লীনা রহমানের “শুনেছি মুক্তির গান” ব্লগে কিছু মন্তব্য সম্পূর্ণ অন্যদিকে ধাবিত হয়ে প্রায় এক নতুন ব্লগ সৃষ্টি করেছে। আমার কিছু প্রতিমন্তব্য দিতে গিয়ে দেখলাম অনেকের (ফরিদ, ব্রাইট স্মাইল, আকাশ মালিক, তামান্না ঝুমু প্রমুখ) মন্তব্যেরই উল্লেখ করতে হয় আর মূল ব্লগের বিষয় থেকে অনেক দূরে সরে আসতে হচ্ছে, কলেবরও মন্তব্যের জন্য একটু বড় হয়ে যাচ্ছে। সব মিলে তাই এক নতুন ব্লগ লেখাই সমীচীন হবে মনে করে এই লেখা।

প্রকারণ (Variation) প্রকৃতির অবিচ্ছ্যেদ্দ্য অংগ। মানব (নর+নারী) স্বভাবের প্রকারণও প্রাকৃতিক। আমরা প্রায়ই বলি হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমান না। একই সুত্র মেনে কারখানায় উৎপাদিত সামগ্রীর কোন কোনটার মধ্যে তারতম্য দেখা যায়। মানের বা আকৃতির হেরফের হয় অবশ্যম্ভাবীরূপে। প্রকারণ মেয়েদের মধ্যেও হয় (এক মেয়ের সাথে অন্য মেয়ের) , ছেলেদের মধ্যেও হয় (এক ছেলের সাথে অন্য ছেলের) আবার এক ছেলের সাথে অন্য মেয়ের মধ্যেও হয়। আবার ছেলেদের গড় স্বভাবের সাথে মেয়েদের গড় স্বভাবের মধ্যেও প্রকারণ হতে পারে। দুটো প্রকারণযুক্ত সমষ্টি (Set with Variation) এর একটা বৈশিষ্ট্য হল যে যে গুণ বা মানের ভিত্তিতে প্রকারণ ঘটছে, তার ভিত্তিতে এক সমষ্টির কোন সদস্য “ক” আর অন্য সমষ্টির কোন সদস্য ‘খ” পাওয়া সম্ভব যাতে “ক” এর সেই গুণ বা মান “খ” এর চাইতে বেশী। আবার অন্য দুই সদস্যও পাওয়া সম্ভব যেখানে “ক” এর সেই গুণ বা মান “খ” এর চাইতে কম। যাহোক ছেলেদের গড় স্বভাবের সাথে মেয়েদের গড় স্বভাবের মধ্যের প্রকারণ এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। এই বিতর্কে মেয়দের মধ্যকার প্রকারণটাই প্রাসঙ্গিক। তবে ছেলেদের গড় স্বভাব যে মেয়েদের গড় স্বভাবকে প্রভাবিত করতে পারে সেটা বলা যায়। এ প্রসঙ্গে পরে আসব।

