুধু হাফসা নয়, আয়শার কাছেও একটা সম্পূর্ন কোরাণ ছিল। সেকারণেই অনেক ইসলামী পন্ডিত বলে থাকে যে, কোরাণ মোহাম্মদের আমলেই লেখা হয়েছিল। যার সত্যতা এসব হাদিস থেকে পাওয়া যায়। খুব ভাল কথা। কিন্তু প্রশ্ন হলো- সম্পূর্ন কোরাণ যদি মোহাম্মদের আমলে একটা কিতাব আকারে লেখা হয়ে থাকে আর তার কপি যদি হাফসা ও আয়শার কাছে সংরক্ষিত থাকে তাহলে ওসমান তো সোজাসুজি তার যে কোন একটা নিয়ে কপি করে বিভিন্ন প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেই লেঠা চুকে যেত। তার দরকার পড়ত না একটা কমিটি গঠণ করে তারপর তাদেরকে নির্দেশ দেয়া- যদি তোমরা কোন বিষয়ে যায়েদ বিন তাবিত এর সাথে কোরাণের কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ কর, তাহলে তা কুরাইশ উচ্চারণে লিখবে, কারণ কোরাণ সে উচ্চারণেই নাজিল হয়েছিল। এর পরও যদি ধরে নেই যে এটা শুধুমাত্র উচ্চারণগত সমস্যা সমাধানের বিষয়ে ছিল, তাহলে কোথায় সেই হাফসা ও আয়শার কোরাণ এখন? কেন সেটা খলিফারা সংরক্ষন করে নি ? তখন তো ইসলামী রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, একটা প্রশাসন আছে, খলিফা আছে, যে কোন কিতাব সংরক্ষনের যাবতীয় ব্যবস্থাও তারা করতে পারত- তাহলে তারা কেন হাফসা ও আয়শার কাছে গচ্ছিত আদি ও অকৃত্রিম কোরাণকে সংরক্ষন করার ব্যবস্থা করল না? সংরক্ষন করার যাবতীয় উপায় ও ব্যবস্থা তাদের ছিল কারণ ওসমান যখন নিজের কোরাণের সংকলন সংরক্ষন করতে পেরেছিল তখন সেগুলোও তারা সংরক্ষন করতে পারত। কিন্তু তা কোন খলিফাই করে নি। করার প্রয়োজন বোধ করে নি। কি কারণে দরকার মনে করেনি তারা ? তাদের কি কোন সংশয় বা ভয় ছিল? কেন সেগুলো সংরক্ষনের দরকার ছিল? কারণ মোহাম্মদ নিজে বার বার অভিযোগ করেছেন যে ইহুদি ও খৃষ্টাণরা তাদের কিতাব বিকৃত করেছে, তাদের আদি কিতাবগুলো ধ্বংস করে নতুন করে নিজেদের মত করে কিতাব লিখে নিয়েছে। হযরত আবু বকর, হযরত ওমর ও হযরত ওসমান সবাই এসব বিষয় জানত। তাদের কি বোঝা উচিত ছিল না যে ভবিষ্যতে ঠিক একই অভিযোগ তাদের কোরাণের ব্যপারে উঠতে পারে ? নাকি প্রায় দীন হীন আরব্য জীবন থেকে একটা বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়ে ক্ষমতার মদমত্তে তারা সবাই ভুলে গেছিল এসবের আর কোন দরকার নেই ? সে কাজটা যদি তারা করে যেত আজকে ইসলামী পন্ডিতরা প্রমান করতে পারত যে- তাদের হাতে আজকে যে কোরাণ আছে সেটা হুবহু মোহাম্মদ বর্ণিত কোরাণই।