সাম্প্রতিক দুনিয়াতে ইসলাম সবচাইতে আলোচিত ও সমালোচিত বিষয়। একদল ইসলাম ধর্মের গুণগান গাইছে, ইসলাম কতটা সত্য ও আদর্শ ধর্ম, এর মধ্যে কি পরিমান বিজ্ঞান বিরাজমান আছে তা বের করার প্রানান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছে তো অন্য দল নিন্দাবাদ জ্ঞাপন করছে, বের করার চেষ্টা করছে এটা কতটা বর্বর আর এর মধ্যে কি পরিমান মিথ্যা গাল গল্প ও অপবিজ্ঞান নিহিত। এখন এর মধ্যে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা সেটা জানাই দুরুহ হয়ে পড়ে মাঝে মাঝে। কিন্তু কেউ যদি প্রকৃত সত্য জানতে চায় তা কিন্তু মোটেও দুরুহ না। কিন্ত তার আগে জানা দরকার কেন ইসলাম নিয়ে সারা দুনিয়াতে এত তোলপাড় ? তার একটাই কারন সারা দুনিয়ার দেশে দেশে ইসলামী জঙ্গীবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। গাড়ীবোমা, মানববোমা, বিমান বোমা এসবের আকারে এসব জঙ্গীবাদীরা আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষ মারছে। কেন তারা মানুষ মারছে? তারা দুনিয়া ব্যপী ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যারা অমুসলিম তাদেরকে ইসলামের ছায়া তলে আনতে চায়। যদি এ ব্যপারে কোন বাধা আসে তখন যুদ্ধ করে তাদেরকে ইসলামে দীক্ষিত করতে বাধ্য করতে হবে। একে বলে জিহাদ যা কোরান ও হাদিসে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- জিহাদ একটা চলমান যুদ্ধ যা প্রত্যেকটি সক্ষম মুসলমানের আবশ্যক কর্তব্য, যা কেয়ামতের আগ পর্যন্ত চলবে। ঠিক একারনেই ইসলাম নিয়ে সারা দুনিয়ায় টাল মাটাল কান্ড কারখানা চলছে। এখন আমাদের বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে- ইসলাম সত্যি সত্যি সভ্য জগতের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে কি না। আরও দেখতে হবে – ইসলাম মানব জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে কি না।

ইসলামের প্রথম ও সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো- ইমান অর্থাৎ বিশ্বাস। কিসে বিশ্বাস ? আল্লাহ ও তার রসূল মোহাম্মদের ওপর বিশ্বাস। শুধু আল্লায় বিশ্বাস করলে হবে না, আল্লা ও তার রসূল মোহাম্মদকে একই সাথে বিশ্বাস করতে হবে। আর এ বিশ্বাসটা করতে হবে বিনা প্রশ্নে। আল্লা বা সৃষ্টি কর্তা নিয়ে আমাদের দ্বিধা দ্বন্দ্ব সন্দেহ থাকতে পারে। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের বিপক্ষে দশটা যুক্তি হাজির করলে বিপক্ষেও দশটা যুক্তি দেয়া সম্ভব। তাই কেউ নি:সন্দেহভাবে প্রমান করতে পারবে না সৃষ্টিকর্তা আছে অথবা নেই। অর্থাৎ যুক্তির খাতিরে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব benefit of doubt তত্ত্ব মোতাবেক টিকে যেতে পারে। সুতরাং আলোচ্য নিবন্ধ থেকে সৃষ্টিকর্তাকে বাদ দেয়া যেতে পারে। বাকী থাকে মোহাম্মদ। এখন প্রশ্ন হলো মোহাম্মদ সত্যি কোন আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা প্রেরিত রসূল কি না।

যেখানে খোদ সৃষ্টিকর্তার সম্পর্কেই সঠিক সিদ্ধান্তে আসা যায় নি, সেখানে অবশ্যই মোহাম্মদের নবুয়ত্ব সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। অর্থাৎ কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না যে মোহাম্মদ হলো আল্লাহর রসূল। বিষয়টা এভাবে ব্যখ্যা করা যেতে পারে। এক লোকের যক্ষ্মা রোগ হলো ও ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মত টাকা না থাকায় অথবা ডাক্তারের ফি না দেয়ার ধান্ধায় সোজা একটা ওষুধের দোকানে গেল ওষুধ কিনতে। দোকানে নতুন কম্পাউন্ডার যে কোন ওষুধের নাম ও তার কাজ কি তা জানে না। সে শুধু ব্যবস্থাপত্র পড়ে সে অনুযায়ী তাক থেকে খুঁজে খুঁজে ওষুধ দিতে পারে। যক্ষ্মা রোগীটি সেই কম্পাউন্ডারের কাছে গিয়ে বলল ওষুধ দিতে। কম্পাউন্ডার নতুন হলেও বেশ চালিয়াৎ। সে ভাব দেখালো সে অনেক কিছু জানে। রোগীটিকে বোকা পেয়ে তাই সে তাক হাতড়ে যা সামনে পাওয়া গেল তেমন একটা ওষুধ দিয়ে দিল। এক্ষেত্রে রোগীর রোগ সারার সম্ভাবনা কতটুকু ? কম্পাউন্ডার জানে দোকানের হাজারো ওষুধের মধ্যে কোন একটা যক্ষ্মার ওষুধ। তার পরেও রোগীর রোগ সারার সম্ভাবনা অতিশয় সামান্য। এক্ষেত্রে সঠিক ওষুধ বাই চান্সে পাওয়াকে আল্লাহ আর মোহাম্মদ কে যক্ষ্মার আরোগ্য ধরলে, যুক্তি অনুযায়ী মোহাম্মদের নবুয়ত্বের সঠিকতা অতিশয় সামান্য। সঠিক ওষুধ বাই চান্সে পাওয়া- কে আল্লাহ ধরার কারন, আল্লাহ নিশ্চিতভাবে প্রমানিত না, বহু যুক্তি দেয়া যায় আল্লাহ নেই, তবে সামান্য সম্ভাবনা আছে অর্থাৎ যে ওষুধটা কম্পাউন্ডার দিচ্ছে তার সামান্য সম্ভাবনা আছে সেটা সঠিক ওষুধ হওয়ার আর সেটা যদি সত্যি সঠিক হয় তাহলে রোগীর রোগ সারবে অর্থাৎ মোহাম্মদ নবী হবে। বিষয়টা স্বয়ং মোহাম্মদ বুঝতে পেরেছিল বলেই সে সবচাইতে বেশী জোর দিয়েছিল ঈমান অর্থাৎ বিশ্বাসের ওপর। তার মানে মোহাম্মদ যা বলছে তার কোন পরীক্ষা করা যাবে না, বিনা প্রশ্নে অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে হবে। মোহাম্মদ আরও জানত একবার কিছু লোককে তার কথা বিশ্বাস করাতে পারলে, আস্তে আস্তে বাকীগুলোকেও বিশ্বাস করানো যাবে। কিভাবে মোহাম্মদ সেটা টের পেল? তার তীক্ষ্ণ মেধা, বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার দ্বারা। খেয়াল রাখতে হবে মোহাম্মদ তার ৪০ বছর বয়েসে সর্বপ্রথম দাবী করে সে আল্লাহর নবী। যথেষ্ট জ্ঞান, বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এটা বেশ দীর্ঘ সময়। সেই শৈশব থেকে মধ্য বয়স পর্যন্ত সে তার আশ পাশের মানুষগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছে, তাদের মানসিক স্তর ভালমতো পর্যবেক্ষন করেছে। এর মধ্যে সে ভালমতো জেনেছে ইহুদী ও খৃষ্টানদের ধর্মমত ও ধর্মীয় কিচ্ছা কাহিনীগুলো।

