(১)

ছমাস আগের ঘটনা। মেরিল লিঞ্চের এক উচ্চপদস্ত কর্তার বক্তব্য শুনতে এসেছিলাম ক্যাপিটাল আই আই টির একটা পার্টিতে। বিষয় সরকারি বন্ডে ইনভেস্টমেন্ট। কেন করবেন?

উনি বার বার করে বোঝাছিলেন কেন মিউনিসিপ্যাল বন্ডে ইনভেস্ট করা উচিত। আমি একবার থাকতে না পেরে বল্লাম-সেটা কি করে ঠিক হবে? ক্যালিফোর্নিয়াতে অনেক মিউনিসিপালিটি দেওলিয়া ঘোষনা করেছে! আর আপনি বলছেন সেখানে ইনভেস্ট করতে?

ভদ্রলোক বললেন, তেমন আর হবে না। প্রতিটা মিউনিসিপালিটি তাদের খরচ সংস্কার করছে, আয় বুঝে ব্যায় করবে।

আমি বললাম, আপনাদের কথা তারা মানবে কেন?

উনি বললেন, না মেনে ওদের উপায় কি? না মানলে ওরা মিউনিসিপালিটি চালাতেই পারবে না। স্কুল, হাসপাতাল সব বন্ধ হবে।

গ্রীসকে নিয়ে গত দুমাসে যে নাটক হল এবং আজকে যেভাবে প্যাপান্দ্রিও লেজগুটিয়ে রেফা্রএন্ডামের বদলে, লোন প্যাকেজ মেনে নিতে বাধ্য হলেন, তাতে বুঝলাম, মেরিল লিঞ্চের ওই ভদ্রলোক ঠিকই বলেছিলেন।

(২)

যেদিন প্যাপান্ডিও রেফারেন্ডামের ঘোষনা করলেন, সেদিন স্যোশাল মিডিয়াতে তথা কথিত কিছু বামপন্থী লাফাচ্ছিল এবার ধনতন্ত্রের কবল থেকে বেড়িয়ে গ্রীসের লোকেরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নেবে। আমি অবশ্য জানতাম সেটা হবে না-আসলে প্যাপান্ডিও ক্ষমতায় এসেছিলেন এই সব বামেদের লেজ নাড়িয়ে। তারপর দেখেছেন, গ্রীসের হাঁড়ির হাল এত খারাপ, ধার না করলে, সেনা বাহিনীর বেতন পর্যন্ত হবে না। আন্দোলন করে, চলছে না চলবে না বলে ত আর কর্মীদের মাইনে দেওয়া যাবে না। যাইহোক, শেষে চাপ খেয়ে, তাকেও ব্যায় সংকোচ, অর্থাৎ সামাজিক খাতের নানান ব্যায় হ্রাস করতেই হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে ইনি আবার ক্ষমতায় এসেছিলেন, ব্যায় সংকোচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে। ফলে নিজেদের দলের চাপে একটু সমাজতান্ত্রিক বীরত্ব দেখাতে গিয়েছিলেন রেফারেন্ডামের মাধ্যমে। কিন্ত বিধি বাম। তাতে গ্রীসের ঘরে ঘরে চুল্লী বন্ধ হত। সারকোজি সহ ইউরোপিয়ান নেতারা গ্রীসকে খরচের খাতায় ফেলে দিতেই, প্যাপান্ডি আবার ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে, সব বাতিল করে, ডিল মেনে নিলেন। কারন উনি যে পথে চলছিলেন, তাদের গ্রীসের ধ্বংশ ছিল অনিবার্য্য-সেনা বিদ্রোহের ও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। তার থেকে খরচ কাট ভাল।

(৩)

হিসাবটা খুব সহজ। পৃথিবীতে কোন সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক সিস্টেম টেকে নি- টিকতে পারবেও না। কারন এরা যে সিস্টেমটা চাচ্ছে, তাতে উৎপাদন ব্যবস্থা নিম্নগামী হতে বাধ্য। ইউরোপে একটা লোককে কাজে নেওয়া এবং কাজ না পারলে, ছাড়ানো বেশ কঠিন কাজ। তারপরে এত বেশী বেকার ভাতা, পেনসন স্কীম চালু আছে -একজন লোক কাজ করলেও যা পায়, কাজ না করলেও তাই পাবে। কাজ করলে, তার ৫০-৬০% উপায় ট্যাক্সে যায় তাদের খাওয়াতে যারা কাজ করে না। এমন অবাস্তব সিস্টেম বেশীদিন চলতে পারে না। কিন্ত চলছিল ধার নিয়ে। গ্রীচের জিডীপি ২২০ বিলিয়ান ডলার-আর ধার ৩৩০ বিলিয়ান ডলারের কাছাকাছি। এখন যেই আর কেও ধার দেবে না, এই সিস্টেমের কঙ্কালটা ইটালি, স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স সবার মধ্যে থেকে বেড়িয়ে আসছে। বৃটিশরা ২০০৮ সালেই ব্যায় সংকোচ করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে। নইলে বৃটেন সবার আগে টসকাতো।

(৪)

সমস্যা হচ্ছে পৃথিবীটা হয় অতিবাম বা অতিডানে ঘুরছে। যার কোনটাই এই সব সমস্যার সমা্ধান না। পাবলিক হেলথ, শিক্ষা-এসবের দ্বায়িত্ব সরকারকে নিতেই হবে। হ্যা-টাকাটা যাতে ঠিক ঠাক খরচ হয়, তার জন্যে কমিনিউনিটি বা পাবলিক প্রাইভেট ভেঞ্ছার করা যেতে পারে। কিন্ত পেনশন, বৃদ্ধদের সম্পূর্ন চিকিৎসার খরচ একটা জাতিকে পঙ্গু করতে বাধ্য। শিশুদের চিকিৎসা বা শিক্ষার যেখানে টাকা নেই, সেখানে বৃদ্ধদের পেছনে বেশী খরচ করা একটি জাতির জন্যে আত্মহত্যা। আমেরিকাতে একজন বৃদ্ধর পেছনে সরকারের খরচ, একজন শিশুর পেছনের খরচের প্রায় ১৪ গুন। ইউরো্পেও প্রায় তাই। আর বৃদ্ধদের ভাল রাখতে গিয়ে, একেকজন শিশুর ওপর চাপছে বিদেশী ঋণের বোঝা। এখন একজন লোক চাকরি করে ৩০ বছর-আর তাকে পেনসন দিতে হবে ৪০ বছর! এই সিস্টে্ম প্রকৃতির নিয়মেই টিকতে পারে না। অবসরের বয়স ৭০ হোক বা সরকার পেনসনের স্থলে ৪০১(ক) এর মতন স্কীম চালু করুক। অবাস্তব মানবিক সিস্টেম ( যা বামেরা বলে) বা চূড়ান্ত বাস্তববাদের নামে বাজারের অত্যাচার কোনটাই আমাদের কাম্য না। সমাধান পেতে গেলে আমাদের বাস্তববাদি হতে হবে।