এই মেয়েদের মধ্যকার প্রকারণ মেনে নিলে এটা বলা যায় না যে “সব মেয়েই এরকম” বা “কোন মেয়েই ওরকম নয়”। এ দুটো উক্তিই অতিসামান্যীকরণ দোষে (Over Generalization/Stereotyping) দুষ্ট। দুটোই লিঙ্গবাদী উক্তি। যে কোন লিঙ্গের ব্যাপারে ঢালাও কোন উক্তি (তা সে মন্দ ইঙ্গিতসূচকই হোক বা ভাল ইঙ্গিতসূচকই হোক) মাত্রই লিঙ্গবাদী । এখানে যে স্বভাব বা গুণের প্রকারণ নিয়ে এই তর্ক হচ্ছে সেটা হল মেয়েদের পরজীবিতার প্রতি আসক্তি। সব “মেয়েরাই পরজীবিতার প্রতি আসক্ত” বা “কোন মেয়েই পরজীবিতার প্রতি আসক্ত নয়” বলাটা হবে লিঙ্গবাদী এবং ভুল। ফরিদ বলছেন কোন/অনেক মেয়েরাই পরজীবিতার প্রতি আসক্ত। আর ব্রাইট স্মাইল বলছেন যে যে সব মেয়েরা “পরজীবিতার প্রতি আসক্ত” তারা পুরুষদের নিয়ন্ত্রণের কারণেই “পরজীবিতার প্রতি আসক্ত” হতে বাধ্য হয় । অর্থাৎ বলতে চাইছেন যে যেসব মেয়েরা “পরজীবিতার প্রতি আসক্ত” তারা আসলে পরজীবিতার প্রতি আসক্ত নয়, তারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মগজ ধোলাইয়ের কারণে পরজীবিতার প্রতি আসক্ত হতে বাধ্য হচ্ছে। প্রকারান্তরে ব্রাইট স্মাইল বা তাঁর সাথে একমতদের এটাই বক্তব্য যে কোন মেয়েই প্রকৃতপক্ষে স্বেচ্ছায় পরজীবিতার প্রতি আসক্ত নয় (“কোন মেয়েই ওরকম নয়” দ্রঃ উপরে)। এটা স্পষ্টতই লিঙ্গবাদী এবং বাস্তবতার তথা বিবর্তনের পরিপন্থী। আবার ফরিদের মন্তব্য লিঙ্গবাদী না হলেও অতিসামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কারণ তাঁর উক্তি হল সব অভিজাত গৃহিণীরা পরজীবী। অভিজাত গৃহিণী একটা সমষ্টি। এই সমষ্টির সবাই যে একই মনোবৃত্তির হতে হবে এমন কথা নেই। মেয়েদের মধ্যে যে অংশ পরজীবিতার প্রতি আসক্ত সেই অংশ মেয়েদের সব সমষ্টির (অভিজাত/নীচু শ্রেনী) মধ্য ছড়ান বা বন্টিত। শুধু অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে তা সীমিত (বা নীচু শ্রেণীর মধ্যে) বললে তা স্পষ্টতই অতিসামান্যীকরণ। বিবর্তনজনিত মানব বৈষিষ্ট্য কোন বিষেশ গোষ্ঠির মধ্যে সীমিত নয়। মানব বৈষিষ্ট্য কোন বিশেষ গোষ্ঠির একচেটিয়া নয়। সে গোষ্ঠি লিঙ্গই হোক,বা জাতিই হোক, বা ধর্মই হোক। অনেক সময় কোন বিশেষ গোষ্ঠী মানব স্বভাবের কোন বিশেষ বৈষিষ্ট্য বা গুণের বহিঃপ্রকাশের জন্য সহায়ক হতে পারে ঠিকই, কিন্তু বৈশিষ্ট্যের অস্তিত্ব আর বহিঃপ্রকাশ/পরিস্ফুটন এক জিনিষ নয়। বৈষিষ্ট্য অনেক ক্ষেত্রে প্রচ্ছন্ন থাকে। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে তা প্রকাশ পায়।