কথিত আছে মোহাম্মদ মক্কার অদুরে হেরা গুহার মধ্যে বসে নির্জনে চিন্তা ভাবনা করত। এ ভাবে চিন্তা ভাবনা করার সময় হঠাৎ করে এক ফিরিস্তা জিব্রাইল তার নিকট এসে আল্লাহর ওহী বলা শুরু করে। দেখা যাক্ কিভাবে ফিরিস্তা ওহী প্রদান করত। এ সম্পর্কে হাদিস দেখা যাক-

আয়শা হতে বর্নিত, হারেছ ইবনে হেশাম হুযুরকে জিজ্ঞেস করিয়াছিলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার নিকট ওহী আসে কিভাবে ? তিনি বলিলেন, প্রতিটি ওহীর সময় ফিরিস্তাই আগমন করে। কখনও কখনও ঘন্টার মত শব্দ করিয়া আসে। যখন ওহী সমাপ্ত হয় তখন ফিরিস্তা যা বলিল, আমি তাহা মুখস্ত করিয়া লই। এই ঘন্টার শব্দের মত ওহীটিই আমার কাছে অত্যন্ত কঠিন অনুভুত হয়। আর কখনও কখনও ফিরিস্তা মানবরূপে আগমন করে, আমার সাথে কথা বলে। সে যাহা বলে, আমি তাহা মুখস্ত করিয়া লই। সহী বুখারী, বই-৫৪, হাদিস-৪৩৮

আচ্ছা বোঝা গেল জিব্রাইল মোহাম্মদের কাছে আল্লাহর কাছ থেকে ওহী নিয়ে আসে। কেউ কখনও দেখেছে জিব্রাইলকে মোহাম্মদের কাছে আসতে? কোন সাক্ষী আছে ? না, কোন সাক্ষী নেই। তার মানে মোহাম্মদ যা কিছু বলবে তা যত উদ্ভট ও অদ্ভুত হোক বিশ্বাস করতে হবে। বিষয়টা তার প্রিয়তমা বুদ্ধিমতী কিশোরী বধু আয়শার মনে মনে হয় কিঞ্চিত সন্দেহের উদ্রেক করে। একারনে হয়ত সে বায়না ধরে ও বলে – হে আল্লাহর রসূল, আপনার কাছে হর হামেশা জিব্রাইল আসা যাওয়া করে, আপনি দেখতে পান, কথাবার্তা বলেন, কিন্তু আমরা দেখতে পাই না কেন? বুদ্ধিমান মোহাম্মদ বুঝল এটা একটা চ্যলেঞ্জের মত। আর এ ধরনের কৌতুহল বেশীদিন চলতে দেওয়াও বুদ্ধিমানের মত কাজ নয়। তাই মোহাম্মদ একদিন বলল-

আয়শা হ’তে বর্নিত, হুজুর একদিন তাঁহাকে বলিয়াছেন, আয়শা! ঐ দেখ জিব্রাইল তোমাকে সালাম দিতেছেন। আয়শা সালামের জবাব দিলেন- ওয়া আলাইহি সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকতুহু। এবং বলিলেন আপনি তো এমন কিছুও দেখেন যাহা আমরা দেখিতে পাই না। আয়শা হুযুর কে লক্ষ্য করিয়াই কথাগুলি বলিয়াছিলেন। সহি বুখারী, বই-৫৪, হাদিস-৪৪০

দেখা যাচ্ছে- মোহাম্মদ আয়শার চ্যলেঞ্জ এর কোন উত্তর দিতে পারেনি। আয়শা খুব পরিস্কারভাবেই বলছে যে সে জিব্রাইলকে দেখে নি। কিন্তু না দেখলেও এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করারও কোন সুযোগ তার নেই, কারন তার পিতা আবু বকর অনেক আগেই মোহাম্মদকে বিশ্বাস করেছে আর মোহাম্মদ যতই উদ্ভট কথা বার্তা বলুক না কেন তা সে বিনা প্রশ্নেই বিশ্বাস করে।

