কোরবানীর সময় সারা দুনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে পশু হত্যার ধুম পড়ে। আর কয়দিন বাদেই কোরবানী , মুমিন বান্দারা এখন ব্যস্ত কোরবানীর পশু যোগাড়ে- সৎ বা অসৎ যে কোন ভাবে উপার্জিত পয়সায়।কোরবানীর রক্ত নাকি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে, আর আল্লার সন্তুষ্টির জন্য মুমিন বান্দারা সব পশু হত্যা করে কোরবানী দেয়। আল্লাহ সন্তুষ্ট হলে মরার পর বেহেস্তে যাওয়া যাবে যেখানে আছে অসংখ্য চির যৌবনা হুর, যাদের সাথে অনন্তকাল আনন্দ করা যাবে। দুনিয়ার জীবন ও আনন্দ অতি সাময়িক, অনন্ত কালের তুলনায় তা নিতান্তই একটা মুহুর্ত মাত্র। তাই অনন্তকাল ধরে চির যৌবনা হুরদের সাথে ফুর্তি করার মানসে মুমিন বান্দারা তাদের সাধ্য মতো কোরবানী দেয়। শুধু মুসলমানরা নয়, হিন্দুরাও তাদের দেবী কালী বা মনসার উদ্দেশ্যে ছাগল বলী দেয়, উদ্দেশ্য কি তা অজানা। হয়ত ইহকাল বা পরকাল উভয় কালেই মজা ফুর্তির কামনা বাসনা। বাইবেলের ওল্ড টেষ্টামেন্টে দেখেছি মুসার অনুসারী তথা ইহুদীরাও কোরবানী দিত। যাহোক, ধর্মের নামে , আল্লাহ বা দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে একটা পশুকে নির্মমভাবে হত্যা করলে সত্যিকার অর্থে আল্লাহ বা দেবতা কতটা সন্তুষ্ট হয় তা কিন্তু সব সময়ই প্রশ্ন সাপেক্ষ থেকেছে। একটা পশুকে নির্মম ভাবে আস্তে আস্তে ( যা মুসলমানরা করে) পোচ দিয়ে বা এক কোপে ( যা হিন্দুরা করে) হত্যা করলে চারদিকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকলে , আর নিহত পশুটি ছট ফট করতে থাকলে আল্লাহ বা ঈশ্বর বা দেবতা বা দেবী যদি সত্যিকার অর্থেই সন্তুষ্ট হয় তাহলে বলতে হবে এ আল্লাহ বা দেব দেবী দারুন রকম নিষ্ঠুর।এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক আলোচনাই হতে পারে। তবে এখানের আলোচ্য বিষয় সেটা নয় বরং সেটা হলো- কোরবানী বিষয়টা যে ঘটনা থেকে উদ্ভুত সেটা কতটা সত্য।

ইসলাম ধর্মের কিচ্ছা অনুযায়ী- নবী ইব্রাহীম আল্লাহকে কতটা ভালবাসে তার একটা পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আল্লাহ। এটা একটা ভাল দিক। কারন পরীক্ষা ছাড়া কোন বিষয়কে স্বীকার করে নেয়া মূর্খতা বা অজ্ঞতা। আল্লাহ স্বপ্নে ইব্রাহীমকে বলল- তোমার সবচাইতে প্রিয় জিনিসটি আমাকে উৎসর্গ কর। পর পর তিন রাত ইব্রাহীম একই স্বপ্ন দেখল। এ স্বপ্ন দেখার পর ইব্রাহীম চিন্তা করল এটা একটা পরীক্ষা। একই সাথে চিন্তা করতে লাগল তার সবচাইতে প্রিয় জিনিস কি। আর বলা বাহুল্য, তার সবচাইতে প্রিয় জিনিস ছিল তার একমাত্র পূত্র ইসমাইল কারন তাকে সে তার অতি বৃদ্ধ বয়েসে আল্লাহর অনুগ্রহে প্রাপ্ত হয়েছে। একই কিচ্ছা অনুযায়ী – ইব্রাহীমের বয়স যখন ৮৫, তখনও তার কোন সন্তান জন্ম গ্রহন করেনি। এর জন্য সে আল্লাহর কাছে কম কান্না কাটি করে নি। অবশেষে আল্লাহর করুণা হলো-সেই ৮৫ বছর বয়েসেই তার স্ত্রী হাজেরা তার জন্য একটা পূত্র সন্তান প্রসব করল যা ছিল ইব্রাহীমের সবচাইতে প্রিয় জিনিস। তো এবার ইব্রাহীম তার একমাত্র সন্তান ইসমাইলকে আল্লাহর নামে কোরবানী দিতে উদ্যত হলো। আল্লাহর কি অপার মহিমা! কোরবানী দেয়ার পর দেখা গেল ইসমাইলের যায়গায় একটা দুম্বা (মতান্তরে ছাগল) কোরবানী হয়ে পড়ে আছে। এর পর থেকে ইব্রাহীমের অনুসারীরা এ ঘটনার স্মরনে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য চান্দ্র বছরের উক্ত দিনে পশু কোরবানী দেয়া চালু করে আর যার জের ধরে মুসলমানরাও সেটা পালন করে আসছে।