এখন আসি ব্রাইট স্মাইলের সেই দাবীর কথায় যে মেয়েদের সব নেতিবাচক গুণাবলীই পুরুষদের কারণে প্ররোচিত/আরোপিত/অণুপ্রাণিত। এধরণের একই অভিমত দিয়েছিলেন ব্লগ সদস্যা একা (আফরোজা আলম) তাঁর “নারীর শত্রু শুধু পুরুষ নয়” লেখায়। ঐ লেখার উত্তরে আমি এক প্রতিমন্তব্য দিয়েছিলাম, যার সাথে ব্রাইট স্মাইল একমত হয়েছিলেন। কাজেই আশা করছি এবারও আমার এই বিশ্লেষণের সাথে একমত হবেন তিনি। কারণ আমার বর্তমান অভিমত আগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ব্রাইট স্মাইল অভিজাত গৃহিণীদের মধ্যে যারা পরজীবী তাদের ব্যতিক্রম বলছেন। আর ফরিদ তাদের ব্যতিক্রম বলে বিবেচনা করছেন না। আসলে কত পার্সেন্ট হলে ব্যতিক্রম বলা সঙ্গত হবে সেটাও প্রব্লেম্যাটিক। আর পার্সেন্ট টা নির্ভুল ভাবে নির্ণয় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। যাহোক যে কোন বৈশিষ্ট্যকে তার বিপরীত বৈশিষ্ট্যি এর বিচারে ব্যতিক্রম বলা যায়। ফরিদও বলতে পারেন বাধ্য হয়ে পরজীবী হওয়া অভিজাত নারীও ব্যতিক্রম। এই ব্যতিক্রমের বিতর্কের কোন সুরাহা নেই। যেটা নিশ্চিত বলা যায় সেটা হল দুটোই ঘটে। কোনটা ব্যতিক্রম আর কোনটা নিয়ম হিসেবে ঘটে সেটা অবান্তর এবং সবিকল্প। নারীদের মধ্যে কিছু অংশের মধ্যে কর্মজীবী না হবার বা পরজীবী হবার আসক্তির কথা প্রখ্যাত ফরাসী দার্শনিক ( নাকি দার্শনিকা?) ও সমাজবিজ্ঞানী Simon De Beauvoir এর ১৯৭৫ সালের এক উক্তিতে পাওয়া যায়।

“No women should be authorized to stay at home to raise her children, women should not have that choice, precisely because if there is such a choice, too many women will make that choice.”

হয়ত তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন ঘরের আয়েশী পরিবেশে বাচ্চা মানুষ করা কর্মজীবী হয়ে জীবিকা নির্বাহ করার চেয়ে কম কষ্টকর বলে অনেক নারীরা সেটাই বেছে নেবে, বাছার স্বাধীনতা দিলে।

নারীরা যে পরজীবী হতে পারে সেটা নারীরাই স্বীকার করেছেন। যারীকটা উদাহরণ উপরে দিলাম। তাঁরা কেউ একথা জুড়ে দেননি যে পরজীবিতাটা চাপান বা স্বেচ্ছাকৃত নয়। কেউ কেউ বলতে পারেন সেই নারীরা (যারা স্বীকার করেন যে নারীরা স্বেচ্ছায় পরজীবী হতে পারে) তাঁদের মতও পুরুষতন্ন্ত্রের দ্বারা পক্ষপাতদুষ্ট। এইরকম যুক্তি একটা অসীম পিচ্ছিল ধাপের দিকে ঠেলে দেবে। কারণ তাহলে এটাও বলা যেতে পারে যে নারীরা বলেন যে যে নারীরা স্বীকার করেন যে নারীরা স্বেচ্ছায় পরজীবী হতে পারে তারা পুরুষতন্তের দ্বারা পক্ষপাতদুষ্ট, সেই নারীদের কথাও পুরুষতন্তের দ্বারা পক্ষপাতদুষ্ট। এই অসীম চক্রের শেষ নেই। নারীরা (কেউ কেউ বা অনেকে) যে স্বকীয়ভাবে নিজ কর্ম বা মত বেছে নিতে পারে পুরুষ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সেই স্বীকৃতি দেয়াটা আবশ্যক।