বিষয়টাকে এবার ভিন্ন আঙ্গিকে দেখা যাক। বর্তমান কালের বিখ্যাত অনলাইন লেখক আলী সিনা তার এক প্রবন্ধে যেমন বলেছেন- ইসলাম একটা প্রকান্ড মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত ( তার লেখা পাওয়া যাবে www.faithfreedom.org এখানে)। সাধারন মানুষ ছোট খাট মিথ্যা বলতেই ভয় পায় , যদি বলে ফেলেও খুব তাড়াতাড়ি তা ধরা খেয়ে যায়। কিন্তু কোন লোক যদি প্রকান্ড মিথ্যা কথা বলে তাহলে সাধারন মানুষ তা বিশ্বাস করার আগে প্রচন্ড রকম চমকে যায়। আর তাদের সামনে দুটো পথ মাত্র খোলা থাকে – এক. হয় লোকটাকে পাগল বা উন্মাদ সাব্যাস্ত করা, অথবা দুই. তার কথা বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করা। আর একবার যদি কিছু লোক তাকে বিশ্বাস করে বসে তাহলে তাদের পক্ষে লোকটার যাবতীয় সবকিছুই বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করতে হবে অন্ধের মত।মোহাম্মদ সেই যৌবনের প্রারম্ভ থেকে তার আশ পাশের লোকজনকে ভাল মতো পর্যবেক্ষন করেছে, জেনেছে তাদের মন মানসিকতার স্তর। তাই দীর্ঘদিন সময় নিয়ে তারপরই সে তার প্রকান্ড মিথ্যা কথাটা বলেছে, অবশ্যই একটা বড় রকমের রিস্ক নিয়ে। কিন্তু কেন মোহাম্মদ এ ধরনের প্রকান্ড মিথ্যা কথা বলল প্রচন্ড রিস্ক নিয়ে ? তার কি প্রয়োজন ছিল ? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে গেলে সেই মোহাম্মদের সময়কার মক্কার সমাজ ব্যবস্থা জানা অত্যন্ত জরুরী। সে সময় মক্কার সমাজ কতকগুলো গোষ্ঠিতে বিভক্ত ছিল। এসব গোত্রের মধ্যে প্রায়ই সময় বিবাদ লেগে থাকত। অতি তুচ্ছ কারনে তারা অনেক সময় বিবাদ বাধাত, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হতো। যেমন- কাবা ঘরের মধ্যে সেই কাল পাথর বসানো নিয়ে তারা প্রায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হ’তে গেছিল যা পরে মোহাম্মদের হস্তক্ষেপে প্রশমিত হয়। মোহাম্মদ সেই বাল্য কাল থেকেই চিন্তাশীল ছিল, তেমনি ছিল বুদ্ধিমান। যা তার ব্যবসায়িক কাজে সাফল্য ও আসওয়াদ পাথরকে কাবায় বসানোর ঘটনা থেকে নি:সন্দেহে বোঝা যায়। তার মূল চিন্তা ছিল মক্কার বিভক্ত গোষ্ঠীগুলিকে একত্র করে একটা জাতি হিসাবে গড়ে তোলা যাতে মক্কা তথা আরব দেশে প্রাথমিক ভাবে একটা শক্তিশালী রাজ্য গড়ে তোলা যায়। অর্থাৎ তার চিন্তা ছিল রাজনৈতিক। স্বজাতীর প্রতি ভালবাসা বা দেশপ্রেম থেকেই এটা উৎসারিত। বস্তুত:সেই তখনকার আমলের আরবগুলোর মধ্যে উৎকট দেশপ্রেমিকতা প্রবল ছিল। মোহাম্মদ তাদের সেই দেশপ্রেমের শক্তিকে কাজে লাগাতে চাইল।এ চিন্তা তার মাথায় আসে রোম বা পারস্য সাম্রাজ্যের শান শওকতের কাহিনী শুনে, এমনকি পার্শ্ববর্তী সিরিয়ার চাকচিক্যও তাকে এ চিন্তায় অনুপ্রাণিত করেছিল। মক্কার গোষ্ঠীগুলি ছিল পৌত্তলিক আর কাবার মধ্যে ছিল তিনশ ষাটটি পুতুল যাদেরকে তারা দেব দেবী মনে করত। বিভিন্ন কেন্দ্রিক দেব দেবতার আধিপত্য নিয়েও বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত বেধে যেত, তারা প্রমান করার চেষ্টা করত কোন দেবতা বা দেবীর শক্তি বেশী। বুদ্ধিমান মোহাম্মদ বুঝল- এদেরকে যদি একেশ্বরবাদী ধর্মে রূপান্তরিত করা যায়, তাহলে তার অধীনে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব। তার এহেন চিন্তা ভাবনার পরিচয় আমরা পাই তার পরবর্তী জীবনের কাজকর্ম দেখে। ধর্মপ্রচারক নবীর চাইতে রাজনৈতিক নবীর সাফল্য তাই অনেক বেশী। মক্কায় তার ১০ বছরের বেশী সময় গেছে ইসলাম প্রচারে কিন্তু তেমন সাফল্য আসে নি। কিন্তু মদিনায় গিয়ে মদিনাবাসীদেরকে একত্রিত করে যখনই মোহাম্মদ রাজনৈতিক ক্ষমতার অধীকারী হয়েছে তখনই তার সাফল্য আকাশচুম্বি। নিরপেক্ষ দৃষ্টি দিয়ে দেখলে দেখা যাবে- নবী হিসাবে মোহাম্মদের চাইতে শাসক মোহাম্মদের সাফল্য অনেক অনেক বেশী, যদিও সে সাফল্যকেই ইসলামী পন্ডিতরা নবী মোহাম্মদের সাফল্য হিসাবে দেখাতে চায়।