কিন্তু গোল বাধাল মোহাম্মদের প্রথম যুগের ইহুদীরা, একই সাথে খৃষ্টানরাও। তাদের দাবী- ইব্রাহীম ইসমাইলকে কোরবানী দেয় নি , দিয়েছিল তার বৈধ পূত্র বিবি সারাহ থেকে জাত ইসহাক কে। তারা আরও দাবী করল- হাজেরার গর্ভে ইসমাইল জন্মেছিল ঠিকই তবে হাজেরা ছিল দাসী, আর ইসমাইল সেকারনে কোন বৈধ পূত্র নয়। তারা ব্যখ্যা দিল- ইব্রাহীমের থেকে আল্লাহ এমন একটা জাতি সৃষ্টি করবে যারা হবে আল্লাহর পছন্দনীয় জাতি । অত:পর সে পছন্দনীয় জাতি থেকে এমন একজন নবী সৃষ্টি করবে যে সমগ্র দুনিয়ায় রাজত্ব করবে, সে হবে দুনিয়ার সমস্ত রাজার রাজা। আর আল্লাহ কখনই একজন দাসীর গর্ভজাত অবৈধ সন্তান থেকে সে পছন্দনীয় জাতি করতে পারেন না। আর বলা বাহুল্য, বাইবেলের পূরাতণ নিয়মে হাজেরাকে বিবাহিত স্ত্রী নয়, একজন দাসী হিসাবেই বলা হয়েছে আর বৈধ স্ত্রী হিসাবে সারাহকেই বলা হয়েছে। এখানে আর একটা ঘটনা ঘটে। হাজেরা ইসমাইলকে জন্মদান করার পর নানা কারনে সারাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয় ও তার স্বামী ইব্রাহীমকে চাপ দিতে থাকে তাদেরকে পরিত্যাগ করতে। অত:পর নানা ঘটনার পর, ইব্রাহীম হাজেরা ও শিশুপূত্র ইসমাইলকে তার নিজ বাসস্থান থেকে অনেক দুরে আজকের মক্কায় নির্জনে ফেলে রেখে যায়। অত:পর সেখানেই ইসমাইল বড় হয়, বিয়ে করে ঘর সংসার করে। আর তার থেকেই মূলত সৃষ্টি হয় আরব জাতির। অন্য দিকে হাজেরাকে নির্বাসন দেয়ার পর সারাহ ও গর্ভবতী হয়ে একটা পূত্র সন্তানের জন্ম দেয় যার নাম ইসহাক। ইসহাকের পূত্র ইয়াকুব যাকে বাইবেলে ইসরাইলও বলা হয় আর তার থেকেই পত্তন ঘটে ইসরাইল তথা ইহুদী জাতির। সুতরাং ইহুদীদের দাবী অনুযায়ী- আরবরা হলো ইব্রাহীমের অবৈধ সন্তান ইসমাইলের বংশধর আর ইসহাক হলো বৈধ সন্তান যার বংশধর থেকে সৃষ্টি হয়েছে ইসরাইলি বা ইহুদীরা ও পরবর্তীতে তাদের এক অংশ যীশু খৃষ্টের অনুসারী হয়ে খৃষ্টান নামে অভিহিত হয়েছে। তাই ইহুদী ও খৃষ্টান উভয় ধর্মাবলম্বীদের বক্তব্য হলো- অবৈধ সন্তান ইসমাইলের বংশধর থেকে আল্লাহ তার পছন্দনীয় জাতি সৃষ্টি করতে পারে না আর সে কারনে তাদের মধ্যে কোন নবীর আগমনও ঘটবে না। ঠিক এই পয়েন্টে এসে ইহুদী ও খৃষ্টান উভয়ই মোহাম্মদকে নবী হিসাবে বিশ্বাস করে না, তারা মোহাম্মদকে একজন ভন্ড নবী বা ভূয়া নবী হিসাবে গণ্য করে। এমন কি অনেক সময় তারা তাকে শয়তানের মানব রূপ হিসাবেও প্রচার করে থাকে।মক্কা মদীনাতে যখন মোহাম্মদ নিজেকে নবী দাবী ক’রে ইসলাম প্রচার শুরু করে, ঠিক পূর্বে উল্লেখিত কারনেই ইহুদীরা এর ঘোর আপত্তি করে এবং তাকে একজন ভন্ড হিসাবে অভিহিত করে ও নানা ভাবে অপমান করতে থাকে। আর খৃষ্টানরাও তাদের সাথে তাল মিলায়। অন্য দিকে- খৃষ্টাণদের দাবী বাইবেলের পুরাতন নিয়মে ইসরাইলি জাতির মধ্য হতে যে নবীর আগমনের কথা বলা হয়েছে তা হলো যীশু খৃষ্ট এবং যীশু খৃষ্ট ইসরাইলের বংশধর তথা ইহুদী জাতির মধ্য থেকেই আগমন করেছে যে ইসরাইল ছিল ইব্রাহীমের বৈধ স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান ইসহাকের পূত্র। কিন্তু অধিকাংশ ইহুদীরা নানা কারনে তা মানতে অস্বীকার করে, যদিও যীশু খৃষ্টের প্রাথমিক অনুসারীর সবাই ইহুদিই ছিল। সে যাহোক, ইহুদী ও খৃষ্টানরা উভয়ই বাইবেলের পুরাতণ নিয়মের ধারা অনুযায়ী মোহাম্মদকে নবী মানতে অস্বীকার করে। মোহাম্মদের সময়কার ইতিহাস থেকে দেখা যায়, খৃষ্টানরা কেউ কেউ মোহাম্মদ প্রচারিত ধর্মের প্রতি সহানুভুতিশীল ছিল, কিন্তু ইহুদীরা মোটেও তা ছিল না আর তারা সেই প্রাথমিক যুগ থেকেই মোহাম্মদ ও তার প্রচারিত