যেহেতু হাফসা বা আয়শার কোরাণের কোন হদিস নেই তার অর্থ উদ্দেশ্যমূলভাবে সেগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। উক্ত ৫১০ নং হাদিস থেকে আরও বোঝা যায় যে, হাফসার কাছে যে কোরাণ ছিল তা সম্পূর্ন ছিল না। কারন বলা হচ্ছে একটা আয়াত নাকি হারিয়ে ফেলেছিল। সম্পূর্ণ কোরাণ হাফসার কাছে থাকলে কোন একটা আয়াত হারিয়ে যাওয়ার প্রশ্নটা এখানে উঠত না, প্রশ্ন উঠলেও সেটা খোজাখুজির দরকার পড়ত না। এখানে শুধু একটা হাদিসের হারানোর কথা বলা আছে। সঙ্গত কারণেই বহু হাদিস হারানোর কথা এখানে থাকবে না কারণ সেটা হবে তাদের দুর্বলতা, যারা একটা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার মত শক্তি অর্জন করতে পারে তাদেরকে অত বোকা মনে করাটা ঠিক নয়। সুতরাং আমরা কিভাবে নিশ্চিত হবো যে অনেক আয়াত হারিয়ে যায় নি ? বলা হয় তখন শত শত কোরাণে হাফেজ ছিল।কিন্তু হাদিস থেকেই বোঝা যাচ্ছে, সেসব হাফেজরা যার যার মত করে তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় কোরাণ মূখস্ত করেছিল। ওসমান যাদেরকে কোরাণ সংকলনের দায়িত্ব দিয়েছিল তারাও নিশ্চয়ই কোরাণে হাফেজ ছিল। তো তাদের যদি সম্পূর্ন কোরাণ মূখস্তই থাকে, তাহলে আর খামোখা কষ্ট করে সারা আরব দেশ থেকে খেজুর পাতা , হাড় গোড় এসবে লেখা আয়াত খুজতে গেল কেন? তার অর্থ বোঝা যাচ্ছে তারা নিজেরা হাফেজ হওয়া সত্ত্বেও তাদের জানা কোরাণের ব্যপারে তার সম্পূর্ন আস্থাবান ছিল না। তাই তারা সমস্ত রকম পান্ডুলিপি জোগাড় করে বুঝতে চাচ্ছিল তাদেরটা ঠিক কি না। বলাবাহুল্য সেগুলোর মধ্যে যে যথেষ্ট অসঙ্গতি ছিল তা কিন্তু হাদিসেই পরিস্কার। সুতরাং এ সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক যে, হাফসার কোরাণ সম্পূর্ণ না হলে, বিভিন্ন যায়গা থেকে সংগ্রহ করা চামড়া, খেজুর পাতা বা হাড়ে লেখা আয়াতসমূহ এবং হাফসার কাছে রক্ষিত কোরাণ থেকে ওসমান আর তার ভাড়া করা কর্মচারীরা তাদের সুবিধামত আয়াত সংকলন করে, সংশোধন, সংজোযন, পরিবর্তন করে, এমন কি নিজেরা নতুন আয়াত বানিয়ে একটা সম্পূর্ণ নতুন কোরাণ তৈরী করে তা বিভিন্ন প্রদেশে পাঠিয়েছে ওসমান এবং ফরমান জারি করেছে- অত:পর এ কোরাণই অনুসরণ করতে হবে।তখন আরবের অবস্থা আর মোহাম্মদের আমলের মত ছিল না। পাকাপোক্ত খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। খলিফার আইন বিনা প্রশ্নে মেনে চলার বিধাণ জারি হয়েছে। কোন কোন কোরাণে হাফেজ যদি নতুন কোরাণে কোন অসংগতি দেখতেও পেত তা শোনার কেউ তখন ছিল না, কারণ এরই মধ্যে প্রচারিত হয়ে গেছিল যে বিভিন্ন যায়গাতে বিভিন্নভাবে কোরাণ পড়া হয়, আর তাই নতুন করে কোরাণ সংকলন করা হয়েছে বিশুদ্ধতা রক্ষা করে ও অত:পর এটাই সকলকে পড়তে হবে। সুতরাং এর পর আর কে কথা বলতে যাবে এটা নিয়ে? সুতরাং সারমর্ম হলো- হাদিসের