মোহাম্মদ ও ইসলাম নিয়ে গবেষণা করতে গেলে সবচাইতে বড় যে সমস্যায় পড়তে হয় তা হলো-আরবে মোহাম্মদ তার ইসলাম প্রচার ও প্রসারের পর আরবের অতীত ইতিহাস ও নিদর্শন সব ধ্বংস করে ফেলেছে। শুধু আরব দেশই নয়, এর পরে যে সব দেশে ইসলাম প্রসারিত হয়েছে সেখানেও একই অবস্থা পরিলক্ষিত। তবে আরব দেশের জন্য এটা খুব বেশী প্রযোজ্য। ইসলামের আগেকার আরব দেশের ইতিহাস পাওয়া তাই খুবই দুরুহ। কোন সঠিক প্রামান্য ইতিহাস নেই। আইয়ামে জাহিলিয়াত বা বর্বর যুগের নামে তা সব ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে, সংরক্ষন করা হয় নি।ইসলামের চরিত্র হলো সর্বাত্মক।সে যেখানেই যাবে সেখানকার ইতিহাস, এতিহ্য, সংস্কৃতি সব ধ্বংস করে দিয়ে আরব সংস্কৃতির প্রসার ঘটাবে। এটা এতটাই সর্বাত্মক যে – একজন বাংলাদেশী মুসলমান এক সময় মনে করবে-সে একজন বাঙালী নয় বরং আরব, আর তা ভেবে সে গর্ব অনুভব করবে। একারনে মোহাম্মদ ও তার ইসলাম নিয়ে গবেষণা করতে গেলে মূলত; মুসলমানদেরই লেখা কিতাবের ওপর নির্ভর করতে হবে। কিন্তু বিজয়ীরা সব সময় তাদের স্বপক্ষেই ইতিহাস রচনা করে যেখানে বিজিত লোকরা হয় সব শয়তান আর বিজয়ীরা হয় সাধু। যেমন-একজন নিবেদিত প্রান মুসলমান কখনই এমন কিছু লিখবে না যাতে মোহাম্মদের চরিত্রের সামান্য নেতি বাচক দিক ফুটে ওঠে। বরং মোহাম্মদের নেতিবাচক কিছু থাকলেও সে তা এড়িয়ে যাবে ও যে সব গুন মোহাম্মদের ছিল না বা যেসব ঘটনা মোহাম্মদ ঘটায় নি সেধরনের অনেক মনগড়া বিষয় সুন্দর শব্দ ও বাক্য চয়ণ করে লিখে যাবে। নিবেদিত প্রান মুসলমানের দ্বারা লেখা সব গুলি কিতাবেই এটা অত্যন্ত উৎকটভাবে প্রকাশ্য। কিন্তু তার পরেও তাদের রচনায় কিছু কিছু বিষয় থাকবে যা থেকে আসল ঘটনা বা বিষয় টের পাওয়া যেতে পারে। কেউ যদি গোলাম মোস্তফা বা ড. এনামুল হকের মহানবীর জীবনী পড়েন তিনি তা ভালমতোই টের পাবেন।

সর্বপ্রথমেই দেখা যেতে পারে তার আল্লাহর ধারনা সম্পর্কিত বিষয়টিকে। দেখা যায়- আল্লাহ শব্দটি নতুন কিছু না, এটা সম্পূর্নই আরব পৌত্তলিকদের একজন দেবতা, প্রধান দেবতা। ইবনে ইসহাকের সিরাত রাসূলুল্লাহ বা রসূলুল্লাহর জীবনীতে এসব দেখা যায়। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে- ইসহাক কিন্তু আল্লাহ কে প্যগানদের প্রধান দেবতা হিসাবে উল্লেখ করতে ভুলে গেছেন। কারনটাও বোধগম্য। প্যাগানদের দেবতার নাম বহাল থাকলে তা ইসলামের ভাবমূর্তি তথা মোহাম্মদের ভাব মূর্তির জন্য ক্ষতিকর।

যখন মোহাম্মদ জন্মাল তখন রেওয়াজ ছিল, ধাত্রী দিয়ে তাদেরকে দুধ পান করানো ও লালন পালন করা। মোহাম্মদ জন্মানোর পর সে এতীম বলে কোন ধাত্রী তাকে নিতে রাজী হলো না। হালিমা নামের এক ধাত্রী তাকে নেয়ার জন্য তার স্বামীর কাছে অনুরোধ করলে তার স্বামী তাকে বলল- “তাকে নাও , সম্ভত এর মধ্যে আল্লাহ আমাদের জন্য কোন আশীর্বাদ দেবেন।” এর পরে এক সময় সে হালিমাকে বলল- “হালিমা , আল্লাহর কসম, তুমি আমাদের জন্য একটা আশীর্বাদযুক্ত আত্মা এনেছ।” এর পরেও বহুবার সে আর হালিমা “আল্লাহ” শব্দটি উচ্চারন করেছে (সিরাত রাসূলুল্লাহ, ইবনে ইসহাক, পৃ-৮-৯)

তখন তো ইসলাম ধর্ম ছিল না, আরবরা ছিল পৌত্তলিক ইসলাম অনুসারে, তাহলে হালিমা আর তার স্বামী আল্লাহ শব্দটি কোথা থেকে পেল? কাকেই বা আল্লাহ বলে সম্বোধন করল? যদি ইসলাম ধর্ম সম্মত আল্লাহ হয়ে থাকে তাহলে আরবরা যে বহু ঈশ্বরবাদী ছিল তা প্রমানিত হয় না, আর ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আরবরা যদি বহু ঈশ্বরবাদী হয় তাহলে আল্লাহ এখানে একজন অন্যতম ঈশ্বর বা দেবতা বা দেবী। সিরাত রাসুলাল্লাহ গ্রন্থে এভাবে বহুবার তথাকথিত পৌত্তলিকদেরকে আল্লাহ শব্দটি উচ্চারন করতে দেখা যায়।