এটা ঠিক যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের বাইরে কাজ করাকে পুরুষেরা গড়ে নিরুৎসাহিত করে। আর পুরুষদের সেই গড় মনোবৃত্তিএর জন্য মেয়েদের জন্য গড়ে কর্মজীবী হওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। আবার তারই পরিণতিতে গড়ে মেয়েদের মধ্যে পরজীবী হবার আসক্তি দেখা দেয়(বাধ্য হয়ে পরজীবী হওয়া)। কিন্তু এটাও ঠিক যে কিছু নারী আছে তারা পরজীবী হয়ে বিনা কষ্টে আরাম আয়েশ পেতে উৎসাহী স্বকীয়ভাবে। কর্মজীবী হতে বাধা না থাকলেও তারা পুরুষের ঘাড়ে চড়ে (স্বামী বা প্রেমিক) বিষয় সম্পদের সর্বোচ্চ সুখ লাভ করা যায় সেটার প্রতি তাদের উৎসাহ। অভিজাত গৃহিণীর স্বামীরা বিত্তশালী বলেই অনেক অভিজাত গৃহিণীর পক্ষে এই আসক্তির (যেসব অভিজাত গৃহিণীর মধ্যে এই আসক্তি বিদ্যমান) বহিঃপ্রকাশ ঘটান সম্ভব। এমন নয় যে এটা অভিজাত গৃহিণীদের আলাদা কোন গোষ্ঠীগত বৈশিষ্ট্য যেটা ফরিদ ইঙ্গিত করছিলেন। আবার এমন অনেক বিত্তশালী স্বামীর অভিজাত স্ত্রীও আছে পরজীবিতা যাদেরঁ কাছে অপমানিত্বের ব্যাপার এবং পারলে কর্মজীবী হয়ে নিজের উপার্জনের টাকায় বিলাসিতা করাকে প্রাধান্য দেয়। কর্মজীবী হতে না পারলে তারা স্বামীর টাকায় যত কম বিলাসিতা করা যায় সে ব্যাপারে সচেতন থাকে। কাজেই যেটা বলছিলাম দুটোই সম্ভব। আবার এমন কিছু নারীও আছে যারা ভোগের জন্য পরজীবী হবার বাসনাকে গড় পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার দোহাই দিয়ে জাস্টিফাই করেন । অর্থাৎ তারা স্বেচ্ছায় পরজীবী হবার আসক্তিকে চাপিয়ে দেয়া আসক্তি বলে চালাতে চায় গড় পুরুষদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গীকে কারণ দেখিয়ে। এটা মানুষের ফাকি দিয়ে সুবিধা আদায়ের এক স্বভাবিক প্রবৃত্তির প্রকাশ। আয়াস ছাড়াই আয়েশ করা কারো কারো প্রবৃত্তিগত। বর্ণবৈষম্যের কারণে অনেক কৃষ্ণাংগই সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল বা হচ্ছে সত্যি। কিন্তু আবার কিছু অলস কৃষ্ণাংগ সেটাকে শিক্ষা লাভ বা চাকুরী না করার অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে বিনা শ্রমে সামাজিক সুবিধা পেতে চায়। বা উপযুক্ত পরিশ্রম না করেই পরীক্ষায় ভাল ফল বা ভাল চাকুরী না পাওয়ার কারণ হিসেবে ঐ সিস্টেমিক বৈষম্যকে দায়ী করে। কিছু নারীদের মধ্যেও এই প্রবণতা আছে। এ দুটোকেই শিকার মনোবৃত্তি বলে (Vicitm Mentality) একটা উদাহরণ দেয়া যাক।

