নলিণীকান্ত সাত্বিক ব্রাহ্মন, আবার পুরুতও। এক সময় পুরুতগিরি করতো। এখন আর করে না- করতে মন চায়ও না। ওসব করার পরিবেশ আর নেই। অনেক পরিবর্তন হয়েছে এই গ্রামটার। বিজলী বাতী ছিল না- এখন ঘরে ঘরে তা এসেছে। এসেছে টেলিভিশন রেডিও, আরও কত কি। জ্ঞাতি-কুটুম্ব, দূরের কাছের ভাই বেরাদার মিলিয়ে বহু মানুষে গমগম করতো তাদের এই গাঁটা। চক্কোত্তি পরিবারই ছিল কম করে হলেও এগার-বারোটা। এখন সেই গ্রামও নেই, সেই মানুষগুলোও আর নেই। একে একে সব কে কোথায় চলে গেছে! সুখ আর শান্তির খোজে ওপারে গেছে তারা। মিত্র-বান্ধবের আশায় পাড়ি জমিয়েছে ওপার বাংলায়। বেশী গেছে শিক্ষিতরা- জ্ঞানে গরীমায় ধন্যরা। যেন বাপ-দাদার ভিটে মাটি কিছুই না। মুখের একটা কথায় সব যেন পর করে দেয়া যায়। ওদের কোন কথায় কান দেয়নি নলিনী। তাইতো আরো দুয়েকটা পরিবারের সাথে মিলেমিশে থেকে গেছে এপারে সাত পুরুষের ভিটে মাটি কামড়ে ধরে। ওদের আর কি দোষ? যে স্রোত একবার শুরু হয়ে গেছে তা আর রুখবে কে? নিজের মনে একান্তে বসে ভাবে নলিনীকান্ত। সব সে বুঝতে পারে। ওরা আসলে ভাল নেই। পরের দেশে ভিক্ষায় কি সুখ থাকে? ওদের মুখের রেখা আর শরীরের ভাষা খুব ভাল করে পড়তে পারে সে। এপারে আসে ওরা মাটির টানে। ‘কেমন আছিস রে তোরা?’-জিজ্ঞেস করলে দায় সারা উত্তরে বলে- ভাল। দুই অক্ষরের জবাবে ভেতরের সব খবর বেরিয়ে আসে বানের ঘোলা পানির মতো। ‘ভালই যদি থাকবি তাইলে ঐ অক্ষর দুটোর সাথে এক টুকরো হাসি উপহার দিতে পারিস নে ক্যান এই বুড়োরে’- নিজের বাড়ীর ধু ধু এক ফালি উঠোনে বসে মনে মনে ভাবে নলিনীকান্ত। ওদের জন্যে অন্য এক ধরনের কষ্ট মোচড় দেয় বুকের ভেতরে। খুব সাবধানে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে নলিনী।

সব কিছুর সাথে নলিনীও বদলেছে। পুরুত থেকে হয়েছে ডাক্তার- হোমিওপ্যথি ডাক্তার, সস্তার ডাক্তার। পাঁচ টাকার এক পয়সা বেশী সে কারো কাছ থেকে নেয় না। পেশায় নিবেদিত প্রান। রুগীর কাছ থেকে পয়সা চেয়ে নেয়া তার স্বভাব বিরুদ্ধ। পয়সা না দিতে পারলে কোন ক্ষতি নেই। ষাটোর্দ্ধ নলিনীকান্ত এখন গরীবের ডাক্তার। রোগে শোকে রাত-বিরাতে আধ-পেটা দরিদ্র মানুষের পাশে বিনিদ্র রজনী সেবা বিলিয়ে সে তাদের মনের অনেক খানি জমিন দখল করে নিয়েছে এই এতগুলো বছরের ব্যবধানে। দিনে দিনে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু স্বজনদের সংখ্যা গেছে কমে। স্বজাতি বান্ধবহীন পরিবেশে এখন মাঝে মাঝে তার একা লাগে বড়। তা লাগুক। তাই বলে সাত পুরুষের ভীটে ত্যাগ করে পরবাসে? কখনও না- ভাবে নলিনীকান্ত।