Allah was not considered the sole divinity; however, Allah was considered the creator of the world and the giver of rain. The notion of the term may have been vague in the Meccan religion.[8] Allah was associated with companions, whom pre-Islamic Arabs considered as subordinate deities. Meccans held that a kind of kinship existed between Allah and the jinn.[21] Allah was thought to have had sons[22] and that the local deities of al-ʿUzzā, Manāt and al-Lāt were His daughters.[23] The Meccans possibly associated angels with Allah.[24][25] Allah was invoked in times of distress.[25][26] Muhammad’s father’s name was ʿAbd-Allāh meaning “the slave of Allāh”[25]( http://en.wikipedia.org/wiki/Allah)

এখন আরব প্যাগানরা আল্লাহ শব্দটি কোথা থেকে পেল?সোজা কথা , আল্লাহ শব্দটি মোহাম্মদের কোন নতুন আবিস্কৃত শব্দ না। ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের অনেক আগ থেকেই মধ্যপ্রাচ্যীয় খৃস্টানরা তাদের ঈশ্বরকে আল্লাহ বলেই সম্বোধন করত এবং এখনও অনেকেই তা করে থাকে(http://www.christiananswers.net/q-eden/allah.html)। এখন জানা দরকার এ আল্লাহ শব্দটির উৎপত্তি কোথা থেকে? উৎপত্তি যেখান থেকেই হোক না কেন খৃষ্টিয় ও ইহুদীদের আল্লাহ বা God এবং মুসলমানদের আল্লাহ কি এক ?

প্রথমেই আমাদের জানা দরকার , আল্লাহ শব্দটি কোথা থেকে এসেছে আর আরব প্যগানরা কাকেই বা আল্লাহ বলত। নিরপেক্ষ সূত্র মতে আল্লাহ শব্দটি এসেছে আরবী al –‘the’ and ‘ilah’- deity or god থেকে। পরে উচ্চারন সহজ করার জন্য ilah শব্দটির i কে বাদ দিয়ে al+lah= allah এভাবে আল্লাহ শব্দটি উদ্ভুত হয়েছে। অথচ মুসলিম পন্ডিত দের মতে এটা এসেছে আরবী elah শব্দ থেকে । উপরোক্ত শব্দ থেকে বোঝাই যাচ্ছে elah শব্দটা এসেছে ilah শব্দ থেকেই আর তা এসেছে উচ্চারনে সহজতা আনার জন্য। বাংলা ভাষায় ভুরি ভুরি এর নজীর দেয়া যায় যেমন-ইসহাক→ এসহাক, বিড়াল্→বেড়াল, পিতল→ পেতল ইত্যাদি। এখানে বোঝা দরকার , ইসলামী পন্ডিতরা এরকম কেন ব্যাখ্যা দিচ্ছে? তার কারন তারা প্যাগানদের উচ্চারিত আল্লাহ শব্দটির সাথে একটা ভিন্নতা সৃষ্টি করতে চাইছে। কেন তারা তা চাইছে ? কারন তারা বুঝাতে চায় প্যাগানদের কথিত আল্লাহ কিন্তু মোহাম্মদ কথিত আল্লাহ নয়। এরা প্রমান করতে চায় মোহাম্মদ কথিত আল্লাহই হলো তৌরাত, বাইবেলের কথিত আল্লাহ, তথা এ আল্লাহ মোহাম্মদকে শেষ নবী হিসাবে দুনিয়ায় প্রেরন করেছে, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বানী অনুযায়ী, তাই সকল ইহুদি ও খৃষ্টানদের উচিত মোহাম্মদের ধর্ম অনুসরণ করা। প্রাক-ইসলামী যুগে কথিত পৌত্তলিকদের ৩৬০ টি মূর্তি ছিল কাবা ঘরে। এর মধ্যে প্রধান ছিল- আল্লাহ ও তার তিন কন্যা যারা দেবী- আল-লাত, উজ্জা ও মানাত। এ তিন দেবীর কথা কোরানেও উল্লেখ আছে।

তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে। এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে? সূরা- আন-নাজম ৫৩: ১৯, মক্কায় অবতীর্ন।

উপরোক্ত আয়াতে মোহাম্মদ পৌত্তলিক কোরাইশদের দেবতাদের স্বীকার করে নিচ্ছেন। এ আয়াতটিই বিখ্যাত শয়তানের আয়াত বলে ইসলামি জগতে পরিচিত যা আবার বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত। এর ফলে কুরাইশদের মধ্যে উৎফুল্লতা সৃষ্টি হলো। তারা দেখল অবশেষে মোহাম্মদ তাদের দেবীদেরকে স্বীকার করে নিল, এরপর তারা সবাই কাবায় একসাথে প্রার্থনা করল। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই তার হঠাৎ মনে হলো যে কাজটা ঠিক হয় নি। এসব দেব দেবীদেরকে স্বীকার করে নিলে ইহুদি ও খৃষ্টানদের কাছে তার নবুয়ত্বের যৌক্তিকতা থাকবে না। তাহলে তার নবূয়ত্ব ও ইসলাম দুটোই ব্যর্থ হয়ে যাবে।তিনি তো ইব্রাহীম, মূসা আর ইশার পরে সর্বশেষ নবী দাবীকারী। শুধু পৌত্তলিকদের নবী বা ধর্মগুরু হলে তার স্বপ্ন সফল হবে না। তাই সাথে সাথে তিনি সূরা নাজিল করলেন-
পুত্র-সন্তান কি তোমাদের জন্যে এবং কন্যা-সন্তান আল্লাহর জন্য? এমতাবস্থায় এটা তো হবে খুবই অসংগত বন্টন। এগুলো কতগুলো নাম বৈ নয়, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষদের রেখেছ। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেননি। তারা অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে।কোরান, সূরা- আন-নাজম ৫৩: ২০-২২, মক্কায় অবতীর্ন।

