বাংলাদেশের ছোট্ট একটি শহরে
জন্মেছিল ছোট্ট একটি মেয়ে।
সেই মেয়েটি আর দশটি মেয়ের মত
সর্বংসহা হয়নি।
হয়েছিল একটু ব্যতিক্রমী
হয়েছিল প্রতিবাদী।

প্রথাসিদ্ধ অনাচারগুলো সে নিঃশব্দে
পারেনি মেনে নিতে,
করেছে প্রতিবাদ।
হাজার বছরের অন্যায় আর অন্ধকার কুঠুরীতে
সে হেনেছিল দুঃসাহসী, নিষিদ্ধ-আঘাত।

সে স্বাধীনতা হীনতায় বাঁচতে চায়নি
স্বাধীনতা চেয়েছে ঘরে-বাইরে।
সব মানুষের সম-অধিকার চেয়েছে।
সে লিঙ্গভেদ মানেনি, জাতিভেদ মানেনি
আজগবি ধর্ম মানেনি, কুসংস্কার মানেনি
পুত্র-কন্যার প্রভেদ মানেনি।

সে বলতে চেয়েছে,
“আমরা সবাইতো মানব সন্তান
সবাইতো প্রকৃতির সন্তান
মানুষে মানুষে সৃষ্টি ক’রে বিভাজন
মানবতার করোনা অপমান।“

তাই তো পেয়েছে সে তার যোগ্য প্রতিদান
স্বদেশ হতে নির্বাসন।
তার নেই কোন অধিকার
স্বদেশের মাটিতে বাস করার
নেই কোন অধিকার
স্বদেশের আকাশের নিচে দাঁড়াবার।
৫৬ হাজার বর্গমাইলে তার তরে নাই
তিল পরিমাণ ঠাঁই।

সে তো রাজাকার নয়
ধোঁকাবাজ ,ধর্মব্যবসায়ী ভণ্ড নয়
নয় কোন প্রতারক রাজনৈতিক,
নয় কোন খুনী, ডাকাত, চোর
তবে তার প্রতি কেন এ অবিচার?
কেন এ অন্যায়-বহিষ্কার?

তার বই নিষিদ্ধ করা হয়।
তবে যে বইগুলোর উপর ভিত্তি ক’রে
তার বই লিখিত
সেগুলো কেন নিষিদ্ধ নয়?
সে সত্য কথা বলতে করেনা ভয়
তাই কি মিথ্যাবাদীদের তাকে এত ভয়?

সে মেয়েটি মুক্তকণ্ঠে কথা বলতে চেয়েছে
গলা ছেড়ে গাইতে চেয়েছে
মন খুলে উচ্চৈঃস্বরে হাসতে চেয়েছে
উন্মুক্ত বাতাসে প্রাণ ভ’রে শ্বাস নিতে চেয়েছে
সে নিজেকে শুধুমাত্র মেয়ে মানুষ মনে করেনি
মানুষ মনে করেছে।
সামান্য এক আউরত
কেন তার এত বড় হিম্মত?
তাই তো কছু দ্বিপদী জীব
যারা সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বেচ্ছাসেবক
তারা করতে চেয়েছিল তার প্রাণপাত।
মেয়েটি মানবাধিকারের দাবী ক’রে করেছিল ভুল
তাই ভুলে নিমজ্জিত সমাজের সে হয়েছিল চক্ষুশূল।

আজ সে তার ভিটেমাটি হতে
নিজের জন্মভূমি হতে বিতাড়িত, নির্বাসিত
আজ সে দেশের জন্য অস্পৃশ্য, নিষিদ্ধ।
নির্বাসনে, বিদেশ বিভূঁইয়ে
নিরালায়, নিভৃতে, নিঃসঙ্গতায়
কাটছে তার একেকটি নিশ্চল-প্রহর।

কখনো অশ্রুর বন্যায় তার কপোল ভেসে যায়
কখনো বুক ফেটে যায় হৃদয় গুমরানো কান্নায়।
তার নির্ঘুম রজনী ভোর হয়ে যায়
নিঃসঙ্গ নিঠুর দিবস যামিনীর আঁধারে হারায়।
এত আঘাতের পরেও সে
দেশ মাতৃকার কোলে ফিরে আসতে চায়।
কিন্তু হায়
সেথায় তার কোন জায়গা নাই।
আজ নির্বাসনে, অপমানে, অশ্রুজলে
কাটে তার দীর্ঘরজনী, দীর্ঘদিন।
সে স্বদেশ থেকে হয়েছে বিতাড়িত
তবুও মিথ্যার কাছে, অন্যায়ের কাছে
করেনি তার উন্নত শির নত।
সেই অকুতোভয়,দৃঢ় চিত্তের মেয়েটির নাম’ তসলিমা নাসরিন’।