বক্তব্য অনুযায়ী, আজকে যে কোরাণ আমরা দেখতে পাই তাতে মোহাম্মদ বর্ণিত সার কথা থাকলেও তা মোটেও হুবহু মোহাম্মদ বর্ণিত সম্পূর্ন কোরাণ নয়। যেহেতু হাফসার বা আয়শার কোরাণের কোন খোজ পাওয়া যায় না তাই এটা নিশ্চিত যে হয় ওসমান অথবা ওসমানের নিয়োজিত কোন লোক পরবর্তীতে উক্ত কোরাণের কপি সংগ্রহ করে তা ধ্বংস করে ফেলে। তারা ধ্বংস করে ফেলে একারণে যে সেগুলো সংরক্ষিত হলে তাদের সংকলিত কোরাণের বিশ্বাসযোগ্যতা ভবিষ্যতে হুমকির মুখে পড়বে। সাধারণ মুমিন মুসলমানরা এতসব খবর বা ইতিহাস নিয়ে মাথা ঘামায় না। অন্যদিকে ইসলামি পন্ডিতরা প্রচার মাধ্যমে সাড়ম্বরে প্রচার করে বেড়ায় বিগত ১৪০০ বছর ধরে কোরাণ হুবহু এক আছে, তাই তারা চোখ বুজে বিশ্বাস করে। এখন গত ১৪০০ বছর ধরে কার কোরাণ হুবহু অবিকৃত অবস্থায় আছে তা তো আমরা হাদিস থেকেই দেখতে পাচ্ছি। বর্তমানে সৌদি পেট্রো ডলারের বলে বলীয়ান হয়ে যতই বহুরকম মিডিয়াতে উচ্চৈস্বরে চিৎকার করে বলা হোক যে- বর্তমান কোরাণে কোন বিকৃতি নেই, এটা আল্লাহ কথিত মোহাম্মদের অবিকল কোরাণ তাতে কিছু অন্ধ ও বধির লোকজনরা আস্বস্থ হলেও কৌতুহলী ও বুদ্ধিমান মানুষদেরকে আস্বস্থ করা যাবে না। হাদিস যেহেতু বলছে- হাফসা ও আয়শার কাছে মোহাম্মদের কোরাণ ছিল, তাই এখন এসব ইসলামী পন্ডিতদেরকে সেসব কোরাণ যোগাড় করেই তাদের দাবী প্রমান করতে হবে। কোরাণ অবিকৃত দাবী যেহেতু তারা করছে তাই প্রমানের দায়িত্বও তাদের। কিছু কিছু ইসলামী পন্ডিত ইদানিং ঠিক একারণেই হাদিসকে গ্রহণ করতে চায় না। উপরোক্ত ঘটনা সমূহ থেকে বোঝা যাচ্ছে হাদিস গ্রহণ বিশ্বাস করলে কোরাণের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে- হাদিস ছাড়া মোহাম্মদের অস্তিত্ব নেই, মোহাম্মদ ছাড়া তেমনি কোরাণও অস্তিত্বহীন। এছাড়া দেখা যায়, মোহাম্মদ জীবদ্দশায় কখনো সম্পূর্নরূপে কোরাণকে লিখে রাখার তাগিদ বোধ করেন নি। মাঝে মাঝে দু একটি বিচ্ছিন্ন আয়াত হয়ত লিখতে বলেছেন।তিনি জানতেন তাঁর পূর্ববর্তী নবীগণ সে কাজটা কখনো করেননি। কিন্তু তার পরেও তাঁদের বাণীসমূহ কিতাবাকারে পাওয়া যেত তখন, কারন তাঁদের সাথীরা সেসব লিখে রাখত। তিনিও জানতেন যে তাঁর প্রচার করা তথাকথিত আল্লাহর বাণীসমূহ সেভাবেই তাঁর সাহাবীরা লিখে রাখছে ও একই সাথে মুখস্ত করে রাখছে। এটা ছিল মূলত ইহুদী খৃষ্টানদেরকে বোঝানো যে তিনি নিজে পূর্ববর্তী নবীদের পদাংক অনুসরণ করছেন একারণে তাঁকে বিশ্বাস করা উচিত তাদের। কোরাণে তিনি খুব জোরের সাথে বলেছেন-
আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।সূরা-আল-হিজর,১৫:০৯
