প্রমাণহীন বিশ্বাসে,
স্বর্গ লাভের আশ্বাসে,
এসো হত্যা-সুখের উল্লাসে
আনন্দ কলরবে হেসে হেসে;
তাজারক্তের বানে আমরা যাই ভেসে।

এসো,
নিজের তাজারক্তের কাদায় ছটফট করা
মৃত্যুগামী পশুর মৃত্যুযন্ত্রণা দেখে করি উল্লাস।
হত্যা শেষে করি কোলাকুলি
রক্তের হলিখেলা খেলে শান্তির কথা বলি।

এসো,
সকলে মিলে নিরীহ জীব হত্যা করি।
ওদের রক্তের বিনিময়ে, প্রাণের বিনিময়ে
মহান স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করি;
তাঁর রক্তপিপাসু মন জয় করি,
ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের রাজ্য গড়ি।

মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ ক’রে ক’রে
যখন ওদের দেহটি প্রাণহীন নিথর হয়ে যায়,
ওরা দৃষ্টিহীন আয়তচোখে
স্রষ্টার পানে, সৃষ্টির সেরা জীবের পানে
নিষ্পলক তাকিয়ে রয়।
ওদের সেই দৃষ্টিহীন দৃষ্টি দেখে
খুশির বিদ্যুৎ খেলে যায়
আমাদের চোখে মুখে।
‘স্রষ্টার মন করতে পেরেছি জয়’
এই ভেবে মনে তৃপ্তি ও গর্ব অনুভূত হয়।

এসো,
বলি দেয়া অবলা, প্রতিবাদহীন প্রাণীদের
নিষ্প্রাণ দেহ ব্যবচ্ছেদ করি।
ওদের নিসাড় দেহ হতে
চামড়া টেনে খুলে ফেলি।

সেই চামড়ায় ব্যাগ, জুতা, জ্যাকেট
আরো হরেক রকম সৌখিন বস্তু তৈরি করি।
ওদের কলিজা, মগজ, নাড়িভুঁড়ি;
দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
কেটে কেটে ছোট ছোট টুকরো করি।
সেই টুকরোগুলো
মজাদার উপায়ে রান্না করে
নিজেদের উদোর পূর্তি করি।
গরীবের মাঝে বিতরণ ক’রে
মহত্ব ও সওয়াব হাসিল করি।
ওদের রক্ত, মাংস ও চামড়া নিয়ে খেলি
মহত্বের কেলী।

আত্মরক্ষায় নিরুপায় পশুদের
মৃত্যুযন্ত্রণার বিকটতানে,
ওদের রক্তের বানে,
দীনের শান্তিসুখ আসে আমাদের প্রাণে।
নির্বোধ সব পশুরা এই ধরণীর পরে
সৃষ্টি হয়েছে আশরাফুল মাকলুকাতের
প্রয়োজন ও সুখের তরে।

এ-ত ওদের পরম সৌভাগ্য!
দেবতা স্বয়ং মনে করেছিলেন
ওরা তাঁর উদ্দেশ্যে বলির যোগ্য।
এ-ত মহান হত্যাযজ্ঞ!
পশুদের হওয়া উচিত দেবতার কাছে কৃতজ্ঞ।
এই মহান হত্যাকে নিষ্ঠুর বলে কোন নরাজ্ঞ?

আমরা নিরীহের রক্তে খেলি
রক্তের হলিখেলা।
রক্তসাগরে ভাসাই শান্তির ভেলা।
সেই সাগরতীরে বসাই
পিশাচের কোলাকুলির মেলা।

আমরা সৃষ্টির সেরা জীব।
অসহায় পশুর জীবন করে হরণ
আমরা পুণ্য করি অর্জন;
সার্থক করি পশুদের মূল্যহীন পশুজীবন।
আমরা বুদ্ধির জোড়ে, প্রযুক্তির জোরে
পশুভুবনে নিজেদের স্বৈরসাম্রাজ্য তুলেছি গ’ড়ে।

পশুদের সদ্যকর্তিত গ্রীবা থেকে
যখন টগবগিয়ে খুন ভাসে,
তখন পবিত্রহত্যা-সুখের উল্লাসে
আমাদের চকচকিয়ে চোখ হাসে,
খিলখিলিয়ে মুখ হাসে,
বিশ্বাসে ভরা বুক হাসে।
হৃদয়খানি নাচে, ময়ূরের মত নাচে।