নারী পুরুষের সমধিকার প্রতিষ্ঠা হলে নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার (যেমন পরজীবী হবার) অবসান ঘটবে। আর নারীরা সব ক্ষেত্রেই কর্মজীবী হতে বাধ্য হবে। ঠিক এই কারণেই অনেক নারীই সম অধিকার বিল পাস হলে প্রচলিত শ্রম আইনে নারীরা যে বিশেষ সুবিধা ও আশ্রয় পায় সেটা হারাবার ভয়ে এই বিলের বিরোধিতা করেন। উচু পেশায় নিয়োজিত এবং উচ্চশিক্ষিত নারীরা এর সমর্থক হলেও নিম্নজীবী, বিশেষ করে নারী শ্রমিক ইউনিয়নের বিরোধিতার কারণে এটা আটকে থাকছে। কারণ আরেকটা কারণে অনেক নারীরা এটার বিরোধিতা করে সেটা হল যে এটা পাস হলে মেয়েরাও ছেলেদের মত সশস্ত্রবাহিনীতে বলপূর্বক নিয়োগ (Draft) করা হবে ও সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণে বাধ্য করা হবে। একজন নারী রাজনৈতিক কর্মী ফিলিস শ্ল্যাফ্‌লী (Phyllis Schlafly) এই কারণেই ই.আর.এ থামাও নামে এক সংগঠন গড়ে তোলেন। তিনি তাঁর বই “The Power of Positive Woman” (যথার্থ নারীর শক্তি) এ এই যুক্তি দেন যে নারীরা পুরুষের সমান শক্তিধর নয়, তারা পুরুষদের সমান দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত নয়, এবং শ্রম আইনে তাদের জন্য রক্ষামূলক বিধানগুলি হারানর সমর্থ তাদের নেই, যা কিনা ই.আর.এ পাস হলে ঘটবে। আরেকটা পরিহাসের বিষয় হল, ১৯২০ সালের নারী ভোটাধিকার সংশোধনী(যা পাস হয়) এর সক্রিয় বিরোধিতা একজন নারী করেছিলেন, যার নাম Phyllis Bissell, যদিও তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক ও বক্তা।

আরেকটা উদাহরণ দেই একটু ভিন্ন ধরণের।

নিউজউইক পত্রিকার ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সংখ্যার পাঠকদের চিঠির কলামে প্রকাশিত এক চিঠিঃ “I AM TIRED OF HEARING WOMEN IN THE sciences whine, I am a Ph.D precandidate in atmospheric oceanic and space sciences fully funded with tuition and a stipend at the University of Michigan, while my husband is struggling financially to acquire his master’s degree in mechanical engineering, course by course, because no one will fund him. I am the one being handed opportunities, in part because I am a woman. Many women who feel victimized by sexism in the sciences could use my circumstances as evidence that some women are given a break in order to get ahead, But by this rationale, my credibility will be challenged by those who assume I receive funding because I am a woman, not because of any measure of intelligence. I have worked. very hard to get where I am, and am continuing to work harder than I ever thought I could as I proceed with my research and work toward my goal of achieving tenure at a prominent unversity. I do not find and have not ever found my gender to be a reason to whine. “ – Emily Mae Chistianson,Ann Arbor,Michigan

(আমি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মেয়েদের অনুযোগ শুনতে শুনতে ক্লান্ত । আমি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ অর্থায়নে বেতন ও স্টাইপেন্ড ভোগী আবহাওয়া, সমুদ্র ও মহাকাশ বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রীর একজন প্রি ক্যান্ডিডেট, আর ওদিকে আমার স্বামী যন্ত্রপ্রকৌশলে মাস্টারস্‌ ডিগ্রী করার জন্য আর্থিকভাবে সংগ্রাম করে যাচ্ছে, একের পর এক পাঠ নিয়ে, কারণ কেউ তাকে আর্থিক সহায়তা দেবে না। আমাকেই সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে, এর এক কারণ হল আমি নারী। অনেক মেয়েরা, যারা বিজ্ঞানে লিংগবাদের শিকার হয়েছে বলে মনে করছে, তারা আমার অভিজ্ঞতাকে সাক্ষ্য করে এটা প্রমাণ করতে পারবে যে কিছু মেয়েদেরকে সুবিধা দেয়া হয় যাতে তারা এগিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এই যুক্তিতে যারা ধরে নিয়েছে যে আমি আর্থিক সাহায্য পাচ্ছি কারণ আমি মেয়ে, আমার বুদ্ধিমত্তার জন্য নয়, তারা আমার বিশ্বাসযোগ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করবে। কিন্তু আমি অনেক খেটেছি, অনেক খাটা খাটুনির পরেই আজ যেখানে আছি সে পর্যন্ত আসতে পেরেছি, এবং আরও খেটে যাচ্ছি আমার গবেষণায় এগিয়ে যাবার জন্য, যাতে এক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়িত্ব (টেনিওর) পাওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে পারি। আমি কখনই আমার লিংগকে অভিযোগ করার কারণ হিসেবে দেখিনি এবং দেখিনা)