অর্থাৎ তিনি আগের আয়াতে দেবীদেরকে যে স্বীকার করে নিয়েছিলেন তা অস্বীকার করে ফেললেন। সেই সময়ে আরবদের কাছে পূত্র সন্তান ছিল কাম্য আর কন্যা সন্তান ছিল অপাংক্তেয়। আয়াতে তাই বলা হচ্ছে- পূত্র সন্তান হবে তোমাদের আর আল্লাহর হবে কন্যা সন্তান? এটা যৌক্তিক নয় ও গ্রহনও করা যায় না।তখন বলা হলো – আগের আয়াত ওটা শয়তান জিব্রাইলের বেশ ধরে মোহাম্মদকে বলে গেছিল। কি আশ্চর্য কথা! আল্লাহর সবচাইতে পেয়ারা নবী, শ্রেষ্ট নবী, যার একজন সামান্য উম্মত হওয়ার জন্য আগের নবীরা হা পিত্যেশ করেছে, অথচ শয়তান এসে তার কাছে আয়াত বলে গেল আর তিনি টেরটি পেলেন না , তার আল্লাহ তাকে সাথে সাথে বলেও দিলেন না। অথচ তিনি কখন কার সাথে সহবাস করবেন, কাকে বাদ দিয়ে কার ঘরে রাত কাটাবেন, কাকে বিয়ে করবেন এসব আল্লাহ তাকে ক্ষিপ্র গতিতে জানিয়ে দেয়। কখন জিব্রাইল তাকে ভুলটি শুধরিয়ে দিল ?

যখন মোহাম্মদ দেখল কুরাইশরা তার ইসলাম গ্রহন করছে না , তার বয়সও বেড়ে যাচ্ছে, অথচ কোন সাফল্য আসছে না তখন অনেকটা মরিয়া হয়ে তিনি এমন পথ ধরার চিন্তা করলেন যা কুরাইশদেরকে আকৃষ্ট করে তার দলে আসতে সাহায্য করবে। তখনই তিনি উক্ত সূরা নাজিল করেন। কুরাইশরা এটা শুনে আনন্দিত হলো। এ খবর একটা সময়ে মদিনা ও আবিনিসিয়ায় প্রবাসী হয়ে থাকা মুসলমানদের কাছে গেল ও তারা মক্কায় নিজ ঘরে ফিরে আসার তোড়জোড় শুরু করল। আর তখনই জিব্রাইল এসে বলল- হে মোহাম্মদ আপনি কি করেছেন? আল্লাহ যা আপনাকে বলেন নি আপনি সেটাই প্রচার করেছেন। আর তখনই ৫৩ নং সূরার ২০-২২ নং আয়াত নাজিল হয়। এছাড়াও মোহাম্মদকে আশ্বস্থ করার জন্য নিচের এ আয়াত সমূহ নাজিল হয়-

আমি আপনার পূর্বে যে সমস্ত রাসূল ও নবী প্রেরণ করেছি, তারা যখনই কিছু কল্পনা করেছে, তখনই শয়তান তাদের কল্পনায় কিছু মিশ্রণ করে দিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ দূর করে দেন শয়তান যা মিশ্রণ করে। এরপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সু-প্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়। এ কারণে যে, শয়তান যা মিশ্রণ করে, তিনি তা পরীক্ষাস্বরূপ করে দেন, তাদের জন্যে, যাদের অন্তরে রোগ আছে এবং যারা পাষাণহৃদয়। গোনাহগাররা দূরবর্তী বিরোধিতায় লিপ্ত আছে। এবং এ কারণেও যে, যাদেরকে জ্ঞানদান করা হয়েছে; তারা যেন জানে যে এটা আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে সত্য; অতঃপর তারা যেন এতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর যেন এর প্রতি বিজয়ী হয়। আল্লাহই বিশ্বাস স্থাপনকারীকে সরল পথ প্রদর্শন করেন। সূরা হাজ্জ-২২: ৫২-৫৪, মদীনায় অবতীর্ণ।

এখানে পরিস্কার করে বলা হচ্ছে মোহাম্মদের কাছে প্রেরিত ওহীতে মাঝে মাঝে শয়তান তার কল্পনা মিশ্রণ করে দেয়। সেটা আবার কেমন ? এমন আজগুবি ও উদ্ভট ঘটনা কিভাবে সম্ভব ? আল্লাহ ওহী প্রেরণ করে জিব্রাইল ফেরেস্তার মাধ্যমে, তার মাঝখানে আবার শয়তান তার কল্পনা মিশ্রন করে কিভাবে? সর্ব শক্তিমান আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত জিব্রাইলকে কে পথে আটকিয়ে তার মধ্যে অন্য বার্তা ঢুকায়ে দিতে পারে ? তা যদি পারে তাহলে আল্লাহ সর্ব শক্তিমান হয় কিভাবে? শয়তান যদি সেটা করতে পারে তাহলে তো বলতে হবে শয়তান আল্লাহর চাইতেও শক্তিশালী। কিছুটা বুদ্ধি যার ঘটে আছে সে খুব ভালমতো ধরে ফেলবে যে এটা একটা চালাকি আর সেটা ঢাকতেই সাথে সাথে বলা হচ্ছে- শয়তান যা মিশ্রণ করে, তিনি তা পরীক্ষাস্বরূপ করে দেন, তাদের জন্যে, যাদের অন্তরে রোগ আছে এবং যারা পাষাণহৃদয়। এখানে ঢাক দিতে গিয়ে কেঁচে গন্ডুস করে ফেলেছে আল্লাহ। কারন যাদের অন্তরে রোগ আছে আর যারা পাষাণ হৃদয় তাদের জন্য আবার পরীক্ষা কিসের? তাদেরকে তো আল্লাহ করুণা করে অত্যন্ত সহজ ভাবে নিজের পথে আনবে। পরীক্ষা করতে পারে একমাত্র বিশ্বাসী লোকদেরকে এটা দেখতে যে তাদের বিশ্বাস কতটা অটুট, যেমন সেটা আল্লাহ করেছিল ইব্রাহীমের উপর, মূসার উপর। ফিরাউনের উপর তো আল্লাহ পরীক্ষা করতে পারে না কারন তার হৃদয় তো এমনিতেই পাষাণ। তাকে আল্লাহ শিখানো পড়ানোর পর বিশ্বাসী হলেই পর একমাত্র পরীক্ষা করতে পারে। আল্লাহর কি অদ্ভুত যুক্তি! কুরাইশরা খুব ভাল মতো মোহাম্মদের এ চালাকি ধরতে পেরেছিল বলেই এর পর তার ওপর বেশী ক্ষাপ্পা হয়ে যায়। এর কারণটাও যৌক্তিক। তাদের দেবীদেরকে স্বীকার করে পরে তা প্রত্যাখ্যান করেছে, এর পর আবার উদ্ভট কথামালা দিয়ে তা ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করছে।

