আমি এক ভদ্রলোককে চিনতাম
যৌবনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন,
তুখোড় কমিউনিষ্ট নেতা ছিলেন
ওনাকে কখনও আস্তে কথা বলতে শুনিনি
কথা বলতেন বেশ শব্দ করে।
জিজ্ঞেস করলে হেসে বলতেন,
ভায়া, এ মুখ মুক্তির স্লোগান দিয়েছে সারাজীবন
আস্তে কথা বলতে কখনও শেখেনি যে!

তারপর থেকে আমি কখনও আস্তে কথা বলিনি।

হাঁটতেন ঋজু ভঙ্গিতে,
ব্যক্তিত্ব ঠিকরে পড়ত প্রতিটি দেহকোষ থেকে,
রাস্তা কাঁপিয়ে হাঁটতেন।
জিজ্ঞেস করলে বলতেন,
ভায়া মিছিলে অভ্যস্ত এ দুটো পা,
আস্তে তো হাঁটতে পারি নে!

তারপর থেকে আমি আর আস্তে হাঁটি নি।

বেশ লেখালেখিও করতেন,
অনিয়মিতভাবে লিখতেন কবিতা
নিয়মিত পার্টির ইশতেহার, স্লোগান
আর করতেন ধুমপান, প্রচুর।
জিজ্ঞেস করলে হেসে উত্তর দিতেন
ভায়া,
বাঙলাদেশে আমি বিল্পব আর ধুমপান করা ছাড়া
আর কোন কাজ তো দেখি নে!

অনুপ্রানিত আমি কবিতা লিখেছি এরপর থেকে, অজস্র।
প্রানপন লড়েছি, করেছি সাম্যবাদী রাজনীতি।

দীর্ঘ একযুগ পর তার সাথে দেখা,
আমার প্রণম্য, চির নমস্য স্বপ্ন পুরুষ।
আজ ভাবি, দেখা না হলেই বোধ করি ভালো হত।

কবিতার কাগজের স্পন্সর চেয়ে
জনৈক শিল্পপতির নিকট গিয়েছিলাম
কিছু অর্থপ্রাপ্তির প্রত্যাশায়।

দেবদর্শনে সম্মোহিত আমি
কোন কথা বলতে পারছিলাম না।
দীর্ঘ অদেখায় আমাকে চিনতে পারেন নি।
উদ্দেশ্য শুনে কৌতুহলী হয়ে
একটা কবিতা দেখতে চাইলেন।
স্বরচিত একটি বিপ্লবী কবিতা কম্পিত হস্তে
তাকে দিলাম।

পাঠ শেষে অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন,
এসব বিপ্লব টিপ্লব করে কী হবে?
কবিতা লিখে কে দুবেলা খেতে পেয়েছে বলতে পারো?

বজ্রাহত আমি সেদিন বেরিয়ে এসেছিলাম
এরপর থেকে আমি আর কাউকে অনুকরন করি না।