সময়ের দৌড়ে নলিনী একে একে নির্বান্ধব হলেও সেকেন্দারের বন্ধুভাগ্য হয়েছে রম রমা। দিন দিন বন্ধু স্বজন বেড়েছে তার চক্রবৃদ্ধির হারে। যেখানে যার কাছেই যাওয়া যায়- সবাই তার লোক। সেকেন্দার এখন সোনা সেকেন্দার। সৌভাগ্যের তকমা লেগে গেছে নামের আগে। তার সাথে নলিনী ডাক্তারের তুলনা? তেলাপোকাও আবার পাখী হয় নাকি? দুজনের ভেতর মিল এতটুকুই- তারা একই গাঁয়ের লোক। সকাল বিকেল দেখাহয়- মুখ দেখাদেখি হয়, তবে কথা হয় কিনা তা শুধু ওরাই জানে। নলিনী ডাক্তার সামাজিক মানুষ। সবার সাথেই তার কথা বলতে হয়- পেশার কারনে অন্ততঃ। তাই চৌমাথার চায়ের দোকানটায় দিনের কোন না কোন সময়ে তাকে বসতে হয় মানুষের সাথে। এক আধ ঘন্টার জন্যে হলেও বসতে হয়। এ যে তার বহু দিনের অভ্যেস- নেশাও।

এই যেমন এখন ভর সন্ধ্যায় নলিনীকান্ত বসে আছে গফুর মিঞার চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে। আরো দুচার জন বসেছে চায়ের পেয়ালা হাতে। কেউবা সাথে ডালপুরি অথবা সিঙ্গাড়া চিবোচ্ছে আয়েশে আর কথা বলছে নানান তালে। এক সময় দোকানী গফুর মিঞা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, “আফনেরা শুনিছেন নাকি, সেকেন্দার সাহেব ইশকুলডার জন্যি নাকি নয় লাখ ট্যাহা দিছে”?
কথাটা শুনে লোকেরা এ ওর মুখ চাওয়া চায়ি করে। কেউ কিছু বলে না সহসা। নলিনীকান্ত চুপ থাকতে পারে না- বেজে ওঠে ঝনঝনিয়ে।
-দেবে না কেন? সেকেন্দার তো সোনার কারবারী। সোনা পাচারের ব্যবসা তো চাট্টিখানি কথা না।
ডাক্তারের কথা শুনে সবার চোখ কপালে। সেসব সতর্ক চোখে নলিনী কি এক অশনী সংকেতের চিহ্ন দেখতে পায়। মনে মনে একবার ভাবে সে- কথাটা মুখ ফস্কে না বললে বোধ করি ভাল হতো। ছুড়ে দেওয়া তীর কি কখনো ফেরত আসে? আসে না। মুখের কথাও তাই। একবার বেরিয়ে গেলে তা আর ফিরে আসে না। যাকগে যা হবার তা হবেই। আর সেকেন্দার তো তার ছেলের বয়সী। কি করবে সে? মারবে? কাটবে? মারুক, পারলে মেরে ফেলাক। কি শাস্তি দেবে সে? অত ভয়-ভাবনা নেই নলিনীকান্তের দেহে। কিন্তু সে হয়তো জানে না- মেরে ফেলানোর থেকেও বড় শাস্তি থাকতে পারে।

যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। নলিনী ডাক্তারের ছোড়া তীর ঠিক ঠিক গিয়ে বিধলো সোনা সেকেন্দারের গায়ে। সে তীরের ঘায়ে তার মাথায় উঠলো বিষ। সেকেন্দার পয়সা করেছে বিস্তর, কিন্তু এখনো বিয়ে করে সংসার পাতেনি। তার সামাজিকতার এখনও অর্ধেকটাই বাকী। মাথার বিষ নামিয়ে ফেলতে পারে এমন হালাল মেয়েমানুষও নেই ঘরে মজুদ। কি না হতে পারে এমন লোকের দ্বারা? এবার নলিনীকান্তের ছাড়া নেই। ধরা তাকে পড়তেই হবে জালে।
-বস, কন তো মালিশ করে দিয়ে আসি হারামজাদারে। দুই মাসের জন্যি ল্যাংড়া করে দিয়ে আসি। শালা মালায়ন।
সেকেন্দারের খাসকামরার কার্পেটে বসে টোটা বক্তিয়ার গর্জে উঠে তেজে। প্রভুর সামনে বাধ্যতার ডালা মেলে ধরে ভক্তিতে।
-থাক বক্তিয়ার, তোর আর খিলজিগিরি করা লাগবে না। সন্মানি মানুষ, ওর সন্মান আমিই রাখপো। ব্যাটা বুড়োর একখান জোয়ান বউ আছে, জানিস তো? আর বলা লাগবে কিছু? ব্যাটা কাফের মরে গেলিতো পোড়াবে। তার আগেই আমি ওরে পুড়াব। বার বার তুই আমারে ঘাটাস। এবার বুঝবি মজা- জোয়ান বউয়ের মজা।
সোনা সেকেন্দারের চোখে মুখে একটা উলঙ্গ হিংস্রতা হায়েনার কুটিল হাসির শব্দ তুলে খাস কামরাটারে কাপায়ে দেয় যেন। এক সময় সে কাঁপন শান্তও হয়ে যায়। স্থির হয়ে একবার ভেবে নেয় সেকেন্দার, কিভাবে কি করতে হবে। কিভাবে সব কাঁটা সরায়ে ফেলে পথটারে তেলতেলে মসৃন করতে হবে।

সব কথা যেমন সবার সামনে বলা যায় না, তেমনি সব জমাট অপমানের ডালা সবার সামনে খোলা যায় না। গোপন করতে হয় সময়ের গতিকে। তা না হলে বাচার কোন পথ থাকে না। সব কথা কানে আসে, সব দৃশ্যই চোখে ধরা পড়ে নলিনী ডাক্তারের। আগের মতো আর নিয়মিত চায়ের দোকানের আড্ডায় যেতে পারে না সে- যেতে রুচী হয় না। ডাক্তারীতেও মন নেই ততো। সবাই কেমন চোখে তাকায়। সব দোষ যেন তার একার। কি করেছে সে? দেখা হলে মাঝে মাঝে গফুর দোকানী তার দিকে চেয়ে সবগুলো দাত বের করে হাসি দেয়- অর্থপূর্ন হাসি। কখনও আবার মুখ বাকিয়ে জিজ্ঞেস করে- মাসী কেমন আছে বাবু? সব বোঝে নলিনীকান্ত। শরীরের ভেতরে, মনের ভেতরে বহুদূর অব্দি জ্বলে জ্বলে খাক হয়। ‘হায় রে রানী, তুই আমারে মরার আগেই চিতায় তুললি’?- পথ চলে আর বিড় বিড় করে নলিনীকান্ত। মাঝে মাঝে একান্তে প্রলাপ বকে- ‘এত বড় গুন্ডা হইছিস তুই সেকেন্দার, আমারে খুন করার সাহস হলো না তোর? ধিক তোর সাহসের। ধিক তোর গুন্ডামীর’।
কিন্তু একতরফা প্রলাপের কোন উত্তর আসে না। শুধু বড় এক কুন্ডলী আগুন এসে ভেতরের প্রানটারে জ্বালিয়ে দিয়ে যায়।