কাজেই উপসংহারে আমরা এটা বলতে পারি যে নারীদের মধ্যে তিনটা গোষ্ঠী আছে। (১) যারা পুরুষতান্ত্রিক সক্রিয় বাধার কারণে আন্তরিক ইচ্ছা সত্বেও কর্মজীবী হতে পারছে না। (২) যারা পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক মূল্যবোধের কারণে (সক্রিয় বাধা নয়) মানসিক ইনহিবিশানের জন্য কর্মজীবী হতে সাহসী হচ্ছেন না। (৩) যারা স্বেচ্ছায় সানন্দে পরজীবী জীবন বেছে নিচ্ছে সক্রিয় বা প্রচ্ছন্ন বাধার সম্মুখীন না হয়েও। (৩) এর একটা অবশ্রেণী (SubClass) হিসেবে আমরা আর এক গোষ্ঠীর (৩ক) কথা বলতে পারি যারা সানন্দে পরজীবী জীবন বেছে নেয় কিন্ত সেটাকে পুরুষতন্ত্রের দোহাই দিয়ে চাপিয়ে দেয়া পরজীবিতা বলে চালাতে চায়। (১) এর জন্য পুরুষতন্ত্র ১০০% দায়ী। (২) এর জন্য ৫০% আর (৩) এর জন্য ০%। পুরুষতন্ত্রে জন্য কি দায়ী। কেউ বলবে ধর্ম আর কেউ বলবে বিবর্তন। দুটোই ঠিক। বিবর্তন —> ধর্ম —-> পুরুষতন্ত্র। তবে ধর্মকে পুরুষতন্ত্রের একমাত্র কারণ হিসেবে দেখাটা ঠিক নয়। তবে এক জোরাল কারণ বটে। আবার ধর্মের মধ্যেও কোনটা আবার পুরুষতন্ত্রের জন্য বেশী দায়ী। যাই হোক ধর্মীয় গোড়ামীর অবসান ঘটলে তা পুরুষতন্ত্রের অবসানের জন্য এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। অনেকে বলবে ধর্ম (বা ধর্মীয় গোড়ামী) যদি বিবর্তনেরর কারণেই ঘটে তাহলে ধর্মীয় গোড়ামীর অবসান কেমন করে ঘটাবে মানুষ। এটা মনে রাখা দরকার যে ধর্মীয় গোড়ামী বিবর্তনের একমাত্র ফসল নয়। ধর্মনিরপেক্ষতাও বিবর্তনের এক ফসল। কাজেই ধর্মীয় গোড়ামী থেকে ধর্মনিরপেক্ষতায় উত্তরন বা পুরুষতন্ত্র থেকে লিংগনিরপেক্ষতায় উত্তরণ সম্ভব। বিবর্তন চাইলেই (অর্থাৎ প্রাকৃতিক কারণে ) বিবর্তনই মানুষের মধ্যে অধিক হারে পুরুষতন্ত্র বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করবে (যার কারণে আমি পুরুষতন্ত্রের ঘোর বিরোধী) আর ধীরে ধীরে সমাজ পুরুষতন্ত্র থেক লিংগনিরপেক্ষতায় দিকে পরিবর্তিত হতে থাকবে, যেমনটি অন্যান্য সমাজে কম বেশি ঘটেছে বা ঘটছে। মরুকেন্দ্রিক আরব সমাজে এই পরিবর্তন আসতে অনেক সময় লাগবে, যদি কখনো আসেই। সময়ই তা বলে দেবে।