আসিফ মহিউদ্দীনের অবিলম্বে মুক্তি চাই- এই দাবীটুকুই যথেষ্ট নয়! কৈফিয়ত চাই – কেন অন্যায়ভাবে তাকে গ্রেফতার করা হলো? বিচার চাই এই ঘটনার হোতাদের- এই ফ্যাসিস্ট সরকারের!

আসিফ মহিউদ্দীনকে তার বাসায় ডিবি পুলিশের খুঁজতে যাওয়া ও থানায় রিপোর্ট করতে বলা, থানায় রিপোর্ট করতে গেলে আটক করা, ফেসবুক/ব্লগে সরকারবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত না থাকার ব্যাপারে অঙ্গীকার করতে বলা, এতে রাজী না হলে তাকে গ্রেফতার করে রাখা – পুরো ঘটনাই স্বৈরশাসনের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমাদের তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর আমলে ক্রসফায়ার-অপারেশন ক্লিনহার্ট এর মাধ্যমে বিনাবিচারে মানুষ হত্যা, র্যাবের গঠন ও উপস্থিতি, পুলিশী তান্ডব এইরকম নানা জিনিসপত্র আমাদের অহরহই সহ্য করতে হয়েছে। গণতান্ত্রিক বিভিন্ন আন্দোলনে সরকারী বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়াও এখানে নৈমিত্তিক ব্যাপার। শ্রমিকদের আর ছাত্রদের আন্দোলনে ডান্ডাপেটানো মূল কাজ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা(!)কারী বাহিনীর। এবারে এর সাথে নতুন যুক্ত হলো ফেসবুক, ব্লগ মাধ্যম থেকে খুঁজে বের করে বেয়াড়া(!) গোছের ব্যক্তিদের শায়েস্তা করা। মাঝখানে এক শিক্ষকের নাম শুনেছিলাম- তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুকামনা করেছিলেন। এবারে আমাদের আসিফ মহিউদ্দিনরে আটক করা হলো। আমার ধারণা- এটা কেবল শুরু।

আসিফ মহিউদ্দীনরে নিয়ে বলার কিছুই নেই। আপনারা সবাই চিনেন, জানেন। তাকে নিয়ে বেশী কিছু বলার নেই। একজন অনলাইন এক্টিভিস্টরে আটক করা, মানসিক নির্যাতন করা আসলে কিসের আলামত? বুঝাই যাচ্ছে- এই সরকার আসলে এই অনলাইন এক্টিভিজমরে আমলে নেয়া শুরু করছে। এটা সরকারের তরফ থেকে একরকম হুমকি- অনলাইনে এক্টিভিটি সরকার বরদাস্ত করবে না- ফলে সাবধান! এমন বার্তাই কি সরকার দিতে চাচ্ছে? একটা সরকার কখন এমন আচরণ করে? কখন এমন ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠে? ইতিহাস থেকে জানি- যখন নিজ শক্তি-সামর্থ্য বা ভবিষ্যৎ নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত দম্ভ তৈরি হলে- কিংবা অতিমাত্রায় ভয়ে থাকলে। এই সরকারের ক্ষেত্রে কোনটা? কোন সময়ে ও কেন একটা গণতান্ত্রিক সরকার জনগণরে গণনায় ধরে না, জনমতরে থোড়াই কেয়ার করে? সামান্যতম বিরোধিতা সহ্য করতে পারে না! একের পর এক গণবিরোধী শাসনে জনগণরে বেঁধে ফেলতে চায়- গণমানুষের বাদ-প্রতিবাদরে অঙ্কুরেই দমন করতে চায়! এই সরকার কেন এমন আচরণ করছে? দু/তিন বছর আগে পাওয়া একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাই কি কারণ? মাজাভাঙ্গা বিরোধীদল দেখে কি তারা ভেবেছে- বিএনপি জোট ছাড়া সরকারের ফ্যাসিজম রোখার কেউ নাই? বিদেশী প্রভুদের সন্তুষ্টিই কি ক্ষমতা আকড়ে রাখার গ্রিন-সিগন্যাল ভেবেছে তারা। দেশীয় পুঁজিপতি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে দেদার মুনাফা করার সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে হাতে রাখলেই কি কেল্লফতে? এসবই যদি এই সরকারের ফ্যাসিস্ট হওয়ার কারণ হয়ে থাকে- তবে বলতেই হয় এরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারে নি। জনগণের শক্তিরে যারাই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে, তারাই আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এবং ভবিষ্যতেও এর অন্যথা হবে না। মানুষের মুখ বন্ধ রেখে, কলম-কিবোর্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কেউ কোনদিন ক্ষমতা বেশীদিন ধরে রাখতে পারেনি- সামনেও পারবে না।

সময় এসেছে, গর্জে উঠার- মুক্তির দাবীতে- আসিফ মহিউদ্দিনের- কলম ও কিবোর্ডের – চিন্তার ও মতপ্রকাশের।