কারো না কারো কাছে তো মনটারে খুলে ধরতে হয়। তা না হলে বাচে কিভাবে পোড় খাওয়া মানুষেরা? নলিনী বাচতে চায়। তাইতো সে মনের গরলগুলো মেয়ের বয়সী মরিয়মের সামনে ঢেলে দিয়ে হালকা হয়। বেচে থাকার একটুখানি অর্থ খুজে পায়। একই গাঁয়ের মরিয়ম আর তার নিরীহ ছেলে-মেয়ে-স্বামী নলিনীকান্তের অনেক দিনের পুরোন রুগী। মেয়েটারে দেখে তার মায়া লাগে। পিতৃত্বে টান ধরে। দেখতেও যেন সে অনেকটা তার মৃত মায়েরই মতো। তার সামনে বিবর্ন মনটারে খুলে দেয় হাট করে বৃদ্ধ নলিনীকান্ত।
-আপনি করিছেন কি কাকা! সেকেন্দার তো আজরাইল- সাক্ষাত আজরাইল। ও তো আদালত কান্ধে নিয়া হাটে।
কথাগুলো বলে কেমন যেন অসহায়ের মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মরিয়ম তার ডাক্তার কাকার মুখের জমিনে। বৃদ্ধের কষ্টগুলো স্পর্শ করতে পারে সে। মাপতে পারে তার প্রস্থ। মুখ তার সহসা বোবা হয়ে যায় নিরবতার এক অচেনা ভাষায়।
-জানিনে মা, আমি কিচ্ছু জানিনে। তয় আমি এহন আর রানীর হাতের ভাত খাইনে। এইটুক প্রতিবাদ করার অধিকার আমার কেউ কাড়ে নিতি পারবে না। আমার ঘরে সাপ ঢুকিছেরে মা- অজগর সাপ। দিন-দুপুরি সে সাপ সবার চোখের উপর দিয়ে আমার ঘরে ঢোকে। আমার রানীরে সে আস্ত গিলে খাবেরে মা।

কথা বলতে বলতে শব্দ করে কেঁদে উঠে বৃদ্ধ নলিনী। শুকনো খটখটে সে কান্নার ব্যথাগুলো তার মুখ আর চোখের ভাজে ভাজে খেলা করে, কিন্তু চোখ থেকে এক ফোটা পানি বেরিয়ে আনতে পারে না। এতটা বয়স হয়নি তার যে চোখের পানি ফুরিয়ে যাবে। টের পায় মরিয়ম- নলিনী ডাক্তারের চোখের ভেতরে বসত করে বিদ্রোহের ভয়াবহ এক আগ্নেয়গিরি। তারই ভাপে চোখের সব পানি তার বাস্প হয়ে বেরিয়ে গেছে। তাই তার কাঁদনে জল নেই। একসময় কান্নাও থেমে যায়। কিছুক্ষন কারও মুখে কোন কথা থাকে না। শুধুই নিরবতা বিরাজ করে সেখানে। নীরব শুধু মরিয়ম আর নলিনীকান্ত না, নীরব সবাই। হর্তা-কর্তা-মাথা, এ গাঁয়ের সবাই নীরব। কারন এখন তারা সবাই যেন একটা খল মঞ্চ-নাটক দেখছে। তাই কারো কোন দায় নেই। আর দায়িত্ব ঐ একটাই- টিকিট কেটে মঞ্চের সামনে বসে পড়া- কখনও রোমাঞ্চিত কখনও দুঃখিত, আবার কখনোবা হো হো করে হেসে ওঠা।