এখানে আরও একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য করতে হবে। সেটা হলো- কোরান কতটা এলোমেলো ভাবে বর্নিত অথবা সংকলিত করা হয়েছে অর্থাৎ কোন সামঞ্স্য এতে নেই। শয়তানের আয়াত যা ৫৩ নং সূরা যা মক্কাতে অবতীর্ণ অথচ সে সম্পর্কিত সান্তনা সূচক আয়াত হলো ২২ নম্বর সূরায় যা নাকি আবার মদীনায় অবতীর্ণ। কোরানের মধ্যে এত গোলমাল আছে তা অতি ধৈর্য ও মনযোগ সহকারে না পড়লে বোঝাই যায় না। বলাবাহুল্য, মক্কায় অবতীর্ণ সূরা আগে অবতীর্ণ, আর মদিনায় অবতীর্ণ সূরা পরে অবতীর্ণ। সে হিসাবে ৫৩ নং সূরা ২২ নং সূরার আগে থাকা উচিত আর তাহলেই কোরান পড়ে বুঝতে সুবিধা। কিন্তু এখানে উক্ত সকল আয়াত একই সূরাতে থাকা উচিত , তাহলে পরিস্কার ভাবে সব কিছু বোঝা যায়, কোন অস্পষ্টতা থাকে না। এখানে যে ভাবে ভিন্ন ভিন্ন সূরা সাজানো হয়েছে একই ঘটনার প্রেক্ষিতে কার বাপের সাধ্য তা বুঝবে ?

অথচ আল্লাহ এর চাইতে কত সামান্য ব্যপারে অতি দ্রুত ওহী পাঠিয়ে দেয় তার সামান্য একটু নমূনা-

মুহাম্মদ ইবনে হাতেম ইবনে মায়মুন এবং মুহাম্মদ ইবনে রাফে বর্ণনা করেছেন– আনাস বলেন যে, যয়নব এর ইদ্দত পূর্ণ হইলে রাসূলুল্লাহ যায়েদকে বললেন, তুমি যয়নবের নিকট আমার বিয়য় বল। আনস বললেন, যায়েদ তার নিকট চলে গেলেন। তখন তিনি আটার খামির করিতেছিলেন।যায়েদ বলেন, আমি যখন তাকে দেখিলাম, তখন আমার অন্তরে তার মর্যাদা এমনভাবে জাগ্রত হলে যে আমি তার প্রতি আর তাকাইতে পারলাম না। কেনান রাসূলে পাক তাকে গ্রহণ করেছেন; সুতরাং আমি তার দিক হইতে মূখ ফিরাইয়া পিছনে সরিয়া আসিলাম। তারপর বললাম, হে যয়নব! রাসূলুল্লাহ আপনাকে স্মরণ করে আমাকে প্রেরণ করেছেন। আমার কথা শুনে তিনি বললেন আমি এই সম্পর্কে কিছুই বলিব না ও করিব না যে পর্যন্ত না আল্লাহর তরফ হতে আমার নিকট কোন নির্দেশ আসে। এর পর তিনি নামাজের স্থানে গিয়ে দন্ডায়মান হলেন। এদিকে কুরআনে পাকের আয়াত নাযিল হলো এবং রাসূলুল্লাহ এসে যয়নবের অনুমতি ছাড়া তার ঘরে প্রবেশ করলেন। আনাস বলেন, আমরা দেখিলাম , রাসূলুল্লাহ যয়নবের সেই বিবাহের সময় দ্বিপ্রহরে আমাদেরকে রুটি ও গোশত আহার করালেন। সহি মুসলিম, হাদিস নং-৩৩৩০

অর্থাৎ যয়নব একটু নিমরাজি হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ সেকেন্ডের মধ্যে ওহি পাঠিয়ে দিলেন ও যে কাজ ইসলামে প্রচন্ডভাবে নিষেধ সেই কাজ নিজেই করলেন, তা হলো- কোন নারী একা গৃহে থাকলে তার ঘরে প্রবেশ করা যাবে না। গৃহে প্রবেশ করলেন তাও বিনা অনুমতিতে। অথচ তখনও মোহাম্মদের সাথে যয়নবের বিয়ে হয় নি।