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আল্লাহ তার উপদেশ গ্রন্থ কোরাণ সংরক্ষণ করে নি। দেখা যাচ্ছে নানা রকম গোজামিল দিয়ে ওসমানের মাধ্যমে কিছু ভাড়াটে কর্মচারী দিয়ে কোরাণকে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। মোহাম্মদের লক্ষ্য ছিল একটা ঐক্যবদ্ধ আরব রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। যখন সেটা সম্পন্ন হয়ে গেছিল তখন আর তাঁর কোরাণ সংরক্ষনের চিন্তা মাথায় আসেনি। তার ধারণা ছিল রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে তা ধর্ম ছাড়া এমনিতেই চলতে থাকবে। যেমন চলেছে- রোমান, বাইজান্টাইন,পারস্য সাম্রাজ্য এসব। যদি যুক্তি দেয়া হয় যে – আল্লাহ তো মানুষকে দিয়েই তার কাজ করায়। তাই যদি হতো- তাহলে মোহাম্মদ বললেই সাথে সাথে তাঁর সাহাবীরা বহু কপি কোরাণ লেখা হয়ে যেত তাঁর জীবদ্দশায়। পরে আর ওসমানকে টাকা খরচ করে কিছু ভাড়াটে লেখক নিয়োগ করতে হতো না আর আজকে এত সমালোচণার সামনে পড়তে হতো না। তাঁর স্বপ্ন যে আসলেই আরব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা ছিল তার প্রমানও কিন্তু কোরাণে মেলে, যেমন-
এ কোরআন এমন গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ন করেছি; বরকতময়, পূর্ববর্তী গ্রন্থের সত্যতা প্রমাণকারী এবং যাতে আপনি মক্কাবাসী ও পাশ্ববর্তীদেরকে ভয় প্রদর্শন করেন। কোরান, ০৬: ৯২
তার মানে তিনি শুধুমাত্র মক্কাবাসী ও তার পার্শ্ববর্তী লোকজনদেরকে ভয় প্রদর্শন করার জন্য কোরাণ অবতীর্ণ করেছেন। কেন ? কারণ তার স্বপ্ন মক্কাবাসীরা বীরের জাতি, তাদের দিয়ে তিনি একটা ঐক্যবদ্ধ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চান। যে রাজ্যের সবাই হবে আরব। এটা একটা আরব জাতিয়তাবাদী রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। একারণেই আমরা দেখেছি বার বার তিনি বলছেন- আমি কোরাণকে অবতীর্ণ করেছি সহজ আরবী ভাষায় যাতে তোমরা বুঝতে পার। আরব রাজ্য প্রতিষ্ঠার তাগিদ থেকেই যে তাঁর ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা, তা আরও বোঝা যায় তার কুরাইশদের সাথে ১০ বছর মেয়াদী সন্ধি চুক্তি করার মাত্র আড়াই বছর পরেই একটা ঠুনকো অজুহাতে মক্কা আক্রমন ও দখল করার মধ্য দিয়ে। এত তাড়াতাড়ি চুক্তি ভঙ্গ করে আক্রমন করার কারণ হলো তিনি তখন প্রায় বৃদ্ধ হয়ে গেছেন , বয়স ৬০ পেরিয়ে যাচ্ছে, স্বপ্ন সফল হচ্ছে না।তাঁর হাতে তেমন সময় ছিল না আর।
মোহাম্মদ শুধু বুদ্ধিমানই ছিলেন না , ছিলেন অতিশয় প্রত্যুৎপন্নমতিও । তাৎক্ষনিক যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে তাঁর জুড়ি ছিল না। তাঁর এ ক্ষমতা ছিল বলেই সে না তিনি নবী হতে পেরেছিলেন আর উদ্ধত আরবদেরকে বশ করতে পেরেছিলেন। তাঁর প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের একটা উদাহরণ দেয়া যাক-