ইসলামের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে। এর অন্যতম কারন ছিল তারা বিশ্বাস করত – তারাই হলো ঈশ্বরের সেই পছন্দনীয় জাতি যারা একদিন সারা দুনিয়ায় রাজত্ব করবে, আরবরা নয়। ঠিক একারনেই দেখা যায়- মোহাম্মদ কখনও কখনও খৃষ্টানদের প্রতি সহানুভুতিশীল হলেও ইহুদীদের প্রতি ছিল প্রচন্ড নির্মম ও নিষ্ঠুর। সেই নিষ্ঠুরতা , নির্মমতা মোহাম্মদ মক্কায় থাকতে দেখাতে পারেনি কারন তখন সে ছিল ভীষণ দুর্বল , নিজের জীবন বাঁচানোতেই ছিল ব্যস্ত। মোহাম্মদ যখন মদীনায় শক্তিশালী শাসক হয়ে ওঠে- তখন সে তার সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে ইহুদী নিধনে, যাতে তাদেরকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়া যায়। এর পর মক্কা বিজয়ের পর ইহুদী নিধন কার্য আরেও বেগবান হয়। ইহুদীদের বনু কুরাইজা গোত্রের মানুষদেরকে নিরস্ত্র অবস্থায় হত্যা , খায়বারে নিরস্ত্র ইহুদীদের হত্যা এসবের অন্যতম নিদর্শন। এত নির্যাতন অত্যাচার সহ্য করার পরও কেন ইহুদীরা মোহাম্মদের ইসলাম গ্রহন করে নি , সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ? তার একটাই মাত্র কারন- মোহাম্মদ দাবী করছে ইব্রাহীম, মূসা, ইসা এদের ধারাবাহিকতায় সে শেষ নবী, অথচ বাইবেলে ভবিষ্যদ্বানী করা আছে মূসার পর মাত্র একজন নবীর আগমন ঘটবে আর সে আবির্ভুত হবে ইসরাইলি তথা ইহুদীদের মধ্যে। অথচ মোহাম্মদের জন্ম অইহুদি আরব দেশে। তাই তাদের কিতাব মতে মোহাম্মদ নবী হতেই পারে না। ধর্মভীরু ইহুদীরা তাই মোহাম্মদকে নবী মানা তো দুরের কথা তাকে ভন্ড নবী বলে নানা ভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করত। তারা মোহাম্মদকে ভন্ড বলত একারনে যে- মোহাম্মদ তৌরাত কে আল্লাহর কিতাব হিসাবে স্বীকার করছে যা মুসা নবীর নিকট অবতীর্ণ হয়েছিল অথচ একই সাথে জোর করে বানিয়ে বানিয়ে অভিযোগ করছে ইহুদী ও খৃষ্টানরা নাকি তা বিকৃত করে ফেলেছে। অথচ তারা তা করেনি। আর সেকারনেই তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে থাকে যে মোহাম্মদ সত্যি সত্যি একজন ভন্ড বা ভূয়া নবী।

এবারে আসা যাক, কাদের দাবী সত্য সেটার বিশ্লেষণে। এ ব্যপারে নিচের হাদিসটি দেখা যেতে পারে-

ইবনে আব্বাস বর্নিত: তিনি বলেন যখন ইব্রাহীম ও তাঁহার স্ত্রী( সারাহ) এর যা হইবার তা হইয়া গেল অর্থাৎ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হইল, তখন ইব্রাহীম শিশুপূত্র ইসমাইল ও ইসমাইলের মাতা হাজেরাকে লইয়া বাহির হইয়া গেলেন। তাহাদের সাথে একটি মশক ছিল আর তাতে পানি ছিল। ইসমাইলের মাতা মশক হইতে পানি পান করিতেন আর শিশুপূত্রের জন্য তাহার দুগ্ধে প্রাচুর্য আসিত। শেষ পর্যন্ত ইব্রাহীম মক্কায় আসিয়া গেলেন এবং হাজেরাকে তার শিশুপূত্র সহ একটি বৃক্ষমূলে বসাইয়া রাখিলেন। তারপর তিনি তার নিজ স্ত্রী সারাহ এর নিকট ফিরিয়া চলিলেন। তখন ইসমাইলের মাতা তাহাকে অনুসরণ করিয়া কিছুদুর গেলেন ও ইব্রাহীমকে জিজ্ঞাসা করিলেন- হে ইব্রাহীম আমাদিগকে কাহার নিকট রাখিয়া যাইতেছেন? ইব্রাহীম বলিলেন- আল্লাহর নিকট। হাজেরা বলিলেন- আমি আল্লাহর নিকট থাকিতেই রাজি। ——————————————————————————————————————————–