আরও একটা নমুনা দেখা যাক্ –

আবু কুরাইব মুহাম্মদ ইবনে আলা বর্ণনা করেছেন—- আয়শা বলেন যে মহিলারা রাসূলুল্লাহ এর স্ত্রী হওয়ার জন?যে গায় পড়িয়া আত্মনিবেদন করত তাদের নির্জলজ্জতার কারণে আমি বিস্মিত হতাম এবং বলতাম যে কোন নারী কি এভাবে আত্ম নিবেদন করে ? এর পর আল্লাহ নাজিল করলেন এ ওহী- আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা কাছে রাখতে পারেন। আপনি যাকে দূরে রেখেছেন, তাকে কামনা করলে তাতে আপনার কোন দোষ নেই। এতে অধিক সম্ভাবনা আছে যে, তাদের চক্ষু শীতল থাকবে; তারা দুঃখ পাবে না এবং আপনি যা দেন, তাতে তারা সকলেই সন্তুষ্ট থাকবে। তোমাদের অন্তরে যা আছে, আল্লাহ জানেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল। সূরা আল আহযাব, ৩৩:৫১, মদীনায় অবতীর্ণ। আয়শা বলেন এই আয়াত নাজিল হলে আমি বললাম , আল্লাহর কসম, আমি তো দেখতেছি আপনার প্রতিপালক আপনার ইচ্ছা পূরণ করতে সাথে সাথে সাড়া দিয়ে থাকেন। সহি মুসলিম, হাদিস-৩৪৫৩

এখানেও দেখা যাচ্ছে , আল্লাহ অতি দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য মোহাম্মদের কাছে ওহী পাঠিয়ে দেয়। বিন্দু মাত্র দেরী করে না। বিষয়টি আয়শার কাছে সন্দেহের সৃষ্টি করে। আর করবেই বা না কেন। যে নারী এসে মোহাম্মদকে বিয়ে করতে চায়, মোহাম্মদ অকাতরে তাকে বিয়ে করে ফেলে। কোন আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন নারী তার স্বামীর এহেন কর্মকান্ড মেনে নিতে পারে না। যতদুর জানা যায় আয়শা ছিল খুবই বুদ্ধিমতী। তার নিজের বাপের ছিল একটি মাত্র বৌ, অথচ আল্লাহর নবী একের পর এক বিয়ে করে চলেছেন। বিষয়টা তার খুবই দৃষ্টি কটু লাগে।আর সেই সন্দেহের কারনেই সে উক্ত কথাগুলো বলে। সন্দেহ না হলে সে এ ব্যপারে চুপ থাকত, কোন মন্তব্য করত না। আরও খেয়াল করতে হবে-প্রায় সাথে সাথেই ওহী চলে এসেছে যখন মোহাম্মদ নারী ঘটিত কোন ঝামেলায় জড়িয়ে গেছেন তখন। অথচ খোদ ইসলামের ভিত্তি মূলে আঘাত করার যে শয়তানের আয়াত যা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে ইসলামেরই অস্তিত্ব বিপন্ন হতো, ইসলাম হয়ে যেত আরবেদের সেই পৌত্তলিক ধর্ম, সে ক্ষেত্রে আল্লাহ নিলেন বেশ লম্বা সময়। সেই সময় মক্কা থেকে মদিনা বা আবিনিসিয়া যাওয়া ছিল বেশ কয়দিনের ব্যাপার। শয়তানের আয়াতের খবর মক্কা থেকে মদিনা ও আবিনিসিয়া চলে গেছে, তারপর মোহাম্মদের কিছু অনুসারী মক্কায় ফিরেও এসেছে। তার মানে কম পক্ষে ১৫/২০ দিন কেটে গেছে বা আরও বেশীদিন। আর এর পরেই আল্লাহ বুঝতে বা জানতে পারল যে মোহাম্মদের কাছে শয়তান গিয়ে শয়তানের বানী জিব্রাইলের রূপ ধরে পৌছে দিয়ে গেছে, আর তখনই সে তার পরিবর্তে অন্য আয়াত প্রেরণ করল মোহাম্মদকে উদ্ধার করতে। অথচ যয়নব বায়না ধরা মাত্রই অতি দ্রুত আল্লাহ সেটা টের পেল আর মোহাম্মদকে উদ্ধার করতে ওহী পাঠিয়ে দিল বা আয়শা নারীদের ব্যপারে জিজ্ঞেস করা মাত্রই সাথে সাথে আল্লাহ ওহী পাঠিয়ে দিয়ে মোহাম্মদকে রক্ষা করল। মোহাম্মদের প্রতি আল্লাহর এ অপার করুণা আমাদেরকে বিস্মিত করে বৈ কি! তবে যুক্তিতে মেলে না।

তাহলে এখন প্রশ্ন আসে , মোহাম্মদ কোন আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা হিসাবে মেনে নিচ্ছেন? মোহাম্মদ স্পষ্টতই পৌত্তলিকদের আল্লাহকে স্বীকার করে নিচ্ছেন। তবে পৌত্তলিকরা যেমন বিশ্বাস করত আল্লাহর তিনটি কন্যা লাত , উজ্জা ও মানাত আছে, মোহাম্মদ সেটাকে বর্জন করে সেই পৌত্তলিক ধর্মকেই একটা একেশ্বরবাদী রূপ দিয়েছেন। কেন মোহাম্মদের আল্লাহ ইহুদি ও খৃষ্টান দের বর্ণিত আল্লাহ নয় ? কারন বাইবেলে বর্নিত আল্লাহর সাথে কোরানে বর্নিত আল্লাহর আকাশ পাতাল তফাৎ পরন্তু দেখা যায় পৌত্তলিকদের কিছু প্রথা যেমন – কাল পাথরকে চুম্বন করা, কাবা প্রদক্ষিন করা, পশু কোরবানী ইত্যাদি ইসলামে প্রবেশ করেছে। এ ব্যপারে বিস্তারিত পরের পর্বে তুলে ধরা হবে।