সময়ের ডাকে সাড়া দিয়ে অবশেষে মরিয়মের ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসে নলিনী ডাক্তার। পায়ের নীচে কর্কশ খোয়া সুরকি একঘেয়ে আওয়াজ তোলে। মাথার উপরে নিঃসীম নিলীমা তার সব নীল হারিয়ে এই সন্ধ্যাগত রাতে যেন কালো ছাতাখানা টান টান করে মেলে ধরেছে। সেখানে একটাও তারা নেই। আছে শুধু একতাল অন্ধকার। সেদিকে তাকায় একবার নলিনী বামুন। এক সময় মনে হয় তার- সে হয়তো মানুষ না, অন্য কিছু। তা না হলে দিনে দুপুরে এত মানুষ চোখে দেখেনা কেন শুধু তার বেলায়? দিব্যি সুস্থ মানুষগুলো কেন অমন বোবা-কালা-অন্ধ হয়ে যায়? আবার ভাবে, হয়তো সেকেন্দারই ঠিক কাজ করছে, সে নিজেই হয়তো ভুল। না হলে এত লোক! বেশী দূর আর ভাবতে পারে না নলিনী- কেমন এক ধোয়াশার ভেতরে পড়ে যায়। চলতে চলতে একবার ভাবে রানীর কথা। সহসা সব অভিমান গিয়ে পড়ে বউয়ের উপরে। হতভাগী কেন গলায় দড়ি দিতে পারলো না- কেন পারলো না চেচিয়ে লোক জড় করতে? ওকে না সে অগ্নি সাক্ষি রেখে বিয়ে করেছিল! এই তার ছিরি? অনেক ঘুর প্যচের ভেতর দিয়ে অবশেষে নলিনীর মনটা অন্য এক বোধে গিয়ে পড়ে। সেখানে বসে ভাবে সে- কি আর করতে পারতো রানী? অত বড় সাপ! আজ হোক কাল হোক সাপের পেটে তাকে যেতেই হতো। সব দোষ হয়তো তারই। মন খানিকটা শান্ত হয়। তারপরেও নলিনীর সব রাগ গিয়ে পড়ে বউয়ের উপরে। ওকে আর সহ্য হয় না তার- কেমন আজব এক হাসি হাসে বউ ইদানিং হঠাত করে মুখোমুখি হলে। সেটা হাসিও না আবার কান্নাও না- দুয়ের মাঝামাঝি কিছু। কিছুতেই তা সহ্য করার নয়। মনে হয় অনেক করুনা করে তাকে বাচিয়ে রেখেছে রানী। তাই যদি সত্যি হয়, তবে সে জীবনে তার কাজ নেই। আবার গুমোট অভিমানে ভরে যায় নলিনীর মন।

একসময় ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায় নলিনীর। বাঁধ ভেঙ্গে নোনা জল ঢুকে পড়ে অন্দর মহলে- ধুষর মনের গহনে। যে পরবাসকে চরম ঘৃনায় ফিরিয়ে দিতো সে একসময়, তাই এখন পছন্দ করে সে নিজের জন্যে- বাচার জন্যে। ওপার যাবে নলিনী ডাক্তার। না গিয়ে কি করবে সে? নিজের বউ, ছেলেরা- কেউ তার কথা শোনে না এতটুকু। সে যেন অনেক অচেনা তাদের কাছে। আর ঘরের বাইরে গেলেতো বর্ষার মতো থু থু পড়ে গায়ে- ঘৃনার থু থু। থু থু পড়ে কুলটা বউয়ের জন্যে, কাফের হবার জন্যে। তার থেকে এই ভাল- একাই চলে যাবে সে। আকাশ পাতাল ভাবে নলিনীকান্ত। ভাবতে ভাবতে একবার পেছন ফিরে তাকায় সময়ের অনেক গভীরে। কালের সত্যগুলো সেখানে সে স্পষ্ট দেখতে পায়। এই মাটিতে তাদের সেবা দিয়েছে, রক্ষা করেছে লাঠি হাতে ভোগী মোগলেরা, তারপরে গোরা বেনিয়ারা, তারও পরে খালেছ খান ছাহেবেরা। এখন তো এ মাটি স্বশাসিত। এখন কে কারে সেবা দেয়, আর কে কারে রক্ষা করে! এখন তাই অল্প সংখ্যার মানুষগুলো বেশী সংখ্যার মানুষগুলোরে সেবা দিবে- দিতে হবে। এ যে সংখ্যার বিচার। আর তাই এ সময়ের নলিনীকান্তরা বিজিত সম্পত্তি। সম্পত্তির আবার মান অপমান থাকে নাকি? থাকে, কারও না থাকলেও নলিনীর থাকে। ঠিক সেই কারনেই নিজের মানটুকু সম্বল করে চুপি চুপি চোরের মতো সাত পুরুষের ভিটে ছেড়ে ওপারে রওনা হয় নলিনীকান্ত রাতের আঁধারে একা। অন্যদিকে সবার চোখের উপর দিয়ে সোনা সেকেন্দার বুক ফুলিয়ে নিয়মিত মান ডাকাতি করে চলে মানি নলিনীকান্ত ডাক্তারের- হতভাগ্য নলিনীর।