ইবনে আব্বাস বলেন, জুরহুম গোত্রের একদল লোক প্রান্তরের মধ্য দিয়া পথ অতিক্রম করিতেছিল, হঠাৎ তাহারা দেখিল, একদল পাখী উড়িতেছে। তাহারা যেন তাহা বিশ্বাসই করিতে পারিতেছিল না।তাহারা বলিল, যেখানে পানি থাকে সেখানেই তো এইসব পাখি উড়িতে দেখা যায়। তখন তাহারা পাখী উড়িবার স্থলে তাহাদের একজন লোক পাঠাইল। সে তথায় গিয়া দেখিল সেখানে পানি মৌজুদ আছে। তখন সে দলের লোকদের নিকট ফিরিয়া আসিয়া তাহাদিগকে পানির খবর দিল। তারপর তহারা সকলেই হাজেরার নিকট আসিল এবং তাহাকে বলিল, হে ইসমাইল জননী! আপনি কি আমাদিগকে আপনার প্রতিবেশী হওয়ার বা আপনার সাথে বসবাস করিবার অনুমতি দিবেন ?হাজেরা তাহাদিগকে বসবাসের অনুমতি দিলেন এবং এইভাবে অনেক দিন চলিয়া গেল। তারপর হাজেরার শিশুপূত্র প্রাপ্ত বয়স্ক হইলেন, তখন তিনি জুরহুম গোত্রেরই এক কন্যাকে বিবাহ করিলেন। ইবনে আব্বাস বলেন, অত:পর নির্বাসিত পরিজনের কথা ইব্রাহীম এর মনে উদয় হইল। তিনি তাহার স্ত্রী সারাহ কে বলিলেন, আমি আমার নির্বাসিত পরিজনের কথা জানিতে চাই। ইবনে আব্বাস বলেন, অত:পর ইব্রাহীম তাহাদের নিকট আসিলেন এবং সালাম দিলেন। তারপর জিজ্ঞাসা করিলেন- ইসমাইল কোথায় ?ইসমাইলের স্ত্রী বলিল- তিনি শিকারে গিয়াছেন।————— সহী বুখারী, বই-৫৫, হাদিস নং-৫৮৪

উপরোক্ত হাদিসে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে- ইব্রাহীম হাজেরা ও ইসমাইলকে নির্বাসনে দেয়ার পর দীর্ঘদিন আর তাদের সাথে দেখা করেনি। দেখা করেছে তখন যখন ইসমাইল প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে বিয়ে করে সংসার শুরু করে দিয়েছে। আরও উল্লেখ্য, উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে- বর্ননাকারী বার বার সারাহ কে ইব্রাহীমের স্ত্রী বলছে, কিন্তু হাজেরাকে শুধুমাত্র ইসমাইলের মাতা বলছে। একবারও কিন্তু দেখা যাচ্ছে না যে হাজেরাকে ইব্রাহীমের স্ত্রী বলা হচ্ছে। ইব্রাহীমের সময়ে যে কেউ দাসীদের গর্ভে সন্তান জন্ম দিতে পারত , এটা দোষণীয় কিছু ছিল না। এমনকি মোহাম্মদের সময়েও এটা দোষণীয় ছিল না। খোদ মোহাম্মদের নিজের এক পূত্র ইব্রাহিমও ছিল তার দাসী মারিয়ার(মিশরের সম্রাট থেকে উপহার পাওয়া) সন্তান। পরে অবশ্য মোহাম্মদ তাকে বিয়ে করে তবে যখন ইব্রাহীম মারিয়ার পেটে আসে তখন তাদের বিয়ে হয়নি।বিষয়টাও আসলে তাই। হাজেরা ছিল ইব্রাহীমের দাসী। বিবাহিতা স্ত্রী নয়। বাইবেলের পুরাতন নিয়মে সেরকমই বলা আছে। ইব্রাহিম এক সময় মিশর গমন করে, তখন তার সাথে তার স্ত্রী সারাহ ছিল। নানা ঘটনার পর সারাহ সেখানকার বাদশার রাজপ্রাসাদে স্থান পায়, পরে যখন সেখান থেকে চলে আসে তখন বাদশাহ তাকে একটা দাসী উপহার দেয় আর সেই দাসীই হলো হাজেরা। বাইবেলে আরও বর্ননা করা আছে-ইব্রাহীম ও সারাহ যখন অতিশয় বৃদ্ধ হয়ে গেছিল কিন্তু সন্তান জন্ম নিচ্ছিল না , তখন সারাহই ইব্রাহীমকে তার দাসী হাজেরার সাথে সহবাস করতে বলে ও সন্তান উৎপাদনের জন্য অনুরোধ করে। সেখানেও বিয়ের কথা নেই। কিন্তু যখন হাজেরা ইসমাইলকে প্রসব করে তখন সারাহও আল্লাহর কাছ থেকে অবগত হয় যে সে নিজেও মা হতে চলেছে বা হবে। তখন সারাহ আর হাজেরাকে সহ্য করতে পারে না। কারন দাসীর গর্ভের এক অবৈধ সন্তান তার স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে বা অন্য সব কিছুতে ভাগ বসাবে তা সারাহ মানতে রাজী হয়নি। সেকারনে সে হাজেরাকে বাড়ী থেকে নির্বাসন দেয়ার জন্য ইব্রাহীমের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। ঠিক এ প্রচলিত ঘটনাটাকেই ( যা মোহাম্মদের আমলে বাইবেলে লিখিত ও প্রচলিত ছিল) হাদিসে এভাবে প্রকাশ করা হয়েছে- তিনি বলেন যখন ইব্রাহীম ও তাঁহার স্ত্রী( সারাহ) এর যা হইবার তা হইয়া গেল অর্থাৎ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হইল । অর্থাৎ সারাহ ও ইব্রাহীমের মধ্যে ব্যপক মনোমালিন্যের উদ্ভব ঘটে হাজেরা ও তার সন্তান ইসমাইলকে নিয়ে। উল্লেখ্য, হাজেরা ইব্রাহীমের বৈধ স্ত্রী হলে সারাহ কখনই এ ধরনের আচরন করতে পারত না , বা হাজেরা ও ইসমাইলকে নির্বাসন দিতে ইব্রাহীমকে বাধ্য করাতে পারত না।