আল বারা বর্ণিত- এ আয়াত টি নাযিল হলো, “ যে সব বিশ্বাসী ঘরে বসে থাকে তাদের মর্যাদা যারা জান মাল দিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে তাদের সমান নয়”(কোরাণ,০৪:৯৫)। নবী বললেন, যায়েদকে আমার কাছে ডাক আর তাকে একটা বোর্ড বা হাড়ের টুকরা ও কালি আনতে বল। তারপর তিনি বললেন- “লেখ, সে সব বিশ্বাসী ঘরে বসে থাকে…” এবং এমন সময় আমর বিন উম মাখতুম যে ছিল একজন অন্ধ মানুষ সে সেখানে নবীর পিছনে বসেছিল, নবীকে বলল, “ হে আল্লাহর নবী! আমি তো একজন অন্ধ মানুষ, আমার জন্য তোমার কি হুকুম ?” সুতরাং সাথে সাথেই আগের আয়াতের পরিবর্তে এ আয়াত নাযিল হলো- “যারা অক্ষম তারা ছাড়া যে সব বিশ্বাসী ঘরে বসে থাকে তাদের মর্যাদা যারা জান মাল দিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে তাদের সমান নয়”(০৪:৯৫)। সহি বুখারী, বই-৬১, হাদিস-৫১২
এর পরে কি বুঝতে বাকী থাকে কোরাণের আয়াত আল্লাহর প্রেরিত নাকি মোহাম্মদের নিজের রচিত ? একই সাথে এটা তাঁর দুর্দান্ত প্রত্যুৎপন্নমতিত্বেরও উদাহরণ। কথায় বলে বেশী চালাকের গলায় দড়ি। বিষয়টা এ ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। কোরাণ যেহেতু লাওহে মাহফুজে আল্লাহ অনেক আগেই লিখে রেখেছে, তার মানে কিছুক্ষণ আগে যা নাযিল হয়েছিল সেটা নিশ্চয়ই কোরাণে লেখা ছিল। কিন্তু এক অন্ধ লোকের আচমকা বেমক্কা প্রশ্নে মোহাম্মদকে বাধ্য হতে হয় নতুন করে সংশোধিত আয়াত বলতে। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে- আল্লাহ কি সাথে সাথেই তার লিখিত কোরাণ থেকে আগের নাযিলকৃত ব্ক্তব্য মুছে ফেলে নতুন করে লিখেছে? অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে- মোহাম্মদের বেঁচে থাকা কালীন সময়ে বেচারা আল্লাহ বড়ই বিপদের মধ্যে ছিল। তার অন্য সব কাম কাজ ফেলে তাকে অহর্নিশ বসে থাকতে হতো তার লিখিত কোরানের সামনে। কারণ কখন তার পেয়ারা নবী জানি দোস্ত তার কোরাণের বাণী পাল্টে ফেলে তার ঠিক নেই। আর সাথে সাথেই তাকে তা সংশোধণ করতে হতো। আল্লাহর কাছে কোন কম্পিউটার আছে কিনা তা মোহাম্মদ জানাননি। যদি না থেকে থাকে তাহলে বেচারা আল্লাহর এ ধরণের সংশোধনীর জন্য যে কিরূপ পরিশ্রম করতে হয়েছে তা সহজেই বোধগম্য। এ থেকে আরও বোঝা যায়- মোহাম্মদ প্রচন্ড দু:সাহসীও ছিলেন।