তাহলে উপরোক্ত হাদিস যে বিষয়গুলি পরিস্কার তা হলো- ইসমাইল প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর বিয়ে করে সংসার করার আগ পর্যন্ত তার সাথে ইব্রাহীমের দেখা হয় নি। হাজেরা ইব্রাহীমের দাসী ছিল, বিবাহিতা স্ত্রী ছিল না।

এবার দেখা যাক, এ বিষয়ে কোরান কি বলছে-
হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর। সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম। অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল। তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, ইব্রাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। সে ছিল আমার বিশ্বাসী বান্দাদের একজন। কোরান, সূরা আস সাফাত-৩৭:আয়াত ৯৯-১১১

উপরোক্ত আয়াতে ইব্রাহীম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে একজন সৎপূত্র দান করার জন্য। অত:পর ৯৯ থেকে ১১১ পর্যন্ত আয়াতে দেখা যাচ্ছে সে পূত্র যখন চলাফেরার বয়সে উপনীত হলো তখনই ইব্রাহীম তাকে কোরবানী করতে নিয়ে যায়। এ চলাফেরা করার বয়স মানে বিয়ে করার মত প্রাপ্ত বয়স্ক না নিশ্চয়ই। বড়জোর শৈশব অতিক্রম করে কৈশোরে পদার্পন পর্যন্ত বুঝানো যেতে পারে। এছাড়াও এ আয়াত গুলোর কোথাও ইসমাইলের নাম গন্ধও নেই। আর পূর্বোক্ত হাদিস থেকে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে- ইব্রাহীম যখন ইসমাইলের সাথে নির্বাসনের পর প্রথম দেখা করে তখন সে কৈশোর উত্তীর্ন হয়ে যৌবনে পদার্পন করেছে এবং বিয়ে করে সংসার করছে। সহী বোখারী, বই-৫৫ এর ৫৮৩ নং হাদিসও হুবহু একই কথা বলে। এছাড়াও ইসমাইল কিভাবে ইব্রাহীমের সব চাইতে প্রিয় কিভাবে হয় সেটাও প্রনিধানযোগ্য। কারন জন্মের কিছুদিন পরই হাজেরা সহ তাকে ইব্রাহীম ত্যাগ করে চলে গেছে। এর পর সারাহ এর গর্ভে ইসহাক এর জন্ম হয়েছে। সারাহ এর গর্ভে সন্তান এসেছিল বলেই তো সারাহ হাজেরা ও তার সন্তানকে আর ইব্রাহীমের সাথে থাকতে দিতে রাজী হয়নি। হাজেরা যদি সত্যি সত্যি ইব্রাহীমের বিয়ে করা বউ হতো, তাহলে কি সারাহ ইব্রাহীমকে বাধ্য করাতে পারত নির্বাসন দিতে? তখন দুইটা কেন শতটা বিয়ে করলেও কোন স্ত্রীর কিছু করার ছিল না, সেটাই ছিল প্রচলিত রীতি। তাই সেক্ষেত্রে ইসহাকই হবে ইব্রাহীমের সবচাইতে প্রিয় পাত্র কারন সেই সব সময় তার সাথে থাকত। একজন পিতার কাছে কোন সন্তান বেশী প্রিয় হয়? যে সন্তানকে পিতা জন্মের কিছুদিন পর থেকে দীর্ঘদিন দেখতে পারে না সে , নাকি যে সন্তান পিতার সাথে সব সময় থাকে সে ? সুতরাং ইসমাইলকে কোরবানী দেয়ার যে কাহিনী আমরা এতকাল শুনে এসেছি, তার ভিত্তি খুব দুর্বল। বরং ইসহাককেই কোরবানী দেয়ার বিষয়টিই উক্ত কিচ্ছা কাহিনী অনুযায়ী সঠিক হওয়াই বেশী যুক্তি সঙ্গত।

আমি দেখেছি ইসলামী চিন্তাবিদরা নানা ভাবে এর একটা ব্যখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে। বলে যে ইসমাইল যখন জন্মায় তখন ইব্রাহীমের বয়স ছিল ৮৬ আর ইসহাক যখন জন্মায় তখন তার বয়স ছিল ৯৯। কিন্তু এসব কথা না আছে কোরানে, না আছে হাদিসে। এ সময় তারা বাইবেলের রেফারেন্স দেয়। বাইবেলে নাকি সেরকম বলা আছে। আমি জানিনা আসলে তা আছে কি না। কিন্তু আমার প্রশ্ন অন্য। বাইবেলে বলা হচ্ছে- ইসহাককে কোরবানী দেয়া হয়েছিল, সেটা তারা গ্রহন করছে না , বলছে বিকৃত। আবার বাইবেলে বলা আছে ইসরাইলি জাতি থেকে নবী আগমন করবে, সেটাও তাদের মনপূত: না তখনও বলছে বাইবেল বিকৃত। অথচ এসব কথা বাইবেলে লেখা আছে মোহাম্মদের জন্মানোরও শত শত বছর পূর্বে। কি অদ্ভুত আব্দার, যে বাইবেলকে বলছে বিকৃত অথচ সেই বাইবেলের তথ্যকে তারা ব্যবহার করছে প্রামান্য হিসাবে। ইদানিং ইসলামী পন্ডিতরা এ ধরনের উদ্ভট যুক্তি হর হামেশাই প্রয়োগ করে থাকে।তারা বলে ইসলাম হলো একমাত্র সত্য ধর্ম, অন্য সব ধর্ম বিকৃত বা মিথ্যা আর তাদের কিতাব সমূহও সব বিকৃত, অথচ একই সাথে তারা সেসব কিতাবে কোথায় মোহাম্মদ আসবে লেখা আছে তা বের করে উল্লসিত হচ্ছে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত। তার মানে খৃষ্টান আর ইহুদীরা মোহাম্মদের আবির্ভাবের খবর শত শত বছর আগেই পেয়ে তারা বাইবেল বিকৃত করেছিল? মোহাম্মদ যখন আরব দেশে ছিল সেই ৭ম শতাব্দীতে, তখন বাইবেলের শত শত কপি গোটা ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়েছিল,কারন তখনই ইউরোপের অধিকাংশ মানুষ খৃষ্টান ধর্মকে গ্রহন করে ফেলেছিল। যদি বিকৃত করতে হয়, তাহলে সেসব গুলিকে জড় করে ধ্বংস করে তারপর নতুন করে একটা সংকলন বের করে সেটা করতে হবে। যেমনটা করেছিল খলিফা ওসমান তার শাসনামলে কোরান সংকলন করার জন্য। কিন্তু এমন কোন নজীর পাওয়া যায়নি মোহাম্মদের পর ইহুদী ও খৃষ্টানরা এ কাজটি করেছে। পরিশেষে, যদি মোহাম্মদকে নবী মানতে অস্বীকার করার জন্যই তারা বাইবেলকে বিকৃত করে থাকে তাহলে তারা সেই বাইবেলে ইসমাইল ও ইসহাকের জন্মের সময় ইব্রাহীমের বয়স কত ছিল সেটা লিখতে যাবে কোন আহাম্মকিতে ? সেটাও তো তারা বিকৃত করে রাখবে যাতে ভবিষ্যতে কোনদিন কেউ ধরতে না পারে। ইসলামী পন্ডিতরা আরও নানা ভাবে বের করার চেষ্টা করে বাইবেলে নাকি মোহাম্মদ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করা আছে।

আর ইসমাইল তত্ত্বটিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মুমিন বান্দারা আর তাদের পন্ডিতরা তারস্বরে প্রচার করে যে বাইবেল বিকৃত করা হয়েছে। কারন বাইবেলের পুরাতন নিয়মে পরিস্কার বলা আছে যে ইসহাককেই কোরবানী দিয়েছিল ইব্রাহীম। অথচ বিকৃতির স্বপক্ষে কোন প্রমান তারা দাখিল করতে পারে না। কেউ যদি বলে যে বাইবেল বিকৃত হয়েছে, তাহলে তাকেই আসল একটা বাইবেল হাজির করে প্রমান করতে হবে যে বর্তমানে যে বাইবেল তা বিকৃত। এখন আসল বাইবেলও হাজির করতে পারবে না , আবার বলবে বাইবেল বিকৃত হয়েছে- এ ধরনের যুক্তি যারা প্রচার করে বেড়ায় তারা মানসিকভাবে সুস্থ কিনা তা ভাববার যথেষ্ট কারন আছে। তবে বাইবেলের কিছু ভার্শন আছে যাদের মধ্যে সামান্য তারতম্য দেখা যায়। কিন্তু সে তারতম্যটা কেমন? সেটা প্রকাশ ভঙ্গীর তারতম্য। এটা অনেকটা একই বিষয়ে বিভিন্ন হাদিস বয়ানকারীদের বর্ননার ভিন্নতা যা খুবই নগন্য অথচ মূল বিষয়বস্তু এক। উদাহরন- উপরোক্ত হাদিস ৫৮৪, ঠিক একই ঘটনার বর্ননা দেয়া আছে হাদিস ৫৮৩ তেও। এখানে মূল ঘটনা হুবহু একই , শুধুমাত্র বর্ননা সামান্য ভিন্ন। বাইবেলের বিভিন্ন ভার্শনের পার্থক্য ঠিক এরকমই। আর এই যে পার্থক্য এটা মূলত: বাইবেলের নূতন নিয়মে যাকে গসপেলও বলা হয়। বাইবেলের পূরাতন নিয়ম যাকে তৌরাতও বলা হয় তার সংরক্ষন নিয়ে কোন সমস্যা নেই। বাইবেল যে বিকৃত তা দেখা যায় কোরানের নীচের আয়াতে-
অতএব তাদের জন্যে আফসোস! যারা নিজ হাতে গ্রন্থ লেখে এবং বলে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ-যাতে এর বিনিময়ে সামান্য অর্থ গ্রহণ করতে পারে। অতএব তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের হাতের লেখার জন্য এবং তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের উপার্জনের জন্যে।সূরা বাকারা ২: ৭৯