কারণ যে কোন সু্স্থ ও কান্ডজ্ঞান সম্পন্ন মানুষই মোহাম্মদের উক্ত বক্তব্য শুনে বুঝে ফেলতে পারত যে মোহাম্মদ যাকে আল্লাহর বাণী বলে চালাচ্ছে তা আসলে আল্লাহর বাণী নয়। কিন্তু তাঁর দু:সাহস তাঁকে এ বিষয়ে অনেক সাহায্য করত। তবে বিশেষভাবে খেয়াল করতে হবে এ ধরণের তাৎক্ষনিক পরিবর্তনীয় আয়াতগুলি তিনি মদিনার জীবনেই সব বলেছেন যেখানে তিনি ছিলেন একচ্ছত্র অধিপতি, যার কথার বিরুদ্ধাচরণ কেউ করত না বা করতে সাহস করত না। যেমন উপরের ০৪:৯৫ টি হলো সূরা নিসা থেকে নেয়া যা মদিনায় নাযিল হয়েছিল।

প্রথমে বলা হয়েছিল মোহাম্মদের হিস্টিরিয়া রোগ আছে কি না। তাঁর সামগ্রিক জীবনের কর্মকান্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- জীবনের সবসময়ই তার এ রোগটা ছিল তবে প্রথম দিকে এর প্রকোপ বেশী ছিল, পরে কিছু কমে যায়। পরবর্তীতে তিনি আয়াত নাজিলের জন্য আর হিস্টিরিয়ার অপেক্ষায় বসে থাকতেন না। কৃত্রিমভাবে একটা ভাব গম্ভীর আবহ সৃষ্টি করে আয়াত নাজিল করতেন। ঠিক সেকারণেই খুব দ্রুত তিনি পাল্টা আয়াত নাজিল করতেন যেটা ওপরোক্ত হাদিস থেকে পরিস্কার বোঝা যায়। আর একাজটা তিনি করেছেন তার মদিনার জীবনে কারণ সেখানে তাঁর কোন কাজের ব্যপারে টু শব্দ করার কোন সাহস কেউ করত না। মক্কায় অবতীর্ণ সূরাতে এসব খুব বেশী দেখতে পাওয়া যায় না। কেননা দুর্বল মোহাম্মদ মক্কাতে এসব করলে তিনি যে একজন প্রতারক তা সবাই ধরে ফেলে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করত সাথে সাথেই। তাই প্রাথমিক মক্কার জীবনে তিনি ভুলক্রমেও কখনও একাজ টি করেন নি-এটা আমার অনুমান- যে কেউ পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। একাজটি তিনি একবারই মাত্র করেছিলেন মক্কাতে সেই বিখ্যাত শয়তানের আয়াতের ব্যপারে আর তার পরিণাম কি হয়েছিল তা সবাই অবগত। তাঁকে এর পর পরই মদিণাতে জান নিয়ে পালাতে হয়েছিল।একজন ভাল ইসলামী পন্ডিত যিনি মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী নিয়েছে তাকে উক্ত হাদিসটি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম- এটা কিভাবে সম্ভব যে এত দ্রুত একই বিষয়ে সংশোধিত আয়াত নাজিল হতে পারে ? আল্লাহ কি তাহলে প্রথমবার অসম্পূর্ন আয়াত নাজিল করেছিল ? লোকটি চালাক, বুঝতে পেরেছিল আমি কি বোঝাতে চাচ্ছি। তাই অত ঘুর প্যাচে না গিয়ে সোজা বলল- কিভাবে কখন কোন পরিস্থিতিতে আয়াত নাজিল হয়েছিল এটা ভেবে সময় নষ্ট না করে কোরাণে যা বলা আছে সেটা অনুসরণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। বলাই বাহুল্য ,সে লোক এ ব্যপারে আমার সাথে আর কথা বাড়ায় নি।

মোহাম্মদ ও ইসলাম- ৪র্থ পর্ব
মোহাম্মদ ও ইসলাম-৩য় পর্ব
মোহাম্মদ ও ইসলাম- ২য় পর্ব
মোহাম্মদ ও ইসলাম- ১ম পর্ব