খেয়াল করতে হবে , মোহাম্মদ যতদিন মক্কাতে ইসলাম প্রচার করত ততদিন কিন্তু বলে নি যে বাইবেল বিকৃত। মদিনায় গিয়ে ক্ষমতা লাভ করে যখন সে ইহুদীদেরকে কচুকাটা করার মত ক্ষমতা অর্জন করেছে তখনই কোরানের মাধ্যমে বলা শুরু করেছে যে বাইবেল মনুষ্যরচিত বা বিকৃত। প্রসঙ্গত: সূরা বাকারা মদীনায় অবতীর্ণ।
বিষয়টা আরও বিশেষ প্রনিধানযোগ্য। ইসহাকের জন্ম বন্ধ্যা সারাহ এর বৃদ্ধাবস্থায় যা একটা অলৌকিক ঘটনা, কিন্তু ইসমাইলের জন্ম স্বাভাবিক ঘটনা প্রায় যুবতী দাসী হাজেরার গর্ভে। বাইবেলে তো বটেই কোরানে বার বার ইসহাককে আল্লাহর বিশেষ সম্মানিত ব্যাক্তি ও নবী হিসাবে বর্ননা করা হয়েছে। অথচ ইসমাইলকে তা করা হয় নি।কেন করা হয় নি ? কারন যখন মক্কায় বসে মোহাম্মদ এসব কোরানের সূরা তৈরী করত, তখন তার অত মনে হয়নি যে ভবিষ্যতে এটা একটা বড় ইস্যূ হয়ে দাড়াবে। অথচ তখন অনেক সূরা সে তৈরী করে ফেলেছে যা অনেক সাহাবী মুখস্তও করে ফেলেছে, তাই তা আর পাল্টানও সম্ভব না, পালটালে তো মিথ্যাবাদী সাজতে হবে। যাহোক, একারনে ইসহাকের বংশজাত ইহুদীরা নিজেদেরকে মহান জাতি মনে করে অথচ সে তুলনায় অবৈধ সন্তান ইসমাইলের বংশধরগন তেমন কোন মর্যাদা দাবী করতে পারে না বা তা নেই ও । মুসলমানরা ঠিক এটাকেই বরদাস্ত করতে পারে না। যেকারনে ইসমাইলকে কোরবানী করা হয়েছিল বলে প্রচার করে তার বংশধর ও ইসলামের অনুসারীদেরকে মর্যাদাবান করতে চায়। দেখা যাক কেমন ভাবে কোরানে ইসহাককে মর্যাদাশীল করা হয়েছে।

তাকে এবং ইসহাককে আমি বরকত দান করেছি। তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মী এবং কতক নিজেদের উপর স্পষ্ট জুলুমকারী। মক্কায় অবতীর্ন, সূরা- আস সাফফাত ৩৭: ১১২
অতঃপর তাদের সম্পর্কে সে মনে মনে ভীত হলঃ তারা বললঃ ভীত হবেন না। তারা তাঁকে একট জ্ঞানীগুণী পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল অতঃপর তাঁর স্ত্রী চীৎকার করতে করতে সামনে এল এবং মুখ চাপড়িয়ে বললঃ আমি তো বৃদ্ধা, বন্ধ্যা।। মক্কায় অবতীর্ণ, সূরা আয যাযিরাত ৫১: ২৮-২৯
তাঁর স্ত্রীও নিকটেই দাড়িয়েছিল, সে হেসে ফেলল। অতঃপর আমি তাকে ইসহাকের জন্মের সুখবর দিলাম এবং ইসহাকের পরের ইয়াকুবেরও।। মক্কায় অবতীর্ণ, সূরা-হুদ ১১; ৭১

এখন প্রশ্ন হলো-ইসমাইলকে এত মর্যাদাশীল না দেখিয়ে কোরানে ইসহাককে কেন দেখানো হলো ? একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে উপরোক্ত প্রতিটি সূরাই মক্কায় অবতীর্ণ যেখানে মোহাম্মদ ছিল ভীষণ রকম দুর্বল। ইসহাককে এত মর্যাদাপূর্ণ দেখানোর একটাই উদ্দেশ্য ছিল , তা হলো খৃষ্টান ও ইহুদিদেরকে আকৃষ্ট করা যাতে তারা তার কাছে আত্মসমর্পন করে ও তাকে নবী হিসাবে মেনে নেয়। মদীনায় রচিত কোন সূরাতে ইসহাককে এত মর্যাদাশীল হিসাবে দেখা যাবে না। এটা ছিল মোহাম্মদের অত্যন্ত দুরদর্শী একটা কৌশল মাত্র। এ কৌশলে সম্পূর্ন কাজ না হলেও মোটামুটি বেশ কাজ হয়েছিল। মক্কায় তার ইসলাম প্রচারের জন্য অন্তত ইহুদি খৃষ্টানদের কাছ থেকে কিছু ঠাট্টা ও উপহাস ছাড়া আর তেমন কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয় নি। তাকে মূলত: কুরাইশদের কাছ থেকেই প্রবল বাধার সম্মুখীন হতে হয়। ইসহাককে মর্যাদাশীল দেখিয়ে মোহাম্মদ যুদ্ধ ক্ষেত্রের দুইটা ফ্রন্টকে ( ইহুদি ও খৃষ্টান) প্রায় নিরপেক্ষ করে রাখতে পেরেছিল। কিন্তু মদিনায় যাওয়ার পর যখন সে শক্তিশালী হয়ে গেল তখন আর এসবের বালাই থাকল না। তখন থেকে শুরু হলো মার মার কাট কাট, ধর মার , হত্যা কর, ইহুদী খৃষ্টানদের বসতি আক্রমন কর, তাদের সম্পদ লুঠ কর, লোকজনদেরকে বন্দী করে দাস দাসী বানাও।তখন বানী হলো- মোহাম্মদ ছাড়া আর কেউ নেই, থাকবে না। সুতরাং এখন গলায় জোর দিয়ে বলা যেতে লাগল যে – ইহদী ও খৃষ্টানরা তাদের কিতাবকে বিকৃত করেছে হাতে কোন প্রমান না থাকা সত্ত্বেও। কারন সেটা না করলে মোহাম্মদের মর্যাদা বাড়ে না, তার নবুয়ত্ব টেকে না, টেকে না তার ইসলাম। আর তাই শুরু হলো ইসমাইলের কোরবানী তত্ত্ব। এটা সেই প্রক্রিয়া যা হিটলার জার্মানীতে শুরু করেছিল তার প্রচার মন্ত্রী গোয়েবলসের মাধ্যমে। সত্যকে মিথ্যা , মিথ্যাকে সত্য শত বার প্রচার করে তারা তাদের ইচ্ছামত সত্য তৈরী করে জার্মান জাতিকে উগ্র জাতীয়তাবাদী করে তুলে অত:পর প্রলয়ংকরী বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল। হিটলার যেন মোহাম্মদের কাছ থেকেই টেকনিক টা রপ্ত করেছিল। কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারে, নিরক্ষর মোহাম্মদ বাইবেলের এত সব কাহিনী জানল কেমনে ? উত্তর অত্যন্ত সোজা। ৪০ বছর বয়েসের আগে সে ইসলাম প্রচার শুরু করে নি। আর তীক্ষ্ম বুদ্ধি ও স্মরনশক্তির অধিকারী মোহাম্মদ দীর্ঘ সময় ধরে আশপাশে থাকা ইহুদী ও খৃষ্টানদের কাছ থেকে তাদের কিতাবের কাহিনী শুনেছে আর মুখস্ত করেছে আর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিভাবে তার নিজের কিতাব রচনা শুরু করবে।

আসলে বিষয়টা হলো অন্যত্র। বাইবেলকে বিশ্বাস করলে ইসলাম এর কোন ভিত্তি থাকে না। কারন বাইবেল অনুযায়ী, নবী আসার কথা ইসরাইলি বংশধর থেকে যা বার বার তাতে বলা আছে। কিন্তু মোহাম্মদ এসেছে ইসমাইলের বংশধর থেকে যারা ইসরাইলিয় নয়, বরং আরবীয়। সুতরাং বাইবেল অনুযায়ী, মোহাম্মদ অবশ্যই ভূয়া নবী ও তার ইসলামও ভূয়া। ঠিক এ বিষয়টি ইসলামী পন্ডিতরা খুব ভালভাবেই জানে বলে- জোর করে প্রচার করতে হবে বাইবেল বিকৃত। অথচ খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে সংকলিত বাইবেলের পান্ডুলিপি এখনও যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। বিশেষ করে বাইবেলের পুরাতন নিয়ম নবী সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানীর বিষয়টি যাতে আছে, তা যীশুর জন্মেরও আগে সংকলন করা হয় আর যা তখন থেকেই হুবহু এক আছে আর তা ইহুদীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন গ্রন্থ। একে তৌরাতও বলা হয়। ইহুদীরা ভালমতোই জানে যে মোহাম্মদ আসার আগেই তাদের তৌরাত সংরক্ষিত করা হয়েছিল যা মোহাম্মদের সময় সেই মক্কা বা মদিনার ইহুদীদের কাছেও ছিল, এমন কি ইহুদীদের কোন কোন বিবাদ মোহাম্মদ তৌরাতের পাতা খুলে সমাধানও দিয়েছে, সে কারনে ইহুদীরা খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিল যে তাদের কিতাব অনুযায়ী মোহাম্মদ কোন ক্রমেই নবী হতে পারে না। অথচ মোহাম্মদ দাবী করছে সে নবী। মোহাম্মদও বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরে ইহুদীদেরকেই প্রধান শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করে আর সেকারনেই কোরান ও হাদিসের পাতায় পাতায় ইহুদীদেরকে ধ্বংস করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে, খোদ মোহাম্মদ ক্ষমতা হাতে পেয়ে নিজ হাতেই তা সমাধা করার চেষ্টা করেছে, তারপর তার অনুসারীরাও তা চালিয়ে গেছে তার মৃত্যুর পর। কিন্তু ইহুদীরা শেষ হয়ে যায় নি, ধ্বংস হয়নি তাদের তৌরাত। আর তাই তো সত্য প্রকাশ হয়ে পড়ছে ক্রমশ:।